বেলাশেষে -২ পর্ব -১১

#বেলা_শেষে- ২
[১১]

– এজন্যেই তুমি আমার সাথে এত ঝগড়া করতে। তুমি বড্ড হিংসুটে ভাইয়া। ওষ্ঠদ্বয় চেপে বললাম আমি। আমার কথার প্রতিউত্তরে ভাইয়া মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। আমি আবারও বললাম,

– আমি তাহলে চলে যাচ্ছি আর আসবো না তোমাদের বাসায়। মামনি আর আংকেল এখন থেকে শুধু তোমাকেই আদর করবে। সামনের দিকে পা বাড়ালাম আমি তখনি ভাইয়া খপ করে আমার হাত ধরে ফেলে। আমি উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাই তার দিকে।। অতঃপর বলি,

-হাত ধরছো কেন? আমাকে যেতে দাও। প্রমিজ করছি আর কখনো আসবো না।

– এই হাত আমি কখনো কখনো ছাড়বোনা মিষ্টি। থেকে যা। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নাতে নিজের প্রতিবিম্ব না দেখে একটা জোকারকে দেখতে চাই আমি। অথবা গরম কফিতে হাত পুড়ানোর যন্ত্রনা নিয়ে ঘুম ভাংতে চাই। নতুবা ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় পা পিছলে যখন আয়নাতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখবো তখন মাথায় একটা ছো্ট্ট ঝুটি দেখতে চাই। প্লিজ মিষ্টি থেকে যা। দেখ আমার কাবার্ডের অনের শার্ট, টি-শার্ট পরে আছে সেগুলো তুই চুরি করে পরে নিবি রোজ আর আমি যখন খুজে না পাবো তখন তোর সাথে রাগারাগি করবো। আর আম্মু এসে আমাকে বকে দিবে। তুই চলে গেলে এসব আমি কার সাথে করবো বল।

– এভাবেই থেকে যাবো!

-আপাদত থেকে যা। পরে সুযোগ পেলেই টুপ করে বিয়ে করে নিবো।

-আর এ্যানি আপু??

– সাট আপ মিষ্টি। এ্যানি শুধুমাত্র আমার বন্ধু। বলেই আমার হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে তার সামনে দাঁড় করালো। তারপর আমার মুখের উপর ফুঁ দিয়ে পরে থাকা চুলগুলো উড়িয়ে দিলো। আমি আবেশে দু-চোখ বন্ধকরে নিলাম।

এই মাধ্য দুপুরে বাসা থেকে বের হওয়ার কোন মানেই হয় না। এই সময়ে বাসা থেকে বের হওয়া মানে কড়া রোদে কোলাহলের নিজের অস্তিত্ব হাড়িয়ে ফেলা। গাড়ি নিয়ে বের হলে তাও কথা ছিলো। না বাইক এ যেতে হবে। বেশ বিরক্ত সহিত তৈরী হচ্ছি আমি। ইচ্ছে করছে ওই হিটলার অভিটার মাথার চুলে উঠিয়ে শাক রান্না করতে। এই দুপুর বেলা কল করে বলে এখনি রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হতে। আমি কিছু জিগ্যেস করলে বলে, গেলেই দেখতে পাবি। এখন কোন প্রশ্ন না করে বাসা থেকে বের হো। আমার আর কি করার ওই রাক্ষসটার কথামত তৈরী হচ্ছি।

আধঘণ্টা পর রেডি হয়ে বাসার নিচে চলে আসলাম। আসার সময় স্পর্শ অনেক বায়না করেছিল আমার সাথে আসার জন্যে কিন্ত ওকে আনা হয়নি। অভি ভাইয়ার সাথে যাবো তাই আম্মুও কোন প্রশ্ন করে নি। বাহিরে আসতেই দেখে ভাইয়া বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপছে। তাকে দেখে আমি কিছুসময়ের জন্যে থমকে যাই। এ্যশ কালারের প্যান্ট তার উপর কালো কালারের টি-শার্ট। চোখে কালো সানগ্লাস। সে জানে কালোর প্রতি আমার বরাবরই দুর্বলতা আছে তবুও সে বারবার কেন কালোই পরিধান করে। আর ঠোঁটের কোনে তো এখন তার হাসি লেগেই থাকে সবসময়। দূর থেকে আমাকে দেখতে পেয়ে মোবাইল পকেটে পুরে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আমি ততক্ষণে ভাইয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর ভাইয়া বাইকে উঠে আমাকেও বসতে বলে,

– কোথায় যাচ্ছি সেটা বললে না তো??

তোকে নিয়ে ভিনদেশী হবো। এবার উঠে বস আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারলাম এই ছেলেটা এখন কিছু বলবে না। তাই আমিও কোন কথা না বাড়িয়ে বাইক এ উঠে বসলাম।

রেস্টুরেন্টের সামনে এসে বাইক দাঁড় কারলো ভাইয়া। আমরা দুজনই বাইক থেকে নেমে রেস্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করলাম। রেস্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করার সময় ভাইয়ার আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলো। আমরা যখন রেস্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করলাম তখন সেখানে উপস্থিত সকলে আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো। থাকবে না কেন আমার সাথে যে তাদের সেলিব্রেটি জুবায়ের আহসান অভি আছে। রেস্টুরেন্টের মেয়েগুলো কেমন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে তারা চোখ দিয়ে ভাইয়াকে গিলো খাবে। আমার তো ইচ্ছে করে শাঁকচুন্নি গুলোর চোখ কাটা কম্পাস দিয়ে উঠিয়ে ফেলি।
কেও কেও আসছে ভাইয়ার সাথে সেলফি উঠাতে। মেয়েগুলো কেমন গা ঘেঁসে দাড়িয়ে সেলফি উঠাচ্ছে। সবার সাথে সেলফি উঠানোর সময় ভাইয়া আমাকে ক্যামেরার বাইরে রেখেছে। আমি সবাস সাথে সেলফি উঠাতে চাই সে ক্রোধ নিক্ষেপ করে আমার দিকে। এটা পাবলিক প্লেস তাই আমি চুপ করে থাকি। ভেবেছিলাম সকলের সাথে সেলফি উঠানোর তারা এই ছবি ভাইয়ার পেজের কমেন্টে দিবে আর আমিও ভাইরাল হয়ে যাবো।
সেটা আর হলো এখনও সবাই এ্যানি শাঁকচুন্নিটাকে নিয়েই কমেন্ট করে যাবে। কিছুই ভালো লাগছে না আমার। মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে সামনে থাকা হনুমানের সেলফি তুলার স্টাইল দেখতে লাগলাম।

কিছুক্ষণ পর ভাইয়া ফ্রি হলে আমাকে নিয়ে একটা টেবিলে বসে যেখানে আগে থেকেই ছিলো জিয়ান হয়দার। জিয়ানকে দেখে আমি কিছুটা অবাক হই। জিয়ান এখানে কি করছে আর ভাইয়া সেই বা কেন আমাকে এখানে নিয়ে আসলো। প্রশ্নের দৃষ্টিতে তাকালাম ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া কোন জবাব না দিয়ে আমাকে চেয়ার ইশারা করে দেখিয়ে দিলো বসার জন্যে। আমি সেখানে না বসেই তাকিয়ে রইলাম ভাইয়ার দিকে। তখন জিয়ান উঠে দাড়িয়ে বলল,

– এত অবাক কেন হচ্ছো মিষ্টি। বসো এখানে সবটা জানতে পারবে?

আমি মাথা ঘুড়িয়ে জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

– আপনি এখানে কি করছেন? আর ভাইয়া তুমিই জানতে মিস্টার জিয়ান এখানে আছে?

– হ্যাঁ জানতাম। জিয়ানই আমাকে এখানে ডেকেছে। তুই বস এখানে?

– না বসবো না আমি। চলে আসার জন্যে সামনের দিকে পা বাড়ালাম তখন ভাইয়া আমার হাত ধরে বলে,

– জিয়ান চলে যাচ্ছে।

ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তার দিয়ে তাকিয়ে বললাম,

– চলে যাচ্ছে মানে! কোথায় চলে যাচ্ছে??

– ইউএসএ। চলে যাওয়ার আগে তোর সাথে একবার দেখা করতে চাইছিলো তাই আমাদের এখানে আসা। তুই বস ওখানে। ভাইয়ার কথামতো আমি বসে পড়লাম। তারপর জিয়ানের সাথে কথা বলতে লাগলাম।

জিয়ানের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কারন আমি। মার জন্যে সে চলে যাচ্ছে। অবশ্য এখানে ওর পরিবারও কিছুটা দায়ি। জিয়াউর হায়দারের এমন স্বার্থপরের মতো কাজ মেনে নিতে পারছে না জিয়ান। জিয়াউর হায়দারকে মামনির প্রফেশন ফিরিয়ে দিতে বলছিলো জিয়ান। কিন্ত জিয়াউর হায়দার জিয়ানের কোন কথাই শুনেন না। অভিমানে নিজের দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে জিয়ান। আমি কিংবা ভাইয়া জিয়ানকে থেকে যাওয়ার কথা বললে জিয়ান উত্তর দেয়, যে পরিবারে আমার কথার কোন মুল্য নেই, যে পরিবার আমার ভালো মন্দের দিকটা দেখে না সেখানে থাকার কোন কারনই দেখতে পাচ্চি না আমি। তার থেকে ভালো হবে আমি এদের থেকে দূরে কোথাও গিয়ে থাকি।

রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে ভাইয়া আমাকে নিয়ে তাদের বাগান বাড়িতে চলে আসে। এই বাড়িতেই ভাইয়ার ব্লগিং এর কাজ করে। যত ভিডিও ক্রিয়েট করা সে এখানে বসেই করে। আগে কখনো এখানে আসা হয়নি আমার। ভাইয়া আমাকে এখানে কখনো নিয়ে আসে নি আগে।বাড়ির ভিতরে ডুকতেই একটা বৃদ্ধা মহিলা আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো। সে ভাইয়ার সাথে মত বিনিময় করে আমার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার চিবুক ধরে তার হাতে চুমু খেলো। তারপর মৃদু হেসে বলল,

-আলহামদুলিল্লাহ, আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে।

বৃদ্ধা মহিলার কথা শুনে ভাইয়া তার। অধরোষ্ঠ চেপে হাসলো। তারপর বলল,

– গরম গরম ভুনাখিচুড়ি করো চাচি। তারপর সে ভিতরে চলে যায়। বৃদ্ধা আমাকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। তারপর সে আমাকে বসিয়ে রেখে খিচুড়ি রান্নার কাজ করতে থাকে। আমি সাহায্য করতে চাইলে সে আমাকে সাহায্য করতেও দেয় না।

কিছুক্ষণ পর ভাইয়া একটা ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসলো। এখানে ভাইয়ার কোলে ছোট বাচ্চাকে দেখে আমি বেশ অবাক হই। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি ভাইয়ার দিকে। তখন ভাইয়া হাতের ইশারায় আমাকে ডাকে। আমিও যেখানে যাই আর ভাইয়ার পাশে বসি। ততক্ষণ ভাইয়া ব্যাস্ত হয়ে পরে সেই ছোট বাচ্চাটির সাথে কথা বলায়। আমি স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করি ভাইয়ার দিকে। আর ভাবতে থাকি কে এই বাচ্চাটি? ভাইয়ার সাথে এই বাচ্চাটার কি সম্পর্ক।

চলবে,,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here