#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১২
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি সালমা আক্তারকে ঘরে রেখে এসে ভালোভাবে চিন্তা করে দেখে স্বর্ণা বোধহয় মিরপুরের আশেপাশে থাকে।কারণ প্রথমবার মিরপুরেই তাদের দেখা হয়েছিল।এখন যে করেই হোক তাকে স্বর্ণার ঠিকানা জোগাড় করতে হবে।বৃষ্টির মনে পড়ে যায় চিত্রার কথা।চিত্রা এইসব কাজে একেবারে ওস্তাদ।ভার্সিটিতে সবার ক্রাশ,বয়ফ্রেন্ড,গার্লফ্রেন্ডের খোঁজ কত সহজেই বের করে দিয়েছে।বৃষ্টি ভাবে স্বর্ণার ব্যাপারে চিত্রার সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
__________
বৃষ্টি অনেকদিন পর চিত্রাকে ফোন করে। ফোন রিসিভ করলে চিত্রা বলে,
-“এতদিন পর হঠাৎ আজ আমার কথা মনে পড়ল?”
-“আজও মনে পড়তো না একটা দরকারের জন্যই ফোন করেছি।”
-“আচ্ছা বল কি দরকার।”
-“তুই আমাকে একজনের খোঁজ জোগাড় করে দিতে পারবি?”
-“কার?”
-“আমার ননদ স্বর্ণার।ও মনে হয় মিরপুরের আশেপাশে কোথাও থাকে। তুই মিরপুরে একটু খোঁজ নিয়ে দেখিস।”
-“আচ্ছা আমি দেখছি তোর কাছে কোন ছবি থাকলে পাঠিয়ে দে।”
-“আমি ছবি এঁকে দিচ্ছি।”
বৃষ্টি স্বর্ণার মুখটা মনে করে তার ছবি আঁকে।তারপর ফোনে ছবি তুলে নিয়ে চিত্রাকে পাঠিয়ে দেয়।
চিত্রাও মিরপুরে চলে যায় স্বর্ণার খোঁজে।
_________
বৃষ্টির আজ মনটা কেমন করছিল তাই সে তার বাড়িতে চলে আসে।বাড়িতে বসে আরশির সাথে গল্প করছিল বৃষ্টি।মর্জিনা বেগম ইদানিং বৃষ্টির সাথে তেমন কথা বলেন না।বৃষ্টি বুঝতে পারে সূর্যর সাথে তার এরকম ব্যাপারটা তার দাদি মেনে নিতে পারছে না।কিন্তু সেই বা কি করতে পারে।
আরশি বৃষ্টিকে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে,
-“সূর্যর সাথে তোমার সংসার কেমন যাচ্ছে? তোমরা সুখী তো?”
বৃষ্টি মলিন হাসে।তারপর বলে,
-“এই পৃথিবীতে কেউই সুখী নয়।সুখ যে এখন খুবই দূর্লভ।”
আরশি বৃষ্টির কথা শুনে বুঝতে পারে নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে।সে বৃষ্টিকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে তার আগেই বরকত হোসেন চলে আসেন।
বরকত হোসেন এসে বৃষ্টিকে বলেন,
-“চল বৃষ্টি আমরা খেতে যাই।আরশি তুমিও এসো।”
খাবার টেবিলে বসে বরকত হোসেনের বুকে হঠাৎ ব্যাথা ওঠে।বৃষ্টি খুবই ব্যতিব্যস্ত হয়ে যায়।বরকত হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।ডাক্তার এসে বলেন,
-“ওনার হার্ড এট্যাক হয়েছে অবস্থা বেশি ভালো না।আমরা কোন আশা দিতে পারছি না।”
বৃষ্টি তার বাবার এইরকম অবস্থায় নিজেকে সামলাতে পারে না।আরশিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।বরকত হোসেনের এইরকম অবস্থার খবর পেয়ে সূর্য হাসপাতালে চলে আসে।সূর্য এসে বরকত হোসেনের অবস্থার খোঁজ খবর নেয়।
বৃষ্টি আল্লাহকে ডাকতে থাকে।তিনি যেন তার বাবাকে সুস্থ করে দেন।এমনিতেই ছোটবেলায় নিজের মাকে হারিয়েছে।এখন বাবাকে হারালে সে অনাথ হয়ে যাবে।সূর্য বৃষ্টিকে শান্তনা দেওয়ার জন্য তার কাধে হাত রাখে।বৃষ্টি হাতটা সরিয়ে নেয়।সূর্য বুঝতে পারে বৃষ্টি এখনো তার উপর রাগ করে আছে।
সারাটা দিন এভাবে চলে যায়।রাত ৮ টার দিকে একজন ডাক্তার এসে বলে,
-“আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম ওনাকে বাঁচানোর।কিন্তু সবকিছু আমাদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল।সরি আমরা মিস্টার বরকত হোসেনকে বাঁচাতে পারিনি।”
বাবার মৃত্যুর খবরে বৃষ্টি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।বৃষ্টি শোকে পাথর হয়ে যায়।মর্জিনা বেগম নিজের ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে আহাজারি করতে থাকেন।বৃষ্টি কিছুক্ষণ পর আব্বু,আব্বু বলে ছুটে যায় তার বাবার কাছে।হাসপাতালের বেডে তার নিথর দেহ পড়ে ছিল।
বৃষ্টির শোকে সূর্যেরও কষ্ট হচ্ছিল।তার ইচ্ছে করছিল বৃষ্টির সব দুঃখ দূর করে দিতে।কিন্তু সেও তো অপারগ ছিল।
_______________
বরকত হোসেনের জানাযার পর দাফন সম্পন্ন হয়।মর্জিনা বেগম এখনো কেঁদেই চলেছেন।অন্যদিকে বৃষ্টি এখনো নিশ্চুপ।কোন কথা বলছে না সে।হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল সেটা সে বুঝতেই পারল না।এক নিমেষেই তার পুরো পৃথিবী বদলে গেল।বাবা না থাকলে যে পুরো পৃথিবীই অন্ধকার।ছোটবেলায় মাকে হারানোর পর বাবাই তো তার সব ছিল।তাই বাবার মৃত্যুটা কোনভাবেই সে মেনে নিতে পারছে না।
সালমা আক্তার বৃষ্টিকে বলেন,
-“আর কতক্ষণ চুপ থাকবে? কিছু তো বলো।তোমার বাবা আর নেই কাঁদবেনা তুমি?”
বৃষ্টি কোন কথাই বলে না।কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি ডুকরে কেঁদে ওঠে।
-“আমার আব্বু কেন আমায় একা রেখে চলে গেল? আম্মু তো অনেক আগেই চলে গেছে এখন আব্বুও।আমাকে কে আগলে রাখবে এখন?”
আলামিন ইসলাম এসে বলেন,
-“আমরা আছি তো।আমরা তোমাকে আগলে রাখব।”
বৃষ্টি শুধু কেঁদেই চলে।আলামিন ইসলাম আরশিকে বলে,
-“চলো আরশি তুমি এখন আমার বাড়িতে গিয়ে থাকবে।সোহেল তো এখন আর ওখানে থাকেনা তাই…”
-“মাফ করবেন কিন্তু আমি সেটা পারব না।ঐ বাড়িতে আমি আর ফিরতে পারব না।আমি ভার্সিটির হোস্টেলে গিয়ে থাকব নাহয়।কিন্তু দাদি কোথায় থাকবে?”
আরশির কথায় বৃষ্টির তার দাদির কথা মনে পড়ে।আরশি তো ঠিকই বলেছে।বাবার শোকে আরশির এতক্ষণ তার দাদির কথায় মাথায় আসেনি।আলামিন ইসলাম বলেন,
-“উনি নাহয় আমাদের বাড়িতে গিয়ে থাকবেন।”
মর্জিনা বেগম সেখানে এসে বলেন,
-“আমি এই বাড়িতেই থাকতে চাই।এই বাড়িতেই আমার ছেলের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।আমার স্বামীও এই বাড়িতেই মা*রা গেছেন।তাই আমিও আমৃত্যু এই বাড়িতে থাকতে চাই।”
বৃষ্টি বলে,
-“দাদি তোমার খেয়াল রাখবে কে?”
-“আমি নাহয় একটা কাজের লোক রেখে দেব।আর তাছাড়া আরশি তো আছেই।”
___________
দেখতে দেখতে সময় চলে যায়।বৃষ্টির বাবার মৃত্যুর এক সপ্তাহ হয়ে গেছে।বৃষ্টি এখন নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে।চিত্রা বৃষ্টিকে ফোন করে বলে,
-“তুই এখন কেমন আছিস রে?”
-“আগের থেকে কিছুটা ভালো।”
-“নিজেকে সামলানোর চেষ্টা কর।আঙ্কেল তোকে খারাপ থাকতে দেখলে অনেক কষ্ট পাবেন।যাইহোক তুই স্বর্ণা৷ নামের মেয়েটার খোঁজ করছিলি না? আমি আজ তার খোঁজ পেয়েছি।মেয়েটার ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছি তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়।”
বৃষ্টি খবরটা শুনে খুশি হয়।সে আলামিন ইসলাম আর সালমা আক্তারের কাছে গিয়ে বলেন,
-“আজ আপনাদের জন্য সারপ্রাইজ আছে।”
আলামিন ইসলাম জিজ্ঞাসা করেন,
-“কি সারপ্রাইজ?”
-“সেটা সারপ্রাইজ পেলেই বুঝতে পারবেন।”
____________
বৃষ্টি চিত্রার যাওয়া ঠিকানায় গিয়ে দেখতে পায় অনেকজন লোক মিলে স্বর্ণাকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে।বৃষ্টি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন,
-“কি হয়েছে এখানে? আপনারা একটা মেয়ের সাথে এরকম ব্যবহার করছেন কেন?”
একজন লোক বাঁজখাই গলায় বলেন,
-“এই মেয়ে অনেকদিন থেকে আমার বাড়িতে ভাড়া থাকে কিন্তু ঠিকঠাক ভাড়া মেটায় না।এই মেয়েকে বাড়িতে রাখব কেন?”
-“আচ্ছা বলুন কত টাকা”
-“১০ হাজার টাকা।”
বৃষ্টি তার ব্যাগ থেকে ১০ হাজার টাকা বের করে দিয়ে বলে,
-“এই নিন।”
স্বর্ণা রেগে বলে,
-“আমার কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই।”
-“তুমি একদম বেশি কথা বলবে না।আমি কিন্তু তোমার ভাবি হই।আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবে।”
-“এই পৃথিবীর কারো সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।”
-“তুমি একদম আর এরকম ফালতু কথা বলবে না।সম্পর্ক এত ফেলনা নয় যে তুমি চাইলেই তুলে দিতে পারবে।কার উপর এত রাগ দেখাচ্ছ তুমি? সেই মায়ের উপর যে তোমাকে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধরেছে, নাকি সেই বাবার উপর যে নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তোমায় মানুষ করেছে।”
-“তুমি আমার ব্যাপারে কিছু জানোনা তাই এরকম বলছো।”
-“সবকিছু জানলেও এই একই কথা বলতাম।বাবা-মার মূল্য কি সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝি।অনেক আগেই নিজের মাকে হারিয়েছি কিছুদিন আগে বাবাকেও হারালাম।তাই তোমায় বলছি সময় থাকতে সব ঠিক করে নাও।নাহলে হয়তো পরে আফসোস করতে হবে।”
-“কিন্তু আমার পরিবারের মানুষ কি আমায় মেনে নেবে? তারা তো আমায় বের করে দিয়েছে।”
-“এখন এত অভিমান নিয়ে থেকোনা।একবার ফিরে গিয়ে তো দেখো তারা তোমায় আপন করে নেয় কি-না।”
স্বর্ণা আর কিছু বলার আগেই বৃষ্টি স্বর্ণার হাত ধরে নিয়ে আসে।তারপর গাড়িতে তুলে।
গাড়িতে করে স্বর্ণাকে তার বাড়ির সামনে নিয়ে আসে বৃষ্টি।স্বর্ণা অনেক দ্বিধাদ্বন্দে ছিল কিন্তু বৃষ্টি তাকে আশ্বাস দেয়।
বৃষ্টির ভরসায় স্বর্ণা ভিতরে যায়।বৃষ্টি বাড়িতে ঢুকে দেখে তার কথায় আলামিন,সালমা আক্তার,সূর্য সবাই ড্রয়িং রুমে উপস্থিত।আরশিও এসেছে।বৃষ্টি সবার সামনে এসে বলে,
-“দেখুন আমি কাকে নিয়ে এসেছি।আপনাদের জন্য সারপ্রাইজ।”
(চলবে)#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১৩
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টির কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকায়।বৃষ্টির পাশে স্বর্ণাকে দেখে সবাই বেশ খানিকটা অবাক হয়।স্বর্ণার তো ভয় লাগছিল সবাইকে এভাবে দেখে।বৃষ্টি স্বর্ণার হাত শক্ত করে ধরে তাকে মনোবল দেয়।
আলামিন ইসলাম স্বর্ণাকে দেখে যে খুশি হননি সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।সালমা আক্তার নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেন না।এতদিন পর নিজের মেয়েকে বাড়িতে আসতে দেখে ছুটে আসেন স্বর্ণার কাছে।ছুটে এসে স্বর্ণাকে নিজের বুকে টেনে নেন।এতদিন পর নিজের মায়ের বুকে মাথা রেখে অদ্ভুত রকমের তৃপ্তি অনুভব করে স্বর্ণা।সূর্যও এগিয়ে এসে স্বর্ণার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।আরশির সাথেও স্বর্ণা খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।সেও এতদিন পর স্বর্ণাকে দেখে খুব খুশি হয়।শুধুমাত্র একজন মানুষ যেন স্বর্ণার আগমনে খুশি নন।
আলামিন ইসলাম রেগে নিজের রুমের দিকে হাটা নেন তখন বৃষ্টি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আলামিন ইসলাম বলেন,
-“আমাকে আটকিও না বৃষ্টি।আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না।”
-“স্বর্ণার থেকে এরকম মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কেন আপনি? যেই মানুষটা আমার বাবার মৃত্যুর পর আমাকে এভাবে আগলে রেখেছে, নিজের মেয়ের প্রতি সে এতো উদাসীন কেন?”
বৃষ্টির মুখে এরকম কথা শুনে আলামিন ইসলাম বলেন,
-“কারণ ওকে আমি মেয়ে হিসেবে মানি না।যেই মেয়ে আমার সম্মানের কথা ভাবে নি তার কথা আমি কেন ভাবব?”
বৃষ্টি বুঝতে পারে আলামিন ইসলাম খুব রেগে আছে।তার রাগ ভাঙানো এত সহজ হবে না।তাই বৃষ্টি স্বর্ণাকে বলে,
-“তোমাকেই কিন্তু সব ভুল বোঝাবুঝি মেটাতে হবে স্বর্ণা।কারণ ভুলটা তোমারই ছিল।তুমি সবাইকে বাধ্য করেছ তোমাকে পর করে দিতে।”
বৃষ্টির এহেন কথা শুনে স্বর্ণা মাথা নিচু করে।সে নিজেও জানে সব ভুল তার।কিন্তু স্বর্ণাই বা কি করতে পারত? সে তো নিরুপায় ছিল।স্বর্ণাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে বৃষ্টি তাকে ধমক দিয়ে বলে,
-“এভাবে চুপ থেকোনা স্বর্ণা।আজ তোমাকে মুখ খুলতেই হবে।এতবছর নিজের মধ্যে লুকানো কথাগুলো সবাইকে আজ বলতেই হবে।আমি জানি এসব কথা লুকিয়ে রেখে তুমিও মনে মনে অনেক কষ্ট লালন করেছ।কিন্তু তুমি একবার ভেবে দেখো এখানে সবাই তোমার আপনজন।তাদের থেকে কথা লুকিয়ে লাভ কি? তুমি নিজের কষ্টটা সবার সাথে ভাগ করে নাও।”
স্বর্ণা এবার ডুকরে কেঁদে দেয়।তাকে এভাবে কাঁদতে দেখে আলামিন ইসলামও আজ আর নিজের ইগো বজায় রাখতে পারেন না।ছুটে যান নিজের আদরের মেয়ের কাছে।ছোট থেকে মেয়েকে কত আদরে মানুষ করেছেন তিনি,তার কোন আবদারই অপূর্ণ রাখেন নি।সেই মেয়ের চোখের জল কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।
-“তুই কাঁদিস না স্বর্ণা।এই দেখ আমি তোর বাবা তোর পাশেই আছি।তুই বল মা তোর কি সমস্যা হয়েছিল।”
-“আমি…আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি বাবা।আমার জন্য একজনের জীবন শেষ হয়ে গেছে।আমি নিজেকে কোনদিন সামলাতে পারব না।আমি শাস্তির যোগ্য কেবল।তোমরা আমাকে শাস্তি দাও।আমি সব শাস্তি মাতা পেতে নেব।”
আলামিন ইসলাম স্বর্ণাকে শক্ত করে আগলে ধরেন।নিজের মেয়েকে এতটা ভেঙে পড়তে দেখে বাবা হিসেবে আজ নিজেকে খুব ব্যর্থ মনে হচ্ছে তার।
স্বর্ণা বলতে থাকে,
-“আমি সত্যি বলছি আব্বু আমি নিজে থেকে বিপথে চলে যাইনি।আমার মানসিক অবস্থা একসময় এত খারাপ হয়ে গিয়েছিল, অপরাধবোধ,অনুশোচনা আমাকে এই পথে নিয়ে গিয়েছিল।আর যেই ছেলেটাকে দেখেছিলে আমার রুমে সেও আমার সাথে জোর জবরদস্তি করেছিল।আমি সেদিন মিথ্যা বলেছিলাম।কি করবো বলো নিজের জীবনের প্রতি খুব উদাসীন হয়ে গিয়েছিলাম।নিজেকেই নিজে ঘৃণা করতাম।আ*ত্ম*হ*ত্যা মহাপাপ জন্য আমি শুধু নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছি।নাহলে….”
-“কি এমন হয়েছিল যে তুই নিজেকে এতটা ঘৃণা করতে শুরু করেছিস? কিসের অপরাধবোধ ছিল তোর?”
স্বর্ণা নিশ্চুপ থাকে।সূর্য হঠাৎ বলে,
-“তুমি ওকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করো না আব্বু।আমি চাইনা ওর পুরানো ক্ষতটা আবার তাজা হয়ে উঠুক।”
-“তুই কি এই বিষয়ে কিছু জানিস? তাহলে বল আমাদের।”
-“হুম জানি।সঠিক সময় হলে স্বর্ণা নিজেই তোমাদের সব বলবে।এখন ওকে একটু বিশ্রাম নিতে দাও।কতদিন পর আমার বোনটা আবার বাড়িতে ফিরল।”
-“তুই কিভাবে জানিস ভাইয়া?”(স্বর্ণা)
-“সব বলব।আগে তুই যা আরাম কর।আম্মু তুমি ওকে ওর রুমে নিয়ে যাও।বৃষ্টিকে সকালে ঐ রুমটা পরিস্কার করতে দেখেই আমি সব বুঝে গিয়েছিলাম।”
বৃষ্টি আরচোখে সূর্যর দিকে তাকায়।সূর্য বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকায় তাদের চোখাচোখি হয়ে যায়।সূর্য মুচকি হাসে, বৃষ্টি চোখ সরিয়ে নেয়।
________
স্বর্ণা চুপচাপ তার রুমে বসে ছিল।বৃষ্টি তার রুমে আসে সাথে আরশিও আসে।স্বর্ণা আরশিকে দেখে বলে,
-“কেমন আছ ভাবি? সোহেল ভাইয়াকে তো কোথাও দেখছি না।”
আরশি মলিন হেসে বলে,
-“তোমার ভাইয়ার খবর আমি জানি না।আর আমি এখন তোমার ভাবিও নই।তুমি হয়তো জানো না আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।”
-“এই কয়বছরে কত কি বদলে গেছে।আসলেই মানুষের জীবনে কখন কি হয় বলা যায়না।”
আরশি বলে,
-“তোমার সাথে দেখা করার জন্যই এই বাড়িতে এসেছি এখন আমি যাই।”
বৃষ্টি আরশিকে বলে,
-“লাঞ্চ করে নাহয় যেও।এখন আমরা সবাই মিলে একটু গল্পগুজব করি।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে।আর একটা কথা বৃষ্টি তুমি একটু তোমার শ্বশুরকে বলে দিও তিনি যেন সোহেলকে বাড়িতে ফিরে আসতে বলে।আমার জন্য শুধু শুধু কেন এই বাড়ির ছেলে বাইরে থাকবে।যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।স্বর্ণাও এখন ফিরে এসেছে।সোহেল ফিরে আসলেই তোমাদের পরিবারটা পরিপূর্ণ হবে।”
-“সোহেল একদিন ঠিকই নিজের ভুল বুঝতে পারবে দেখো।”
সালমা আক্তারের কথায় আরশি মুচকি হেসে বলে,
-“ও নিজের ভুল বুঝতে পারলেও আমার জীবনে আমি আর ওর জীবনে কখনো ফিরবো না।”
বৃষ্টি বুঝতে পারে এসব কথা আরশির ভালো লাগছে না।তাই কথা ঘুরানোর জন্য বলে,
-“স্বর্ণা তুমি নাকি পড়াশোনা সম্পূর্ণ করোনি।এতদিন কি করেছ তাহলে?”
স্বর্ণার মুখটা হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যায়।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করে,
-“নিজের প্রতি অবহেলা আর অবজ্ঞায় আমি নিজের লাইফটাই শে*ষ করে দিয়েছি।এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমি অনেকদিন ফুটপাতে কাটাই।এরপর আমি বুঝতে পারি সমাজে টিকে থাকতে হলে আমায় প্রতিবাদী হতে হবে।তাই আমি প্রতিবাদি রূপ ধারণ করি।আগে থেকে মা*রপিট জানতাম।তবে এরপর আমি পেপার বিক্রির কাজ করতে থাকি।সেটা দিয়েই কোনরকম চলি।”
স্বর্ণার এতো দুঃখে ভড়া জীবনের গল্প শুনে সবাই খুব কষ্ট পায়।সালমা আক্তার বলতে থাকেন,
-“এই কয়েকবছর তুই এত কষ্টে থাকলি অথচ আমি…মা হিসেবে সত্যিই আমি ব্যর্থ।আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস।”
-“না আম্মু তুমি এসব কি বলছ? তোমার কোন দো*ষ নেই সবকিছু তো আমার ভাগ্য।আমি নিজেই যেটা বেছে নিয়েছি।”
-“তোর কিসের এত অপরাধবোধ ছিল বলনা রে স্বর্ণা।”
-“আম্মু আসলে…”
হঠাৎ সোহেলের গলার আওয়াজ সবার কানে আসে।সালমা আক্তার তো বুঝতেই পারেন না সোহেল কেন আবার ফিরে এলো।
আরশিও সোহেলের কন্ঠ শুনে অস্বস্তিবোধ করে।বৃষ্টি ইশারা করে তাকে সামলাতে পারে।আরশিও বৃষ্টিকে ইশারা করে বলে সে ঠিক আছে।
বৃষ্টি বলে,
-“চলুন তো নিচে গিয়ে দেখি কি হয়েছে।”
সবাই নিচে চলে যায়।সবাইকে দেখে সোহেল খুশি হয়।কিন্তু আরশিকে দেখা মাত্রই সে রেগে যায়।স্বর্ণাকে দেখে বলে,
-“তুই এতদিন পর তাহলে ফিরে এলি।যাইহোক তোর নতুন ভাবির সাথে পরিচয় হয়ে নে।”
সোহেলের কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই খুবই অবাক হয়।আরশি তো ভাবতেই পারছে না কিছু।ডিভোর্সের মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে সোহেল যে এভাবে আবার বিয়ে করে নেবে সেটা সে ভাবতেই পারেনি।
সোহেলের নতুন বউও বাড়িতে প্রবেশ করে।যাকে দেখে বৃষ্টি আরো বেশি অবাক হয়ে যায়।
(চলবে)
[