#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-২৩
______________________
– মীরা মেথিসের দিকে এক নজর তাকিয়ে
সামনের বিশাল সমুদ্রের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দেখলো সাগরের মাঝখান বরাবর বিশাল এক ঘূর্নিঝড়ের সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা আকাশ ছুঁই ছুঁই।
.
.
.
মীরার মাথায় এবার ঐ ধাঁধা টা খেলে
গেলো। মীরা এবার খুব ক্লিয়ার করেই বুঝতে পারলো, ধাঁধা টার মানে হলো আকাশে সমুদ্র আর মাটির ঝড় । আর এই ঝড় টা-ই আকাশ ছুঁয়ে গেছে। এই ঝড়ের ভেতর দিয়েই যেতে হবে দূর আকাশে।
।
-মেথিস মীরার গালে আলতো করে হাত
ছুঁয়ে দিয়ে লম্বা চাপা এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো, প্রিন্সেস তোমাকে যেতে হবে এই ঘূর্ণিঝড়ের মধ্য দিয়ে ঐ দূর আকাশের একটা ভিন্ন গ্রহে আর নিয়ে আসতে হবে ভ্যাম্পায়ার মুনস্টোন।
।
– মীরা বেশ ভালো করে লক্ষ্য করলো মেথিস আড়ালে গিয়ে চোখের জল মুছছে।
মীরার মনে হঠাৎ ভয় এসে বাঁধা দিতে লাগলো।
মীরা মেথিসের সাথে এই প্রথম নিজ থেকে কথা বললো।
আপনি কি কোনো বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত?
– মেথিস নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে মীরা কে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো প্রিন্সেস ভালোবাসি খুব ভালোবাসি তোমায়। শুনেছি গ্রহ টা না-কি খুব ভয়ানক, কিছুতেই আমার মন সাঁই দিচ্ছে না তোমাকে একা পাঠাতে।
– মীরা আজ শুধু মেথিস কে দেখে যাচ্ছে আর ভাবছে মেথিসের অনূভুতি গুলো সত্যি আজ মীরা কে বেশ আপন করে কাছে টানছে।
কিন্তু কোথাও এক অসম্ভব রকম মায়াজাল মীরা কে বাঁধা দিচ্ছে।
মীরা মেথিসের হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো, চিন্তা করবেন না, আমি ঠিক পারবো আমাদের ভ্যাম্পায়ার রাজ্য কে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে।
মীরা শেষবারের মতো মেথিসের দিকে এক নজর তাকিয়ে সমুদ্রের উপর ঘূর্ণনে নিজের চোখ বন্ধ করে প্রবেশ করলো।
– সময় যতো অতিবাহিত হচ্ছে মেথিসের চটপটানি যেনো তত বেশি বাড়তে লাগলো।
মেথিস পায়চারি করতে করতে ব্যাস্ত আর মীরা কে নিয়ে ভাবতে ব্যাতিব্যাস্ত।
অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেলো কিন্তু মীরার ফিরবার কোনো নাম নেই।
মেথিস আকাশের দিকে তাকিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে কেউ একজন কে স্মরণ করলো।
” মেথিস আজ যাকে স্মরণ করলো সে যেনো কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে মেথিস আজ তাঁকে স্মরণ করবে তা-ও নিজ থেকে।”
– গ্র্যান্ডপা বেশ উৎসুক হয়ে বললো, মা’ই গ্র্যান্ডসান বলো কি জানতে চাও?
– মেথিস তাঁর ঠোঁট দু’টো ভিজিয়ে বললো, গ্র্যান্ডপা জানি তুমি প্রিন্সেস কে হয়তো এখনো মেনে নিতে পারছ না।
তবুও আজ অনেক দিন পর তোমার সাহায্য চাইছি আমি, প্রিন্সেস সেই কখন গিয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত ফিরবার কোনো নাম নেই।
আমার খুব বেশি চিন্তা হচ্ছে ওকে নিয়ে। ওর কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে না তো?
-গ্র্যান্ডপা মেথিসের কথা শুনে একটু চিন্তিত ভাব নিয়ে বললো, আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি, যেভাবে বলবো ঠিক ওভাবেই করলে বুঝতে পারবে প্রিন্সেস কেমন আছে।
গ্র্যান্ডপা মেথিস কে সব বলে দিয়েছে ঠিক কি কি করতে হবে।
– মেথিস চোখ খুলে একটা কুন্ডলী পাকালো। কুন্ডলীর চারপাশে মন্ত্র পড়ে চোখ বন্ধ করে মীরা কে দেখে ঝড় ঝড় করে চোখের পানি ছাড়তে লাগলো।
মীরার গায়ে জায়গায় জায়গায় সুচ বসানো।
জায়গাগুলো থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছে কিন্তু মীরা থেমে নেই।
মীরা প্রাণপণে যুদ্ধ করে যাচ্ছে বেশ কিছু অবয়বের সাথে।
হঠাৎ মীরার কপালে একটা তীর এসে আঁটকে গেলো।
সাথে সাথে মীরা বেহুশ হয়ে পড়ে গেলো।
হঠাৎ মেথিস চোখ খুলে তাকালো।
মেথিস ভাবছে হয়তো তাঁর প্রিন্সেস আর ফিরবে না সেই আগেরকার মতো।
।
তাই মেথিস মনে মনে নিজের জেদ চেপে ধরলো এবং শার্ট টা এক টান মেরে ছিঁড়ে ফেললো।
মেথিসের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে আর মনে মনে বলছে প্রিন্সেস তোমাকে আমি আর নাই পেলাম কিন্তু শত জনম আমি অপেক্ষায় রইলাম। মেথিস চোখ বন্ধ করে উত্তপ্ত রোদে গিয়ে দাঁড়ালো।
হঠাৎ কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে মেথিস চোখ খুলে তাকালো।
তাকিয়ে মীরা কে দেখে জড়িয়ে ধরলো এবং বললো, প্রিন্সেস তুমি এই সময়ের মধ্যে না আসলে আমি এতোক্ষণে এই উজ্জ্বল রোদে নিজেকে বিলীন করে বুঝিয়ে দিতাম কতটা ভালোবাসি আমি তোমায়।
।
– মীরাও আজ আর নিজেকে আড়ালে রাখতে না পেরে মেথিস কে জড়িয়ে ধরলো। মেথিসের কথা শুনে মীরারও ভয় হতে লাগলো। তাছাড়া মীরা নিজের চোখেই দেখতে পেলো মেথিস এতোক্ষণ ধরে কি করতে যাচ্ছিল।
সত্যি যদি এমন করতো তাহলে মীরা তো নিজেই নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতো।
মীরা নিজের শরীরের ব্যাথায় বড্ড ক্লান্ত।ক্লান্ত মন নিয়ে মীরা আর ভাবতে পারছে না কিছু। তাঁর উপর আবার মেথিস নিজেকে নিজে এভাবে শেষ করে দিচ্ছিল, আর একটু দেরি হলে চিরতরের মতো মেথিস হারিয়ে যেতো এই উত্তপ্ত রোদে।
– মেথিস মীরার কপালে শীতল ঠোঁটে চুমু দিয়ে মীরার হাত নিজের বুকের বাঁ পাশে চেপে ধরে বললো প্রিন্সেস জানো আমি কতটা ভয়ে ছিলাম যখন দেখেছি তোমার সাথে কয়েকটা অবয়ব ভীষণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলো।
আমার তখন ইচ্ছে করছিলো তোমার কাছে ছুটে যাই। ছুটে গিয়ে ঐ অবয়ব গুলোকে ধ্বংস করে ফেলি।প্রিন্সেস তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে, নিশ্চয়ই খুব বেশি ব্যাথা হচ্ছে শরীরে। মেথিস কিছু মন্ত্র পড়ে মীরার শরীরের ক্ষত স্থানে ফুঁ দিলো।
মুহুর্তেই মীরার ব্যাথাগুলো ভ্যানিশ হয়ে গেলো।
– মীরা মেথিসের চোখে তাকিয়ে দেখলো হাজারো ভালোবাসার আকুতি।
মীরাও চাইছে মেথিস কে খুব করেই ভালোবাসতে।
কিন্তু রুদ্রের জন্য মীরা এখনো পারছে না মেথিস কে ভালো বাসতে। রুদ্রের জন্য মীরার ভালোবাসা গুলো কুয়াশার আড়ালে ঢেকে আছে।
মেথিসের আজ এতো তীব্র ভালোবাসা দেখে মীরার ইচ্ছে করছে মেথিস কে খুব করে কাছে টানতে।
– মীরা মেথিসের চোখে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজ থেকেই বললো এখন আমাদের কে যেতে হবে।
খুব একটা সময় নেই আমাদের হাতে।
এই মুনস্টোন দিয়ে আমি আমাদের ভ্যাম্পায়ার রাজ্য নিজেদের দখলে নিবো।
।
– মেথিস মুনস্টোন টা নিজের হাতে নিয়ে মীরার চোখে চোখ রেখে বললো আমি জানতাম প্রিন্সেস তুমি সেই আগেরকার মতোই সাহসী আছো।
মেথিস মীরার হাত ধরে মুহুর্তেই ভ্যানিশ হয়ে গেলো।
।
– মীরা মেথিসের দিকে এক নজর তাকিয়ে সামনে থাকা গাছটার লেখার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
।
মীরা লেখা টার উপর হাত বুলিয়ে এক অদ্ভুত অনূভুতি অনুভব করলো। অনুভূতি গুলো ভালোবাসার রহস্যে ঘেরা। অনুভূতিগুলো মীরা কে চুপিচুপি কিছু একটা ইশারা করে যাচ্ছে। অনুভূতির টানে মীরার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরতে লাগলো।
মীরা লেখাটা ঠিক করে পর্যবেক্ষণ করে দেখলো স্পষ্ট করে লেখা,
“প্রিন্সেস ডু ইউ নো ইউ আর মা’ই ডার্ক ডায়মন্ড। ”
#চলবে——