বিরহ শ্রাবণ পর্ব – ২০+২১ ও শেষ

#বিরহ_শ্রাবণ
#পর্ব_২০
#লেখিকা:সারা মেহেক

দু পরিবারের সম্মতিতে ঠিক এক মাস পর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো। বিয়ের তারিখ পাকাপোক্ত করার পর মামি সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে গেলো৷ আমি রান্নাঘরেই ছিলাম। এখানে দাঁড়িয়েই সবটা শুনলাম। বিয়ের তারিখ পাকাপোক্ত হওয়ার কথা শোনার পর মনের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হলো। এ এক মিশ্র অনুভূতি। লজ্জা, ভয়, আড়ষ্টতা সব মিলিয়ে একাকার হয়ে এলো। বুকের মাঝে অনবরত ধুকপুকানি চলছে। মুখখানা লজ্জায় উষ্ণ হয়ে আসছে। হাত দুখানা অল্প বিস্তর কাঁপছে। শেষমেশ অভ্র ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হলো, এ ভাবতেই রাজ্যের বিস্ময়ে আমার চোখজোড়া বড় হয়ে এলো। এতোদিন অভ্র ভাই শুধু ছিলো আমার প্রতিবেশি, ভাইয়ার বন্ধু। অথচ এক মাস পর উনাকে আমি নিজের স্বামী বলে পরিচিত দিবো! ভাবতেই লজ্জায় শরীর শিউরে উঠছে।

অভ্র ভাইরা চলে গেলে আমি রান্নাঘর হতে বেরিয়ে আসি। চেয়েছিলাম সবার আড়াল হয়ে নিজের রুমে চলে যাবো। কিন্তু তার হলো কই! সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়েই মামা পিছন হতে ডাকলেন আমায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মামার ডাকে নত মস্তকে উপস্থিত হলাম ড্রইংরুমে। ড্রইংরুমে তখনও নানু,মামি,প্রত্যাশা আপু, প্রোজ্জ্বল ভাই উপস্থিত ছিলেন। উনাদের দেখে আমি আরোও আড়ষ্ট হয়ে এলাম। মামা আমাকে ডেকে নিয়ে নিজের পাশে বসালেন। আমার মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
” আমার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাতে খুশি তো তুই?”

এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে ব্যর্থ হলাম আমি৷ মৃদু হেসে বললাম,
” জানি না মামা। তোমরা আমার অভিভাবক। আমার ভালোর জন্য তোমরা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছো, নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তে নিয়েছো। সেজন্য এ সিদ্ধান্তে আমার বলার কিছু নেই। ”

” আচ্ছা, একটা প্রশ্নের জবাব দে চন্দ্রিমা। ”

” জি মামা।”

” তুই কাউকে পছন্দ করতি না তো? সত্য কথাটা বলবি। যদি তুই কাউকে পছন্দ করে থাকিস তাহলে বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবো। জানি, প্রশ্ন এ আগেই করা উচিত ছিলো। কিন্তু আমার একদম খেয়াল ছিলো না। ”

” না না মামা৷ আমি কাউকে পছন্দ করি না। আর এটা একদম সত্য বলছি। পছন্দ থাকলে নিশ্চয়ই প্রত্যাশা আপুকে বলতাম যেনো আপু বিয়ের কথা এগুতে নিষেধ করে। ”

আমার জবাবে মামা যে বেশ খুশি হলেন তা উনার চেহারার প্রতিক্রিয়া দেখে অনুমান করলাম। মামা বললেন,
” আলহামদুলিল্লাহ। শুনে খুব খুশি হলাম মা।
আচ্ছা, তুই রুমে যা। আমরা কিছু কথাবার্তা বলবো। ”

মামার কথায় আমি সোফা ছেড়ে উঠে নিজের রুমে চলে এলাম৷

————–

ফিজিওলজির কঠিন কঠিন ডেফিনিশন মুখস্থ করতে করতে মাথা গরম হয়ে এসেছে আমার। এরই মধ্যে এক ক্লাসমেটের তিনবার কল এসেছে। আমার সাথে কিছু পড়া ডিসকাস করতেই কল করেছিলো সে। প্রথমবার কল করায় তেমন বিরক্ত হইনি। কিন্তু দ্বিতীয়বার এবং তৃতীয়বার কল করায় প্রচন্ড বিরক্ত হই। এর ফলে এখন ডেফিনিশনও মাথায় ঢুকছে না৷
পড়তে পড়তে আবারো কল এলো৷ এবার আমি নিয়ত করি সেই ক্লাসমেটকে কড়া কড়া কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিবো৷ সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কল রিসিভ করে বললাম,
” তোমার বোধহয় পড়া সব শেষ। এজন্যই আমাকে কল করে ডিস্টার্ব করছো তাই না? এটা কোন ধরণের ম্যানার্স?”

” কে ডিস্টার্ব করছিলো তোমাকে?”
ওপাশ থেকে অভ্র ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে রীতিমতো চমকে গেলাম। কান হতে ফোন নামিয়ে দেখলাম অভ্র ভাইয়ের নাম্বার উঠে আছে। ইশ, না দেখে কি ভুল করে বসলাম! আমি আবারো কানে ফোন নিলাম। বললাম,
” ঐ এক ক্লাসমেট করছিলো। তারই সাথে কথা বলছিলাম। ”

” ওহ। তোমার কি মুড খারাপ?”

” কিছুটা। পড়া মুখস্থ করতে করতে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।”

ওপাশ হতে অভ্র ভাইয়ের মৃদু হাসির শব্দ শোনা গেলো। বললো,
” একটু রেস্ট নাও। তারপর পড়তে বসো। এখন না হয় চেয়ার ছেড়ে উঠে একটু বারান্দায় আসো। আজ বাইরে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ। ”

আমি বই রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে বারান্দায় চলে এলাম। বারান্দায় আসতেই আমার দৃষ্টি আটকে গেলো অভ্র ভাইয়ের উপর। আমার বারান্দা হতে অভ্র ভাইদের বাড়ির উঠোন দেখা যায়। অভ্র ভাই সেখানেই একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছেন। উনার দৃষ্টি আমার উপর আবদ্ধ। এতো দূর হতে উনার চাহনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না৷ তবে এটা স্পষ্ট যে উনি আমার দিকে অন্যরকম চাহনিতে চেয়ে আছেন।
অভ্র ভাই প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছাড়লেন। অতঃপর পূর্বের তুলনায় অপেক্ষাকৃত নরম গলায় বললেন,
” আমি কখনো ভাবিনি, এই দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনায়াসে তোমাকে পেয়ে যাবো। আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম, এই বুঝি তুমি বিয়েতে ‘না’ করে দিবো। কিন্তু তোমার পক্ষ থেকে যখন উত্তরটা পজিটিভ এলো, তখন যে কি আনন্দ লাগছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
তবে সরি, এভাবে হুটহাট বাবা মাসহ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা। কিন্তু কি করবো বলো, তোমাকে আমার অনুভূতি বলার পর আমার তর সইছিলো না। তুমি খুশি তো এ বিয়েতে?”

অভ্র ভাইয়ের প্রতিটি কথা এতোক্ষণ যাবত মন্ত্র মুগ্ধের ন্যায় শুনছিলাম আমি। হঠাৎ উনার শেষোক্ত প্রশ্নে আমি বিহ্বল হয়ে পড়লাম। এখন এ প্রশ্নের কি জবাব দিবো আমি! আমি যে আমার অনুভূতিগুলো বুঝে উঠতে পারছি না। আমার অনুভূতিগুলো আমার নিজের নিকটই অব্যক্ত হয়ে পড়েছে।
আমি জবাব দিলাম,
” জানি না। এসব যে এভাবে হুটহাট হয়ে যাবে তা ভাবতে পারিনি। তবে আমি বুঝতে পারছি, আমার মাঝে সবকিছুর এক মিশ্র অনুভূতি তৈরী হয়েছে। আর আপনাকে ওভাবে মেনে নিতে আমার কিছু সময় প্রয়োজন। আশা করি সে সময়টা পাবো। ”

” অবশ্যই। তোমার যতোটা সময় প্রয়োজন তুমি নাও। আমি তোমাকে সময় দিতে প্রস্তুত। কারণ এখন আমি নিশ্চিত যে দিনশেষে তুমি আমারই হবে। আমার আর কোনো ভয় বা বাঁধা নেই। আজ আমি অনেক খুশি চন্দ্রিমা। আমার চার বছরের অপেক্ষার মিষ্টি ফল হিসেবে কয়েকদিন পরই তোমাকে পেতে চলেছি। এতো বছর অপেক্ষা করেছি, সেখানে আর না হয় কয়েকদিন অপেক্ষা করি। ”

উনার এরূপ কথায় আমি মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না যেনো। ঠিক এ মুহূর্তে উনার কথা ও বাচনভঙ্গি আমায় তীব্রভাবে আকর্ষণ করলো। মন চাইলো, অভ্র ভাইকে একবার সামনাসামনি দেখি, মন চাইলো জিজ্ঞেস করি, ‘আচ্ছা অভ্র ভাই, আপনি আমায় এতো ভালোবাসেন কেনো? আমি কি এতোটাই স্পেশাল আপনার জন্য? আমি কি সত্যিই আপনার এ মিষ্টি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?’

আমি এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। নম্র কণ্ঠে বললাম,
” থ্যাংকইউ অভ্র ভাই আমাকে এ সময় দেওয়ার জন্য। ”

” আরে কি বলো! এতে থ্যাংকইউ বলার কি আছে! তোমার যে আসলেই সময় দরকার সেটা বুঝতে পারছি। সো এসব থ্যাংকইউের কোনো প্রয়োজন নেই। ”

এভাবে আমাদের কথা চলতে লাগলো। কথার এক পর্যায়ে কি মনে করে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের রুমের বারান্দার দিকে তাকালাম। উনার রুম আর আমার রুম পাশাপাশি হওয়ায় বারান্দাও পাশাপাশি হয়েছে। উনি বারান্দায় এসে আমার দিকে একবার চাইলেন এবং সামনে অভ্র ভাইয়ের দিকে একবার চাইলেন। কিন্তু কিছু না বলেই উল্টো পথে ফিরে গেলেন। অবশ্য তার কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই উনি ফিরে এসে বললেন,
” অভ্রর সাথে কথা বলা শেষ হলে একটু ছাদে আসিস। ”
এই বলেই উনি চলে গেলেন। উনি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার আর অভ্র ভাইয়ের কথা শেষ হলো। আমি তৎক্ষনাৎ ফোন রেখে ছাদে চলে এলাম। দেখলাম, প্রোজ্জ্বল ভাই ছাদের ঠিক মাঝ বরাবর বসে আছেন। আমি গিয়ে উনার পাশে বসতেই উনি বললেন,
” দ্রুতই কথা শেষ হয়ে গেলো যে?”

উনার কথার অন্যরকম সুরে খানিক অবাক হলাম। মনে হলো, উনি বোধহয় খানিক খোঁচা দিয়েই কথাটা বললেন। তবে আমি স্বাভাবিকভাবে জবাব দিলাম,
” দ্রুত না। আপনার আসার অনেকক্ষণ আগে থেকেই কথা হচ্ছিলো। ”

” ওহ। ”
এই বলে উনি খানিক সময় নিশ্চুপ রইলেন। উনার এরূপ আচরণে আমি বেশ অবাক হলাম। কারণ প্রোজ্জ্বল ভাইকে কখনো এভাবে দেখিনি আমি। উনার মাঝে কেমন এক মনমরা, উদাসীন ও হতাশার ভাব বিরাজ করছে। হঠাৎ উনার এ পরিবর্তন দেখে আমি প্রশ্নই করে বসলাম,
” প্রোজ্জ্বল ভাই? আপনার কি মন খারাপ কোনো কারণে?”

প্রোজ্জ্বল ভাই তৎক্ষণাৎ পাশে ফিরে আমার দিকে চাইলেন। অনেকটা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললেন,
” কি বলিস! এমন কেনো মনে হলো তোর? আমার মন খারাপ থাকবে কেনো?”

” সেটা কি করে জানবো আমি? তবে আমার মনে হলো, আপনার মন খারাপ কোনো কারণে। কারণ আপনার চেহারায় স্পষ্ট তা ফুটে উঠেছে। ”

” তাই? আমার চেহারায় কি আমার মনের কথা ফুটে উঠে?”
উনার নিষ্প্রভ কণ্ঠের এ জটিল প্রশ্নে আমি থতমত খেলাম। উত্তর ভাবতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিলাম। অতঃপর বললাম,
” জানি না প্রোজ্জ্বল ভাই। তবে এ মুহূর্তে আপনার মন খারাপের ভাব ফুটে উঠেছে আপনার চেহারায়। ”

আমার জবাবে প্রোজ্জ্বল ভাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বিড়বিড় করে বললেন,
” আমার মন খারাপের কারণ কেনো জানিস না তুই?”

উনি বিড়বিড় করে বললেও উনার কথা আধো আধো বুঝতে পারলাম আমি। অনেকটা দ্বিধান্বিত গলায় জিজ্ঞেস করলাম,
” আমার কি জানা উচিত ছিলো আপনার মন খারাপের কারণ?”

প্রোজ্জ্বল ভাই আমার প্রশ্নে হাসলেন। এ হাসি কোনো সাধারণ হাসি নয়। এ হাসি ছিলো তুচ্ছতাচ্ছিল্যের হাসি। উনার এরূপ হাসি আমার গায়ে বিঁধলো। বোধ হলো, প্রশ্নটা করে কোনো ভুল করে বসেছি। আমি আর কথা বাড়ালাম না। সামনের দিকে ফিরে বসে রইলাম। প্রোজ্জ্বল ভাইও সামনের দিকে ফিরলেন। কিছুক্ষণ বাদে বললেন,
” জানিস চন্দ্রিমা? ছোট থেকে তোকে নিজের সামনে বড় হতে দেখেছি। কখনো ভাবিনি এভাবে তোর বিয়ে ঠিক হবে, এভাবে তুই আমাদের সবাইকে একা রেখে চলে যাবি। ”

উনার এ কথার প্রত্যুত্তরে আমি সরল মনে জবাব দিলাম,
” দূরে কোথায়? কয়েক কদম হাঁটলেই তো আমাকে দেখতে পাবেন। ”

উনি হাসলেন। বললেন,
” শুধু কি বাইরের দূরত্ব দিয়েই ব্যবধান হয় রে পাগলি? ওসব তুই বুঝবি না। তুই এখনও অবুঝ। বড্ড অবুঝ। এতো অবুঝ কেনো তুই? বয়স তো বাড়ছে, সাথে কি একটু বুঝও বাড়ার দরকার না?”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কথায় আমি বেশ বিরক্ত হলাম। অনেকটা কড়া গলায়ই বললাম,
” ধ্যাত, আপনার সাথে কথা বলে কেমন যেনো লাগছে। এতো ম’রা ম’রা কথা বলছেন কেনো? আর আমি অবুঝ না বুঝলেন? আমি কি এমন অবুঝের মতো কাজ করলাম শুনি? আচ্ছা বাদ দিন, আপনার সাথে এখন কথা বলতে মন চাইছে না। আমি গেলাম। আমার পড়া আছে।”
এই বলেই আমি উঠে চলে এলাম৷ কোনো সন্দেহ নেই আজ প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এরূপ আচরণ ও কথাবার্তায় আমি যারপরনাই বিরক্ত হয়েছি। উনি তো কখনো এমন ছিলেন না। তাহলে আজ এমন আচরণ কেনো! অদ্ভুত!

———-

” চন্দ্রিমা, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। এখনও রেডি হোসনি?”
রুমের বাইর থেকে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের তাড়া পেয়ে দ্রুত ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। আমায় রুম হতে বের হতে দেখে উনি ভ্রুকুটি করে তাকালেন। বললেন,
” রেডি হতে যদি এতো সময়ই লাগে, তাহলে সকাল সাতটা থেকে রেডি হতে পারিস না? নিজেও লেট করিস। আমাকেও লেট করাস।”,
এই বলে উনি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলেন। উনার পিছু পিছু আমিও নিচে নামলাম। মুখ দিয়ে টু শব্দটুকুও বের করলাম না৷
প্রোজ্জ্বল ভাই পার্কিং করা বাইক নিয়ে গেটের বাইরে বের হলেন। আমিও গেট হতে বের হয়ে বাইকের পিছে চড়ে বসলাম। বাইকে বসার পর উনি জিজ্ঞেস করলেন,
” বসেছিস ঠিকমতো?”

আমি উনার কাঁধে হাত রেখে বললাম,
” হুম বসেছি। আপনি স্টার্ট দিন। ”

প্রোজ্জ্বল ভাই বাইক স্টার্ট দিলেন, দু সেকেন্ডও হলো না, এমন মুহূর্তে অভ্র ভাই সেখানে উপস্থিত হলেন। উনিও বাইক নিয়ে বেরিয়েছেন আজ। বাইকটা আমাদের পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে বললেন,
” চন্দ্রিমা, আমি হসপিটালে যাচ্ছি। চলো, তোমাকে কলেজে দিয়ে আসি। ”

অকস্মাৎ আগমন ঘটা অভ্র ভাইয়ের এহেন প্রস্তাবে আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম। কারণ আমি ইতোমধ্যে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের বাইকে বসে আছি। এমতাবস্থায় উনার বাইক হতে নেমে অভ্র ভাইয়ের বাইকে উঠা কি আদৌ ঠিক হবে?

” যা চন্দ্রিমা। অভ্রর সাথেই যা। এখন থেকে তো ওর সাথেই তোর চলাচল করতে হবে।”
মৃদু হেসে আমার এ দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবসান ঘটালেন প্রোজ্জ্বল ভাই। উনার এরূপ কথার প্রত্যুত্তর স্বরূপ অভ্র ভাই বললেন,
” প্রোজ্জ্বল, এখন থেকে তুই আর কষ্ট করিস না। যেদিন আমার সকালে ডিউটি থাকবে সেদিন আমিই চন্দ্রিমাকে দিয়ে আসবো। ”

প্রোজ্জ্বল ভাই মৃদু হেসে বললেন,
” আর কিসের কষ্ট। তোরই তো সময় এখন।
যা চন্দ্রিমা, দ্রুত যা। দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। ”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের তাড়া পেয়ে আমি দ্রুত উনার বাইক হতে নেমে অভ্র ভাইয়ের বাইকে চড়ে বসলাম। আমি উঠতেই অভ্র ভাই বাইকে স্টার্ট দিয়ে চালানো শুরু করলেন। মুহূর্তেই আমরা প্রোজ্জ্বল ভাইকে পিছনে ফেলে চলে আসলাম।

কলেজে যাওয়ার পথে আচমকা বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টির এ হঠাৎ আগমনে কয়েক সেকেন্ডের আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লাম। অভ্র ভাই তড়িঘড়ি করে একটা বন্ধ দোকানের সামনে বাইক রেখপ আমায় নিয়ে নেমে পড়লেন। আমরা আশ্রয় নিলাম দোকানের শাটারের ঠিক সামনের জায়গাটায়। ততক্ষণে পূর্বের তুলনায়ও প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আষাঢ়ে বৃষ্টির এ তীব্রতা দেখে এ মুহূর্তে আমার প্রবলভাবে ইচ্ছা জাগলো বৃষ্টিতে ভিজতে। কিন্তু আজ কলেজের পথযাত্রী হওয়ায় এ ইচ্ছাকে দমন করে রাখতে হলো। তবে বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছা দমন করলেও বৃষ্টি ছোঁয়ার ইচ্ছা দমিত করে রাখতে পারলাম না। ডান হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁলাম। আহ কি প্রশান্তি! এমন শীতল ঝিরিঝিরি পরিবেশে বৃষ্টি ছোঁয়ার আনন্দই যেনো অন্যরকম। এ মিষ্টি শীতল অনুভূতি আরো গভীরভাবে অনুভব করতে আমি চোখজোড়া বন্ধ করলাম৷ চারপাশে গাড়ির যান্ত্রিক শব্দেও অন্তঃস্থল দিয়ে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা অনুভব করার চেষ্টায় মত্ত হলাম।

অকস্মাৎ কারোর হাতের স্পর্শে তড়িতে চোখ মেলে চাইলাম। দেখলাম আমার হাতের নিচেই অভ্র ভাইয়ের হাত। আমি চকিতে উনার দিকে চাইলাম। উনি মুগ্ধ হেসে আমার দিকে চেয়ে বললেন,
” তোমার সাথে বৃষ্টি ছোঁয়ার অনুভূতি উপলব্ধি করতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলাম চন্দ্রিমা।
তুমি কেমন বলো তো, আমাকে এতো ব্যাকুল করছো কেনো?”

উনার এ প্রশ্নে আমি মুহূর্তেই লজ্জায় মিইয়ে এলাম। সাথে সাথে নত দৃষ্টিতে সামনে তাকালাম। অভ্র ভাই মানুষটা ভীষণ খারাপ। উনি মাঝে মাঝে এমন কথা বলে যে, লজ্জায় উনার সামনে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে যায়। উনার সাথে দু সপ্তাহের এ কথাবার্তায় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছি, উনি ইচ্ছাপূর্বকই আমাকে এরূপ কথা শোনান। যেনো আমি আরো লজ্জায় পড়ে যাই।

আমাদের মাঝে আর কোনো কথা হলো না। বৃষ্টি শেষ হলেই আমরা দ্রুত বাইকে উঠে পড়ি। আজ আধ ঘণ্টা দেরি হয়ে গিয়েছে। নি’র্ঘা’ত প্রোজ্জ্বল ভাই আজ ভীষণ ব’ক’বে’ন আমায়। উনি হলেন সময়ের পাক্কা মানুষ। আর উনার ক্লাসেই যদি আধ ঘণ্টা দেরি করে ঢুকি তাহলে উনি কি কান্ডটাই না বাঁধিয়ে ফেলবেন!

অভ্র ভাই স্পিড বাড়িয়ে আমাকে দ্রুত কলেজে পৌঁছিয়ে দিলেন। উনার বাইক হতে নেমেই আমি এক প্রকার দৌড়ে ক্লাসে পৌঁছে গেলাম৷ ক্লাসে পৌঁছুতেই প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কঠোর দৃষ্টির সম্মুখীন হলাম। ভাবলাম আজ বুঝি উনি ক্লাসেই ঢুকতে দিবেন না আমায়। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে উনি ক্লাসে ঢুকার অনুমতি দিলেন। তবে ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথেই উনি বলে বসলেন,
” সময়ের এতোটা অবহেলা আমার পছন্দ না। কারোর সাথে যদি সময় কাটানোর একান্তই ইচ্ছা থাকে, তাহলে সেটা ক্লাস টাইমের বাইরে কাটানো উচিত। ক্লাস টাইমে না। নেক্সট ক্লাসে এমন দেরি হলে আর ক্লাস করতে আসবে না। ”

প্রোজ্জ্বল ভাই সবার সামনে এভাবে খোঁচামূলক কথা বলবেন তা কখনো ভাবিনি আমি৷ ক্লাসে সবার সামনে এভাবে বলায় বেশ অপমানিত বোঊ করলাম আমি। সাথে উনার উপর ভীষণ রাগ হলো। আমি কোনো প্রকার প্রত্যুত্তর না দিয়ে পিছনের একটা সিটে গিয়ে বসে পড়লাম।

————-

আজ ঘোর বর্ষায় দিনদুনিয়া আঁধারে ছেয়ে গিয়েছে। প্রান্তিক আষাঢ়ের বৃষ্টি অন্যান্য সময়ের চেয়ে কি কারণে যেনো দারুণ উপভোগ্য হয়ে উঠলো। সাঁঝ ছুঁইছুঁই মুহূর্তের বৃষ্টিতে পরিবেশ রাতের ন্যায় রূপ ধারণ করলো। এমনই মুহূর্তেই বৃষ্টিকে আরোও একটুখানি উপভোগ্য করতে কফি বানানোর জন্য রুম হতে বের হলাম।
সিঁড়ির কাছে পা রাখতেই হঠাৎ প্রোজ্জ্বল ভাই তড়িঘড়ি করে নিজের রুম হতে বেরিয়ে এলেন। তীব্র উৎকণ্ঠিত গলায় বললেন,
” চন্দ্রিমা, আমাদের এক্ষুণি হসপিটালে যেতে হবে। আংকেল এক্সিডেন্ট করেছে। স্পট ডে’ড। অভ্র হসপিটালেই আছে। এক্ষুণি সবাইকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে। দ্রুত রেডি হয়েনে। ”
®সারা মেহেক

#চলবে#বিরহ_শ্রাবণ
#পর্ব_২১
#লেখিকা:সারা মেহেক

জীবনে সুখময় মুহূর্তগুলো কেনো যেনো ক্ষণস্থায়ী রূপে আসে। তীব্র চাওয়া সত্ত্বেও সে সুখকর মুহূর্তগুলোর স্থায়িত্ব বাড়ানো যায় না। বরং সে সময় চারধার দিয়ে বিরহের মুহূর্ত আষ্টেপৃষ্টে ধরে। ইয়াসির মামার সাথে আমার সম্পর্ক খুব একটা মজবুত ছিলো না। আবার আমাদের মধ্যকার বোঝাপড়াও একেবারে ফেলনা ছিলো না। মূলত ইয়াসির মামার গরম মেজাজের কারণে উনার সাথে সবসময় মেপে মেপে কথা বলতাম। কিন্তু এতে যে আমার প্রতি ইয়াসির মামার স্নেহ কমে গিয়েছিলো তা নয়। বরং আমার মনে হতো কম কথার মানুষ ইয়াসির মামা অনামিকার মতোই আমাকে স্নেহ করতো। কিন্তু হঠাৎ সেই ইয়াসির মামার মৃ’ত্যু আমাকে ভেতরে থেকে নাড়িয়ে দেয়। গতকাল প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কাছে যখন শুনেছিলাম ইয়াসির মামা এক্সিডেন্ট করে স্পট ডে’ড তখন কিছুতেই নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না এ কথাটি। এই তো দু দিন আগেও উনাকে বাড়ির সামনে হাঁটতে দেখলাম। আর আজ সে মানুষটা মৃ’ত!
গতকাল প্রোজ্জ্বল ভাই ইয়াসির মামার মৃ’ত্যু সংবাদ শোনামাত্র আমাকেসহ মামি, নানু, খোদেজা মামি ও অনামিকাকে নিয়ে হসপিটালে যায়। হসপিটালে যাওয়ার পুরো রাস্তায় খোদেজা মামি ও অনামিকা ম’র’ণ কান্না জুড়ে দিয়েছিলো। কোনোভাবেই তাদের থামানো যাচ্ছিলো না। ওদিকে মামি ও নানুও কাঁদছিলো। তাদের এ কান্না দেখে আমিও আড়ালে কেঁদে দিয়েছিলাম। যেখানে ঐ মুহূর্তে আমার উচিত ছিলো অনামিকা ও খোদেজা মামিকে সান্ত্বনা দেওয়ার সেখানে আমি নিজেই কেঁদে যাচ্ছিলাম এবং আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন খোদ প্রোজ্জ্বল ভাই।

তখন হসপিটালে পৌঁছানোর পর ইমার্জেন্সি বিভাগে ছোটখাটো একটা ভীড় দেখেলাম। সে ভীড় ঠেলে এগিয়ে দেখলাম অভ্র ভাই ও মামা স্তব্ধ দৃষ্টিতে সাদা কাপড়ে ঢাকা স্ট্রেচারের দিকে চেয়ে আছেন। অর্থাৎ ওটাই ইয়াসির মামার লা’শ ছিলো। খোদেজা মামি ও অনামিকা স্ট্রেচার দেখেই এক দৌড়ে এগিয়ে যান সেখানে। ইয়াসির মামাকে দেখে তাদের কান্নার বেগ পূর্বের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হলো। আমরা অনেক চেষ্টার পরও তাদের দুজনকে স্ট্রেচারের কাছ থেকে সরাতে পারছিলাম না।

গতকালই ইয়াসির মামার লা’শ নিয়ে বাড়িতে ফিরি আমরা। প্রথমত এটা এক্সিডেন্টে কেস হওয়ায় হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ইয়াসির মামার পোস্টমর্টেম করতে চেয়েছিলো। কিন্তু মামা ও প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের অনুরোধে তারা পোস্টমর্টেম ব্যতিতই আমাদের কাছে লা’শ হস্তান্তর করে দেয়।
এক্সিডেন্টের ফলে ইয়াসির মামা মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। সেই আঘাতেই মৃ’ত্যু হয় উনার। বাড়িতে নিয়ে আসার পর ঐ অবস্থাতেই উনাকে গোসল করানো হয়। অতঃপর পরিপাটি করে কা’ফ’নের কাপড় দিয়ে উনার লা’শ মুড়িয়ে খাটিয়াতে শুইয়ে রাখা হয়। এভাবেই সারারাত থাকার পর আজ বাদ যোহরে উনার কবর দেওয়া হয়। গতকাল সারারাত কান্না করার পর অনামিকা আজ পুরোপুরি নির্বাক হয়ে বসে ছিলো। আজ এক ফোঁটাও চোখের জল ফেলতে দেখিনি ওকে। কিন্তু ইয়াসির মামার খাটিয়া নিয়ে যাওয়ার সময় ওর চোখে অদ্ভুত শূন্যতা দেখেছি। দেখেছি অসহায়ত্ব। যে শূন্যতা ও অসহায়ত্ব যে কারোর হৃদয় কাঁপিয়ে দিতে সক্ষম। এই ঘটনাই ছটফট অনামিকাকে একেবারে শান্তশিষ্ট করে দিয়ে গেলো।
ওদিকে খোদেজা মামি গতকাল রাতে কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আবার আজও খাটিয়া নিয়ে যাওয়ার সময় ছোট বাচ্চাদের মতো মাটিতে গড়াগড়ি করে কেঁদেছিলেন উনি। এখন দুপুর তিনটা বাজে। খোদেজা মামি এখনও উঠোনে বসে বসে বিলাপ করে কাঁদছেন। আর অনামিকা নিষ্পলক চাহনিতে বারান্দায় বসে আছে। দুজনের এ নি’র্ম’ম পরিস্থিতি দেখে আমি কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। দ্রুত নিজের রুমে এসে দরজা আটকিয়ে ইচ্ছামতো কাঁদলাম।
আজ অভ্র ভাইয়ের চোখে পানি দেখেছিলাম। যে অভ্র ভাইকে আমি কখনো কাঁদতে দেখিনি সে অভ্র ভাই আজ ইয়াসির মামার খাটিয়া কাঁধে উঠানোর সময় বাচ্চাদের মতো কাঁদছিলেন। খুব ইচ্ছে করছিলো, উনার পাশে গিয়ে উনাকে সান্ত্বনা দেই। উনার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কিছু কথা বলি। অভ্র ভাইয়ের এ অবস্থা দেখে আমার আরো কান্না পেলো। কান্নার গতি পূর্বের তুলনায় বেড়ে গেলো।

———-

ইয়াসির মামা মা’রা গিয়েছে আজ দুদিন হলো। এ দুদিনেও অভ্র ভাইদের বাড়ির কারোর শোক কমেনি। আর কমবেই বা কি করে! তারা প্রত্যেকেই প্রিয়জন হারিয়েছে। আর প্রিয়জন হারানোর শো’ক যে এতো দ্রুত কাটে না তা আমি বেশ ভালো করেই বুঝি।
অভ্র ভাই হসপিটাল থেকে কয়েকদিনের ছুটি নিয়েছেন৷ এ দুদিন উনি ঘর থেকে বের হয়নি বললেই চলে। বাবা হারানোর শোক উনাকে যে কিভাবে গ্রাস করেছে তা উনার মলিন চেহারার ভগ্ন ও উদাস চাহনি দেখেই টের পাওয়া সম্ভব। অভ্র ভাইয়ের সাথে ইয়াসির মামার ভীষণ মিল ছিলো। ইয়াসির মামা অভ্র ভাইকে অনেক আদর যত্ন করতেন। দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা বাপ বেটার চেয়ে বন্ধুর ন্যায় বেশি ছিলো এবং মজবুত ছিলো। এ কারণেই অভ্র ভাই আরো ভেঙে পড়েছেন। এ দুদিন উনি ঠিকভাবে আমার সাথে কথাও বলেননি। হয়তো একা একা নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বিকেলের পর আমি অভ্র ভাইদের বাড়িতে যাওয়ার পর অনামিকার সাথে কিছু সময় কাটালাম। বাবা হারানোর শোকে পাগলপ্রায় মেয়েটা এ দুদিনেই যেনো শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে এসেছে। এতোক্ষণ যাবত আমরা ইয়াসির মামাকে নিয়েই কথা বলছিলাম। কথার মাঝে আমার চোখজোড়া জলে ভিজে উঠলেও অনানিকা হু হু করে কেঁদে উঠলো। আমি আর উপায় না পেয়ে ওকে শুইয়ে গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলাম। মেয়েটা কাঁদুক। একান্তে কিছু সময় কাঁদুক। এভাবে কাঁদতে কাঁদতে দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়বে ও৷ অনামিকার রুম থেকে বেরিয়ে অভ্র ভাইয়ের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালাম। দরজায় কড়াঘাতের জন্য হাত চাপতেই দেখলাম দরজা খোলা আছে। তাই আমি অনুমতি না নিয়েই উনার রুমে ঢুকে পড়লাম। উনার রুমে ঢুকেই দেখলাম খাটের পাশে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছেন উনি। হঠাৎ আমার আগমনে যে খানিক চমকে উঠেছেন তার উনার অঙ্গভঙ্গি দেখেই টের পেলাম।

আমাকে রুমে দেখে অভ্র ভাই সোজা হয়ে বসে বললেন,
” এসো চন্দ্রিমা এসো। ”

আমি প্রত্যুত্তর না দিয়ে হেঁটে গিয়ে উনার পাশে বসলাম। প্রথম পর্যায়ে আমাদের মাঝে কোনো কথা হলো না৷ তবে কিছুক্ষণ পর অভ্র ভাই-ই নিজ হতে কথা আরম্ভ করলেন৷ প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে ধীরেসুস্থে বললেন,
” সরি চন্দ্রিমা, এতোদিন ঠিকভাবে তোমার খোঁজ না নেওয়ার জন্য৷ আমি কেমন স্বামী হবো বলো তো, বিয়ের আগেই তোমার খোঁজখবর নিচ্ছি না। তাহলে বিয়ের পর কি করবো!”

অভ্র ভাইয়ের কথার মাঝে অপরাধবোধের দেখা মিললো। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে উনার অপরাধবোধ আসা যুক্তিসংগত নয়। ফলে আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম,
” এমন কেনো বলছেন আপনি! এখন বাড়িতে যে পরিস্থিতি চলছে তাতে সবার স্বাভাবিক থাকাটাই অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছে। আর আপনি আমার খোঁজ না নেওয়ার জন্য সরি বলছেন! আর বলবেন না এমন। আমি বুঝতে পারছি আপনার পরিস্থিতি। ”

উনি আর প্রত্যুত্তর করলেন না৷ আমাদের মাঝে আবারো পূর্বের ন্যায় নীরবতা বিরাজ করলো। কিছুক্ষণ পর অভ্র ভাই আবারো বললেন,
” জানো চন্দ্রিমা? বাবার সাথে না আমার খুব মিল ছিলো। আমি মায়ের চেয়ে বাবাকে বেশি ভালোবাসতাম। কেনো ভালোবাসতাম তা জানি না। তবে বাবা আমার জন্য আদর্শ ছিলো। আমার ভুল সঠিক সবকিছুর দিক নির্দেশনা দিতো। আমাকে সকল পরিস্থিতিতে সাপোর্ট করতো। বাইরের মানুষের কাছে বাবা অনেক রাগী ব্যক্তিত্বের হয়ে থাকলেও আমার কাছে সে ছিলো মুক্তমনা হাসিখুশি একজন মানুষ। কিন্তু দেখো, আজ বাবা নেই চন্দ্রিমা। আজ আমার আদর্শ আমার পাশে নেই। আমাকে সাপোর্ট দেওয়ার মানুষটা পাশে নেই। আমি যে সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়েছি চন্দ্রিমা। আমি কি করে নিজেকে সামলাবো? আমি কি করে অনামিকা আর মাকে সামলাবো? কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি। কিচ্ছুই না।”
এই বলে অভ্র ভাই নিঃশব্দে কেঁদে উঠলেন। কয়েক সেকেন্ডের মাঝে উনার কান্নার আওয়াজ পুরো রুমে ছড়িয়ে পড়লো। উনাকে এভাবে কাঁদতে দেখে আমি ভীষণ অসহায় বোধ করছি। সহ্য করতে পারছি না উনার এ অবস্থা। কিন্তু আমি যে উনাকে সান্ত্বনা দিবো সে ভাষাটাও খুঁজে পাচ্ছি না আজ। শব্দের ভাণ্ডার হাতড়ে হাতড়ে কিছু শব্দ খুঁজে পেলাম বোধহয়। বললাম,
” আপনি নিজেকে শক্ত করুন অভ্র ভাই। আপনি নিজেকে শক্ত না করলে মামি আর অনামিকাকে কে সামলাবে। ঐ দুজন যে এখন আপনার ভরসায়ই ঠিকে আছে! ”

” আমি জানি না চন্দ্রিমা। আমি জানি না নিজেকে কিভাবে সামলাবো৷ কিভাবে এ পরিস্থিতি হতে বেরিয়ে আসবো।”
এই বলেই উনি মুখে হাত দিয়ে কেঁদে দিলেন৷ আমি আর না পেরে উনার কাঁধে হাত দিয়ে বললাম,
” প্লিজ অভ্র ভাই কান্না থামান৷ আপনার এ কান্না দেখে আমার ভালো লাগছে না। আমারও কান্না পাচ্ছে।”
অভ্র ভাই এবারও প্রত্যুত্তর করলেন না। তবে আকুল কণ্ঠে আমায় অনুরোধ করে বসলেন।
” তোমার কোলে একটু মাথা রাখতে পারি চন্দ্রিমা? আমার সবকিছু খালি খালি লাগছে। আমাকে একটু আশ্রয় দাও তোমার কাছে। ”
অভ্র ভাইয়ের ব্যাকুল কণ্ঠের আবেদন আমি ফেলতে পারলাম না। আলতো করে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক জবাব দিলাম। উনি আমার সম্মতি পেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আমার কোলে মাথা রাখলেন।ভেবেছিলাম এভাবে মাথা রাখার পর উনি বোধহয় কান্না থামিয়ে দিবেন। কিন্তু উনি তা করেননি। বরং পূর্বের ন্যায় কেঁদে গিয়েছেন তবে একেবারেই নীরবে। আমি এবার আর বাঁধা দিলাম না উনাকে। বরং উনার মাথায় আলতো হাতে বিলি কেটে দিতে লাগলাম। এভাবেই কতক সময় কেটে গেলো……….

——————-

কেটে গিয়েছে আরো দু সপ্তাহ। এক মাস আগে এ সপ্তাহের শুক্রবারেই আমাদের বিয়ের তারিখ পাকা হয়েছিলো। কিন্তু ইয়াসির মামার মৃ’ত্যুতে সবকিছুই থমকে গিয়েছিলো। ধীর হয়ে এসেছিলো অভ্র ভাইদের জীবনযাত্রা। তবে ইয়াসির মামার কথা ভেবেই আমাদের বিয়েতে আর দেরি করতে রাজি হলেন না কেউ। ফলস্বরূপ আমাদের বিয়ের তারিখ পুনরায় পাকা হলো। এ সপ্তাহের পরের সপ্তাহের শুক্রবারেই আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করবে। তবে পারিপার্শ্বিক ও পারিবারিক অবস্থার বিবেচনায় হলুদ ও বিয়ের অনুষ্ঠান যথাসম্ভব ছোট পরিসরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হলুদের অনুষ্ঠান শুধু এ আমাদের দুই বাড়ি, আমার চাচারা ও আশেপাশের দু বাড়ির মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

কলেজ শেষে অভ্র ভাইয়ের সাথে দুপুরের খাবার খেতে বের হলাম। উনি দু ঘন্টার জন্য ডিউটি ডিপার্টমেন্টের অন্য ডাক্তারকে দিয়ে এসেছেন৷

রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া শেষে একটা বিলের পাশে গিয়ে বসলাম আমরা। দুজনে মাটিতে বসে আধো আধো উত্তাপময় দুপুরের স্নিগ্ধ হাওয়া উপভোগ করছি।
বেশ কিছুক্ষণ পর অভ্র ভাই মুগ্ধ কণ্ঠে বললেন,
” কতদিন পর বাইরের ঠান্ডা হাওয়া উপভোগ করছি। আহ, সময়টাই অন্যরকম!
চারপাশে শীতল হাওয়া, পাশে আমার প্রেয়সী কম হবু স্ত্রী। কি এক দারুণ মুহূর্ত! মন চায় রোজ এমন সময় কাটাই। ”

আমি মৃদু হেসে বললাম,
” ঠিক আছে। এভাবে রোজ বিকেলে এখানে আসবো আমরা। ”

আমার কথায় উনি সশব্দে হেসে বললেন,
” তা করলে আমার সংসার চালানোর, আয় রোজগারের যে একমাত্র আশা ভরসা আছে সেটাও শেষ হয়ে যাবে। আমি আরো ভাবছি, এক্সট্রা টাকা আয় করবো কি করে। আমার যে বেতন, এ বেতন দিয়ে আমাদের তিনজনের চলা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আবার পরের মাস থেকে তোমার খরচাপাতিও চালাতে হবে। ”

এতোক্ষণ মনটা ফুরফুরে থাকলেও অভ্র ভাইয়ের এ কথায় আমার মাথায় চিন্তারা দানা বাঁধতে শুরু করলো। আসলেই, এক উনার বেতন দিয়ে আমরা চারজন কি করে চলবো! তার উপর আবার প্রতিমাসে অনামিকার কলেজের বেতন, প্রাইভেটের বেতন। কি করে সম্ভব এ ক্ষুদ্র আয় দিয়ে!

অভ্র ভাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন,
” বাবা বলেছিলো, বিয়ের পর এফসিপিস পার্ট ওয়ানের উপর পড়াশোনা করতে। আমার এ ডিগ্রির খরচাপাতি সব বাবাই দেখবে বলেছিলো। কিন্তু এখন তা আর সম্ভব না। আমার ফারদার পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে আরো টাকা প্রয়োজন। এজন্য ভাবছি, একটা ক্লিনিকে জব নিবো। রাতে যত সময় দেওয়া যায় দিবো। এতে যদি একটু হেল্প হয়। ”

” আপনার পরিচিত কোনো ক্লিনিক আছে যেখানে ভালো বেতন দেয়?”

” হুম আছে। তবে তা শহর থেকে একটু দূরে। এজন্যই সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। তবে দেখি কি করা যায়। ”
এই বলে উনি আমার কাঁধে মাথা রাখলেন। বললেন,
” চন্দ্রিমা, তুমি এসবে হয়তো বিরক্ত বোধ করছো কিন্তু কি করবো বলো। তুমি আর প্রোজ্জ্বল ছাড়া আমার ভেতরকার কষ্টগুলো বের করার মতো কেউ নেই। তোমাদের সাথেই সব শেয়ার করি। ”

” আমি বিরক্ত বোধ করছি না। আর কয়দিন পরই তো এ সংসার আমারও হবে। তখন আমারও তো কিছু দায়িত্ব থাকবে। ভাবছি, বিকেলে একটা প্রাইভেট পড়ানো শুরু করবো যেনো আপনাকে একটু হলেও সাহায্য করতে পারি। এমনিতে বিকেলে আমার পড়া হয় না। তাই ঐ সময়টুকু কাজে লাগানো যেতেই পারে। আর হ্যাঁ, আপনি মোটেও চিন্তা করবেন না। আমি সব পরিস্থিতিতে সবসময় আপনার পাশে আছি। ”

অভ্র ভাই প্রত্যুত্তর করলেন না। বরং আমার বাম হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নীরবে বসে রইলেন।

—————-

কিছুক্ষণ আগেই হলুদের ছোট্ট কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ঘরোয়াভাবে বেশ মজা করেই হলুদের অনুষ্টান শেষ করেছি আমরা। এখন মেহেদি দেওয়ার পালা। হলুদের শাড়ি বদলে থ্রিপিস পরে এসে মেহেদি নিতে বসলাম আমি। মেহেদি দেওয়ার জন্য প্রত্যাশা আপুর এক বান্ধবী এসেছে যার শহরে নামকরা একটা পার্লার আছে। আপুর বান্ধবী হওয়ায় মেহেদি দেওয়ার খরচও অর্ধেক হয়ে এসেছে।

এক হাতে মেহেদি পরানো শেষে অপর হাতে মেহেদি দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু মেহেদি দেওয়ার মাঝেই বাতাসে শ্যাম্পু করা চুলগুলো কপালের সামনে অবাধ্যে উড়াউড়ি করছে। দু তিনবার হাতের কনুই দিয়ে তা সরিয়ে দিলেও আবার যা লাউ তাই কদু হয়ে যাচ্ছে। অসময়ে অবাধ্য চুলগুলোর নাচুনি ভীষণ বিরক্তি ধরিয়ে দিচ্ছে। মাঝে অবশ্য আপু নিজ হাতে মেহেদি দিতে দিতে আমার চুল ঠিক করে দিয়েছিলো। কিন্তু এতে লাভ হয়নি খুব একটা। এক পর্যায়ে এ নিয়ে ভীষণ বিরক্ত হওয়ায় জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বললাম,
” মনটা চাচ্ছে, এক্ষুণি এ চুলগুলো কেটে ফেলি। ”

” খবরদার এ চিন্তা ভুলেও মাথায় আনবি না। ”
এই বলে অকস্মাৎ প্রোজ্জ্বল ভাই পিছন হতে আমার মাথায় ব্যান্ড দিয়ে চুলগুলো পিছনে নিয়ে এলেন। উনার এরূপ অকস্মাৎ আগমনে চকিত দৃষ্টিতে পিছনে ফিরে তাকালাম উনি। আমার এ চাহনিতে উনি মৃদু হেসে আমার পাশে ফ্লোরে বিছানো তোষকে এসে বসে পড়লেন। হাঁটু দুটো ভাঁজ করে দু হাত হাঁটুর সামনে দিয়ে বললেন,
” এই সামান্য কারণে এতো সুন্দর চুলগুলো কেটে ফেলবি! সাহস তো কম না তোর! তুই জানিস, তোর চুলগুলো কি সুন্দর! আমার ভীষণ পছন্দের তোর চুলগুলো। ”

আমি বললাম,
” চুলগুলো আমার মাথায় আছে প্রোজ্জ্বল ভাই। আপনার মাথায় না। এরা যে মাঝে মাঝে কি ডিস্টার্ব করে তা তো জানেন না আপনি। এজন্যই মন চায় কেটে ফেলি। ”

আমার কথার প্রত্যুত্তর স্বরূপ উনি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। আমি সেদিকে আর খেয়াল না করে জিজ্ঞেস করলাম,
” আমি যে চুল কাটার কথা বললাম তা আপনি জানলেন কি করে?”

বহুদিন পর আবারো প্রোজ্জ্বল ভাই আমার মাথায় একটা গাট্টা মে’রে বললেন,
” তুই তো একটা নাদান বাচ্চা। এতোকিছু বুঝবি না কি! চুপচাপ বসে মেহেদি নে। বেশি নড়াচড়া করলে নষ্ট হয়ে যাবে। ”

আমি আর কথা বাড়ালাম না। কিছুক্ষণ পর ঐ আপু বললেন,
” নাম বলো।”

কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো বুঝতে যে উনি কার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আমি প্রস্তুত হয়ে অভ্র ভাইয়ের নাম বলতে যাবো, কিন্তু এর পূর্বেই প্রোজ্জ্বল ভাই জিজ্ঞেস করলেন,
” কার নাম বলবে?”

ঐ আপু বললেন,
” কেনো, চন্দ্রিমার উডবি হাজবেন্ডের নাম। ”

” ওহ। হাজবেন্ডের নামও হাতে লিখতে হয়!”

” হ্যাঁ। কেনো আপনি জানেন না এখনকার সব মেয়েরাই তাদের হাজবেন্ডের নাম হাতে লিখে? ”

প্রোজ্জ্বল ভাই বোকাসোকা হেসে বললেন,
” নাহ, জানা ছিলো না। আচ্ছা আপনি লিখুন। অভ্র, অভ্র নাম লিখুন।”

” আচ্ছা। ”

প্রোজ্জ্বল ভাই আর কথা না বাড়িয়ে উঠে চলে গেলেন। পিছে সিঁড়ি দিয়ে নামার পথে একবার পিছনে ফিরে আমার দিকে চেয়ে মৃদু হাসলেন।

—————–

পার্লারের ঐ আপুটাই আজ আমাকে সাজাতে এসেছে। বাড়িতেই বিয়ের সাজ শেষ করলেন উনি। সকাল থেকে সাজগোজ শুরু করে মাত্রই শেষ করলেন উনি। সাজতে ঠিক কতক্ষণ লাগলো তা দেখতে ঘড়ির দিকে তাকালাম। প্রায় বারোটা বাজে। এই ব্রাইডাল সাজ দিতে উনার সময় লাগলো প্রায় আড়াই ঘণ্টা। সাজানো শেষে উনি বিয়ের লাল বেনারসী পরিয়ে দিলেন আমাকে। অতঃপর বিয়ের সকল গহনা দিয়ে আমাকে পরিপূর্ণভাবে সাজিয়ে মাথায় ওড়না দিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে বসালেন। আয়নার সামনে বসার পর আমি অবাক নয়নে নিজেকে দেখলাম। বিয়ের সাজে আমি নিজেকে চিনতেই পারছি না। এ কি আদৌ আমি! গায়ে লাল বেনারসি, মাথায় লাল ওড়না, গলায় ভারী ওজনের মালা, নাকে নোলক, মাথায় টিকলি, হাতে চুড়ি, এ যেনো অন্য আরেক আমি! মন চাইছে বিয়ের সাজে এভাবেই অভ্র ভাইকে একটা ছবি তুলে পাঠাই। অবশ্য, আজ সকাল থেকে উনার সাথে আমার একবারও কথা হয়নি। আমি কয়েকবার কল দিয়েছিলাম কিন্তু উনি রিসিভ করেননি। আমি আবারো কল দিতে ফোন তুললাম। এরই মধ্যে আমার রুমে প্রবেশ করলেন প্রোজ্জ্বল ভাই। দরজা খুলেই আমাকে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিষ্পলক চেয়ে রইলেন আমার দিকে। উনার এ নিষ্পলক চাহনিতেও বিরাজ করছিলো বিস্মিত ভাব। বোঊ করি, উনি আমায় হয়তো এ রূপে আশা করেনি!

প্রোজ্জ্বল ভাই ধীর পায়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। বিস্মিত কণ্ঠে বললেন,
” এটা কি তুই চন্দ্রিমা! বিশ্বাসই হচ্ছে না। তোকে আজ কি দারুণ লাগছে দেখতে তুই জানিস? চোখ ফেরানোই দায় হয়ে পড়েছে। ”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এহেন প্রশংসায় আমি লজ্জায় মিইয়ে এলাম। কিছু প্রশংসামূলক কথা শোনার পরিবর্তে উনাকে ধন্যবাদ দিতে চাইলাম। কিন্তু এর পূর্বেই আমার ফোনের ম্যাসেজ নোটিফিকেশন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিন অন করে ম্যাসেজ পড়তেই আমার পুরো দুনিয়া যেনো থমকে এলো। কয়েক সেকেন্ডের জন্য শ্বাস প্রশ্বাস উভয়ই বন্ধ হয়ে এলো যেনো। অভ্র ভাইয়ের ম্যাসেজ এসেছে,
” আমি এ বিয়ে করতে পারবো না। ”
®সারা মেহেক

—১ম খণ্ডের সমাপ্তি—
/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here