বিকেল বেলার রোদ পর্ব ১১+১২+শেষ

১১+১২[সমাপ্ত]

#গল্পঃবিকেল বেলার রোদ
#পর্বঃ১১
#লেখাঃনুসরাত মাহিন

অনেক চিন্তা ভাবনা করে ডিসিশন নিলাম এই গ্রামে থাকা যাবে না। কবির বাহীনির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম। দিন নাই রাত নাই আমি যে বাসায় ভাড়া থাকতাম আমার রুমের জানালার উপরে ইট, পাথর ছুরে মারতো। কলেজে ক্লাস নিয়ে ফেরার সময়ে দূর থেকে আমার গায়ে ময়লা পানির বোতল, পলিথিন ব্যাগে ময়লা ভরে আমার গায়ে ছুরে মারতো।

আমার বাসায় সব ঘটনা খুলে বলার পরে বাবা মা আমাকে ঢাকায় চলে আসতে বলে। ঢাকা চলে না গিয়ে নাদিয়ার জন্য গ্রামে থেকে যাই। আব্বা আম্মকে অচিনপুর গ্রামে আসতে বলি নাদিয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করার জন্য। আব্বা আম্মা প্রথমে একটু বেকে বসে কারন আমার বড় ভাইয়া মানে দিপার দুলাভাই অবিবাহিত পরে আমার জোড়া জুরিতে রাজি হয় ঠিকেই কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।

কবিররা আমার সাথে নিসাকে জড়িয়ে মিথ্যা রটনা ছড়িয়ে বেরায়। গ্রামের মানুষের কাছে বলে বেরায় আমার সাথে নিসার ফিজিক্যাল রিলেশন আছে । আমরা শহর থেকে গ্রামে এসে গ্রামের পরিবেশ নষ্ট করছি। নষ্টমি করে বেরাই গ্রামের ছেলেমেয়েদের কে বেপথে নিয়ে যাচ্ছি।

কবির, জুলাহাস নাদিয়ার বাবার কাছে নাদিয়ার নামে মিথ্যা মিথ্যা খারাপ কথা বলে। নাদিয়ার বাবাকে ভয় দেখায় কবিরের সাথে নাদিয়ার বিয়ে না দিলে সালিশ বিচার ডাকবে গ্রামের সবার সামনে নাদিয়াকে বাবা মেয়ের বিচার করবে।

নাদিয়ার বাবা খুব ভয় পেয়ে যায় নাদিয়াকে বাসায় আটকে রাখে বের হতে দেয় না। আমি সাত দিন নাদিয়ার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারিনা। নাদিয়ার কোন ফোন ও ছিল না। কি করবো মাথায় কোন কিছু কাজ করতে ছিল না।

নিসার কথা মনে পড়ে গেল নিসাই একমাত্র পারে নাদিয়ার সাথে আমাকে দেখা করিয়ে দিতে। নিসা হলো নাদিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড তাছারা নাদিয়ার আম্মা নিসাকে খুব পছন্দ করতো। নাদিয়ার আম্মার ইচ্ছা ছিলো নাদিয়া মামার জন্য নিসাকে বউকরে নেবার।

নিসার কাছে হেল্প চাইলাম যেভাবে হোক নাদিয়ার সাথে দেখা করিয়ে দিতে নিসাও রাজি হয়ে গেল। ঐদিন সন্ধ্যায় পরে নিসা সাথে নাদিয়াদের বাসায় যাই। নাদিয়ার বাবা বাসায় ছিল না তাই সহজে নাদিয়ার সাথে দেখা করতে পারি। অনেকে কথা হয়েছিলো আমাদের দুজনের মধ্যে। ওটাই যে শেষ দেখা হবে বুঝতে পারিনি। চলে আসার সময় নাদিয়াকে বলে এসেছিলাম দুই এক দিনের মধ্যে ঢাকা থেকে আব্বা আম্মা আসবে খুব শীঘ্রই তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্থাব পাঠাবো।

আমি আর নিসা চলে আসি। আমি যে বাসায় থামতাম তার তিন বাড়ি পর নিসারা ভাড়া থাকতো। আমার বাসার সামনে চলে আসার পর নিসা বললো

—স্যার আপনি বাসায় চলে যান এইটুকু পথ আমি একাই যেতে পারবো।

— আরে না আমি তোমাকে বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসি চল।

— না স্যার কষ্ট করে আপনাকে আর যাওয়া লাগবে না। আপনি বাসায় চলে যান।

— তুমি যেতে পারবে ভয় লাগবে না তো..?

— হ্যা পারবো

তারপর নিসা চলে যায় আমি গেইটের মধ্যে ঢুকতে যাব তখনি কলেজের পিয়ন কামাল আমাকে পিছন থেকে ডাক দেয়। কামাল এসে আমাকে জানায় বাজারের মধ্যে নাদিয়ার আব্বা খুব অসুস্থ হয়ে পরেছে তাড়াতাড়ি চলেন ক্লিনিকে নেওয়া লাগবে।

আমি কামালের সাথে বাজারের দিকে রওনা দেই কিছু দুর যাবার পরে ওসি দেলোয়ার আমার পথ আটকে ফেলে। আমাকে জোড় করে থানায় নিয়ে যায়। থানায় আটকে রেখে সারারাত আমাকে অনেক টর্চার করে। কিছু মাদকদ্রব্য হিরোইন, ইয়াবার প্যাকেট আমার হাতে দিয়ে ছবি তোলে ।

পরের দিন বিকালে একটা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। কাগজটা ছিলো কলেজের রিজাইন লেটার। রাতের বেলা কবির,জুলহাস আমাকে নিয়ে যায় লঞ্চঘাট। ব্যাগপত্রসহ আমাকে লঞ্চ এ উঠিয়ে দিয়ে চলে আসার সময়ে জুলহাস আমাকে বলে জীবনে কোনদিন অচিনপুরে তোকে দেখি মাদক ব্যবসায়ী বলে পিটিয়ে মারবো। ফুপাজান তোর যে ইয়াবাসহ ছবি তুলে রাখেছে ওটাই প্রমান মানের ভুলেও এই গ্রামের কথা মুখেও আনবি না।

ঢাকায় আসার পরে বাইশ তেইশ দিন ক্লিনিকে ভর্তি ছিলাম। আইনি পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু আব্বা আম্মার জন্য পারিনি তারা অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিল। পরে ভাইয়াকে অচিনপুর পাঠিয়ে ছিলাম নাদিয়ার খবর নেবার জন্য। ভাইয়া খবর নিয়ে জানতে পারে নাদিয়ার কবিরের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে।

নাদিয়ার উপরে রাগ করে আর কখনো অচিনপুর গ্রামে যায়নি। আমি জানতাম না নিসা নিখোঁজ হয়ে। আমার ধারনা কবির, জুলহাসরা নিসাকে গুম করেছে। সারা গ্রামে ছড়িয়েছে আমার সাথে নিসা পালিয়ে গেছে। নিসাকে যদি আমার বিয়ে করার ইচ্ছাই থাকতো পালাতে যাব কেন নিসার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিতাম। আমার প্রস্তাবে নিসার বাবা রাজি হয়ে যেত চাচা আমাকে অনেক পছন্দ করতো।

নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে আমার কারনে নিসা নিখোঁজ হয়েছে আমি যদি ঐ দিন নিসাকে নিয়ে নাদিয়াদের বাসায় না যেতাম নিসাকে বিপদে পড়তে হতো না।

— জানি না নিসা বেঁচে আছে নাকি মেরে ফেলেছে। কবির জুলহাসকে ধরলেই সব তথ্য পাওয়া যাবে। শাকিল সাহেব এই নয় বছরে নাদিয়ার কথা কী মনে পড়েনি আপনার। কখনো কী ইচ্ছা করেনি কবির নামক মানুষ রুপি জানোয়ারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আসি।

— মনে করে কী হবে সে তো আমাকে ভুলে স্বামী সংসার নিয়ে মহা সুখে আছে। আমাকে ভালোবাসলে কবিরকে বিয়ে করতে পারতো না।

—সত্যিকার অর্থে আপনি নাদিয়াকে ভালোই বাসেননি যা ছিলো আবেগ আর মোহ। ভালোবাসলে নাদিয়ার পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্ঠা করতেন। কবিরকে নাদিয়া বিয়ে কররে চাইনি জোড় করে কবিরের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনি বল্লেন না স্বামী সংসার নিয়ে নাদিয়া মহা সুখে আছে আসোলেই মহা সুখে আছে। নাদিয়া যেখানে আছে অনেক সুখে আছে পৃথিবীর কারো ক্ষমতা নেই ওর সুখ কেরে নেবার। আমাদের ধর ছোয়ার অনেক বাহিরে।

আপনারতো আর কোন ক্ষতি হয়নি যা ক্ষতি হয়েছে আমাদের হয়েছে। মেয়েকে ও হারালাম আবার ভালোবাসে মানুষটাকে ও হারিয়েছি।

— আমি আপনার কথা বুঝতে পারলাম না । মেয়েকে ও হারালাম আবার ভালোবাসে মানুষটাকে ও হারিয়েছি মানে বুঝিনি।

— আমি তানভীর, নাদিয়ার মামা আর নিসার ভালোবাসা মানুষ। সবাই জানে আমার নাদিয়া আত্নহত্যা করেছে কিন্তু না সবাই ভুল জানে আমার মেয়েটা আত্নহত্যা করেনি নির্যাতন করতে করতে আমার ভাগ্নিটাকে মেরে ফেলেছে। আমি মামা হয়ে কিছুই করতে পারিনি।

— নাদিয়া মারা গেছে..??

— হ্যাঁ চার বছর আগে।

হেলাখেলা করে অনেক সময় কাঁটিয়ে দিয়েছি এখন আর বসে থাকার সময় নেই ফোর্স নিয়ে আজ রাতেই কবির, দেলোয়ার ,জুলহাসকে এরেস্ট করবো। সবার আগে ওসি দেলোয়ারকে ধরতে হবে।

দিপা তুই বাসায় চলে যা আমি শাকিল সাহেব আর নাবিলাকে নিয়ে গ্রামে যাবো।

— দোয়া রইলো,, শুভ কামনা আল্লাহ যেন নিসাকে তোর কাছে ফিরিয়ে দেয়। খোদা হাফেজ।

— দিপা ভেঙে পড়িস না আল্লাহর উপরে ভরাসা রাখ বিকেল বেলার রোদ তোর জীবনেও উঠতে পারে। আল্লাহ হাফেজ।

***
— তানভীর চরিত্রহীনা মেয়েটা কেন এ বাড়িতে এসেছে। এখনি চলে যেতে বল।

— দুলাভাই সারাজীবন নিজের ইচ্ছা মতো চলেছেন সন্তানের মূল্যায়ন কখনো করেনি। ভুল পথে চলতে চলতে সঠিক পথটাই আপনি হারিয়ে ফেলেছেন। বাবা হয়ে নিজের সন্তানকে চিনতে পারেনি। খুনি, লম্পট, চরিত্রহীন জানোয়ারটাকে কোলের মধ্যে রেখে ভালো মানুষগুলোকে খারপ বানিয়ে দিচ্ছেন। নাবিলা কোন অন্যায় করেনি অন্যায় করেছেন আপনি।

— বাবা মায়ের মুখে চুনকালি মেখে যে মেয়ে বিয়ের আসোর থেকে বেগানা পুরুষের হাত ধরে চলে যায় সেটা কী অন্যায় না।

—পালিয়ে যাওয়া যদি অন্যায় হয় তাহলে বাবা হয়ে আপনি কীভাবে যেনে শুনে নিজের বড় মেয়ের খুনির সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আপনাকে ভয় ভিতি দেখিয়ে নাদিয়াকে জোড় করে কবির বিয়ে করেনি। আপনি কী দেখেনি বিয়ের করার পর থেকে কবির প্রতিদিন নাদিয়ার গায়ে হাত তুলতো। মাঝে মাঝে মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলতো। কবিরকে একা দোষ দিলে অন্যায় হবে আপনি সমান ভাবে দোষি। আপনাকেও শাস্তি দেওয়া উচিত যে বাবা মেয়ের নির্যাতন দেখেও চোখ বন্ধ করে থেকে। বাবা হয়ে সারা গ্রামের মানুষের কাছে নিজের মেয়ের নামে দুর্নাম রটিয়ে বেরায় বদমাইস জামাইকে ভালো বলে প্রশংসা করে সে জন্মদাতা বাবা নামের কলঙ্ক। সবার কাছে যখন বলে বেরাতেন আমার মেয়ে খারাপ জামাই ভালো আপনার একটুও কী কষ্ট লাগতো না..?
আমি প্রতিবাদ করলে আপনি আমার বোনের গায়ে হাত তুলতেন বুড়া বয়সে বুবুকে আপনার হাতে মার খেতে হয়েছি। বুড়া বয়েসে বুবুকে তালাক ও দিয়ে চেয়েছেন। কেন করেছিলেন এই কাজ গুলো…??

— মানসম্মানে ভয়ে। বাপ দাদাদের কাছা থেকে শুনে এসেছি মাইয়্যা মাইসের কোন মূল্য নাই। সমাজের অসসম্মানিত বস্তু। পুরুষ মাইষের মর্যাদা অনেক বেশি।

— সন্তানের থেকে আপনার মানসম্মান বড় হয়ে গেল দুলাভাই। নাবিলা কারো সাথে পালিয়ে যায়নি। আমি নাবিলাকে বিয়ের আসর থেকে নিয়ে গিয়েছিলাম.। ঢাকা পাঠিয়ে ছিলাম ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর জন্য।
আর কথা বারাবো না। আপনার খুনি কুলাঙ্গার জামাইকে এখন থানা হাজতে নিয়ে যাব।

— কেন কবির কী করছে…??

— আপনার জামাই কী করছে শুনতে চান। আপনার জামাই একটা ধর্ষণকারী, এসিড নিক্ষেপকারী, খুনি। নাদিয়ার বান্ধুবি নিসাকে আপনার জামাই সহ চার জন মিলে নিসার বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে রেপ করে, এসিড মেরে মুখ ঝলসে দিয়েছিলো। খুন করে উত্তরপারার পুরাতোন পোড়াবাড়িতে লাশ মাটিচাপা দিয়ে রেখেছিল। কবিরের সাথের বাকি চারজনে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এখন কবিরকে নিয়ে যাব।

— আল্লাহ গো আমার নাতি দুইটার কী হবে…?

— আব্বা বিশ্বাস করেন আমি নিসাকে এসিড মারিনি খুন ও করিনি। জুলহাসের পাল্লায় পড়ে শুধু রেইপ করেছিলাম। নিসাকে জুলহাস এসিড মেরেছিলো। নিসাকে আমি খুন করিনি জুলহাস করেছে।

— নাদিয়াকে কেন খুন করেছিলে..??

চলবে…..

#গল্পঃবিকেল বেলার রোদ
#পর্বঃ১২
#লেখাঃনুসরাত মাহিন

নাদিয়া কী অপরাধ ছিলো,, কেনো সহজ সরল মেয়েটাকে মেরে ফেলেছিলে…???

—- নাদিয়াকে বিয়ের আগে আমি প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শাকিল মাস্টারের সাথে প্রেম করেছিল। রাস্তার ভরা মানুষের সামনে আমাকে চড় মেরে ছিলো। আমি জেদ করে নাদিয়কে বিয়ে করেলেও খুব ভালোবাসতাম কিন্তু
নাদিয়া বুঝতে পেরেছিল নিসা শাকিল মাস্টারের সাথে পালিয়ে যায়নি আমরা নিসাকে মেরে ফেলেছি। আমি বুঝতে পেরে ছিলাম নাদিয়া গ্রামের মানুষকে বলে দেবে বাঁচার জন্য নাদিয়াকে খুন করেছি।

— তুই যদি নাদিয়াকে ভালোবাসতি তাহলে অমানুষের মতো নির্যাতন করতে পারতি না। তোকে কঠিন শাস্তি দেব না হলে আমার নাদিয়া, নিসার আত্না শান্তি পাবে না।

নিসা হত্যা কান্ডে ওদের পাঁচ জনের ফাঁসির রায় হয়েছে। আসামিদের পরিবার থেকে অনেক চেষ্ঠা করেছিলো কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

একেতো এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষন, তার উপরে খুন। ওদের পরিবার থেকে কেস চলা কালীন আসামিদের জামিনে বের করতে চেয়েছিল । সরকার জামিন দেয়নি। এসিড নিক্ষেপ কারিদের জন্য সরকারি ভাবে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্দ। এসিড নিক্ষেপকারী আসামির কোন জামিন হয় না চৌদ্দ দিনের মধ্যে এদের শাস্তির ব্যাবস্থা করা হয়। এই কঠোর আইন এসিড নিক্ষেপকারী ও তার সাথে যারা সহযোগী সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

খুন,ধর্ষন, এসিড নিক্ষেপ দায়ে পাঁচ জনের ফাঁসির রায় হয়েছে এখন সময়ের অপেক্ষা ফাঁসি কার্যকরের।

আমরা ঢাকা চলে আসার সময়ে বুবুও আমাদের সাথে দুলাভাইকে রেখে চলে এসেছে। এত বড় অন্যায় করার পরেও দুলাভায়ের মধ্যে কোন অনুসূচনা ছাপ দেখতে পাইনি। বুড়া বয়সে একা থাকবে এটাই তার শাস্তি অবশ্য আরো বেশি শাস্তি দেওয়া উচিৎ ছিল।

নাদিয়ার বাচ্চা দুইটাকে ঢাকায় এনে ভালো স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি। বাচ্চা দুইটার মুখের দিকে তাকালে আমার নাদিয়াকে দেখতে পাই।

দিপার সাথে বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে গেছে হাতে একদমি সময় নেই কত কাজ বাকি আগামি সোমাবার আমাদের বিয়ে।

বেশ কয়েক বছর পর…

কাদের চাচার বাসায় রায়হান স্যারকে দেখে অনেকটা অবাক হয়েছি।

— জুনায়েদ তুমি এখানে..?

— আমারও একি প্রশ্ন স্যার আপনি এখানে…??

— আমি আমার বাবা মাকে দেখতে এসেছি।

— কাদের চাচা আপনার বাবা..??

— হ্যা কিন্তু তুমি এখানে..??

— আমি কাদের চাচা – চাচির দেখাশুনা করি। এতদিন পরে বাবা মায়ের কথা মনে পরেছে আপনার। স্যার আমি আপনাকে খুব শ্রদ্ধা করতাম কিন্তু আজ মন থেকে উঠে গেছে। যে বাবা তার সন্তানকে মানুষ করতে গিয়ে জমি জমা, ঘর বাড়ি সব কিছু শেষ করে ফেলে অথচ সেই সন্তান বাবা মাকে রাস্তায় ছুরে ফেলে দেয়। সন্তান থাকার পরেও যে বাবাকে বুড়া বয়সে রিকশা চালাতে হয় সেইসব সন্তানদেরকে আমি ঘৃনা করি।

— জুনায়েদ আমি বড় অন্যায় করেছি কিন্তু তুমি যে নীতি কথা বলছো তোমার মুখে এসব নীতি কথা মানায় না। তুমি কী তোমার বাবা মায়ের সাথে কম অন্যায় করেছ। অন্যের বাবা মায়ের সেবা করছো আর তোমার নিজের বাবা মা থাকে বৃদ্ধাশ্রমে।

সাত বছরে একটাবার খোঁজ নিয়ে দেখেছো তোমার বাবা মা কেমন আছে কোথায় আছে নেওনি। চার বছর আগে তোমার ভাবি, ভাবির বাপ ভাই মিলে তোমার বাবা-মাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। কলেজের শিক্ষকরা মিলে বেসরকারি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসি। । কলেজ থেকে প্রতি মাসে তাদের সব খরচ পাঠান হয়। কলেজ থেকে ব্যবস্থা না নিলে তোমার বাবা-মাকে ভিক্ষা করা লাগতো।

আমি কৃতগ্য তোমার কাছে জুনায়েদ। আমি ছেলে হয়ে যে কাজটা আমার করার কথা ছিল সেই কাজ তুমি করেছ। আমার বাবা মায়ের জন্য,আমার বোনের জন্য।

ছাদিয়ার সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। ছেলে মেয়ে দুটা’কে জিজ্ঞেস করেছিলাম তারা কার কাছে থাকবে। তাদের উত্তর ছিল মায়ের কাছে থাকবে। আমি আমার পাপের শাস্তি পেয়ে গেছি।

— স্যার আমার বাবা মা কোথায় আছে এখন..?

— কল্যানপুর বৃদ্ধাশ্রম। জুনায়েদ আমরা সন্তানরা খুব সার্থপর নিজেরা ভালো থাকার জন্য পিতামাকে ত্যাগ করি ভুলে যাই। সন্তানকে বড় করতে গিয়ে পিতামাতার সবকিছু ত্যাগ করে দেয়। দিনশেষে সার্থপর সন্তানগুলো কখনো সুখি হতে পারে না। না পায় দুনিয়া না পায় আখেরাত। সন্তাদেরকে পিতামাতার অভিশাপ দেওয়া লাগে না বাবা মায়ের বুকচিরে যে দীর্ঘশ্বাস বের হয় ওটাই অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়।

আমরা চিন্তা করি না আজকে আমি সুখে থাকার জন্য মা বাবাকে পর করে দেই ছুরে ফেলে দেই সেই একি ব্যবহার আমাদের সন্তানেরা আমাদের সাথে করবে।

— স্যারকে সাথে নিয়ে কল্যানপুর বৃদ্ধাশ্রমে আসার পরে দেখি কত বৃদ্ধ বাবা-মা বুকে আশাবেঁধে চেয়ে আছে সন্তানের অপেক্ষায় কবে প্রিয় সন্তান তাকে দেখতে আসবে নিয়ে যাবে আপন ঠিকানায়।

ছেলে আমার মস্ত মানুষ মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্লাটে যায় না দেখা এপার ওপার
নানা রকম জিনিস আর আসবাব দামী দামী
সবচেয়ে কম দামী ছিলাম একমাত্র আমি
ছেলে আমার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।

যেয়ে দেখি বাবা মা বৃদ্ধাশ্রমের সামনে বাগানে বসে আছে বিকাল টাইমে দু’জন এক সাথে সময় কাটায় সন্ধ্যার পর যে যার রুমে চলে যাবে। পুরুষ ইউনিট আলাদা মহিলা ইউনিট আলাদা। পুরুষ ইউনিটে শুধু পুরুষরা থাকে আর মহিলা ইউনিটে মহিলারা থাকে।
বুড়ো বয়সে দুজনের এক সাথে থাকার কথা ছিলো।

আমি বাবা মায়ের পা জড়িয়ে ধরে আছি।

— আমায় মাফ করে দাও আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি তোমাদের সাথে। অভিমান করে দূরে দূরে থেকেছি তোমাদের কোন খোঁজ নেইনি। আমি ছোটবেলা থেকেই তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি। তুমি চেয়েছ এক, আমি হয়েছি আর এক আব্বা আমার ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দাও।

— তুই কোন ভুল করিসনি ভুল করেছি আমি বাবা হয়ে সন্তানকে বুঝতে পারিনি নিজের মন মতো চলেছি। সন্তানের চাওয়া পাওয়ার কোন মুল্য দেইনি। বাবা মায়ের সাথেই তো ছেলে মেয়েরা অভিমান করবে তাই বলে আট বছর কিভাবে ভুলে থাকতে পারলি। আমি মানছি আমি অনেক বড় ভুল করেছি আমার কারনে মানুষের কাছে অপমানিত হয়েছিস, ছোট হয়েছিস। আমি জানি তুই আমার উপরে অনেক অভিমান করে আছিস। শুধু কী সন্তানরা অভিমান করবে বাবারা কী সন্তানের উপরে অভিমান করতে পারে না আমি ও তোর উপরে অনেক অভিমান করে আছি। এটা ঠিক আমি আমি খুব রাগি, আমি কী তোদেরকে ভালবাসি না..? ভালোতোবাসি অনেক ভালোবাসি কিন্তু তা কখনো বোঝাতে পারিনি। প্রতিটা বাবা -মা ই চায় তাদের সন্তান বড় হোক সবার কাছে তাদের মুখ উজ্জ্বল করুক এতটুকু আশা কী বাবা-মা সন্তানের কাছে চাইতে পারে না এটা অন্যায় ..??

— বাবা তুমি কোন অন্যায় করনি আমার বোঝার ভুল ছিলো তখন বয়স কম ছিল আমি বুঝতে পারিনি বাবা। বাবা আমি তোমার স্বপ্ন পূরন করেছি তুমি চেয়েছিলে তোমার ছেলে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়বে আমি তাই করেছি। তোমার ছেলে এখন একজন বিসিএস ক্যাডার।

—- পা ছার তুই কোন অন্যায় করিসনি।

— আগে বল তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ।

— বাবা মা হওয়া অনেক কঠিন অনেক অগেই দিয়েছি।

গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছি বাসের ভিতরে বসে আছি কিছুক্ষনের মধ্যে বাস ছাড়বে। আমাদের সাথে কাদের চাচাদেরকে ও নিয়ে এসেছি । কাদের চাচা চাচি এখন থেকে গ্রামে বাবা মায়ের সাথে থাকবে।

আট বছর আগে এই দিনটাতেই বাড়ি ছেড়ে ছিলাম সেইদিন কেউ একজন আমার পাশের সিটের সঙ্গী ছিল। নাবিলা এত অভিমান তোমার কতবার তোমার দুয়ারে গিয়েছি বার বার আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো। আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তুমি আমার হবেই।

প্রশাসনের সহায়তায় ভাবির বাপ ভাইদের বাসা থেকে বের করে দিয়েছি। লজ্জায় বাসা থেকে বের হইনা ভাইয়া যে এতোবড় একটা জঘন্য কাজ করবে ভাবতেই পারিনি। বাবার সম্মানের কথা একটাবার ও চিন্তা করেনি। গ্রামের মানুষের কাছে কিভাবে মুখ দেখাব।

বাবার বন্ধুর ছেলে ব্যারিস্টার তাকে দিয়ে হাইকোটে আপিল করার কথা বলেছিল কিন্তু মা বাবার মুখের উপরে না বলে দিয়েছে। মায়ের একটাই কথা জুলাহাস যে অন্যায় করেছে তার শাস্তি পেতেই হবে। আমিও চাই ধর্ষনকারির শাস্তি মৃত্যুদন্ড হোক।

আজ রাতে ভাইয়ার ফাঁসির রায় কার্যকর হবে আমি আর বাবা জেলখানায় ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এসেছি। মা আসেনি কোন কুলাঙ্গার সন্তানের মুখ মা দেখবে না। আমি জানি মা মুখে মুখে যতোই কঠিন কথা বলুক না কেন ভিতরে ভিতরে মা অনেক ভেঙে পড়েছে।

জেলখানায় ভিতরে নাবিলাকে দেখে আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না নাবিলা এখানে কী করে…??

— নাবিলা তোমরা এখানে..??

— আমার বোনের খুনিদের দেখতে এসেছি মৃত্যুর খবর শুনে কতটা খুশিতে আছে তা দেখার জন্য এসেছি।

— তোমার বোন! কে তোমার বোন..??

— নাদিয়া, নিসা আমার বোন কিন্তু আপনি এখানে..??

— অপরাধী ভাইয়ের সাথে শেষ বারের জন্য দেখা করতে এসেছি। জুলাহাস আমার বড় ভাই।

নাবিলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা আমার নেই চলে এসেছি ওর সামনে থেকে। নাবিলাকে পাওয়ার যেটুকু আশা ছিল তা আজ শেষ হয়ে গেছে। ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ব্যাথা কতটা কঠিন নাবিলার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝেছি। নাবিলা দুচোখে দিয়ে এখোনো ও অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে পাথরের মতো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের নিয়তি এটাই লেখা ছিল। সব সম্পর্কের পরিনতি সুখের হয় না কিছু সম্পর্ক কষ্টের থেকে ।

এ জীবনে হয়তো দ্বিতীয় কাউকে জড়াতে পারবো না সারাজীবন একা থাকলেই বা কী। একাকি কাঁটিয়ে দেব মৃত্যু আগ পর্যন্ত। যে মানুষটার জন্য আমি আজকের জুনায়েদ সেই মানুষটাকে কীভাবে হ্নদয় থেকে মুছে ফেলবো..??

আজ দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে গেছে বেঁকে
তোমার ও পথ আলোয় ভরানো জানি আমার এ পথ আধারে আছে যে ঢেকে।

***
— নাবিলা

— হ্যা মামা ভিতরে আসো।

— কীরে মা মনমরা হয়ে রুমে বসে আছিস কেন কিছু হয়েছে..??

— না সব ঠিক আছে শরীরটা ভালো লাগছে না অফিসে খুব কাজের প্রেশার যাচ্ছে।

— রাতে ঠিক মতো ঘুমাস না চেহারার কী বেহাল অবস্থা করেছিস..?? চোখের নিজে কালি পড়ছে.।

— ও কিছু না মামা সব ঠিক হয়ে যাবে।

— আমি তোকে কোন বিষয়ে প্রেশার দেব না তুই সময় নে কোন সমস্যা হলে আমাকে বল। এখন বলা লাগবে না তোর যখন ইচ্ছা করবে তখন বলিস। নিজেকে কষ্ট দিস না।

— মামা তুমি শুধু শুধু টেনশন করছো আমি ঠিক আছি।

— হুম ফ্রেশ হয়ে ছাদে আয় দিপা ফুচকা পার্টি আয়োজন করেছে।

— আচ্ছা মামা তুমি যাও আমি আসছি।

— দিপা বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি নাবিলা মনমরা হয়ে থাকে। প্রায় সকালে দেখি চোখ ফুলে থাকে মনে হয় সারারাত কান্না করে। নাবিলার কী হয়েছে তুমি কী কিছু জানো….??

— তানভীর নাবিলা অনেক কষ্টের মধ্যে আছে মেয়েটা তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। নাবিলা একজনকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে দু’জনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারনে দু’জনে অনেক কষ্ট পাচ্ছে। এখন এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে আছে না পারছে সামনে আগাতে না পারছে পিছনে ফিরে যেতে।

— তুমি আমাকে আগে বলনি কেন..??

— নাবিলা নিষেধ করেছিল তাই।

— ছেলেটা কে..?

— ছেলেটাকে তুমি খুব ভালো ভাবেই চেনো জুনায়েদ।

— জুনায়েদ!

— হুম জুনায়েদ । জুনায়েদের সাথে নাবিলার পরিচয় অনেক অগে থেকেই। নাবিলা যেবার প্রথম ঢাকায় এসেছিল তখন নাবিলার সাথে জুনায়েদের পরিচয় হয়। আমরা তো কেউই জানতাম না জুনায়েদ জুলহাসের ভাই তোমাদের একি এলাকার ছেলে। জুনাদেয় অনেক ভালো একটা ছেলে ওর পরিবারে সবাই অনেল ভালো শুধু জুলাহাসের কারনে সব এলোমেলো হয়ে গেল।

— জুনায়েদ যতয়ি ভালো হোক ওদের সাথে কোন প্রকার সম্পর্কে জড়ানো সম্ভব না।

— তানভীর তুমি কী চাও নাবিলার জীবনটা নাদিয়ার মতো শেষ হয়ে যাক। জুলহাসের অন্যায়ের শাস্তি জুনায়েদ কেন পাবে। প্লিজ তানভীর বোঝার চেষ্ঠা কর নাবিলা ধ্যান জ্ঞান সব কিছুতে জুনায়েদ। জুনায়েদকে ছাড়া নাবিলা কখনো সুখি হবে না। তোমরা নাবিলার উপরে এতটা অবিচার কোরনা মেয়েটা মরে যাবে।

— দিপা এ বিষয়ে আমি তোমার সাথে পরে কথা বলবো।

— কোথায় যাচ্ছো

— বুবুর রুমে যাই কী জরুরী কথা বলবে ডেকেছিল শুনে আসি।

তানভীর নাবিলার বিয়ের কথা কিছু ভাবছিস পড়াশুনা শেষ চাকরি করছে এখন তো ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেওয়া দরকার।

— বুবু আমিও নাবিলার বিয়ের বিষয়ে তোমার সাথে কথা বলবো ভাবছিলাম।

— যত তারাতারি পারিস নাবিলার বিয়ের ব্যাবস্থা কর।

— কেন বুবু কোন সমস্যা হইছে।

— নাবিলার তো বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে মেয়ে মানুষের একটু বয়স হলে ভালো পাত্র পাওয়া যায় না তাছাড়া নাবিলাকে বিয়ের কথা বল্লেই রেগে যায় বলে বিয়েআ করলে নোমান, নোভাকে কে দেখবে । নাদিয়া বাচ্চা দুটার প্রতি যেভাবে মায়ায় জড়িয়ে য বিয়ে পরে দোটানায় পরে যাবে। এখনি নমান ম@;বান, নোভাকে ছাড়া এক সেকেন্ডও থাকতে পারে না একটু চোখের আড়াল হলে পাগল হয়ে যায়। যত দেরি করবো পরবর্তীতে বেশি সমস্যায় পরে যাবো।

— বুবু তুমি ঠিক কথা বলেছ বিষয়টা আসোলেই অনেক জটিল। তুমি চিন্তা কোরনা নাবিলার জন্য আমি ছেলে দেখা শুরু করেছি।

কিছুদিন পর…আ

— নাবিলা আগামিকাল তো তোর অফিস বন্ধ ফ্রি আছিস।

— হ্যা আছি কিন্ত্য কেন আন্টি..??

— অনেক দিন বাহিরে ঘুরতে যাওয়া হয় না কাল বিকালে একজনের সাথে দেখা করতে যাব।

— কার সাথে..??

— তোর হোবু বরের সাথে।

— আন্টি মজা কোরনাতো

— মাজা না সত্যি আগামি শুক্রবার তোর বিয়ে। ছেলাটা খুব ভালো দেখতে শুনতে মাশাআল্লাহ সরকারি অফিসার, ফ্যামিলি অনেক ভালো তোমার মামার স্যারের ছেলে।

— তোমরাতো সবকিছু ঠিক করেই ফেলেছো তাহলে আমার দেখার দরকার কী..??

— কী যে বলনা তোমার পছন্দের একটা বিষয় আছে না।

— আমার পছন্দ হলেই কী আর না হলেই কী। সব কিছু আমাকে না জানিয়ে নিজেরা ঠিক করে বসে আছো। আমি যাবো না কোথাও।

— তোমার মামা খুব কষ্ট পাবে।

— আমি তোমাদের কাঁধের বোঝা হয়ে গেছি বিদায় করলে তোমরা বেঁচে যাবে আচ্ছা ঠিক আছে আমি বিয়েতে রাজি কিন্তু আমি কারো সাথে দেখা করবো না।

বাড়িতে উৎসব মুখোর পরিবেশ চারিদিকে লাল, নীল বাতি জ্বলছে। আজ নাবিলার বিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে বরপক্ষ এসে পড়বে।

সবার উপরে অভিমান করে বিয়ের দিন বাবার বাড়ির এক গ্লাস পানিও মুখে দেয়নি, কোন সাজগোজ ও করেনি শুধু মাত্র বেনারসি শাড়ী পরে এক কাপড়ে শ্বশুর বাড়ি গিয়েছে এমনকী বরের মুখটা দেখেনি।

বাসর ঘরে নাবিলা বসে আছে অঝরে চোখ দিয়ে পানি পরছে কেউ তার কষ্টটা বুঝলো না। মাঘ মাস প্রচন্ড শিত পড়েছে শিতে নাবিলা কাঁপছে। রুমের দরজা খোলার শব্দে বুকের মধ্যে ধুক ধুকানি শুরু হয়ে গেছে শরীরের কাঁপনি আরো বেরে গেছে। টের পাচ্ছে
কেউ একজন তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ করে অনুভব করলো গায়ে শাল পরিয়ে দেওয়া।

— খাটের ওপরে শাল রাখা ছিল তোমার শিত করছে অথচ গায়ে কিছু না পরে বসে আছ। নাও উঠো শুনলাম সারাদিন কিছুই খাওনি অবশ্য আমিও খাইনি খুব খিদা পেয়েছে টেবিলে খাবার এনে রেখেচি ওয়াসরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো তারপর একসাথে খাবো।

— কন্ঠটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে পিছনে তাকিয়ে দেখে….

জুনায়েদ আপনি এখানে..??

— হ্যাঁ আমি। আমার বাড়ি, আমার ঘর, বউটাও আমার এখানে আমি থাকবো না তো কে থাকবে।

— আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে??? আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি কিছুই বুঝতে পারছি না। প্লিজ একটা চিমটি কাঁটবেন।

— মামা যেদিন আমাদের বাসায় তোমার সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল আমিও স্বপ্ন ভেবেছিলাম। আমি কল্পনাও করিনি তোমার পরিবার আমার পরিবাব সব কিছু এত সহজে মেনে নেবে।

— কিভাবে সম্ভব দিপা আন্টি বলেছিল মামার স্যারের ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।

— আরে বুদ্ধু দিপা আন্টি কী ভুল বলেছে কিছু। আমার আব্বু তোমার মামার স্যার শুধু মামা না আমার, তোমারও স্যার।

— জুনায়েদ আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।

— তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে এটা সূর্যের মতো সত্য। নাবিলা তুমি সত্যি খুব সৌভাগ্যবতী তানভীর মামার মতো একজন মামা পেয়েছ । তোমার মামা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। এ কদিন তুমি যে কষ্ট পেয়েছো তার থেকে মামা আরো বেশি কষ্ট পেয়েছে তোমার কষ্ট দেখে। পুরুষ মানুষ শত কষ্ট হলেও খুব সহজে কাঁদেনা কিন্তু মামা আমার হাত ধরে কেঁদে একটাই কথা বলেছিলো জুনাদেয় আমার নাবিলাকে কোনদিন কষ্ট দেবে না। আমি সবকিছু সহ্য করতে পারবো কিন্তু আমার নাবিলার চোখের পানি সহ্য করতে পারবো না। আমিও ঐদিন মামা হাত ধরে কথা দিয়েছিলাম।

নাবিলা তুমি বিকেল বেলার রোদ দেখেছ কখনো..?

— ওভাবে খেয়াল করে দেখিনি।

— বিকেল বেলার রোদ হচ্ছে আকাশের সাথে সূর্য আলোছায়ার কানামাছি খেলা করে। মেঘের ফাক দিয়ে সোনালি ঝলমলে রোদ পৃথিবীর বুকে এসে পরে।
নাবিলা তুমি আমার বিকেল বেলার রোদ হবে..?? বিকেল বেলার রোদ যেমন করে আকাশটাকে সুন্দর করে সাজায় তুমি আমার জীবনটাকে সুন্দর করে সাঁজিয়ে দেবে।

— জুনায়েদ আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে।

— মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বুক দিয়ে আগলে রাখবো কোন দিন ছাড়ব না। নাবিলা কথা দাও কোন দিন ভুল বুঝে আমাকে ছেড়ে যাবে না।

— কথা দিলাম আমি সারাজীবন তোমার বিকেল বেলার রোদ হয়ে থাকব।

#গল্পঃবিকেল বেলার রোদ
#পর্বঃ১২ (অন্তিম পর্ব)
#লেখাঃনুসরাত মাহিন

***** সমাপ্ত *****

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here