#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব৩৩
স্পর্শ কাজ করতে করতে হাপিয়ে গেছে।আর মন লাগছে না এই ফাইল গুলোতে।পাশের চেয়ারে সাদা ব্যান্ডেজ কপালে করা জেরিন কে এক মনে দেখছে সে।টেবিলে বাম হাত তুলে মাথায় ঠেকিয়ে আছে।জেরিন মুচকি মুচকি হাসছে তা দেখে।মেয়েটাকে যত দেখে জেনো নতুন করে প্রেমে পরে।জেরিন ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
—-“কী দেখছো?”
স্পর্শ হেসে বলে,
—-“তোমাকে জেরিন।”
—-“দেখার মতো কী আছে স্পর্শ? ”
স্পর্শ জেরিনের গাল ছুঁয়ে বলে,
—-“সেটা তো আমিও জানি না। ”
জেরিন লজ্জা পেয়ে গেলো,
—-“ধ্যাত!”
জেরিন চেয়ার ছেড়ে উঠে কেবিনের বিশাল বারান্দায় এলো।সন্ধ্যা হয়েছে কিছুক্ষণ হলো।শিতল বাতাস ছুটছে চারপাশে।আকাশে তারার মেলা।বারান্দার রেলিঙ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে জেরিন।স্পর্শ পাশে এসে নিঃশব্দে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো জেরিন কে।জেরিন মৃদু ব্যস্ত হয়ে বলে,
—-“কী করছো কেউ দেখবে? ”
স্পর্শ নিঃসংকোচে বলে,
—-“আমার বউ কে আমি ধরেছি,এতে কার কী বলার আছে?”
—-“ওহ তাই?”
—-“হ্যা!”
জেরিন এবং স্পর্শ দুজনেই হেসে দিলো।বারান্দার চারপাশে থাকা আলো গুলো খুব সুন্দর করে জ্বলে উঠে।পুরো শহর ভালবাসায় রঙিন হয়ে যায়।
.
.
.
.
নাজমুন বেগম বসার ঘরে বসে রাগে ফুসছেন।হাসান বহুবার জেরিনের নামে অনেক কথা বলেছে কিন্তু এবার মারাত্মক বিচার দিয়েছে।ধিরে ধিরে স্পর্শের প্রতি জন্ম নেওয়া ভালো লাগে আজ এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না স্পর্শ কে এ’বাড়িতে সবাইকে বিশ্বাস করাতে এনেছে সে বিবাহিত।রাগে, অপমানে তিনি আজ ক্ষিপ্ত।জসীম সাহেব বার বার বুঝাতে চাইছে কোথাও ভুল আছে।স্পর্শের মাঝে কোনো খারাপ নেই।লতফ সাহেব একটু হলেও ধরাতে চাইছে ওরা আসলে সত্যি না হয় জানা হবে।নাজমুন বেগনের একই কথা মেয়েকে জন্ম দিয়ে ভুল করেছেন।তার মেয়ে চরম বেহায়া এবং চরিত্রহীন হয়ে গেছে।
দরজায় বেল বাজতেই সবাই উত্তেজিত নয়নে তাকালো।কাজের মেয়ে দরজা খুলে সরে এলো।স্পর্শ জেরিনের হাত ধরেই বাড়িতে প্রবেশ করে।নাজমুন বেগম এবং বাকিদের দেখে সালাম দিলো স্পর্শ। নাজমুন বেগম কিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।জসীম সাহেব হাসার চেষ্টা করে বলেন,
—-“ফ্রেশ হয়ে এসো বাবা।”
স্পর্শ হেসে সম্মতি দিলো।রুমে পা বাড়াতেই পিছু থেকে নাজমুন বেগম বলেন,
—-“জেরিন এদিকে এসো!”
স্পর্শের দিকে একবার চেয়ে সে বসার ঘরে গেলো।স্পর্শ স্বাভাবিক ভাবেই রুমে চলে গেলো।নাজমুন বেগমের সামনে আসতেই ক্ষিপ্ত হয়ে গায়ে হাত চালাতে গেলেন।সেলিনা এবং জসীম সাহেব দ্রুত বাধা দিলো।জেরিন আতঙ্কিত নয়নে তাকিয়ে আছে।সেলিনা দ্রুত জেরিনের বুকে টেনে নিলেন।নাজমুন বেগম উচ্চস্বরে বলেন,
—-“এতো সাহস বেড়েছে হ্যা? ঘর থেকে পালিয়ে এক দিনের একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয় যা ইচ্ছে তাই করছিস।হাসানের হাত থেকে বাচার জন্য অচেনা ছেলে কে স্বামী বানিয়ে নিয়ে আসলি।আবার এক সাথে এক বিছানায় থাকছিস।কী ভেবেছিস তোর এসব জানতে পারবো না?বিয়ে না করে একদিনের একটা ছেলে ধরে ছি!”
জেরিন বিস্মিত হয়ে গেছে।নাজমুন বেগম কী বলছেন এসব?একদিনের পরিচয় এটা সত্যি কিন্তু এইসব তো মিথ্যে।জেরিন ভিত কন্ঠে বলে,
—-“কী বলছো এগুলো? এগুলো মিথ্যে…!”
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই সজোরে বাম গালে থাপ্পড় বসালেন নাজমুন বেগম।নিমিষেই মায়াবি চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে।সেলিনা পরের বার নাজমুন বেগমের হাত ধরে ফেলেন।জেরিন কে ব্যস্ত হয়ে বলেন,
—-“মা তুই রুমে যা। ”
জেরিন নির্বাক হয়ে দুলো দুলো পায়ে রুমে এলো।স্পর্শ এখনো গায়ের পোশাক বদলায়নি।সবে চোখে মুখে পানি দিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছে।অফিসিয়াল কল ধরতে বারান্দায় চলে যায়।তাই নাজমুন বেগমের বলা কথা কানে আসেনি।জেরিন অশ্রুসিক্ত চোখে রুমে প্রবেশ করতেই স্পর্শের কপালে ভাজ পরে যায়।ব্যস্ত হয়ে জেরিনের গাল ছুঁয়ে বলে,
—-“কী হয়েছে কাঁদছ কেনো?মা কিছু বলেছে?”
জেরিন উত্তর দিলো না।মাথা নিচু করে আছে।বাইরে থেকে নাজমুন বেগমের জ্ঞান হারা চেঁচামেচি শুনে স্পর্শের কান দাঁড়িয়ে গেলো।নাজমুন বেগম এক নাগাড়ে বলেই যাচ্ছেন,
—-“আমি জানতাম এই ছেলে অসভ্য, বেহায়া।বাইরে ছেলেদের প্রতি নজর তাই হাসান কে পাত্তা দেয় না।কিন্তু এতো বড় বেয়াদব জানতাম না।শুধু কী তাই?এতো বড় চরিত্রহীন একটা মেয়ে।আমি ভেবেছি সব মেনে নিবো কিন্তু একটা অপরিচিত ছেলে ঘরে এনে আমাদের স্বামি বলে নষ্টামি করছে।হাসান না বললে জানতামই না। কক্সবাজারে যেয়েও নিশ্চয় আরো ছেলেদের সাথে এমন করেছে।আমি একঅতা বেশ* জন্ম দিয়েছি।”
জেরিন এবার শব্দ করে কেঁদে দিলো।স্পর্শের চোখ লাল হয়ে যায়।শার্ট এর হাতা তুলে জেরিন কে রুমে রেখে বসার ঘরে পা দিলো।সেলিনা এবার চেতে উঠে বলেন,
—-“মুখের ভাষা ঠিক কর। মেয়েটা কে কী বলছিস এসব?”
জসীম সাহেব ধমকে বলেন,
—-“আর একটা কথা বললে আমি তোমার খবর করে দিবো।আমার মেয়ের বিষয় না জেনে কিছু বললে আমি কী করবো কল্পনাও করতে পারবে না।”
নাজমুন বেগম চেতে বলেন,
—-“ভুল কী বলেছি আমি? এসব মেয়ে থাকার চেয়ে না..”
—-“আর একটা শব্দ আমার ওয়াইফের বিরুদ্ধে বললে আমি কিন্তু ভুলে যাবো আপনি জেরিনের মা।আপনার সাহস কী করে হলো এসব বলার?”
নাজমুন বেগম রেগে বলেন,
—-“কিসের ওয়াইফ? ভদ্র ঘরের ছেলে হয়ে মেয়ে ছেলের কথায় এভাবে একই বিছানায় থাকতে লজ্জা করে না? তোমার বাবা মা এসব শিক্ষা দিয়েছে?বিয়ে ছাড়া রাত কাটাতে খুব মজা লাগে তাই না?”
জসীম সাহেব বেশ চেষ্টা করলেন নাজমুন বেগমকে থামাতে।স্পর্শের লাল চোখ এবার ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে।ঘর কাপিয়ে স্পর্শ বলে,
—-“সাট আপ! জেরিন আমার ওয়াইফ।আমাকে অনেক কিছু বলেছেন আমি কানে তুলিনি।কিন্তু আজ আমার ওয়াইফের চরত্র তুলে কথা বলার সাহস কোথায় পেলেন আপনি?কক্সবাজারে ওপর ওয়ালার ইচ্ছে দুদিনের পরিচয়ে পবিত্র বিবাহ নামক সম্পর্কে আমরা বাধা পরেছি।সেদিন মাওলানা সাহেব এবং তার ছেলে আমাদের বিয়ে না দিলে হয়তো আমি জীবনে সব চেয়ে দামি, আমার জেরিন কে পেতাম না।আমাদের মাঝে খারাপ সম্পর্ক থাকলে সেই রাতে অনেক কিছু হয়ে যেতো।কিন্তু আমরা এমন কিছুই করিনি।মেয়েটা কীভাবে আছে কী করছে তা না জেনেই ৭ মাস ধরে দুজন দুই প্রান্তে থেকেও চেয়েছি জেনো আমার জেরিন ভালো থাকে।ভাগ্য আমাদের আবার ও সেদিন মিলিয়ে দেয়।এ বাড়ি আসা এবং জেরিন কে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসা।আমি অবাক হচ্ছি আপনি জেরিনের মা।আপনি তো কোনো সন্তানের মা হওয়ার যোগ্য না।হাসানের মতো চরিত্রহীন ছেলের হাতে আমার জেরিন কে তুলে দিতে চেয়েছিলেন আপনি।আজ বাজারের মেয়ের সাথে তুলনা করে আপনি অনেক বড় ভুল করেছেন।আমাকে যা ইচ্ছে বলেছেন কিন্তু অন্যের কথায় কীভাবে নিজের মেয়েকে বাজে চোখে দেখলেন?আমাকে নিয়ে এতো ঝামেলা সো ফাইন! আমি এখনি চলে যাচ্ছি! তবে আমার জেরিন কে আর এক শব্দ কথা আপনি বলে বিপদ ডেকে আনবেন।”
স্পর্শের গর্জনে সবাই নিশ্চুপ হয়ে যায়।রুমে এসে নিজের ব্যাগ পাকিং শুরু করে স্পর্শ। জেরিন কিছু বলার সাহস ও পাচ্ছে না।নাজমুন বেগম এতো সময়ে জ্ঞান ফিরে পেলেন।সে জ্ঞান হারিয়ে কী বলছিল এতো সময়?নাজমুন বেগমের বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হলো।দুচোখ ঝাপসা হয়ে এলো।জসীম সাহেবের কথার মাঝেই নাজমুন বেগম বুকে হাত রেখে ফ্লোরে বসে পরেন।সবাই আতকে উঠে।সবার অস্থির আওয়াজে স্পর্শ নিজের রাগ ভুলে সেদিকে ছুটে গেলো।জেরিন ও পিছন পিছন গেলো।
—-“ওনার কী হয়েছে বাবা?”
স্পর্শের কথায় সেলিনা উত্তেজিত হয়ে বলে,
—-“বাবা ওর অতিরিক্ত চিন্তা এবং হার্ট এর সমস্যা আছে।ওর বুক ব্যথা করছে।”
নাজমুন বেগম দুচোখ বন্ধ করে নিলেন।স্পর্শ দ্রুত নাজমুন বেগম কে কোলে তুলে নিলেন।ব্যস্ত হয়ে জেরিন কে বলে,
—-“দ্রুত গাড়ি বেড় করো আর আমার ফোন থেকে বাবাকে ম্যাসেজ দাও হসপিটাল আসার জন্য।”
#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব৩৪
হসপিটালের নির্দিষ্ট কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে পরিবারের সবাই।জসীম সাহেব নিশ্চুপে টুলে বসে আছেন।দেয়ায়ালে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্পর্শ। তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে জেরিন।সেলিনা বেগম ও সেই কান্না দেখে কাঁদছেন।জন্মের পর থেকেই জসীম সাহেব দেশের বাইরে ছিলেন।একা হাতে বড় করেছে জেরিন কে নাজমুন বেগম।চোখের আড়াল হলে পাগলের মতো কাঁদতেন তিনি।হঠাৎ কী এমন হলো যে সব এলোমেলো হয়ে যায়? হাসানের সাথে মুখিক বিয়ের পর পরই মারা যান জেরিনের নানা।মায়ের কাছ থেকে অনেক আশা,আবদার জেরিনের।সেই নিয়েই মনের মাঝে বিশাল অভিমান। হাসানের সাথে মুখিক বিয়ের সময় মা বলে ছিলেন ৬ মাস পরই এই বিয়ে ভেঙে দিবো আম্মু।কেনো আর তা হলো না?জেরিন মুখ ওড়না চেপে কাঁদছে। স্পর্শ সেই কান্না দেখে অস্থিরতা নিয়ে তাকিয়ে আছে।আর সহ্য করতে পারছে না সে।জেরিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্পর্শ। জেরিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে,
—-“আম্মুর কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।আমার জন্য আম্মুর এই অবস্থা।”
স্পর্শ লম্বাশ্বাস ফেলে বলে,
—-“আমার জন্য আজ এতো কিছু হলো।রাগের মাথায় কিছু না বললেই হতো।আমি চলে যাবো। ”
জেরিন চোখ তুলে তাকায়।স্পর্শের শার্ট ধরে বলে,
—-“আমি তাহলে কোথায় যাবো?”
স্পর্শের চোখেও পানি দেখা যাচ্ছে।ডাক্তার ব্যস্ত চালে বাইরে আসেন।২ ঘন্টা অপেক্ষার পর হয়তো এবার কিছু বলবে ডাক্তার।জেরিন এবং জসীম সাহেব অস্থির হয়ে ডাক্তারের সামনে এলো।
—-“আমার স্ত্রী কেমন আছে?”
—-“আমার আম্মু চোখ খুলেছে?”
ডাক্তার তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বলেন,
—-“এই যাত্রা বেচে গেলেন তিনি।খেয়াল রাখবেন জেনো হাসি খুশি থাকে।আর হ্যা, স্পর্শ আর জেরিন ক্ব ভিতরে ডাকছে।”
ডাক্তার কথা বলেই দ্রুত চলে গেলো।জেরিন আর স্পর্শ দ্রুত কেবিনে প্রবেশ করে।মুখে অক্সিজেন মাস্ক, হাতে সেলাইন চলছে।আদো আদো চোখ মেলে জেরিনের দিকে চেয়ে আছে।নাজমুন বেগমের চোখে পানি।জেরিনের চোখ থেকেও পানি ঝরছে।নাজমুন বেগম হাতের ইশারায় কাছে ডাকে।জেরিন স্পর্শের দিকে তাকালে স্পর্শ সম্মতি দেয়।দুজন নাজমুন বেগমের কাছে এলো।জেরিন নাজমুন বেগমের এগিয়ে দেওয়া হাত ধরে কেঁদে উঠে।নাজমুন বেগম মুখের মাস্ক খুলে নিচুস্বরে বলেন,
—-“আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা।আমি যা করেছি জেরিনের ভালোর জন্য।ছোট থেকে মেয়েটা প্রচুর মা ভক্ত।এমন ও হয়েছে আমাকে না দেখে কেঁদে জ্ঞান হারিছে।ওর যখন ১০ বছর তখন থেকে আমি অসুস্থ। বুক ব্যথা,মাথা ব্যথায় কাতর হয়ে যেতাম।দেশের বাইরে ডাক্তার দেখালে জানতে পারি আমার এক পাশের লাঞ্চে পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে।”
স্পর্শ অবাক চোখে তাকালো।এই গম্ভীর মানুষ টা কে দেখে একদমই তা মনে হয় না।জেরিন ফুঁপিয়ে বলে,
—-“তুমি তো বলেছো ভালো হয়ে গেছে সব।”
নাজমুন বেগমের চোখের কোণ বেয়ে পানি পরলো।তিনি ধরা গলায় বলেন,
—-“মিথ্যে বলেছি!ওষুধ খেয়ে কয়েক বছর ভালো থাকার পর ব্যথা আরো বেড়ে যায়।ওর যখন ১৩ বছর তখন ডাক্তার আমাকে ৬ মাসের সময় দেয় এর বেশি আমার আয়ু নেই।হঠাৎ হাসান পিছু পরে জেরিনের জন্য।ছেলেটার নামে এতো মামলা,এতো অভিযোগ শুনে আমি না করে দিলেও তারা আমার ভাই লতিফের দোকানে যেয়ে হাতে -পায়ে পরে।আমার বাবা নাম করা ব্যক্তি ছিল।উনি হঠাৎ রাজি হয়ে গেলেন।এক প্রকার চাপে পরে মেয়েটার মুখিক বিয়ে দেই।ছোট মানুষ ছিল তাই বলি,৬মাস পর এই বিয়ে থাকবে না।ভেবেছি ৬মাস পর মেয়েটা আমাকে হারিয়ে হয়তো সব মেনে নিবে।দিনে দিনে অসুস্থতা বেড়ে গেলো।হাসান তারই সুযোগ নিয়ে জেরিনের উপর ঝাপিয়ে পরে।কী হচ্ছিল আমি কিছুই জানতাম না।আমার মাথার সমস্যার জন্য অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে সামনে থাকা ব্যক্তির কথায় চলে যাই।তখন ও আমার মাথা ব্যথা অবস্থায় হাসান তারই সুযোগ নিয়ে যা বলেছে আমি শুনেছি।জেরিন আমার কাছে অভিযোগ করলে আমি অবাক হতাম।আমার কিছুই মনে থাকতো না।এভাবেই কয়েক বছর চলে যায়।হাসান নিজেকে সব সময় ভালো হিসেবে তুলে ধরেছে।জসীম সাহেব দেশে ফেরার পর আমার জ্ঞান ফিরে।আমি জেনো কিছুই বলতে পারতাম না। কারণ আমার দূর্বলতার ছিল জেরিন।ওর ক্ষতির কথা আমাকে বলতো আমি তা মেনে নিতে পারতাম না।হাসান আমার বাবাকে এ’বিষয় অনেক ব্ল্যাকমেইল করায় উনি মারা যান।সেদিন জেরিন পালিয়ে না গেলে আমি হয়তো বাচাতে পারতাম না।আজ হাসান কল করে আমাকে অনেক অপমান করে।আমার মেয়েটাকে নিয়ে বাজে কথা বলে তাই জ্ঞান হারিয়ে অনেক কথাই বলেছি।তুমি যদি আমাকে না থামাকে আমি … ”
নাজমুন বেগম কেঁদে দিলেন।স্পর্শ সবটা শুনে নাজমুন বেগমের হাত ধরে বলে,
—-“আপনি আমাকে মাফ করে দিন।আপনি আগে কেনো এসব বলেন নি, আন্টি?”
—-“আর কত আন্টি বলবে,এবার একটু মা বলে দেখো বাবা!”
জেরিন অশ্রুসিক্ত চোখে স্পর্শের দিকে চাইলো।স্পর্শ ছলছল চোখে শান্ত গলায় প্রথমবার মা বলে ডাকে,
—-“মা!”
নাজমুন বেগম পরম আদরে স্পর্শের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।একে একে সবাই নাজমুন বেগমের সাথে দেখা করে।জেরিন কেবিনের বাইরে এসে স্তির হয়ে বসে আছে। স্পর্শ পাশেই বসে ভাবছে।
—-“আমাকে এতো ভালবাসে আম্মু, জানতামই না!”
জেরিনের চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে।স্পর্শ জেরিনকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
—-“আমি ভাবতাম তিনি কেমন মা? কিন্তু আজ বুঝলাম, কোনো মা সন্তানের খারাপ চায় না।আমরা এখন থেকে মা কে অনেক যত্নে রাখবো।”
জেরিন স্পর্শের মুখে মাথা রেখে বলে,
—-“সত্যি আমি অনেক বোকা!”
______________________________
হসপিটালে প্রতিটা সময় স্পর্শ নাজমুন বেগমের পাশে ছায়ার মতো বসে থাকে।কখন কী লাগবে, কী খাবে সব দিকে চোখ।মাঝে মাঝে জেরিনের সাথে হয়ে যাওয়া বিয়ের গল্প ও বেশ মজা করে শুনায়।নাজমুন বেগম ও বেশ আনন্দ পায় স্পর্শের কথায়।অফিসের কথা,পরিবারের কথা সব জেনো ধিরে ধিরে নাজমুন বেগম কে না বললে হচ্ছেই না স্পর্শের। নাজমুন বেগম ৩ দিন হসপিটালে ছিলেন।স্পর্শের কাধে হাত রেখেই বাসায় ফিরেন নাজমুন বেগম।
নাজমুন বেগম সোফায় বসে আছে।সবাই আজ অনেক খুশি।স্পর্শের হাতের রান্না খেয়ে নাজমুন বেগম প্রশংসা করে অস্থির।জেরিনের অভিমান তার রান্নার প্রশংসা করেন না নাজমুন বেগম।স্পর্শ বেশ চিন্তিত হয়ে নাজমুন বেগমের পাশে বসে।নাজমুন বেগম তা দেখে বলেন,
—-“কী হয়েছে তোমার?”
স্পর্শ চিন্তিত কন্ঠে বলে,
—-“মা – বাবা কাল জেরিন কে দেখতে আসবে।”
—-“এতে চিন্তিত হওয়ার কী আছে বাবা?”
স্পর্শ নিচুস্বরে বলে,
—-“কিন্তু মা,উনারা আমাদের বিয়ের কথা জানেন না আর আমি এখানে থাকি সেটাও জানে না।”
চলবে..
(