বিবর্ণ সিঁদুর
পর্ব-১৬
Taniya Sheikh
রাতে আকাশ পাতাল ভেবে ভেবে ঘুম হলো না রজনীর৷ খুব ভোরে বিছানা ছেড়ে চলে আসে ছাদে। পৃথিবীর একাংশ তখন আড়মোড়া ছাড়ছে। ভোরের কোমল পবনে মিশে থাকে আলাদা রকমের পবিত্রতা। গায়ে লাগতেই সর্বাঙ্গ ধন্য ধন্য করে। মনের যত ক্লেশ,ক্লেদ সেই সময়ে ম্লান হয়। অদূরে কিছুদূর পরপর গৃহস্থ ঘর। ঐ যে সামনে খোলা মাঠ। তাতে জায়গায় জায়গায় গজিয়েছে শ্বেতশুভ্র কাশফুল। আকাশ আর কাশফুলের কী অপরূপ মিতালি! ক্রমশ ঘুমন্ত পরিবেশ পাখির কূজনে জেগে উঠছে। রজনী গাছের কচি কিশলয়ে চোখ রাখে। মনের শান্তি কোথা থেকে আসে তা তার জানা নেই, তবে চোখের প্রশান্তি আসে এই প্রত্যুষের কচি কিশলয় দেখলে। হঠাৎ পেছনে গলা ঝাড়ার শব্দে ঘুরে তাকায় রজনী।
” দেখিয়া তব রুপ, প্রকৃতির রূপ ম্লান মনে হয়। বারংবার এই শুধু চাই, এই বর্তমান সুন্দর ভবিষ্যতে ধাবিত হোক। এই দুরত্ব ঘুঁচে যাক। মুছে যাক মনের সংকোচ, সংশয়। যা থাকুক তা কেবলই ভালোবাসাময় এবং তুমিময়।”
রজনী একচিলতে হেঁসে ঘুরে দাঁড়ায়। নিচু গলায় বলে,
” আপনিও গতরাতে ঘুমাননি, স্যার?” প্রশ্নটা করেই লজ্জিত হয়। তন্ময় এগিয়ে এসে বলল,
” লজ্জা পেলে মেয়েদের সৌন্দর্য্য বেড়ে যায়,কথাটা শুনেছিলাম আজ প্রমাণও পেলাম।”
দুজনেই চুপ করে সামনের খোলা মাঠে তাকিয়ে রয়। পূর্ব আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। আবছা আঁধারের রেশ কেটে আলো ফুটছে একটু একটু করে। তন্ময় বলল,
” কিছু খাবে?”
” আপনি রান্না করতে পারেন?”
” কিছু খাওয়াতে কি রান্না শেখাটা আবশ্যিক?”
” না, মানে এমনিতেই বলছিলাম।”
তন্ময় রজনীর দিকে ঘুরে রেলিং-এ ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। বলে,
” তুমি কি এখনো আমাকে ভয় পাও?”
রজনী জবাব দেয় না। অবনত মুখে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তন্ময় জোরে শ্বাস ছেড়ে বলল,
” অপেক্ষা করো, আমি কিছু নিয়ে আসছি।”
কিছুক্ষণ পর ট্রেতে কয়েকপদের নাস্তা সহ উপরে এলো তন্ময়। ট্রেটা সামনের রেলিং-এর উপর রাখে।
” ঘুম ভাঙতেই প্রচন্ড ক্ষুধা লাগে আমার। কিছু না কিছু খাওয়া চাই ই চাই তখন। পারবে তো সকাল সকাল এই আবদার পূরণ করতে?”
” সময় হলেই দেখতে পাবেন। এখন তো বলব না।”
” কেন? এখন বললে সমস্যা কোথায়?”
” জানি না।”
রজনী যেতে উদ্যোত হতেই তন্ময় পথ আগলে দাঁড়ায়। ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে বলে,
” ভেরি ব্যাড,রাই। এমন করে কাওকে কষ্ট দেওয়াটা কী ঠিক?”
” আমি কষ্ট দিচ্ছি না,স্যার।বরং আপনি যেন কষ্ট না পান সেজন্যই বললাম। ভবিষ্যতে কী হবে আমরা কেউ জানি না। আগাম কথা বলা আর মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া একই কথা। আমি মিথ্যাবাদি হতে রাজি, ধোঁকাবাজ হতে পারব না, স্যার।”
” রাই!”
” হ্যাঁ, স্যার। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কী ঘটছে আমার সাথে। আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে আপনার কারনে। না পারছি আপনাকে ফেরাতে আর না পারছি,,”
তন্ময় দু’হাতে রজনীর মুখটা তুলতেই দেখে চোখের কোনায় জল টলমল। নাকের ডগা ফুলে ফুলে উঠছে। তন্ময় বলল,
” তোমাকে কিছুই ভাবতে হবে না। আমার দিকে তাকাও। তাকাও, রাই। এই আমি তোমাকে বলছি,তুমি আমার। সমাজ, সংস্কারের বেড়াজাল ভাঙতে হলে ভাঙব তবুও তোমাকে ছাড়ব না। বিশ্বাস করে একটিবার হাতটা ধরে দেখো।”
রজনী সরে দাঁড়ায়। চোখ মুছে বলে,
” বিশ্বাস,অবিশ্বাসের কথা নয়।”
” তাহলে সমস্যা কোথায়?”
” আমি বুঝাতে পারব না আপনাকে। হয়তো আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারছি না। আমাকে সময় দিন প্লিজ। তারচেয়েও বড় কথা উনি সরাসরি না বললে,,,”
রজনী থেমে যায়। ওড়নায় গোট করতে করতে স্থির দৃষ্টিতে নিচে তাকিয়ে আছে। তন্ময় ওকে দেখছে। শুধু দেখছে না,ওর মুখটা পড়তে চাইছে। দুর্বোধ্য! এ যে পড়া সহজ নয়। তন্ময় চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে খাবার মুখে তুলে চিবোতে চিবোতে থেমে যায়।
” তুমি কী চাও, সে প্রশ্ন এখনই করছি না। শুধু কিছুটা সময় তোমার সান্নিধ্যে থাকতে দাও আমাকে। বাকিটা আমি নিজেই বুঝে নেব ।”
রজনী মুখ তুলে তাকায়। তন্ময় অন্য দিকে দৃষ্টি মেলে খাবার চিবোচ্ছিল। মুখটা বিমর্ষ তার। তা দেখে জবাব না দিয়ে অপ্রতিভ মুখে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায় রজনী। একলা ছাদের কিনারে শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে তন্ময়। বুক জুড়ে হাহাকার।
অষ্টমী ওদের বেশ আনন্দেই কাটল। সারাদিনের ঘুরাঘুরির চেয়ে রাতের ঘুরে বেড়ানোই উপভোগ করত। মিতুলের কাজিনরা ইতোমধ্যে তন্ময়, রজনীর বিষয়টা কিছুটা জানলেও নিজেদের মধ্যেই রেখেছে। মিতুলের সাথে সুদীপ্তর আবার প্যাচ আপ হয়ে গেছে। অনিমা,তুর্জয়ের সবে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে আরকি। নবমীর রাতে ওরা সবাই মিলে বের হলো। যে যার মতো ঘুরছে,গান শুনছে। তন্ময় এক ফাঁকে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে রজনীর হাত ধরে নিয়ে এলো নির্জন রাস্তায়। মণ্ডপ থেকে এর দুরুত্ব বেশ অনেকটাই। সরু পিচঢালা রাস্তার উপরে পাশাপাশি হাঁটছে দুজন। এই রাস্তার একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে ক্যানেল। অপরপাশে ঝোপঝাড়ের অদূরে বসতি। ওরা ক্যানেলের উঁচু ঘাস আচ্ছাদিত স্থানে বসল। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। রজনীর কিছুটা ভয় ভয় করছে। তন্ময় বুঝতে পেরে অভয় দিয়ে বলল,
” আমি থাকতে ভয় কিসের?”
” কেন, ভূত প্রেত কি আপনার জ্ঞাতি, কুটুম?”
” হুমম,শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়।”
” আপনি না?”
” কি?”
” ঘোড়ার ডিম। আমার ভয় করছে চলুন, প্লিজ।” রজনী উঠে দাঁড়াতেই হাত টেনে ধরে তন্ময় বলল,
” একটু বসো ।”
” বাড়ি চলুন না।”
” আরে ভীতু।ডোন্ট ওয়ারি। কিছু হবে না রিলাক্স।”
” হু। ”
তন্ময় আঁধারে রজনীর মুখটার দিকে তাকিয়ে রয়। লজ্জায় মুখ নুয়ে বসে আছে রজনী। মনে মনে বলছে,” এই উনার কথা। সারাক্ষণ হা করে চেয়ে থাকা। জানে আমার লজ্জা লাগে তবুও।ধ্যাৎ!” তন্ময় সামনে মুখ ঘুরিয়ে বলে,
” তুমি এখনো তাকে ভালোবাসো তাই না?”
রজনীর লজ্জা রাঙা মুখটা হঠাৎই পাণ্ডুর হয়ে যায়। চমকে তাকায় তন্ময়ের দিকে।
” মা-নে?”
” না, কিছু না।”
তন্ময় সামনের অন্ধকারে তাকিয়ে আছে। পাশে বসা রজনী স্তব্ধ। কিছুক্ষণ চোখের সামনে কেবল ধোঁয়াশাই ধোয়াশা দেখল। তন্ময় উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
” চলো উঠি এবার।”
” হুম।”
চুপচাপ পাশাপাশি হাঁটছে। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না অথচ দুজনই জানে দুজনের খবর। কিছুদূর এগিয়ে তন্ময় বলল,
” এই যে এইটুকু সময় তোমাকে পেলাম তাতেই আনন্দ আমার। তোমার হাতটা ধরতে না পারলাম, পাশাপাশি হাঁটতে তো পারছি। এইবা কজন পায়?” তন্ময়ের কন্ঠস্বর কেঁপে ওঠে। রজনী থমকে দাঁড়ায়। তন্ময় চোয়াল শক্ত করে পুনরায় বলে,
” আমার ভালোবাসা তোমার গলার হার না হোক, কলঙ্কমালাও হবে না,রাই। আমি তোমাকে ব্যর্থ প্রেমিকের মতো চেয়ে যাব, প্রেয়সী ভেবে বুকের বা’পাশ জ্বালাব তবুও অধিকার খাটাতে যাব না আর। ঐ নয়নে ভালোবাসার দেখা পাই না পাই, ঘৃণা দেখিয়ো না। সব সহ্য হবে শুধু ওটাই সহ্য করতে পারব না, রাই।”
রজনী ছুটে এসে তন্ময়ের হাতটা ধরে। হাতটা কপালে ঠেকিয়ে বলে,
“আমি আপনার কষ্টের কারন কেন হলাম? কেন?”
তন্ময় নিজেকে সামলে রজনীর চিবুক ধরে মুখ তুলে বলল,
” তুমি কাঁদছ কেন,রাই? কেঁদো না তুমি। তোমার কোনো দোষ নেই। আমার দূর্ভাগ্য! আমি কান্না ছাড়া আর কিছুই দিতে পারলাম না তোমাকে। বড়ো ইচ্ছা ছিল জগতের সকল সুখ তোমার পায়ের তলে এনে দেব। কিন্তু সে ইচ্ছা আমার অপূর্ণই রয়ে গেল। পৃথিবীর কয়জন মানুষের ইচ্ছা পূরণ হয় বলো? আমিও না হয় সেই কজনের কাতারে রইলাম। তুমি দুঃখ করো না।”
” আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?”
তন্ময় হতচকিত হয়ে তাকায়। রজনী অবিচলিত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে তন্ময়ের হাতটা ধরে।
” বলুন? করবেন বিয়ে। আজ, এক্ষুনি?”
” এ হয় না, রাই।” তন্ময় হাত ছাড়িয়ে সরে দাঁড়ায়। রজনী এগিয়ে গিয়ে বলে,
” কেন হয় না?”
” কারন তোমার মনে এখনো সৌমিত্র বাবুই আছে। সেখানে আমার জন্য কোনো জায়গা নেই। তাহলে এসব কি করুনা বলে ধরে নেব? না, রাই। না। আমার ভালোবাসাকে করুনা করো না তুমি।”
” করুনা করছি না। আপনার সাহায্য চাচ্ছি শুধু। আমি মুক্তি চাই। এই লোকদেখানো সম্পর্কের ভার টানতে টানতে আমি মরে যাচ্ছি। আমাকে উদ্ধার করুন। আমি তাকে ভুলতে চাই। এই সম্পর্ক ভুলতে চাই। সম্মানের সাথে বাঁচতে চাই আমি, তন্ময়। আমার সম্মান আমাকে ফিরিয়ে দিন।”
তন্ময়ের পায়ের কাছে পড়ে কাঁদছে রজনী। একই কথা বার বার বলছে। তন্ময়ের চোখ ভিজে আসে। চোখ মুছে রজনীকে দু’হাতে দাঁড় করিয়ে বলে,
” তুমি যা চাও তাই হবে। কিন্তু অবৈধভাবে নয়। তোমার গায়ে একফোটা কলঙ্ক লাগতে দেব না আমি। ক’টা দিন সময় দাও আমাকে।”
বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে এবারের দুর্গা পূজা শেষ হলো। দেবী দুর্গা বাপের বাড়ি থেকে ফিরেছে স্বামীর কৈলাসে। মিতুলরা বিসর্জনের একদিন পরই ঢাকা রওনা দেয়। ফিরতি পথে সবাইকে হাসিখুশি দেখা গেল। রজনী, তন্ময়ের চোখে চোখে ইশারা চলল পুরোটা পথ। রজনী যত চায় তন্ময়ের দিকে মন ঘুরাতে ততই যেন অজানা আশঙ্কা কাজ করে। থেকে থেকেই অস্বস্তিতে ভোগে।
বাসায় পৌঁছে প্রথমে মুখোমুখি হয় জামিলের মায়ের। ভদ্রমহিলা রজনীকে দেখলেই মুখ কেমন যেন করে ফেলেন। দরজা খুলেই বললেন,
” তাহলে এলে?”
” জি।”
” ভালো। থাকো যতদিন মন চায়। পরের বাড়ি থাকতে তো পয়সা দেওন লাগে না।” শেষ কথাটুকু তিনি যেতে যেতে বললেন। খারাপ লাগলেও রজনী চুপ করে শুধু শুনল। রজনীর গলা শুনে রুনা ভেতরের রুম থেকে বের হয়ে আসে।
” কখন এলি?”
” এই তো, আপা।”
রজনীর হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে পানি এগিয়ে দেয়। কেমন কাটল,কোনো অসুবিধা হয়েছে নাকি ইত্যাদি জিজ্ঞেস করে। রজনী ইতিবাচক জবাব দিল। রজনীর হাসিমাখা মুখটা রুনার নজর এড়ায় না। মনে মনে খুশিই হয় ওর পরিবর্তন দেখে। রজনীকে রুমে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে নিজে ঢোকে রান্না ঘরে।
চলবে,,,
Plz porer part ta din
Plz di ektu taratari next part ta din
Wait korchi plz ektu taratari
Plz next part ta din Ami r thakte pr6i na next ki holo janar jnno
Apu next episode koba pabo….plz happy ending daban….r kotodin arom fala rakhban…next episode din….plz
Next part ta Kobe pabo please Taratari din😤😤😤😤😤😤😤😤😤😤😤😤😤😤😤😤😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡Khub rag korechi kotodin dhore wait korchi
Porer part kuthay
Porer part kuthay pabo?
Pora golpo na diley R golpo diyen na ,,sodo sodo waiting a thaktey valo lage na,,,,Rag hoi onk,,,