বৃষ্টির পড়ে পর্ব ৯

#বৃষ্টির_পড়ে
#নুসাইবা_ইসলাম_লেখিকা
#পর্ব_৯

দাদির কথায় দুইভাই মুচকি হাসলো,কারণ তারা এইকথা ভালোভাবে জানে কেউ এই বিয়েতে খুশি নয়।

সং এর মতো দাড়িয়ে আছো কেনো যাও দাদির জন্য কিছু বানাও দেখো না কতোদিন পর আসছে। (আয়াত)

ভাবি আমার জন্য হাল্কা ঝাল দিয়ে নুডুলস বানিয়ো তো বনানোর পরে বেশি করে সস দিয়ে দিবে। (আইজান)

আয়াতের কথাটা গায়ে লাগলো মেহুলের আয়াত তাকে সং বললো। তার ও দাদু লাগে সেও তো দাদুকে জরিয়ে ধরতে চায় অথচ দুই ভাইয়ের জন্য সেই সুযোগ পাচ্ছে না সে। তার ওপর আয়াত ওকে সং বললো অভিমান চলে আসলো মেহুলের৷ আইজান এর কথায় হ্যাঁ বলে চলে গেলো রান্নাঘরে । দাদু পায়েস অনেকটা পছন্দ করেজ এটাই বানানো যাক।

ভাই তুই এভাবে মেয়েটাকে বললি কেন দেখ এখন রাগ করছে সামলা যা। (আইজান)

আরে রাখ ওর রাগ আমি এমনি ভাঙ্গাতে পারবো বাচ্চা একটা। (আয়াত)

তাহলে তুই অই বাচ্চা বিয়ে করলি কেন আমি আমার বোনকে আরো ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারতাম। (আইজান)

ভাই না শত্রু তুই? আর কিসের বোন ও তোর বড় ভাবি লাগে। আজকে থেকে ভাবি ডাকবি আসছে আমার বউ কে বিয়ে দিতে। ( আয়াত)

আয়াতের কথায় আইজান হেসে ফেললো সে জানে মেহুলকে আইজান খুব ভালোবাসে।

আসছে হাহ ভাগো তো তুমি চলো ওয়েডিং প্ল্যানার কে সব দায়িত্ব দিয়ে আমরা শপিং করে ফেলি। আমি আবার আমার বউ এর লেহেংগা একা কিনবো।(আইজান)

হাল্কা লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে আয়াত কে বলছে।

নাটক করিস না ছোট মেয়েটা দেখ কান্না করে নাক-মুখ ফুলাচ্ছে। (আয়াত)

কান্না করুক আমি এর থেকে হাজারগুব বেশি পেয়েছি ভাই সে নাহয় একটু পেলো। (আইজান)

পায়েস আর নুডলস দিয়ে যেতে এসে দুই ভাইয়ের কথোপকথন এর হাল্কা কিছু মেহুলের কানে আসছে।মেহুল কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছে না।

আইজান ভাইয়া আপনার নুডলস উইথ এক্সট্রা সস,এন্ড পায়েসটা ধরুন কারো খাবার ইচ্ছা হলে খেতে পারে। (মেহুল)

আয়াত ও আইজান ভালো করেই জানে মেহুল আয়াত কে ইংগিত করে বলছে কথাটা। আয়াত আইজান থেকে পায়েস নিয়ে খাওয়া শুরু করলো আর আইজান নুডুলস।

ভাবি আমার ভাগের পায়েসটা ফ্রিজ এ রাখবা আমি ফিরে এসে ঠান্ডা ঠান্ডা খাবো। ( আইজান)

আচ্ছা ভাইয়া আমি রেখেছি এবার বাকিদের টা দিয়ে আসি আপনারা খেয়ে নেন। (মেহুল)

মেহুল চলে যাবার পর আইজান নুডুলস খেতে লাগলো আর আয়াত পায়েস। আয়াতের এই প্রথম মেহুলের হাতে বানানো কিছু খেলো বলতেই হবে মেয়েটার রান্নার হাত দারুন।

ভাই তোমার তো উচিত ছিলো তখন ই ভাবির হাতে চুমু খাওয়া দূর এটা তুমি মিস করে দিলে। এখন চলো আমাদের লেট হচ্ছে। (আইজান)

হ্যাঁ কাল সুদে আসলে শোধবোধ করে দিবো চল। (আয়াত)

দুই-ভাই চলে গেলো নিজেদের কাজে,মেহুল ওর ফুপির রুমে গিয়ে পায়েসের বাটি রেখে চলে আসলো দাদুর রুমে দাদুকে দিয়ে চলে গেলো মিরার রুমে। মিরার রুমের দরজার হাল্কা ফাকা করে দেখে মিরা বেডে উপর হয়ে শুয়ে কেদে যাচ্ছে। মেহুল বুঝতে পারছেনা মিরা কেনো কাদছে। মেহুল গিয়ে মিরার কাধে হাত লাগলো মিরা পাশ ফিরে বোন কে পেয়ে ভরসা পেলো তাই মেহুলকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে যাচ্ছে।

কি হয়েছে বোন এভাবে কাঁদছিস কেনো আমাকে বল? (মেহুল)

আপুরে আমি কিভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যকারো সাথে ঘর বাধতে দেখবো? আমার খুব কষ্ট হচ্ছেরে। (মিরা)

কি বলছিস কে তোর ভালোবাসার মানুষ আর অন্যকারো সাথে ঘর বাধবে মানে? ( মেহুল)

আমি তো আইজান ভাইয়াকে খুব ভালোবাসি আপু, যখন থেকে ভালোবাসার মানে বুঝতে শিখেছি তবে থেকে। ( মিরা)

সত্যি তাহলে আইজান ভাইয়াকে বলছিস না কেনো বলে দে এখন৷ (মেহুল)

সে জানে আপু সে সব জানে আমার করা একটা ভুলের জন্য আজ আমি তাকে হারাচ্ছি আপু।, (মিরা)

আমাকে সব বল দেখি আমি কিছু করতে পারি কিনা? (মেহুল)

আমি তখন ৮ম শ্রেনীতে পড়ি আর পাঁচটা ফ্রেন্ড নিয়ে চলি তো একদিন ট্রুথ আর ডেয়ার খেলার সময় আমার ফ্রেন্ড রা আমাকে ডেয়ার দেয় আইজান ভাইকে পটিয়ে তার সাথে ৩ মাস প্রেমের নাটক করতে হবে। আমি জানিনা অই সময় আমার কি হয়েছে আমি ওদের কথায় রাজি হয়ে যায় বাজিটা জিতা আমার কাছে প্রধান্য পায়। এরপর আমি নানান উপায় শুধু আইজান ভাইয়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম তার সাথে নানান দুষ্টামি করতাম। এমনভাবে কেটে যায় একমাস ওইদিকে ওরাও তারা দিতে থাকে একদিন আমি ছু/ড়ি নিয়ে হাতে একটা কাট দিয়ে বলি হয়তো আমাকে ভালোবাসবে নাহয় আমি তখন হাত কেটে ফেলবো। বিশ্বাস কর আপু আমি ধীরে ধীরে নাটক করতে করতে কখন যে তাকে ভালোবেসে ফেলি তা আমি জানিনা। আমার এক ফ্রেন্ড ছিলো প্রিয়া সে আইজান ভাইকে পছন্দ করতো একদিন সে আইজান ভাইয়াকে ডেকে সব বলে দেয় আর ভাইয়া আমার উপর রাগ করে আমাকে অনেক কথা শুনায় আর বাড়ি ছেরে চলে যায়। আমি বুঝতেই পারিনাই কি থেকে কি হয়ে গেলো আর জা তাকে বুঝাতে পারলাম এই ছোট বাচ্চা মেয়েটা যে তাকে খুব ভালোবাসে। (মিরা)

মিরার কথা শুনে স্তব্দ হয় যায় মেহুল সে থাকাকালীন এতো ঘটনা ঘটে যায় আর সে খবর ই পায় নাই। তার বোন এগুলো করছে।

তুই একদম ঠিক করিস নি মিরা ভালোবাসা খেলনা না,আমি আর আয়াত একে অপরকে ভালোবেসেও দূরে ছিলাম আমরা বাধ্য হয়ে ছিলাম পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিলো।ভালোবাসা নিয়ে বাজি হয় না আর যেটা নিয়ে বাজি খেলা হয় তা কিন্তু কখোনোই ভালোবাসা নাম। আমর যাকে ভালোবাসি আমরা তাকে নিয়ে বাজি কখোনোই ধরতে পারবো না। (মেহুল)

আমি জানি তো আপু আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমি তো মাফ চাওয়ার সুযোগ ও পেলাম না। সে তো আমার দিকে ফিরেও তাকায় না আপু। (মিরা)

আয়াত আসুক আমি তার সাথে কথা বলবো জানিনা কি হয় এই নে খেয়েনে তুই। (মেহুল)

মেহুল মিরার রুম থেকে বের হয়ে গেলো সে তো মিরাকে বললো সে দেখবে আসোলেই কি আয়াত তার কথা বুঝবে আ আইজান? ভালোবাসার মানুষ গুলোকে না পাওয়ার অনেক যন্ত্রনা ছোট বোনটা কি এই যন্ত্রনা নিয়ে সারাজিবন পার করতে হবে? মেহুল রুমে গিয়ে গোসল করে শুয়ে পড়লো এতো স্ট্রেস আর নেওয়া পসিবল না। যাই-হোক আয়াত আসুক দেখা যাবে কি হয়। দুই ভাই কাজ শেষ করে আসলো সেই সন্ধায়, দুই হাত ভরা তাদের বিয়ের মার্কেট। আইজান আয়াত-কে দিয়ে সব বুঝিয়ে দেয় আজ রাতে মেহেদী পড়াবে হলুদ হোক তা আয়াত চায়না। আয়াত এসব রিচ্যুয়েলস একদম পছন্দ করে না। রুমে গিয়ে দেখে পুরো রুম অন্ধকার করে শুয়ে আছে মেহুল, ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো মেহুলের কাছে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে মেহুলকে ডাক দিলো আয়াত। আয়াতের ডাকে চোখ খুলে তাকায় মেহুল।

আপনি আসলেন কখন আর কয়টা বাজে? ( মেহুল)

এই মাত্র আসলাম এখন ৭ টা বাজে তুমি কখন ঘুমিয়েছো? ( আয়াত)

আমি তো ১১ টার কাছাকাছি ঘুমিয়েছি আল্লাহ এতো-ক্ষন ঘুমালাম কেউ আমাকে ডাকলো না। আর কেই বা ডাকবে। ( মেহুল)

তারমানে তুমি এখোনো খাও নাই? ফ্রেস হয়ে নিচে গিয়ে বসো তুমি আমি আসছি ফ্রেশ হয়ে। (আয়াত)

আপনি আসেন একসাথেই যাই আপনিও তো টায়ার্ড। (মেহুল)

আয়ান কাবার্ড থেকে নিজের জামাকাপড় নিয়ে গোসল করতে চলে যায়৷ মেহুল বিছানা থেকে সব সপিং ব্যাগ নিয়ে সোফায় রেখে বিছানা পরিষ্কার করে নেয়। এর মধ্যে আয়াত ও চলে আসে দুইজন নিচে নামে আইজান কে ডেকে খাবার খেয়ে নেয়। খাবার খাওয়ার পড় বললো আয়াত।

যাও মিরাকে ডেকে নিয়ে আসো ছাদে যাবো আমরা। (আয়াত)

আইজান ভাইয়া প্লিজ আপনি একটু যাবেন নিয়ে আসবেন ওকে আমার একটু কথা ছিলো আপনার ভাইর সাথে। ( মেহুল)

ঠিক আছে ভাবি আমি যাচ্ছি। ( আইজান)

আয়াত আর মেহুল ছাদের দিকে যেতে যতে কথা বলছে সে কথা আর আমাদের শুনে লাভ নাই। আইজান মিরার রুমের দরজা হাল্কা উকি দিয়ে দেখে মিরা কান্না করছে আর টিস্যু দিয়ে চোখ মুছছিলো। আইজান এর হাসি পেলো এতোদিন সে একা কষ্ট পাইছে এখন মেয়েটা একটু পাক কাল নাহয় সারপ্রাইজ দিবো।

আসতে পারি মিস মিরা আপনার রুমে? (আইজান)

ভালোবাসার মানুষের গলার আওয়াজে পেয়ে কিছুক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো আইজান এর দিকে মিরা। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

হ্যাঁ আসুন কবে থেকে আপনি আমার রুমে আমার পারমিশন নিয়ে আসেন আইজান? ( মিরা)

ভুল হলো আপনার মিরা আইজান এর পর ভাইয়া লাগাতে ভুলে গেছেন। আর আপনার রুমে আসতে হলো পারমিশন নেওয়া লাগবেই। আর যা বলতে আসছিলাম ভাবি আপনাকে ছাদে নিয়ে যেতে বলছে চলেন। (আইজান)

মিরা আইজান এর সাথে ছাদে গিয়ে দেখে আয়াত আর মেহুল মাদুর পেতে বসে আছে আর সামনে মেহেন্দী। আইজান গিয়ে আয়াত এর পাসে বসলো আর মিরা মেহুলের কাছে বসলো৷ মেহুল আইজান এর হাতে মেহেন্দী দিয়ে কিছু লিখে দিলো যা দেখে আইজান মুচকি হাসলো আর মেহুল ও।

কি ব্যাপার দেবর ভাবি লি লিখে হাসাহাসি করছো আমাকে একটু বলো আমিও একটু দেখি। (আয়াত)

আমার হবু বউ এর নাম লিখেছে ভাবি আমার ভাবিটা সত্যিই কিউট। (আইজান)

মিরা অবাক হয়ে সব দেখছে তার কান্না পাচ্ছে অথচ সে নিজেকে সামলে নিলো। মেহুল অনেক অজুহাতে মিরাকে মেহেদী পড়িয়ে দিলো, আর আয়াত মেহুল কে এরপর যে যার রুমে ঘুমাতে চলে গেলো।

কাল সবার জিবন নতুন মোর নিবে কি হবে কেউ জানেনা অথচ তাদের কল্পনার বাহিরে থাকবে সব কিছু…!

#…চলবে..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here