#বৈধ_সম্পর্ক
#পর্ব_৮
Writer: #Saji_Afroz
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
পাবেলের কথা শুনে আফজাল খান তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন-
কি বলছো তুমি?
-আমাকে ক্ষমা করবেন প্লিজ।
-তুমি কি বলছো তুমি জানো?
-হুম।কিন্তু কিছু করার নেই।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে আফজাল খান-
পাবেল বাবা কি হয়েছে, আমাকে বলো তুমি?
মা-বাবা মরা মেয়েটাকে কি জবাব দিবো আমি?শেষ মুহূর্তে এসে এসব কি বলছো তুমি!
-আমি আম্মুদের নিয়ে এখুনি বাসায় চলে যাচ্ছি,দয়া করে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।
পাবেল তার পাশ থেকে উঠে চলে যেতে চাইলে আফজাল খান তার একটা হাত ধরে ফেলেন।ছলছল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলেন-
মেয়েটাকে কি জবাব দিবো আমি?এই বুড়ো মানুষটার কথাও কি ভাববেনা?
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে আফজাল খানের হাত সরিয়ে পাবেল কিছু না বলেই বেরিয়ে পড়ে রুম থেকে।
.
.
এদিকে মুনিরা জ্বরের ঘোরে সেই তখন থেকে সায়নীর সাথে আবোলতাবোল বলে চলেছে….
-আপু উনি আমাকে কার জন্য ভালোবাসেনা?আমাকে ছেড়ে দিবে বলেছে,কিন্তু আমি যেতে চাইনা আপু।উনার সাথে থাকতে চাই।
মুনিরাকে শান্তনা দিতে সায়নী বলে-
ঠিক আছে থেকো,এখন একটু ঘুমাও দেখি।
-ঘুম আসেনা আপু,ঘুমালেই গ্রামের মানুষের কথা মনে পড়ে।কতো অপমান করেছিলো তারা আমায়।আজ আমার নাম থেকে অপয়া শব্দটা সরতে গিয়েও সরছেনা।উনিও আমাকে ছেড়ে দিবেন।আর কতো অপমান সহ্য করবো আমি!
সায়নী খেয়াল করলো মুনিরা কথা গুলো বলার সময় তার চোখ দিয়ে পানি বেয়ে বেয়ে পড়ে বালিশ ভিজে যাচ্ছে।আজ সায়নীরও এই মেয়েটার জন্য মায়া হচ্ছে।
হঠাৎ সায়নীর হাত ধরে মুনিরা বলে উঠে-
আপু প্লিজ তুমি উনাকে বুঝাও না!তোমার কথা শুনে উনি।আমাকে ছেড়ে না দিতে বলোনা প্লিজ।
-বলবো,যদি তুমি চুপচাপ ঘুমাও এখন।
-সত্যি?
-হুম।
.
.
পাবেল তার মাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।তার মাকে কারো সাথেই সে কথা বলতে নিষেধ করেছে।ভাগ্যিস তার বাবা গতকাল রাতেই এক বন্ধুর বাসায় চলে গিয়েছিলেন।নাহলে তাকে মায়ের মতো বোকা বানিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতোনা।
দরজার খুব কাছাকাছি যেতেই আফরানের গলার স্বর শুনতে পায় তারা।
-পাবেল তোমরা কোথায় যাচ্ছো এতো সকালে?
আফরানের কথায় পেছনে ফিরে পাবেলের মা বলেন-
কি জানি বাপু!ছেলেটার কি হলো বুঝলাম না।
আফজাল ভাইয়ের সাথেও দেখা করতে নিষেধ করলো।
-কিন্তু কেনো?
মাকে কিছু বলতে না দিয়ে পাবেল বলে-
আফরান আমাদের এখন যেতেই হবে।
পরে কারণ-টা না হয় জানবে।
-অন্তত সকালের নাস্তাটা করতে?
মৃদু হেসে পাবেল বলে-
খেয়েছি ভাই এতোদিন অনেক।কিন্তু এখন সম্ভব না।এখন যে যেতেই হবে।
.
.
আফজাল খান হাতের কাগজটা বিছানায় রেখে উঠে দাঁড়ালেন।খুবই অস্বস্তি হচ্ছে তার।
পাবেলের সাথে সায়নীকে বিয়ে দিবেন বলে সায়নীর জন্য অন্য কোথাও সম্বন্ধ দেখেননি।
মেয়েটাকে কতো বড় মুখ নিয়ে বলেছিলেন,পাবেল ভালো ছেলে তাকে খুব ভালো রাখবে।আর সেই পাবেল তাদের এতোবড় ধোঁকা দিয়ে চলে গেলো!মেয়েটার চোখাচোখি হবেন কি করে তিনি?কি বলবেন?শেষ মুহূর্তে এসে পাবেল বিয়েটা করবেনা বলেছে…
মানতে পারবেতো সায়নী এটা!
নাহ আর কিছু ভাবতে পারছেন না আফজাল খান।দু’চোখে ঝাপসা দেখছেন।
.
.
মুনিরাকে ঘুম পাড়িয়ে সায়নী ড্রয়িং রুমে এগিয়ে যেতেই আফরানকে দেখতে পায়।বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে।
-কি হয়েছে আফরান?
সায়নীর গলার স্বরে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আফরান বলে-
পাবেল এতো সকালে তার মাকে নিয়ে চলে গিয়েছে তাদের বাসায়।
-কি বলছো!এই সকালে!
-হুম।
-ফুফু চলে গেলেন!আমাকে ডাকোনি কেনো?
সকালের নাস্তাটাও করেননি।
-ডাকার সুযোগ কই পেলাম।সেতো আমাকেও বলেনি,চলে যাওয়ার সময় আমি দেখতে পেয়েছিলাম।থাকতে বলেছি কিন্তু তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়েছে।
-কালকের রাতের কথাগুলোর জন্য কষ্ট পেয়েছে বোধহয় পাবেল।
-কি কথা?
-আমি পাবেল কে সব জানিয়ে দিয়েছি।
-কি?আমাদের কথা?
-হুম।
-বাবাকে যদি বলে দেয়?
-আমাদের কথা বলবেনা।তবে এই বিয়েটা সম্ভব নয় তা বলবে।কারণ-টা কি বলতে নিষেধ করেছি।
-কি বলো!
-আরে হুম।
-যাক একটা দিক সামলানো গেলো।
-জ্বী আপনি এবার মুনিরাকে আমাদের মাঝখান থেকে বের করারও ব্যবস্থা করেন।
-হেহে,করবো।
-খালু সব মেনে নিবে আমার বিশ্বাস।
-বাবাকে যদি পাবেল কিছু বলে থাকে তাহলে বাবা এতো চুপচাপ কেনো!
-মন খারাপ হয়েছে হয়তো।তুমি যাও,দেখে আসো।
-হুম যাচ্ছি।ও হ্যাঁ?
-কি?
-মুনিরার কি খবর?
-ঘুমোচ্ছে এখন।
.
.
আফরান এগুতে থাকে বাবার রুমে…..
পাবেলের চ্যাপ্টার বন্ধ হয়েছে এটাও কম কিসের!সায়নীর সাথে অন্য কাউকে নিয়ে এখন আর কোনো চিন্তায় থাকলোনা।
মুনিরার বাবারা গেলেই তার বাবাকে সবটা জানাতে পারবে।
-বাবা আসবো?
আফজাল খান হাত দিয়ে ইশারায় আফরানকে ভেতরে আসতে বলেন।
কথা বলার শক্তি নেই তার।
আফরান এক পা বাড়াতেই আফজাল খান মাটিতে লুটে পড়েন।বাবাকে হঠাৎ এভাবে পড়ে যেতে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় আফরান।
অসহায় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে
চিৎকার করে বলে উঠে-
বাবা!
.
.
-ডাক্তার আমার বাবার কি অবস্থা?
-উনি হার্ট এট্যাক করেছেন।সঠিক সময়ে নিয়ে আসা না হলে বড় কিছু হতে পারতো।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
.
.
আফজাল খান যখন মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন সেই সময় আফরানের চিৎকার শুনে আফজাল খানের রুমে মুনিরা ছাড়া সকলে উপস্থিত হয়।বাবাকে এমন অবস্থায় দেখে আফরান পাথর হয়ে যায়।সায়নী কোনমতে নিজেকে সামলিয়ে মুনিরার বাবা ও তাদের বাড়ির ড্রাইভারের সাহায্যে আফজাল খানকে হাসপাতাল আনতে সক্ষম হয়।মুনিরা অসুস্থ থাকায় তার সাথে তার মাকে থাকতে হয় বাসায়।
.
.
.
বেশ কিছুদিন পর………
আফজাল খানকে বাড়িতে আনা হয়।এ কয়েকদিন রাত-দিন এক করে সায়নী তার সেবা করেছে।মুনিরা সায়নীকে সাহায্য করতে চাইলেও সায়নী করতে দেয়নি।আফজাল খানের এই অবস্থার জন্য সায়নী নিজেকে দায়ী মনে করে।সেদিন যদি পাবেল এসব না বলতো তাহলে হয়তো তার খালু আজ সুস্থ থাকতো।আর পাবেলকে এসব বলার জন্য সে নিজেই বলেছিলো।
সে কি করে ভূলে গিয়েছিলো যে এক বছর আগেই ডাক্তার তাদের সাবধান করেছিলো যেকোনো মুহুর্তে আফজাল খানের খারাপ কিছু হতে পারে।সেদিনের কথা শুনে তারা এই এক বছর বিয়ের কথা গোপন করে রেখেছে।আর আজ এক বছর পর এসেই সেদিনের ভয়টা সত্যি হয়ে গেলো!
আফজাল খানের পায়ের কাছে বসে পা দুটো ধরে সায়নী অনবরত কাঁদতে থাকলো।
আফজালে খানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।সায়নীকে পায়ের কাছে দেখতে পেয়ে তার পাশে ডাকেন তিনি।সায়নী তার পাশে গিয়ে বসতেই তিনি বলেন-
আমি তোর জন্য পাবেলের চেয়েও ভালো ছেলে এনে দিবোরে মা।ওই পাবেল একটা বজ্জাতের হাড্ডি।আমার এতো ভালো মেয়েটাকে বিয়ে করবেনা বলছে।
-খালু তুমি এসব নিয়ে ভেবোনা একদম।
-আমার লকারে তোর বাবার সম্পত্তির দলিল,মায়ের গহন এসব রয়েছে।আমার কিছু হলে ওগুলো নিয়ে নিস।এতোদিন তো আমি সামলিয়ে রেখেছি।
সায়নী তার হাত ধরে বলে-
সবসময় তুমি সামলাবে।তোমার কিচ্ছু হবেনা,
আমিও তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবোনা বলে দিলাম।আচ্ছা এসব এখন বাদ দাও আমি তোমার জন্য কিছু নিয়ে আসি,খেতে হবেতো তোমাকে।
-হুম।
-কি খাবা বলো?
-তোর যা খুশি বানিয়ে আন।
-উম্ম…চিকেন স্যুপ?
-ঠিক আছে।
সায়নী রুম থেকে বেরুতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আফজাল খান।তিনি কি কোনো ভূল করে ফেলেছেন!সায়নীকে নিজের কাছেই রাখতে পারতেন তিনি।শুধুমাত্র পাবেলের সাথে বিয়ে ঠিক ছিলো বলে এই ব্যাপারে কোনোদিন ভেবে দেখেননি।আজ যদি মুনিরার সাথে আফরানের বিয়েটা না হতো তাহলে সায়নীকে….
নাহ যেটা এখন হওয়ার না সেটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই।
.
.
রান্নাঘরে পা রাখতেই সায়নীর মাথাটা ঘুরে উঠে,মনে হচ্ছে এখুনি পড়ে যাবে সে।
কিন্তু খালুর জন্য কিছু একটা বানাতে হবে।
খালুর দায়িত্ব যে সে নিয়েছে।
ভেতরে ঢুকে চুলার পাশে যাওয়ার আগেই গলগল করে বুমি করে দেয় সে।
রান্নাঘরে মুনিরা বসে তরকারি কুটছিল।
সায়নীর হঠাৎ এমন অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি তার পাশে যায় সে।
.
.
-বাবা,আপু সবার শরীর খারাপ।এই সময়ে আমাকে ফেলে চলে যাবে তুমি আম্মা?
আর কটা দিন থাকোনা।
-তোর চাচার এই সময়ে শরীর খারাপ করে বসে থাকতে হয়ছে কি করবো বল!নাহলে ওই সায়নীর একটা গতি না করে আমি কি যেতাম!
-উফ আম্মা!তুমি শুধু আপুকে নিয়ে এসব কথা বলো কেনো!উনি তোমার কি ক্ষতি করেছে!
-ওরে বলদ তোর ক্ষতি করবে ওই মেয়ে।আমারতো মনে হয় ওই মেয়েই পাবেল কে শিখায় দিছে বিয়ে না করতে আর এসব ভাই সাহেব কে বলতে।নাহলে তুই বল শেষ সময়ে এসে উল্টানোর কারণ কি?
-এতো কিছু আমি জানিনা।আর হুম আম্মা আপুর নাম আছে একটা,সায়নী।ওই মেয়ে ওই মেয়ে করবেনা একদম।
-হুম এখন ভালো লাগবেনা মায়ের কথা।যেদিন সব হারাবি বুঝবি।
-মানে?
-সায়নীকে এর আগেও আমি কয়েকবার বুমি করতে দেখছি।সারাক্ষণ মাথা ঘুরে তার,দূর্বল লাগে।এসব কিসের লক্ষণ জানিস?
-কিসের?
-মা হওয়ার লক্ষণ।
-আম্মা!দোয়া করে থামো তুমি।চলেই যাও তুমি।তোমার এখানে থাকার দরকার নেই।
-যাবো যাবো,তবে সময় থাকতে সায়নীর পেটে কার বাচ্চা খবর নে।নাহলে কপাল পুড়বে তোর।
-আম্মা!
-আমি যাই,ব্যাগ গুছাই।জামাই এর সাথে দেখা হবেনা।একটু পরেই বের হয়ে যাবো,নাহলে পৌঁছাতে দেরী হয়ে যাবে।
মা কিসের ইঙ্গিত দিয়েছে তাকে?সায়নী এমন মেয়েই নয় বিয়ের আগে খারাপ কিছু করবে।তাছাড়া সায়নীর পেটে সন্তান আসলেও তার কেনো কপাল পুড়বে!
মা কি তাহলে তার স্বামীর সাথে সায়নীর….
নাহ,এসব কি ভাবছে সে।এমন জঘন্য চিন্তা সে করতে পারেনা।এটা অন্যায়।সায়নী তাকে নিজের বোনের মতোই দেখে।
এসব ভাবনা মাথা থেকে ফেলে বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে মুনিরা।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বিকাল ৫টা।
আফরান এখন অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে বাবার অসুস্থতার জন্য।তাই মুনিরা তার জন্য কিছু বানাতে এগিয়ে যায় রান্নাঘরের দিকে।
সন্ধ্যা ৭টা……
আফরান বাসায় ফিরে এসে ফ্রেশ হয়েই বাবার রুমে যায়।দরজায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ভেতরে ঢুকে বাবার পাশে বসে সে।ভেবেছিলো তার বাবা ঘুমোচ্ছে।কিন্তু তিনি এমনিতেই চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন।
আফরানের উপস্থিতি বুঝতে পেরে চোখ জোড়া খুলে দেখলেন তিনি,তার ছেলে অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে।
-বেঁচে আছিতো বাবা,মরে গেলে না হয় কাঁদিস।
বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে সে-
বাবা!এসব হাবিজাবি কথা তুমি একদম বলবা না।কিচ্ছু হবেনা তোমার।
-মনে হচ্ছে মরে গেলেই ভালো হতো।সায়নীর মুখোমুখি হতে বড্ড লজ্জা করে।
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আফরান বলে-
তোমার কি কিছু করার আছে এতে!
-হয়তো না।কিন্তু এখন আছে।
-কি?
-ওর জন্য একটা ভালো পাত্র ঠিক কর বাবা।
এটার দায়িত্ব তোকে দিলাম আমি।
-হুম।
.
.
বাবার সাথে কথা বলা শেষে নিজের রুমে আসে আফরান।বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে এই অবস্থায় বাবাকে কিভাবে বলবে সায়নীর কথা!এদিকে সায়নীর জন্য পাত্র দেখতে বললেন তিনি।সায়নীকে পেয়েও কি সে পাবেনা!
-এই নিন আপনার কফি।
মুনিরার গলার স্বরে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয় আফনার।কফির মগটা হাতে নিয়ে বলে-
ধন্যবাদ।
-আমি আপনার জন্য পায়েস বানিয়েছি।নিয়ে আসি?
খানিকটা বিরক্ত নিয়ে আফরান বলে-
আমি কি রোগী নাকি পায়েস খাবো!
-হাহাহা…
শুধু রোগীরা খায় নাকি পায়েস?
-আমার কাছে তাই মনেহয়।আমি পায়েস খাইনা।তবে হুম বাবা খুব পছন্দ করেন।
তাকে দিতে পারো।
.
কথাটি বলেই আফরান রুম থেকে বের হয়ে চলে যেতে লাগলো।
.
মুনিরার নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে।সায়নীকে জিজ্ঞেস করলে নিশ্চয় তার পছন্দ,
অপছন্দ বলতে পারতো সে।
খামোখা পায়েস বানিয়ে লাভ কি হলো!
.
.
ড্রয়িংরুমে যেতেই সায়নীকে সোফায় বসে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেখে আফরান তার পাশে গিয়ে বসে।
মিশিকা ফোন দিয়েছে সায়নীকে।সে আফরানকে দেখে মিশিকাকে ফোনে বলে-
মিশি আমি তোর সাথে পরে কথা বলবো।
-আচ্ছা।
ফোন রেখে কিছুক্ষণ আফরানের দিকে তাকিয়ে সায়নী বলে উঠে-
আজ আমার জন্য খালুর এই অবস্থা।
কফির মগটা হাত থেকে টেবিলের উপর রেখে আফরান বলে-
সবই নিয়তির খেলা।নিজেকে দোষ দিওনা।
-নিয়তির খেলায় যদি আমাদের আলাদা হয়ে যেতে হয়?
-সেটা কখনো সম্ভব নয়।
-মুনিরার আম্মারা আজ বিকেলে চলে গিয়েছেন।
-হঠাৎ?
-মুনিরার চাচা অসুস্থ।
-ওহ।
-খালুকে বলার দরকার নেই এখন আমাদের বিষয়ে।
-হুম।
.
মুনিরা ড্রয়িংরুমে এসে দেখে আফরান আর সায়নী বসে কথা বলছে।
সেও তাদের পাশে গিয়ে বসতে বসতে বলে-
আমিও কি আপনাদের সাথে আড্ডা দিতে পারি?
মৃূদু হেসে সায়নী বলে-
কেনো নয়!
-জানো আপু উনি নাকি পায়েস খায়না।
-হুম জানিতো।আফরানের ঝাল খাবার অনেক পছন্দের।
-ইশ!আগে তোমাকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হতো।
-কেনো?
-আরে আমি উনার জন্য পায়েস বানিয়ে ফেলেছি।আগে জিজ্ঞেস করলে ঝাল কিছুই না হয় বানাতাম।
-ও আচ্ছা।
সায়নীর বেশি কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।
মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার।বসা থেকে উঠতে উঠতে আফরানের উদ্দেশ্যে বলে-
তোমরা গল্প করো,আমি একটু শোবো।
চিন্তিত দৃষ্টিতে আফরান তার দিকে তাকিয়ে বলে-
এই অসময়ে শোবে কেনো?শরীর খারাপ লাগছে?
-নাহ,এমনিতেই ভালো লাগছেনা।
-আমি নিয়ে যাবো তোমাকে রুমে?
-আরেনা,আমি পারবো।
-ঠিক আছে।
.
কয়েক পা বাড়াতেই সায়নী ফ্লোরে পড়ে যায় অজ্ঞান হয়ে।সায়নীকে পড়ে যেতে দেখে আফরান আর মুনিরা দৌড়ে এগিয়ে যায় তার দিকে।সায়নীকে কয়েকবার ডাকার পর সাড়া না পেয়ে আফরান তাকে কোলে নিয়ে সায়নীর রুমের দিকে এগুতে থাকে। **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
মুনিরাও তার পিছে পিছে যেতে থাকলো।
.
কয়েক মিনিট পর….
সায়নী জ্ঞান ফিরে দেখতে পায় আফরান তার ঠিক পাশে বসে আছে।চোখ দুটো ছলছল করছে তার।
তাকে দেখে সায়নী বলে উঠে-
ভয় পেয়েছো?
মুচকি হেসে আফরান বলে-
না পাইনি।
-সেতো দেখতেই পাচ্ছি।
-তুমি শরীরের একদম যত্ন নাওনা।এর আগেও বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলে।কাল তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।অফিসে যাবোনা।
-অফিস থেকে এসেই নিয়ো।বাসায় ভালো লাগছেনা,রাতে রিক্সায় চড়বো তোমার সাথে।
.
সায়নী এতোক্ষণ খেয়াল করেনি রুমে মুনিরাও আছে।একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে সে।
তাকে দেখে সায়নী আবার বলে-
খালুর শরীর খারাপ না হলে মুনিরাকেও নিয়ে যেতে বলতাম।এখন বাসায়তো কারো থাকতে হবে উনার দেখাশোনার জন্য।
.
.
রাত ১২টা….
সায়নীর রুম থেকে নিজের রুমে আসে আফরান।মুনিরাকে না ঘুমিয়ে সোফার উপরে বসে থাকতে দেখে বলে-
ঘুমাওনি কেনো?
-আসছেনা।
-আজ সোফায় শোবে?
-হুম আজ আমার পালা।
-ঠিক আছে,আমি তাহলে খাটে শুয়ে যাই।
-ঠিক আছে।আপুর শরীর কেমন এখন?
-ভালোতো বলছে।
-ঘুমিয়েছে?
-হুম।
.
মায়ের কথা গুলো কানে বাজছে মুনিরার।
আজ আফরান আর সায়নীর কথাগুলো শুনে তার কেমন যেনো লাগছে।তাদের মাঝে আসলেই কি অন্য কোনো সম্পর্ক আছে!
মায়ের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে কি করবে সে!
.
.
.
সকাল ৭.০০টা…..
ঘুম থেকে উঠে সায়নী আজ আবার ড্রয়ারের কাছে গিয়ে ডির্ভোস পেপারটা দেখতে থাকে।
এতোদিন তারা মুনিরার মা-বাবা চলে যাওয়ার অপেক্ষা করছিলো।এখন চলে গিয়েও খালুকে বলতে পারছেনা তাদের সম্পর্কের কথা।আজ যদি খালুর শরীরটা ভালো থাকতো…..!
ড্রয়ারের ভেতর থেকে সায়নী একটি লকেট বের করে,যে লকেট-টি তাকে আফরান উপহার দিয়েছিলো।হাতের মাঝে লকেটটি নিয়ে চুমু খায় সে।
সেই সময় সায়নীর ফোন বেজে উঠে।টেবিলের উপর পেপার আর লকেটটি রেখে এগিয়ে যায় বিছানার দিকে।বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটি নিয়ে দেখলো মিশিকার ফোন।
সায়নী ফোন রিসিভ করে বারান্দার দিকে যেতে যেতে বলে-
সরি কাল আমি তোকে কল ব্যাক করতে পারিনি।আসলে শরীরটা ভালো ছিলোনা।
-কি হয়েছে?
-তেমন কিছু নয়।তুই কি বলতে চেয়েছিলি কাল?
-পাবেল তো আমাকে ফোন দেয়নি।ওর ফোন নাম্বারটা আমাকে দে।
-ওরে ওরে!!মেয়ে হয়ে কল দিবি?
-উফফ..মজা নিবিনা।
-আচ্ছা নিলাম না।কিন্তু ফোন নাম্বার দিতে পারিনা।মাইন্ড করতে পারে।তুই বরং ফেবু আইডি নে।যদি কাজ না হয় তখন না হয় নাম্বারের কথা ভাবা যাবে।
-চলবে,বল।
-ইংরেজি তে লিখবি,পাবেল আহম্মেদ।ছবি আছে দেখতে পাবি।
-তুইনা ফেবু ইউজ করিসনা?
-আফরানতো করে।ওকে দিয়েছিলো,দেখেছি তখন।
-ওকে,থ্যাংকইউ বান্ধবী।
.
মিশিকার সাথে কথা বলা শেষে রুমে পা বাড়াতেই থমকে যায় সায়নী।
টেবিলের উপরে রাখা ডির্ভোস পেপার আর লকেটটা মুনিরার হাতে দেখে সে।সায়নীকে দেখে ডেবডেব করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মুনিরা।টেবিলের উপরে হাত থেকে পেপার আর লকেট রেখে সায়নীর পাশে গিয়ে বলে-
তুমি আমার ভালো আপু!তুমি??
-মুনিরা তুমি যা দেখেছো…
-বিশ্বাস করতে পারছিনা আমি।আমার আর উনার ডির্ভোস পেপার,উনার আর তোমার ছবি দিয়ে লকেট তোমার কাছে।বাহ!
আমাকে আম্মা অনেক আগে থেকেই তোমাকে নিয়ে বলেছিলো যে তোমাকে তার সুবিধার লাগেনা।আমি তার কথা শুনিনি।
আজ দেখছি সত্যি….!
-মুনিরা…
-তোমাদের মাঝে কিছু থেকে থাকলে আমাকে কেনো ঠকালে বলো?কেনো এতোদিন বলোনি!তাহলে আমি উনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম না আর।
-বলতে চেয়েছিলাম তোমাই।
-কি চেয়েছো!এই মেয়েটা তোমাকে কতটা আপন ভেবেছে তুমি জানো?আর তুমি ওর ঘর ভাঙ্গতে বসে আছো!
-আমাদের আগে থেকেই…
-কি আগে থেকে!সম্পর্ক ছিলো?মানলাম ছিলো।কিন্তু উনার বিয়ের পর কি তোমার সরে যাওয়া উচিত ছিলোনা!আরে আমার বিশ্বাসের মান রাখার জন্য হলেও তুমি দূরে থাকতে উনার থেকে।
-শুনো…
একপ্রকার চেঁচিয়ে মুনিরা বলে উঠে-
কি শুনবো কি আমি!এখন তো তুমি উনার বাচ্চার মাও হতে যাচ্ছো।
-বাচ্চা!
-হুম বাচ্চা।লজ্জা করেনা তোমার?এভাবে উনার সাথে অবৈধ সম্পর্ক করতে?
.
কথাটি শুনে সায়নী নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে কষে একটা চড় বসিয়ে দেয় মুনিরার গালে।
সায়নীর এমন কাণ্ডে মুনিরা স্তব্ধ হয়ে যায়।
মুনিরাকে শান্ত অবস্থায় দেখে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস নিয়ে সায়নী বলে-
আমি কোনো অবৈধ সম্পর্কে জড়ায়নি।এক বছর আগেই আমার আর আফরানের বিয়ে হয়।
সায়নী কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় মুনিরা।
প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে সায়নীর দিকে তাকাতেই সায়নী বলে-
হুম এটা সত্যি।তুমি নিজের গুলোই বলে যাচ্ছো শুধু।অথচ তুমি জানো কোন পরিস্থিতিতে আফরান তোমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে।আর কি যেনো বলছিলে আমি কেনো সরিনি!আমি ওর প্রথম বউ।আমি কেনো সরবো!
মুনিরা এখনো কিছু বলছেনা,
শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।
.
সায়নী আবার বলতে শুরু করে-
বুঝতে পারছোনা এখনো?
আমি তোমাকে শুরু থেকেই সবটা খুলে বলছি।
.
মুনিরাকে শুরু থেকে সবটা খুলে বলে সায়নী।
সবটা শুনে কিছু না বলে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমের দিকে এগুতে থাকে মুনিরা।
.
.
.
বিছানার উপর বসে আছে মুনিরা।প্রাণ থেকেও যেনো নেই তার।একটু আগে যা শুনেছে তা কি সত্যি!
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আফরান মুনিরার উদ্দেশ্যে বলে-
অফিস যাবো একটু পরে।সায়নীর শরীরতো খারাপ,নাস্তা আজ তুমি দাও।
বিছানা ছেড়ে উঠে আফরানের সামনে গিয়ে মুনিরা ছলছল চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে-
সায়নী আপু আপনার প্রথম বউ?
মুনিরার এমন প্রশ্নে চমকে যায় আফরান।
মুনিরা হঠাৎ এই প্রশ্নটা করেছে কেনো!ও কি কিছু জেনে গিয়েছে!
আফরান কিছু বলার আগেই মুনিরা বলে উঠে-
হুম আমি সবটা জেনে গিয়েছি।আপনারা এক বছর আগেই বিয়ে করেছেন।
– **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
-একটা প্রশ্নই শুধু করবো।আমি কি আপনার মনে আপনার জন্য আলাদা কোনো জায়গা বানাতে পারিনি?
আফরানকে চুপ থাকতে দেখে মুনিরা কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে।
মুনিরার এমন অবস্থা দেখে তাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য আফরান নিচু হয়ে নিজের পায়ে ভর দিয়ে হাটু গেড়ে তার পাশে বসে বলে-
দেখো মুনিরা যা হয়েছে অন্যায় হয়েছে আমি জানি।কিন্তু…
আফরানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মুনিরা হঠাৎ তাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে-
আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।আমি আপুকে হিংসা করবোনা।কারণ আপুকেও আমি বোনের মতো ভালোবাসি।দয়া করে আমাকেও থাকতে দিন আপনার পাশে।যেভাবেই বিয়েটা হোক আমিও আপনার বউ।
.
আপাতত মুনিরাকে শান্তনা করার দরকার।পরে না হয় বুঝানো যাবে।এসব ভেবে আফরান তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে-
ঠিক আছে তুমি যা বলো তাই হবে এখন শান্ত হও।
.
এদিকে মুনিরার কি অবস্থা তা দেখার জন্য তাদের রুমে আসে সায়নী।কিন্তু আফরান ও মুনিরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে চেঁচিয়ে বলে উঠে-
আফরান!
সায়নীকে দেখে আফরান ও মুনিরা দুজনি মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ায়।সায়নীর পাশে গিয়ে মুনিরা বলে-
আপু আমাকে মাফ করে দাও।অনেক কিছু বলেছি তোমাই না জেনে।
-এখনতো জেনেছো।এখন তোমার করণীয় কি নিশ্চয় জানো?
মুনিরা হঠাৎ করেই সায়নীর পা ধরে বলতে থাকে-
তোমাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়োনা আমায়।এই বাসার যেকোনো একটা কোনায় আমি পড়ে থাকবো।আমিও যে উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি আপু।
.
আফরানের দিকে তাকিয়ে দেখে সায়নী,আফরানের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।এই পানি কি মুনিরার জন্য!কিন্তু সে আফরানের ভাগ কাউকে দিতে পারেনা,কিছুতেই না।
মুনিরাকে উঠিয়ে সায়নী বলে-
মনে হচ্ছে আমি তোমাদের মাঝে দাঁড়াল হয়ে দাঁড়িয়েছি এখন।আমার চোখের সামনে আফরানের জীবনে অন্য কারো উপস্থিতি আমি মেনে নিতে পারবোনা।তবে একটা কাজ করতে পারবো।নিজেই অনেক দূরে চলে গিয়ে তোমাদের মুক্তি দিতে পারবো।
.
আর কোনো কথা না বলে সায়নী দৌড়ে বাসার বাইরে চলে যায়।তার পেছনে ছুটে যায় আফরান আর মুনিরা।
আফরান ও মুনিরার ডাকে সায়নী থামেনা।
.
সায়নী বাসা থেকে বের হয়েই রাস্তায় নেমে ফুটপাত ধরে দৌড়াতে থাকে।তার পেছন পেছন ছুটতে থাকে আফরান আর মুনিরা।দূর্ভাগ্যবশত আফরান পা মচকে পড়ে যায় ফুটপাতে।কিন্তু মুনিরা সেদিকে ধ্যান না দিয়ে ছুটতে থাকে সায়নীর পেছনে।হঠাৎ সায়নী রাস্তার মাঝখানে যেতেই তার দিকে দ্রুত বেগে এগিয়ে আসতে থাকে একটি প্রাইভেট কার।
মুনিরা চেঁচিয়ে বলতে থাকে-
আপু সরো।
কিন্তু সায়নী ছুটতে থাকে দ্রুত গতিতে।
কোনো কথা যেনো তার কানে যাচ্ছেনা,কোনো কিছুই যেনো সে শুনছেনা।
এদিকে প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে সায়নীর খুব কাছাকাছি চলে আসতেই দূর থেকে আফরান চেঁচিয়ে বলে উঠে-
সায়নী….!
.
.
.
বি:দ্র:পর্ব_৯ হবে বৈধ সম্পর্কের শেষ পর্ব।
.
#_____________চলবে________________
.
।
#