#বেদনার_রঙ_নীল
পঁচিশতম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz
তুলি ঢোক গিলতে গিলতে রাইফার দিকে তাকালো একবার৷ সে এখনও মুখ থেকে মাস্ক আর সানগ্লাস খুলেনি। ওরনা দিয়ে মাথায় ঘোমটা দেওয়া তার। কিন্তু তার মানে এই নয় যে রিসব তাকে চিনবে না৷ তুলি যেহেতু রাইফার সাথে দাঁড়িয়ে আছে সেহেতু রিসব নিশ্চিত বুঝতে পেরেছে সব। তবে রাইফার মনে অন্য ধারণা তৈরী হলো। রিসবের চেহারায় কোনো রাগ নেই। কেবলই কৌতুহল। সে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তাই বলা যায় সে কিছু বোঝেনি। রাইফা চেষ্টা করলেই ব্যাপারটা কাটিয়ে দিতে পারে। তবে রিসব যদি কিছু বুঝেও থাকে তাহলে রাইফা মিথ্যা বললে সে ধরে ফেলবে। রাইফা নিজেকে রিসবের সামনে মিথ্যুক প্রমাণ করতে চায় না৷ তাই আগেই কিছু না বলে সে সময় নিল। রিসব এগিয়ে এসে প্রশ্ন করল,” কি হচ্ছে এখানে?”
রাইফা পাল্টা প্রশ্ন করল,” আপনি এখানে কি করছেন? এটা তো লেডিস ওয়াশরুম।”
রিসব একবার সামনে তাকিয়ে কৈফিয়ৎ দেওয়ার জন্যে বলল,” স্যরি আমি খেয়াল করিনি। হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছিলাম। কিন্তু তোমরা কি করছিলে?”
রাইফা সহজভাবে হেসে বলল,” আমরা গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে কিছু শপিং করেছিলাম। সেগুলোই ট্রায়াল দেওয়ার জন্য এখানে এসেছি। বাইরে তো অনেক পল্যুশন। আর আজকে খুব রোদও উঠেছে। এজন্যই মাস্ক আর সানগ্লাস।”
রিসব অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। যেন কথাটা তার হজম হচ্ছে না। রাইফাও মনে মনে বিব্রতবোধ করতে লাগল। সে কি খুব বেমানান কিছু বলে ফেলেছে? রিসব একটু পর হেসে বলল,”আমি তো তোমাদের এখানে এইভাবে দেখে ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।”
তুলি প্রশ্ন করল আতঙ্কে, ” কেন ভয় পেয়েছেন?”
রাইফা সাথে সাথেই তুলির হাত খামচে ধরল। সেই ব্যাপারটা আবার রিসব লক্ষ্য করতেই রাইফা হাত ছেড়ে দিল ঝটিতে। রিসব হাসল অকারণেই। তার হাসি দেখে রাইফা আর তুলিও হেসে দিল। রিসব বলল,” খুবই অদ্ভুত দেখাচ্ছে তোমাদের। কিছুটা ফিমেইল গ্যাংস্টারের মতো। ”
তুলি এই কথা শুনে ঘাবড়ে গেল। কিন্তু রাইফা স্বাভাবিক রইল। খুশি হওয়ার অভিনয় করে বলল,” এটা কি কমপ্লিমেন্ট ছিল?”
রিসব উত্তর না দিয়ে শুধু হাসল। তুলির তখনও ভয় লাগছে। এই বুঝি প্রিয়ন্তী বাথরুম থেকে বের হয়ে যাবে। কিংবা রিসব আচমকাই বাথরুমে ঢুকে পড়বে। আর সব ফাঁস হয়ে যাবে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত এমন কিছু হলো না। এই যাত্রায় রাইফা-তুলি বেঁচে গেল।
জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর প্রিয়ন্তীর সে কি কান্না! যে নার্সটি প্রিয়ন্তীকে বাথরুম পর্যন্ত নিয়ে গেছিল সে বার-বার বোঝানোর চেষ্টা করল,” আপু, আপনি হয়তো দূর্বল ছিলেন। কিংবা ইউরিন দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছেন। কেউ আপনাকে মারেনি। আমি তো পাশেই ছিলাম। আপনাকে মারলে আমি কই থাকতাম বলেন?”
প্রিয়ন্তী প্রণয়ের হাত ধরে বলল,” বিশ্বাস কর দোস্ত, আমার স্পষ্ট মনে আছে কেউ পেছন থেকে আমার চুল ধরে এক আছাড়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়েছিল। তারপর ঠাস ঠাস করে আমার গালে থাপড়াচ্ছিল। আমি চোখেমুখে অন্ধকার দেখছিলাম। মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের করতে পারছিলাম না। বোবা ধরলে যেমন হয় ঠিক তেমন। ”
প্রণয় পাশ কাটানো গলায় বলল,” তোর মনে হয় হ্যালুসিনেশন হয়েছিল।”
” মানে? আমার হঠাৎ হ্যালুসিনেশন কেন হবে?”
” সেটা তো সাইক্রিয়াটিস্ট ভালো বলতে পারবে।”
” তুই কি আমাকে পাগল প্রমাণ করতে চাইছিস?”
প্রণয় হেসে ফেলল। প্রিয়ন্তী চোখ বড় বড় করে বলল,” তুই হাসছিস কেন? মানে আমার কথা কি তোর বিশ্বাস হয়নি? ফাজলামি মনে হচ্ছে?”
” তোর গায়ে কোনো ইনজ্যুরি, স্ক্র্যাচ কিছুই নেই। কি দেখে বিশ্বাস করি বল?”
” চড়, থাপ্পড়, লাথিতে কি ইনজ্যুরি হয়? ”
” বাথরুমে নিয়ে তোকে চড়, থাপ্পড়, লাথি কে মারবে?”
শান বলল,” আমার মনে হয় জম্বি মেরেছে।”
সবাই হাসতে লাগল। কেউই ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিচ্ছে না। প্রিয়ন্তী হতাশ, তীব্র মনখারাপ নিয়ে বসে রইল। মিষ্টি হাসি রোধ করে বলল,” এইরকম মাঝে মাঝে হয় প্রিয়ন্তী। তুমি সারারাত ধরে জেগে ছিলে। তোমার শরীর টায়ার্ড ছিল। এমন হওয়া স্বাভাবিক। তুমি বেহুশ হয়ে গেছিলে অথচ তোমার মনে হচ্ছে কেউ তোমাকে মেরেছে। এটা আসলে তোমার অবচেতন মনের কল্পনা।”
প্রিয়ন্তী তার গালে হাত রেখে অসহায় ভঙ্গিতে বলল,” আমার এখনও চাপার দাঁতে ব্যথা লাগছে আপু। এটাও কি কল্পনা?”
রাইফা আর তুলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছে কেবল। অন্যদের মতো ভয় পাওয়ার খুব চেষ্টাও করছে। কিন্তু তাদের ভয় লাগছে না মোটেও। হাসি চেপে রাখার একটি দুঃসাধ্য চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে খুব কষ্টে।
প্রিয়ন্তী হঠাৎ বলল,” আচ্ছা মিষ্টি আপু, তুমি কি আমাকে ডেকেছিলে?”
মিষ্টি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,” কখন?”
” আমি বাথরুমে অজ্ঞান হওয়ার আগে?”
” হ্যাঁ ডেকেছিলাম তো।”
” তুমি কি ওকে পাঠিয়েছিলে আমাকে নেওয়ার জন্য?”
প্রিয়ন্তী নার্সের দিকে ইশারা করল। মিষ্টি মাথা নেড়ে বলল,” হুম।”
প্রিয়ন্তী এবার সম্পূর্ণ আশাহত হয়ে পড়ল। তার মনের সন্দেহ রাইফা আর তুলির উপর। কিন্তু মিষ্টির স্বীকারোক্তি শোনার পর তার বিরক্ত লাগছে। সে নিশ্চিত তাকে কেউ মেরেছে। একজন তাকে ধরে রেখেছিল। অন্যজন তাকে মারছিল। এরা রাইফা আর তুলি ছাড়া কেউ হতেই পারে না। কিন্তু এই ব্যাপারটা প্রিয়ন্তী প্রমাণ করবে কিভাবে? সে চোখ কুটি করে তাকিয়ে রইল দরজার সামনে। যেখানে রাইফা আর তুলি দাঁড়িয়ে আছে। তারা দু’জনই নিশ্চিন্তবোধ করছে এখন। মিষ্টি নার্সকে পাঠিয়েছিল প্রিয়ন্তীকে ডেকে আনার জন্য। সেই নার্স যখন এখানে আসছিল তখনি রাইফা তাকে টাকা দিয়ে নিজের পরিকল্পনায় টেনেছে। রিসব এতোক্ষণ একদম চুপচাপ বসে ছিল। নার্স রুম থেকে বের হওয়ার একটু পরেই রাইফা আর তুলিও বের হয়ে গেল। এই ব্যাপারটা সে লক্ষ্য করল।
তুলি বাইরে এসেই বুকে হাত চেপে ধরে বলল,” অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি।”
রাইফা হাসছে। তার হাসি যেন থামেই না। তুলি বিরক্তিসূচক শব্দ টেনে বলল,” থামবি তুই? এভাবে তোকে কেউ হাসতে দেখলে খবর আছে। সব বুঝে ফেলবে।”
” আমি কি করবো? হাসি আটকাতে পারছি না তো! ডাইনিটার চেহারা দেখেছিস?আমাদের দিকে কিভাবে তাকিয়েছিল! নিশ্চিত বুঝেছে। বেচারি! না পারছে সইতে আর না পারছে কাউকে বলতে।”
তুলির গলা শুকিয়ে গেল। আতঙ্কে অস্থির হয়ে বলল,” সত্যি বুঝেছে নাকি? হায় আল্লাহ, এখন যদি প্রণয়কে বলে দেয়? কি হবে?”
” বলবে না। প্রণয় গাঁধা না যে তার কথা বিশ্বাস করবে। আর সেও গাঁধী না যে প্রণয়কে এই কথা বলে বাঁশ খাবে।”
তুলি মনে মনে দরুদ শরীফ পড়তে লাগল। প্রণয় এসব জানলে মান-সম্মান বলে আর কিছু থাকবে না তার। রাগের মাথায় ভুলটা করে ফেলেছিল। কিন্তু এখন সে বুঝতে পারছে কাজটা ঠিক হয়নি।
দুপুরে সবাই ক্যান্টিনে লাঞ্চ করার জন্য গেল। রাইফা সূচির সঙ্গে কথা বলার জন্য বাইরে এসে দাঁড়ালো। সূচি প্রণয়ের খোঁজ-খবর জানতে চাইলেন। রাইফা বলল,” প্রণয় ভালো আছে, আম্মু। তুমি টেনশন কোরো না। আমরা সন্ধ্যার মধ্যে বাড়িতে চলে আসবো।”
” আমি কি হাসপাতালে এসে তোদের নিয়ে যাবো?”
” দরকার নেই।”
” প্রণয়কে একবার দেখতেও আসবো না?”
” আমরা তো কিছুক্ষণ পরেই বের হয়ে যাবো। তুমি এসেই বা কি করবে? একেবারে বাড়িতে গিয়েই দেখে এসো! হাসপাতালে আর আসার দরকার নেই।”
” ঠিকাছে। বাড়িতে অজান্তা আপা একা আছে না? আমি তাহলে সেখানেই যাচ্ছি। দেখা হবে। ”
” ওকে আম্মু। বাই।”
রাইফা ফোন রেখে পেছনে ঘুরতেই দেখল রিসব।পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটে মুচকি হাসি। রাইফা লাজুক দৃষ্টিতে বলল,” আরে,আপনি এখানে কি করছেন? মানে কিছু কি বলবেন?”
” চলো ওইদিকে যাই।”
রিসব কোমলভাবে রাইফার হাতের বাহু টেনে ধরল।রাইফার মন খুশিতে বাক-বাকুম করছে। সে যেন আর এই দুনিয়ায় নেই। স্বপ্নে হারিয়ে গেছে।একটা নীরব জায়গায় এসে থামল তারা। রিসব তাকে নিয়ে আড়ালে এলো কেন? সে কি বিশেষ কিছু বলবে আজ? রাইফার মনে অধীর আগ্রহ, কৌতুহল আর অপেক্ষা। সব মিটিয়ে রিসব গম্ভীর গলায় বলল,” এটা কেন করলে তোমরা?”
রাইফা অনেক হকচকিয়ে গেল এমন প্রশ্নে। প্রথমেই বুঝল না কিছু। অবাক হয়ে বলল,” মানে?”
রিসব রাগী কণ্ঠে বলল,” আমি কোন বিষয়ে কথা বলছি সেটা তুমি জানো!”
রাইফা এতোক্ষণে বুঝতে পারল। তার প্রাণপাখি উড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। বুক কাঁপতে লাগল দুরুদুরু। সে চলে যেতে নিলেই রিসব হাত ঠেকিয়ে বাঁধা দিল। রাইফা খুবই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। ভয়ও পেল। রিসব সরাসরি বলল,” কাজটা ঠিক হয়নি। প্রিয়ন্তীর কাছে তোমরা দু’জনই ক্ষমা চাইবে।”
রাইফা আড়ষ্ট গলায় বলল,” স্যরি।”
” আমাকে স্যরি বলে লাভ নেই। যাকে বলা উচিৎ তাকে বলবে।”
রাইফা মাথা নিচু করল। লজ্জায় সে তাকাতেও পারল না রিসবের চোখের দিকে। রাইফাকে এই অবস্থায় রেখেই রিসব চলে যাচ্ছিল। তখন রাইফা পিছু ডাকল,” ভাইয়া।”
রিসব থামল কিন্তু পেছনে তাকাল না। রাইফাও মাথা নিচু রেখেই বলল,”এই কথাটা আর কেউ জানলে খুব খারাপ লাগবে।”
রিসব এবার তাকিয়ে বলল,” এমন কাজ কখনও কোরো না যেটার জন্য মাথা নিচু করে থাকতে হয়। আবার কাউকে বলতেও লজ্জা হয়।”
রাইফার বাম চোখ থেকে সরলরেখার মতো জল গড়িয়ে পড়ল। রিসব অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,” কেউ জানবে না৷”
আজ তন্বিও এসেছিল প্রণয়কে দেখতে তাদের বাড়িতে। এতোদিন শুধু রাইফা আর তুলির কাছে গল্প শুনেছে সে। শানকেও দেখার খুব ইচ্ছে ছিল তার। তন্বি শানের কপালে হাত রেখে বলল,” তুমি নাকি অনেক দুষ্টুমি করো?”
শান জবাব দিল না। তন্বি তার গাল টেনে বলল,” দুষ্টু ছেলে, কথা বলছো না কেন?”
শান এবারও জবাব দিল না। তন্বি অনেক ধরণের প্রশ্ন করল। একটারও জবাব সে পেল না। তন্বি অবিশ্বাসী কণ্ঠে বলল,” তুলি, তুই না বলেছিলি ও সাইক্লোন? কোথায়? এটা তো দেখছি শান্ত পুকুর! টু শব্দটিও করে না।”
তুলি হেসে বলল,” তাহলে মনে হয় তোকে পছন্দ করেনি। পছন্দ করলে কথা বলতো।”
তন্বি অপ্রসন্ন মুখে বলল,” সত্যি? আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি শান?”
শান মৃদু হেসে বলল,” একটা ম্যাজিক দেখবেন?”
” ওরে বাবা, তুমি আবার ম্যাজিকও জানো? তুমি কি ম্যাজিশিয়ান?”
” ম্যাজিক দেখবেন কি-না সেটা বলেন।”
” ওকে দেখবো।”
শান তাকে ঘরে নিয়ে আলো নিভিয়ে দিল। তারপর একটা আলোর রশ্মি তার সামনে ধরল। তন্বি প্রশ্ন করল,” এটা কি?”
” ম্যাজিক। ছুঁয়ে দেখুন।”
তন্বি হাত দিয়ে ধরতেই তার পুরো হাত র-ক্তে রঙিন হয়ে গেল। আল্লাহই জানে কিভাবে কি হলো! তন্বির গা শিরশির করতে লাগল। সে একটা বিকট চিৎকার দিয়ে দ্রুত বাথরুমে এসে হাত ধোঁয়ার সময় উপলব্ধি করল, তার হাতে যেটা লেগে আছে সেটা টমেটো সস। “কি বিচ্ছু! ” বিড়বিড়িয়ে বলল তন্বি।
বাড়ি ফিরে এই গল্পটা তুলি আর রাইফাকে শোনাচ্ছিল তন্বি। সে খুব হাসছে। বাচ্চাটা অদ্ভুত। রাইফা হঠাৎ বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেল। সন্ধ্যা থেকে তার মন খারাপ। না হাসছে আর না কথা বলছে। তুলি চিন্তিত হয়ে উঠল। তন্বি বলল,” এর আবার কি হয়েছে?”
তুলি জবাবে বলল,” দেখে আসছি।”
সে উঠে বারান্দায় এলো। তুলিকে দেখেই ত্বরিতে চোখ মুছে নিল রাইফা। তুলি সিরিয়াস কণ্ঠে বলল,” এই তোর কি হয়েছেরে?”
” কিছু না।”
” বল? তুই কাঁদছিস!”
তুলি কান্নাটা দেখে ফেলায় সে আরও জোরে কাঁদতে লাগল। তুলি এবার অস্থির হয়ে গেল। রাইফা বলল,” রিসব সব বুঝে ফেলেছে।”
” কি বুঝেছে?”
” প্রিয়ন্তীর ব্যাপারটা।”
” ওহ মাই গড! সিরিয়াসলি? কি করে বুঝলো?”
” জানি না। হয়তো নার্সের সাথে কথা বলেছে!”
তুলির মাথা এলোমেলো হয়ে গেল। এখন কি হবে চিন্তা করতেও দম আটকে এলো তার। প্রণয়ও কি জানবে? ভয়ে চুপসে গেল সে। রাইফা ব্যথিত কণ্ঠে বলল,” সে আমাকে প্রিয়ন্তীর কাছে স্যরি বলতে বলেছিল।”
” সে কি তোকে ধমকেছে?”
” না। কিন্তু কিভাবে যেন কথা বলেছে, রুডলি। সে আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়েছিল যে…আমি এক্সপ্লেইন করতে পারবো না। ”
” তুই কি প্রিয়ন্তীকে স্যরি বলেছিস?”
” না। সে বলেছে কেউ কিছু জানবে না। স্যরি বলতে গেলে তো প্রিয়ন্তীকে সব জানাতে হতো। আর তখন সবাই সব এমনিই জেনে ফেলতো। প্রিয়ন্তী না বলে থাকতো না। তাই রিসব স্যরি বলার জন্য ফোর্স করেনি। কিন্তু এরপর সে আমার সাথে আর একবারও কথা বলেনি। আমার খুব গিল্টি ফীল হচ্ছে তুলি। আমি সব নষ্ট করে দিয়েছি।”
” তুই কাঁদিস না প্লিজ। আচ্ছা, রিসবকে যে তুই এতো পছন্দ করিস এটা তো আগে কখনও বলিসনি?”
রাইফা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,” এজন্যই বলিনি। কারণ আমি নিজেই নিশ্চিত ছিলাম না সে আমাকে পছন্দ করে কি-না! আর এখন আমার মনে হচ্ছে, সে আমাকে একদমই পছন্দ করে না।”
” এইটা তোর ভুল ধারণা।”
রাইফা দুইপাশে মাথা নেড়ে বলল,” এটাই ঠিক।”
” দাঁড়া, তোকে একটা জিনিস দেখাই।”
তুলি তার ব্যাগ থেকে রঙিন ওরনা বের করল। ওরনাটি সে রাইফার দিকে বাড়িয়ে হাস্যজ্বল মুখে বলল,” চিনিস নাকি দেখতো?”
রাইফা চোখমুখ কুচকে তাকিয়ে রইল৷ তারপর ঝটিতে ওরনাটি কেঁড়ে নিয়ে বলল,” আরে, এটা তো আমারই ওরনা। হারিয়ে গেছিল।”
” হুম। এটা আমি কোথায় পেয়েছি জানিস?”
” কোথায়?”
” শানের কাছে।”
রাইফা তুমুল আগ্রহে প্রশ্ন করল,” আর শান কোথায় পেয়েছে?”
তুলি জবাব না দিয়ে মিষ্টি করে হাসল। রাইফা রেগে বলল,” একদম রহস্য করবি না। বল!”
” শান পেয়েছে তার ভাইয়ার আলমারিতে। এবার বলতো ভাইয়াটা কে?”
রাইফা গাঢ় হাসি দিয়ে বলল,” রিসব?”
তুলি মাথা নাড়ল। রাইফা ইনিয়ে-বিনিয়ে দেখতে লাগল ওরনাটা। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না৷ এই ওরনা রিসবের কাছে কিভাবে গেল সেটা মনে করার চেষ্টা করতে লাগল। তুলি তখন বলল,” ফার্স্টে আমি ভেবেছিলাম ভাইয়া মানে প্রণয়।”
রাইফা নিরাশ দৃষ্টিতে তাকাল,” ও। এজন্যই তাহলে এতোদিন ড্রামাগুলো করেছিস তাই না? ”
তুলি আফসোসে ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়ল। রাইফা বলল, ” বলদি তুই।”
তুলি হেসে দিল। তার খুব ভালো লাগছিল রাইফার জন্য। খুশিতে টইটম্বুর রাইফার চেহারা। রাতে ভাতও খেল না সে। তুলি মাঝরাতে ঘুম ভেঙে দেখল রাইফা তখনও বারান্দায় বসে আছে। হাতে ওরনা।#বেদনার_রঙ_নীল
ছাব্বিশতম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz
” তোদের মাঝে অনেক কিছু হয়। কিন্তু তোরা আমাকে জানাস না। আমি কি তোদের কেউ না?”
চোখ বুঁজে অভিযোগ ছুঁড়ে দিল তন্বী। তুলি হাসতে হাসতে বলল,” আচ্ছা স্যরি। এখন থেকে তোকে সব জানাবো।”
” তাহলে বল, রাইফা ভূতের মতো বারান্দায় বসে আছে কেন সারারাত? তার কি হয়েছে?”
তুলি খোশমেজাজে বলল,” রোমিওর ফিমেইল ভার্সন।”
তন্বি আগ্রহী হয়ে উঠল। তুলি সবকিছু বিস্তারিত বলতে লাগল। তন্বি শুধু বিস্মিত হচ্ছে। এতোকিছু ঘটে গেল আর সে জানলোই না! আবারও অভিযোগ ছুঁড়ল সে,” তোরা দু’জনেই গভীর জলের মাছ। একটা ঘটনাও আমাকে বুঝতে দিলি না।”
তুলি চোখ সরু করে বলল,” তোর জায়গায় আমি হলে সব বুঝে ফেলতাম৷ তুই বলদি তাই বুঝিসনি কিছু।”
” একটু-আধটু আন্দাজ করতে পেরেছি। তোর আর প্রণয়ের ব্যাপারটা রাইফা আমাকে বলেছিল। কিন্তু রিসবের কথা একবারও সে বলেনি।”
তুলি নিরাশ কণ্ঠে জানাল,” আমাকেও বলেনি।”
ধীরে ধীরে আকাশ আলোকিত হচ্ছে। তুলি হাই তুলে বলল,” ঘুমা এখন। একটু পরেই ক্লাসে যেতে হবে।”
” আজ আমার ক্লাস নেই। আমি তো আরামে ঘুমাবো। ”
সকাল সাড়ে আটটায় রাইফা আর তুলি কোচিং-এর উদ্দেশ্যে রওনা হলো। তাদের ক্লাস শুরু হবে নয়টা দশে। রাইফা সারারাত ঘুমাতে পারেনি বলে গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ল। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর তুলি তাকে ডাকতে লাগল,” এই রাফু, ওঠ।”
রাইফা বিড়বিড় করে বলল,” তুই যা। আমি আজ সারাদিন গাড়ি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো।”
” মানে? মাথাখারাপ হয়ে গেছে নাকি তোর?”
” অলমোস্ট!”
” তুই কি ক্লাসে যাচ্ছিস না?”
” উহুঁ।”
তুলি আর কিছু বলল না। রাইফার সাথে তর্ক করার সময় তার হাতে নেই। পাবলিকে চান্স না পেলেও উত্তর-দক্ষিণ যেকোনো এক জায়গায় রাইফা ভর্তি হয়ে যেতে পারবে। কিন্তু তুলির সেই সামর্থ্য নেই। তাকে পাবলিকেই পড়তে হবে। সেজন্য পড়াশুনায় সিনসিয়ার হওয়া অতি জরুরী। আর নিজের চরকায় তেল দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। রাইফাকে ছাড়াই গাড়ি থেকে নামল তুলি। কিন্তু কোচিং-এর সামনে আসতেই সে হতভম্ব। প্রণয়ও গাড়ি থেকে নামছে। চিনতে বেশি সুবিধা হলো কারণ এই গাড়িতে করেই বিয়ে থেকে পালিয়েছিল তুলি। এতোদিন পর গাড়িটা আবার নিজের রূপে ফিরে এসেছে। তুলি সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,” আরে, আপনি এখানে কেন? আপনার না দুইদিন বেডরেস্টে থাকার কথা ছিল?”
প্রণয় মৃদু হাসল। মোলায়েম কণ্ঠে জবাব দিল,
” আপাতত আমার হার্ট রেস্ট বেশি দরকার। ” এই কথা শুনে তুলির পুরো শরীর লজ্জায় কাঁটা দিয়ে উঠল। খানিক অপ্রস্তুত গলায় বলল,” আপনি আমার সাথে দেখা করার জন্য কোচিং-এ এসেছেন?”
” আজকে আমার ক্লাসও আছে।”
” কিন্তু আপনি তো ফিজিক্সের ক্লাস নেন।”
” তাই বলে কি আমি কেমিস্ট্রি পারি না?”
প্রণয় সিঁড়ি ভেঙে উঠতে লাগল। তাকে দেখে মেয়েরা সালাম দেওয়া শুরু করল। প্রণয় সালামের উত্তর নিতে নিতে তুলির দিকে চেয়ে চোখ টিপল। তুলি বিড়বিড় করে বলল,” পাগল।” তারপর সে হেসে ফেলল। তার ভালো লাগছে খুব। সকালটা সুন্দরভাবে শুরু হয়েছে।
প্রণয়কে কেমিস্ট্রি ক্লাসে দেখে টিনা খুশিতে ডগমগ। অবনী উল্লাসের চিৎকার দিয়ে বলল,” ইয়েস! ভাইয়া আপনি আজকেও আমাদের ক্লাসে? আপনি ক্লাসে এলে আমার অনেক ভালো লাগে।”
মীরা গালে হাত রেখে বলল,” ওরে বাবা, তাই নাকি?”
প্রণয় হাসিমুখে বলল,” তোমাদের ক্লাসে একটা ম্যাগনেটিক ফোর্স আছে। আমাকে টেনে নিয়ে আসে বার-বার।”
টিনার মুখ গোমরা হয়ে গেল। কেউ বলে না দিলেও তুলি বুঝতে পারছে, ম্যাগনেটিক ফোর্স বলতে প্রণয় তাকেই বোঝাচ্ছে। সামনে থেকে একটি মেয়ে বলল,” সেই ম্যাগনেটিক ফোর্সটা কে ভাইয়া? স্পেশাল গার্ল?”
সবাই উৎসাহী হয়ে তাকাল। তুলি লজ্জায় কাবু। প্রণয় গম্ভীর হয়ে পড়াশুনার বিষয়ে কথা বলা শুরু করল। সবাই আশাহত। স্পেশাল গার্লের নাম আজকেও জানা হলো না। প্রণয় বলেছিল বিদায়ের দিন বলবে।
বোর্ডে লিখতে প্রণয়ের অসুবিধা হচ্ছিল৷ কারণ তার ডানহাতের মাসলে ব্যথা। তুলি ব্যাপারটি লক্ষ্য করে বলল,” ভাইয়া, আমার বোর্ডে লিখতে ভালো লাগে। আজকে কি আমি লিখতে পারি?”
” কি লিখতে চাও?”
” লেকচার। আপনি বলবেন আর আমি লিখবো।”
সবাই সমস্বরে উচ্চারণ করল,” না।” প্রণয় অবাক হয়ে বলল,” তুমি কেন লিখতে চাইছো?”
তুলি ফিসফিস করে বলল,” আপনার হাত এখনও ঠিক হয়নি।”
এই কথা শুনে প্রণয় হাসল। সবাইকে অসন্তুষ্ট করে প্রণয় তার দিকে মার্কার পেন বাড়িয়ে দিল। তুলি উৎফুল্ল হয়ে বেঞ্চ থেকে বের হলো। বোর্ডের কাছে এসে লিখতে শুরু করল। প্রণয় বিক্রিয়া বলে দিচ্ছিল আর তুলি লিখছিল। কিছু বিক্রিয়া তো প্রণয়কে বলতেও হলো না। তুলি নিজেই লিখে ফেলছে।
রাইফা চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে ঘুম কাটিয়ে নিল৷ তারপর ড্রাইভারকে বলল,” আপনি চলে যান আঙ্কেল।”
” কোথায় যাবো?”
” আজকে সারাদিন আপনার ছুটি।”
ড্রাইভার অবাক হয়ে তাকাল। রাইফা ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে ড্রাইভারের হাতে দিয়ে বলল,” চিল করুন।”
ড্রাইভার খুশি মনে টাকা গ্রহণ করল। সে বের হয়ে যাওয়ার পর রাইফা নিজে ড্রাইভিং সিটে এসে বসল। ড্রাইভ করতে করতে সে ভাবছিল, একটি অদ্ভুত সুন্দর দিনের কথা।
সেদিন বৃষ্টি ছিল। আকাশে নয়, রাইফার চোখে। বৃষ্টির বন্যা বয়ে যাচ্ছিল। রিসব চলে যাচ্ছে। কবে আসবে তার নাকি ঠিক নেই৷ রাইফা সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া আবেগী মেয়ে। মিষ্টির কাছে সে উচ্চতর গণিত পড়তে আসতো। চুপি চুপি রিসবকে দেখা, দুই একবার কথা বলা, এভাবেই কিশোরী মনে গাঢ় অনুভূতির সঞ্চার ঘটে গিয়েছিল অচিরে। সে চলে যাওয়ার সময় রাইফা উপলব্ধি করে, মানুষটিকে সে অসম্ভব ভালোবাসে! যেদিন রিসব যাবে তার আগের দিন সারারাত রাইফা ঘুমায়নি। সকালে হন্তদন্ত অবস্থায় ছুটে গিয়েছিল মিষ্টিদের বাড়িতে। রিসবের কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল,” আপনি যদি আর না আসেন তাহলে আমি আপনার সঙ্গে কোনোদিন কথা বলবো না!”
তার এমন বাচ্চামোতে রিসব অনেক হেসেছিল। সে যদি ফিরেই না আসে তাহলে এমনিতেও কথা হবে না আর। আলাদা করে কথা বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। তবে রিসব বলেছিল,” যদি জয়ী হই তাহলে আমি ফিরে আসবো। দোয়া কোরো যেন জয়ী হই।”
রাইফা চোখের জল মুছে বলল,” ওয়াদা করছেন?”
রিসব একটু ভেবে বলল,” কিসের জন্য ওয়াদা? জয়ী হওয়ার জন্য?”
” উহুম। ফিরে আসার জন্য।”
” যদি জয়ী হই তবেই ফিরে আসবো রাইফা। নয়তো আসবো না হয়তো।”
রাইফা কেঁদে ফেলে বলল,” তাহলে ওয়াদা করুন জয়ী হবেন!”
” তুমি কেন কাঁদছো?”
” জানি না। আমি চাই আপনি ফিরে আসেন!”
” আমি কারো চাওয়া পূরণ করার দায়িত্ব নিতে চাই না। তাই ওয়াদাও করতে পারছি না।”
রাইফা অভিমান করে বলল,” আপনি খুব রুড!”
রাইফার মনে আছে, সেদিন রিসবের ঘর থেকে যাওয়ার সময় দরজার সঙ্গে তার গায়ের ওরনাটা আটকে গেছিল। কিছুতেই ছুটানো যাচ্ছিল না। রাইফা অধৈর্য্য হয়েই ওরনা গা থেকে ফেলে চলে এসেছিল। তারপর? রিসব কি এমনি নিজের আলমারিতে ওরনাটা তুলে রেখেছিল? নাকি… জানে না রাইফা। তবে আজ এতোদিন পর ওরনাটা আবার তার কাছে! সে হাতে নিয়ে ওরনার ঘ্রাণ নিল। অন্যহাত দিয়ে ড্রাইভিং করছিল। তখনি দেখতে পেল সামনে একটি বিশাল ট্রাক আসছে। রাইফা চেঁচিয়ে উঠল।
ক্লাস শেষে তুলির বের হতে একটু দেরি হয়ে গেল। সে নিচে নেমে দেখল যথারীতি প্রণয় দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে। তুলিকে দেখেই সে বলল,” আসুন ম্যাডাম।”
তুলি মিষ্টি হেসে বলল,” এখন না। আগে আমি পানিপুরি খাবো।”
প্রণয় একটু চমকে বলল,” এখানের পানিপুরি খাবে?”
” তো কোনখানের? এখন কি পানিপুরি খাওয়ার জন্য দিল্লি যাবো নাকি?”
প্রণয় ফিসফিস করে বলল,” অনেক আনহাইজেনিক। একটু আগে আমি দেখলাম লোকটা হাত দিয়ে..”
প্রণয় বাকি কথা বলার আগেই তুলি ধমকে উঠল,” শাট আপ। যেটা নিজের চোখে দেখিনি সেটা শুনতেও চাই না।”
” শুনলে তুমি আর খেতে পারবে না।”
” এজন্যই শুনবো না। আমি অবশ্যই খাবো এবং আপনাকেও খাওয়াবো।”
” ইম্পসিবল।”
” যদি না খান তাহলে আমি আপনার গাড়িতে উঠবো না।”
প্রণয় বিস্মিত কণ্ঠে বলল,” এটা কেমন কথা?”
” এটা আমার জেদের কথা।”
তুলি কিছুক্ষণ পর পানিপুরি নিয়ে প্রণয়ের সামনে এলো। একটা পুরি উঠিয়ে বলল,” হাঁ করুন।”
প্রণয় মুখে হাত চেপে ধরল। দুইপাশে মাথা নেড়ে বলল,” ছিঃ, না।”
” ঠিকাছে। তাহলে আমিও আপনার সঙ্গে যাবো না।”
” সমস্যা নেই। আমার সঙ্গেই তোমার যেতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।”
তুলি একটু অবাক হয়ে বলল,” তাই? তার মানে আমি একা চলে যাবো?”
” তোমার উইশ!”
তুলি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পানিপুরি মুখে দিল। রাগে মামাকে বলল,” বেশি করে ঝাল দিন মামা। এটা তো পানসে লাগছে। বোম্বাই মরিচ কই?”
মামা বেশি করে বোম্বাই মরিচ কেটে তুলির বাটিতে ঢাললেন। খেতে খেতে তুলির চোখ দিয়ে জল গড়াতে লাগল। প্রণয় হাত ভাঁজ করে শান্ত দৃষ্টিতে তার কান্ড দেখছিল৷ তুলির খাওয়া শেষ হলে প্রণয় বিল দেওয়ার জন্য পকেট থেকে টাকা বের করল। মামা বলল,” পাঁচশো টাকা ভাঙতি হবে না।”
” কীপ দ্যা চেঞ্জ।”
মামা বুঝল না প্রণয়ের কথা। তুলি খপ করে টাকাটা উঠিয়ে বলল,” আপনার বড়লোকি টাকা আপনার কাছেই রাখেন।”
এই বলে সে নিজের ব্যাগ থেকে একশো টাকা বের করে দিয়ে দিল। প্রণয় হাসছিল। তুলি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটা রিকশা নিল। প্রণয় রিকশাওয়ালা মামাকে বলল,” আস্তে যাবেন মামা। খুব সাবধানে।”
তুলি দরাজ গলায় বলল,” আপনি দ্রুত যাবেন মামা। যেন কোনো গাড়ি আমাদের ফলো করতে না পারে।”
প্রণয় হা-হা করে হাসল। রিকশা চলতে শুরু করেছে। প্রণয় গাড়ি নিয়ে তুলির রিকশাকে অনুসরণ শুরু করল।
চলবে
(