#ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে
#পর্ব_তৃতীয়
#লেখিকা_দিয়া
সকাল ৭ টা,
ঝড়ের গতিতে পেরিয়ে গেলো গোটা একটা দিন।বাড়িতে এখন মানুষ বলতে আমরা ৫ জন। শুভ্রের হসপিটাল থেকে কল আসা শুরু হয়ে গেছে। যেহেতু তাড়াহুড়োর মধ্যে ছুটি নিয়ে আসতে পারেনি তাই এত কল।অনেক কষ্টে ২ দিনের ছুটি নিতে পেরেছে। কালকে আবার হসপিটালে থাকতে হবে।তাই আজকেই আমাদের ফিরতে হবে। উঠানে হাটাহাটি করছিলাম আর ভাবছিলাম কালকের কথা,
আসতে কালকে বড্ড দেরি করে ফেলেছিলাম বোধহয়। তাই তো আমি আসার আগেই আব্বু চলে গেলো চিরবিদায় নিয়ে।আম্মু রিনি মিনি এত কান্না করলো কিন্তু আমি শুধু পাথরের মূর্তির নির্বিকার ভঙ্গিতে আব্বুর পাশে বসেছিলাম। শুভ্র আসার পরই সবকিছু জানতে পেরে গ্রামের লোকদের সাথে আব্বুর দাফনের ব্যবস্থা করতে থাকে।টানা দুই থেকে তিন ঘন্টা আব্বুর পাশে বসে রইলাম তবুও আমার চোখ গড়িয়ে এক ফোঁটা ও পানি পরেনি। কথায় আছে না অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর।আমার অবস্থা ও ঠিক সেই রকমই হয়ে গিয়েছে। বার বার মনে হচ্ছে আব্বুর শেষ সময়টাতে আমি তার পাশে থাকতে পারলাম না।কত বড় ব্যর্থ মেয়ে আমি।এসব ভাবতে ভাবতে ভাবনার জগতের গভীরে তলিয়ে গিয়েছিলাম আমি।হঠাৎই রিনি এসে ডেকে উঠলো আমাকে,
আপি – রিনি
হ্যা রিনি বল – আমি
চল নাস্তা করবে।সেই কখন থেকে উঠানে এসে বসে আছো – রিনি
হুম আসছি। মিনি কোথায় ? – আমি
ও আম্মুর সাথে নাস্তা সাজাচ্ছে। চলো তুমি- রিনি
হুম চল – বলে আমি রিনির সাথে ঘরের ভিতরে চলে আসলাম
খাবার টেবিলে নিরবতা ভেঙে হঠাৎ শুভ্র বলে উঠলো,
রিনি মিনি কোন ক্লাসে এবার তোমরা ? – শুভ্র
কিছুদিন আগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে শেষ করলাম ভাইয়া – মিনি
ও এখন তো কলেজে ভর্তি হবা।তো এখানেই কি পড়ার ইচ্ছে নাকি শহরে কোথাও পড়তে চাও ? – শুভ্র
ইচ্ছে তো আছে ভাইয়া ঢাকা পড়ার।এখন জানিনা কি হবে – রিনি
আম্মু৷ আমি একটা কথা ভেবেছি – শুভ্র
বলো বাবা – আম্মু
রিনি আর মিনি বড় হয়েছে একা বাড়িতে ওদের নিয়ে একা থাকা একটু ও নিরাপদ নয়।তার মধ্যে গ্রামে। আমি চাচ্ছি আপনারা ঢাকায় চলে আসেন।আমি একটা বাসা খুঁজে দেই আমাদের বাসার আশেপাশে। রিনি মিনি ও ঢাকায় পড়াশোনা করতে পারলো। আপনারা সবাই নিরাপদে থাকতে ও পারলেন – শুভ্র
না বাবা আমার মানুষটা নিজের শেষ সময়টুকু এখানে কাটিয়েছে।আমি যতদিন বেঁচে আছি মানুষটার স্মৃতি গুলো সাথে নিয়েই বাঁচতে চাই।এই ঘরবাড়ি ছেড়ে যে আমি কোথাও যেতে পারব না – আম্মু
তাহলে আম্মু রিনি মিনির নিরাপত্তার ও তো একটা ব্যাপার আছে। সেই ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন ? – শুভ্র
একটা কাজ করি শুভ্র – আমি
কি কাজ ? – শুভ্র
রিনি মিনির রেজাল্ট না দেওয়া পযন্ত ওরা নাহয় আমাদের সাথে আমাদের বাসায়ই থাকুক।তারপর যেই কলেজে ভর্তি হবে তার কাছে ভাল একটা হোস্টেল দেখে ওদের থাকার ব্যবস্থা করে দিব – আমি
কথাটা তুমি খারাপ বলোনি।আম্মা আপনি কি বলেন? – শুভ্র
দেখো তোমরা দুইজনে যা ভালো মনে হয় কর।আমি আর কি বলবো – আম্মু
কিন্তু আম্মু তুমি একা এখানে কি ভাবে থাকবে ? – আমি
আমার কোনো সমস্যা নাই রে মা।আমার মানুষ টা সবসময় আমার সঙ্গেই থাকবে – আম্মু
তাহলে রিনি মিনি তোমরা তোমাদের কাপড় গুছিয়ে ফেলো আর কিছুক্ষণ পরেই আমার রওয়ানা দিব – শুভ্র
আচ্ছা ভাইয়া – মিনি
~~~~~~~~~~~
বাসায় আসতে আসতে আমাদের রাত সাড়ে নয়টা বেজে যায়।আম্মুকে একা ফেলে আসতে মন চাচ্ছিল না। তবুও আমি আমার মাকে চিনি। আব্বুকে প্রচুর ভালোবাসে মানুষটা। আব্বুকে রেখে কখনো নিজের বাবার বাসায় ও থাকেনি মানুষটা।
ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব কথাই চিন্তা করছিলাম। তখন আমার পাশে এসে দাঁড়ালো শুভ্র। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলতে শুরু করলে,
মন খারাপ তোমার ? – শুভ্র
না – আমি
দেখো ঝিলিক সবারই একদিন যেতে হবে। তুমি স্বাভাবিক ভাবে ব্যাপারটাকে মেনে নাও।মনে থেকে দোয়া কর আব্বু যেন জান্নাতবাসী হয়।তুমি তার জন্য যত মন খারাপ করে থাকবে সেটা ততই খারাপ – শুভ্র।
হঠাৎই আমি একটি অনাঙ্ক্ষিত কান্ড ঘটিয়ে ফেললাম শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলাম। শুভ্র হয়তো আমার অবস্থাটা বুঝতে পেরেছিল।তাই শুভ্র ও আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল।আমি কান্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠলাম,
কেন এমন হলো শুভ্র ? আল্লাহ কেনো আমার আব্বুকে আমার কাছে থেকে নিয়ে গেলো ? মানুষটা যে আমাকে বড্ড বেশি বুঝতো।আমার কন্ঠস্বর শুনেই আমার আব্বু আমার মন খারাপ ধরে ফেলতে পারতো।আমি যে পারছিনা এটা মানতে শুভ্র – আমি
শুভ্র নিশ্চুপ হয়ে আমার মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলে।এভাবে ক্লান্তির ফলে আমি এই অবস্থায়ই একসময় ঘুমের কোলে ঢলে পড়লাম।ঝিলিক ঘুমিয়ে যেতেই শুভ্র ঝিলিককে কোলে করে রুমে নিয়ে আসলো।তারপর সুন্দর করে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।ঝিলিকের দিকে তাকিয়ে শুভ্র বলতে লাগলো,
কি এমন হতো ঝিলিক আজকে আমাকে না ঠকালে।তুমি আর আমি ও তো আর কোন পাঁচ দশটা স্বাভাবিক দম্পতির মতো সুখে শান্তিতে মিলেমিশে সংসার করতে পারতাম।কাজটা তুমি ঠিক করোনি ঝিলিক।এর জন্য তোমার অনেক শাস্তি পাওনা রইলো – বলে শুভ্র রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো।
সময় স্রোতের মতো প্রবাহমান। কোনো পিছুটান নেই সময়ের। তাই নিজের গতিতে সবসময় নিজের মত চলতেই থাকে।দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে আরো কিছু মাস।এই কিছু মাসে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। রিনি আর মিনিকে শুভ্র স্বনামধন্য একটা কলেজে ভর্তি করে দিয়েছে। কলেজের পাশেই বেশ ভালো একটা হোস্টেলে ওদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে শুভ্র। সবকিছুরই কমবেশি পরিবর্তন ঘটলেও কোনো পরিবর্তন নেই আমার আর শুভ্রের সম্পর্কের মাঝে।কোনো উন্নতি বা অবনতি কিছুই হয়নি আমাদের। আজকে বাসায় অনেক আয়োজন চলছে কারণ বাসায় আজকে আম্মার বোনের পুরো পরিবার আসবে। তাই আম্মা আর আমি দুজনেই সকাল থেকে ব্যস্ত রান্নার কাজে।মানুষ আসবে তিনজন।কিন্তু তাদের পছন্দের পরিমাণ অতুলনীয়।আমার খালা শাশুড়ির পছন্দ ইন্ডিয়ান সব খাবার। আবার তার মেয়ে মানে আমার খালাতো ননদ ইশিতার পছন্দ সব বিদেশি আইটেম, আমার খালা শাশুড়ির জামাইয়ের কোনো ভেজাল নেই।মানুষটা যা পায় তাতেই খুশি।উনার পরিবারে উনিই একমাত্র আমার পছন্দের ব্যক্তি।কাজের মাঝেই হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।আমার শাশুড়ী তারাতাড়ি করে চলে গেলেন দরজা খুলতে।আর আমি নাস্তার আয়োজন করতে লাগলাম।তারপর উনারা বসার পর উনাদের সামনে নাস্তা নিয়ে গেলাম।যখন আমি তাদের নাস্তা হাতেহাতে এগিয়ে দিচ্ছিলাম তখন আমার খালা শাশুড়ি বলে উঠলেন,
তা তোমার কি খবর ঝিলিক ? – খালা শাশুড়ি
এই তো খালা ভালই। আপনি কেমন আছেন ? খালু ভালো আছেন ? ইশিতা তোমার কি অবস্থা?- আমি
এই তো মা ভালো – খালু
আমিও ভালো আছি – খালা শাশুড়ি
ইশিতা আমার কথার কোনো জবাব দেয়নি।আমিও আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসি সেখান থেকে।রাত ৯ টা বাজে।শুভ্রের আসার টাইম হয়ে গেছে।হঠাৎ করে আবারো কলিং বেল বেজে উঠলো।আমি যেই না রুমে থেকে বেরিয়ে দরজা খুলতে যাবো আমার আগে ইশিতা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো এবং শুভ্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,
আই মিস ইউ শুভ। আই মিসড ইউ সো মাচ ডিয়ার। কেমন আছো তুমি?- ইশিতা
চলবে 🥰🥰