বৈধ সম্পর্ক পর্ব ৫

#বৈধ_সম্পর্ক
#পর্ব_৫
Writer: #Saji_Afroz

. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
-আসতে পারি সায়নী আপু?
মুনিরার ডাকে আফরানের বুক থেকে মাথা তুলে তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়ে সায়নী।
ফিসফিস করে আফরানকে বলে
-তুমি এখানেই থাকো।
সায়নী চোখ দুটো মুছে রুমে গিয়ে বলে
-আরে ভেতরে আসো মুনিরা।
মুনিরা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে বলে
-তোমাকে দেখতে এসেছি আপু।
-কি দেখতে এসেছো?
-তোমাকে দূর্বল লাগছিলো তো….
-ওহ।তেমন কিছুনা ঠিক আছি।
-আমি কিন্তু তোমাকে তুমি করে বলা শুরু করেছি খেয়াল করোনি তুমি।
-তাই নাকি!হুম আসলেই খেয়াল করিনি।
-বলতে পারবো?
-বলেতো ফেলেছ।
-সরি আপু তোমার থেকে জিজ্ঞেস করে বলার দরকার ছিলো।
-হেহে,মজা করছিলাম।বলিও।
-আচ্ছা তুমি বিশ্রাম করো, আমি যাই।
-হুম।
মুনিরা এক পা বাড়াতেই বারান্দা থেকে ফোনের রিং টুনের আওয়াজ শুনতে পায়।
পেছনে ফিরে সায়নীকে বলে
-বারান্দায় কি তোমার ফোন?
সায়নী কিছু বলার আগেই সোজা হেটে চলে যায় বারান্দায় মুনিরা।আফরান কে ফোন হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে যায় সে।
-একি!আপনি এখানে?
থতমত খেয়ে আফরান বলে-
হুম আমিতো তোমার আগেই এসেছি।
-কেনো?
-তুমি যে কারণে এসেছো।মানে সায়নীকে দেখতে।তোমরা কথা বলছো বলে ডিস্টার্ব করিনি আর।
-ওহ।
আর কিছু না বললেও মুনিরার মনে প্রশ্ন আসে,সায়নীও কেনো তাকে বললো না যে আফরান এখানে আছে!
পরক্ষণেই মনে আসে বলেও কি হতো,হয়তো বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিলো দুজনে।
-মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে এতোদিন থাকা ভালোনা মুনিরার আম্মা।
স্বামীর কথায় খানিকটা বিরক্ত হয়ে মুনিরার মা জবাব দেন-
এতোদিন কই থাকলাম।এক রাত থাকছি এখনো।
-আমাদের চলে যাওয়া উচিত।
-না উচিত না।স্বাভাবিক অবস্থায় বিয়েটা হয়নাই।মেয়েকে সব কিছু গুছাতে, সাহায্য করার জন্যই আছি আমি।শ্বাশুরীতো নাই,
কে শেখাবে!
-সায়নী আছেতো।মেয়েটা বেশ ভালো।
-ভালো না ঘোড়ার ডিম।
-কেন?সে কি করছে আবার?
-উফ এতো কথা বলতে পারবোনা,তোমার ইচ্ছা হলে তুমি যাও।আমি যাচ্ছিনা কোথাও।
কথাটি বলেই মুনিরার মা বের হয়ে যায় রুম থেকে।এমনিতেই মেয়েকে নিয়ে টেনশনে আছে তার উপর স্বামীর প্যাঁচাল তার মোটেও ভালো লাগছেনা।যতদিন না মেয়ের একটা গতি হচ্ছে এই বাড়িতে,ততদিন সে কোথাও যাবেনা।
-বাবা আসবো?
আফজাল খান বিছানায় বসে পত্রিকা পড়ছিলেন।আফরানের গলার স্বরে পত্রিকাটা এক পাশে রেখে বলেন-
হুম আয়।
-কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে।
-হুম বল।
-আমি এখন মুনিরাকে নিয়ে হানিমুনে যেতে পারবোনা।
-কিন্তু কেনো?
-তুমিতো জানোই এই বিয়েটা আমি করতে চাইনি।ওর সাথে আমি এখনও সহজ হতে পারিনি।
-একসাথে সময় কাটালে তোদের মাঝে…
-প্লিজ বাবা আমাকে জোর করবেনা।
দরজায় চোখ পড়তেই আফজাল খান দেখলেন সায়নী দাঁড়িয়ে রয়েছে দরজার পাশে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে।
-দাঁড়িয়ে আছিস কেনো মা?ভেতরে আয়।
সায়নী ভেতরে গিয়ে চায়ের কাপটা খালুর দিকে বারিয়ে বলে
-তোমার চা খালু।
আফজাল খান কাপটা হাতে নিয়ে লম্বা একটা দম ফেলে বলেন-
ভালোই হলো তুই এসেছিস মা।তুই বুঝাতো আফরানকে।
-কি বোঝাবো খালু?
সায়নীর দিকে তাকিয়ে আফরান বলে
-কিচ্ছুনা,ওসব কথায় কান দিওনা।
আফজাল খান এবার একটু কড়া গলায় বলেন-
তোকে বিয়েটা করতে অনুরোধ করেছিলাম।
জোর করে দিইনি।তাই মুনিরার দায়িত্ব তোর,ওকে খুশি রাখার দায়িত্বও তোর।ওর মা আমাকে নিজ থেকে এসে বলেছেন যে,মুনিরার মনের অবস্থা ঠিক নেই।বাইরে কোথাও থেকে ঘুরে আসলে হয়তো ভালো লাগবে তোর সাথে।উনারা যদি মনে কষ্ট নিয়ে গ্রামে ফিরে যায় এটাকি ভালো দেখাবে?
আফরান কে চুপ থাকতে দেখে শান্ত গলায় বলেন-
যা বাবা ওকে নিয়ে ঘুরে আয়।অন্তত কাছে কোথাও?
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে সায়নী খালুর উদ্দেশ্য বলে
-যাবে আফরান।
আফরানের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে
-খালুর কথা রাখো,যাও তুমি।কাছে কোথাও।
খানিকটা বিরক্ত নিয়েই আফরান বলে
-বিকেলে বের হবো,মুনিরাকে তৈরি হয়ে থাকতে বলিও।বসন্তের দিনে কেমন করে সেজে বের হওয়া যায় আফরানের সাথে….
আফরান মুনিরাকে নিয়ে বের হবে তা শোনার পর থেকেই কিভাবে সাজবে তা নিয়ে ভেবেই চলেছে সে।তার সব শাড়ি আলমারি থেকে বের করে বিছানার উপরে ছড়িয়ে রেখেছে।কোন শাড়ি-টা পরবে বুঝতেই পারছেনা।অনেক চিন্তা করে বাসন্তী রঙের একটা শাড়ি ঠিক করলো।বসন্তের এমন দিনে বাসন্তী রঙের শাড়ি,বাহ খারাপ না!
আচ্ছা,কপালে একটা টিপ দিলে-কি মানাবে তাকে!
ফোন বাজছে সায়নীর।আফরানের ফোন….
-হ্যালো?
-মুনিরাকে বের হতে বলো,আমি গাড়িতে আছি।
-বাসায় ঢুকবেনা?
-নাহ।
-ঠিক আছে।
-সায়নী,আমি আসলে…
-কিছু বলতে হবেনা,আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।
-একটা কথা রাখবা?
-কি?
-কাল বের হবা আমার সাথে?
-কাল কি করে…
-প্লিজ সায়নী না করবেনা।
-ঠিক আছে।
-আচ্ছা আপদ টাকে পাঠাও এখন,তাড়াতাড়ি গিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসি।
-হেহে।
মুনিরা গাড়ির পাশে যেতেই আফরান গাড়ির দরজা খুলে দেয়।সে ভালোভাবে তাকায় না মুনিরার দিকে।সারা রাস্তায় তারা চুপ ছিলো।গাড়ি গিয়ে থামায় একটা মেলার পাশে।
-আমরা কোথায় এসেছি?
-বসন্ত মেলায়।প্রতিবার হয় এই মেলাটা।সায়নী কখনো বাদ দেইনি,প্রতিবার আসতো।ও
আমাদের বাসায় আসার পরতো আমরা এক সাথেই আসতাম।
-ইশ!আগে বললে আপুকে নিয়ে আসতাম।
-হুম।চলো এখন।তোমার আম্মাদের জন্য কিছু নিও।
শপিং মলেও নিয়ে যাবো তোমাকে।
-না থাক।এখানে ঠিক আছে।
মুনিরার সাথে আফরানের আর কোনো জায়গায় যাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা হলোনা।
মেলার ব্যস্ত পরিবেশে মুনিরারও নিজেকে একা মনে হবেনা।কোনো রেস্টুরেন্ট বা পার্ক এ গেলেতো একসাথে বসে কথা বলতে থাকতে হতো।
-এই চুড়ি গুলো সুন্দর না?
আফরান ভালোভাবে না দেখেই বলে-
হুম।
-সায়নী আপুর জন্য এগুলা।
সায়নীর নাম শুনে মুনিরার হাতে থাকা চুড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে-
ওর এই রংটা পছন্দ নয়।
-কোন রঙ পছন্দের?
-এটা ছাড়া যেকোনো রঙের নিতে পারো।
-আচ্ছা।
আফরানের ফোন আসে।পকেট থেকে মোবাইল-টা বের করে দেখে সায়নীর ফোন।
একটু দূরে গিয়ে রিসিভ করে সে।
-হ্যালো জান পাখিটা?
-বউ কই?
-ফোনের ওপারে।
-আরে মুনিরা কই?
-আছেতো,কেনাকাটা করছে।
-কোথায় গিয়েছো?
-বসন্ত মেলায়।
বসন্ত মেলার কথা শুনে সায়নীর মেজাজটায় বিগড়ে যায়।যে দুইজন মানুষের জন্য তার জীবনের রঙ হারিয়ে গিয়েছে তারাই নাকি বসন্ত মেলায় গিয়ে রং-তামাশা করছে!
প্রতিবার সায়নী যায় এই মেলায় আফরানের সাথে।এই মেয়ে ওর জায়গাটা এভাবে আস্তে আস্তে দখল করে ফেলবে!
-কি হলো সায়নী?!চুপ কেনো?
-তোমার সাথে সবসময় আমি বসন্ত মেলায় যেতাম।হোক সেটা খালাতো বোন হিসেবে।গতবছর তুমি সুইডেন ছিলে বলে আমি যাইনি।তুমি ওই মেয়েকে নিয়ে….
-সায়নী আমিতো শুধু..
-হুম তুমি যা করো তা শুধুই শুধু!
-কথাতো শোনো।
-এখুনি বাসায় আসো।কিচ্ছু শুনতে চাইনা আমি।
ফোনের লাইন কেটে দেয় সায়নী।আফরান পকেটে মোবাইল ঢুকিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখে মুনিরা নেই।কই গেলো এই মেয়েটা!
চারদিকে ভালোভাবে চোখ পড়তেই দেখে ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খেয়ে গল্প করছে সে।বেশ হাসি খুশি দেখাচ্ছে তাকে।বাসন্তী রঙের শাড়ি,হাতে রেশমি চুড়ি,
খোপা করা চুল,কপালে একটা টিপ।মনে হচ্ছে বসন্ত শুধু মুনিরার জন্যই এসেছে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে আফরান।মানুষ ২য় বারও প্রেমে পড়ে তবে তার বেলায় সে এটা হতে দিতে পারেনা।
কিন্তু এই মেয়েটার জন্য তার এতো মায়া কেনো কাজ করছে হঠাৎ করে!নিষ্পাপ মুখখানি দেখে হয়তো।
সায়নীর কথা মনে হতেই মুনিরার পাশে গিয়ে আফরান বলে-
চলো বাড়ি ফিরতে হবে।
-মাত্রই তো এলাম।
-আমার আসলে ভালো লাগছেনা।
-আচ্ছা যাবো কিন্তু….
-কি?
-ওই যে দেখুন পিঠে বানাচ্ছে।
-তো?
-চলুন না খাই।
-ওসব পিঠাই পেট খারাপ হবে।
-মোটেও না।জানেন আমাদের গ্রামেও অনেক বড় করে বসন্ত মেলা হয়।আমরা বান্ধবীরা পিঠা খাওয়ার প্রতিযোগিতা দিতাম।সবসময় আমি জয়ী হতাম।
-হাহা তাই নাকি! **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

-জ্বী,চলুন না খাই।
-তুমি খাবে,আমাকে জোর করবেনা।
-ঠিক আছে।
মুনিরা দোকানে গিয়ে বলে-
চাচা গরম গরম পুলি পিঠা দাওতো।
-কয়টা দিমু আফা?
-উম্ম…এক প্লেটে চারটে দাও।
-আইচ্ছা।
মুনিরা প্লেট হাতে নিয়ে গরম পুলি পিঠা ফু দিয়ে দিয়ে খাচ্ছে।মুনিরাকে দেখে আফরানেরও লোভ হলো খেতে।কিন্তু সেতো বলে ফেলেছে খাবেনা।
-এই যে হা করেন।
-কেনো?
-বুঝতে পারছি আপনার ইচ্ছে করছে খেতে।
কথা না বাড়িয়ে আফরান মুখ খুলে মুনিরার হাত থেকে পিঠায় এক কামড় বসায়।
-উম্ম..বেশ মজা মজাতো।
সায়নীর হাতের পিঠে ছাড়া
এখানেও এতো মজার পিঠে পাওয়া যায় জানতাম না।
মুনিরা হেসে বলে-
নিন একটা নিন,পুরো খান।
-একটা কেনো!অনেক গুলোই খাবো।
বাড়ি ফিরে আফরান খুঁজতে থাকে সায়নীকে।
কিন্তু সায়নী তাকে ধরাই দিচ্ছেনা।আফরান জানে,কাছে থাকলে রাগ করে থাকতে পারেনা সায়নী।দূরে থাকলেও রাগ ভাঙানোর কৌশল তার জানা আছে।
হাতে থাকা প্যাকেট-টা রেখে দেয় বিছানার উপরে।সায়নীর জন্য আগেই এনে রেখেছিলো সে উপহার।এসব দেখলে সায়নী কিছুতেই রাগ করে থাকতে পারবেনা।
একটু পরেই সায়নী নিজের রুমে গিয়ে বিছানার উপরে প্যাকেট দেখতে পায়।
প্যাকেট-টি খুলে সে।একটা লাল সিল্ক এর শাড়ি,এক জোড়া লাল পাথরের চুড়ি আর একটি কার্ড যাতে লেখা কাল সকাল ৮টাই তোমার জন্য সমুদ্রের পাড়ে অপেক্ষা করবো।আমি জানি তুমি আসবে।
সায়নী কার্ড-টা দূরে ফেলে দিয়ে বলতে থাকে
-আমি যাবোনা,কিছুতেই না।
মুনিরা মায়ের সাথে দেখা করতে যেতেই মা জিজ্ঞেস করেন-
কিরে?কেমন ঘুরলি?জামাই যত্ন নিছেতো?
মায়ের কথায় সামান্য লজ্জা পেয়ে মুনিরা বলে
-হুম আম্মা,ভালো লাগছে অনেক।
মুনিরার মা কিছুটা নিশ্চিত হন।মেয়েকে খুশি দেখে তার অস্থীরতা অনেকটায় কাটে।
কিছুসময় চুপ থেকে কোনো সংকোচ ছাড়াই আবার বলেন-
যত তাড়াতাড়ি পারিস বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে নে।একটা বাচ্চা হলে সম্পর্ক এক ধাপ আগায়।
জামাইয়ের মনে তোর উপর,তোদের বাচ্চার উপর আলাদা একটা টান থাকবে।
মুনিরা এখন বেশ লজ্জা পেয়ে মায়ের পাশ থেকে উঠে বলে-
বেশি বেশি বলো তুমি আম্মা,বিয়ে হতে না হতেই আবার বাচ্চাও!উফ গেলাম আমি।
মুখে এসব বললেও আইডিয়া-টা মন্দ লাগেনি মুনিরার।কিন্তু আফরান তো তার ধারে কাছে ঘেষতেই দেইনা।এক সাথে এক বিছানাই এখনো থাকতে পারেনি আর বাচ্চা!সেতো অনেক দূরের কথা।আচ্ছা যদি হয় তার নাম কি দিবে,আগে ছেলে হবে নাকি?উফ সে আবারো বোকা বোকা কথা ভাবতে শুরু করেছে।কেনো যে তার মাথায় মা এসব কথা ঢুকালো!
রুমে পা রাখতেই মুনিরা দেখতে পায় আফরান বিছানা আর সোফার ঠিক মাঝখান-টাই দাঁড়িয়ে আছে।
-আপনি না শুয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?
-তুমি কোথায় শোবে?সোফায় নাকি বিছানায়?
মুনিরা দরজা বন্ধ করতে করতে বলে
-বাহ!আমার ইচ্ছা জানার জন্য অপেক্ষা করছেন!কালকের মতো বিছানা ছেড়ে দিবো ভেবে?
তার কথায় খানিকটা চমকে যায় আফরান।এই মেয়ের আবার কি হলো!
মুনিরা বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে এক পাশে বসতে বসতে বলে-
আজ আমি বিছানাই থাকবো।তবে আপনি চাইলেও থাকতে পারেন।আমার কোনো অসুবিধা নেই।
আফরান কিছু না বলে লাইট অফ করে বালিস নিয়ে চলে যায় সোফায়।
মুনিরা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে শুয়ে পড়ে বিছানায়।
রাত ২টা……
কারো কান্নার শব্দে আফরানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।ডিম লাইটের আলোয় দেখা যাচ্ছে মুনিরা বসে আছে।তাহলে কি সে কাঁদছে?কিন্তু কেনো!
আফরান সোফা থেকে উঠে রুমের লাইট জ্বালিয়ে এগিয়ে যায় মুনিরার দিকে।
মুনিরা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ চেপে কান্নার শব্দ না হওয়ার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আফরান তার পাশে বসে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে-
এতো রাতে এসবের মানে কি?

-কথা কেনো বলছোনা?
আকষ্মিকভাবে মুনিরা আফরানকে জড়িয়ে ধরে মুখটা তার বুকের মাঝে লুকিয়ে অনবরত কাঁদতে থাকে।তার কান্নায় আফরানের পরণের শার্ট-টা ভিজে যাচ্ছে।তার চোখের পানি আফরান-কে দূর্বল করে দিয়েছে তাই সে মুনিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে-
কি হয়েছে জানতে পারি?
কান্না জরিত কণ্ঠে মুনিরা বলে-
আমাকে সবাই জুতোর মালা পরিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরাচ্ছে।
আফরান বুঝতে পারে মুনিরা স্বপ্ন দেখছে।
নিজেকে মুনিরার থেকে ছাড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে পাশে থাকা ছোট টেবিল টার কাছে গিয়ে গ্লাসে পানি ঢালে সে।মুনিরার কাছে এসে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলে-
এই নাও পানি খাও,ভালো লাগবে।
আফরানের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে মুনিরা ঢকঢক করে পুরো গ্লাসের পানি সব খেয়ে ফেলে।
-আর খাবে?
-নাহ।
আফরান পানির গ্লাসটি তার হাত থেকে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে এসে মুনিরার খুব পাশেই বসে হাত দিয়ে তার চোখের পানি মুছে দেয়।
-স্বপ্ন দেখেছো তুমি।ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
-কিন্তু এটাতো সত্যি হতে চলেছে।
লম্বা একটা দম ছেড়ে আফরান বলে-
এটা কখনই সত্যি হবেনা।তোমাকে ওই গ্রামে ফিরে যেতে হবেনা।এমনেই বেড়াতে যাবে তবে সম্মানের চোখেই দেখবে সবাই।
-সত্যি?
-হুম।দেখি এবার ঘুমাও।
আফরানের কথায় আশ্বাস পেয়ে মুনিরা নিশ্চিতে শুয়ে পড়ে।তার মানে আফরান তাদের সম্পর্ক-টা আগাতে চেষ্টা করবে!
একদিন সেও তার ভালোবাসার মানুষ হতে পারবে,এক বিছানায় থাকতে পারবে,আফরানের নিজস্ব সব কাজ সে করবে।এসব ভাবতেই হাসি ফুটে মুনিরার মুখে।
এদিকে তার হাসিমাখা মুখ দেখে আফরান বুঝতে পারে মুনিরা এখন স্বাভাবিক আছে।
তাই সে নিজের জায়গায় চলে যায়।
-লাইট অফ করবেন না?
-থাক তোমার ভয় লাগবে।
মুনিরাকে নিয়ে আফরানের এই ছোট্ট চিন্তাটাও তার মনে আনন্দের সৃষ্টি করছে।
তার সুখের দিনকি আসতে শুরু করবে তবে!
এদিকে আফরান চিন্তায় পড়ে যায়।কিভাবে সে মুনিরার একটা গতি করবে যাতে সে আফরানের থেকে দূরে যায় কিন্তু ওই গ্রামে ফিরে যেতে না হয়।মুনিরার জন্য এমন কাউকে সে কি পাবে!
সকাল ৬টা।
সায়নীর ফোনে মেসেজ আসে।
-৭টাই একটা লাল গাড়ি থাকবে বাসার সামনে।লাল শাড়ি পরে লাল গাড়ি করে চলে এসো লালবানু।অপেক্ষায় থাকবো।
সায়নী তার ফোন-টা বন্ধ করে দেয়।ঠিক করে,না সে আজ কিছুতেই যাবেনা।আফরানকে একটা শাস্তি দিতেই হবে।.

.
সকাল সকাল সমুদ্র দেখার মাঝেও আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে।আরো ভালো লাগে যদি প্রিয় মানুষটি সাথে থাকে।আফরানের ভালো লাগাটা দ্বিগুণ করতে সায়নী-কি আসবে!
অনেক চেষ্টা করেও আজ না এসে পারেনি সায়নী।আফরান তার সমস্ত মন জুড়ে রয়েছে।
কি করে তাকে কষ্ট দিবে সে,তাও আজকের মতো বিশেষ দিনে!
-আফরান?
পেছনে ফিরতেই সায়নীকে দেখতে পায় আফরান।
তার দেওয়া লাল শাড়ি পরে এসেছে সে।খানিকক্ষণ তাকে দেখে কাছে গিয়ে আফরান বলে-
লাল বানুর চোখও লাল কেনো?
-কেনো হতে পারে?
-কষ্ট পেয়েছো?আমি তোমার জায়গা কাউকে দিবোনা।
-আফরান আমি আর পারছিনা।কখন যাবে মুনিরার বাবারা!যাওয়ার নাম ঠিকানা নেই কোনো তাদের।উনারা যাওয়ার আগেই মনে হচ্ছে ওই মুনিরা তোমাকে কাবু করে ফেলবে।
-মনে হয় পারবে?
-না পারার কি আছে!আমিতো পুরোন হয়ে গিয়েছি….
-একটা থাপ্পড় দিবো ধরে।
-শুধু থাপ্পড় কেনো!মেরেই ফেলোনা তুমি আমাকে,মেরেই ফেলো।
শেষের কথাটা প্রায় চিৎকার করেই বলে সায়নী মাটিতে বসে পড়ে।এই অবস্থায় সায়নীকে দেখে আফরানের চোখেও পানি চলে আসে।কেনো সে সেইদিন গ্রামে গিয়েছিলো?কেনইবা মুনিরাকে বিয়ে করেছিলো?ছেড়ে দিবে ভেবে!পারছে কই!
সকলের চোখে বৈধ বউকে ছাড়া এতোটা সহজ নয় তার জানা ছিলোনা।কিভাবে কি হয়ে গেলো!এসবের মাঝে যদি সায়নী তাকে ছেড়ে দেয়!
হাটু গেড়ে আফরানও মাটিতে বসে পড়ে সায়নীর পাশে।সায়নীকে বুকে জড়িয়ে বলে
-শুভ ভালোবাসা দিবস।তবে আমার জন্য তোমাকে ভালোবাসার জন্য বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন নেই।
কিন্তু প্রতিদিন তো স্পেশাল কিছু করার সুযোগ হয়না।তাই একটা দিবস উপলক্ষে আজকের দিনে না হয় এক সাথে সময় কাটিয়ে স্পেশাল কিছু করলাম।
সায়নী নিজেকে আফরানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে অভিমানী স্বরে বলে-
আচ্ছা তাই!শুধু ভালোবাসা দিবসের কথা মনে আছে তোমার?
-হেহে কথা শেষ হয়নি।আরো আছে।
-কি?
-শুভ বিবাহ বার্ষিকী।
-মনে আছে তোমার?
-হুম।আজকের দিনটা কি ভূলে যাওয়া সম্ভব!আগামীবার থেকে সকলের সামনে, সকলের সাথে উদযাপন করবো।
-সত্যি?
-একদম।
চোখ দুটো মিটিমিটি করে খুলে মুনিরা।
কালকের রাতটি তার জন্য অনেকটায় স্পেশাল ছিলো।
আফরান তাকে আশ্বাস দিয়েছে।এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কি হতে পারে!বিছানা ছেড়ে উঠতেই চোখ যায় তার সোফার দিকে।
আফরানকে দেখতে পায়না সে।আবারো কি তিনি বারান্দায় আছেন?আজকে একটা গান শুনেই ছাড়বো,
আর গানটা আমার জন্যই হবে।এসব ভেবে মুনিরা বারান্দায় যেতেই তা শূন্য দেখতে পায়।আফরান কে না পেয়ে হতাশ হয়ে রুম থেকে বের হয় সে।কেনো যেনো এখুনি আফরানের সাথে তার সময় কাটাতে বড্ড ইচ্ছে করছে।হয়তো বাসায় কোথাও আছে ভেবে সারাবাড়ি খুঁজে মুনিরা।এতো সকালে গেলো কই!হঠাৎ মুনিরার মাথায় আসে আফরান,সায়নীর রুমে নাতো!দুজনে হয়তো গল্প করছে।তবে তাদের গল্পের আসরে তিনজন হলে মন্দ হয়না।
-আসবো সায়নী আপু?
কয়েকবার ডেকে সাড়া না পেয়ে সামান্য দরজাটা ফাঁক করে মুনিরা।ইদানিং সায়নীকে দূর্বল লাগে।ঠিক আছেতো সে!
দরজার ফাঁক দিয়ে সায়নীকে দেখতে না পেয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে সে।
এ কি!রুমে সায়নী নেই।বারান্দায়ও দেখে নেয় মুনিরা।এতো সকালে কই গেলো সায়নী!
হঠাৎ মুনিরার চোখ পড়ে বিছানার উপরে রাখা কার্ড-টার উপরে।কৌতুহলবশত হাতে নিয়ে দেখতে থাকে সে।একপর্যায়ে খুলে দেখে তাতে কি লেখা আছে।
-কাল সকাল ৮টাই তোমার জন্য সমুদ্রের পাড়ে অপেক্ষা করবো।আমি জানি তুমি আসবে।
এইরকম কার্ড সায়নীকে কে দিতে পারে?
হুম পাবেল ছাড়া কেউনা।তাহলে পাবেলের সাথেই আছে সায়নী!ইশ কি রোমান্টিক ওরা।ভালোবাসা দিবসের দিন এক সাথে আছে সমুদ্রের পাড়ে।আর আমার উনি!একদমই আনরোমান্টিক।আনরোমান্টিক কি একেবারেই ফালতু। **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
এই সকাল সকাল কোথাও হাওয়া হয়ে গিয়েছে।আচ্ছা ছাদে যায়নি-তো!
সায়নীর চোখ দুটো রুমাল দিয়ে বন্ধ করে তাকে সমুদ্রের পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায় আফরান।
-উফ…হয়েছে তোমার?চোখ খুলি?
-খুলো।
চোখ থেকে কাপড় সরিয়ে সায়নী কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।
ছোট-খাটো একটি অন্যধরনের রেস্টুরেন্ট।
চারপাশে রঙ-বেরঙের বেলুন দিয়ে সাজানো।মাটিতে ছিটানো ফুলের পাপরি।মাঝখানে একটি টেবিল,তাতে একটি কেক আর লাল গোলাপের তোড়া রাখা।
এসব দেখে সায়নী আনন্দিত হয়ে যায়।অবাক চোখে আফরানের দিকে তাকিয়ে বলে-
এসব আমার জন্য?
-হুম আমার লাল বানুর জন্য।সামান্য খুশি করার চেষ্টা।
-আর কাউকে দেখছিনা যে?
-আরে ম্যাম,বুকিং করে ফেলেছি।
-কি বলো!
আফরান কিছু বলার আগেই গান বেজে উঠে-
তুমি দূরে দূরে আর থেকোনা,
এই চোখে চেয়ে দেখোনা,,
তুমি ভালোবেসে আমাকে,,
ওই হৃদয়ে বেঁধে রাখোনা….
-তুমি মিউজিক এর ও ব্যবস্থা করেছো!এতো কিছু!কিন্তু আমিতো কিছুই করিনি,কিছু আনিনি তোমার জন্য।
-তুমি চাইলেই কিন্তু কিছু দিতে পারো আমাকে।
-কি?
সায়নীর কাছে গিয়ে তার গালে দুহাত দিয়ে ধরে কপালে একটা আলতো করে চুমু খেয়ে আফরান বলে-
আজ কি আমি একটা পেতে পারি?
-কি?
-না বুঝলে আমিও আর কোনোদিন দিবোনা আর কি।
আফরানের মুখে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে পালিয়ে যেতে চাইলে আফরান তার হাত ধরে টেনে নিজের বাহুডোরে বন্দী করে সায়নীকে।কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে-
হয়ে যাক একটা কাপল ডান্স?
এদিকে আফরান-কে কোথাও দেখতে না পেয়ে মুনিরা ফোন দেয় আফরানকে।কিন্তু ফোন বন্ধ পেয়ে আফরানের জন্য তার চিন্তা হতে শুরু করে।সকাল সকাল মানুষটা গেলো কই!ফোনটাও বন্ধ।সায়নীকে কি বলে গিয়েছে?তাকে নিশ্চয় বলেছে।সায়নীকে কি একটা ফোন দিয়ে দেখবে সে?কিন্তু সায়নীতো পাবেলের সাথে এখন।তাকে বিরক্ত করাতো ঠিক হবেনা।
আফরানের সাথে সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরে সায়নী।আফরান ওদিক থেকেই অফিসে চলে যায়।কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দেয় মুনিরা।লাল শাড়িতে আসলেই সায়নীকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।
-ওয়াও আপু!তোমাকে একদম লালবানু লাগছে।
মুনিরার কথায় থমকে যায় সায়নী।লালবানু তাকে আফরান ডাকে।মুনিরা কি করে জানলো!
প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে-
লাল বানু মানে?
-তোমার রুমে গিয়েছিলাম তোমার সাথে গল্প করতে,ওখানে পাবেল ভাইয়ার কার্ডটা পেয়েছি।উপর থেকে দেখতে এতোটা সুন্দর লেগেছে ভেতরে কেমন দেখার লোভ সামলাতে পারিনি।
স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে বাসার ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সায়নী বলে-
ওহ।
-আপু উনি কোথায় জানো?সকাল থেকেই উনাকে দেখছিনা।ইয়ে মানে উনাকে ঘুম থেকে উঠে না দেখলে ভালো লাগেনা ইদানিং।
মুনিরার কথায় সায়নীর মেজাজটায় বিগড়ে যায়।বলে কি এই মেয়ে!৭দিন হয়নি বিয়ে হয়েছে,সকালে ঘুম থেকে উঠেই নাকি আফরানকে দেখতে হবে।এসব পটানি টাইপের কথা আফরান শুনলেতো আকৃষ্ট হয়ে পড়বে মুনিরার উপর।যতই সায়নীকে ভালোবাসুক সে,ছেলের মনতো!
-তোমাকে নিশ্চয় বলে গিয়েছে?
দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ সংযত করে সায়নী বলে-
কেনো তোমাকে বলেনি?
-বলেনি বলেইতো জিজ্ঞেস করলাম।আমাকে কিছু বলে নাকি!তুমি জানলে বলোনা প্লিজ।
-বন্ধুর সাথে বাইরে গিয়েছে,ওখান থেকেই অফিসে যাওয়ার কথা।
-ফোনটা অফ।অফিসের নাম্বারটা বাবার কাছ থেকে চাইতে লজ্জা লাগছিলো।তুমি দিবা প্লিজ?
সায়নী বেশ অবাক-ই হলো মুনিরার কাণ্ড দেখে।ওরে আমার লজ্জাবতীরে….
তার নাকি নাম্বার খুঁজতে লজ্জা লাগে!
সায়নী আর কিছু না বলে নিজের মোবাইল থেকেই আফরানের অফিসের ফোনে ডায়াল করে।
-হ্যালো আফরান?
-কি ব্যাপার মিস করছো?
-মুনিরা মিস করছে।
-মানে?
-ওকে না বলে চলে গিয়েছো কেনো?জানোনা সকালে ঘুম থেকে উঠে তোমাকে দেখতে হয় ওর।
-তোমাকে বলেছে সে এসব?
-না আমি বানিয়ে বলছি।
মুনিরার এসব কথায় যে সায়নীর মেজাজ খারাপ হয়েছে আফরান বুঝতে পারে।শান্ত গলায় বলে-
মুনিরাকে ফোনটা দাও।
সায়নী ফোন মুনিরার দিকে এগিয়ে দিতেই সে ফোনটা কানে লাগিয়েই বলে উঠে-
এইরকম আর না বলে যাবেন না।বুঝলাম যে আমি ঘুমোচ্ছিলেন তাই বিরক্ত করেন নি।কিন্তু পরেরবার থেকে বলেই যাবেন।
এসব কথা সায়নীর সামনে বলার কোনো মানে হয়!এমনিতেই মেয়েটার মনে তাকে হারানোর ভয় জমে আছে, এসব কথা শুনেতো ভাববে মুনিরার সাথে সম্পর্কটা এগুচ্ছে।ধমকের সুরেই আফরান বলে-
এই মেয়ে কখন তোমাকে বলে বের হয়েছি আমি!আর এসব কথা তুমি সায়নীকে কেনো বলতে গিয়েছো?আমি বাইরে থাকা অবস্থায় আর কখনও ফোন করবেনা আমাকে, কোনো দরকার হলেও না।
-আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো?
আর কিছু না বলে আফরান ফোনের লাইন কেটে দেয়।
মুনিরার কথা শুনে সায়নী বুঝেছে আফরান তাকে কটু কথা শুনিয়েছে।তার ছলছল দৃষ্টি সায়নীর ভালো না লাগলেও মনটা শান্ত লাগছে।
সন্ধ্যা ৭টা….
সকাল সকাল বের হওয়ার কারণে আফরানের শরীরটা ভালো লাগছেনা।তাই সে বাসায় ফিরে আসে।হাসির মা দরজা খুলতেই জিজ্ঞেস করে-
মুনিরার আম্মারা চলে গিয়েছেন?
-না আব্বাজান,আছেতো।
-ওহ।
বিরক্তি ভাব নিয়ে নিজের রুমে পা রাখতেই দেখতে পায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির কুচি ঠিক করছে মুনিরা।আজ সে সায়নীর মতই সেজেছে চুল খোলা রেখে।
আজ প্রথম মুনিরাকে খোলা চুলে দেখছে আফরান।সায়নীর মতো লম্বা চুল না হলেও খোলা চুলে সুন্দর-ই লাগছে তাকে।কিন্তু তার সায়নীর মতো সাজার কারণ-টা কি!
-এসবের মানে কি?
আফরানের কণ্ঠ শুনে চমকে যায় মুনিরা।
পেছনে তার দিকে তাকিয়ে বলে-
আপনি এতো তাড়াতাড়ি?
-তোমার সমস্যাটা কি?তাড়াতাড়ি বের হলেও সমস্যা আসলেও সমস্যা!
-আমিতো এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম।
-করবেনা।আর হঁ্যা,সায়নীর মতো সাজে তোমাকে মানায়নি।ওর মতো হওয়ার চেষ্টা করবেনা।
মনটা ছোট হয়ে যায় মুনিরার।অভিমানী সুরে বলে-
ঠিক আছে।
আফরান বুঝতে পারে কষ্ট পেয়েছে সে।পরিস্থিতি ঠিক করতে আবার বলে-
নিজের মতোই সাজবা।খোপা করে,মাথায় কাপড় দিয়ে রাখলে ভালোই লাগে। **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

কথাটি বলেই আফরান ড্রয়ার থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের উদ্দেশ্য চলে যায়।আর মুনিরা খুশিতে খোপা করতে থাকে।আফরানের যেমন পছন্দ তার-ই তেমন পছন্দ।
-আজ নাকি ভালোবাসা দিবস মুনিরার আব্বা!
-এগুলা কি আমাদের জন্য এসেছে নাকি!
-হুম তুমিতো এসব বলবাই।মানুষতো শখ করেও বউকে এই দিনে কিছু একটা দেয় আর তুমি….
-কিছু দিতে দিবস লাগে?
-দিবস ছাড়াও তো দাওনা।তাই তোমাদের মতো কিপ্টাদের জন্যই এই দিবস বের করছে যাতে একদিন হলেও বউরে একটু সময় দিতে পারো,কিছু একটা উপহার দিতে পারো।কিন্তু তোমরা এই দিনেও কিপ্টানি করবা।কিছু দেওয়ার ভয়ে বলবা,’আমার জন্য প্রত্যেকদিন দিনই ভালোবাসা দিবস।’
-হাহাহা,তুমি পারোও মুনিরার মা!বুড়ো বয়সে…..
-বুড়ি যখন ছিলাম না তখনও দাওনি।
তাই এখন শোক তুলি আরকি!
-আচ্ছা।
-আমার মেয়ের কপাল টাও আমার মতো।নতুন বিয়ে হইছে।জামাই কোথাও নিয়ে যায় নাই,উল্টো নিজে অফিস চলে গেছে,মেয়েটারে কিছু দেয়নাই ও।
-দিছে হয়তো।
-দেয়নাই।দিলে তোমার মেয়ে এসে বলতো।
ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্য আসছিলো আফরান।
মুনিরার মায়ের শেষের কথাটি তার কান স্পর্শ করে।আসলেইতো!মেয়েটার কি দোষ!এমন দিনে সে আরো খারাপ ব্যবহার করতে থেকেছে মেয়েটার সাথে যা ঠিক হয়নি।
আফরান আর অপেক্ষা না করে বাসার বাইরে চলে যায়।
বাড়ির পাশের গিফট শপ থেকে হলেও মুনিরার জন্য কিছু আনা উচিত।আজ মুনিরাকে কড়া কথা বেশি শুনিয়েছে,তার জন্য একটু মন ভালো করতে একটা উপহার দিতেই পারে।তাছাড়া উপহার না দিলে মুনিরার মা এটা নিয়েও তার বাবাকে অভিযোগ করতে পারে।
সায়নীর ফোন বাজছে।পাবেলের ফোন এসেছে।যা রিসিভ করতে তার একদমই ভালো লাগছেনা।না চাইতেও রিসিভ করে সে।
-হ্যালো?
-কেমন আছো?
-ভালো।আপনি?
-আছি ভালোই।
-ফুফুরা ভালো আছেন?
-হুম আছেন।আসলে দরকারে ফোন দিয়েছি তোমাকে।
-কি দরকার?
-মা চাচ্ছেন,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা সেরে ফেলতে।বিয়ের কথা বলতে আমরা তোমাদের ওখানে আসবো।
কথাটি শুনে বুকটা ধুক করে উঠে সায়নীর।
লাইন কেটে ফোনটা বন্ধ করে দেয় সে।
কি বলবে সে পাবেল কে!ফুফু কতো আশা করে আছেন।সবার বিশ্বাস নিয়ে আর কতো খেলবে সে!কি করা উচিত তার!
-মুনিরা এটা তোমার জন্য।
ছোট একটা প্যাকেট আফরান তার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে দেখে বেশ অবাক হয় সে।
-কি হলো নাও!
-এটা আমার জন্য?
-হুম,তোমার জন্য।
আফরানের হাত থেকে প্যাকেট-টি নিয়ে অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে মুনিরা বলে-
সত্যি?না মানে,কেনো?
-ভালো লেগেছে তাই।
কথা না বাড়িয়ে আফরান রুম ছেড়ে চলে যায়।এদিকে মুনিরা তাড়াতাড়ি করে প্যাকেট-টি খুলে।প্যাকেটের ভেতর থেকে একটা ছোট বক্স বের করে।বক্সটি খুলেই দেখে এক জোড়া পায়েল!যা দেখে খুশিতে মুনিরার চোখে পানি চলে আসে।পায়েল জোড়া হাতে নিয়ে দেখতে থাকে সে।
-এতো সুন্দর পায়েল জোড়া কে দিয়েছে তোকে?
-আম্মা তুমি!ভেতরে আসো।
মেয়ের কথায় মুনিরার মা ভেতরে গিয়ে তার পাশে বসে বলে-
কে দিয়েছে?
-তোমাদের জামাই।
-কি!আমি আরো তোর বাবাকে বলছিলাম আমাদের জামাই তোর বাবার মতো পানসে।
এখন দেখছি আমার ধারণা ভূল।ভালোবাসা দিবসে তোকে সময় দিতে না পারলেও উপহার দিয়েছে।
মায়ের কথা শুনে মুনিরার মনে আরো এক ধাপ আশা জেগে উঠে।মুখে কিছু না বললেও আজকের দিনে আফরান তাকে উপহার দিয়েছে মানে তাদের সম্পর্কটা এগুচ্ছে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর সায়নী তার ফোনটা অন করে ডায়াল করে পাবেলের নাম্বারে।ঠিক করে আজ সে পাবেল-কে সব বলবেই।

.
#_____________চলবে________________
.

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here