বৈধ সম্পর্ক পর্ব ২

#বৈধ_সম্পর্ক
#পর্ব_২
#Saji_Afroz
বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গান গাইছে সায়নী।পেছন থেকে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরে।এই স্পর্শ তার অচেনা নয়।
-সায়নী??
আফরানের ডাকে ঘোর কাটে সায়নীর।তার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে একটু দূরে গিয়ে বলে-
নতুন বউ ফেলে তুমি এখানে কেনো?
-তোমাকে কিছু বলার আছে আমার।
-শুনতে চাইনা কিছু আমি।
-বলতে না পারলে যে আমি শান্ত হতে পারবোনা।
-শুনলে হয়তোবা আমি শান্ত থাকতে পারবোনা।যাও প্লিজ তুমি তোমার বউ এর কাছে।
কথাটি বলেই সায়নী বারান্দা থেকে চলে যেতে যায় কিন্তু হাতের টান পড়ে চলে যায় আফরানের বুকে।আফরান তার হাত ধরে টেনে নিজের বুকে নিয়ে এসেছে সায়নীকে।
আফরানের বুকে মাথা রেখে ফুফিয়ে কেঁদে উঠে সায়নী।অনেকক্ষণের জমানো কান্না বের হয়ে আসে তার চোখ দিয়ে।আফরান সায়নীর মুখ তার বুক থেকে উঠিয়ে,চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে-
এই পাগলি,,আফরান শুধু সায়নীর।
-তাহলে এই বিয়েটা?
-বাবা কেমন তুমিতো জানোই।ওই মেয়েকে উদ্ধার করার জন্যই…
-শুনেছি আমি।কিন্তু সেতো তোমার বউ এখন সমাজের চোখে।
-আর তুমি?
-আমি??আমি তোমার খালাতো বোন সমাজের চোখে।
-এসব আমি মানিনা সায়নী।উদ্ধার করার দরকার ছিলো করেছি।এই মেয়েকে আমি ডিভোর্স দিবো।
-কিন্তু খালু?
-ওসব নিয়ে ভেবোনা,আমাকে কিছুদিন সময় দাও তুমি।
কথাগুলো বলে চলে যায় আফরান।কিন্তু সায়নী জানে যতটা সহজভাবে আফরান কথা গুলো বলেছে,ততটা সহজ কিছুই নয়।ওই মেয়েটা আফরানের পরিবারের,আইনের,
সমাজের চোখে তার বিয়ে করা বউ।এতই কি সহজ হবে সম্পর্ক-টা বিচ্ছেদ করা!
কিন্তু তার সম্পর্ক!সায়নী আর আফরানের সম্পর্ক-টা কি মিথ্যে ছিলো!
না,এতোদিনের মিষ্টি সম্পর্ক-টা মিথ্যে হতে পারেনা।কোথাকার কোন মেয়ে এসে আফরান
কে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেনা এতো সহজেই।আফরান ঠিকই বলেছে, আফরান শুধু সায়নীর।
৭বছর আগে যখন সায়নীর মা-বাবা মারা যায়,
আফরানের বাবা সায়নীর দায়িত্ব নেয়।নিজের মেয়ের মতোই মানুষ করে তাকে।আফরানের সাথেও কখনো তুলনা করেনি।তখন তারা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ভার্সিটি-তে ভর্তির জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছিলো।দুজনেই সম-বয়সী ছিলো।সায়নী চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও আফরান পায়নি।সে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি-তে ভর্তি হয়।
সে সময় সায়নী বাসার হাল ধরে।আফজাল খান সায়নীকে পেয়ে খুবই খুশি ছিলেন।বাসার সমস্ত দায়িত্ব তিনি সায়নীকে দিয়েছিলেন।
এদিকে আফরান ছিলো দুষ্টু স্বভাবের।কিন্তু মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তার স্বভাব অনেকটা বদলে যায়।সারাক্ষণ একা থাকতো সে,নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছিলো সে।এদিকে এতো বড় বাড়িতে সায়নীর একা একা সময় কাটতো না।
একদিন বলেই বসে আফরানকে-
ভাইয়া??
-হুম সায়নী বল?
-একা একা ভালো লাগেনা।তুমি কথাও বলোনা আমার সাথে।কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবা প্লিজ??
সেদিন প্রথম আফরানের সাথে বাহিরে যায় সায়নী।সমুদ্রের পাড়ে তারা সময় কাটায়।
সেই থেকে আফরানের সাথে সায়নীর ভাব জমে।কিন্তু বুঝতে পারেনি সেদিনও এই আফরান-কে ছাড়াই একদিন সে অচল হয়ে যাবে।
-সায়নী মা??
খালুর ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয় সায়নী।তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয় সে।
-খালু ডেকেছো?
-আরে ভাত খাবোতো।কটা বাজে খেয়াল আছে তোর?
-জ্বী দিচ্ছি।
রাতের খাবার খেয়ে আফজাল খান ও মুনিরা নিজের রুমে গেলেও ডাইনিং রুমেই দাঁড়িয়ে থাকে সায়নী-আফরান।
-যাচ্ছোনা কেনো নতুন বউ এর কাছে?
কিছু না বলেই আফরান এগিয়ে যায় নিজের রুমে।তা দেখে সায়নীর বুকে পাথর চাপা পরে।
১মিনিট-ও অপেক্ষা না করে নিজের রুমে চলে যায় সায়নী।মাটিতে বসে কাঁদতে থাকে অঝোর ধারায়।আফরান তার কথার জবাব না দিয়ে এভাবে ওই মেয়েটির কাছে চলে যেতে পারলো!
কিছুতেই শান্ত হতে পারছেনা সায়নী।নিজের পরণের কামিজ হাত দিয়ে টেনে টেনে ছিঁড়ে ফেলছে সে।আর তখনি তার হাত ধরে ফেলে আফরান।
-ছাড়ো আমাকে।
-এই পাগলি,এমন করছো কেনো?

-তুমি এমন করলে আমার কি হবে?আমাকে কে সাপোর্ট দিবে?
-কেনো!তোমার নতুন বউ দিবে।শারীরিক,মানসিক সব সা….
আর কিছু বলতে না দিয়ে সায়নীর গোলাপি ঠোঁট জুড়ো নিজের ঠোঁটের মাঝে ঢুকিয়ে নিলো আফরান।সে জানে কিভাবে সায়নীকে শান্ত করা যায়।খানিকক্ষণ ঠোঁট জোড়া শুষে নিয়ে আফরান বলে উঠে-
ওই মেয়েটাকে নিজের রুম থেকে সরিয়ে এসেছি।আমার সব কিছুতেই শুধু তোমার অধিকার।
-সত্যি?
-একদম।অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায়।
কথাটি বলেই সায়নীকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় আফরান।নিজের শরীরের ভার টুকু ছেড়ে দেয় সায়নীর শরীরের উপরে।সায়নীর মন-টা তার শান্ত করতে হবে,অবশ্য নিজের মন-ও শান্ত করতে এখন সায়নীকে প্রয়োজন তার।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here