বৃষ্টির পড়ে পর্ব ৬

#বৃষ্টির_পড়ে
#নুসাইবা_ইসলাম_লেখিকা
#পর্ব_৬

কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝলাম না সবার মাথায় হাত। ফুপি মাথায় হাত রেখে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে, তার মাথায় কি চলছে তা একদম বুঝা যাচ্ছেনা। আমার আব্বু রাগে ফুসছে আম্মু ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে। আম্মুর মতিগতি বুঝা বড় দায়, আয়াত ভাইয়া সোফায় পা তুলে বসে আছে। বিয়ের পাঠ চুকেছে ঘঘন্টাখানেক আগে এরমধ্যে জেনিফার এর সাথে আয়াত ভাইর একদফা ঝগড়া পড়ে জেনিফার তাকে শাসিয়ে গেছে।
আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা আমার সাথে কি হচ্ছে এরা ট_র্চা_র করতো যার ফলে আমি কখোনো কাউকে কিছু বলি নাই। আর আজ না চাইতেও এমন এক মানুষের সাথে বাধা পড়ে গেলাম যাকে আমি ভালোবাসা সর্তেও ঘৃনা করি। জিবন কখন কোথায় মোর নেয় বলা অনেক মুশকিল।

রোক্সু আপা জলদি খাবার সার্ফ করেন আমরা অনেক ক্লান্ত ফ্রেস হয়ে এসে খেয়ে ঘুমাতে যাবো। ( আয়াত)

হ ভাইজান আমি খাবার গরম দিতাছি আমনেরা আহেন। (রক্সু আপা)

মেহুল আয় তো আমার সাথে তুই তাড়াতাড়ি সপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে আয়৷ ( আয়াত ভাই)

আয়াত ভাইয়ের কথা আমি শুনতেই পাচ্ছি না এমন ভাবে বসে আছি। আমি কি করবো যা হচ্ছে আমার সাথে এসব তো এভাবে চলতে পারে না কি করবো আমি। এইদিকে আমার দিকে বাকা নজরে আয়াত ভাই তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আমি এখন এই চোখের ভয়ে তার পিছু পিছু হাটা ধরবো।

আমি শেষবারের মতো জিজ্ঞেস করছি আমার সাথে আসবি কি ন? না আসলে সমস্যা নাই আমি তোমে সবার সামনে কোলে তুলে নিতে পারবো। (আয়াত)

আয়াত ভাইয়ের এরকম লাগাম ছাড়া কথায় সবাই তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। আয়াত ভাইয়ের এতে কিছু যায় আসে না সে বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি আর কি করবো এবার উনার পিছু পিছু সব নিয়ে হাটা দিলাম। উনি মালিকের মতো সামনে হাটছে আর আমি তার এসিস্টেন্ট এর মতো পিছু পিছু হাটছি হা কি দিনকাল আসলো। রুমে ঢোকার পড় উনি আমাকে টেনে বিছানায় বসালো।

দেখ মেহুল তোর মনে আমার জন্য কি আমি তা ভালো করেই জানি। এই নিয়ে আমি তোকে কিছু বলবো না। আজ যা হয়েছে ভালোয় ভালোয় মেনে নিস আমার থেকে তোর মুক্তি আমার মৃ_ত্যু ছাড়া মিলবে না। আমি তোর কোনো কালেই খারাপ চাই নি আর চাইবো ও না। আমাকে তুই তখন ও বুঝিস নি আর এখন ও বুঝার চেষ্টাও করোস না৷ আমি বলবো আমাকে বুঝ শুধু আমার উপর রাগ আমার উপর অভিমান থেকে তুই এতোগুলো বছর চুপচাপ সবার অপমান অত্যাচার সহ্য করেছিস। আমার মেহুপাখি তো কখোনোই এমন ছিলো না। আমার মেহু পাখি তো খুব চঞ্চল খুব দুষ্টু ছিলো কেনো তুই আমার থেকে আমাত মেহুপাখিকে কেরে নিলি? কেনো বলতে পারবি সব সময় দোষ না করেও আমি শাস্তি পাবো? (আয়াত)

আয়াত ভাইয়ের কথায় কান্না আটকাতে পারলাম বা কিভাবে পারবো ছোট থেকে এই লোকটা ই তো আমার আপনজন আমার ভালোবাসা৷ সবাই যখন আমাকে দেখতে পারতোনা আমার সব খেয়াল তো এই এক ব্যাক্তিই রাখতো। আমার সব ইচ্ছা আকাঙ্খা তো ইনিই পূরন করছেন। আয়াত ভাই অন্যদিকে তাকিয়ে আছে তার চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে হয়তো কান্না আটকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কারণ পুরুষদের কান্না করতে নেই আবেগ দেখাতে নেই৷

আমার কিছু করার ছিলোনা আয়াত ভাই। আমি আপনার মেহুপাখিকে কেরে নেই নাই, নিয়েছে অই মানুষগুলো তারা তার হাসি খুশি সব কেড়ে কেনো নিলো? সবার মতো আমার হাসি খুশি পরিবার নাই কেনো? আমার বাবা আমাকে ভালোবাসে না কেনো মেয়ের মতো স্নেহ করে না কেনো আমার মা যে আমাকে জন্ম দিয়েছে সেও কেনো আজোও আমার প্রতি এতোটা রুষ্ট। (মেহুল)

মেহুল কান্না করছে এগুলো বলছে আয়াত নিজেকে সামলে মেহুলের মাথাটা তার বুকের সাথে চেপে ধরলো। মেহুল আয়াতের বুকে নিজের খুব নিরাপদ স্থান খুঁজে পেলো। সে কান্না করছে আর আয়াত তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।

মেহুপাখি আমার কান্না করে না দেখো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে তো। আর এতো কান্না করলে দেখবা আমাদের বেবিগুলাও ছিছকাদুনে স্বভাবের হবে আর তোমাকে জালাতন করবে। (আয়াত)

আয়াত মেহুলের কান্না থামানোর জন্য এই কথা বললো, মেহুল এই কথা শুনতেই আয়াত এর বুক থেকে মাথা তুলে হা করে তাকিয়ে আছে। লোকটা সিরিয়াস মোমেন্টে কি আজগুবি কথা নিয়ে আসে। লজ্জায় মেহুলের লাল হতে দেখে আয়াত মজা পাচ্ছে তাই সে আরেকটু ক্ষেপাতে চাচ্ছে মেহুলকে।

আমিতো সত্যি কথা বলছি দেখো আজ আমাদেত বিয়ে হলো সেই হিসেবে আজ আমাদের বাসর রাত না? তাহলে তুমি কি আমাকে বাবা ডাক শুনাবা না। নাহলে তো মানুষ সন্দেহ করবে বিশিষ্ট শিল্পপতি আয়াত আয়াশ খানের বাবা হওয়ার ক্ষমতা নাই। (আয়াত)

এইজন্য আপনার উপর রাগ লাগে বেশরম লোক কোনহানকার। লজ্জা সরম এর মাথা খাইছেন আপনি? (মেহুল)

আরে শুনা তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেন হুম, আমি কি ভুল বলছি বলো? (আয়াত)

আপনি চুপ করবেন নাহলে আমি আপনার কি অবস্থা করবো আমি ভাবতে পারছিনা। ( মেহুল)

মেহুল কে রাগতে দেখে আয়াত মুচকি হেসে কাবার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে যায়। মেহুল বেড এ বসে ভাবছে কি লোক আল্লাহ এই ঠোটকাটা বদ লোক কিভাবে তার জামাই হয়ে গেলো। এই লোকের সাথে সংসার করতে হবে। নো নেভার এইটা হবেনা।

প্লেনে বসে আছে এক যুবোক দেখতে খুব ই সুদর্শন মোবাইল হাতে নিয়ে কার একটা ছবি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে যাচ্ছে সে। মেয়েটার ছবি দেখার সময় চোখে তার অভিমান দেখা দিতে লাগললো।

কিভাবে পারলে আমাকে ভুলে যেতে তুমি পিচ্চি? যেই আমার পিছে তুমি পাগলের মতো ঘুরছো সারাদিন চিপকে থাকতে সেই তুমি আজ আমার থেকে এতো দূরে। আমার মনে ভালোবাসা যাগিয়ে অন্য কারো সাথে সুখে থাকবে এটা আমি কিভাবে মেনে নিবো জান। আমাকে তো তুমি চিনো আসছি আমি তোমার কাছে এবার যা হবে সামনা সামনি। সব পাপিদের পাদের শাস্তি দেওয়ার সাথে তো আমি তোমাকেও ছাড়তে পারবোনা আমার মনে ভালোবাসা যাগিয়ে আমার থেকে দূরে থাকবে অন্যকারো সাথে। (অজানা যুবক)

এতোক্ষন দাতেদাত চেপে কথাগুলো বলছিলো সে। রাগে চোখ তা লালা হয়ে আছে মুখে গম্ভিরতার ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। সবার জিবনে আবার নতুন কোনো ঝড় আসতে চলছে? সবার জিবন কি আবারো এলোমেলো হয়ে যাবে নাকি সব ঠিক হবে। আর এই অজানা লোক এর কারণে কি মেহুল আর আয়াতের কোনো সমস্যা হবে। লোকটি নিজের সীটে মাথা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো কারণ তার লক্ষ স্থির।

আয়াত ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো মেহুল ঠিক সেই আগের মতোই বসে আছে কোনো নড়চড় নাই। এবার নিজের হাতের তোয়ালে টা সে মেহুলের দিকে ছুড়ে দিলো। মেহুলের মুখের উপর কিছু একটা পড়তেই সে নাকমুখ কুচকে নিলো। একরাশ বিরক্তি নিয়ে সে আয়াতের দিকের তাকালো।

এইভাবে সং এর মতো না বসে থেকে তো গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসতে পারো যাও খাবার এর জন্য নিচে যাওয়া লাগবে।
মেহুল রুম থেকে বের হতে যাচ্ছিলো তখন আয়াত পিছ থেকে তার এক হাত ধরে নেয়।

কি হচ্ছে ফ্রেশ হতে বললেন এখন নিজের রুমে যাচ্ছি আটকাচ্ছেন কেনো? (মেহুল)

আজ থেকে তুমি এখানেই থাকবে আর তোমার সব জিনি চিলেকোঠার ঘড় থেকে এখানে আনা হবে আপাদত সপিং ব্যাগ থেকে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। (আয়াত)

মেহুল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে এখানে থাকতে হবে মানে, আয়াতের সাথে একসাথে একরুমে না কখোনো না। আয়াত এবার মেবি মেহুলের মনের কথা বুঝতে পারলো।

উল্টক পালটা চিন্তা সরাও চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে আসো না কি আমি নিজেত হাতে মতো তোমাকে ফ্রেস করিয়ে নিয়ে আসবো। ( আয়াত)

আয়াত সত্যি যা বলবে তাই করবে এটা ভেবে মেহুল ওয়াসরুমে দৌড়। মেহুল যাওয়ার পড় আয়াত হাসতে হাসতে শেষ মেয়েটা তাকে যা ভয় পায় আল্লাহ। মেহুল গোলাপি রঙের একটা গোল জামা পড়ে আসে ভিযে চুল গুলো তোয়ালে দিতে মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে। আয়াত গোরলাগা চোখে মেহুলের দিকে তাকিয়ে আছে ধিরে ধিরে মেহুলের দিকে আগাচ্ছে আয়াত।

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here