বিবাহিত বর পর্ব শেষ

#বিবাহিত_বর
#৪র্থ_এবং_শেষ_পর্ব
#অনন্য_শফিক



জবা বললো,’আপনাকে বিয়ে না করলে অন্য কারোর কাছে মা আমায় বিয়ে দিয়ে দিতেন। তখন কী উপায় হতো আমার?’
‘কিন্তু আমিও যদি ওদের মতো হই? তোর সাথে স্বামীর মতো থাকি?’
জবা তার দু চোখ মুছে বললো,’আপনাকে আমি চিনি। আপনি অনেক ভালো!’
‘আম্মা যখন জানবে তখন কী হবে?’
‘কাউকে জানতে দেয়া যাবে না।আমরা সবার সামনে স্বামী স্ত্রীর মতোই আচরণ করবো। যেন ওরা দেখে বুঝতে না পারে কোন কিছু।’
আমি বললাম,’আচ্ছা ঠিক আছে।’
নিজের ফুপাতো বোনের সুখের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিলাম।
আমরা দুজন এক ঘরেই থাকতাম কিন্তু আলাদা ভাবে। উল্লাসের সাথে ও মাঝেমধ্যে দেখা করতে চাইতো।আমি তাই ওকে নিয়ে যেতাম উল্লাসের কাছে।আমি দূরে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের পাহাড়া দিতাম আর ওরা প্রেম করতো পার্কে কিংবা কোন রেস্টুরেন্টে।
এভাবেই সময় গড়িয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু সমস্যা হলো যখন আমাদের নাম মাত্র বিয়ের দু বছর পেরিয়ে গেলো।
আম্মা হঠাৎ করে একদিন জবাকে বললো,’জবা, বিয়ার তো আর কমদিন হয় নাই। এখনও বাল বাচ্চার খবর নাই কেনো?’
জবা তখন লজ্জিত মুখে বলেছিল,’আল্লাহ না দিলে কী করবো বলেন! আপনি দোয়া করেন আল্লাহর কাছে। আল্লাহ যেন আপনাকে তাড়াতাড়ি দাদি বানান!’
তারপর সে রাতে আম্মাকে বলা কথাটি আমার কাছে জবা বলতে বলতে হেসে গড়িয়ে পড়লো সে।
কিন্তু আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম বেশ! চিন্তায় পড়ে গেলাম এই জন্য যে এখন তো ডাক্তারদের কাছে আনাগোনা শুরু হবে।আম্মা হয়তোবা নিজেই নিয়ে যাবেন ডাক্তারের কাছে। তখন কত রকমের প্রবলেম ফেইস করতে হবে!
জবাকে আমি বললাম সবকিছু।জবা বললো,’কোন সমস্যা হবে না।ডাক্তারকে ম্যানেজ করা যাবে।’
জবা ঠিকই বলেছিল।আমরা চার পাঁচবার ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। আমাদের সাথে আম্মাও গিয়েছিলেন।আর তখন ডাক্তার জানালো,জবা কোনদিন বাচ্চার মা হতে পারবে না।
আম্মা এই কথা শুনে কেমন যেন হয়ে গেলেন।যে মেয়ে বাচ্চার মা হতে পারবে না তাকে ঘরে রেখে তিনি কী করবেন?
কিন্তু আসল বিষয় তো আর তিনি জানতেন না।জবা তো আগে থেকেই ডাক্তারকে ম্যানেজ করে রেখেছিল।ডাক্তার তো তার কথামতোই জানালো যে সে আর বাচ্চার মা হতে পারবে না।
তারপর থেকে আম্মার আচরণ কেমন পাল্টে গেল! তিনি জবাকে এখন আর আদর সোহাগ করেন না।কথায় কথায় বন্ধ্যা,বাজা বেটি এইসব নোংরা নোংরা কথা বলে লজ্জা দেন।
জবা গিয়ে কেঁদেকেটে তার মার কাছে বলে।
অবশেষে হঠাৎ একদিন আম্মার সাথে কী কথা নিয়ে যেন জবার তর্ক বেঁধে যায়।আর আম্মা তখন রাগে জবার গায়ে হাত তুলে ফেলেন।
এতে জবার মুক্তির পথ একেবারে সুগম হয়ে যায়।সে এবার কেঁদে কেটে আমাদের বাড়ি ছেড়ে তার বাবার বাড়ি চলে যায়।তার মা অর্থাৎ আমার ফুপি এবার শক্ত জেদ করে বসেন। মেয়েকে আর তিনি আমাদের বাড়িতে দিবেন না।
আম্মা এতে আরো বেশি রেগে যান।তিনি দ্রুত আমার মাধ্যমে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেন জবার কাছে।
আমি নিজেও আর তখন বাঁধা হয়ে দাঁড়াইনি।কারণ ততদিনে উল্লাস নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে।

জুয়েলের মুখ থেকে সবকিছু শুনে ওর প্রতি খুব মায়া হলো আমার। এতোক্ষণ ওর প্রতি আমার রাগ থাকলেও এখন আর তার প্রতি আমার কোন রাগ নেই।আমি শান্ত এবং সৌম্য চোখে তার চোখে তাকালাম।কী সুন্দর কালো চোখ। সেই চোখ জুড়ে কী অপার মায়া!একটা ছেলের চোখও কী এতো মায়াময় হতে পারে?
আমি নিজে থেকেই জুয়েলের দুটো হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম। তারপর বললাম,’আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি?’
জুয়েল বললো,’তুমি বিশ্বাস করলে আমি তোমায় ভালো বাসতে পারি!’
আমি মৃদু হেসে ওর বুকে মুখ গুজে নিয়ে বললাম,’আমি তোমায় অনেক বিশ্বাস করলাম!’
জুয়েল আমাকে শক্ত করে ওর বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,’আমিও তোমাকে অনেক ভালো বেসে ফেললাম।’
তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম জবা আর উল্লাসের কথা।
জুয়েল বললো,’ওদের বিয়ে হয়েছে এক বছর হয়েছে।ডিভোর্সি মেয়েকে উল্লাস বিয়ে করতে রাজি শুনে দ্রুত আয়োজন করে বিয়ে দিয়ে দিলেন ছোট ফুপু।আর জবাও নাকি এখন মা হতে চলেছে!’
‘বাহ বেশ ভালো তো!
কিন্তু আমার ভয় হয় কী জানো?’
‘কী?’
‘আমি যদি কখনো বাচ্চার মা হতে না পারি তখন যদি তুমি আমায় তোমার মায়ের কথায় ডিভোর্স দিয়ে দাও?’
জুয়েল আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,’কস্মিন কালেও নয়।আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাদের ঘর সংসার হোক ভালোবাসাময়।’
আপনার পছন্দের গল্প পড়তে পেইজটি তে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন
___সমাপ্ত___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here