#গল্পঃবিকেল বেলার রোদ
#পর্বঃ০৭
#লেখাঃনুসরাত মাহিন
কোথাও একটা পোস্টবক্স নেই, অথচ বুকের ভেতর চিঠি জমে জমে মেঘের মিনার,
কোথাও একটা ঠিকানা নেই, অথচ নীল খাম জমে জমে ভেসে যায় বুকের কিনার।
সাদাত হোসাইন
দেখতে দেখতে জুনায়াদের ইন্টার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল অথচ আমি জুনায়েদকে এখনও বলতে পারিনি জুনায়েদ আমি তোমাকে ভালোবাসি। তবে ইশারা ইঙ্গিতে অনেকবার বোঝানোর চেষ্ঠা করেছি জুনায়েদ এর থেকে কোন রেসপন্স পাইনি। জুনায়েদ কী বুঝতে পারিনি আমি ওকে পছন্দ করি নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করেছে..??
— পরিক্ষা তো শেষ হয়ে গেলো এখন কী করবেন ঠিক করেছেন..??
— ইউনিভার্সিটি এডমিশনের পরীক্ষার বই কিনে পড়া শুরু করব।
— গুড ডিসিশন,, কোন একটা ভালো এডমিশন কোচিং এ ভর্তি হলে আরো বেশি ভালো হয়।
— কোচিংএ ভর্তি হলে ভালো হতো কিন্তু ভর্তি হবার মতো টাকা আমার কাছে নেই। দেখি রেজাল্ট দেবার পর ভর্তি হওয়া যায় কিনা ততদিনে কিছু টাকা জমাতে পারব।
— জুনায়েদ ভাই আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি।
— স্যরি আপু বুঝালাম না।
— না মানে বলছিলাম কী আপনি চাইলে আমার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিতে পারেন যদি আমাকে বন্ধু ভাবেন।
— ম্যাম আপনি আমার জন্য অনেক করেছে এমনিতে আমি আপনার কাছে অনেক ঋনী আর কত ঋনী হব আপনার কাছে। আমি বাসায় বসে পড়লে হবে।
— ঠিক আছে টাকা যখন নিতে চাচ্ছেন না তাহলে আমার একটা অনুরোধ আপনাকে রাখতেই হবে।
— কী অনুরোধ..??
— আগে প্রমিস করেন রাখবেন।
— আচ্ছা প্রমিস করলাম রাখব।
— আপনি আমার কাছে পড়বেন। আমি কোচিং শেষে পাঁচটার পর ওয়েট করব। প্রতিদিন বাসায় বসে যে পড়াগুলো মুখস্থ করবেন বিকালে এসে আমার কাছে পরীক্ষা দিয়ে যাবেন।
— আচ্ছা ঠিক আছে। নাবিলা ম্যাম আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। কিন্তু আমি একটা প্রশ্নের উত্তর চাই।
— কী প্রশ্ন..?
— আপনি আমার জন্য এত কিছু কেন করছেন..??
— যদি বলি বন্ধু ভেবে। সময় হোক আস্তে আস্তে সব প্রশ্নের উত্তর দেব।
মানুষ মানুষের জন্যে জীবন জীবনের জন্যে
একটু সহানুভূতি কী মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু।
***
— বুঝছিস নাবিলা তোর মামাটা একটা আস্ত হারামি।
— দিপা আন্টি হারামি কী আস্ত আর ভাগ ভাগ করা থাকে ..??
— ওই কথার কথা।
— বুঝলাম আমার মামা হারামি কিন্তু আমার মামা কী করছে কেন তুমি আমার ভালো মামাটাকে হারামি বানিয়ে দিলে।
— হারিমা না তো কী। তোর মামার নাম যে তানভীর মাহামুদ আবির আমাদের কখন ও বলেনি ওর নাম আবির। আমরা জানি তোর মামার নাম শুধু তানভীর মাহামুদ।
— মামার নাম তো তানভীর মাহামুদই বাসার সবাই তানভীর বলে ডাকে।
— তাহলে আবির কার নাম তুই যে আবির মামা বলে ডাকিস ..?
— আবির নামটা মামাকে নিসা আপু দিয়েছিল। আমি, নাদিয়া আর নিসা আপু শুধু মামাকে আবির বলে ডাকি।
— নিসা কে..??
— নিসা আপু হচ্ছে আমার বোন নাদিয়া আপুর বান্ধুবি।
— শুধুই কী তোর আপুর বান্ধুবি নাকি অন্য কিছু..?
— মামা নিসা আপুকে ভালোবাসতো
— ভালোবাসতো এখন বাসে না।
— নিসা আপু মামাকে ধোকা দিয়ে অন্য এক জনের হাত ধরে পালিয়ে গেছে।
— নাবিলা আমার মাথা কিছুই ঢুকছে না। সব ঘটনা আমাকে খুলে বলবি।
— নাদিয়া আপু তখন সবেমাত্র ম্যাট্রিক পাশ করে কলেজে উঠবে আর মামা ইন্টার পরীক্ষা দেবে। আপুকে তো বাবা কিছুতেই কলেজে ভর্তি করবে না। বাবার একটাই কথা মাইয়্যা মাইসের এত লেহাপড়া কইরা কী হোইবে। মামা অনেক কষ্টে মাকে দিয়ে বাবাকে রাজি করিয়ে আপুকে কলেজে ইন্টারে ভর্তি করিয়ে দেয়।
আপু কলেজে উঠার পরে পরিচয় হয় নিসা আপুর সাথে। নিসা আপুরা আমাদের গ্রামের ছিলেন না।নিসা আপুর বাবা ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা মাস দুয়েক আগে বদলি হয়ে আমাদের গ্রামে আসেন। নাদিয়ার সাথে নিসা আপুর বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায় দু’জন হয়ে যায় বেস্ট ফ্রেন্ড। কলেজের সবাই ওদের দুজনকে দেখলেই মানিকজোড় বলে ডাকা শুরু করে।
আমাদের গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারের শিক্ষীত কিছু বখাটে ছেলে পেলে ছিল যারা মায়েদের দেখলেই বিরক্ত করতো, উল্টাপাল্টা বাজে কথা বলতো তাদের মধ্যে কবির ছিলো একজন।
আপু যখন স্কুলে পড়তো কবির তখন ও আপুকে একা পেলে খুব ডিস্টার্ব করতো। এই জন্য আমার মামা আপুকে কলেজে দিয়ে আসতো আবার কলেজ শেষ হলে নিয়ে আসত।
মামা পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করতো, এলাকা কোচিং এ পড়াত। কলেজের মধ্য সব থেকে ভালো স্টুডেন্ট ছিল তাই স্যারদের সাথে মামা খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। আমাদের কলেজের রসায়নের অধ্যাপক স্যার মামাকে একটা টিউশনি ঠিক করে দেয় দুইটা মেয়েকে পড়াতে হবে একজন ইন্টার ফাস্টিয়ার আর একজন ক্লাস ফাইভ।
মামা ওই ব্যাংক কর্মকর্তার বাসায় পড়াতে গিয়ে দেখে নিসা আপু মামার নিউ স্টুডেন্ট। মামা তো মনে মনে অনেক খুশি। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি এখন নিসা আপুকে আরো কাছ থেকে দেখতে পারবে কারন মামা নিসা আপুকে পছন্দ করে। নাদিয়াও বুঝতে পারে নিসা আপু মামাকে পছন্দ করে। সারাজীবনের জন্য বন্ধুত্ব ধরে রাখার জন্য নাদিয়া নিজেই নিসা আপুর সাথে আবির মামার রিলেশন করিয়ে দেয়। নিসা আপু ভালোবাসে মামাকে আবির বলে ডাকা শুরু করে। আবির নামের অর্থ আয়না দু’জন দুজনের প্রতিচ্ছবি।
সময়গুলো ভালোই কাটছিলো। মামার ইন্টার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে ঢাকা চলে আসে এডমিশন কোচিং করার জন্য। মামা প্রতি মাসে একবার করে বাড়িতে আসতো নিসা আপুর সাথে দেখা করার জন্য।
মামা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে লাইফ সাইন্সে চান্স পেয়ে যায়। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার পরে পড়াশুনার চাপের কারনে ঠিক মতো প্রতিমাসে আর গ্রামে যেতে পারে না তিন চার মাস পর একবার বাড়িতে আসে।
এরি মধ্যে আমাদের গ্রামের কলেজে নতুন একজন ইংলিশের শিক্ষক আসে শাকিল মাস্টার। শাকিল মাস্টারের বয়স খুব বেশি ছিল না অনার্স পাশ করার পরেই মাস্টার্স এর পাশাপাশি নিবন্ধন করে আমাদের কলেজে জয়েন্টে করে। শাকিল মাস্টারের সাথে নাদিয়া আর নিসা আপু খুব খাতিল হয়ে যায়। কলেজ শেষ হবার পর শাকিল মাস্টার আপুদেরকে বাসায় এগিয়ে দিয়ে যেত।
সব কিছুই ভালো চলছিল কিন্তু হঠাৎ করেই কবির মানে আমার দুলাভাই নাদিয়া আপুকে নতুন করে আবার ডিস্টার্ব করা শুরু করে। আপুর নামে মিথ্যা বদনাম রটায়। বাবা আপুর কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
একদিন সকাল বেলা গ্রামের সবার মুখে শুনি নিসা আপু রাতের আধারে শাকিল মাস্টারের হাত ধরে পালিয়ে গেছে। নিসা আপুর বাবাও ট্রান্সফার করিয়ে আমাদের এলাকা থেকে চলে যায়। আর কখনো নিসা আপুদের খোঁজ পাইনি।
জানো দিপা আন্টি আমার মামটা না আগে এইরকম গম্ভির ছিল না। মামা খুব হাসি খুশি ছিলো সব সময় মুখে হাসি লেগেই থাকত। নিসা আপুর ঐ ঘটনার পর থেকে মামা দিন দিন কেমন গম্ভির হয়ে গেছে। এখন তো হাসতেই ভুলে গেছে।
নিসা অর্থ অন্ধকার নিসা এসে আমার মামার জীবনটা অন্ধকারে তলিয়ে দিয়ে গেছে।