বৃষ্টির পড়ে পর্ব ১

রান্নায় একটু মরিচ বেশি দেওয়ায় মেহুল কে রান্না ঘড়ের মধ্যেই চ*ড় লাগায় সিকদার বাড়ির বড় বউ। গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে ফুপির দিকে তাকিয়ে আছে মেহুল । এক থা*প্প*ড়* এ ক্ষ্যান্ত হন নাই তিনি গরম তরকারি থেকে খু*ন্তি উঠিয়ে এলোপাথাড়ি মেহুল এর পিঠে মারতে থাকেন তিনি। মেহুল কান্না কর‍তে করতে বলে।

আমার ভুল হয়ে গেছে ফুপি আর এমন হবে না এভাবে আমাকে মেরো না আমি ব্যাথা পাচ্ছি। (মেহুল)

চুপ হা*রা*ম*জা*দি আমার বাড়িতে বসে গোগ্রাসে গিলছিস আর অন্য ধংশ করছিস আজকে এতো বছর পড় আমার ছেলে আসবে তার জন্য এইটুকু রান্নার মধ্যে এতো মরিচ ঢেলে দিলি। আমার ছেলে ঝাল খেতে পারে না জানিস না তুই? ( ফুপি)

আমার ভুল হয়ে গেছে ফুপি আর হবে না। ( মেহুল)

ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বললো মেহুল, এ আর বেশি কিছু না এর থেকে বেশি মার সে খায়। পান থেকে চুন খসলেই তাকে তার ফুপি মারে। মেহুল এর বাবা-মাও মেহুলকে কিছু বলে না। মেহুল যে তাদের মেয়ে এটাও সে মানে না।

ফুপির কথায় ঘড় গুছাতে চলে গেলো সে, এই বয়সে সে যা যা দেখেছে হয়তো কেউ তা দেখে নাই। নিজের বাবা-মা যখন পর এর মতো আচরন করে তা বলে বুঝানোর মতো না।

বাসার সামনে হৈচৈ অনেক, কারণ বাড়ির আদরের ছেলে আয়াত আয়াস সিকদার লন্ডন থেকে ফিরে এসেছে। কিন্তু আনন্দ নেই মেহুল এর, এই লোকটার জন্য ই তো তার জিবন এতো কষ্টের। এই লোকের জন্য ই তো তাকে এই বাড়ির লোকগুলো দেখতে পারেনা। মেহুলের বাবা- মা ও অনেক হ্যাপি আজ একমাত্র ভাই পো আসছে এতোদূড় থেকে। এক কোনে এতিম এর মতো দাড়িতে আছে মেহুল পরিবার থাকতেও আজ সে এতিম।

বাড়ির সামনে গাড়ি এসে থামলো গাড়ি থেকে খুব সু দর্শন একটি ছেলে বেড়িয়ে আসে, দেখতে একদম গল্পের নায়কদের মতো। ব্লু জিন্স ব্লাক সার্ট হাতে দামি ব্রান্ডের ওয়াচ চুল গুলো সিল্কি আর স্ট্রেট কপালে উপর পড়ে আছে। এ আর কেউ নয় আয়াত আয়াশ সিকদার গাড়ির পিছনের দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিলো আয়াতের হাত ধরে নেমে আসলো এক মেয়ে। দেখতে অনেক সুন্দর ব্লাক জিন্স হোয়াইট ক্রপ টপ্স,চুল ঝুটি করা চোখে চশমা পায়ে হাই হিলস। বাড়ির সবাই মেয়েটিকে দেখে অবাক হয়ে আছে। তারা জানতোনা আয়াত এত সাথে কেউ আসবে। আয়ত এবার সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো কি সুন্দর তার হাসি এই হাসির জন্য সবাই পাগল থাকবে। আয়াত এর পাশে মেয়েটা কে দেখে বাড়ির কাজের মেয়ে রোকসানা মেহুল কে ফিশফিশ করে বললো,

দেখছেন নি আফা মাইয়াডারে কানা লাগে কত্তবড় চমশা ডা লাগাই রাখছে। (রোকসানা)

রোকসানার কথায় মেহুল ফিক করে হেসে দেয়, পরক্ষনে মুখে হাত চেপে দাঁড়িয়ে যায়। কারো হাসির শব্দে আয়াত অইদিকে তাকায় আয়াত কে অনুসরণ করে সবাই তাকায় মেহুল এর দিকে। সবার চাহনী দেখে মেহুল ভয় পেয়ে যায়। কেউ হয়তো চায়না যে মেহুল এখানে থাকুক তাই সে বাড়ির ভিতর চলে যায়।

মা এ হচ্ছে আমার বেষ্টফ্রেন্ড জেনিফার। আমরা একসাথে পড়াশোনা করেছি বুঝছো ওর বিডি দেখার শখ হয়েছে তাই নিয়ে আসলাম। ( আয়াত)

একদম ভালো করেছিস বাবা, আসো মা ভিতরে আসো। ( ফুপি)

আয়াত আর জেনিফার কে নিয়ে সবাই ভিতরে গিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে।

এই মেহুল শরবত আর নাস্তা গুলো দিয়ে যা ছেলেটা আমার অনেকটা পথ এসেছে। (ফুপি)

আসছি ফুপি আমি। (মেহুল)

মেহুলের গলার আওয়াজ এ স্থীর হয়ে গেলো আয়াতের নেত্রযুগোল। চোখ গুলো পিপাসিত মনে হচ্ছে কাউকে দেখার জন্য। মেহুল তখন নাস্তা এনে টেবিলে রেখে চলে যাচ্ছিল তখন জেনিফার জিজ্ঞেস করলো,,

who is she ayat.? ( কে এটা আয়াত) (জেনিফার)

She is My cousine Jenifer, (সে আমার কাজিন জেনিফার)।
(আয়াত)

But look at her condition she look Like a maid. ( তুমি ওর অবস্থা দেখো একজন কাজের মেয়ের মতো)। (জেনিফার)

জেনিফার এর কথায় অপমানে মেহুলের চোখ দিয়ে পানি পড়ছ্র অচেনা একজন মেয়ে তাকে এভাবে অপমান করছে অথচ বাড়ির লোকদের কিচ্ছু যায় আসেনা। দেখে মনে হচ্ছে সবাই ওর কথায় মজা পাচ্ছে। এক মুহুর্ত দেরি না করে মেহুল রান্নাঘরে চলে যায়। মেহুল চলে যাওয়াতে জেনিফারের ঠোটের কোনায় এক অদ্ভুদ হাসি লক্ষ করা গেলো, ইচ্ছে করেই সে মেহুল কে অপমান করছ্র বুঝা যায়।

Don’t you think you are Talking too much,How dare you jennie?
( তোমার মনে হচ্ছেনক তুমি একটু বেশি কথা বলছো, তোমার সাহস কিভাবে হয় জেনি.?)।(আয়াত)

আয়াতের মৃদু ধমক আর রাগি গলায় বলা কথাতে কেপে উঠে জেনিফার। বাড়ির সবাই এবার আয়াতেকে বুঝাচ্ছ্র এর মধ্যে মেহুলের মা বলে,

আয়াত বাবা তুমি শুধু শুধু জেনি কে ধমকাচ্ছো মেয়েটার কি দোষ ও আজ নতুন আসছে সে কি কাউকে চিনে। আর মেহুল এভাবে কাজের মেয়েদের মতো পোষাক আশাক পড়ে ঘুড়লে অন্যকেউ কি ভাববে বলো। (মেহুলের মা)

ঠিক ই বলছে মায়া, মায়া তুমি জেনিফার কে নিয়ে যাও মিরার রুম এ একটু ফ্রেস হয়ে রেষ্ট নিক।আয়াত তুমিও তোমার রুমে যাও।( ফুপি)

মায়া বেগম জেনিফার কে নিয়ে চলে গেলেন আয়াত ও নিজের রুমে চলে গেলো। সব কথা রান্নাঘর থেকে মেহুল শুনছে,,তার মা তাকে ছাড়া দুনিয়ার সবাই কে কতো ভালোবাসে। আজকে আশা জেনিফার কে শুধু আয়াত ধমক দেওয়ায় কি সুন্দর জেনিফার কে বাচিয়ে দিলো। অথচ ফুপি আর বাবা যখন আমাকে মারে মা কি সুন্দর ইগনর করে সব। এই বাড়িতে শুধু দাদির জন্য মেহুল আছে দাদি ছাড়া মেহুল কে কেউ ভালো জানেনা। দাদি কিছুদিনের জন্য তার বাপের বাড়ি বেরাতে যাওয়ায় আরো বেশি অত্যাচার করে ওরা। মেহুল ভেবে পায়না নিজের আপনা মা-বাবা কীভাবে এমন করতে পারে।

কি ব্যাপার নবাব নন্দিনীর মতো দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস তুই। যা ওয়াসরুমে দেখ কতোগুলো জামা-কাপড় ভিজানো আছে কেচে মেলে দিয়ে আসবি। আর শোন আয়াত এর থেকে একটু দূড়ে দূড়ে থাকবি তুই। ( ফুপি)

আচ্ছা ফুপি যাচ্ছি আমি। ( মেহুল)

মেহুল আফা আমনে থাকেন আমি যাইয়া ধুইয়া মেইলা দিয়া আসুমনে। (রোকসানা)

দরদ লাগে উতলাইয়া পড়ে ওর জন্য তোর, যা ওর কাজ ও করতে পারবে তুই গিয়ে দেখ জেনিফার এর কিছু লাগবে কিনা। ( ফুপি)

ফুপি চলে যেতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেহুল, আর রোকসানা বকতে লাগলো।

এই বাড়ির মাইনষের মন বলতে কিছু নাই। ফুলের লাহান মাইয়াডারে সারাদিন খাডায় আর মারে। আল্লাহ একদিন এর বিচার করবো। (রোকসানা)

আহ রোকসু আপা এইভাবে বলে না, তারা আমার আপনজন তো। (মেহুল)

আর আফনজন আফা আন্নের আফন হইলে এত্তো অত্যাভার ক রবার ফারতো না। ( রোকসানা)

থাক বাদ দেন আপনি গিয়ে দেখে আসুন না হলে ফুপি আপনাকেও বকবে।(মেহুল)

মেহুলের কথায় রোকসানা চলে আফসোস করতে কর‍তে। মেহুল ও চলে গেলো কাপড় কাচতে। কিন্তু তারা কেউ যদি একটু দেখতে পারতো। কেউ তাদের সব কথা শুনে ফেলেছে। রাগে তার চোখ লাল হয়ে গেছে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলেছে। সে ভাবেনাও এউসব চলবে এই বাড়িতে তারপর ওখান থেকে চলে আসলো।

মেহুল এই মেহুল কই তুই তাড়াতাড়ি আমার জন্য কফি বানিয়ে দিয়ে যা। ( আয়াত)

আয়াতের কন্ঠে ওর মা দৌড়ে যায় আর মেহুল কে ওয়াসরুম থেকে টেনে বের করে।

আমার ছেলে এতোক্ষন ধরে কফি চাচ্ছে কানে যায় নি তোর নবাবজাদি, মন কোন নাগরের কাছে থাকে তোর?

বাজে ভাষা তার ফুপি তাকে বলে তা মেহুল কখোনো নিতে পারেনা। একজন শিক্ষিত মানুষ কিভাবে এতো নোংরা ভাষা বলতে পারে

#চলবে?

#বৃষ্টির_পড়ে
#নুসাইবা_ইসলাম
#১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here