#বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
আজ কলেজের প্রথম দিন আরশির। স্কুল ছেড়ে কলেজে পা রাখা মানেই নিজের মাঝে একটা স্বাধীন চেতনার ভাব জাগ্রত হওয়া। পাখিদের মতো ডানা মেলে উড়তে চাওয়া। মনে হয়, এই তো অনেক বড়ো হয়ে গেলাম হুট করে। আরশির ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয়।
তবে এমন স্বাধীন চেতনার ভাব নিয়ে প্রথম দিনই কলেজের সামনে পৌঁছে ভুল বসত একটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হলো আরশির। তাও সামান্য একটা টিস্যু নিয়ে। যেটা সাইড করে ছুড়ে ফেলতে গিয়ে একটা ছেলের গায়ে গিয়ে পড়েছিল। আর এটা খুব বড়ো ধরনের কোনো অপরাধ নয়।
তবুও এই ছোট একটা বিষয় নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়েছিল ছেলেটা। আরশি ছোট করে স্যরি বললেও ছেলেটা হাত দিয়ে শার্টের ময়লা ঝাড়ার ব্যস্ততায় বিরক্তিকর ভাবে কিছু কথা শোনালো তাকে।
ভিতু ভঙ্গিতে আরশি চুপ থাকলেও এবার কিছুটা বিরক্তি হলে পাশ থেকে প্রীতি বলে,
“ভাইয়া,,, ভুলেই হয়েছে এমনটা। আর সে স্যরিও বলেছে আপনাকে। তবুও কেন এতো প্যাঁচাল করছেন? সামান্য একটা টিস্যু তে কি এমন ক্ষতি হয়ে গেলো আপনার?”
ছেলেটা মূহুর্তেই শাসানোর ভঙ্গিতে প্রীতির দিকে এক আঙুল তুলে বলে,
“এই মেয়ে, একদম চুপ থাকো? চামচামি করতে আসবে না। চেনো তুমি আমাকে?”
অপমানে ক্ষনিকটা ক্ষিপ্ত হতে চাইলো প্রীতি। আরশি পাশ থেকে তার এক হাত চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে,
“থাক প্রীতি চল এখান থেকে। কিছু বললে ঝামেলা তৈরি করতে পারে।”
প্রীতি কিছুটা অভয় দিয়ে বলে,
“আরে আমরা মেয়ে। ঝামেলা হলে ঐ ছেলে বিপদে পড়বে, আমরা না।”
আরশি হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
“প্রীতি প্লিজ।”
ছেলেটা তাকিয়ে আছে দুজনের ফিসফিস করার দিকে। অতঃপর দুজন চলে যাওয়ার উদ্দেশ্য গেটের দিকে এগুতেই ছেলেটা এক হাতে পথ আটকিয়ে আরশির দিকে চেয়ে বলে,
“দাড়াও মেয়ে। নবীন স্টুডেন্ট নিশ্চই। রাগ করো না। ফান করেছিলাম এতক্ষণ। নাম কি তোমার?”
আরশি চুপ থাকলেও প্রীতি কিছুটা ক্ষিপ্ত গলায় বলে,
“পথ ছাড়ুন আমাদের।”
ছেলেটা কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে শান্ত গলায় বলে,
“আর যদি না ছাড়ি? তাহলে আপনার বান্ধবী কি খুব রাগ করবে?”
“বান্ধবী রাগ করলে তোর কপালে দুঃখ আছে আকাশ।”
পাশ থেকে একটা পুরুষনালী কণ্ঠ শুনে তার দিকে তাকায় তারা। দেখে ফারুক তাদের সামনে এসে দাড়িয়ে ছেলেটার দিকে চেয়ে বলে,
“যার তার সাথে ফান করাটা উচিত নয় তোর। আর যদি সেটা আমার বোন হয়।”
আকাশ নামক ছেলেটা এবার কিছুটা হেসে বলে,
“এটা তোর বোন ফারুক? আপন না নিশ্চই?”
“আপান বা পর এটা জেনে তোর কোনো কাজ নেই।”
ফারুক স্বাভাবিক ভাবে কথাটা বলে অতঃপর আরশির দিকে চেয়ে বলে,
“আসো আমার সাথে।”
আকাশ নামক ছেলেটা আর কিছু বললো না, সরে দাড়ালো পথ থেকে। এই প্যাঁচাল থেকে মুক্তি পেয়ে দুজন চুপচাপ চলে গেলো ফারুকের পেছন পেছন। কলেজের গেট পেড়িয়ে ভেতরে হাটতে হাটতে ফারুক বলে,
“আমিও এখানেই পড়ি। তাই ভয়ের কিছু নেই। আর তুমি করে বললাম দেখে মাইন্ড করবেন না। নাহলে সে বিশ্বাস করত না।”
আরশি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ বলে,
“সমস্যা নেই ভাইয়া। আর ধন্যবাদ।”
“ক্লাস কোথায় জানো তো? নাহলে আমার সাথে চলো, দেখিয়ে দিচ্ছি।”
“থাক ভাইয়া, আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমরা খুঁজে নিব।”
“শুনো, নতুন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে পেরেশান না হয়ে, কারো হেল্প নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।”
পাশ থেকে প্রীতি বলে,
“ও আসলে একটু বেশি বুঝে। ভাইয়া চলুন তো। অজথা খোঁজাখুঁজি করতে ভালো লাগছে না।”
হাটতে হাটতে আরশির দিকে চেয়ে ফারুক বলে,
“রুমকি ভর্তি হয়নি এখানে?”
আরশি হলকা মাথা নেড়ে বলে,
“না, ওর নাম আসেনি এখানে। অন্য কলেজে ভর্তি হয়েছে।”
ফারুক কয়েক সেকেন্ড নিশ্চুপ থেকে কিছু একটা বুঝে নিয়ে নিজের মাঝে বিড়বিড় করে বলে,
“দারুণ।”
,,,
কলেজ ছুটির পর রাস্তার পাশে গাড়ির জন্য দাড়ালো আরশি। সাথে প্রীতিও দাড়িয়ে আছে। এর মাঝে ফারুক তাদের পাশে এসে দাড়িয়ে বলে,
“তোমার সাথে কিছু কথা আছে আরশি।”
ফারুকের দিকে ক্ষনিকটা ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরশি। ফারুক পূনরায় বলে,
“যাস্ট এক মিনিট।”
আরশি সম্মতি দিয়ে বলে,
“বলুন ভাইয়া কি কথা?”
ফারুক কিছু না বলে একবার ইশারায় প্রীতির দিকে তাকালো। আরশি বুঝতে পেরে প্রীতিকে দাড়াতে বলে কিছুটা সাইডে গিয়ে বলে,
“ভাইয়া জরুরি কিছু?”
ফারুক ক্ষনিকটা অপরাধী গলায় বলে,
“আমার মনে হয় তুমি মন থেকে আমাকে এখনো ক্ষমা করোনি। বিশ্বাস করো, আমি সত্যিই বিয়ের দিন আর বেয়াঈন দেখে মজা করতে গিয়ে এমনটা হয়ে গেছে। ইচ্ছেকৃত ছিল না। তোমাকে আমি আমার বোনের মতোই ভাবি।”
আরশি কি বলবে ভেবে না পেয়ে চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। ফারুক পূনরায় বলে,
“একটুও কি ক্ষমা করা যায় না? ভাই হিসেবেও না?”
আরশি কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে অতঃপর কিছুটা স্বাভাবিক গলায় বলে,
“ওসব অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে ভাইয়া। আপনি ক্ষমা চেয়েছিলেন, তাই আমি মনে রাখিনি এতকিছু। তবে এমন ফাজলামো না করাটাই ভালো।”
ফারুক আচমকাই নিজের কান ধরে বলে,
“এই কান ধরলাম বইন। আর জীবনেও না। একবার ফান করে শিক্ষা হয়ে গেছে আমার। শুধু মন থেকে ক্ষমা করেছো কিনা একবার বলো। ক্ষমা না করলে এখানেই পা ধরে ক্ষমা চেয়ে বসবো। আমার আবার লোকলজ্জা একটু কম।”
হাসি মুখে কথাটা বলে কিছুটা ঝুঁকতে চাইলেই আরশি দু’পা পিছিয়ে বলে,
“এই না না, কি করছেন এসব। পায়ে ধরতে হবে না।”
“তাহলে মন থেকে বলো, ক্ষমা করেছো?”
আরশি এবার একটা শ্বাস ছেড়ে বলে,
“ওকে করলাম। এবার সরুন, বাসায় যাবো।”
“এগিয়ে দিয়ে আসবো?”
“লাগবে না ভাইয়া, ধন্যবাদ।”
“””””””””””””””””””””””””””””‘
শেষ বিকেলে নতুন ফোন হাতে ছাদের এক পাশে বসে আছে আরশি। এসএসসি তে পাশ করার পর কিনে দিয়েছে বাবা। নতুন ফেসবুক আইডিও খুলেছে কয়দিন হলো। ইন্টারে উঠার পর থেকেই সবই যেন নতুন মনে হচ্ছে। যেন বসন্ত এসেছে জীবনে।
এর মাঝেই রিদের কল আসলে ঠিকঠাক হয়ে বসলো। অতঃপর কানে এয়ারফোন গুজে ফোন রিসিভ করে সে। রিদের দিকে চেয়ে মিষ্টি হেসে বলে,
“হাই, কেমন আছেন?”
“আলহাম্দুলিল্লাহ্ ভালো, তুই?
” আলহামদুলিল্লাহ্।”
“কপালে কি হয়েছে? লালছে দেখাচ্ছে কেন?”
আরশি জিবে ছোট করে কামড় কেটে ওড়নাটা টেনে মাথায় দিল। রিদ মৃদু হেসে বলে,
“এখন আর লুকাতে হবে না। কিভাবে হলো এমন?”
“রামিমের সাথে খেলার সময় বাড়ি মেরেছিল। তাই এখন লাল হয়ে আছে হয়তো।”
রিদ স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“ভালো তো, দুই বাচ্চা একাত্রে খেলার সময় মা’রা’মা’রি বেধে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না।”
আরশির হাসি পেলেও কিছুরা রাগী ভাব নিয়ে বলে,
“আপনার মাথা।”
“আরিশা কবে এসেছে?”
“গতকাল?”
“কেমন আছে তারা?”
“হুম ভালো।”
“তো আজ কলেজের প্রথম দিন কেমন কাটলো?”
“হুম, ভালো।
কয়েক সেকেন্ড নিরব রইল রিদ। অতঃপর শান্ত গলায় বলে,
” ছেলেটা কে ছিল?”
আরশি কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
“কোন ছেলে!”
“আকাশ না কি নাম। যার সাথে সকালে ঝগড়া করেছিলি।”
“আমি চিনি না। সে নিজেই শুধু কথা প্যাঁচাচ্ছিল। আচ্ছা, এটা আপনি জানলেন কিভাবে?”
কিছুটা হাসলো রিদ। উত্তর না দিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে,
“নতুন নতুন কলেজে উঠেছিস ছেলেদের থেকে দুরে থাকবি।”
“ওকে স্যার।”
রিদ পূনরায় স্বাভাবিক গলায় বলে,
“আর এমন কিছু করবি না, যা আমার একদমই অপছন্দ। আশা করি আমার বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ রাখবি। আমি চাইনা আমার রাগ তোকে কষ্ট দিক। কারণ অজান্তেই তোকে কোনো ভাবে কষ্ট দিয়ে ফেললে পরে আমার নিজেকেই তার দ্বিগুণ কষ্ট ভোগ করতে হয়।”
আর কিছু না বলেই বিদায় নিয়ে ফোন কেটে দিল রিদ। কয়েক সেকেন্ডের জন্য যেন খুব অবাক হলো আরশি। এমন ভাবে বিদায় নিল কেন? আর শেষে বিশ্বাস, কষ্ট কিসব বলে গেলো? তাছাড়া আজ এমন প্রশ্নবোধক ধারালো ধারালো কথা বললো কেন? কি হলো হটাৎ? তার কি কোনো কারণে মন খারাপ? নাকি এটা কোনো লুকোনো অভিমান? না বললে বুঝবো কিভাবে? আজব লোক।
To be continue……………..#বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
“মেয়ে তো মা’শা আল্লাহ বড়ো হয়েছে। কলেজেও উঠে গেছে। তো ভাবি কিছু ভেবেছেন তাকে নিয়ে?”
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কৌতুহলী দৃষ্টিতে আরশির মায়ের দিকে চেয়ে কথাটা বলে খাদিজা আন্টি। উপরের ফ্লাটেই থাকে তারা। কথাটা বলে অপেক্ষা করলেন না তিনি। আরশির মা কিছু বলার আগেই তিনি পূনরায় বলে,
“যদি কিছু ভেবে থাকেন, তাহলে আমার কছে একটা ভালো পাত্রের সন্ধান আছে। ছেলে উচা-লম্বা দেখতে শুনতে ভালো। ইতালি থাকে, সেখানে নাগরিকতা আছে তার। বিয়ের পর বউকেও নিয়ে যাবে সেখানে। এক কথায় কোনো দিক দিয়ে বাছাই করার মতো না।”
আরশির মা ক্ষনিকটা সৌজন্য মূলক হেসে বলে,
“আরশিকে নিয়ে এখনো এমন কিছুই ভাবি নি। সবে মাত্র স্কুল পেড়িয়ে কলেজে ভর্তি হলো। বাচ্চা মেয়ে, তাছাড়া আমাদের আর কোনো সন্তানও নেই। বড়ো মেয়েটাও বিয়ে দিয়ে দিলাম। তাই তাকে এতো তাড়াতাড়ি দেওয়ার তেমন কোনো চিন্তাভাবনাও নেই। পড়াশোনা করছে করুক।”
খাদিজা চাচি কিছুটা হেসে বলে,
“স্কুল পার হলেই কেউ আর বাচ্চা থাকে না ভাবি। মেয়েরা বাবা মায়ের সম্মান নষ্ট করে বেশির ভাগ কলেজে উঠার পরই। আধুনিক যুগ। এমন কিছু ঘটার আগেই মানসম্মানে মেয়েকে কোনো ভালো পাত্রের হাতে তুলে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।”
ফোন হাতে বসে আছে আরশি। পাশের রুম থেকে খাদিজা আন্টির এসব কথা শুনে যেন রাগে শরির রি রি করছে তার। খুব করে মুখের উপর বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, অন্যের মেয়েকে নিয়ে আপনার এত ভাবতে হবে না। আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য আমার বাবা মা আছে।
ইচ্ছে হলেও ভদ্রতার খাতিরে চুপচাপ বসে রইল সে। আশেপাশে এমন কিছু মানুষের কারণেই অনেক মেয়ের অকালে বিয়ে হয় আজকাল।
তিনি চলে যাওয়ার পর আরশি মায়ের কাছে গিয়ে বলে,
“আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছি, আম্মু?”
মেয়ের এমন কথায় মা কিছুটা হেসে বলে,
“এমন কেন বলছিস? আর আমি কি রাজি হয়ে গেছি? বাড়িতে বড়ই গাছ থাকলে লোকে ঢিল মারবেই।”
“মারবে না। তোমরা বলবে, মেয়ের বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। তাহলে আর কেউ ঢিল মারবে না।”
বলেই অভিমানী ভাব নিয়ে মায়ের সামনে থেকে চলে গেলো আরশি। পেছন থেকে মেয়ের দিকে চেয়ে হালকা মুচকি হাসলো মা। মেয়ে হয়েছে, একদিন না একদিন তো বিয়ে দিতেই হবে।
“””””””””””””””””””””””””””””””
এই মুহুর্তে বিয়ে শব্দটা যেন একটা আতঙ্কের নাম। ভাবতেই মনটা বিষণ্ন হয়ে উঠছে খুব। কল পেয়ে নিজের বিষণ্নতা গুছিয়ে নিল আরশি। তবুও প্রেয়শির মন খারাপের ছাপটা ঠিকই ধরা পড়লো বিপরীত মানুষটার কাছে।
আরশির চেহারায় বিষণ্নতার ছাপ দেখে রিদ কৌতুহল নিয়ে বলে,
“পিচ্চিটার মন খারাপ মনে হচ্ছে। কি এমন কারণ থাকতে পারে, যা আমার পিচ্চির মনকে বিষণ্ন করে তুলেছে?”
“কিছু না, এমনি।”
আরশির লুকোনো ভাব দেখে রিদ পূনরায় বলে,
“কিছু তো নিশ্চই হয়েছে। এমনি এমনি তো কারো মন খারাপ হয় না।”
আরশি এবার কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বলে,
“আজ উপর তলার আন্টি বাসায় বিয়ের প্রোপোজাল নিয়ে এসেছিল।”
হটাৎই রিদ শোয়া থেকে উঠে গিয়ে বলে,
“মানে কি? ফুপি কি বললো?”
“রিজেক্ট করে দিয়েছে। বলছে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে না।”
রিদ বুকে হাত দিয়ে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে,
“এক চর খাবি ফাজিল মেয়ে। সব টিকঠাক আছে যেহেতু, এত টেনশন করার কি আছে? খবর টা এমন ভাবে দিলি, আরেকটু হলেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত আমার।”
রিদের এমন কান্ডে বিষণ্নতার মাঝেও মুখ চেপে হেসে দিল আরশি।
“”””””””””””””””””””””””””””””””””
কলেজ থেকে ফেরার সময় ফারুক কে একটা মেয়ের হাত ধরে হাটতে দেখে কিছুটা অবাক হলো আরশি। পাশ থেকে প্রীতিও অবাক হয়ে বলে,
“এটা ফারুক ভাই না? মেয়েটা কে? ওর গার্লফ্রেন্ড নাকি?”
পাশ থেকে আরশি আনুমানিক ভাবে বলে,
“হলেও হতে পারে।”
এর মাঝেই তারা কিছুটা কাছাকাছি এসে আরশিদের দেখে ফারুক হাসি মুখে বলে,
“কেমন আছো তোমরা?”
“জ্বি ভাইয়া ভালো?”
আরশি ও প্রীতি দুজনই ইশারায় মেয়েটার দিকে দৃষ্টি দিয়ে ফারুকের দিকে তাকায়। যার মানে মেয়েটা কে সেটা জানতে চাইছে তারা। ফারুক ইশারা বুঝে বলে,
“তোমাদের ভাবি। ওর নাম ইয়াশা।”
বলেই কিছুটা হাসলো ফারুক। তারপর ইয়াশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ওরা দুজন আমার ছোট বোনের মতোই। ওর নাম আরশি, আমার ছোট বেয়াইন। আর ওর নাম প্রীতি।”
পরিচয় হওয়ার পর তাদের মাঝে হালকা হাই হ্যালো হলো। অতঃপর ফারুক একটা রিকশা ডেকে উঠিয়ে দিয় ইয়াশাকে। হাত নাড়িয়ে বিদায় দিয়ে বাসার উদ্দেশ্য চলে গেলো ইয়াশা।
,
কলেজ থেকে বাসায় ফিরে গোসল করে খাওয়াদাওয়া শেষে ক্লান্ত শরির বিছানায় এলিয়ে দেয় আরশি। এর মাঝেই মায়ের ডাক শুনে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে সে। দরজার সামনে গিয়ে দাড়াতেই দেখে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে বাইরে। তাকে দেখেই ছেলেটা স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“আপনার নাম কি আরশি?”
আরশি লোকটার দিকে একবার চেয়ে নিচু স্বরে বলে,
“জ্বি।”
আপনার নামে একটা পার্সেল ছিল। এখানে একটা সাইন লাগবে আপনার। লোকটার পাশে থাকা প্যাকেট করা ছোট বক্সটার দিকে তাকালো আরশি। ক্ষনিকটা অবাক হয়ে বলে,
“আমি তো কিছু অর্ডার করিনি।”
“ম্যাম এটা সারপ্রাইজ বক্স। আপনার নামেই পাঠানো হয়েছে।”
আর কথা না বাড়িয়ে সাইন করে বক্সটা নিয়ে ভেতরে গেলো। রুমে গিয়ে খুলে দেখে অনেক গুলো গল্পের বই। সাথে একটা ছোট কাগজ। সেটা খুললো চুপচাপ। সামনে মেলে ধরতেই দেখে কিছু লিখা,
‘কবে থেকে বই পড়ুয়া হয়ে গেলি পিচ্চি? যাই হোক, এটা একটা ভালো দিক। এখানে তোর উইশ লিষ্ট এর সব গুলো বই’ই আছে। তার সাথে আমার পছন্দের কয়েকটা বইও। সব মিলিয়ে আশা করি সুন্দর সময় কাটবে। হ্যাপি রিডিং পিচ্চি।”
বুঝতে বাকি রইলো না সারপ্রাইজ বক্সটা কার পাঠানো। কয়দিন আগে নতুন বের হওয়া অনেক গুলো বই একসাথে করে উইশ লিষ্ট হিসেবে পোষ্ট করেছিল সে। যা হয়তো নিশ্চই মহারাজের নজরে পড়েছিল।
ভাবতেই ফোন হাতে নিয়ে নেট অন করে আরশি। টুং টুং করে মেসেজ আসলো কয়েকটা। এর মাঝে রিদেরও একটা ছিল। নির্দিষ্ট মানুষটা থাকতে আর কারো মেসেজই সিন করাটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না।
বাকি সব মেসেজ ইগনোর করে রিদের মেসেজ টা সিন করে দেখে ছোট একটা লিখা,
‘রোমান্টিক জনরার বই গুলো পড়ার সময় নায়কের জায়গায় আমাকে, আর নাইকার জায়গায় তুই নিজেকে ভাবলে আমি খুব একটা মাইন্ড করবো না পিচ্চি। কারণ বাস্তবে নায়ক নাই বা হতে পারলাম, কল্পনার কারো নায়ক হলে সেটা মন্দ হয় না।’
লজ্জায় চোখ বুঁজে নিল আরশি। তবুও লজ্জার মাঝে অন্যরকম এক ভালো লাগায় ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ফুটে উঠে তার।
“””””””””””””””””””””””””””””””””
কেটে গেলো আরো অনেক দিক। রাত জেগে উপন্যাস পড়ছিল আরশি। তখনই বেলকনিতে কিছু একটা অনুভব করলে ভিতু পায়ে সেদিকে পা বাড়ায় সে। ভিতু গলায় ‘কে’ বলে বেলকনিতে উঁকি দিল সে। দেখে সেই নিয়ম করে রেখে যাওয়া চিরেকুট পড়ে আছে। আচমকাই বিষয়টা মাথায় আসলে বেলকনিতে গিয়ে নিচে তাকায় ছেলেটা কে দেখার জন্য। হয়তো দেড়ি করে ফেলেছে সে। যার ফলে ছেলেটার মুখ দেখতে পায়নি। ততক্ষণে রাস্তায় পৌছে গিয়েছিল। শুধু দ্রুত গতিতে হেটে যাওয়া ছেলেটার পেছনের দিকটা দেখতে পেয়েছে শুধু। তাও কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই চোখের আড়াল হয়ে গেলো।
কিছু একটা ভাবলে মুহুর্তেই যেন মাথা ঘুরিয়ে উঠে তার। কারণ পেছন থেকে দেখা আজকের এই ছেলেটার গায়ে থাকা টি-শার্ট টার মতো, কয়দিন আগে রোহান ভাইয়ার গায়ে এমন টা টি-শার্ট দেখেছিল সে। তাহলে কি এটা সত্যিই রোহান ভাই? নাকি তার মতো দেখতে অন্য কেউ? দৃষ্টিভ্রম হলো না তো? ভাবতেই শরির জুড়ে শীতল শিহরণ বয়ে যায় তার। কি হচ্ছে এসব?
To be continue…………….