#বিরহ_শ্রাবণ
#পর্ব_২
#লেখিকা:সারা মেহেক
প্রোজ্জ্বল ভাই কফির মগে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে আয়েশী ভঙ্গিতে বসে বললেন,
” রেডি তো?”
আমি তৎক্ষনাৎ কিছু বললাম না৷ খানিক সময় নিয়ে বেশ রয়েসয়েই প্রশ্ন করলাম উনাকে,
” আচ্ছা, প্রোজ্জ্বল ভাই? আমি আজ কি করেছি যে কারণে আপনি আমায় শাস্তি দিতে চাইছেন? ”
প্রোজ্জ্বল ভাই কফির মগ সম্মুখে নিয়ে ভ্রুজুগল কুঞ্চিত করে বললেন,
” তুই কি ভেবেছিস, আমি দুপুরের কথা ভুলে গিয়েছি? তুই যে আমাকে মেন্টাল হসপিটালে পাঠানোর কথা বলছিলি, আমি বুঝি খেয়াল করিনি তখন?”
প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কথা শুনে আমার বুঝতে বাকি রইলো না, তখনকার ঐ খোঁচা মনে রেখেই উনি আমার শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। সে সময় ঐ খোঁচা দিয়ে যে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছিলাম তা তৎক্ষনাৎ বুঝে নেয়া উচিত ছিলো আমার।
আপন জগতের চিন্তায় মশগুল আমার ধ্যান ভাঙলো প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের ছোট্ট এক ধমকে,
” কোন রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিস তুই? মন কি শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছে?”
আমি তৎক্ষনাৎ ঘাড় এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে বিস্তৃত হেসে জবাব দিলাম,
” মন কোথাও যায়নি। আর কথায় কথায় শ্বশুরবাড়ির খোঁচা না দিয়ে শ্বশুরবাড়ির ঠিকানাটা বললেও তো পারেন। মাঝে মধ্যে একটু আধটু শখ জাগে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার।”
প্রোজ্জ্বল ভাই এহেন কথা শোনামাত্র হাত উঁচিয়ে আমার মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললেন,
” তোর শ্বশুরবাড়ি, সো ঠিকানা খুঁজে নেওয়ার দায়িত্ব তোর। শুধু আমার আরাম আয়েশ নষ্ট করার ধান্দা তাই না? আর তোর শখ দেখে মনে হয় শ্বশুরবাড়ি হাতের মোয়া হ্যাঁ? শ্বশুরবাড়ি যেতেও যোগ্যতা লাগে। ”
আমি তৎক্ষনাৎ অতি উৎসাহী হওয়ার ভান করে বললাম,
” কি কি যোগ্যতা লাগে শুনি? তাহলে আমিও নিজেকে ওভাবে তৈরী করবো।”
প্রোজ্জ্বল আমার কথায় প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছাড়লেন। যেনো মনে হলো, উনি আমার কথায় যারপরনাই হতাশ। ঈষৎ রাগত স্বরে উনি বললেন,
” মনটা চায় তোকে ঐ ছোট্ট ইঁদুরের বাচ্চার মতো ঘাড়ের কাছে ধরে একদম শূন্যে পাঠিয়ে দেই। যার আর কয়দিন পর মেডিকেল পরীক্ষা তার পড়ালেখা নিয়ে টেনশন নেই। টেনশন আছে বিয়ে নিয়ে। আর একবার বিয়ের কথা তুলে দেখিস।”
এবার আমি অকপট রাগ নিয়ে মুহূর্তেই বলে উঠলাম,
” বিয়ে নিয়ে কথা শুরু করেছেন আপনি। আর দোষ দিচ্ছেন আমাকে! এরপর শুধু শুধু আমার ঘাড়ে দোষ চাপালে আমি মামিকে বলে দিবো।”
” হ্যাঁ, পারিসই তো ঐ একটা কাজ।
অনেক হলো কথা, এবার শোন তোর শাস্তির কথা।”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
” হ্যাঁ জানি, আপনার শাস্তির কথা। বলুন, কয়টা মডেল টেস্ট করতে হবে?”
প্রোজ্জ্বল ভাই আমার কথায় বেশ সন্তুষ্ট হয়েছেন এমন ভঙ্গিতে ঠোঁট উল্টে বললেন,
” বাহ, চন্দ্রিমা! তুই তো ভালোই চিনে গিয়েছিস আমার শাস্তিগুলোর ধরণ!”
উনার কথায় আমি আপন মনে আওড়ালাম,
” এতো বছর ধরে আপনার ত্যাড়ামো দেখে আসছি। চেনাটাই স্বাভাবিক। ”
প্রোজ্জ্বল ভাই এবার কফির মগ রেখে নিজের হাতঘড়ির দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। কয়েক সেকেন্ড হাত ঘড়ির উপর সময় দিয়ে আমার দিকে চেয়ে প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” এখন বাজে সাড়ে ছয়টা। আজ রাত দশটার মধ্যে আমাকে চারটা মডেল টেস্ট করে এনে দিবি। দশটার একটুও এদিক ওদিক যেনো না হয়। আর তুই ভালো করেই জানিস আমি সময়ের ব্যাপারে কতটা খুঁতখুঁতে। ”
উনার কথা শেষ হওয়া মাত্রই আমি বিড়বিড় করে সময় গণনা করলাম। গুনে দেখলাম, চারটা মডেল টেস্টের জন্য উনি মাত্র তিন ঘণ্টা সময় দিয়েছেন আমাকে। যেখানে প্রকৃতপক্ষে চার ঘণ্টা সময় দেওয়ার কথা ছিলো। আমি তৎক্ষনাৎ উনার বরাদ্দকৃত সময়ের প্রতিবাদ করে বললাম,
” তিন ঘণ্টায় কখনোই সম্ভব না। যে মডেল টেস্ট চার ঘণ্টায় হওয়ার কথা, সেটা আমি তিন ঘণ্টায় কেনো দিবো? আর সন্ধ্যায় আমার অনামিকাকে পড়ানোর কথা আছে। ”
প্রোজ্জ্বল ভাই এবার এক ধমকে ঠোঁটজোড়া কুঞ্চিত করে বলে উঠলেন,
” মনটা চায়, উল্টো হাতে তোর দু গালে দুটো চড় বসিয়ে দেই। আর পনেরো দিন পর যার ভর্তি পরীক্ষা সে কি না অন্যকে পড়িয়ে বেড়াচ্ছে! ভালো হয়ে যা চন্দ্রিমা। নিজ চড়কায় তেল দে। ”
” কি প্রোজ্জ্বল ভাই! আগামী সপ্তাহে অনামিকার পরীক্ষা। আর ওকে পড়াতে গিয়ে যে আমার পড়ার কোনো ক্ষতি হচ্ছে তা তো না৷ তাহলে পড়াতে দোষ কি?”
” বেশি কথা আমার পছন্দ না। ওকে পড়াতে যাবি না মানে যাবি না। আমি অভ্রকে বলে দিবো এ কথা। আর শোন, এ কারণে যদি তোর মেডিকেলে চান্স মিস হয় তো আমার একদিন কি তোর একদিন। যা এখন ভাগ এখান থেকে। ”
আমি আর কথা বাড়ালাম না৷ কথা বাড়িয়েও লাভ নেই৷ এটা চিরসত্য যে, দিনশেষে জয়ী উনিই হবেন। আমি পরাজয় স্বীকার করে উনার অগোচরে ভেঙচি কেটে রুম হতে বেড়িয়ে পড়লাম। রুম হতে বেরুতে না বেরুতেই অভ্র ভাইয়ের সাথে প্রায় ধাক্কা খাওয়ার উপক্রম হলো আমার। কিন্তু এর পূর্বেই অভ্র ভাই ও আমি একে অপরকে সামলে নিলাম। অভ্র ভাই আমায় এ পরিস্থিতিতে দেখে হাস্যরসাত্মক গলায় বললেন,
” আচ্ছা একটা প্রশ্নের জবাব দাও তো চন্দ্রিমা। তুমি দিনের মধ্যে কতবার ধুপধাপ পড়ো?”
অভ্র ভাইয়ের এহেন প্রশ্নে আমি ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেলাম। তবে উনার এ প্রশ্ন করাটা বেশ যুক্তিসঙ্গতই। কারণ আমি দিনে কমপক্ষে হলেও দুই কিংবা তিনবার পড়বোই। এ যেনো আমার নিত্যদিনের এক রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভ্র ভাইয়ের প্রশ্নের জবাবে লজ্জিত মুহূর্তটা কাটিয়ে উঠতে বেশ আত্মবিশ্বাসের সহিত বললাম,
” আসলে জানেন কি অভ্র ভাই, এই ধুপধাপ পড়াটা আমার জিনগত একটা রোগ। না হলে বলুন তো, আমি রোজ দুই তিনবার হলেও কেনো পড়বো! অবশ্যই এর পিছনে কারণ আছে ঠিক না?”
অভ্র ভাই আমার কথা শোনামাত্র হো হো করে হেসে উঠলেন। উনার হাসির শব্দ মুহূর্তেই প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কান অব্দি পৌঁছে গেলো। উনি রুম হতে হাঁক ছেড়ে বললেন,
” অভ্র এসেছিস না কি?”
অভ্র ভাই জবাব দিলেন,
” হ্যাঁ। আমি রুমে আসছি দাঁড়া। ”
এই বলে উনি আমায় জিজ্ঞেস করলেন,
” প্রোজ্জ্বলের রুমে এসেছিলে যে? কাজ ছিলো?”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
” হুম। আপনার বন্ধুর হুকুমে কফি দিতে এসেছিলাম। ”
এ বলে আমি ক্ষণেই গলার স্বর খাদে নামিয়ে চুপিসারি ভঙ্গিতে বললাম,
” বুঝলেন অভ্র ভাই, আপনার বন্ধু আমার সুখ শান্তি দেখতে পারে না। একটুও দেখতে পারে না। বাসায় থাকলেই ক্যাঁচ ক্যাঁচ করতে থাকে সারাদিন। ভালো হতো উনি লেকচারার না হয়ে মেডিকেল অফিসার হতেন। তাহলে অন্ততপক্ষে হসপিটালেই বেশি সময় কাটাতেন। ”
আমার কথায় অভ্র ভাই মুখ টিপে হেসে উঠলেন। বললেন,
” ও সারাদিন হসপিটালে পড়ে থাকলে তোমাকে পড়াতো কে?”
” উনার কাছে না পড়লেও হতো। আচ্ছা, ভালো কথা, আপনার শরীরের অবস্থা কি? আগামীকাল হতে আবারো জয়েন করছেন তো?”
” হ্যাঁ। আগামীকাল থেকে আবারো হসপিটালে যাবো৷ এখন শরীরটাও পুরোপুরি সুস্থ।
আচ্ছা, তুমি যাও, পড়তে বসো। ”
এই বলে অভ্র ভাই রুমে চলে গেলেন। আর আমি চলে এলাম আমার রুমে।
——–
নামাজ শেষে দোয়া করে কিছুক্ষণ জায়নামাজে বসে রইলাম৷ জায়নামাজে বসে থাকার সময়টা আমার একান্তই ব্যক্তিগত একটি সময়। রোজ এ সময়ে আমি আমার অতীতে ফিরে যাই৷ অতীতের কিছু সুখ স্মৃতি, কিছু কষ্টের স্মৃতি মনের কোনা হতে খুঁড়ে নিয়ে আসি। সেই স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরে ভাবতে থাকি অপূর্ণ কিছু ভবিষ্যতের কথা। ভাবতে থাকি বাবা, মা ও ভাইয়ার কথা।
মামার কাছে শুনেছিলাম,আমার বয়স যখন এক বছর, তখন আমার বাবা ফ্যাক্টরিতে কারেন্টের শক লেগে মারা যান৷ বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা আমাকে আর ভাইয়াকে একা হাতে মানুষ করতে থাকে। আমাকে আর ভাইয়াকে রোজ প্রতিবেশী এক আন্টির কাছে রেখে মা কাজে যেতো। ফিরতো বিকেলে। এরপর বিকেল থেকে পরেরদিন সকাল পর্যন্ত মা আমাদের দু ভাইবোনের সাথে যতোটা সময় কাটানো সম্ভব ততোটা সময় কাটাতো। আমাদের জীবন সুখেই চলছিলো। কিন্তু আমার বয়স যখন প্রায় পাঁচ বছর, তখন মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারে, মা ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজে। মামা ডাক্তার হওয়ায় তখন সাধ্যমত মাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু মা বাঁচতে পারেনি। তিন মাসের মাথায় ওপারে পাড়ি জমায় মা।
মা মারা যাওয়ার পর আমাদের দুই ভাইবোনকে নানাবাড়িতে নিয়ে আসা হয়৷ আমরা এখন যেখানে থাকি, এটাই আমার নানাবাড়ি। উত্তরসূরিতে এখন এটা আমার মামাবাড়ি।
আমার বয়স যখন পাঁচ ও ভাইয়ার বয়স যখন বারো ছিলো, তখন থেকেই মামাবাড়িতে আমাদের বসবাস। নানি,মামা,মামি,প্রত্যাশা আপু, প্রোজ্জ্বল ভাই, ভাইয়া ও আমি, ব্যস এই ক’জনের নিয়েই এ সংসার আমাদের।
প্রত্যাশা আপু প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের বড় বোন। প্রত্যাশা আপু আর প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের বয়সের পার্থক্য মাত্র দেড় বছর। ওদিকে প্রোজ্জ্বল ভাই ও ভাইয়া সমবয়সী ছিলো। এই তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট আমি। কিন্তু ছোট হলেও প্রত্যাশা আপুর সাথে আমার গলায় গলায় ভাব। অথচ প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের সাথে আমার রীতিমতো দা কুমড়ো সম্পর্ক। যদিও মামি বলতেন, ছোটবেলায় প্রোজ্জ্বল ভাই আমাকে খুব আদর করতেন। একদম ছোট থাকতে আমি নানিবাড়ি আসলেই উনি আমাকে নিয়ে সারাদিন ঘুরতেন। অথচ এখন উনি আমার উপর সারাদিন কর্তৃত্ব ফলাতে থাকেন। যদিও আমিও কম না উনার থেকে। সুযোগ বুঝে উনার কর্তৃত্ব ফলানোর ব্যাপারটা মামির কানে পৌঁছে দিই। মামিও আমার পক্ষ নিয়ে প্রোজ্জ্বল ভাইকে শুনিয়ে দেন কয়েকটা কথা।
” চন্দ্রিমা? কোথায় তুই?”
অকস্মাৎ প্রত্যাশা আপুর কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলাম আমি। মুহূর্তেই নিজেকে ধাতস্থ দ্রুত জায়নামাজ উঠিয়ে রুম হতে বেরিয়ে এলাম। বের হতেই সরাসরি দেখা হলো প্রত্যাশা আপুর সাথে। প্রত্যাশা আপু নিজের এক কলিগের বিয়েতে গিয়েছিলো। বাসা থেকে বের হওয়ার পূর্বে আপুকে বলেছিলাম আমার জন্য ফুচকা নিয়ে আসতে। রুম থেকে বের হয়ে আপুর সামনে আসতেই দেখি আপু হাসিমুখে ফুচকার পার্সেল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে পার্সেলটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,
” দ্রুত সব বাটিতে করে নিয়ে আয়। বাবা আর মা কোথায়?”
আমি আপুর হাত হতে পার্সেলটা নিয়ে বললাম,
” মামা মামি রুমে আছে আর প্রোজ্জ্বল ভাই নিজের রুমে। ”
আপু কিছু না বলে চলে যেতে নিলো। কিন্তু আমি আপুর পথ থমকে পুনরায় ফিসফিস সতর্ক কণ্ঠে বললাম,
” আপু, জানো? আজ প্রোজ্জ্বল ভাই আর অভ্র ভাই এলাকার দুটো বখাটেকে একদম রাম ধোলাই দিয়েছে।”
প্রত্যাশা আপু মুহূর্তেই চোখ কপালে তুলে বিস্ময়ের সহিত জিজ্ঞেস করলেন,
” কি বলিস! আবারো! এই দুইটার গুণ্ডামি কবে ছুটবে আল্লাহ জানে! কবে যেনো ওদের জন্য আমাদের মান সম্মানে টান পড়ে যায়। বাবা মা কিছু বলেনি?”
” বলেছে তো। মামি দুইজনকেই বকেছে। তবে মামা কিছু বলেনি। অবশ্য মামা এসেছেই বিকেলের দিকে। আর আমার মনে হয় না মামা প্রোজ্জ্বল ভাইকে কিছু বলবে। কারণ মামাও এসব বিষয়ে বেশ সাপোর্ট করে দুইজনকে। ”
প্রত্যাশা আপু ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
” তা অবশ্য ঠিক বলেছিস। আচ্ছা তুই নিচে যা। আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি। ”
এই বলে প্রত্যাশা আপু নিজের রুমে চলে গেলো। আর আমি নিচে যাওয়ার জন্য সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালাম।
———-
প্রচণ্ড তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে একের পর এক এমসিকিউ এর বৃত্ত ভরাট করে চলছি আমি। কোনো সন্দেহ নেই, এর মাঝে অনেকগুলো ভুল উত্তর দাগিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এ নিয়ে আমার আফসোস নেই। আফসোস ও রাগ হচ্ছে এ মুহূর্তে ফুচকা না খাওয়া নিয়ে।
তখন প্রত্যাশা আপুর নিকট হতে ফুচকা নিয়ে সবকিছু তৈরী করে মামা,মামি,প্রত্যাশা আপু,প্রোজ্জ্বল ভাই, অভ্র ভাইকে নিচে ড্রইংরুমে ডাকলাম। সবাই এসে খাওয়াও শুরু করে দিলো। কিন্তু আমি যে-ই না প্রথম ফুচকাটা মুখে পুরতে নিবো অমনিই প্রোজ্জ্বল ভাই আমার হাত থেকে ফুচকাটা নিয়ে নিজের মুখে পুরে নিলেন। উনার এ কাজে আমি নিমিষের জন্য হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। এ কি হলো!
প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এ কাজের জবাবদিহিতা চাওয়ার পূর্বেই প্রোজ্জ্বল ভাই বললেন,
” সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত ওকে মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় দিয়েছি। পরীক্ষা না দিয়ে ও এখানে বসে বসে ফুচকা ঠুসবে তা তো হতে দিবো না আমি। অলরেডি সাড়ে সাতটা বেজে গিয়েছে। সময় কিন্তু বেশি নেই চন্দ্রিমা। যা রুমে যা। ফুচকা অন্যদিনও খাওয়া যাবে। ”
প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কথা শেষ হওয়া মাত্রই আমি সোফা ছেড়ে উঠে গেলাম। রাগ, ক্ষোভ ও অভিমানে ফুচকা খাওয়ার সাধ মিটে গেলো। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম দশটার আগেই মডেল টেস্টগুলো করে উনার মুখের উপর মেরে আসবো। আস্ত খাটাশ আর বেয়াদব লোক একটা।
আমি বড় বড় পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলাম। পিছে শুনলাম, মামি রাগত স্বরে প্রোজ্জ্বল ভাইকে বলছেন,
” মেয়েটার সুখ শান্তি কি তোর সহ্য হয় না প্রোজ্জ্বল? ফুচকাটা খেয়েই নিতে দিতি ওকে। তারপর না হয় পরীক্ষা দিতে বসতো। ”
ওদিকে প্রোজ্জ্বল ভাই প্রত্যুত্তরে কি বলেছিলেন জানা নেই। কারণ এর পূর্বেই রুমে চেয়ারে বসে পড়ি আমি।
একটা মডেল টেস্ট শেষ হওয়ার পরপরই বিরতিহীনভাবে দ্বিতীয় মডেল টেস্টে হাত দিলাম। এগারো নাম্বার বৃত্ত ভরাট করার পূর্বেই অকস্মাৎ আমার সম্মুখে এক প্লেট রেডিমেড ফুচকা হাজির হলো। ক্ষণিকের জন্য ফুচকার প্লেটের দিকে বিস্মিত চাহনিতে চেয়ে রইলাম। মুহূর্তেই পূর্বের সকল রাগ অভিমান ভুলে উত্তেজিত কণ্ঠে বললাম,
” থ্যাংক ইউ সো মাচ প্রত্যাশা আপু। শেষমেশ…. আমার জন্য ফুচকা বানিয়ে আনলে।”
এই বলে প্লেটটা টেবিলে রেখে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম৷ ক্ষণেই ফুচকা সহিত আগত মানুষটিকে দেখে আমার চক্ষুজোড়া বিস্ময়ে খানিক বৃহৎ হয়ে এলো।
@সারা মেহেক
#চলবে?
(বলুন তো, কে হতে পারে মানুষটা? আর গল্প কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না।)
গ্রুপ লিংক: https://facebook.com/groups/259972409591747/