বিবর্ণ আলোকবর্ষ পর্ব -১১

#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃদিশা মনি

সাজিদকে মায়ার এক বান্ধবীর সাথে চুম্বনরত অবস্থায় দেখে ফেলে আলো। ঘৃণায় তার গা রিরি করে ওঠে। আলো চিৎকার করে বলে,
‘কি হচ্ছেটা কি এসব?’

আলোর গলার স্বর কানে আসতেই সাজিদ দ্রুত সরে আসে। আর বলে,
‘আমার কথা শোন আলো৷ এটা একটা মিসআন্ডারস্যান্ডিং। আমার বন্ধুরা আসলে আমায় ডেয়ার দিয়েছিল যে,,,’

আলো সাজিদের গা’লে থা’প্প’র মে’রে বলে,
‘তুমি যে এতোটা নিচ সেটা আমি ভাবতেও পারিনি সাজিদ ভাই। তোমার মতো এত খারাপ একটা মানুষকে ভালোবেসে যে আমি নিজের কৈশোর পার করেছি সেটা ভাবতেও এখন আমার নিজের উপর রাগ হয়। তোমার মতো ছেলেরা কারো ভালোবাসার যোগ্য নও কারো না।’

সাজিদ আলো বাগে আনার জন্য নতুন ফন্দি করে। আলোকে নিজের কাছে টেনে নেয় সে। আকস্মিক ঘটনায় আলো পুরোপুরি নিশ্চুপ হয়ে যায়। নিজের শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে সাজিদকে নিজের থেকে আলাদা করার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। সাজিদ জোরপূর্বক আলোর কাছাকাছি যেতে থাকে। আলো এবার জোরেশোরে সাজিদকে একটা ধা’ক্কা দিয়ে নিজের থেকে আলাদা করে দেয়। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। আশেপাশের অনেক মানুষ তাদের এই অবস্থায় দেখে নিয়েছে। সবাই ছি ছি করতে শুরু করে দিয়েছে।

মানুষের ভিড় ঠেলে মায়া এগিয়ে এসে আলোকে জোরে একটা থা’প্প’র মে’রে বলে,
‘এই তোর লজ্জা করল না এমনটা করতে? নিজের চরিত্র যে কতটা খারাপ সেটা মহল্লার সবাইকে না দেখালে ভালো লাগছিল না তাইনা। আম্মু আব্বু কোথায় তোমরা দেখে যাও নিজের মেয়ের কীর্তি।’

আসাদুল করীম আলোর দিকে ঘৃণাভরা চোখে তাকায়৷ যেই বাবার চোখে এতদিন নিজের জন্য অকৃত্রিম স্নেহ দেখেছে তার চোখে ঘৃণা দেখে আলোর খুব কষ্ট হয়। আলো নিজের স্বপক্ষে বলে,
‘বিশ্বাস করো তোমরা আমার কোন দো’ষ নেই। সাজিদ ভাই আমায় জোর করে নিজের কাছে টেনে নিয়েছে।’

‘মিথ্যা কেন বলছিস আলো? আমি না তুই আমায় জোর করে নিজের কাছে টেনে নিয়েছিস। আমাকে বললি তুই চাস না আমার সাথে মায়ার বিয়ে হোক। তুই আমার বউ হতে চাস। তুই চাস আমি তোর জীবন সুখে ভরিয়ে দেই। একবারের জন্য হলেও নাকি তোর আমাকে চাই,,,’

সাজিদের কথাগুলো শুনে রাগে ক্ষোভে ফে’টে পড়ে আলো। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
‘চুপ করুন আপনি আর একটাও মিথ্যা কথা বলবেন না।’

আচমকা আসাদুল করীম আলোর গালে সজোরে একটা থা’প্প’র মা’রেন। আকস্মিক ঘটনায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় আলো। যেই বাবা কখনো তার সাথে রেগে কথা বলেনি সেই কিনা আজ তাকে সবার সামনে এভাবে মা’র’ল। আলোর কাছে সবটা মিথ্যা মনে হয়। আলো অবিশ্বাসের চোখে তার বাবার দিকে তাকায়।

আসাদুল করিম উপস্থিত সবার কাছে মাথা নিচু করে বলে,
‘আমার মেয়ে যে এতটা নিচে নামতে পারে সেটা আমি কখনো ভাবতে পারিনি। আমি ওর হয়ে আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চাইছি।’

একজন বলে,
‘এরকম দুশ্চ’রিত্রা মেয়েকে ঘরে রাখছেন কেন? এরকম মেয়েদের জায়গা তো প’তি’তা’ল’য়ে।’

আরেকজন বলে,
‘ঠিকই বলেছেন। এই কারণেই মেয়েটাকে ওর স্বামী ছেড়ে দিয়েছে। অবশ্যই মেয়েটাকে বাইরে অন্য ছেলেদের সাথে,,,’

আলোর আর সহ্য হচ্ছিল না। সে বুঝতে পারে এভাবে চুপ থাকলে কোন লাভ হবে না। আলো কিছু বলার আগেই মালেকা বেগম বলেন,
‘আপনারা কোন কিছু না জেনে একটা মেয়ের বিষয়ে এত কথা কিভাবে বলতে পারেন? আসাদ ভাই কি বললেন আপনি আমার মেয়ের জায়গা প’তি’তা’ল’য়ে হওয়া উচিৎ? আমার মনে হয় কথাটা আপনার জন্য প্রযোজ্য। কি ভেবেছেন আপনি আমি আপনার ব্যাপারে কিছু জানিনা। নিজের ঘরে বউ থাকতে আপনি অন্য নারীদের সাথে সম্পর্কে লিপ্ত। সে হিসেবে দেখতে গেলে আপনিও একজন,,,, জানি সমাজ শুধু মেয়েদের দোষই দেখে ছেলেদেরটা দেখে না। তাই ছেলেরা হা’জার’টা সম্পর্কে লিপ্ত থাকলেও তাদেরকে কিছু বলে না। অথচ একজন নারীকে অনুমানের ভিত্তিতে কত কিছু বলে দেওয়া যায়৷ আর লাবিব ভাই আপনি বললেন আমার মেয়ের চ’রিত্র ভালো না। তাহলে শুনুন আলোকে আমি জন্ম নাই দিতে পারি কি’ন্তু ওকে নিজের মেয়ের মতোই করে মানুষ করেছি। ওকে আমি ভালো করেই জানি। ও এরকম মেনে নয়। আপনারা কি জানেন আলোর স্বামী আতিক একজন ধ’র্ষ’ক ছিল? কি হলো অবাক হচ্ছেন বুঝি। হ্যাঁ এটাই বাস্তব। এই কারণেই আলো ওর স্বামীকে ছেড়ে দিয়েছে। এখন আপনারা যে এতক্ষণ ধরে এত কথা বলছিলেন এখন বলুন তো আপনারা কি আপনাদের মেয়ে-বোনেদের এরকম ছেলের সাথে সংসার করতে দিতেন?’

মালেকা বেগমের কথা শুনে সবাই মাথা নিচু করে। আসাদ নামক ব্যক্তিটি অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বলে,
‘তাহলে এখন আমরা নিজের চোখে যা দেখলাম সেটা কি?’

‘আপনারা কেউ নিজের চোখে দেখেছেন কি হয়েছে নিশ্চয়ই দেখেন নি। তাহলে এত বড় কথা বলছেন কোন মুখে সেটা বুঝতে পারছি না।’
‘আলো তুই চল আমার সাথে। আর কেউ তোকে বিশ্বাস করুক বা না করুক আমি সবসময় তোকে বিশ্বাস করি।’

আলো অশ্রুসিক্ত চোখে মালেকা বেগমের হাত ধরে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। আলো সবসময় মালেকা বেগমকে নিজের আসল মায়ের মতোই দেখেছে। আজ মালেকা বেগম আবার প্রমাণ করে দিলেন তিনি আলোকে নিজের মেয়েই ভাবেন। আজ আলোর মা বেচে থাকলেও তাকে এভাবেই হয়তো রক্ষা করতো।

২১.
গোটা মহল্লায় এখন আলো-সাজিদের ব্যাপারটা নিয়েই কথা বলছে। অনেকে আলোর পক্ষে তো আবার অনেকে সাজিদের পক্ষে কথা বলছে। তবে বেশিরভাগ মানুষই সাজিদের পক্ষে কথা বলছে। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ আমরা একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করি। এখানে নারীদের দিকে সবাই যত সহজে আঙুল তোলে পুরুষের বেলায় সেটা হয়না।

এতকিছুর পরেও মায়া সাজিদের সাথে বিয়ের ব্যাপারে অনড়। আসাদুল করীমও সাজিদের পক্ষেই রয়েছেন। তিনিও এখন অন্য সবার মতো আলোকেই দো’ষী ভাবেন।

মালেকা বেগম এরকম পরিস্থিতি দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
‘তোমরা বাবা মেয়ে অনেক বড় ভুল করছ। সাপুড়েকে দূরে ঠেলে দিয়ে সা’পকে কাছে টেনে নিচ্ছ। ছো’ব’ল তোমাদের খেতেই হবে।’

সজীব কিছু কাজে বাইরে গিয়েছিল। বাড়িতে এসে পুরো ঘটনা শুনে তার মাথা গ’র’ম হয়ে যায়। সজীব স্বভাবতই তার ভাইয়ের ব্যাপারে সব জানে। তাই খুব সহজেই বুঝতে পেরেছে আলো নিরপরাধ। সবকিছুর পেছনে রয়েছে সাজিদ। সজীব বিড়বিড় করে বলে,
‘তুই অনেক অন্যায় করেছিস ভাইয়া। এবার এক এক করে তোকে সব অন্যায়ের শা’স্তি দেব আমি। Just wait and watch.’

২২.
চারিদিকে বিয়ের আমেজ। কিছুক্ষণ পরেই মায়া এবং সাজিদের বিয়ে। তার আগে আসাদুল করীম কঠোর গলায় আলোকে বলে দিয়েছে বিয়েটা হওয়ার পরই যেন সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আলোর খুব অভিমান হয় তার বাবার কথায়। আসাদুল করীমও তার মেয়ের উপর একটুও দয়া দেখান না। মালেকা বেগম তাকে কতবার বোঝান যে মেয়েটাকে বের করে দিলে সে কোথায় যাবে কি করবে। আসাদুল করীম সেসব নিয়ে কোন কথাই বলেন না।

জোনাকিও তার জামা-কাপড় সব গুছিয়ে নিচ্ছে। যেই বাড়িতে তার বোনের জায়গা হবে না সেই বাড়িতে সেও থাকতে চায়না। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে দুই বোন মিলে আজ সব কিছু সেরে দূরে চলে যাবে। নতুন করে নিজেদের জীবনটা শুরু করবে।।

জোনাকি আর আলো যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় তখনই সজীব তাদের কাছে এসে বলে,
‘একটু অপেক্ষা করে যা তোরা। যাওয়ার আগে একটা ড্রামা তো দেখে যা।’
চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here