#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব -২২
______________________
– মীরা চোখ বন্ধ করা অবস্থায় খুব চটপট করতে লাগলো শুধু ঐ মানুষ টাকে একটি বার দেখবার জন্য।
কিন্তু মীরা যখনই চোখ
খুলে তাকাবে ঠিক তখনই ঐ মানুষ টাকে হারিয়ে ফেললো।
।
– মীরা ধাঁধা টা ভুলে যাবে বিধায় খুব তারাতাড়ি খাতা কলম নিয়ে ধাঁধা টা লিখে ফেললো।
– হঠাৎ কারোর শীতল স্পর্শ পেয়ে মীরা তাকিয়ে দেখলো সান্ড্রা এসেছে।
– মীরা সান্ড্রা কে জড়িয়ে ধরে বললো, সান্ড্রা আই মিস ইউ।
আমি ভুলে গিয়েছিলাম সব কিন্তু দেখো তোমাকে ঠিক মনে করতে পেরেছি।
তাঁর একটাই কারণ তোমার সাথে আমার আছে অন্তরের টান।
কিন্তু আমাকে সেটা বলো লিজ কোথায়?
– লিজ নাম শুনে সান্ড্রা রীতিমতো অবাক হয়ে মীরার দিকে তাকিয়ে রইলো।
তাঁর একটাই কারণ লিজের কথা মীরার কিভাবে মনে পরলো তা-ও এতোকাল এতো যুগ পর। যে লিজ ছিলো মীরার প্রাণ, যে লিজ কে ছাড়া মীরার এক মূহুর্তও কাটতো না, সেই লিজ কে মীরার এতো তারাতাড়ি মীরার মনে পড়বে সান্ড্রা তা কখনো ভাবেই নি।
“সান্ড্রা কি জবাব দিবে তাই ভেবে পাচ্ছে না।
সান্ড্রা চোখের জল আড়াল করে মুছতে চাইলেও পারলো না, কারণ মীরা তাঁর আগেই দেখে নিয়েছে।”
– মীরা সান্ড্রার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো, সান্ড্রা আমি খুব করেই বুঝতে পারছি লিজ নিশ্চয়ই ভালো নেই, তাছাড়া লিজ যদি জানতো আমি ইংল্যান্ড ফিরে এসেছি সে নিশ্চয়ই এতোক্ষণ আমার কাছে আসা ছাড়া থাকতে পারতো না।
তুমি কোনো কথা আড়াল না করে আমাকে বলো আমি নিশ্চয়ই এর সমাধান করবার চেষ্টা করবো।
।
– সান্ড্রা এবার আর নিজেকে দমিয়ে না রেখে হু হু করে কেঁদে ফেললো।
এবং বললো, প্রিন্সেস লিজ ভালো নেই, তাঁকে নেকড়ে সেনা বিয়ে করে রিতীমত অত্যাচার করে যাচ্ছে।
কি করে আমি নিজের মেয়ের কষ্ট এতো বছর সহ্য করে আসছি তা একমাত্র আমার গড ই ভালো জানে।
।
– মীরা সান্ড্রার চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে চোখ মুখ শক্ত করে বললো, সান্ড্রা চিন্তা করো না খুব শীঘ্রই আমি লিজ কে রক্ষা করে নিয়ে আসবো এবং আমাদের ভ্যাম্পায়ার রাজ্য নিজ দখলে নিয়ে আসবো।
– সান্ড্রা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মীরা কে বললো, প্রিন্সেস আপনার কি মনে পড়েছে মুনস্টোনের কথা।
” মীরা রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে সান্ড্রা কে জবাব দিলো, তা সময় হলেই সবাই দেখতে পাবে।”
___________________
মীরা আজ ভার্সিটির গেইটে পা রাখবার সাথে সাথে কেউ একজন মীরা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, মীরা তুমি আমাদের ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস তাই তো?
– মীরা মুখে হাসি ফুটিয়ে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো।
– সানা মীরা কে জড়িয়ে ধরে বললো, গ্র্যান্ডপা সব আমায় বলেছে এবং তোমাকে আমার সাথে যেতে বলেছে।
– মীরা সানার কথা শুনে খুব অবাক হলো গ্র্যান্ডপা ডেকেছে শুনে।
মীরাও মনে মনে বেশ খুশি হলো এটা ভেবে মুনস্টোনের ব্যাপারে তাছাড়া স্বপ্ন টার ব্যাপারেও মীরার কিছু কথা জানতে হবে গ্র্যান্ডপা কে।
– মীরা ক্লাসরুমে সানার সাথে বসে বসে গল্প করছে।
এমন সময় মেথিস প্রবেশ করলো।
সানা ও মীরা দু’জনই চুপচাপ হয়ে বসে রইলো।
মেথিসের দিকে মীরার বার-বার চোখ চলে যাচ্ছে। মেথিস ব্ল্যাক ব্লেজার পড়ে চুলগুলো এমনভাবে স্পাইক করে রেখেছে যে কোনো মেয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে হা হয়ে আছে।
মেথিস এতোটাই ধবধবে ফর্সা কালো রঙে তাঁর ফর্সা রং যেনো আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে , মেথিসের চোখ দুটোতে যেনো পৃথিবীর সব মায়া বিধাতা ঢেলে দিয়েছেন, মেথিস যখন ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কথা বলে যেনো কোনো এক অনুভূতি কাছে টানে মীরা কে।
মীরা মেথিসের দিকে খুব বেশিক্ষণ আর তাকিয়ে থাকতে পারলোনা। মীরা যেনো কোনো এক অচেনা মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে।
– মীরা একটা জিনিস বেশ ভালো করে উপলব্ধি করলো, মেথিস মীরার দিকে একটি বারের জন্যও তাকায়নি।
মীরার মনে কেমন যেনো এক অদ্ভুত খারাপ লাগা কাজ করলো।
সব ক্লাস শেষ করে মীরা সানার সাথে সানা দের বিশাল প্যালেসে চলে আসলো।
মীরা আজ বেশ ভালো করে প্যালেস টাকে নিখুঁত ভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো।
মীরা দেখলো প্যালেস টা মীরার খুব করেই চেনা।
এই প্যালেসে মীরা বহুবার এসেছিল কারো সঙ্গে। কিন্তু কার সাথে এসেছিল খুব বেশি মনে নেই।
হঠাৎ মীরার মাথা টা কেমন ঝিমঝিম করতে লাগলো। তাই মীরা আর খুব বেশি স্ট্রেস না নিয়ে গ্র্যান্ডপার রুমে এগিয়ে গেলো।
– মীরা একাই গ্র্যান্ডপার রুমে প্রবেশ করলো।
– গ্র্যান্ডপা মীরা কে দেখে খুব উৎফুল্ল হাসি হেঁসে সাদরে গ্রহণ করলো।
আসো প্রিন্সেস সেই কখন তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছি কখন তুমি আসবে আর আমি তোমায় মুগ্ধ নয়ন ভরে দেখবো।
তুমি হচ্ছ আমাদের ভ্যাম্পায়ার প্যালেসের একমাত্র প্রিন্সেস।
তোমার হাত ধরেই আমরা আমাদের ভ্যাম্পায়ার প্যালেস কে মুক্ত করে নিজেদের দখলে আনতে পারবো।
।
মীরা গ্র্যান্ডপার কথা শুনে এটাই বুঝতে পারলো মীরার উপর অনেক বড়ো দায়িত্ব অর্পিত।
একমাত্র মীরা ই পারবে সকলের পুরনো ব্যাথা ভুলিয়ে সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে।
মীরা মনে মনে খুব ভয় পেতে লাগলে এটা ভেবে মীরা কি পারবে সবার সম্মান রক্ষা করতে।
প্রিন্সেস তুমি ভয় পাচ্ছ নিশ্চয়ই।
এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই কারণ তুমি সাধারণ কোনো ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস নও।
তুমি হচ্ছ…………….
।
যে-ই বলতে যাবে এমন সময় কেউ একজন গ্র্যান্ডপার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলতে লাগলো, ভয়ংকর মানুষ খেকো ভ্যাম্পায়ার।
যে পুন জন্ম নিয়ে দ্বিতীয় বার আবার শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার রূপে ফিরে এসেছে।
।
– মীরা কারো কথা শুনে পেছনে চমকে তাকিয়ে দেখলো এ যে আর কেউ নয় মেথিস পায়ের উপর পা দিয়ে সোফায় বসে আছে।
– গ্র্যান্ডপা মেথিস কে দেখে মুখে তৃপ্তির হাসি হেঁসে বললো, আসো মা’ই গ্র্যান্ডসান।
– মীরা খুব করেই খেয়াল করলো মেথিস গ্র্যান্ডপার কথা খুব একটা তোয়াক্কা না করে মীরার কাছে এসে দাঁড়ালো।
– গ্র্যান্ডপার মুখটা কেমন যেনো চুপসে গেলো।
– মেথিস প্রিন্সেস বলে মীরা কে ডেকে উঠলো।
– মেথিসের মুখে প্রিন্সেস শব্দ টা শুনে মীরার সব যেনো এলোমেলো হয়ে যায়।
মীরা যেনো সব ভুলে এক অদ্ভুত অনূভুতি তে হারিয়ে যায়।
মেথিস মীরার খুব কাছে এসে মীরার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো, প্রিন্সেস মুনস্টোনের কোনো কিছু কি মনে মনে পরলো তোমার?
-মীরা মুখ দিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় গ্র্যান্ডপা মীরার কাছে এসে বেশ উৎসুক হয়ে বলতে লাগলো প্রিন্সেস বলো তোমার কি কিছু মনে পড়েছে ?
– মীরা স্বপ্নটার কথা গ্র্যান্ডপা এবং মেথিস কে খুলে বললো।
” আকাশে সমুদ্র মাটিতে ঝড়
ঐখানে লুকায়িত মুনস্টোন। ”
– মীরার এই ধাঁধার কথা শুনে মেসিস ও গ্র্যান্ডপা বেশ চিন্তিত হয়ে পরলো।
মেথিস বেশ কিছুক্ষণ ভেবে গ্র্যান্ডপার দিকে এক নজর তাকিয়ে মীরা কে বললো, প্রিন্সেস তোমার ধাঁধা টা যেমন কঠিন তেমনি জায়গা টাও বেশ ভয়াবহ।
– মেথিসের মুখে এই কথা শুনে গ্র্যান্ডপা লম্বা একটা দম নিয়ে বলতে শুরু করলো, আমি বুঝতে পেরেছি জায়গা টা কোথায়?
জায়গা টা যেমন ভয়ানক তেমনি তোমার জন্য বেশ সহজ।
তাছাড়া তুমি একজন রক্ত খেকো ভ্যাম্পায়ার।
তোমাকে যেতে হবে আকাশের এক গ্রহে, তা-ও এক ঘূর্ণনের মতো ঝড়ে।
– গ্র্যান্ডপার কথা শুনে মীরা ঢোক গিলে মেথিসের দিকে তাকালো।
– মেথিস মীরার হাতে নিজের হাত রেখে বললো, প্রিন্সেস তুমি চিন্তা করো না আমি তোমাকে নিয়ে যাবো ঐ অচেনা জায়গায় কিন্তু তোমাকে একা প্রবেশ করতে হবে সেই জায়গায়।
– মেথিসের কথা শুনে মীরা এক নজর তাকিয়ে মেথিস কে বেশ ভালো করে দেখতে লাগলো।
মেথিস কে মীরার আজ খুব আপন মনে হচ্ছে। মীরার মনে মেথিসের জন্য এক অদ্ভুত টান অনুভব করছে।
মীরা মনে মনে ভাবছে রুদ্র ভাই কে মীরা ভালো না বাসলে মেথিস কে- আজ ভালো বাসতে পারতো। হয়তো মীরা আরো ভালো থাকতে পারতো। কিন্তু মীরার পক্ষে এখন তা সম্ভব হচ্ছে না।
মীরা জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
– গ্র্যান্ডপা রুম থেকে চলে গেলে মেথিস মীরার চোখে চোখ রেখে বললো প্রিন্সেস পারবে তো মুনস্টোন ফিরিয়ে আনতে।
এতে তোমার মম- ড্যাডের আত্মার শান্তিও জড়িত আছে।
– এই কথা শুনে মীরা যেনো চমকে উঠলো।
– মীরা বেশ আশ্চর্য হয়ে মেথিস কে জিজ্ঞেস করলো, মম, ড্যাড মানে?
– মেথিস মুখটা অন্ধকার করে বললো, হ্যাঁ তোমার মম, ড্যাড কেও নেকড়ে রা বিশাল এক কফিনে বন্দি করে রেখেছে।
তাঁদের রুহ এখনো চটপট করছে আর প্রতিনিয়ত তোমাকে স্মরণ করছে কখন তুমি তাদের মুক্ত করবে।
– মীরা নিজেকে আর সামলাতে না পেরে মেথিস কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ফেললো।
– মেথিস মীরার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, প্রিন্সেস কেঁদো না আমি তো আছি।
তাকিয়ে দেখো কতোটা কষ্টে আছি এক বুক ভালোবাসা নিয়ে।
তুমি যদি না বুঝো তাহলে আর কে বুঝবে।
– হঠাৎ মীরার মনে পরলো কাউকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
তাই মীরা নিজেকে সংযত করে তারাতাড়ি মেথিসের বুক থেকে উঠে চোখের জল মুছে স্বাভাবিক ভাবে বললো, আমি পারবো মুনস্টোন নিয়ে আসতে।
আর আমাকে যে পারতেই হবে তা না হলে এতো গুলো মানুষের কি হবে?
আমার মম, ড্যাড, লিজ কেও রক্ষা করতে হবে।
তাছাড়া ভ্যাম্পায়ার রাজ্য কেও আমি নিজ দায়িত্বে রক্ষা করবো।
– মেথিস মীরার কথা শুনে মীরার দিকে এক চাহনিতে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মীরার হাত ধরে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলো।
# চলবে——-