বিবাহিত বর পর্ব ১

‘তুমি আমার ছেলের দুই নম্বর বউ।এর আগে যে বউ আছিলো সে বন্ধ্যা। সাড়ে চাইর বৎসর আমার ছেলের সাথে সংসার কইরাও সন্তান দিতে পারলো না।তাই তারে তালাক দেয়া হয়ছে।তুমি নিশ্চয় সন্তান দিতে ব্যার্থ হইবা না?’

স্বামীর বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পর প্রথম দিনেই নিজের শাশুড়ির মুখ থেকে এমন একটা কথা শুনে আমার চোখ কেমন ঝাপসা হয়ে এলো। শরীর জুড়ে ঘামের স্রোত বয়ে যেতে লাগলো।
কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো আমি বোধহয় কানে ভুল শুনছি।তাই নতুন করে শোনার জন্য বললাম
,’আম্মা কী বললেন যেন!’
আমার শাশুড়ি তখন বললেন
,’বলছি তুমি আমার ছেলের দুই নম্বর বউ।’

কোন কিছু না বুঝে না ভেবে আমি তখন শব্দ করে করে কেঁদে উঠলাম।আর কাঁদতে কাঁদতে বললাম,’তাহলে আগে বলেননি কেন আপনার ছেলের দ্বিতীয় বিয়ে এটা?’
আমার শাশুড়ি তখন বললেন,’বললে কী আর তুমি বিয়ে বসতা আমার ছেলের কাছে?’
আমি এবার কাঁদতে কাঁদতে বললাম,’আমার সাথে আপনারা প্রতারণা করেছেন। কেন এমন করেছেন? আমার ক্ষতি করে কী লাভ হলো আপনাদের?’
আমার শাশুড়ি তখন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,’তোমার ক্ষতি করি নাই মা। তোমার বাপ গরীব মানুষ।গরীব মানুষ হইয়া ধনী মানুষের সাথে তোমার বিয়া হইছে এইটা তোমার সৌভাগ্য!’
‘কিন্তু এই বিয়েতে তো আমি রাজি না!’
কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বললাম আমি।
আমার শাশুড়ি তখন বললেন,’বিয়া তো হয়েই গেছে মা।আইজ রাইতে তোমার বাসর। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তোমরা সুখি হও মা। আল্লাহ তোমাদের নেক সন্তান দান করুক।’
আমি তখন কোন কথা বলতে চেয়েও কান্নার জন্য বলতে পারলাম না।

বাসর ঘরে বসে থেকে আমি ঢুকরে কাঁদছি। আমার স্বামী জুয়েল তখন আমার কাছে গিয়ে আমার হাত ধরে বললো,’সরি!আমি আগেই বলে দিতে চেয়েছিলাম সবকিছু।বলতে চেয়েছিলাম আমি আগে একটা বিয়ে করেছি।এটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে। কিন্তু আম্মার জন্য পারিনি।’
জুয়েলের কথা শুনে রাগে আমার পিত্তি জ্বলে উঠলো।এ কেমন ছেলে! মায়ের জন্য অন্য একটা মেয়ের সাথে বিয়ে নিয়ে প্রতারণা করেছে সে!

আমি বললাম,’আপনি আমার হাত ছাড়ুন বলছি!’
জুয়েল বললো,’বিশ্বাস করো আমার কোন দোষ নাই!’
‘দোষ নাই!’
বলে ওর কাছ থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম। জুয়েল তখন বললো,’জোর করতে হবে না।আমি নিজেই ছেড়ে দিচ্ছি তোমার হাত। কিন্তু বিশ্বাস করো আমার মায়ের জন্যই সবকিছু লুকিয়ে রেখেছি আমি।’
জুয়েলের অনুনয় আমায় একটুও টলাতে পারলো না।আমি ওকে বললাম,’শুনুন। আপনি আমায় এখন ডিভোর্স দিবেন। আপনার মতন কাপুরুষের সাথে এক মিনিটও থাকতে চাই না আমি!’
‘ঠিক আছে না থাকো।আমি তোমায় ছুঁয়েও দেখবো না পর্যন্ত। কিন্তু তুমি হুটহাট কোন ডিসিশন নিও না। বরং তুমি একটা রাত ভাবো। ভেবে দেখো আমায় ডিভোর্স দিবে না সংসার করবে!’
‘আমি আপনাকে ডিভোর্স দিবো।’
‘না এখন বললে তো হবে না। আগামীকাল বলবে।আজ সারারাত ভাববে।শুনো, তুমি যদি আমার কাছ থেকে ডিভোর্স নিয়ে চলে যাও তবে কিন্তু তুমি ঠকবে। ঠকবে এই জন্য যে মানুষেরা এরপর থেকে জানবে তুমি তালাপ্রাপ্তা।আর তালাকপ্রাপ্তা মেয়ের জন্য আগে বিয়ে করেনি এমন কোন ছেলে পাবে না তুমি। বরং যাকে পাবে সে আগে দু একটা বিয়ে করেছে এমন হবে।এমনও হতে পারে তার দু একটা সন্তানও আছে।’
জুয়েলের কথা শুনে রাগে কাঁপতে কাঁপতে আমি বললাম,’করুক দু চারটা বিয়ে।আর সন্তান থাকুক। কিন্তু সে তো আপনার মতন প্রতারক হবে না। মিথ্যে বলে আমায় বিয়ে করবে না

জুয়েল তখন বললো,’দেখো আগেও বলেছি আমি একটা পরিস্থিতির শিকার। মায়ের জন্য এমন করেছি আমি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমায় কোন কষ্ট পেতে দিবো না।’
আমি বললাম,’এই কথাটা নিশ্চিত আপনার আগের স্ত্রীকেও বলেছিলেন আপনি! কিন্তু সন্তান দিতে না পারায় তাকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিলেন?’
জুয়েল তখন শান্ত গলায় বললো,’আসলে তুমি যা জেনেছো তার সবটা সত্যি নয়। এখানে অনেক কথাই লুকোনো আছে। আস্তে আস্তে সব কথা শুনতে পারবে তুমি!’
‘সব কথা কখন শুনতে পাবো?যখন সন্তান দিতে না পেরে আমিও তালাকপ্রাপ্তা হবো তখন?’
জুয়েল নিজেকে স্থির করে বললো—

#চলবে


#বিবাহিত_বর
#১ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here