#ভালোবাসব_যে_তোকে🍁
পার্ট ১৪
লেখিকাঃসারা মেহেক
🍀🍁
আয়ান আর কিছু না বলে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।খুব রাগ লাগছে তার। খুব মানে খুব।। এখন মনে হচ্ছে সব কিছু ভাঙতে পারলে তার ভালো লাগতো।
“মৌ তুই তো আমাকে একবার বলতি।তুই ও বললি না!! তোকে ছাড়া থাকতে যে আমার কতোটা খারাপ লাগে তা বুঝাবো কি করে তোকে??আমার মনে হচ্ছে এখন তোকে ছাড়া নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।”
আয়ান আর কিছু বা ভেবে সোজা ওয়াশরুমে গেলো শাওয়ার নিতে।কিছুক্ষণ পানির নিচে থাকলে যে তার রাগ কিছুটা কমবে এটা জানে সে।প্রায় ১০ মিনিট পর সে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে খাটে বসে। একা একা তার একটুও ভালো লাগছে না।
কিছুক্ষণ পর তার দরজায় নক পরে। সে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে যে দাদি আর আম্মু দাঁড়ীয়ে আছে।
উনাদের দেখে আয়ান কিছু না বলে আবার খাটের উপর বসে।দাদি গিয়ে আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
“আমার উপর অনেক রাগ করেছিস তাইনা??”
এ কথা শুনে আয়ান কিছু বললো না। দাদি আবারো বললো,
“জানিস আমার না খুব ইচ্ছা আমার নাতির প্রেম করা দেখবো আমি।”
দাদির এ কথা শুনে আয়ান বেশ অবাক হয়ে যায়। সে বুঝতে পারছে না যে দাদি হুট করে এমন সব আজগুবি কথা কেনো বলবে।সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে দাদির দিকে তাকায়।দাদি আয়ানের দিকে চেয়ে আবার বললেন,
“দেখ তোদের বিয়ের এখনো ২ সপ্তাহ এর কিছু কমদিন বাকি।তুই কিন্তু চাইলেই এ কয়দিনটা একদম নিজের মনের মতো কাটাতে পারিস।”
“দাদি এসব কি বলছো তুমি??আমার মৌ কে ছাড়া একদম ভালো লাগছে না আর তুমি আমাকে মনমতো সময় কাটাতে বলছো!!”
এর মধ্য আবার অহনা এসে যোগ দিলো। সে আয়ানকে বললো,
“আরে ভাইয়া দাদি সেটা বলেনি। দাদি বলেছে। তুই চাইলেই কিন্তু এ কয়দিন মৌ এর সাথে প্রেম করতে পারিস।যাকে বলে বিয়ের আগে প্রেম।”বলেই অহনা,দাদি আর আম্মু মিলে হাসতে থাকে।
আয়ান তো এসব শুনে অবাক হয়ে যায়।সে বলে,
“মানে তোমরা বলছো আমি মৌ এর সাথে প্রেম করবো!!!”
আম্মু বললো,
“তা নয়তো কি। তোর ইচ্ছামতো প্রেম করবি। কেউ কিছু বলবে না। আর দেখ তুই কতো ভাগ্যবান। তোর ফ্যামিলি তোকে ঠেলছে প্রেম করার জন্য। এমন ফ্যামিলি কয়জনের হয় বলতো??”
“হুম ভাইয়া আম্মু একদম ঠিক বলেছে।জানিস মৌ একদিন বলেছিলো,ওর খুব ইচ্ছা বর এর সাথে প্রেম করবে। একদম ফিল্মের মতো প্রেম করবে।
আর মৌ এর ইচ্ছা পূরন করার এটা খুব সুন্দর একটা ওয়ে। তুই একদম ফিল্মের হিরোদের মতো মৌ এর সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করবি।সারারাত ফোনে কথা বলবি।
চিন্তা করছিস একবারো এসব হুম??”
আয়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। এরা যে এমন কথা বলবে এমন সব প্ল্যানিং করবে তা ধারনাও করতে পারেনি সে।
আম্মু বললো,
“দেখ আয়ান তুই এখন যে প্রেম করবি তাতে কিন্তু কোনো অপবিত্রতা থাকবে না। আর অবৈধও কিছু হবে না। কারন তোরা আগে থেকেই স্বামী স্ত্রী। অনেকের ইচ্ছা থাকে যে বিয়ের আগে প্রেম করবে।মৌ এর অবশ্য ইচ্ছা বিয়ের পর প্রেম করবে।
এভাবে কিন্তু মৌ এর ইচ্ছাও পূরণ হচ্ছে।একবার ভেবে দেখিস সব।”
আয়ান খুশি মনে বললো,
“এতে ভাবার কি আছে। আমার ফ্যামিলি এর মহিলাদল যে এতো ভালো তা কি আমি জানতাম নাকি।আর মৌ এর এ ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ করবো। এন্ড থ্যাংকস টু মাই সুইট দাদি।আমাকে নিয়ে যে তুমি এতো ভাবো তা কি জানতাম আমি!!”
দাদি বেশ ভাব নিয়ে বললো,
“হয়েছে হয়েছে আর এতো পাম দিতে হবে না।আমার নাতি না তুই,এতটুকু তো খেয়াল রাখতেই হয়।”
“যা ভাইয়া জি লে আপনি জিন্দেগি।”বলে অহনা খিলখিল করে হেসে দেয়। কিন্তু তার মনটা একটু খারাপও বটে। তারও বেশ ইচ্ছা হচ্ছে আয়ান আর মৌ এর মতো এভাবে প্রেম করতে। কিন্তু তা হওয়া পসিবল না। হওয়া উচিতও না।ফাহাদ এ পর্যন্ত তাকে ফোন দেয়নি।নাম্বারই কালেক্ট করেছে নাকি কে জানে।
আয়ানের সাথে সবাই কিছুক্ষণ কথা বলেই চলে যায়। আর আয়ান শুয়ে রেস্ট নেয়।তার মনটা এখন অনেক খুশি। ঘন্টাখানেক আগেও যে সে এতো রাগ করেছিলো, এখন একটুও রাগ নেই তার।
আর এদিকে মৌ বাসায় এসে তার আব্বু,আম্মু, ভাইয়ার সাথে বেশ কিছুক্ষণ ধরে গল্প করে। তারপর রাগের খাবার খেয়ে রুমে আসে সে।কিন্তু রুমে আসার পর তার মনটা খারাপ হয়ে যায় আবার।আয়ানের কথা তার খুব মনে পরছে। ইচ্ছা করছে তাকে দেখতে।কিন্তু সে তো আর জানে না আয়ান, আর বাকি সবার প্ল্যানিং।
আয়ানের সাথে কাটানো কিছু মূহুর্তের কথা চিন্তা করতে করতে যে কখন চোখ ঘুমে জরিয়ে যায় সে টের ই পায়নি। ঘুম ভাঙে ফোনের আওয়াজে।এ মূহুর্তে তার ইচ্ছা করছে ফোনটা বারি দিয়ে ভেঙে ফেলতে।
মৌ ঘুম ঘুম চোখে সামনে থাকে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত সাড়ে ১১টা বাজে।সে বিরক্তি নিয়ে বললো,
“উফ কে রে এই অসময়ে ফোন দিয়েছে??ঘুমটাই নষ্ট করে দিলো।”
এরপর মৌ ফোন হাতে নিয়ে দেখে আয়ান ফোন দিয়েছে। মূহুর্তে তার ঘুম উধাও হয়ে যায়।সে তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে।কিন্তু কোনো কথা বলছে না।
ফোনের ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে আয়ানই কথা শুরু করলো।
“আমাকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি??”
আয়ানের এ কথা শুনে মৌ কিছু বলেনা।শুধু চুপচাপ শুনে।
“কি হলে কথা বলছিস না কেনো??”
মৌ একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“তুমি আমার কাছে ভুলার মতো কেউ না। আমার মনের মধ্য সসবসময়ই তুমি আছো আর থাকবে।”
“তো আমাকে একবারও ফোন দিস নি কেনো??”
“আমার বাসায় আসার পর থেকেই ভালো লাগছিলো না। কেনো যেনো খুব কান্না পাচ্ছিলো। তোমার সাথে কথা বলার সময় যদি আমার কান্না চলে আসে,তাই আমি ফোন দেয়নি।”
“আচ্ছা শোন না।তোকে না খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। কয়েকঘন্টা হলো গিয়েছিস। কিন্তু মনে হচ্ছে কতোটা বছর দেখা করেনি আমরা।”
“আমি তাহলে ভিডিও কল দেই।”
“ভিডিও কল কেনো??আমার তোকে সরাসরি দেখতে ইচ্ছা করছে।”
“এখন এতো রাতে সরাসরি কিভাবে দেখা সম্ভব??”
“চাইলে অনেক কিছুই সম্ভব। তুই আর কোনো কথা না বলে তোর রুমের বারান্দায় আয়। ”
আয়ানের এ কথা শুনে মৌ কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো যে আসলে আয়ান এখন কোথায়।
সে বারান্দায় গিয়ে তাই দেখলো যা সে আন্দাজ করেছিলো।আয়ান নিচে দাঁড়ীয়ে আছে।
মৌ রা ভাড়া বাসায় থাকে। যে বাড়ীটায় তারা থাকে তা ৩তলা। আর তারা টপ ফ্লোরেই মানে ৩তলাতেই থাকে।
আয়ান তাদের বাসার সামনে যে খালি জায়গা আছে সেখানে দাঁড়ীয়ে মৌ এর জন্য ওয়েট করছিলো।মৌ বারান্দায় যাওয়ার পর আয়ান যেনো তার প্রাণ ফিরে পেলো মৌ কে দেখে।মৌ এরও খুব ভালো লাগছে আয়ানকে দেখে। দুজন দুজনাকে দেখে দেখেই প্রায় ৫ মিনিট পার করলো।
“মনে হচ্ছে তোকে কতো দিন দেখি না।”
মৌ এর জবাবে কিছু বলেনি শুধু মুচকি হাসি দিয়েছে।রাস্তার বড় বড় সোডিয়াম বাতিতে মৌ এর চেহারা মনে হচ্ছে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে আয়ানের কাছে।
মৌ দের বাসা রাস্তার সাথে হওয়ায়,তাদের রুমগুলোতে ওসব আলো পরে। ফলস্বরুপ মৌ যে রুমে থাকে সে রুমেও আবছা আলো এসে পরেছে।
এখনও দুজন চুপ হয়ে আছে। তাদের এ চুপচাপ মূহুর্তটার সাক্ষী হচ্ছে রাতের আকাশ,আশেপাশের জোনাকিপোকা গুলো। ঝিঝি পোকাগুলোর শব্দে এ মূহুর্তটা সম্পূর্ণ নিরব হয়নি।তারা তাদের মতো ডেকেই চলছে। আর নিস্তব্ধ এ রাতটাকে তারা নিজেদের আওয়াজে মাতিয়ে রাখছে।
কিছুক্ষণ পর মৌ হেসে বললো,
“আমার নিজেকে কোনো উপন্যাসের চরিত্র মনে হচ্ছে। মানে নিজেকে একজন প্রেমিকা মনে হচ্ছে।”
মৌ এর এ কথা শুনে আয়ানও হেসে উঠলো,
“তো আমাকে কি কোনো উপন্যাসের বর্ণনা করা প্রেমিক থেকে কম মনে হচ্ছে নাকি??”
“তা অবশ্য ঠিক।”
“জানিস আমার কাছে এমন লুকোচুরি দেখা করাতে আলাদা একটা ফিলিংস আসছে। মনে হচ্ছে আমাদের পরিবার আমাদের এক হতে দিবে না, দেখা করতে দিবে না।তাই আমরা এমনভাবে দেখা করছি।”
আয়ানের এ কথা শুনে মৌ খিলখিল করে হেসে দিলো।আর আয়ান মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই হাসি শুনছে।
এভাবে প্রায় রাত ২টা পর্যন্ত গল্প করে।
পরেরদিন বিকালে মাহতাব অফিস থেকে আসার সময় একট পার্সেল নিয়ে আসে।সে বাসায় ঢুকেই আগে মৌ কে ডাক দেয়।
“মৌ এদিকে তাড়াতাড়ি আয়াতো।”
“কি হয়েছে ভাইয়া??এতে ডাকছো কেনো??”
“তোর জন্য কে যেনো কিছু একটা পাঠিয়েছে।দারোয়ান আংকেলকে আবার সে বলেও দিয়েছে তুই ছাড়া অন্য কেউ যেনো পার্সেল টা না খুলে।”
“আমার জন্য কে কি পাঠাবে??”
“মানুষ তো আছে পাঠানোর জন্য। সেই পাঠিয়েছে নিশ্চয়। ” এ বলে মাহতাব মুখ টিপে হাসে।
এদিকে মৌ লজ্জা পেয়ে যায়। সে কোনোরকমে পার্সেলটা নিয়ে রুমে এসে দরজা আটকিয়ে দেয়।
পার্সেলটা একদিকে সে খুলছে আর অন্যদিকে বুকের ধুকপুক বাড়ছে।
সে পার্সেলটা খুলে অবাক হয়ে যায়।সেখানে বকুল ফুলের শুকনো মালা আর হালকা লাল রংয়ের একটা শাড়ি দেওয়া।সে এমন কিছু আশা করেনি।
বকুল ফুলের মালা নিয়ে শুঁকছে সে। অসম্ভব সুন্দর ঘ্রাণ বের হয় বকুল ফুল থেকে। কিছুক্ষণ মধ্যেই ফুলের গন্ধে সারা ঘর মো মো করছে।
মৌ একহাতে শাড়ী আর অন্যহাতে বকুল ফুলের মালা নিয়ে আয়ানের কথা ভাবছিলো।তখনই আচমকা আয়ানের ফোন আসে। এভাবে হুট করে ফোন বাজায় সে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
সে গিয়ে ফোন রিসিভ করে।ওপাশ থেকে কোনো কথা আসছে না। হঠাৎ করে আয়ান গান ধরলো,
“বকুলেরও মালা শুকাবে
রেখে দেবো তার সুরভী
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো না গো আমারই ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম..
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম..
এই মন তোমাকে দিলাম……….”
গান শেষে আয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো। দুপাশেই নিরবতা কাজ করছে।
মৌ এতোক্ষন এক ধ্যানে গান শুনছিলো। আয়ানের কন্ঠে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তার কাছে এ গানটা। তার ফেবারেট গানের মধ্য একটা এই গান।
“কেমন লাগলো সব গিফট??”
“অনেক অনেক সুন্দর।সব কিছুই আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আচ্ছা এই মালা কোথায় পেলে তুমি??”
“সেটা তোর না জানলেও চলবে।”
এভাবে প্রায় ১ ঘন্টা কথা বলে তারা।কিভাবে কিভাবে যে সময় চলে যায় বুঝতেই পারে না তারা।
আগে মৌ ভাবতো মানুষ এতো কথা বলে কিভাবে। এখন নিজে এ সিচুয়েশনে পরে বুঝছে যে মানুষ কিভাবে এতো কথা বলে।
এভাবে দেখতে দেখতে দিন চলে যেতে লাগলো।আয়ান আর মৌ প্রতিদিন রাতে ফোনে কথা বলে। আর আয়ান প্রতিদিন মৌ কে এটা সেটা নানাকিছু গিফট দেয়।
চলবে…..
(