বৃষ্টির পড়ে পর্ব ৭

#বৃষ্টির_পড়ে
#নুসাইবা_ইসলাম
#পর্বঃ৭

আয়াত আমার দিকে আগাচ্ছে দেখে আমি চুপচাপ বসে পড়লাম বেড এর সাইডে। আয়াত ড্রেসিংটেবিল থেকে হেয়ার ড্রায়ার নিয়ে আসলো আর খুব যত্ন সহকারে আমার চুল শুকিয়ে দিতে দিলো। আয়াতের এমন কেয়ারিং স্বভাবের জন্য ওনার প্রতি আমার ভালোবাসা বেরে যাচ্ছে।আমি এতোটা দুর্বল কিভাবে হয়ে পরছি এটা ঠিক না। উনি আমার চুল শুকিয়ে দিয়ে আমার থেকে দূরে সরে গেলেন।

তারাতাড়ি নিচে আসো আমি তোমার জন্য ওয়েট করবো টেবিলে লেট করোনা। (আয়াত)

আয়াত ভাইয়ের মুখে তুই বাদে তুমি শব্দটা কেনো যেনো মনে হলো আমার ভিতরটা নাড়িয়ে দিলো।

জ্বি আপনি হাটুন আমি আসছি দুই মিনিট দিন আমাকে। (মেহুল)

আয়াত ভাই চলে গেলো আর আমি ওয়াস-রুম এ গিয়ে আমার চুলের ক্লিপটি এনে চুল খোপা করে ক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে দিলাম। মাথায় সুন্দর করে ঘোমটা দিয়ে নিলাম কেনো জানিনা আমার খুব লজ্জা লাগছে আজ। সবার মুখোমুখি হতে ভয় আর লজ্জা দুটোই ঘিরে ধরেছে আমাকে। তবুও আমি নিচে গেলাম, দেখলাম সবাই থমথমে মুখে বসে খাবার খাচ্ছে আর আয়াত ভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে দেখতেই আয়াত ভাই ইশারা করলেন তার পাশে বসতে আমিও বসে পড়লাম। আয়াত ভাই আমার প্লেটে খাবার বেরে দিয়ে খেতে বললেন। আমার চোখ পানিতে ভরে গেলো সেই কবে কেউ আমাকে খেতে ডেকেছে বা বলেছে আমার মনে নাই। এই বাড়ির কোনো মানুষ কখোনো বলে নাই আমাকে তাদের পাসে বসে একই টেবিলে খাবার খেতে।

কি হয়েছে খাবার না খেয়ে কান্না করছিস কেন?তোর চোখে বলতো এতো পানি কোথা থেকে আসে৷ (আয়াত)

তোমাদের এসব ভালোবাসা এখানে না দেখালেও হয়। এখানে তোমার মা আছেন তোমার মামি আছে আর আমি আছি ভুলে যাচ্ছো.? (বাবা)

প্রথমত আমি এখানে লিমিটের বাহিরে কিছু করছি না আমার বেডরুম আছে। দ্বিতীয়ত মেয়ের অথবা ভাগ্নের দিকে এভাবে তাকাতে নেই সেই কথা আপনি ভুলে গেছেন। আপনার স্ত্রীকে আমি মামি বলে মানি নাই আর না কখোনো মানবো। আপনারা আমার জন্য ম্যাটার করেন না। আর মা তার সম্মান নিজের প্রতি ছেলের চোখে নিজেই প্রতিনিয়ত নিচে নামাচ্ছে। (আয়াত)

আয়াত আমি কিছু বলছি না দেখে ভেবো না কিছু বলবো না।তুমি ঠিক করো নাই পস্তাবা দেখে নিও। (ফুপি)

মা হয়ে ছেলেকে অভিশাপ দিচ্ছো না কি ছেলেকে হু/ম/কি দিচ্ছো? ( আয়াত)

কোনোটাই না তোমার বাবা দেশে নাই ভাবতে পারছো সে আসলে কি হবে? (ফুপি)

মিঃসিকদার কে আমি তো বাবা বলে মানিনা আর যাইহোক আমি তাকে ভয় ও পাচ্ছি না। আর তুমি কথা কি হা করে গিলছো তাড়াতাড়ি খাবার খাও। (আয়াত)

আয়াতের ধমকে মেহুল থতমত খেয়ে যায় আর খাওয়া শুরু করে দেয়। মনে মনে ভাবছে মেহুল কি খাঢুস লোক কই ভাবছে কথা বলছে ওই ফাঁকে না খেয়ে উঠে যাবে। তা আর হলো কই এই মানুষটার যে কয় চোখ আল্লাহ জানে। সবার খাওয়া শেষ সবাই চলে যাচ্ছে শুধু টেবিলে আয়াত আর মেহুল একমাত্র বসা মেহুল অল্প অল্প করে খাবার খাচ্ছে চড়ুই পাখির মতো।

রোকসু আপা আপনিও এখানে বসে পরুন মেহুল তো একা খাচ্ছে৷ ( আয়াত)

আয়াতের কথায় রোকসানা আর মেহুল দুজোন ই অবাক হয়ে আছে। যেখানে এই ফ্যামিলির মানুষ মেহুলকেই কেয়ার করেনা সেখানে রোকসানা তো কাজের মেয়ে। আগে প্রতিদিন সব কাজ শেষ হলে সবার খাওয়ার একদম পড়ে রোকসানা আর মেহুল একসাথে গল্প করতো আর খেতো। এই বাড়িতে রোকসানা আর মেহুলকে গুটি কয়েক মানুষ স্নেহ করেন, আয়াতের দাদু,আয়াত, মিরা আর আইজাঁন। আইজান হলো এই বাডির ছোট ছেলে কোথায় আছে বা কি করছে কেউ জানেনা। হঠাৎ আসবে আবার হঠাৎ উধাও হয়ে যাবে। ওরনা-র এক কোনে নিজের চোখের কোনা থেকে পানি মুছে নিয়ে রোকসানা বললো।

আরে না ছোট সাহেব আমনেরা আগে খাইয়া লন আমি পড়ে খাইয়া লমু হনে। ( রোকসানা)

আরে আয়াত ভাই তো ঠিক বলছে আপা বসো-তো একা একা কিভাবে খাবা আমার সাথে খাবার খাও। আগে আমরা একসাথে খাবার খেতাম। (মেহুল)

রোকসানা কিচেনে গিয়ে নিজের বরাদ্দকৃত প্লেট আর গ্লাস নিয়ে এসে অসস্তি নিয়ে বসলো এক চেয়ারে। মেহুল নিজের হাতে খাবার বেরে দিলো রোকসানাকে। রোকসানা আর মেহুল খাচ্ছে আর গল্প করছে মাঝখানে মেহুল হেসে উঠছে। আয়াত এক দৃষ্টিতে মেহুলকে দেখতে লাগলো। মেহুলের মুখেতো সে হাসি ফোটাতে চেয়েছে, আর কিছুনা এই মেয়ের মুখে হাসি আনার জন্য নিজের জিবন ও দিয়ে দিতে পারে আয়াত। মেহুলদের খাবার শেষ মেহুল বেসিন থেকে হাত ধুলো।

আপা আপনি এগুলো গুছিয়ে শুয়ে পড়ুন আর মেহুল চল আমার সাথে। (আয়াত)

আইচ্ছা সাহেব আমনেরা জান আমি গুছাই কিছু লাগলে কইয়েন। (রোকসানা)

রোকসানা সব নিয়ে কিচেনে চলে গেলো পরিষ্কার করতে আর দিন তো মেহুল হেল্প করতো। মেহুল কে তো আয়াত আজ একদম নিজের কাছ ছাড়া করছেই না। মেহুল ভেবে পায়না লোকটার হঠাৎ হলো কি যে সে এমন করে। আচ্ছা এতো কিছু ভাবছি কেনো। আয়াত গিয়ে সোজা বেড এর একসাইডে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো মেহুল অনেক্ষন হাটা হাটি করলো রুমে যখন আয়াত ঘুমিয়ে পড়ছে তা সিউর হলো তখন সে আয়াতের পাশে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকালে…..

সিকদার বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে আছে সেই অজ্ঞাত যুবক। বসে বসে কি যেনো ভাবছে তার এই ভাবনার মধ্যে মিসেস সিকদার এসে তাকে জরিয়ে ধরে।

আইজান বাবা তুই আসবি আজকে মা কে বলে আসবি না? বাবা তুই আসছোস মা তো তোর জন্য কোনো আয়োজন করতে পারি নাই। ( ফুপি)

আম্মু চুপ করো আমি অনেক টায়ার্ড আর আমি মেহমান নই যে আমি আসলে আমার জন্য তোমার আয়োজন করতে হবে। এইসব বন্ধ কর আমার রুন পরিষ্কার করানোর ব্যাবস্থা করো আমি ঘুমাবো। আমি ভাইয়ার রুমে গিয়ে এখন ঘুমাবো। (আইজান)

মিসেস সিকদার কিছু বলতে চেয়েছিলো আইজান তা না শুনে দ্রুত পায়ে হেটে আয়াত এর ঘরের দরজা খুলে ঢুকে যায়। ঢুকে যা দেখলো তাতে হা করে তাকিয়ে আছে সে। আয়াত এর বুকের ওপর মেহুল মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে আর আয়াত মেহুল কে জরিয়ে ধরে। আইজান এর মাথায় কিছু আসছে না আয়াত আর মেহুল এক রুমে ঘুমাচ্ছে বাসার সবাই কিছু বলছেনা কেনো?

ভাইয়ায়ায়ায়া কি হচ্ছে এসব? (আইজান)

আইজান এর এমন চিৎকার এ ধরফরিয়ে উঠে বসে মেহুল আর আয়াত। ঘুমের মধ্যে এমন চিৎকারে কি হইছে তা বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষন যাওয়ার পর দেখলো আইজান সামনে দাঁড়িয়ে এরপর মেহুল এটা দেখে লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে সোজা ওয়াসরুম এ চলে গেলো। আর আয়াত মাথা চুলকে ছোট ভাই এর দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা বোকা হাসি দিচ্ছিলো।

আরে বড় ভাই আর ভাবির রুমে আসার আগে নক করতে হয় তোর সেই কমনসেন্স নাই? (আয়াত)

বড় ভাই যে বিয়ে করছে তাও ছোট ভাইকে জানায় নাই এইজন্য বড় ভাইর কি কমনসেন্স নাই? (আইজান)

দূর বাদ দে কালকে রাতে অনেক ড্রামা এর পর এরে বিয়ে করে নিছি। কখন আসছোস তুই আর আসবি যে আমাকে আগে জানাবি না.? (আয়াত)

আমি ভাবছি আমি তোমাদের সারপ্রাইজ দিবো বাট আল্লাহ উল্টা আমি ই সারপ্রাইজ পাইলাম। (আইজান)

পাঁচতারকা এক হোটেলের রুমের সামনে এসে দরজা নক করে জেনিফার। দরজা খুলে জেনিফারের হাত টেনে রুমে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দেয় কেউ। জেনিফারকে কথা বলার চান্স না দিয়ে সে ধাক্কা মেরে জেনিফারকে খাটের উপর ফেলে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে।

মিস্টার সিকদার প্লিজ স্টপ লিভ মি…! (জেনি)

#চলবে..?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here