বাসন্তী প্রেম পর্ব ২৫

#বাসন্তী_প্রেম 🌼🌼
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান (ছদ্মনাম)
#পঞ্চবিংশ_পর্ব

চন্দ্রিকার সাথে টুকটাক কথা বলার পর রুমে চলে আসার জন্য পা বাড়ায় সিরাত‌। রুমের সামনে চলে আসতেই পাশে থেকে মেয়েলি কন্ঠ কর্ণপাত হতেই পারে থমকে যায় সিরাতের।
– “ইশ খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না সিরাত? কাল হলরুমে নিজের বার্থডে সেলিব্রেট করতে গিয়ে, মুগ্ধের কাছাকাছি আসতে গিয়ে লজ্জায় পড়ে যেতে হয়েছিল তাইনা?
সো স্যাড!
বাট কি করব বলো, তুমি আমার চোখের সামনে থেকে মুগ্ধের এতটা কাছাকাছি এসে পড়বে আর কিছুই করবনা? হাহা! বলেছিলাম না মুগ্ধকে আমি তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিব; সেটাই করছি আমি। আর খুব শীঘ্রই মুগ্ধ তোমাকে ছেড়ে সারাজীবনের জন্য আমার কাছে, রিয়ার কাছে চলে আসবে।”
দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে মুখে যথেষ্ট তাচ্ছিল্য ভাব নিয়ে বলে উঠে রিয়া। রিয়ার কথায় অবাক না হয়ে পারে না। তার মানে গতকালের ঘটনার সাথে কোনোভাবে রিয়া জড়িত?
– “তার মানে কালকের পার্টির ঐ ইনসিডিয়েন্টে তোমার হাত ছিল?”
বিস্মিত হয়ে বলে উঠে সিরাত।
– “কোনো ডাউট আছে? আর এরপর থেকে কি কি হবে জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ!”
বলেই মুখ বাঁকিয়ে উল্টো পথে পা বাড়ায় রিয়া। আর সিরাত সেখানেই কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। রিয়ার বলা কথাগুলো কর্ণকুহরে ঠেকতেই‌ এক অজানা আতঙ্ক গ্রাস করে নেয় মুহূর্তেই তাকে।
এদিকে সিঁড়ি ঘর থেকে সিরাতের রুমের দিকে অগ্রসর হতেই দরজার সামনে এক ধ্যানে মগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সিরাতের উপর চোখ পড়ে ফাইয়াজের। স্টুডিওর বাদবাকি কাজগুলো কমপ্লিট করে নেয়ায় তিনদিন কোনো প্রকার ঝামেলা নেই। সিরাতকে এক ধ্যানে মগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে ফাইয়াজ। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সে।
কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই হালকা শিউরে উঠে সিরাত‌। পরমুহূর্তেই ফাইয়াজের স্পর্শ চিনতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে।
– “কি ব্যাপার তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?”
– “এমনি, তেমন কিছু না। আপনি এখানে কি করছেন? আপনার না আজকে স্টুডিও তে থাকার কথা!”
– “হ্যাঁ, তবে স্টুডিওতে তেমন কোনো কাজ ছিল না; তাই চলে এসেছি। আজকের সারাটা দিন আমার শুধু তোমার নামে মেরি জান!”
– “মানেহ?”
– “মানে হচ্ছে আজকে সারাদিন শুধু তুমি আর আমি টাইম স্পেন্ড করব। এখন গিয়ে রেডি হয়ে নাও, আমরা একটু পর বের হব।”
– “কিন্তু?”
– “উহু, কোনো কিন্তু না! যেটা বলেছি সেটাই কর। আমি নিচে ওয়েট করছি।”
ফাইয়াজের কথায় মুখশ্রী ফুলিয়ে নেয় সিরাত‌। একপ্রকার বাধ্য হয়ে বিড়বিড় করতে করতে রুমে চলে যায় সে। এদিকে ফাইয়াজ সেটা দেখে মুচকি হেসে নিচের দিকে পা বাড়ায়।
মিনিট বিশেক পর সিরাত বের হয় বাসা থেকে। গাড়ির কাছে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ছিল ফাইয়াজ। সিরাতেকে দূর থেকে আসতে দেখে তার দিকে এগিয়ে যায় সে। গাড়ির সিটে বসে পড়তেই গাড়ি চলা শুরু করে আপন গতিতে।

রুমের মধ্যে বসে একমনে আয়নার দিকে তাকিয়ে চুলে চিরুনি চালাচ্ছিল চন্দ্রিকা। তবে মস্তিষ্কের অভ্যন্তর জুড়ে শুধু রূপের বিচরণ। সিরাতের সাথে কথা বলার পর থেকে কেন‌ যেন নিজের মধ্যে একপ্রকার গিল্টি ফিল হচ্ছে তার। শুধু শুধু তার জন্য ডক্টর রূপের ক্যারিয়ার লাইফ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দিনকে দিন। মন বলছে যেন জীবনকে আরো একটি বার সুযোগ দিয়ে রূপের সাথে জীবনের বাকি অধ্যায় গুলো পার করে দিতে কিন্তু মস্তিষ্ক যেন তার ঠিক বিপরীত। মন আর মস্তিষ্কের এই টানাপোড়েন থেকে বেরিয়ে আসে রূপের গলার আওয়াজ পেয়ে।
– “ভেতরে আসতে পারি?”
– “ডক্টর রূপ আপনি?”
– “হ্যাঁ, আমি। ঘরে বসে বসে বই পড়তে পড়তে বিরক্ত লাগছিল তাই ভাবলাম একসাথে কিছুক্ষণ সময় কাটানো যাক সাথে কফি নিয়ে।”
বলেই একটা কফির কাপ চন্দ্রিকার দিকে এগিয়ে দেয় রূপ। চন্দ্রিকাও চেয়ার টেনে বসে পড়ে কফি নিয়ে।
দুজনেই পিনপতন নীরবতা পালন করে কফির কাপে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ নিরবতা কাটিয়ে রূপ বলে উঠে,
– “চন্দ্রিকা?”
কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে মাথা তুলে তাকায় চন্দ্রিকা। মৃদু কন্ঠে প্রত্যুত্তরে বলে উঠে,
– “হু, কিছু বলবেন ডক্টর রূপ?”
– “আমি জানি না, তুমি আদৌ আরমানকে ভুলতে পেরেছ কি না? আমি জানি আরমানের তোমার সাথে করা কাজটা কখনোই ক্ষমার যোগ্য না; তবে শুধু শুধু সেই বিভীষিকাময় অতীতের ঘটনাকে আঁকড়ে ধরে রেখে আমার ভালোবাসাকে বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছ। তবে চিন্তা করো না আমি তোমাকে জোর করব না, শুধু মনে রেখ একপাক্ষিক ভাবেও কিন্তু একজন মানুষকে তীব্র ভাবে ভালোবাসা সম্ভব।”
রূপের কথার ভাবার্থ বুঝে উঠতে বেশি একটা বেগ পেতে হয় নি চন্দ্রিকাকে। খালি কফির মগ নিয়ে রূপ চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে তখনই চন্দ্রিকা তার দৃষ্টি যথাসম্ভব নিচের দিকে নিক্ষেপ করে বলে উঠে,
– “ডক্টর রূপ?”
এতে থেমে যায় রূপ।
– “আপনি কি আমায় সত্যিই ভালোবাসেন, ডক্টর রূপ?”
চন্দ্রিকার প্রশ্ন শুনে থমকে যায় রূপ। চোখে মুখে একরাশ বিস্ময়।
– “হঠাৎ এ প্রশ্ন?”
– “হুম শোনার প্রয়োজন ছিল! আপনি কি আমায় সত্যিই ভালোবাসেন?”
– “ভালোবাসার সর্বোচ্চ কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা শুধু এই চারটে অক্ষরের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। আমি তোমায় ভালোবাসি আর এটুকুই জানি সেটা সবকিছুর সীমান্ত পেরিয়ে।”
রূপের কথা গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল চন্দ্রিকা। বরাবরের মতো এবারও সে রূপের প্রশ্নোত্তরে মুগ্ধ। একটা ছেলে তাকে এমন সীমাহীন ভাবে ভালোবাসতে পারে ভেবেই মাঝে মধ্যে অবাক হয় সে।
– “ঠিক আছে। আমি ও আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যেই আপনাকে জানিয়ে দিব।”
বেশ খানিকটা গম্ভীর গলায় বলে উঠে চন্দ্রিকা। এতে করে রূপের ভেতরের অস্থিরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। চন্দ্রিকার সামনে সেটা প্রকাশ না করার জন্য কাপ দুটো হাতে নিয়ে দ্রুত পায়ে বাইরের দিকে হাঁটা শুরু করে দেয় রূপ।
দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল হতে চললো। তবুও সিরাত আর ফাইয়াজের আসার কোনো নাম নেই। দুপুরের লাঞ্চ কমপ্লিট করে পুনরায় গাড়িতে বসতেই দূর দূরান্তে পাড়ি দেয়ার জন্য গাড়ি স্টার্ট দেয় ফাইয়াজ। পাশের সিটে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে সিরাত‌। যার প্রধান কারণ হচ্ছে ফাইয়াজ। একটু আগেই ওয়েটারকে আইসক্রিম এর অর্ডার দেয়ার ফলস্বরূপ ফাইয়াজের কাছ থেকে বিশাল এক রাম ধমক খেতে হয়েছে সবার সামনে। এর পর অবশ্য বেশ কয়েকবার সরি বললেও তেমন কোনো ভাবান্তর ঘটেনি সিরাতের মাঝে।
ড্রাইভিং করার ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে সিরাতের দিকে তাকাচ্ছে ফাইয়াজ। তার প্রেয়সীর মনে যে এক আকাশ পরিমাণ অভিমান জমে আছে তা বেশ ভালোই টের পাচ্ছে সে। হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে উঠতেই নড়েচড়ে উঠে সিরাত‌।
হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়াতে হালকা ঝুঁকে পড়ে সিরাত‌।
– “কি ব্যাপার, এখানে গাড়ি থামালেন কেন? আমরা কি বাসায় পৌছে গিয়েছি?”
– “না তবে আপাতত প্রেয়সীর অভিমান ভাঙানোর জন্য কিছু একটা তো করতে হবে তাইনা? তাই ভাবলাম এখানেই গাড়ি থামিয়ে নেই।”
– “মানেহ্? এখানে গাড়ি থামিয়েছেন কেন?”
– “সেটা না হয় একটু পর ই বুঝতে পারবে। তুমি এখানে বসো, আমি আসছি।”
বলেই সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো ফাইয়াজ।
সামনেই বিশালাকার আইসক্রিম স্টলের লাইন‌। পরপর সাত আটটা স্টল থাকায় ফাইয়াজ যেকোনো একটা স্টলে গিয়ে চকলেট আর স্ট্রবেরি দুটো ফ্লেভারের আইসক্রিম নিয়ে নেয়। কিন্তু পরমুহূর্তেই ফোন বেজে ওঠায় আইসক্রিম এর বক্স দুটো রেখে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশের ব্যক্তির কথা শুনে তার কপালে দুশ্চিন্তার সুক্ষ্ম রেখা পড়ে। ফোন রেখে যথাসম্ভব আইসক্রিম নিয়ে গাড়ির কাছে যেতে আরো এক ধাপ আঁতকে উঠে সে। গাড়ির একপাশের দরজা খোলা আর সিরাতের কোনো চিহ্ন ও নেই আশপাশের জায়গা জুড়ে। চেহারায় ক্রমশই রাগের আভা বেড়ে চলেছে ফাইয়াজের। অস্ফুট স্বরে মুখ দিয়ে শুধু বেরিয়ে আসে,
– “র,র্,রিয়ান!”……………….

#চলবে 🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here