বৈধ সম্পর্ক পর্ব ৪

#বৈধ_সম্পর্ক
#পর্ব_৪
Writer: #Saji_Afroz

. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .

১বছর আগে আফরান যখন সুইডেন থেকে দেশে ফিরে তখন জানতোই না তার জীবনে নতুন মোড় আসবে।এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই তার চোখ সায়নী কে খুঁজতে থাকে।বিদেশ থাকাকালীন সায়নী তার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি।সায়নী নিজের ফোন নাম্বার বদলে ফেলেছিলো আর ইন্টারনেট তো ব্যবহার-ই করতো না।একটা ভূলের জন্য সায়নী তার সাথে এমন করতে পারে জানা ছিলোনা তার।তবে আফরান বিদেশ গিয়ে,সায়নী থেকে দূরে গিয়ে অনুভব করতে পেরেছে সে ভালোবাসে সায়নীকে।
বাবাকে দেখে আফরান বাবার কাছে গিয়েই জড়িয়ে ধরে তাকে।
-বাবা আমি চলে এসেছি।
-তাতো দেখতেই পাচ্ছি মাই বয়!কোনো অসুবিধে হয়নিতো?
-না বাবা।
বাবাকে ছেড়ে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে আফরান বলে-
সায়নী আসেনি বাবা?
-তোর জন্য রান্না করতে ব্যস্ত সে।সেই ভোর সকালে উঠে রান্না নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
চল এখন।বাসায় গিয়ে সায়নীর হাতের রান্না মজা করে খাবি।
সায়নী তার জন্য রান্না করছে!কতোদিন সে সায়নীর রান্না খায়নি।
কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দেয় হাসির মা।অনেক পুরোনো কাজের লোক সে।
আফরান আশা করেছিলো সায়নীকে দেখবে কিন্তু সায়নী দরজা খুলেনি।হতাশ হয়ে হাসির মায়ের সাথে কথা বলে ভেতরের দিকে পা বাড়ায় সে।কয়েক পা এগিয়ে পেছনে ফিরে জিজ্ঞেস করে-
খালাম্মা সায়নী কই?
-আপা মনিতো রান্না সাইরা নিজের ঘরে গেছে।
-আচ্ছা বাবা লাগেজ নিয়ে ঢুকলে বলিও আমি সায়নীর সাথে দেখা করতে গিয়েছি।
গোসল মাত্রই সেরেছে সায়নী।হালকা গোলাপি রঙের একটি সুতির কামিজ পরেছে।
গামছা নিয়ে লম্বা চুলগুলো মুছছে সে।
এমন একটি দৃশ্য আসলেই মনোমুগ্ধকর।
আফরান দরজায় দাঁড়িয়ে তাকে এক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে।
সায়নী পেছনে ফিরতেই দেখতে পায় আফরানকে।তাড়াতাড়ি নিজের উড়না-টা বিছানা থেকে নিয়ে বুকের উপরে দিতে দিতে বলে-
কখন এলে??
ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে আফরান বলে-
এতোদিন পর দেখা হয়েছে,কথা হচ্ছে আর তুমি শুধু জিজ্ঞেস করছো কখন এলে?
-আসলে এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেতো আমি হঠাৎ,মানে আসলে…
-হাহাহা।
-কি?
-তুমি এতো নার্ভাস হচ্ছো কেনো সায়নী?
-ভূতের মতো দাঁড়িয়ে থাকলে নার্ভাস হবোনা?
-সুন্দর লাগছে তোমায়।
আর কিছু বলতে চেয়েও বাবার ডাকে বলতে পারেনি আফরান।
-আরে এতো গল্প করলে হবে?আগে দুপুরের খাবার খেয়ে নে।দুটিতে মিলে পরে গল্প করিস।যা আফরান ফ্রেশ হয়ে নে আর সায়নী তুই ভাত রেডি কর।
দুপুর ২টা……
ডাইনিং টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছে আফজাল খান, আফরান,সায়নী।
-উম্ম…এত্তো মজা!জানো বাবা প্রতিদিন আমি সায়নীর হাতের রান্না মিস করতাম।এখন আমি চলে এসেছি আর মিস হবেনা।
-হবে হবে।
-কেনো?
-আরে সায়নীর তো বিয়ে দিতে হবে তাইনা?
বাবার কথায় থমকে যায় আফরান।
সায়নীর বিয়ে!বললেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছেনা।প্লেটে আঙুল নাড়াতে নাড়াতে আফরান বলে
-হুম বিয়েতো দিতে হবে।আগে রান্না মন ভরে খেয়ে নেই।
-আরে না সামনেই ওর বিয়ে।
-মানে?
-মানে সায়নীর বিয়ে পাবেলের সাথে।
-ওর ফুফাতো ভাই?
-হুম আগামী মাসেই তারা দেশে আসবে,এরপর দিন তারিখ ঠিক করে বিয়েটা হয়ে যাবে।
-ওহ।
খাবার টেবিলে আর কেউ কোনো কথা বলেনি।
দুপুরে সায়নীর রুমে যায় আফরান।সারা দিন কাজ করে সায়নী ঘুমোচ্ছিল বেহুঁশের মতো।
ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগছিলো।কিন্তু আফরানের মনে অনেক প্রশ্ন যা না জানলে নিজেকে শান্ত থাকতে পারছেনা সে।
তাই সে সায়নীকে ডাকলো-
সায়নী এই সায়নী?
কোনো সাড়া না পেয়ে পাশের টেবিলে থাকা জগ থেকে পানি নিয়ে সায়নীর মুখে পানির ছিটকা দিতেই সায়নী উঠে বসে যায়।চরম ভয় পেয়েছে সে।তাই আফরান তার পাশে বসে হাত ধরে বলে-
এই সায়নী আমি আফরান।
সায়নী কিছুক্ষণ চুপ থেকে আফরানের দিকে তাকিয়ে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে-
এই অবেলায় তুমি?
-এতোদিন যোগাযোগ করোনি কেনো?ওই দিনের ঘটনার জন্য?যেদিন আমি তোমার…
-আফরান ভাইয়া ওসব কিছু না।তুমি যাওয়ার পর পরই খালু আমাকে জানিয়েছিলো আমার মা-বাবার ইচ্ছা,পাবেল কে যেনো আমি বিয়ে করি।
-হুম করবে।তাতে আমার সাথে যোগাযোগ না রাখার কি হলো?দেখো সায়নী সেদিন আমি ইচ্ছাকৃত কিছু করিনি।
-প্লিজ ভাইয়া বাদ দাও।
-আমাকে তুমি ক্ষমা করতে পারোনি তাই যোগাযোগ করোনি,নাম্বার বন্ধ করে দিয়েছো?কিন্তু একবার ভাবোনি আমার কষ্ট হবে এতে।
-কিসের কষ্ট?
-ছোট লাগে নিজেকে।এতোদিন কতোটা অপরাধবোধ কাজ করেছে নিজের মধ্যে তুমি বুঝবেনা।
-প্লিজ ভাইয়া…
-না বলতে দাও আমায়।আমি এতোই খারাপ যে তুমি আর কথাও বলোনি আমার সাথে,
এখনও দূরে দূরে থাকছো।এতোদিন হয়ে গিয়েছে ব্যাপারটা ভূলতে পারোনি তুমি।
-এসব কিছু নয়,আমি তোমার সাথে কথা বললে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবোনা তাই কথা বলিনি।
-মানে?
-মানে খালু যখন বলেছেন তুমি যাওয়ার পর আমার সাথে পাবেলের বিয়েটা হোক এটা বড়দের ইচ্ছা ছিলো,তখনি আমি ঠিক করি তোমার সাথে আর যোগাযোগ রাখবোনা।
রাখলে কষ্ট হবে কারণ আমি তোমাকে…
সায়নী থেমে যায় আর কিছু না বলেই।
-কি সায়নী বলো?তুমি আমাকে?
কিছুনা বলেই সায়নী রুম থেকে বের হয়ে যায়।
সায়নীও আফরানকে ভালোবাসে।আগে সে এটা উপলব্ধি করতে না পারলেও আফরান দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পরে পেরেছে।
কিন্তু খালু তাকে তার মা-বাবার ইচ্ছার কথা বলেছেন তার পরে সে কি করে পারবে আফরানের দিকে নজর দিতে!আর আফরান,সেও তো ভালো কাউকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে পারে কেনো সে সায়নীর মতো মেয়েকে নিজের জীবনে ঠাই দিবে যে তাদের বাড়িতে আশ্রিতা!এসব ভেবেই সে আফরানের সাথে যোগাযোগ রাখেনি।
রাত ২টা….
আফরানের চোখে ঘুম নেই।সায়নীও তাকে ভালোবাসে!পুরো কথাটা না বললেও সায়নীর কথায় এটাই বুঝা যাচ্ছে।তার মানে তারা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।মাঝখান
ে এই পাবেল-টা কেনো আসবে!নাহ যেভাবেই হোক একে সরাতে হবে।
দেখতে দেখতে ৮দিন কেটে যায়।
আফরানের বাবা সায়নী আর আফরান দুজনকেই ড্রয়িংরুমে ডেকে আনেন।
-পাবেলরা কিছুদিন পরই দেশে আসবে।সময় বেশি নিয়ে আসবেনা।সায়নীর সাথে ওর বিয়েটা আমি দিয়ে দিতে চাই।আফরান তোর কিন্তু দায়িত্ব অনেক।
-হুম বাবা।
-সায়নী মা?তোর কিছু বলার আছে?
-না খালু,বলার নেই।
সারাটা দিন অস্থিরতায় কাটে আফরানের।খানিকক্ষণ পায়চারী করে পকেট থেকে মোবাইল-টা বের করে ফোন দেয় তার বন্ধু হাবিব কে।
-হ্যালো হাবিব?
-হুম দোস্ত বল।
-তোকে একটা মেসেজ দিচ্ছি ওই ঠিকানায় আমাদের আরো কয়েকজন বন্ধুদের সাথে নিয়ে আসতে পারবি এখন?
-এখনি?
-হুম।
-আচ্ছা পারবো।কিন্তু কেইসটা কি?
-এলেই দেখবি।
সায়নীকে রুমে দেখতে না পেয়ে তার রুমের জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করতে থাকে আফরান।
অবশেষে পেয়ে যায় একটি ফাইল যাতে সায়নীর জন্মসনদ-সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পায়।তাড়াতাড়ি ব্যাগের ভেতরে ঢুকিয়ে নেয় সেটি।
-তুমি এখানে?
-আমার মেয়ে বান্ধবী একটা খুব বিপদে পড়েছে।তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে সায়নী প্লিজ।
-কি বিপদ?
-যেতে যেতেই বলবো চলো এখন।
গাড়ি বের করে সায়নীকে নিয়ে রওনা হয় আফরান।কিছুদূর গিয়ে রাস্তার পাড় থেকে তার বন্ধু হাবিবসহ কয়েকজন কে গাড়িতে তুলে নিয়ে সোজা চলে যায় কাজী অফিসের সামনে।গাড়ি থেকে নেমেই সায়নী প্রশ্ন করে
-কই তোমার বান্ধবী?
-সায়নী আজ আমরা বিয়ে করবো।
-আমরা মানে?
-তুমি আর আমি।
-মাথা ঠিক আছে তোমার!কেনো তোমাকে বিয়ে করবো আমি?
-কারণ তুমি আমাকে ভালোবাসো।বাসোনা?
সায়নীকে চুপ থাকতে দেখে আফরান বলে
-আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
-কি?
-বললাম যে আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
-সত্যি?
-একদম।
সায়নী বুঝে উঠতে পারছেনা এসব সত্যি নাকি!খানিকক্ষণ চুপ থেকে সে বলে
-কিন্তু পাবেলের…
-উফফ..ওই পাবেলের কথা তুমি চিন্তা করোনা।
-আর খালু?
-বাবা মেনে নিবে আমাদের।
-উনাকে না জানিয়ে?
-গিয়েই জানাবো।আগে বিয়েটা করে ফেলি।
উনি শুনলে হয়তো না মানতে পারেন।তুমি জানোই বাবা কাউকে কথা দিলে রাখেন।
তাই উনি চাইবেন পাবেলের সাথেই তোমার বিয়েটা হোক।এখন যদি আমরা বিয়ে করে নেই তাহলে বাবা মানতে বাধ্য।
-কিন্তু অনেক ফর্মালিটি থাকে বিয়ে করতে,আমিতো কিছুই আনিনি।
-আমি সব এনেছি।আমারো,তোমারো।
-আমার রুমে তুমি তখন এসব করছিলে?
-জ্বী ম্যাডাম,চলেন এবার বিয়েটা করেই ফেলি।
সেদিন আফরানের কথা সায়নী মেনে নেয়।
আফরান তাকে ভালোবাসে জেনে কোনটা ঠিক কোনটা ভূল কিছুই তার বোধগম্যে আসেনি।সে শুধুই তার ভালোবাসার মানুষের ডাকে সাই দিয়েছে।
আফরানের বন্ধুদের সাক্ষী করে বিয়ে করে নেয় তারা।
বাসায় ফিরে দুজনে এগিয়ে যায় আফজাল খানের রুমে।
-বাবা আসবো?
-হুম,কোথায় গিয়েছিলি তোরা?
-আমরা আসলে…
-যাকগে একটা কথা বলার ছিলো।
-কি?
-পাবেলরা আসতে পারছেনা দেশে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে।
-কখন আসবে?
-সেটাও সঠিক করে বলেনি।
-ওহ।
-যা তোরা,এ ব্যাপারে আর কিছু জানলে তোদের বলবো।
পাবেল দেশে আসছেনা!এই কথাটা শোনার পর আফজাল খানকে তারা আর কিছু বলেনি।চলে যায় যে যার রুমে।
রাত ২টা….
সায়নীর দরজায় কড়া নাড়ে আফরান।

একবার কড়া নাড়তেই দরজা খুলে দেয় সায়নী।তার চোখেও ঘুম ছিলোনা।যেনো সে আফরানের জন্যই অপেক্ষা করছিলো।
-তুমি এতো রাতে আফরান ভাইয়া?
আফরান দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করতে করতে বলে
-ভাইয়া!আমি তোমার ভাইয়া?
-না মানে… **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

-বসতে বলবেন?
-তোমার বাড়ি।যেখানে যখন খুশি বসতে পারো।
-ভূল বললে তোমারও বাড়ি।বাপের বাড়ি।
আর এখন শ্বশুর বাড়িও।
-হুম।
আফরান বিছানায় বসতে বসতে বলে
-আজ আমাদের বাসর রাত হওয়ার কথা না?
খানিকটা লজ্জা পেয়ে যায় সায়নী।
আফরান তার দিকে তাকিয়ে দেখে লজ্জায় মুখটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে।সায়নী নিচের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নিরবতা ভেঙ্গে আফরান বিছানা থেকে উঠে সায়নীর কাছে গিয়ে তার মুখ বরাবর দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে
-তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।নিজের হাতে পরিয়ে দিতে চাই।দিবো?
সায়নী হ্যা সূচকভাবে মাথা নাড়তেই আফরান তার পেছনে গিয়ে পকেট থেকে একটি লকেট বের করে পরিয়ে দেয় সায়নীর গলায়।আফরানের হাতের ছোঁয়া পেয়ে সায়নী কিছুটা কেঁপে উঠে।আফরান তা বুঝতে পেরে সায়নীকে হঠাৎ করেই কোলে তুলে নেয়।
-এই,কি করছো তুমি!
কোনো কথা না বলে আফরান তাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে তার পাশে নিজেও শুয়ে পড়ে।
-আজ থেকে আমিও তোমার সাথে থাকবো।
-ইশ বললেই হলো!
-কেনো হলোনা!তুমি আমার বউ,আমি তোমার জামাই।আমরা থাকতেই পারি।
সায়নী আফরানের দিকে ফিরে বলে
-খালুকে তো বলোনি কিছু?
-পাবেল তো আর আসছেনা এখন।পরে বলা যাবে।
-পরে বললে এভাবে লুকিয়ে রাতে আসতে হবে তোমায়।
-তার মানে আমার সাথে রাত কাটানোর ইচ্ছে আছে তোমার?
-না মানে আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে..
-কি?
-ইয়ে আরকি!
-ইয়ে!হাহা বুঝেছি।
-কি বুঝেছো?
-লুকিয়ে আসলেতো সমসময় নাও আসতে পারি।
-হুম তুমি এক লাইন বেশি বুঝো।আমিতো শুধু তোমার কষ্ট হবে এইভাবে আসতে আর বেশি দেরী হওয়ার আগে খালুকে সব বলে দেওয়ার জন্যই বললাম।
-হুম ঠিক আছে,তাহলে কাল বাবাকে বলবো আমাদের কথা।প্রথমে বলবো আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।তাতে যদি না মানে তাহলে বিয়ের কথাটা জানিয়ে দিবো।
-খালু রাগ করবেনা তো?
-করলেও আর কতক্ষণ,ঠিক মেনে নিবে।
এসব কথা রাখোতো,লকেট টা খুলে দেখো পছন্দ হয় কিনা।
সায়নী লকেট-টা খুলে দেখে তাতে তার আর আফরানের ছবি।আফরানের ছবি এখন থেকে সে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে রাখতে পারবে ভেবেই খুশি হয়ে যায়।
-ওয়াও এতো সুন্দর!
-পছন্দ হয়েছে তোমার?
-অনেক।
খুশিতে আত্মহারা হয়ে সে আফরানকে জড়িয়ে ধরে বলে
-এত্তগুলা ধন্যবাদ।
আফরান তাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে
-শুধু ধন্যবাদ দিলে হবে?
-মানে?
-যেভাবে জড়িয়ে ধরেছো ওইভাবে একটু আদর দিলে ভালো হয় আর কি।
সায়নী মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করতে থাকে!খুশিতে সে আফরানকে কখন জড়িয়ে ধরে ফেলেছে বুঝতেই পারেনি।আফরানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সে বসে পড়ে বিছানার উপর।
আফরান ও বসে বলতে শুরু করে
-সেদিন কোনো বৈধতা ছিলোনা,কিন্তু আজতো আমরা স্বামী-স্ত্রী।আজও কি পালিয়ে যাবে সায়নী?
সায়নীকে চুপ থাকতে দেখে আফরান বিছানা ছেড়ে উঠতে থাকে কিন্তু হাতে টান পরে তার।
সায়নী তার হাত ধরে বলে
-আজ কেনো,আর কোনো দিনও পালাবো না।
১বছর আগের এসব কথা মনে পড়তেই চোখের কোণে পানি চলে আসে আফরানের।সেদিন বিয়ে করা,একসাথে রাত কাটিয়ে একজন আরেকজনের মাঝে ডুবে যাওয়া,এসব অনুভূতি গুলোই অন্যরকম ছিলো।
সায়নীকে স্বীকৃতি দেওয়ার বদলে কি করে সে আরেকটা বিয়ে করতে পারলো!নিয়তি কি এটাকেই বলে তাহলে….
বিছানা ছেড়ে উঠে যায় আফরান।তার চোখ যায় মুনিরার দিকে।সায়নীর মতো সুন্দরী না হলেও মেয়েটির চেহেরায় অসম্ভব মায়া।ঘুমের মাঝেও হাসি হাসি মুখখানা দেখতে আরো বেশি মায়াবী লাগছে।মুনিরার একবার আশা ভঙ্গ হয়েছে এবারো….
এই মেয়েটার সাথে অন্যায় হবে খুব।কিন্তু উপায় নেই।মায়াবী চেহারায় মায়া করা গেলেও ভালোবাসা শুধু সায়নীর জন্য।
সায়নী তার প্রথম ভালোবাসা ছিলো আর শেষ-ই থাকবে।কিন্তু মুনিরার কি হবে!তাকে ওই গ্রামে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবেনা।
এখানেই কোনো ভালো ছেলের সাথে তার বিয়েটা দিতে হবে।তবে যতটা সহজভাবে আফরান এসব ভাবছে ততটা সহজভাবেই কি সব সমাধান হয়ে যাবে!
সকালে ঘুম ভাঙতেই মুনিরার চোখ যায় বিছানায়।কিন্তু বিছানা শূন্য।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৬টা বাজে।কিন্তু এতো সকালে আফরান কই!মুনিরা সোফা থেকে উঠতেই খেয়াল করে বারান্দার দরজাটা খোলা।আফরানের খোঁজে সে পা বাড়ায় বারান্দার দিকে
-আমার সকল অভিযোগে তুমি,
তোমার মিষ্টি হাসিটা-কি আমি!
আফরানের গানের গলা শুনে থমকে যায় মুনিরা।সে এতো ভালো গান গাইতে পারে তার জানা ছিলোনা।অবশ্য জানবেই বা কি করে!
মাত্র কয়েকদিন হলো তাদের বিয়ে হয়েছে।তার উপর আফরান তার থেকে দূরে দূরে থাকে।একে অপরকে চেনার সুযোগটাও পায়নি।
-উঠেছো তুমি?
আফরানের কথায় ঘোর কাটিয়ে মুনিরা বলে
-আপনি এতো ভালো গান গাইতে পারেন!
-তুমি কখন শুনেছো?
-এইতো এখুনি।
-ওহ।
-আমাকে একটা গান শোনাবেন প্লিজ?
-শুনলেই তো।
-এইটুকু!তাও পেছন থেকে শুনেছি।
-সামনে পেছনে কি আবার?
-মানে ওটা আমার জন্য ছিলোনা।
-তোমার জন্য কখনই আমি গান গাইবোনা,কখনই না।
কথাটি বলে আফরান চলে যায় রুম থেকে আর মুনিরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে থাকে নিজের জায়গায়।
আফরানের মনে সে জায়গা করতে চায় কিন্তু তার মন জুড়ে অন্য কেউ আছে তাকে সরানো কি সহজ হবে!
আর সরানোর চেষ্টা করাও কি ঠিক হবে!
কেনো ঠিক হবেনা!বিয়ের আগে যা হবার হয়েছে,এখন যেহেতু বিয়েটা হয়েই গিয়েছে একটু মানিয়ে নিতে চেষ্টা করতে ক্ষতি কি!আফরান কোনো চেষ্টায় করছেনা বরং তাকে আরো দূরে ঠেলে দেওয়ার প্লানিং করছে সে ভালোভাবেই বুঝতে পারছে।
গ্রাম ছাড়া,ডির্ভোসী মেয়েকে কেউ কি আপন করে নিবে!
না কিছু ভাবতে পারছেনা সে,রাগে ক্ষোভে দুচোখ দিয়ে তার টপটপ করে পানি পড়তে থাকে।
তার এই অবস্থার জন্য দায়ী হলো শুধুই আনাস।আনাস পরপারে চলে না গেলে হয়তো তার এই অবস্থা হতোনা।
হঠাৎ মুনিরা,তার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করে।
-কি হয়েছে তুই কাঁদছিস কেনো!জামাই কিছু বলেছে?
মায়ের কথায় পেছনে ফিরে মুনিরা বলে-
না আম্মা,আনাসের কথা মনে পড়ছিলো।
-২দিন্না ছেলেটার জন্য কান্নার কি আছে মা?
এখন শুধু জামাইরে নিয়ে চিন্তা কর।
-আজ যদি বিয়েটা হতো তাহলে কি তুমি এমন বলতে?মরে গেলো বলেই কি পর হয়ে গেলো সে!আজ তোমাদের জামাই আমাকে বিয়ে করেছে বলেই শুধু সে আপন থাকবে?
মুনিরার মা মেয়ের কথায় খানিকটা বিরক্ত হয়ে কোনো জবাব না দিয়ে হনহন করে বের হয়ে যায় নিজের রুম থেকে।
সকাল ৯টা…..
আফরান অফিসের জন্য তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হতেই হাসির মা এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে
-আব্বাজান তোমারে তোমার আব্বাই ডাকে এখুনি।
-কেনো?
-ওইডা তো আমি জানিনা।
-আচ্ছা যাচ্ছি।বাবা কই?
-খাবার ঘরেই আছে।
ড্রাইনিং রুমে যেতেই আফরান দেখতে পায় সেখানে বাসার সকলেই উপস্থিত রয়েছে।
-বাবা ডেকেছো আমায়?
-হুম আয় বয় আমার পাশে।নাস্তা কর।
-আমি বাইরে করে নিবো আজ।
-সায়নী গরম গরম পরোটা বানিয়েছে,গরুর মাংসের ঝোল দিয়ে খেতেই অসাধারণ লাগছে।

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

আফরান চেয়ার টেনে বাবার পাশে বসতে বসতে বলে
-তাহলে তো খেতেই হবে।সায়নী দাও দাও আমাকেও দাও।
সায়নী একটি বাটি নিয়ে আফরানের সামনে দিয়ে তাতে মাংসের ঝোল দিতে থাকে চামচ কেটে।এদিকে মুনিরার খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো,সে যদি সায়নীর মতো আফরানের পাশে দাঁড়িয়ে তার খাবার বেরে দিতে পারতো!সেই সময় আফজাল খান বলে উঠে
-তোরা হানিমুনে কোথায় যাবি?
কথাটি শুনেই সায়নীর হাত থেকে ঝোলসহ চামচ পড়ে যায় আফরানের প্যান্টের উপর।মুনিরা টেবিলের উপর থেকে টিস্যু নিয়ে আফরানের দিকে এগিয়ে আসার আগেই সায়নী নিজের উড়না দিয়ে আফরানের প্যান্টের উপরে থাকা ঝোল মুছতে মুছতে মুছতে বলে-
ওহ আমি খেয়াল করিনি।গরম ছিলো?
-নাহ ঠিক আছে।তুমি ঠিক আছো?
চোখে পানি টলমল করছিলো সায়নীর,গলাটা আটকে আসছিলো।এমন একটা কথা শুনে ঠিক থাকা যায়!কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে বলে
-শরীরটা ভালো লাগছেনা।
আফজাল খান সায়নীর উদ্দেশ্যে বলেন,
-মা তুই যা,আরাম কর একটু।
-জ্বী খালু।
সায়নীকে দূর্বল লাগছে দেখে মুনিরা হাত থেকে টিস্যু-টা টেবিলের উপর রেখে বলে
-আপু আমি তোমাকে তোমার রুমে নিয়ে যাই চলো।
-না তুমি এখানে থাকো,আমার তেমন কিছু হয়নি।
সায়নী চলে যেতেই আফজাল খান আবার বলে
-কোথায় যাবি হানিমুনে?
মুনিরা জানে আফরান তার সাথে যাবেনা কিন্তু এটা তার বাবাদের সামনে বললে তারা যে অনেক কষ্ট পাবে।
-বাবা আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো।পরে কথা হবে এই ব্যাপারে।
মুনিরার মা-বাবা থাকার কারণে আফরান তার বাবাকে হানিমুনের ব্যাপারে কিছু না বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে যায় ।
এদিকে মুনিরার মায়ের কাছে পুরো বিষয়টি হটকা লাগে।
তার মেয়ে চোখে কি কিছু দেখেনা!সায়নী আর আফরান দুজনকে নিয়েই তার সন্দেহ হচ্ছে।নাহ পুরো বিষয়টা তার জানতেই হবে।
নাহলে মুনিরাকে নিয়ে চিন্তা থেকেই যাবে।মেয়েটা এমনিতেই অনেক আঘাত সহ্য করেছে।
আফরান ওয়াশরুমের নাম করে সায়নীর রুমে আসে।রুমে কোথাও না পেয়ে বারান্দায় যেতেই দেখে সায়নী বারান্দার এক কোণায় জড়োসড় হয়ে মেঝেতে বসে কেঁদে চলেছে।তার এমন অবস্থা দেখে আফরানের বুকের ভেতরটা মচরে উঠে।
আস্তে আস্তে তার পাশে গিয়ে সেও বসে পড়ে মেঝেতে।
-আমি কি গিয়েছি নাকি যাবো বলেছি?এতো কান্নাকাটির কি আছে শুনি!
তার কথায় সায়নী নিজের চোখ উড়না দিয়ে মুছতে মুছতে বলে
-যাও না,গেলেও কি হবে আর।
-কি হবে?
-ঠ্যাং একটা ভেঙ্গে দিবো।তারপর দেখবো ওই
মেয়ে ঠ্যাং ভাঙ্গা ছেলের সাথে থাকে কিনা।
সায়নীর কথায় হো হো করে হেসে উঠে আফরান।উৎসুক দৃষ্টিতে সায়নীর দিকে তাকিয়ে বলে
-আমার পা একটা না থাকলে তুমি কি থাকবা আমার সাথে?
-একটা কেনো!২টাই না থাকলেও থাকবো।
-তাহলে কোনো চিন্তা নেই, তিনটা ঠ্যাং-ই ভেঙ্গে দিও।
মুচকি হেসে সায়নী বলে
-তিনটা পা কি আছে নাকি তোমার!
-ও তাইতো!
সায়নী নিজ থেকে তার পাশে গিয়ে বুকে মাথা রেখে বলে
-আমি আর কিছু সহ্য করতে পারবোনা।
-করতে হবেনা।মুনিরার বাবারা চলে গেলেই আমার বাবাকে জানাবো সব।
আফরানের বুকে মুখ লুকিয়ে সায়নী নীরবে কাঁদতে থাকে।যতদিন যাচ্ছে আফরান কে হারানোর ভয় তার মাঝে কাজ করছে।
আফরান কি হারাতে দিবে নিজেকে সায়নীর থেকে!
এদিকে মুনিরা এগিয়ে আসতে থাকে সায়নীর রুমের দিকে।বেশ দূর্বল দেখাচ্ছিলো তাকে।এখন শরীরের কি অবস্থা দেখে আসা উচিত।
.
#_____________চলবে________________
.

#।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here