বিবাহ বন্ধন পর্ব -১০+১১

#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১০
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি সূর্যর দিকে তাকায়।সূর্যর চোখে জল।বৃষ্টির ব্যাপারটা ঠিক ভালো লাগে না।বোনকে এত ভালোবাসলে তাকে এভাবে চলে যেতে দিচ্ছে কেন সূর্য? এই কথাই বৃষ্টির মাথায় আসেনা।

বৃষ্টি সূর্যকে বলে,
-“অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাদের এখন ফিরে যাওয়া উচিৎ।”

-“আচ্ছা চলুন।”

বৃষ্টি আর সূর্য একসাথে গাড়িতে উঠে রওনা দেয়।রাস্তায় জ্যামে তাদের গাড়ি আটকে যায়।আর তখনই আকাশ গ*র্জে ওঠে।বৃষ্টি বলে,
-“আমার তো মনে হচ্ছে একটু পর বৃষ্টি হবে।কি ভালো যে লাগছে।কতদিন বৃষ্টিতে ভিজি না।”

-“আপনার মাথা ঠিক আছে তো? এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে যদি আপনি বৃষ্টিতে ভেজেন তাহলে শরীর খারাপ করবে।”

-“এই যে শুনুন আমার নাম বৃষ্টি।বৃষ্টির দিনে আমার জন্ম হয়েছে জন্য আমার বাবা আমার এই নাম রেখেছে।ছোটবেলা থেকে আমি বৃষ্টি ভালোবাসি।বৃষ্টিতে ভিজলে আমার কিছু হয়না।”

তন্মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।বৃষ্টি গাড়ির কাচ নামিয়ে বৃষ্টির পানিতে হাত ভিজিয়ে নেয়।তারপর আর থাকতে না পেরে সূর্যকে বলে,
-“আমাকে গাড়ি থেকে নামতে দিন আমি ভিজতে চাই।”

সূর্য তাই করে৷বৃষ্টি গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।আজ যেন তার খুবই ভালো লাগছিল এভাবে বৃষ্টিতে ভিজে।কিছুক্ষণ পর সূর্য ছাতা মাথায় তার কাছে এসে বলে,
-“অনেক হয়েছে এবার চলুন।আরো ভিজলে শরীর খারাপ করবে কিন্তু।”

-“আমায় আর একটু থাকতে দিন না।”

-“ঠিক আছে আপনি থাকুন আমি যাচ্ছি।”

বৃষ্টি অভিমানী সুরে বলে,
-“আচ্ছা চলুন আমিও যাচ্ছি।বিয়ে করাটাই ভুল হয়েছে একটু শান্তিতে বৃষ্টিতে ভিজতেও পারবোনা।”

বৃষ্টি গাড়িতে ওঠার পর সূর্য তার দিকে নিজের রুমাল বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
-“এই নিন মাথাটা মুছে নিন।”

-“রুমাল দিয়ে আবার কেউ মাথা মোছে না-কি?”

-“এই রুমালটা একেবারে পরিস্কার আছে।মাথা মুছে নিন নাহলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।”

বৃষ্টি সূর্যর থেকে রুমাল নিয়ে মাথা মুছে নেয়।
___________________
বাড়িতে ফিরে বৃষ্টি সবার আগে আরশিকে ফোন করে।ফোন রিসিভ করে আরশির খোঁজ খবর নেয়।আরশি একপর্যায়ে প্রশ্ন করে,
-“ঐ বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো?”

-“সবাই ঠিক আছে।”

-“সোহেল কি এখনো বাড়িতে ফেরেনি।”

আরশির মুখে সোহেলের নাম শুনে বৃষ্টি খুবই রেগে যায়।রেগে গিয়ে বলে,
-“যেই লোকটা তোমায় এত কষ্ট দিল তুমি তার কথা জিজ্ঞাসা করছ!”

আরশি মুচকি হেসে বলে,
-“কাউকে ভালোবাসলে এত সহজে তাকে ভোলা যায়না তা সে যতই কষ্ট দিক।আমিও তো সোহেলকে ভালোবেসে ছিলাম।আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা আমি আর সোহেলের কথা ভাবব না।কাল থেকে ভার্সিটিতে যাওয়ার কথা ভাবছি।আবার নতুন করে নিজের জীবনটা শুরু করব।”

-“দ্যাটস গ্রেট।গুড লাক।”

বৃষ্টি ফোনটা কে*টে দেয়।হঠাৎ তার শরীর কেমন জানি লাগছিল।মাথায় অল্প করে ব্যাথা অনুভূত হচ্ছিল আর ঠাণ্ডাও লাগছিল।সাথে অল্প অল্প কাশি।বৃষ্টি বুঝতে পারে তখন ওভাবে বৃষ্টির পানিতে ভেজার কারণেই এমন হয়েছে।এমনিতেই অসময়ের বৃষ্টি,তার উপর সন্ধ্যাবেলায় এভাবে ভেজার কারণে এই অবস্থা।বৃষ্টির নিজের সিদ্ধান্তের উপরই রাগ হয়।কি দরকার ছিল এভাবে ভেজার? কিন্তু সেই বা কি করতে পারে বৃষ্টি দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি।

হঠাৎ সূর্য বৃষ্টির কপালে হাত দিয়ে বলে,
-“কপাল গরম মনে হচ্ছে।জ্বর আসার সম্ভাবনা প্রবল।আমি আগেই বৃষ্টিতে ভিজতে মানা করেছিলাম।”

সূর্যর কথাটা শুনে বৃষ্টি বিস্ময়ের চোখে তার দিকে তাকায়।সূর্যর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।বৃষ্টি সূর্যকে বলে,
-“আরে না।কিছু হবে না আমার।”

-“না হলেই ভালো।”

সূর্যকে কিছু হবে না বলে দিলেও বৃষ্টি বুঝতে পারছিল তার শরীরের অবস্থা বেশি ভালো না।মাথা ব্যাথায় কাহিল হয়ে বৃষ্টি কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে।

রাত বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টির অবস্থাও খারাপ হয়।বৃষ্টির পুরো শরীর জ্বরে গরম হয়ে যায়।সূর্য বিচলিত হয়ে থার্মোমিটার দিয়ে চেক করে দেখে ১০৩° জ্বর।

সূর্য বৃষ্টির এমন খামখেয়ালিপনার জন্য বিরক্ত হয়ে বলে,
-“নিজের খেয়াল রাখতে তো একদমই পারেন না।তখন কত করে বললাম বৃষ্টিতে ভিজবেন না শুনলেন আমার কথা? এখন দেখলেন তো কি হলো।”

বৃষ্টি জ্বরের ঘোরেই বলে,
-“আপনি আমায় নিয়ে চিন্তা করবেন না।”

-“আপনি চুপ থাকলেই ভালো হবে।এই অবস্থায় আপনার খেয়াল রাখার মতো আমি ছাড়া আর কে আছে? আপনি দাড়ান আমি আসছি।”

সূর্য প্যারাসিটামল এনে বৃষ্টিকে খাইয়ে দেয়।তারপর তার মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে।বৃষ্টি সূর্যকে বলে,
-“আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।ওষুধ তো খেয়েছি আমি ঠিক হয়ে যাব।”

-“চুপ আর একটা কথাও বলবেন না।”

-“আমাকে একটা কথা বলতে পারবেন প্লিজ? এই কথা না জানলে আমার জ্বর ঠিক হবে না।”

-“আপনি নিশ্চয়ই স্বর্ণার ব্যাপারেই জানতে চাইবেন।”

-“জ্বি, বলুন না।”

-“স্বর্ণা আমার খুব আদরের বোন ছিল।সবসময় হাসিখুশি থাকত,খুব চঞ্চলও ছিল কিন্তু সাথে ও যথেষ্ট ভদ্রও ছিল।ওর মধ্যে চঞ্চলতা থাকলেও কারো সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি,সবার সাথে মিশেছে।ওর আচরণ খুব ভালো ছিল।তারপর না জানি কি এমন হয়ে গেল আমার চেনা পরিচিত বোনটা বদলে গেল।ও নে*শা করতে শুরু করল, একবার আ*ত্ম*হ*ত্যা*র চেষ্টাও” করেছিল।আমরা কারণ জানতে চাইলে ও চুপ থেকেছে।একপর্যায়ে বাবা বিরক্ত হয়ে ওকে রিহ্যাবে পাঠিয়ে দেয়।স্বর্ণা সেখানেও বেশিদিন থাকে না পালিয়ে আসে বাড়িতে।এখানে এসে সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো,কাউকে সহ্য করতো না।আর সবথেকে বড় অঘটনটা ঘটেছিল সেদিন….”

-“কি হলো থেমে গেলেন কেন?”

-“স্বর্ণা ঘরে অন্য একটা ছেলের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ছিল।আমরা প্রথমে সবাই ভেবেছিলাম ছেলেটাই স্বর্ণার উপর জো*র জ*ব*র*দস্তি করেছে কিন্তু স্বর্ণা নিজেই জানায় ও ইচ্ছে করেই সব করেছে।আব্বু সেদিন খুব রেগে যায়।সবার সামনে স্বর্ণাকে মে*রে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।আর বলে, এই মেয়ের সাথে আমাদের কারো কোন সম্পর্ক থাকবেনা।আজ থেকে আমাদের সবার কাছে ও মৃ*ত।”

সূর্যর কথাগুলো শুনে বৃষ্টির খুবই খারাপ লাগে।মাত্র দুবারই সে স্বর্ণা নামক মেয়েটিকে দেখেছে।তাকে দেখে তো খারাপ মনে হয়নি।বরং তার চোখে মুখে অদ্ভুত একটা মায়া আছে।তাকে দেখেই বোঝা যায় সে অনেক দুঃখ পুষে রেখেছে নিজের মনে।

সূর্য আচমকা বলে,
-“তবে আমার মনে হয় স্বর্ণা নিজে থেকে কিছুই করেনি।ওকে কোনভাবে বাধ্য করা হয়েছে বা ফাসানো হয়েছে।কিন্তু আমি আজ অব্দি এর আসল কারণ বের করতে পারিনি।স্বর্ণাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেও সে চুপ থাকে।”

সূর্য খেয়াল করে বৃষ্টি ঘুমিয়ে পড়েছে।সূর্য ঘুমন্ত বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।তারপর তার গায়ে ভালো করে কম্বল জড়িয়ে জলপট্টি দিতে থাকে।
________
সকালে ঘুম ভাঙলে বৃষ্টি দেখতে পায় সূর্য তার পাশেই বসে ঘুমিয়ে পড়েছে।কাল রাতের সমস্ত কথা বৃষ্টির মনে পড়ে।সূর্য তাহলে সারারাত বৃষ্টির খেয়াল রেখেছে।কিন্তু সূর্য তো বৃষ্টিকে পছন্দই করে না।তাহলে কেন হঠাৎ এমনভাবে তার যত্ন নিল।বৃষ্টি এসব হিসাব কিছুতেই মিলাতে পারছে না।সাথে স্বর্ণার চিন্তাও তার মাথায় যোগ হয়েছে।

এরমাঝে বৃষ্টির ফোন বেজে ওঠে।ফোনটা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে বরকত হোসেন বলেন,
-“তুই ঠিক আছিস তো বৃষ্টি?”

বৃষ্টি তার বাবার কথায় অবাক হয়।সে তো নিজের অসুস্থতার ব্যাপারে তার বাবাকে কিছু জানায় নি।তাহলে সূর্য কি কিছু বলেছে? বৃষ্টি তার বাবাকে বলে,
-“আমি একদম ঠিক আছি আব্বু।তুমি কেমন আছ?”

-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আসলে তোকে নিয়ে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখছিলাম তো তাই কেমন একটা লাগছিল।তুই ভালো থাকিস বৃষ্টি।আমি চাই তুই সবসময় সুখী থাকিস।”

বাবার কথা শুনে বৃষ্টির চোখে জল চলে আসে।বাবারা তো এমনই।কেমন করে জানি তারা সন্তানের ভালো খারাপ অবস্থা সম্পর্কে জেনে যান।হয়তো অতিরিক্ত চিন্তা থেকে।

কারো চিৎকারের আওয়াজ শুনে বৃষ্টি ড্রয়িং রুমে যায়।ড্রয়িং রুমে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখে বৃষ্টি চমকে যায়।
(চলবে)
#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১১
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি প্রিয়াকে ড্রয়িংরুমে দেখে ভীষণ অবাক হয়।প্রিয়া বৃষ্টিকে দেখে কেঁদে ফেলে।বৃষ্টি এই কান্নার কোন মানে খুঁজে পায়না।প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
-“তোমার জন্য শুধুমাত্র তোমার জন্য সূর্যর সাথে আমার সম্পর্কটা শেষ হয়ে গেল।সূর্য তোমাকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেল।কেন এলে আমাদের মাঝে কেন?”

সূর্যও ততক্ষণে সেখানে চলে আসে।সূর্য প্রিয়াকে তার বাড়িতে দেখে ভড়কে যায়।প্রিয়া সূর্যকে দেখে তার কাছে গিয়ে কলার ধরে বলে,
-“তুমি কেন আমায় এভাবে ঠকালে? আমি তো ভালোবেসেছিলাম তোমায়।আমি কাল যখন তোমায় ঘুরতে নিয়ে যেতে বললাম তখন আমাকে নিয়ে গেলেনা অথচ নিজের বউকে নিয়ে ঘুরতে গেলে।”

-“তুমি কি করে জানলে এসব?”

-“কি করে জেনেছি সেটা বড় কথা নয় আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।আমাকে কি তুমি ভালোবাসো না?”

-“না বাসিনা।আমি কখনো তোমায় ভালোবাসি নি।”

-“তাহলে এতগুলো দিন কি আমার সাথে মিথ্যা নাটক করেছ?”

-“হুম।সব আমার নাটক ছিল।আমি শুধু তোমার সাথে টাইম পাস করেছি।”

প্রিয়া সূর্যর কথা শুনে কাঁদতে থাকে।বৃষ্টিও এবার আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না।সে সূর্যকে বলে,
-“আপনাকে দেখে আমার প্রচণ্ড ঘৃণা করছে।একটা মেয়েকে ভালোবাসার জালে ফাসিয়ে এখন তাকে এভাবে ছেড়ে দিচ্ছেন।আপনিও দেখছি আপনার ভাইয়ের মতো।”

-“আপনি যেটা জানেন না সেটা নিয়ে কথা বলবেন না।”

-“আর কি জানার বাকি আছে? আপনি একটা মেয়ের সাথে অবিচার করছেন।আমি তো সেটা মেনে নিতে পারব না।আমি খুব শীঘ্রই আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দেব।তারপর আপনি প্রিয়াকে বিয়ে করে সুখে সংসার করবেন।আমি কোন মেয়ের দুঃখের কারণ হয়ে থাকতে পারবো না।”

-“আপনি আমার জীবনে না এলেও আমি কখনো প্রিয়াকে আপন করে নিতাম না।এর থেকে বেশি কিছু আমি আর বলতে পারবো না।প্রিয়া, তুমি আর সিনক্রিয়েট না করে ভালোয় ভালোয় এই বাড়ি থেকে চলে যাও।আমার বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল আজ তাদের ফেরার কথা।আমি চাইনা তাদের সাথে তোমার দেখা হোক।”

প্রিয়া আর কোন কথা না বলে চোখের জল মুছতে মুছতে চলে যায়।দরজার কাছে গিয়ে সে থেমে গিয়ে সূর্যর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“তুমি আমার সাথে যা করলে তার রিভেঞ্জ আমি নিয়েই ছাড়ব।তৈরি থেকে সূর্য ইসলাম নিজের ধ্বং*স দেখার জন্য।”
________________
বৃষ্টি ফোনে তার চেনা একজন উকিলের সাথে ডিভোর্সের ব্যাপারে কথা বলছিল।আজ যা হলো তারপর বৃষ্টির আর কোন ইচ্ছে নেই সূর্যর সাথে সংসার করার।

বৃষ্টি তার পাসপোর্ট ভিসাও তৈরি করার ব্যবস্থা করে রেখেছে।সূর্য হঠাৎ তার রুমে চলে আসে।সূর্য বৃষ্টিকে কিছু বলতে চাইছিল কিন্ত সূর্যর সাথে কথা বলতেও বৃষ্টি রাজি নয় তাই সে রুম থেকে চলে যায়।সূর্য ভাবতে থাকে,
-“যেদিন আপনি সত্যটা জানবেন সেদিন বুঝতে পারবেন আমি ঠিক ছিলাম নাকি ভুল।”

বৃষ্টি সোজা ছাদে চলে আসে।এই ছাদে তার অনেক ভয়ানক একটা অতীত লুকিয়ে আছে।তাইতো ছাদে তেমন একটা আসেনা বৃষ্টি।তার উপর এখন সন্ধ্যাবেলা।নেহাতই সূর্যর সাথে থাকতে ইচ্ছে করছিল না তাই সে ছাদে চলে এলো।ছাদে আসলেই যে বৃষ্টির তার ভয়ানক অতীতের কথা মনে পড়ে যায়।

কিছুক্ষণ ছাদে থাকার পর বৃষ্টির কানে কারো কন্ঠ ভেসে আসে।বৃষ্টি আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায়না।কিছুক্ষণের মাঝেই নিজের অতীতে হারিয়ে যায় বৃষ্টি।

~~~~~~~~অতীত~~~~~~~~~~~
-“বৃষ্টি খেয়ে নে বলছি।এত কম করে খেলে যে শুকিয়ে যাবি।”

নিজের মায়ের মুখে এরকম কথা শুনে ৮ বছরের দুরন্ত স্বভাবের বৃষ্টি মুখ বাঁকিয়ে বলে,
-“আমি আর খেতে পারব না আম্মু।আমার পেট ভরে গেছে।”

-“আচ্ছা তুই খেয়ে নে আমি খুব সুন্দর একটা গল্প শোনাচ্ছি।”

-“হ্যাঁ বলো।”

বৃষ্টির মা তাকে গল্প শোনাতে শোনাতে ভাত খাইয়ে দিতে থাকে।ভাত খাওয়া শেষ করার পর বৃষ্টির মা তাকে বলে,
-“এত বড় হয়েছিস তবু কত কি করে তোকে খাওয়াতে হয়।আমি না থাকলে তোকে কে এভাবে ভাত খাইয়ে দেবে বলতো?”

বৃষ্টি মুচকি হেসে বলে,
-“তুমি থাকবেনা কেন আম্মু? তুমি তো সবসময় আমার কাছে থাকবে।আমাকে এভাবেই খাইয়ে দেবে।”

-“আচ্ছা তুই থাক।আমি ছাদে যাচ্ছি কাপড় শুকোতে দিয়েছি সেগুলো আনতে হবে তো।কাল আমরা গ্রামের বাড়িতে যাব।তোর দাদা খুব অসুস্থ তোকে দেখতে চেয়েছে।”

-“আমিও যাব তোমার সাথে আম্মু।প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে চল।কিন্তু ছাদে গিয়ে আবার লাফালাফি শুরু করিস না।”

বৃষ্টি তার মায়ের সাথে ছাদে চলে যায়।বৃষ্টির মা ছাদে কাপড় তুলতে ব্যস্ত ছিল।তখন বৃষ্টি ছাদে ছোটাছুটি করছিল।ছুটতে ছুটতে সে একেবারে ছাদের কিনারায় চলে যায়।বৃষ্টির মা তখন খেয়াল করে বৃষ্টি একেবারে ছাদের কিনারায় চলে গেছে।

বৃষ্টির মা দৌড়ে ছুটে আসে তাকে বাঁচানোর জন্য।বৃষ্টি তো থেমে গিয়ে বেঁচে যায় কিন্তু বৃষ্টির মা ছুটে এসে ছাদের কিনারায় আসার পর হঠাৎ তার পা পিছলে যায়।যার ফলে বৃষ্টির মা ছাদ থেকে পড়ে যায়।বৃষ্টি জোরে চিৎকার করে বলে,
-“আম্মু….”

এরপর বৃষ্টি নিচে ছুটে যায়।বৃষ্টির বাবা বাড়িতেই ছিলেন বৃষ্টি কাঁদতে কাঁদতে বরকত হোসেনকে সব বলেন।বরকত হোসেন ব্যতিব্যস্ত হয়ে বৃষ্টির মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বৃষ্টির মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ডাক্তার বলে,
-“ওনার অবস্থা বেশি ভালো না।”

বৃষ্টি কাঁদতে থাকে।বরকত হোসেন মেয়েকে সামলাতে থাকেন।একজন নার্স হঠাৎ ছুটে এসে বলে,
-“পেসেন্টের অবস্থা খুব খারাপ।মাথায় আঘাতটা খুব বেশি সিরিয়াস।উনি ওনার পরিবারের লোকেদের সাথে দেখা করতে চাইছেন।”

বরকত হোসেন আর বৃষ্টি ছুটে যায়।তাদেরকে দেখে বৃষ্টির মা যেন খুব তৃপ্তি পান।অনেক কথা বলতে চেয়েও পারেন না।কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান।

বৃষ্টি সেদিন খুব কেঁদেছিল।তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলছিল,
-“তুমি আমাদের ছেড়ে যেওনা আম্মু।তুমি না থাকলে কে আমায় খাইয়ে দেবে,কে আমায় পড়াশোনা করার জন্য বকবে? আব্বু যখন আমায় মা*রতে আসবে তখন আমি কার আঁচলে মাথা লুকাবো? প্লিজ আম্মু তুমি ফিরে এসো।”

সেদিন বরকত হোসেন তার ছোট্ট মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলেন।সেদিনই তিনি তার মৃত স্ত্রীকে কথা দিয়েছিলেন কখনো তার মেয়ের কোন অযত্ন হতে দেবেন না।তাইতো মানুষের এতকিছু বলার পরেও দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি।বৃষ্টিকে খুব আদরে মানুষ করেছে।তার গায়ে ফুলের টোকাও লাগতে দেননি।

~~~~~~~বর্তমান~~~~~~~~
অতীতের এসব ভয়াবহ স্মৃতি মনে করে বৃষ্টি কান্নায় ভেঙে পড়ে।

-“তুমি ফিরে এসো না আম্মু।আজও আমি প্রতি পদে পদে তোমার অভাব বোধ করি।আমাকে আগলে রাখার মতো কেউ যে নেই আম্মু।”

হঠাৎ মাথায় কারো হাতের অস্তিত্ব অনুভব করে বৃষ্টি।মাথাটা উপরে করতেই দেখে সালমা আক্তার বৃষ্টির মাথায় হাত দিয়ে রেখেছেন।তিনি বলেন,
-“এভাবে কাঁদছো কেন আমি আছিনা? আমি তো তোমার আরেক মা।আল্লাহ তোমার এক মাকে তোমার থেকে দূর করে দিয়েছে তো কি হয়েছে আমাকে তো পাঠিয়েছেন।”

বৃষ্টি সালমা আক্তারকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন।সালমা আক্তার বৃষ্টিকে বলেন,
-“আমি জানি আপনজন হারানোর কষ্টটা কি।আমার নিজের মেয়েও তো আমার থেকে দূরে আছে কতদিন।আমি চাইলেও কখনো তার কাছে যেতে পারব না।তাকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করতে পারব না।।”

-“মা…”

-“কি বললে তুমি?”

-“ভুল করে বলে ফেলেছি শাশুমা।”

-“ভুল কি পাগল মেয়ে? আমাকে এখন থেকে মাই বলো।আল্লাহ তো আমার এক মেয়েকে আমার থেকে দূরে করে দিয়েছে।তুমি নাহয় আজ থেকে আমার মেয়ে।”

বৃষ্টি মনে মনে বলে,
-“আপনি আজ আমাকে নিজের মেয়ের যায়গা দিলেন।তবে আমি যে বেশিদিন আপনার কাছে থাকতে পারবো না।কিন্তু আমি আজ আপনাকে কথা দিচ্ছি এখান থেকে যাওয়ার আগে যে করেই হোক আপনার মেয়েকে আপনার কোলে ফিরিয়ে দিয়ে যাব।এটা বৃষ্টির প্রতিজ্ঞা ”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here