#ভালোবাসব_যে_তোকে🍁
পার্ট ৩
লেখিকাঃসারা মেহেক
🍀🍁
মৌ এর মুখে এই কথা শুনে আয়ানের নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হলো।
“অহনা রে,তোর ভাইয়াকে আমি আগে অনেক ভালো মনে করতাম জানিস।ভাবতাম যে এতো ভালো মানুষ ও হয়।কিন্তু আস্ত একটা বজ্জাত সে। ২৮ বছরের খাটাশ সে।কি পেয়েছি কি মনার মধ্য হুম। মেয়েটা আমার একটু ও সুবিধার মনে হয় না।কিন্তু তুই টেনশন নিস না দেখিস তোর ভাইয়া আমাকে অনেক ভালোবাসবে।অনেক অনেক অনেক…….”
এই বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পরে মৌ।আয়ান তার কথাগুলো একটু ভাবলো।কিন্তু পরক্ষনেই নিজের মনকে বললো,”কে এই মেয়ে হুম।আমি ওকে কোনোদিনও ভালোবাসব না।আমি তো মনা কে ভালোবাসি।”
এরপর আয়ান এসে শুয়ে পরে আর আগে সে মৌ এর কপালে হাত দিয়ে দেখে এখন কেমন জ্বর। সে বুঝতে পারলো জ্বর অনেকটাই কমে এসেছে।
সকালে মৌ এর ঘুম ভাঙার পর সে দেখলো সে আয়ানের অনেকটাই কাছে চলে এসেছে।সে তাড়াতাড়ি উঠে গেলো।
নিচে এসে সে আয়ানের আম্মুকে নাস্তা বানাতে সাহায্য করলো। আজকে সে ভেবেছে কলেজে যাবে। ৩/৪দিনের বেশি ই সে কলেজে যায় না। অহনাকে বললো কলেজে যাওয়ার কথা।অহনাও রাজি হয়ে গেলো।কারন এই কয়দিন সে ও কলেজে যায় না।তারা দুজন নাস্তা করে কলেজে চলে গেলো আর আয়ান অফিসে।
কলেজের ক্লাস শেষে অহনা আর মৌ বসে আছে।
“জানিস তোর কালকে সে কি জ্বর।আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্ত আবার হসপিটাল এ না ভর্তি করাতে হয় তোকে।”
“এই না না হসপিটাল না।আমার এই জায়গাটার নাম শুনলেই কেমন জানি বিরক্ত লাগে, সহ্য লাগে।”
এদের কথার মাঝেই টপকে পরলো তুহিন।এই ছেলেটা মৌ এর পিছু পরে আছে বিগত প্রায় ২মাস যাবত। ছেলেটা খুব বেয়াদব।মেয়েদের টিস করাই যেনো এর ওয়ান এন্ড অনলি দায়িত্ব কর্তব্য।
“হ্যালো গার্লস। কেমন আছো?”
অহনা আর মৌ এর অনিচ্ছা সত্ত্বেও জবাব দিলো,
“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
“কি করো তোমরা?”
অহনা রেগে জবাব দিলো,
” কানা নাকি। দেখছেন বসে আছে।তাও জিজ্ঞাস করছেন কি করি।”
“ওহ সরি সরি।”
মৌ বললো,”এই অহনা চল তো।আমার বাসায় অনেক কাজ আছে।”
“হুম চল।আমারো কাজ আছে।”
এই বলেই অহনা আর মৌ চলে আসলো সেখান থেকে।আর তুহিন মনে মনে বলছে,”মৌ ম্যাডাম, আমি তোমাকে নিজের করে ছাড়বো দেখো।”
বিকালে মৌ বারান্দায় বসে আছে।গভীর চিন্তায় ডুবে আছে সে।সে ভাবছে কিভাবে আয়ানকে লাইনে আনা যায়।কিভাবে নিজের প্রতি ভালোবাসা জাগানো যায়। এরই মধ্য অহনা এসে হাজির।
“কিরে বনু,কি করিস একা একা? কি ভাবিস এতো?”
“ভাবছি তো অনেক কিছুই।কিন্তু তুই হঠাৎ এখানে কেনো?পড়ছিলি না তুই?”
“হুম। কিন্তু জানিস হঠাৎ করে সেদিন এর কথাটা মাথায় ঘুরছে। ভাবছি মানুষ একটু থেকে একটু হলেই কতো কিছু ভেবে নেয়।”
“ঠিক বলছিস।”
এবার আসি সেদিন আসলে কি হয়েছিলো যে আয়ান আর মৌ কে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।
মৌ যেহুতু অহনার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই মৌ মাঝে মাঝেই তাদের বাসায় আসে। এ পর্যন্ত অহনা, মৌ আর আয়ান ৩ জন মিলে একসাথে বাইরে গিয়েছে ২বার। কিন্তু এই যাওয়াটা অনেকেরই সহ্য হয়নি।তার মৌ আর আয়ানকে কিছুটা খারাপ চোখে দেখতে।একদিন অহনা আয়ানকে বলে যে তার প্রমোশন এর জন্য ট্রিট দিতে।যেহুতু অহনা আর মৌ বেস্ট ফ্রেন্ড তাই অহনা জিদ করে মৌ কেও নিয়ে যায়।
আয়ান মৌ আর অহনাকে নিয়ে ফুচকা খেত যায়।রাস্তার পাশে দাড়ীয়ে অহনা আর মৌ ফুচকা খাচ্ছে।তারা দুজন ই মুখ বাধে বলে পিছন ফিরে ফুচকা খাচ্ছে।এর মধ্য হঠাৎ অহনার ফোন ফোন আসলো। সে ফোন রিসিভ করে কথা বলার জন্য এক সাইডে আসলো।ঐদিকে মৌ আর আয়ান একা একা দাঁড়ীয়ে আছে। রাস্তা দিয়ে দুজন আন্টী যাচ্ছিলো।উনারা আয়ানদের বাসার আশেপাশেই থাকে।উনাদের আবার মৌ এর এতোবার আয়ানদের বাসায় যাওয়া সহ্য হতো না। উনার দুজন আয়ান আর মৌকে ফুচকার স্টলের পাশে দাঁড়ীয়ে থাকা দেখে বলে উঠে,
“দেখো দেখি আজকালকার মেয়েদের অবস্থা।বান্ধবির ভাইয়ের সাথে ফুচকা খেতে এসেছে।হুহ।”
আরেকজন বলে উঠলো,”ছেলেটারও দেখি লাজ শরম নাই।নিজের বোনের বান্ধবির সাথে কিসের এতো মেলামেশা!!”
এই কথাটা আয়ানের কানে পৌছে কিন্তু সে কিছু বলে না।কারন এদেরকে বলেও চুপ করানো সম্ভব না।এরা বলেই যাবে সবসময়।
৪দিন পরে,
মৌ অহনাদের বাসায় আসে কেমিস্ট্রি বুঝার জন্য। আয়ান আবার খুব ভালো কেমিস্ট্রি পারে। তাই অহনার যেকোনো কেমিস্ট্রির প্রবলেম সলভ করে দেয়।মৌও মাঝে মাঝে কিছু প্রবলেম বুঝে নেয়। সেদিনও এই কারনে এসেছিলো সে।
মৌ অহনাকে জিজ্ঞাস করে যে আয়ান কোথায়।সে বলে আয়ান ছাদে আছে। মৌ ছাদে যায়।দেখে যে আয়ান ফোনে যেন কার সাথে কথা বলছে।
“আয়ান ভাইয়া,আমার একটা প্রবলেম ছিলো কেমিস্ট্রি এর।একটু বুঝায় দিবেন?”
আয়ান ফোন রেখে বলে যে,”আচ্ছা আয়।একবার ই কিন্তু বুঝাবো।”
“ঠিক আছে।”
এরপর আয়ান মৌ কে তার পাশে বসতে বলে।প্রথমে মৌ এতে ইতস্ততবোধ করে কিন্তু আয়ানের অনেকবার বলার পর না চাওয়া সত্ত্বেও সে বসে।
এসব আবার দেখছিলেন সেদিনকার সেই আন্টী টা। উনাদের বাসার ছাদ থেকে আয়ানদের বাসার ছাদ দেখা যায়।এসব দেখে ঐ আন্টী টার খুব রাগ হয়ে যায়।
মৌ কিছুক্ষন পর বাসায় চলে যায়।
বিকালের দিকে ঐ আন্টীটা আয়ানদের বাসায় আসে।সেদিন শুক্রবার থাকায় সবাই বাসায় ছিলো।
আয়ানের আম্মু উনাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়।
আয়ানের আম্মুঃ আরে ভাবি আপনি হঠাৎ কি মনে করে?
আন্টীঃহুম।আপনার মেয়ের বান্ধবী আর তার পরিবারকে ডাকুন। কিছু কথা আছে।
আয়ানের আন্মুঃ কি কথা?
আন্টীঃআসলেই বুঝতে পারবেন।
তারপর আয়ানের আম্মু মৌ আর তার ফেমিলিকে ডাকে।
১০মিনিটের মধ্যেই তারা পৌছে যায়।
আন্টীঃঐ তো চলে এসেছে মেয়ে।
এরই মধ্য আয়ান,অহনা আর তাদের আব্বুও নিচে যায়।
মৌঃকি কথা বলবেন আন্টী?
আন্টীঃবলছি কি মা বাবা কি কিছু শিক্ষা দেয়নি?
সবাই এ কথা শুনে অবাক।
মৌঃ কি বলছেন এসব আপনি?
আন্টীঃবান্ধবির ভাইয়ের সাথে যে রং ঢং করো তা তে খারাপ লাগে না?
মাহতাবঃ মুখ সামলে কথা বলুন।কি সব। উল্টা পাল্টা কথা বলছেন?
আন্টীঃ ঠিক ই তো বলেছি। একদিন দেখি ফুচকা খেতে বের হয়ে আরেকদিন ছাদে বসে গল্প করে। ছিঃ।
আয়ানঃআপনি যা ভাবছেন এমন কিছুই না।
আন্টীঃ তো কেমন কিছু শুনি।তোমাদের এসব কাজ দেখে আমাদের ছেলে মেয়েরা তো বিগরে যাচ্ছে
চলবে