ভালবাসার প্রহর পর্ব ২৯+৩০

#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব২৯

ফর্সা গায়ে হলুদ পাঞ্জাবি জেনো ফুটে আছে।স্নিগ্ধ সুদর্শন ছেলেটা কে আজ এক্টু বেশি ভালো লাগছে।বন্ধুর জ্বালায় স্পর্শ একটু আগেই বাসা থেকে রওনা দেয়।রিয়া আর মামিকে তার প্রিয়তমাকে বুঝিয়ে দেয়।জেরিন অবাক হয় খুব,ছেলেটা এতো যত্নশীল কেনো?রুম থেকে জেরিন বেড় হতেই সবাই অবাক।এতো সুন্দর করে স্পর্শ সাজিয়েছে।নিচে গাড়িতে উঠার সময় হলো এক বিপত্তি।হাসান নীল পাঞ্জাবি পরে রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নাজমুন বেগম নিজেও কিছুটা অপ্রস্তুত হলেন।তিনি নিজেই হাসান কে আসতে বলে কিন্তু জেরিন অসুস্থ হওয়ার আগে।জেরিন সেদিকে একবার তাকিয়ে রিয়ার সাথে গাড়িতে উঠে বসে।নাজমুন বেগম, জসীম সাহেব,লতিফ সাহেব এবং হাসান একটা গাড়িতে বসে।জেরিনের গাড়িতে শেলিন বসেন।পুরো রাস্তায় গল্প করতে করতে আসে।সেন্টারে আসতেই গাড়ির দরজা খুলে স্পর্শ জেরিন কে বেড় করে।রিয়া জেরিনের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

—-“দুলাভাই সব কী বউয়ের জন্য?আমি বুঝি ফাউ?”

স্পর্শ অল্প হেসে বলে,

—-“আপাতত আমার বউকে দেখে রাখতে হবে।পিছনে নীল শয়তান যে হাজির।”

রিয়া একবার পিছনের গাড়িতে তাকায়।পর-মুহূর্তে ফিক করে তিনজন হেসে দিলো।শিড়ি বেয়ে উপরে আসতে আসতে তিনজন টুকটাক কথা বলে। বিশাল জায়গা জুড়ে গেস্টদের বসার আয়োজন।ঠিক তার সামনেই স্টেজ। হিমু জেরিন কে দেখেই দাঁড়িয়ে যায়।জেরিন স্পর্শ কে ছেড়েই ছুটে যায় হিমুর কাছে।
.
.
.
.
প্রলয় বেচারা করে রেখেছে মুখটা।স্পর্শ প্রলয়ের পাশে বসে একটু হাসে।ভ্রু উঁচিয়ে বলে,

—-“কিরে এমন মুখটা বেচারা করে রেখেছিস কেনো?”

প্রলয় আহত কন্ঠে বলে,

—-“বন্ধু আমি শেষ!তোর বউসহ বাকি বন্ধুরা প্ল্যান করেছে নাচ-গানের লড়াই হবে।এদিকে আমি তো প্রস্তুতিই নেই নি।”

স্পর্শ খানিক অবাক হয়ে বলে,

—-“কী বলছিস? আমি তো জেরিন কে এ’বিষয় কথা বলতে দেখিনি। ”

—-“মেয়েরা সব পারে বুঝলি।কখন ধোকা মেরে কথা বলেছে বুঝতেও পারিস নি।”

স্পর্শ স্নান হেসে বলে,

—-“এখন কী করবি সেটা বল?”

প্রলয় আমতা আমতা করে বলে,

—-“বন্ধু তুই আমাদের বাকি বন্ধুদের বলে একটা কিছু কর।প্লিজ আমাকে একা ফেলে দিস না।”

স্পর্শ মৃদু ঝারি মেরে বলে,

—-“শালা, আমাকে কী হেল্প লাইন মনে হয় তোর?বিয়ের সময় একবার এমন করেছিস।আচ্ছা দেখছি,আকাশ, নীল,রেহান কোথায়?”

প্রলয় হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলো।স্পর্শ বন্ধুদের কাছে এগিয়ে যায়।প্রলয় জেনো এবার হাপ ছেড়ে বাচে।হাসান স্টেজের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।এদিক ওদিক তাকিয়ে জেরিন কে হাসা-হাসি করতে দেখেই জেনো তার মাথায় আগুন জ্বলে উঠে।হিমুর সাথে কথা শেষ করে রিয়া কে নিয়ে স্টেজের সামনে আসতেই হাসান জেরিনের বাহু চেপে ধরে।চেতে বলে,

—-“এতো হাসা-হাসি কিসের হ্যা?ছেলে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না?”

জেরিন অপ্রস্তুত হয়ে ভিতু কন্ঠে বলে,

—-“হাত ছাড়ুন আমার।”

রিয়া জেরিনের হাত ছাড়াতে চাইলে হাসান বেশ উচ্চসরে বলে,

—-“সারাদিন কী ওর সাথে হ্যা?তোমাকে কী ওর চামচা রাখছে?”

বিষয়টা নাজমুন বেগম দেখে কিছু বলার উদ্বেগ নেওয়ার আগেই স্পর্শ পিছন থেকে এসে হাসানের কলার শক্ত করে চেপে ধরে।রিয়া এই সুযোগে হাত ছাড়িয়ে নেয়।ব্যথায় জেরিনের চোখে পানি চলে আসে।স্পর্শ শান্ত কিন্তু বেশ গরম গলায় বলে,

—-“আমার প্রিয়তমার গায়ে হাত দেওয়ার শাস্তি কী তা যদি মনে থাকে, এখনি এখান থেকে চলে যাবে।”

হাসান দাতে দাত চেপে বলে,

—-“জেরিন আমার বউ।”

স্পরে বাকা হাসি দিয়ে বলে,

—-“ওরে বলদ, কাগজে -কলমে ও আমার।ধার্মিক এবং আইনত ভাবে আমরা স্বামি স্ত্রী।মুখে মুখে বাল্য বিবাহ করলেই সে তোমার বউ হবে?আমি স্পর্শ মেহরাব কত ভয়ংকর হতে পারি এখনো তুমি জানো না।”

হাসান কথায় না পেরে রাগে গজ গজ করে চলে যায়।স্পর্শ ছোট্ট করে নিশায়াস ফেলে পাশে থাকা জেরিন কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে।চেয়ারে বসিয়ে হাতে হাত বুলিয়ে বলে,

—-“একদম আমার থেকে দূরে যাবে না।আমার সাথে সাথেই থাকবে।”

জেরিন কিছু বলল না।স্পর্শের কাধে আস্তে করে মাথা এলিয়ে দেয়।ছেলেটা কে এতো ভালবাসে কেনো সে?অচেনা এক প্রিয়তম ছিল স্পর্শ। প্রথম দেখা তার পর বিয়ে।সবই জেনো অদ্ভুত!

______________________________

নাজমুন বেগম প্রলয়ের মায়ের সাথে গল্প করছে।সাথে সেলিনা ও আছে।ভদ্র মহিলা বেশ মার্জিত। নাজমুন বেগমের কথা বলে বেশ ভালো লাগছে।ভদ্র মহিলা স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বলেন,

—-“আপনি অনেক ভাগ্যবান ভাবি।স্পর্শের মতো ছেলেই হয় না।পড়া শুনা, কাজে সব দিকে সেরা।মানুষ হিসেবে আরো ভালো।”

নাজমুন বেগম হাসার চেষ্টা করে বলেন,

—-“আসলে কী থেকে কী হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি।”

ভদ্র মহিলা আবার বলেন,

—-“এতো বুঝতে যাবেন না, চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারেন।আপনার মেয়েকে কত ভালবাসে এখানে সবাই দেখেই জেনে গেছে।”

নাজমুন বেগম স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।একবার মেয়ে আর স্পর্শের দিকে চোখ দিয়ে নিজেই অবাক।এতো আগলে রাখছে স্পর্শ। সেলিনা এক গাল হাসি দিয়ে বলেন,

—-“সেটা আমরা জানি।ওর বাবা -মা যথেষ্ট আদর করে জেরিন কে।এতো দিন মেয়েটা অসুস্থ, স্পর্শ নিজেই সব করছে তার।”

ভদ্র মহিলা হেসে বলেন,

—-“আমরা মনে করি আমাদের পছন্দই সেরা কিন্তু না।আমরা ওদের ভালোর জন্য করি এটা মুখোস্ত একটা বানি।আমি কী ভবিষ্যৎ জানি নাকি যে ওদের ভালোর জন্য করি?মনে রাখবেন কার সাথে থাকলে আমাদের সন্তান খুশি থাকে সেটা দেখা প্রয়োজন।আমাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে যেয়ে অনেক সন্তানের জীবন নষ্ট করে ফেলি।আল্লাহ আমাদের সন্তানদের ভালো রাখুক।”

নাজমুন বেগমের অনুশোচনা হচ্ছে।কোথায় হাসান আর কোথায় স্পর্শ। জেরিনের নামে অভিযোগ করা হাসান অন্য দিকে জেরিনকে আগলে রাখা স্পর্শ। খুব সহজেই কী স্পর্শ জামাই হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না?

________________________

প্রলয় চিন্তিত হয়ে স্পর্শ কে কাছে ডাকে।জেরিন কে বসিয়ে স্পর্শ বাকি বন্ধুদের নিয়ে প্রলয়ের কাছে গেলো
স্টেজের এক পাশে ওরা দাঁড়িয়ে আছে।প্রলয় চিন্তিত হয়ে বলে,

—-“কী ব্যবস্থা করলি বন্ধু?”

স্পর্শ শান্ত গলায় বলে,

—-“সময় হলেই দেখতে পাবি।”

রেহান হেসে বলে,

—-“এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো?আমরা স্টেজ কাপিয়ে ফেলবো।”

—-“আরে মামা আমরা থাকতে এতো ভাবছিস কেনো?যা হবে না! তুই শুধু দেখবি বুঝলি?”

নীলের কথায় আকাশ আহত হয়ে বলে,

—-“তা আর দেখতে হবে না।ওদিকে দেখ তোরা অলরেডি স্টেজে আগুন লেগে গেছে।”

স্পর্শ আর প্রলয় ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকালো।স্পর্শের চোখ কপালে।এই মেয়েকে সে একটু আগে বসিয়ে এসেছে আর এখন বান্ধুবীদের সাথে স্টেজে।প্রলয় মৃদু কেশে বলে,

—-“দোস্ত, জেরিন তো একাই একশ।তার উপর তুই ওর সামনে কিছুই পারবি না।”

স্পর্শ বিষম খেলো।জেরিন এক বার স্পর্শের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে ভয়ংকর হাসি দিলো।স্পর্শ হতভম্ব হয়ে গেলো।

Hai wo handsome sona sabse
Mere dil ko gaya le kar
Meri neend chura li usne
Aur khwab gaya dekar

Hai wo handsome sona sabse
Mere dil ko gaya le kar
Meri neend chura li usne
Aur khwab gaya dekar

Ab ye naina bole yaar
Bole yehi lagataar
Koi chaahe kitna roke karungi pyar.

Mere saiyaan superstar
O Mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar

Mere saiyaan superstar
O Mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar

স্পর্শের দিকে আঙুল উঁচিয়ে নাচতেই স্পর্শ হেলে পরে।প্রলয় কোনো ভাবে সামলে বলে,

—-“বলে ছিলাম না তোকে দিয়ে হবে না ভাই।”

স্পর্শ আহত চোখে জেরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।বিড়বিড় করে বলে,

—-“এভাবে আমাকে মারার ইচ্ছে ছিল তোমার বউ?”

রিয়াকে জেরিন ইশারা করতেই সে প্রস্তুত হয়।এক লাফে চেয়ার থেকে উঠে জেরিনের সাথে তাল মিলাতে থাকে।

Haan jabse usne akhiyon se
Dil pe autograph diya
Tabse everyday maine
Bas usko hi yaad kiya

Haan jabse usne akhiyon se
Dil pe autograph diya
Tabse everyday maine
Bas usko hi yaad kiya

Senti mere jazbaat o sunle mere dil ki baat
Saath mujhko le ke jaa main hoon taiyaar…

Mere saiyaan superstar
O Mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar

Mere saiyaan superstar
O Mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar

রেহান চোখ বড় করে বলে,

—-“মেয়েটা কে মামা?”

স্পর্শ রোবটের মতো বলে,

—-“আমার শালি রিয়া।”

নীল উৎসাহি হয়ে বলে,

—-“তোদের লড়াই রাখ আমি গেলাম নেচে আসি।”আকাশ পিছন থেকে নীলের পাঞ্জাবি টেনে ধরে।

—-“হ্যা রে, জেরিন এদিকে আসছে কেনো নাচতে নাচতে?”

প্রলয়ের কথায় স্পর্শ সামনে তাকালো।সত্যি জেরিন এদিকে আসছে সাথে রিয়া, সাদিয়া।স্পর্শ কিছু ভাবার আগেই জেরিন এসে স্পর্শের হাত ধরে স্পর্শ কে ঘুরিয়ে দিলো।

Filmy style se jab usne
Kal raat mujhe propose kiya
Daayein na dekha, baayein na dekha
Usko dil ka rose diya

স্পর্শ শকড! জেরিন রোক!প্রলয় রেহান কে বলে,

—-” এই ছেলে আজ গেছে।”

Filmy style se jab usne
Kal raat mujhe propose kiya
Daayein na dekha, baayein na dekha
Usko dil ka rose diya

Huve charche chaar hazaar
Photo chhap gayi in akhbaar
Mujhko parwah nahi koi I’m with the star.

Mere saiyaan superstar
O Mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar

Mere saiyaan superstar
O Mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar

সবার চেঁচামেচি শুনে স্পর্শ হুশে ফিরে।জেরিন চোখ মেরে নিজের জায়গায় চলে যায়।জীবনে এই প্রথম স্পর্শ বেশ ধাক্কা খেলো।#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব৩০

হলুদের রাত হৈচৈ তে মেতে উঠেছে।হলুদ দেওয়া শেষ কিছুক্ষণ হলো।স্টেজ থেকে বসার আসন সরিয়ে নাচের জন্য জায়গা করা হয়েছে।মেয়েরা স্টেজের সামনের চেয়ার গুলোতে বসে আছে।প্রলয় এবং বাকিরা চিন্তায় আছে। এখন তাদের পালা কিন্তু স্পর্শ কোথায় গেলো?আকাশ চিন্তিত হয়ে বলে,

—-“বন্ধু স্পর্শ কী জেরিনের নাচ দেখে স্টোক করেছে?না মানে এখনো তো এলো।”

—-“নিশ্চয় রেডি হতে গেছে। নাহলে এদের কাছে হার মানতে হবে।”

প্রলয়ের কথাটা শেষ হতেই সেই এক মিজিক বেজে উঠেছে।যা সবার ভাবনার বাইরে ছিল।জেরিন চেয়ারে বসেই ডান পাশে ঘাড় বাকাতেই স্পর্শ বাকা হেসে হাত ধরে স্টেজে নিয়ে গেলো।বন্ধুরা অবাক!এখন কী স্পর্শ কাপল ডান্স করবে নাকি?

ভাই এর শালী বিয়াইন সাব ভালোবেসেছে
অনেক সাধনারই পরে কাছে এসেছে।

স্পর্শের গানের তাল দেখে জেরিন একটু হতভাগ। এই ছেলে এমন গানেও নাচতে পারে!দ্রুত নিজেকে প্রস্তুত করে স্পর্শ কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে তাল মিলায়।

বোনের দেবর বিয়াই সাব ভালোবেসেছে
মনটা আমার প্রেমেরই জোয়ারে ভেসেছে।

ভাগ্য গুণে আপনার মত বিয়াইন সাব জোটে

—-“দোস্ত যা বুঝার বুঝলাম,এই ছেলে আজ প্রেমের দেশেই থাকবে।”

আকাশের কথায় নীল শব্দ করে হেসে বলে,

—-“তবে গানটা জোস ভাই!হিমুর বান্ধুবীরা তো সত্যি আমাদের বিয়াইন সাব।”

প্রলয় গাল ফুলিয়ে নিশ্বাস নিয়ে বলে,

—-“দোস্ত এর পর তোদের পালা।রেডি হয়ে থাক, নাহলে মান-সম্মান যাবে আমাদের।”

রেহান মাছি তাড়ানোর মতো হাত তুলে বলে,

—-“দেখতে থাক শুধু মামা।”

জেরিন স্পর্শ রেখে স্টেজ থেকে নেমে এলো।রিয়া আর হিমুর পাশের চেয়ারে বসে লম্বাশ্বাস ফেলে বলে,

—-“ভাইরে আমি তো অবাক।কোথায় থেকে এই গান সে খুজে আনলো?”

হিমু ফিসফিস করে বলে,

—-“নিশ্চয় প্রলয়ের কাজ এটা।”

রিয়া নিচুস্বরে বলে,

—-“তবে সেই লেগেছে তোদের।দেখ,ভাইয়ার অবস্থা?প্রলয় ভাইয়া যেভাবে চেপে ধরেছে জেনো আজ শেষ করে ফেলবে।”

জেরিন মৃদু উত্তেজনা নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শাওন আর রাফি কে বলে,

—-“বন্ধু, সব থেকে হিট গান গুলো চালাবি। আমরা ওদের আজ শেষ করেই ছাড়বো।”

রাফি বাকা হেসে বলে,

—-“দোস্ত এক কাজ কর,ইমরান হাসমির গান চালা সেই হবে।”

জেরিন রেগে তাকাতেই রাফি দ্রুত ক্যামেরা হাতে অন্য দিক চলে যায়।শাওন মুখ চেপে হেসে বলে,

—-“এর পর আমি গান প্লে করছি তুই সাদিয়া আর রিয়াকে নিয়ে স্টেজে যা।”

রিয়া চোখ ছোট ছোট করে বলে,

—-“আবার দেখবে, সত্যি ইমরান হাসমির গান না চলে।”

জেরিন সাদিয়া আর রিয়াকে নিয়ে স্টেজের মাঝে যায়।শাওন চোখের ইশারায় রেডি হতে বলে গান চালিয়ে দেয়।

Aaj ke ladke I tell you
Kitne lallu what to do

Aaj ke ladke I tell you
Kitne lallu what to do
Koi mujhe pooche how are you
Koi mujhe bole how do you do
Kabhi koi mujhse na kahe

Oh my darling I love you
Oh my darling I love you
Oh my darling I love you

স্পর্শ মাথায় হাত দিয়ে স্টেজের পাশে একটা চেয়ারে বসে।রেহান দ্রুত স্পর্শ কে ধরে বলে,

—-“ঠিক আছিস তুই?”

—-“না ভাই!ওরা কী শুরু করেছে এগুলো?”

আকাশ বেখেয়ালি হয়ে হেসে বলে,

—-“আগুন ভাই, সব আগুন!”

প্রলয় হতাশ হয়ে বলে,

—-“তোদের দিয়ে হবে না রে।আমি শেষ!”

স্পর চেয়ার থেকে উঠে বলে,

—-“তুই শুধু দেখ হয় কী না।”

স্পর্শ নীলের কানে কানে কী জেনো বলে।জেরিনরা স্টেজ থেকে নামতেই ছেলেরা স্টেজে উঠে যায়।সব মেয়েদের চোখ স্তির হয় স্পর্শের উপর।জেরিন ও মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে।এই ছেলে কী করবে এখন?

Dil duba dil duba neeli

Aankhon mein yeh dil duba

Mehbuba mehbuba bas

Yeh jaanle mehbuba

Dil duba dil duba

Neeli aankhon mein yeh dil duba

Mehbuba mehbuba bas yeh

Jaanle mehbuba

Aashiq hun deewana hun

Tere liye kuch bhi kar jaaonga

Ishq mein tere jeeta

Hun tere liye hi mar jaaonga

সবাই শীষ বাজিয়ে উঠে।কেউ কারো থেকে কম না।এক সময় লড়াই কোথাও হারিয়ে যায়।সবাই এক সাথে মেতে উঠে।স্পর্শ কে আজ নতুন ভাবে চিনলো জেরিন।এই গম্ভীর ছেলেটা যে এতো নাচতে পারে জানাই ছিল না তার।

______________________________

নাজমুন বেগম খাওয়ার পর্ব মিটিয়ে এক কোণায় বসে মহিলারা গল্প করছেন।সেই সাথে ছেলে মেয়েদের এই আনন্দ উপভোগ করছেন।লতিফ সাহেব সবটা মোবাইলে ভিডিও করেছে রাখছে।বেশ আনন্দ পাচ্ছেন উনিও।সেলিনা বার কয়েক স্পর্শের দিকে তাকিয়ে নিচুস্বরে বলে,

—-“নাজমুন দেখ,জেরিনের সাথে কীভাবে নাচছে।কত ভালো লাগছে দেখতে।”

নাজমুন বেগম সেদিকে একবার তাকিয়ে হাল্কা হাসেন।মহিলাদের মাঝে একজন বলেন,

—-“মাশাল্লাহ! এমন একটা ছেলে যদি আমি পেতাম।আমার মেয়েটার সাথে পারলে এখনি নিয়ে যেতাম।”

সেলিনা আলতো হেসে বলে,

—-“এখন আর ভেবে লাভ নেই।ও আমাদের মেয়ে জামাই।”

মহিলার মুখের হাসি কেমন ফ্যাকাসে হয়ে এলো।হিমুর মা মৃদু হেসে বলে,

—-“প্রলয় তো বিয়ের প্রস্তাব দিতেই পারছিল না।স্পর্শ আর জেরিন মিলেই তো প্রস্তাব দিলো।আমি প্রথমে না করবো ভেবেও স্পর্শের দিকে তাকিয়ে রাজি হই।এতো সুন্দর ভাবে কনভারস করেছে সে।”

নাজমুন বেগম একটু একটু করে অনুভব করছেন স্পর্শের গুরুত্ব কতটা।যেখানে যাচ্ছে স্পর্শের সুনাম শুনতে পাচ্ছেন তিনি।লতিফ সাহেব হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখেন ১২টা বেজে গেছে।বেশ ব্যস্ত হয়ে বলেন,

—-“অনেক রআর হয়ে গেছে।বাড়ি ফিরা দরকার তো আমাদের?”

নাজমুন বেগম আশে পাশে তাকিয়ে জসীম সাহেব কে কাছে ডাকে।গানের শব্দ তেমন কথাও শুনা যাচ্ছে না।নাজমুন বেগম নিচুস্বরে কানে কানে বলে,

—-“বাড়ি ফিরতে হবে আমাদের কিন্তু ছেলে মেয়েরা?”

জসীম সাহেব আশ্বস্ত করে বলেন,

—-“স্পর্শ তো আছে এখানে আর ওরা এখানে আনন্দ করছে করুক।আমরা ফিরে যাই কী বলেন লতিফ ভাই?”

____________________________

রাত প্রায় ১টা বাজে।ক্লান্ত হয়ে জেরিন চেয়ারে বসে।স্পর্শ গাল ফুলিয়ে নিশ্বাস নিয়ে পাশে বসে।জেরিন স্পর্শের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে সামনে তাকায়।প্রলয় হিমু বাকিরা এখনো নাচতে ব্যস্ত।স্পর্শের চোখ জেরিনের উপর।পাঞ্জাবির হাটা আরো গুটিয়ে শান্ত গলায় বলে,

—-“এভাবে আমাকে আহত না করে একদম নিহত করতে।”

জেরিন ভ্রু কুঁচকে বলে,

—-“আমি আহত করলাম কীভাবে?”

স্পর্শ বুকের বা পাশে জেরিনের ডান হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বলে,

—-“এভাবে স্টেজে আগুন লাগিয়ে।দেখো বুকের এই পাশে কী হচ্ছে?সব জেনো তোলপাড় করে দিচ্ছে তোমার চঞ্চলতা। ”

জেরিন লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো।আলতো কন্ঠে বলে,

—-“আপনি যে এভাবে মেয়েদের ক্রাশ হয়ে গেলেন?মেয়েরা তো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে আপনাকে।”

—-“তুমি আছো না, আমাকে লুকিয়ে রাখার জন্য।”

জেরিন মৃদু আঘাত করে স্পর্শের গালে।নিজের হাত ছাড়িয়ে স্টেজের দিকে চোখ স্তির করে।অল্প কিছু সময় পর রিয়াকে নিয়ে দুজন রওনা হয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। ২টার কাছে এসে মেইন দরজা খুলে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে তিন জন।রিয়া বিদায় নিয়ে গেস্ট রুমে চলে যায়।জেরিন স্পর্শের সাথে নিজ রুমে এসে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে শুয়ে পরে।দরজা বন্ধ করে স্পর্শ জেরিনের পাশে শুয়ে পরে।কিছু সময় নিরবতা পালন করে হুট করে স্পর্শ জেরিনের ঠোটে চুম্বন করে গভীর ভাবে।জেরিন শিউরে উঠে স্পর্শের পাঞ্জাবি খামচে ধরে।ধিরে ধিরে স্পর্শের ছোঁয়া গভীর হলো।গলা ছুঁয়ে নেমে এলো বুকে।বহুদিন পর স্পর্শের ভালবাসার প্রহরে আবদ্ধ হলো জেরিন।

চলবে

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here