বৈধ সম্পর্ক পর্ব ৩

#বৈধ_সম্পর্ক
#পর্ব_৩
Writer: #Saji_Afroz

. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .

-আসতে পারি সায়নী আপু?
-আরে এসো মুনিরা।কিছু লাগবে তোমার?
-কেনো,কারণ ছাড়া আসতে পারিনা বুঝি?
-কেনো নয়!অবশ্যই আসবা।আর কোনো কিছু লাগলে আমাকে বলবা।
-হুম অবশ্যই।আসলে আমি এখন কারণ নিয়েই এসেছি।
-তাই!কি কারণ?
-এই শাড়িটা বাবা দিয়েছে।এটা নাকি মায়ের সবচেয়ে প্রিয় শাড়ি,যেটা বাবা সবসময় নিজের কাছে রাখতেন।
-হুম আমি জানি।তোমায় দিয়েছে এটা?
-নাহ।আপনাকে আজ এটা পরাতে বলেছেন বাবা।মানে শাড়িটা আপনাকে দিয়েছেন।আর আমাকে বলেছেন আপনাকে তৈরি হতে সাহায্য করতে।
-আরে তোমায় কষ্ট করতে হবেনা।
-আমি জানি আপনি অনেক ভালো সাজাতে পারেন।কাল আমাকে সাজিয়েছিলেন।আজ না হয় আমি আপনাকে সাজায় নিজের মতো?
-মুনিরা আমার সাজার ইচ্ছা নাই।কামিজ পরেই বের হবো।
-কিন্তু বাবা জানলে রাগ করবেন।আচ্ছা আমি আপনাকে সাজাবো না।নিজের মতোই সাজেন।আমি বসি এখানে।
-ঠিক আছে বসো।
আফরান আজ থেকেই অফিসে যাবে ঠিক করেছে।বাসায় তার ভালো লাগছেনা কিছু।
সায়নী,মুনিরা দুজনের সামনে পড়লেই নিজেকে তার অপরাধী মনে হয়।
মুনিরাকে কিভাবে নিজের লাইফ থেকে সরাবে সে বুঝছেনা।বাবাকে কি বলবে,বাবা কি মানবে!
উফ্ফ…..বিয়েটা করে আসলেই সে ভূল করেছে।সে সময় তার কি হয়েছিলো জানা নেই।বাবার কথার মান ও অসহায় মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে সায়নী কে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে।তার ভূলের জন্যই তাদের ৩টা জীবন এখন এলোমেলো।
মাথা থেকে সব ঝেড়ে তৈরি হয় সে অফিসের জন্য।সকাল থেকে সায়নী-কে দেখেনি সে।
মেয়েটা-কি রেগে আছে তার উপর!নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এগিয়ে যায় সায়নীর রুমের দিকে।
-সায়নী??দরজা খুলো।
দরজা খুলে বের হয়ে আসে মুনিরা।
-আপনি?কিছু লাগবে?
-সায়নী কই?
-আপুতো ওয়াশরুমে।আমাকে বলতে পারেন কি লাগবে?
-কিছুনা,সায়নীকে বলিও আমি অফিস যাচ্ছি।
সায়নীর রুমে মুনিরাকে দেখেই মাথাটা খারাপ হয়ে যায় আফরানের।তাই সে হনহন করে বেরিয়ে পড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে।
-কে এসেছিলো মুনিরা?
-উনি।
-উনি কে?
-আরে আমার উনি,আপনার আফরান ভাই।আপনাকে বলতে বলেছেন উনি অফিসে যাচ্ছেন।
আফরান ভাই!মুনিরার উপর প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হলেও সায়নী স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে।এমনিতেই পাবেলের সাথে বের হতে তার ভালো লাগছেনা।আবার খালুর কথা অমান্য করা যাবেনা।সব মিলিয়ে নিজের উপরে রাগ হচ্ছে সায়নীর।
বিয়ের ৩দিনের মাথায় অফিসে কেনো যেতে হলো আফরানকে!আসলেই অফিসে গিয়েছে নাকি তার প্রেমিকার কাছে!গভীর চিন্তায় পড়ে যায় মুনিরা।
-কি চিন্তা করো?
-উনার কি কোনো প্রেমিকা আছে?
মুনিরার এমন প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় সায়নী।হঠাৎ এমন একটা প্রশ্ন করে ফেলবে ভাবতে পারেনি সে।
-কি হলো আপু?আপনার সাথে ভালো ভাব তার,নিশ্চয় জানেন আপনি?
-হুম জানি।না নেই।
-তবে যে উনি বললেন?
-কি?
মুনিরা কিছু বলার আগেই দরজায় এসে উপস্থিত হয় আফজাল খান।
-সায়নী মা?হলো তোর?পাবেল এসেছে।
-জ্বী খালু আসছি।
-বাহ বেশ মানিয়েছে তোকে শাড়ি-টা।
-খালাম্মার স্মৃতি-টা আমাকে দিয়ে দিলে কেনো?
-তুই কি পর নাকি!বাদ দে যা মা তোর জন্য গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে পাবেল।
-আচ্ছা।
-একটু দাঁড়াতো?
-কি খালু?
-চুল গুলো ছেড়ে দে।খোপা করে রেখেছিস কেনো!পাবেল দেখুক তার হবু বউ…
-থাক না খালু।
-খুল বলছি?
খালুর কথায় সায়নী তার চুলগুলো ছেটে দেয়।
-বাহ তোকে একদম তোর খালার মতো লাগছে।তোর খালার চুল-ও লম্বা,ঘন ছিলো।
-হুম।
-আচ্ছা মা যা।
পাবেল….
সায়নীর ফুফাতো ভাই সে।পাবেল এর পুরো পরিবার আমেরিকায় থাকে।সায়নীর বাবা অনেক আগে থেকেই পাবেলের সাথে সায়নীর বিয়ে ঠিক করে রাখেন।বড়দের মাঝেই কথাটি সীমাবদ্ধ ছিলো।
পাবেলের মা সায়নীকে আমেরিকা নিয়ে যেতে চাইলেও পাবেলের বাবা এতে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন।তাড়াতাড়ি ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে তার ছিলোনা।আর বিয়ের আগে সায়নীকে তাদের সাথে রাখতেও রাজী ছিলেন না।আবার সায়নীর মতো মেয়ে হাত ছাড়া-ও করতে চান নি।সে সময় আফজাল খান সায়নীর দায়িত্ব নেন।আর তাদের ওয়াদা করেন তারা যখন-ই সঠিক সময় এসেছে মনে করবেন সায়নীকে পুত্র বধু করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তখনি সায়নীকে তাদের হাতে তুলে দিবেন।যেহেতু এটা সায়নীর মা-বাবারও ইচ্ছে ছিলো।
-কি ব্যাপার কিছু খাচ্ছোনা যে সায়নী?
-আসলে আমার ভালো লাগছেনা।
-অন্য কিছু অর্ডার করবো?
-নাহ ধন্যবাদ।
রেস্টুরেন্ট এ বসে আছে পাবেল আর সায়নী।সায়নী শান্ত স্বভাবের সে জানতো কিন্তু এতোটা লাজুক তার জানা ছিলোনা।নিরবতা ভেঙে আবার বলে উঠে পাবেল…
-তোমার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আগে জানলে যোগাযোগ-টা অন্তত রাখতাম।
-হুম।
-তুমি কি জানতে?
-এক বছর আগে খালু বলেছিলেন।
-আর আমি জানি ১মাস হলো।তখনি যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম আবার ভাবলাম একেবারে দেশে এসেই…
-ফুফুরা ভালো আছেন?
-আম্মু তোমাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছেন।আমাদের ঘোরা শেষ হলেই তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছেন বাসায়।
-ওহ তাহলে চলুন।আমারো ফুফুকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
সায়নীর খুব ইচ্ছা হলো পাবেল কে সব খুলে বলতে কিন্তু আফরানের সাথে এই ব্যাপারে কথা না বলে পাবেল-কে বলাটা কি ঠিক হবে!
কলিং বেল এর আওয়াজ হতেই মুনিরা দরজা খুলতে ব্যস্ত হয়ে যায়।ভেবেছে আফরান এসেছে।কিন্তু দরজা খুলেই অবাক হয়ে যায় সে।
-আম্মা তোমরা!
-কেনো আমরা আসতে পারিনা বুঝি?
-কেনো নয়!কিন্তু এভাবে না বলে?
-ঢুকতে বলবি নাকি বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবি?
-আরে আম্মা এসো।আব্বা তুমিও এসো।
মা-বাবাকে দেখে মুনিরা খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায়।
আফজাল খান মুনিরার মা-বাবাকে দেখে অনেক খুশি হোন।২ বন্ধু জমিয়ে আড্ডা শুরু করে দেয়।এদিকে মুনিরা তার মাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
-এটা তোর আর জামাইয়ের রুম?
-হুম আম্মা।
-বাহ সুন্দর তো।তা জামাই কই?
-অফিসে।
-বিয়ের ৩দিনের মাথায় সে অফিসে কেনো?
-কাজ আছে।
-কিছু লুকোচ্ছিস নাতো?দেখ গ্রামের হলেও তুই ভালো,
শিক্ষিত পরিবারের মেয়ে।বিয়েটা স্বাভাবিক-ভাবে না হলেও তুই ওর বউ এখন।
বিয়েতো তোকে করেছে।আমরা কেউ করতে বলিনি।তাই তোর প্রতি ওর সব দায়িত্ব পালন করতে হবে।আর….
কথা শেষ না করার আগেই কলিং বেল বেজে উঠে।
মুনিরা দ্রুত পায়ে হেটে দরজা খুলতেই আফরানকে দেখতে পেয়ে ফিসফিস করে বলে-বাসায় আম্মারা এসেছেন।প্লিজ এমন কোনো আচরণ করবেন না যাতে তারা কিছু আন্দাজ করতে পারেন।
মুনিরাকে কিছু না বলে আফরান ঘরে ঢুকে শ্বশুর-শ্বাশুরী কে সালাম করে কথা বলে।
-আপনি ফ্রেশ হোন।আমি আম্মাকে নিয়ে অন্য রুমে যাই।
-না না তোমরা বসো এখানে।আমি কাপড় নিয়ে অন্য রুমে যাচ্ছি।
আফরান ড্রয়ার থেকে কাপড় নিয়ে রুম থেকে বের হয়।কিন্তু সোজা চলে যায় সায়নীর রুমে।
সারাদিন ফোন করে সায়নীকে পায়নি সে।
সমস্যা কি মেয়েটার জানতে হবে তার।কিন্তু রুমে গিয়েও সায়নীকে পায়নি।সায়নীর ফোন-টা টেবিলে দেখতে পায়।পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে সায়নীকে না পেয়ে চলে যায় সে মুনিরার কাছে।
-সায়নী কোথায়?
-আপুতো পাবেল ভাইয়ার সাথে বাইরে গিয়েছেন,উনার বাসায়ও যাবেন শুনেছি।

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

-পাবেল!ও কখন এসেছে,আর সায়নী ওর সাথে বাইরে কখন গিয়েছে?
-আপনি অফিসে যাওয়ার পরেই।ওই যে তখন আপনি এসেছিলেন না আপুর রুমে?আপু তখন বের হওয়ার জন্যই তৈরি হচ্ছিলেন।
-তুমি আমাকে তখন কেনো বলোনি সায়নী বাইরে যাবে পাবেলের সাথে?
-মানে?
আফরান খেয়াল করলো মুনিরার মা তার দিকে চেয়ে আছেন।নিজের রাগ সংযত করে কিছুনা বলে রুম থেকে বের হয়ে যায় সে।
ফুফিদের সাথে সারা দিন কাটানোর পর সায়নী ফিরে আসে আফজাল খানের বাসায়।ফুফি তাকে থাকতে বলেছিলো।কিন্তু সে থাকেনি।
পাবেল তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
সায়নী কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দেয় আফরান।আফরানের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

.
-ভেবেছিলাম থেকে যাবে আজ।থেকেই যেতে।
এসেছো কেনো?
আফরানের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সায়নী ঘরের ভেতরে পা বাড়াতেই মুনিরাকে দেখতে পায়।
-আপু একটু ডাইনিং রুম এ আসবেন?
-কেনো?
-আমার আম্মারা এসেছেন।দেখা করবেন না?
-হুম।চলো।
মুনিরা তাকে নিয়ে ডাইনিং রুমে চলে যায়।এদিকে আফরান রাগে গিজগিজ করতে থাকে।সায়নীর উপর প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ তার।
সায়নী কিভাবে পাবেলের সাথে বাহিরে গিয়েছে তাও আবার তাকে না বলে!না জবাব না পাওয়া অবধি শান্ত থাকা যাচ্ছেনা।
ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করছেন মুনিরার মা-বাবা ও আফজাল খান।
-আসসালামু-আলাইকুম আঙ্কেল,আন্টি।
সায়নীর ডাকে তার দিকে চোখ পড়তেই তার দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মুনিরার মা-বাবা।দুজনেই সালামের জবাব দেন।
-ভালো আছেন আপনারা?
মুনিরার মা জবাব দেন…
-আছি,তুমি কেমন আছো?
-জ্বী ভালো।আপনারা বসেন।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
মুনিরার দিকে তাকিয়ে সায়নী আবার বলে-
উনাদের দিকে খেয়াল রেখো,আর কোনো কিছুর দরকার হলে বলিও আমায়।
সায়নী নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফ্যান-টা ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ে বিছানার উপরে।ফুফুরা কতো স্বাদ করে তাকে বউ বানাতে চায় আর সে কিনা তাদের ইমোশান নিয়ে খেলে এসেছে!একদম ঠিক হয়নি এসব।খালু,ফুফু,মুনিরা ওদের সাথে অন্যায় হয়ে যাচ্ছে।এমন একটা দিন তার জীবনে আসবে স্বপ্নেও ভাবেনি সে।
-বলোনা কেনো তুমি বহুদূর,,
কেনো আমি একা,,,
হৃদয়ে ভাংচুর…..
আফরানের গলার স্বরে চমকে যায় সায়নী।আফরান গান গাইছে।কিন্তু কোথায় সে!
ভাবতে ভাবতেই বারান্দা থেকে বেরিয়ে আসে আফরান।কিছুক্ষণ সায়নীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে-
বেগুনি রঙের জামদানি শাড়ি,ঘন কালো চুল ছেড়ে চোখে গাঢ় কাজল!বাহ ভালোই লাগছে।কিন্তু এতোসব কিছু আমার জন্য নয়।ওই পাবেলের জন্য।আমাকে না বলে ওর সাথে কেনো গেলে তুমি?
সায়নীকে চুপ থাকতে দেখে আফরানের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়।সে সায়নীর কাছে গিয়ে হাত ধরে টান দিয়ে বসা থেকে উঠিয়ে দেয় তাকে।হাত দুটো শক্ত করে ধরে আবার জিজ্ঞেস করে-কেনো গিয়েছো?
-আহ আমার লাগছে আফরান।
সায়নীর কথায় তার হাত ছেড়ে দেয় আফরান।
শান্ত গলায় বলে-
সায়নী কেনো গিয়েছো?
-খালু বলেছেন।
-বাবা বললেই তোমাকে যেতে হবে?আমার বউ হয়ে কিভাবে তুমি পর পুরুষের সাথে ডেইট এ যেতে পারো?
আফরানের কথায় উচ্চস্বরে হেসে উঠে সায়নী।বাসায় মুনিরার মা-বাবা আছে মনে পড়তেই হাসি থামিয়ে বলে-
তুমি এখন যাও।পারিবারিক,
সামাজিক,আইনের চোখে যে তোমার বউ তার পরিবার আছে এখন বাসায়।জানতে পেলে খারাপ দেখাবে।খালাতো বোনের রুমে দরজা বন্ধ করে…
-কিসের বোন!তুমি আমার বউ।বুঝেছো তুমি?
-কে আমি তোমার!
-রহস্য করবেনা একদম।
-হুম আমি তোমার বউ।কিন্তু গোপণ বউ।সবার চোখে ওই মুনিরায় তোমার বউ।আমি নয়।আমি পারছিনা আর সহ্য করতে এসব।সামান্য পাবেলের সাথে বের হয়েছি বলে তুমি আমাকে কথা শোনাতে এসেছো।আর নিজে যে একটা বউ থাকা স্বত্তেও আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছো তাতে কিছুনা! **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
কখন বলবে তুমি খালুকে আমাদের কথা?আগেও বলতে পারোনি।আদৌ বলতে পারবে,নাকি আমার রাস্তা আমি দেখবো?
সায়নীর কথাগুলো শুনে কোনো জবাব না দিয়ে আফরান তার রুমে পায়চারি করতে থাকলো।একপর্যায়ে দেয়ালের পাশে গিয়ে দেয়ালের উপর নিজের হাত মুঠো করে ঘুষি দিতে লাগলো।সায়নী তার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত সরিয়ে নিয়ে বললো-
আফরান ছাড়ো কি করছো কি তুমি?
-সব দোষ আমার আমি মানছি।আমি সঠিক সময় পাইনি সায়নী,সব ঠিক করে দিবো বিশ্বাস করো।প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা।এখনি বাবাকে বলবো আমাদের বিয়ের কথা,আমার প্রথম বউ তুমি।আর আজীবনের জন্য শুধু তোমাকেই চাই।
আফরান কেঁদে কেঁদে কথা গুলো বলছিলো।
খালার মৃত্যুর পর এই প্রথম সে আফরান কে কাঁদতে দেখে।তার কান্না দেখে সায়নীর বুকে চিনচিন ব্যথা করে উঠে।তাকে নিয়ে খাটে গিয়ে বসে সায়নী।আফরানের মাথা নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে বলে-
এই পাগল কাঁদেনা।আমি শুধু খালুর কথা রাখার জন্যই গিয়েছি ওখানে।তাছাড়া আমাকে খালু সকালেই বলেছেন পাবেল এসেছে,তার সাথে বাইরে যেতে হবে আমায়।তোমাকে বললে ঝামেলা করতে তুমি তাই বলিনি।আর ফোনটাও ইচ্ছা করে নিইনি।তবে আমার মনটাও খারাপ ছিলো।মুনিরা বলেছে আমাকে,আমার আফরান ভাই নাকি আমাকে বলে যেতে বলেছে সে অফিস যাচ্ছে।
সায়নীর বুক থেকে মাথা তুলে আফরান নিজের চোখ মুছে হেসে বলে-
আফরান ভাই!হাহা।
-উফ হেসোনা,এটা শুনে মাথা ঠিক ছিলোনা আমার।আসলেই সবার চোখেই আমরা ভাই-বোন।
-এখনি সবাইকে ক্লিয়ার করে দিবো।
-এখন না।এখন ঠিক হবেনা বলা।মুনিরার পরিবার আগে গ্রামে ফিরে যাক,খালুর সাথে কথা বলতে হবে।নিশ্চয় মাফ করে দিবেন তিনি আমাদের।আর উপায় ও বের করবেন কোনো।
-হুম এবার আর ভূল হবেনা।
মুনিরার মা মুনিরার ঘরে যেতেই দেখেন খাটের উপরে চুপচাপ বসে আছে মুনিরা।
তিনি মুনিরার পাশে বসে বলেন
-জামাই কই?
-আছে হয়তো কোথাও।
-কোথাও!জামাইরে চোখে চোখে রাখতে পারিস না?
-উনি কি বাচ্চা নাকি আম্মা দেখে দেখে রাখতে হবে!
-ঘরে যুবতী সুন্দরী মেয়ে মানুষ আছে একটা।সব কি বুঝিয়ে দিতে হবে তোকে?
-আপু ৭বছর ধরেই এখানে থাকেন।উনার মা,বাবা আর তোমাদের জামাই এর মা এক সাথেই রোড এক্সিডেন্ট এ মারা গিয়েছিলেন।
-ওহ এই মেয়েটা তাইলে সে মেয়ে!শুনছিলাম কিন্তু এক সাথে থাকে জানতাম না।ভালো করে যোগাযোগ ও ছিলোনা আফজাল ভাইয়ের সাথে।তোর বিয়েতে দাওয়াত দিয়েছি হিসেবে গিয়েছে আফরান কে নিয়ে।
-হুম।
-তাও জামাইকে চোখে চোখে রাখবি।তোর সাথে কেমন কটর কটর করে কথা বলছে ওই মেয়ে বাইরে গেছে বলিস নাই তাই।
-কই কটর কটর!
-করছে।মেয়েটাকেও সুবিধার লাগছেনা।
-না মা এই কয়েকদিনে যা বুঝেছি সায়নী আপু অনেক ভালো।
-তাও…
-উহু খুব তাড়াতাড়ি উনার বিয়েও হয়ে যাবে।এতো ভেবো নাতো তুমি।
মুনিরার মা আর কিছু না বললেও আফরানের আচরণে আফরান কে নিয়ে সন্দেহ ঢুকে তার মনে।
রাতের খাবার খেয়ে সবাই যে যার রুমে চলে যায়।মুনিরার মা-বাবাদের সায়নী একটি রুমে নিয়ে যায়।এদিকে আফরান আর মুনিরা এক রুমে…
-সবাই ঘুমিয়ে পরলে আমি চলে যাবো পাশের রুমে।
-দরকার নেই আজ এখানেই থাকো তুমি মুনিরা।
-কিন্তু..
-কোনো কিন্তু না।তোমার আম্মারা যতোদিন থাকবে এখানে থাকবা তুমি।
-তাহলে আমি আজ সোফায় শোবো।
-কেনো?
-আপনার রুমে আপনি আর কতো কষ্ট করবেন?
আফরান আর কিছু না বলে শুয়ে পড়ে বিছানায়।মুনিরা চুপচাপ বালিশ-টা নিয়ে এগিয়ে যায় সোফার দিকে।
মুনিরাকে সবটা জানানো দরকার কিন্তু বাবার সাথে পরামর্শ না করে কিছু করা ঠিক হবেনা এখন।
মানুষ মাত্রই ভূল।কিন্তু তার জীবনে সে এতো ভূল কিভাবে করলো।সেদিন হয়তো সায়নীকে গোপনে বিয়ে না করে বাবাকে জানিয়ে বিয়েটা করলে এতো কিছুর সম্মুখীন হতে হতোনা আজ।
.
#_____________চলবে________________
.

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here