ভালোবাসাময় প্রহর পর্ব -০৭+৮

#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:৭

রক্তিমের কথা শুনে অধরা উৎসুক চোখে তার দিকে তাকালো রক্তিম অধরার হাত টা ধরে বললো,

~শুনো যেদিন থেকে দিবা জানতে পেরেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি সেদিন থেকেই সে এসব শুরু করেছে। আর যে ছবিগুলো তোমায় দিয়েছে সে সকল ছবি দিবা আর তার এক্স বয়ফ্রেন্ড রোদ্দুরের এখানে শুধু আমার মুখটা বসিয়ে দিয়েছে।দিবার সাথে রোদ্দুরের সম্পর্ক ছিলো ২ বছরের দিবা ইচ্ছা করে ছেলেটার ওপর নানান অ/ভি/যো/গ তুলে ব্রেকআপ করে নেয়।
কারণ হঠাৎ করেই তার মনে আমার জন্য ফিলিংস এসে পরে কিন্তু এ কথাটি একদম মিথ্যে দিবা আমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে। নিজ বাবার জন্য সে অনেক মানুষের মনে কষ্ট দিয়েছে তার বাবাও আমাদের সাথে অনেক বড় অ/ন্যা/য় করেছে যার কোনো ক্ষমা হয় না।

রক্তিমের কথা গুলো শুনে অধরা অবাক হয়ে গেলো সে পুরো কাহিনি জানার জন্য বললো,

~আমাকে সব খুলে বলুন।

রক্তিম শুরু থেকে সব কথা অধরাকে জানালো অধরা সব কিছু জানার পর একরাশ ঘৃণা নিয়ে বললো,

~মানুষ কিছু টাকার জন্য এতোটা নিচু হয়ে যেতে পারে।আর দিবা আপু নিজ বাবাকে না বুঝিয়ে উল্টো তাকে সাহায্য করছে ছি ছি।আমার ভাবতেই খা/রা/প লাগছে আমি তার কথায় বিশ্বাস করেছি আর বাবাকে এধরনের প্রশ্ন করেছি।

রক্তিম মুচকি হেসে অধরার গালে হাত ছুঁইয়ে বললো,

~অধরা, আমি তোমাকে বোকা বলবোনা তোমার যে হৃদয়টা আছে না সেটা খুব ভালো সহজেই যে কাউকে বিশ্বাস করে ফেলে।আর মানুষের কষ্ট দেখলে নিজেকে সামলাতে পারে না কারণ সবাইকে আপন মনে করে।এই সকল গুনের কারণে তুমি একজন ভালো মানুষ সেটা আমি বলতে পারি।কিন্তু অধরা একটা কথা মনে রাখবে,এ পৃথিবীর সকল মানুষ ভালো না তোমায় মানুষ চিনতে শিখতে হবে কেননা আমরা সবাই তোমার পাশে চিরকাল থাকবো না।তোমার পথ তোমায়ই চলতে হবে জীবনে এগিয়ে যেতে হবে কিছু একটা অর্জন করতে হবে।আশা করি তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছো আমি যা বলেছি তোমার ভালোর জন্যই বলেছি।

অধরা রক্তিমের হাতটা নিজ হাতে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললো,

~কিছুক্ষণের জন্য আমি আপনাকেও ভু/ল বুঝেছি কিন্তু দেখেন আপনি আমার সাথে কোনো খা/রা/প ব্যবহার না করে আমার সকল স/ন্দে/হ দূর করে দিলেন।আপনি আমাকে আজ যেসকল কথা গুলো বুঝালেন আমি আজীবন তা মনে রাখবো।

রক্তিম অধরার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,

~আমার কোনো ইচ্ছে ছিলো না এভাবে তোমার বাসায় এসে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার।আমি ভেবেছিলাম প্রথমে তোমাকে প্রপোজ করবো একদম রোমান্টিক ভাবে তারপর তোমার আঙ্গুলে আমার দেওয়া একটি আংটি পড়িয়ে দিবো।তারপর তুমি আমায় জড়িয়ে ধরবে আশেপাশে হালকা আওয়াজে গান বাজতে থাকবে।আমি সবকিছু পার্ফেক্ট ভাবে করতে চেয়েছিলাম কিন্তু দিবার কারণে সব পানিতে চলে গেলো।আমার মন চাইছে ওকে নদীতে চু/বা/তে।

অধরা রক্তিমের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো আর বললো,

~আপনাকে কে বলেছে এখন এসব করা যাবে না আমি আপনাকে কালকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দিলাম সব আয়োজন করে আমাকে প্রপোজ করতে হবে তা না হলে বিয়ে হবে না।

রক্তিম অধরার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,

~এতো সোজা নাকি যে বিয়ে করবেন না একদম বাসা থেকে তু/লে নিয়ে বিয়ে করে আসবো।কালকের জন্য তৈরি থেকো আমার সারপ্রাইজ রেডি হচ্ছে।

অধরা রক্তিমের কাঁধে দুহাত জড়িয়ে বললো,

~নিচে গিয়ে তাহলে সিদ্ধান্তটা জানিয়ে দেই সবাই অনেক চিন্তা করছে।

রক্তিম অধরার ঠোঁটে নিজ আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে বললো,

~এই ঠোঁট দিয়ে একবার বলো “আই লাভ ইউ রক্তিম” জাস্ট একবার।

অধরা মৃদ্যু হেসে রক্তিমের কানের কাছে গিয়ে বললো

~কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন জনাব আপনার কাঙ্ক্ষিত জিনিস আপনি পেয়ে যাবেন।

রক্তিম হেসে অধরাকে ছেড়ে দিলো দুজনই নিচে নেমে আসলো আর দেখলো সবাই থমথমে মুখে বসে আছে। তাদের দুজনকে দেখে অধরার মা সকলের উদ্দেশ্যে বললো,

~ওরা চলে এসেছে।

অধরা সবার উদ্দেশ্যে বললো,

~আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে ফেলেছি।

রক্তিমের বাবা বললেন,

~হ্যাঁ মা বলো তোমার সিদ্ধান্ত।

অধরা মাথানিচু করে বললো,

~আমি রাজি।

সবাই একসাথে “আলহামদুলিল্লাহ” বলে উঠলো অধরা লজ্জা পেয়ে নিজ রুমে চলে গেলো রক্তিম তার বাবার পাশে বসে পরলো। রক্তিমের বাবা বললেন,

~যেহেতু সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে তাই বিয়েটা আমি চাইছি ১৫দিন পরই হয়ে যাক।

অধরার বাবা বললেন,

~ঠিক আছে তাই হোক।

একথা শুনে রক্তিম আর অধরার দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো,

~অভিনন্দন।

রাত আর তন্নি বসে বসে বিয়ের প্ল্যান করছে আর অধরা বসে বসে তাদের কথা শুনছে। রাত অধরার দিকে তাকিয়ে বললো,

~কী রে তুই এতো চু/প/চা/প কেন?

অধরা রাতের কথা শুনে বললো,

~রাত,আমার মনটা কেমন যেনো করছে আমার মনে হচ্ছে
খা/রা/প কিছু ঘটবে।আর দিবা আপু কী এভাবেই চুপ হয়ে যাবে সে নিশ্চয়ই বড় কোনো কিছু করবে।

রাত বললো,

~তুই এসব নিয়ে ভাবিস না ভাইয়া আর আমি মিলে সব ঠিক করে দিবো।তুই শুধু বিয়েতে মনোযোগ দে শপিং মলে ঘুরে বেড়া।

রাতের কথার মাঝেই তন্নির ফোনটা বেজে উঠলো তন্নি মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তা হাতে নিয়ে বললো,

~আমি একটু কথা বলে আসছি তোমরা প্ল্যান করতে থাকো।

বলেই সে বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় চলে গেলো বারান্দার দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে কথা বলতে লাগলো।রাতের কেন জানি বিষয়টা ভালো লাগো না তাই সে অধরাকে বললো,

~তন্নি এমন বিহেভ করলো কেন?

অধরা রাতের কথা শুনে বললো,

~আরে ওর বান্ধুবীর ফোন এসেছে তাই বারান্দায় চলে গেছে।

রাত বললো,

~ওর হাবভাব সুবিধার লাগছে না অধরা তুই ওর ওপর নজর রাখিস।

অধরা বললো,

~তুই যেদিকে ইঙ্গিত করছিস এসব কিছুই না তুই বেশি ভাবছিস।হ্যাঁ কিছুদিন আগে বলেছিলো কোচিংয়ের কোন স্যারের ওপর ক্রা/স খেয়েছে এই বয়সে তো মেয়েরা এইসব
বলেই থাকে।

অধরার কথায় রাত চিন্তিত হয়ে গেলো তবুও সে অধরাকে তা বুঝতে না দিয়ে বললো,

~সবাই যেহেতু বাহিরে আমরাও ওখানে গিয়েই বসি।

রক্তিমরা রাতের খাবার খেয়ে নিজ বাসায় চলে গেলো রক্তিমের মা যাওয়ার আগে অধরার হাতে সোনার চু/রি পরিয়ে দিলেন আর বললেন,

~সবসময় সুখী থাকো মা এই দোয়াই করি।

অত:পর তারা চলে যেতেই অধরা মায়ের সাথে সবকিছু গুছিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো ফোনটা হাতে নিতেই চোখে পরলো রক্তিমের ম্যাসেজ সেখানে লেখা আছে,

~আজকের জন্য তোমার ছুটি কালকে রাত থেকে তোমার চাকরি শুরু সারারাত ফোনে কথা বলতে হবে আজ ঘুমাও
সুইট ড্রীম বেবি😘।

অধরা লজ্জা পেয়ে গেলো সে বিড়বিড় করে বললো,

~নি/র্ল/জ্জ লোক একটা।

অধরা দুচোখ বন্ধ করে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে ত/লি/য়ে গেলো ঘুমের রাজ্যে।অধরা আর রক্তিম মনে করছে তাদের জীবনে এখন সুখ এসে পরেছে কিন্তু কে জানে নিয়তি তাদের সাথে কীসের ব্যবস্থা করেছে।
নে/শা/য় বু/ধ হয়ে দিবা বসে আছে তার মায়ের সামনে মেয়ের এমন দশা দেখে বুক কেঁ/পে উঠলো।দিবার বাবা স্ত্রীর এমন
ক/রু/ন চেহারা দেখে বা/কা হেসে মুখে অসহায় ভাব ফুটিয়ে বললেন,

~দেখোছো তানহা(দিবার মা) আমাদের মেয়ের কী অবস্থা?এসবের জন্য শুধু রক্তিম দ্বায়ই।এতো কষ্ট পেয়েছে আমাদের মেয়ে আর দেখো আমাকেও পথে বসিয়ে দিলো রক্তিম আমার ব্যবসার সব ইনফরমেশন পুলিশকে দিয়েছে। আমাকে যেকোনো সময় গ্রে/ফ/তা/র করতে চলে আসবে এখন আমরা কী করবো?

দিবার মা দুচোখ মুছে বললেন,

~ঘরে ৫লক্ষ আছে তা দিয়ে পু/লি/শ বিদায় করো বাকিটা আমি করছি।

বলেই দিবার মা ফোনে ব্যস্ত হয়ে গেলো দিবার বাবা দিবার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

~ঘুমন্ত বা/ঘ/নি আবার জেগেছে খেলায় এখন নতুন টুইস্ট আসছে।

চলবে

(বিদ্র:কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:৮

শীতের সকাল টা বেশ সুন্দর হয় প্রকৃতি প্রেমীরা রাস্তায় বের হয়ে আসে এই পরিবেশ টাকে উপভোগ করতে।হালকা বাতাসে যখন এই দেহে হালকা ক/ম্প/ন লাগে তখন দেহে রাখা চাদরটা বেশ ভালো করে জড়িয়ে নেয়।শিশির ভেজা ঘাসের ওপর খালি পায়ে হেঁটে যায় কারণ তারা জানে এই সৌন্দর্যটা কিছুদিন পরই চলে যাবে তাদের আবার অপেক্ষা করতে হবে সেই আগামী বছরের।
অধরা ঘুম থেকে উঠে দেখে তন্নি তার পাশে নেই সে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। ঘুমের রেশ তার এখন কা/টে/নি অধরা বিছানা গুছিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাড়াতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো।অধরা ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো কারণ
“দিবা নামটা জ্ব/ল/জ্ব/ল করছে।অধরা মনে মনে ভাবলো,

~কেনো সে আমায় ফোন করছে?এবার সে কীসের প্ল্যান করছে?আমি আর তার কোনো কথা শুনবোনা মানুষকে বেশি প্রশয় দিলেই সে মাথার ওপর চ/ড়ে বসে।

অধরা মুখে কাঠিন্য ভাব তুলে ধরলো এরপর ফোনটা রিসিভ করলো।অপর পাশ থেকে দিবা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো দিবার মা ইশারা দিয়ে বললেন কাজ শুরু করতে।দিবা বললো,

~অধরা,আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না তুমি আমার ফোন ধরেছো?আমি যে অ/প/রা/ধ করেছি এরপরও যে তুমি আমার সাথে কথা বলছো এইটা আমার কাছে স্বপ্নের তে কম কিছু না।

অধরা বিরক্ত হলো দিবার কথা শুনে সে কাঠকাঠ গলায় বললো,

~যা বলার জন্য ফোন করেছেন তা বলে ফে/লু/ন।

দিবা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

~আই আ’ম সরি অধরা তোমার সাথে আমি অনেক খা/রা/প করেছি।এগুলো করা একদম ঠিক হয়নি আসলে আমি সেসময় অনেক রে/গে ছিলাম তাই এসব করেছি।আমার অনেক অনুশোচনা ফিল হচ্ছে আ’ম সরি প্লিজ মা/ফ করো আমায়।

অধরার কেন যেন মন মানছেনা দিবার কথায় সে ধীর কন্ঠে বললো,

~আমার কাছে না মা/ফ চেয়ে যার সাথে অ/ন্যা/য় করেছেন তার কাছে গিয়ে মা/ফ চান।আপনি তো শুধু আমাকে ভু/ল ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এতে আমার কোনো অ/স/ম্মা/ন হয়নি কিন্তু রক্তিমের সাথে যা করেছেন তা হলো অ/ন্যা/য়।

দিবার রা/গ লাগছে অধরার কথা শুনে এতটুকু মেয়ে তাকে ভাষণ দিচ্ছে আবার রক্তিমকে ভাইয়াও বলছেনা সা/হ/স কতো তার।দিবা মায়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত হয়ে বললো,

~তুমি একদম ঠিক বলেছো আমি রক্তিম কে অবশ্যই সরি বলবো।

অধরা হুম বলে ফোন কে/টে দিলো দিবা রা/গে/র বশে ফোনটা আ/ছ/রে ফেললো দেওয়ালের সাথে।দিবার মা দিবাকে বললো,

~কু’ল ডাউন বেবি এতো রা/গ ভালো না সবকিছু ঠান্ডা মাথায় করবো আজকে রাতে ধা/মা/কা হবে।

দিবা মায়ের কথা শুনে হালকা হেসে বললো,

~অধরাকে শে/ষ করে ফেলো মা।

দিবার মা দিবার মাথাটা নিজ বুকে চে/পে বললো,

~এর থেকেও খা/রা/প কিছু করবো মৃ/ত্যু খুবই সহজ একটা শা/স্তি।

দিবা চিন্তিত গলায় বললো,

~কী করবে মা?

দিবার মা কোনো উত্তর দেয়না মেয়ের মাথায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দেয়।এই পৃথিবীতে সব মায়েরাই নিজ সন্তানকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু কিছু কিছু মায়েরা সেই ভালোবাসায় এতো
অ/ন্ধ হয়ে যায় যে সন্তানের অ/ন্যা/য় টাকেও প্রশয় দেয় যেটা এখন দিবার মা করছে।অধরা ফোনটা রেখে নাস্তা করে নিলো ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলো ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসতেই দেখতে পেলো রক্তিম দাড়িয়ে আছে।
অধরা একনজরে রক্তিমকে দেখে নিলো কালো শার্ট,কালো প্যান্ট,হাতে কালো ঘড়ি, চোখে সানগ্লাস শার্টের উপরের দুটো বোতাম খোলা রয়েছে।অধরা রক্তিমকে দেখে এক বড়সর শ্বাস ছাড়লো আর মনে মনে বললো,

~ইশশ,নিজের উপর অনেক গর্ব হচ্ছে এই লোকটি তোর হবু বর।

অধরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রক্তিম চোখের সানগ্লাসটা খুলে তার কাছে এসে বললো,

~কী হয়েছে? দেরি হচ্ছে না ক্লাসে?

অধরা হকচকিয়ে উঠে বললো,

~হ্যাঁ হ্যাঁ।

অতঃপর তারা দুজন রওনা দিলো ভার্সিটির দিকে সেখানে পৌছে অধরা গাড়ির দরজা খুলে বাহিরে যেতে নিবে তখনই রক্তিম তার হাত ধরে বললো,

~আজ সন্ধ্যা ৬টায় রেডি থাকবে ড্রেস পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

অধরা বললো,

~বাহ,সব প্ল্যানিং করা হয়ে গেছে আই আ’ম ইমপ্রেস্ড।

রক্তিম বললো,

~সময় মতো তৈরি হয়ে থাকবে।

অধরা বললো,

~ইয়েস স্যার।

অধরা গাড়ি থেকে নেমে পরলো রক্তিম অধরার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।অধরা ভার্সিটি এসেই ক্লাসে চলে এলো এসেই দেখলো রাত বসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছে।অধরা এসে রাতের পাশে বসে পরলো রাত অধরাকে দেখে বললো,

~কী রে তোদের লাভ টুর শেষ হয়েছে?

অধরা বললো,

~চু/প থাক তো।

রাত বললো,

~তুমি তলে তলে টেম্পু চালাও আমি বললে কী হরতাল?

অধরা রাতের কথা শুনে হেসে উঠলো একটু পর তাদের ক্লাস শুরু হলো তারা ক্লাসে মনোযোগী হলো।রক্তিম শপিং মল থেকে কে/না/কা/টা সেরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো গাড়ি চলছে আপন গতিতে তখনই গাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে পরলো দিবা।
রক্তিম দ্রুত গতিতে গাড়ির ব্রেক কসলো একটুর জন্য এতো বড় দু/র্ঘ/ট/না থেকে বেঁচে গেলো বলে রক্তিম আল্লাহর শুকরিয়া আদা করলো।পরক্ষনেই দিবার কথা মনে হতেই সে রে/গে গেলো গাড়ি থেকে হনহনিয়ে চলে গেলো দিবার কাছে।রক্তিম দিবার মুখোমুখি হয়ে বললো,

~আর কতো নাটক করবি?অনেক হয়েছে তোর আর আমি সহ্য করবোনা তোরা যদি মনে করিস টাকার জোড়ে সব হয়ে যায় তাহলে তোরা ভুল।তোর বাবা টাকা ছিটিয়ে পু/লি/শ বি/দা/য়
করেছে তো কী হয়েছে আমি তাকে ছা/ড়/বো/না।

দিবা চু/প/চা/প সব শুনে গেলো অত:পর সে টলমল দৃষ্টিতে বললো,

~আই আ’ম সরি রক্তিম এখন পর্যন্ত যাই করেছি তার জন্য সরি। তোমাকে অ/স/ম্মা/ন করেছি এবং কী মামা-মামী সবাইকে কষ্ট দিয়েছি প্লিজ মা/ফ করে দেও।

দিবার কথা ফোঁ/স করে নিশ্বাস ছে/ড়ে নাক ফুলিয়ে বললো,

~দিবা,আমি তোকে মা/ফ করলেও তোর বাবাকে কোনোদিন মা/ফ করবো না মাইন্ড ইট।

বলেই রক্তিম গাড়িতে বসে পরলো আর চলে গেলো নিজ গন্তব্যে।

বিকেলের দিকে অধরা তার ড্রেস পেয়ে গেলো সাথে আরো অনেক কিছু।তন্নি অধরাকে রেডি হতে সাহায্য করলো কালো কালার গাউন তাতে রয়েছে স্টোনের কাজ।গলায় আছে সাদা পাথরের নেকলেস কানেও সাদা পাথরের দুল রেডি হয়ে অধরা আয়নায় নিজেকে দেখলো তন্নি অধরার কাঁধে মুখ রেখে বললো,

~তোমাকে কিন্তু হেব্বি লাগছে।

অধরা মুচকি হাসলো ঠিক সন্ধ্যা ৬টায় গাড়ি চলে আসলো ড্রাইভার আসাতে অধরা একটু অবাক হলো। কিন্তু ম্যাসেজে রক্তিম বললো,

~প্রিটি গার্ল তোমার জন্য অপেক্ষা করছি তাড়াতাড়ি চলে আসো।

অধরা বসে পরলো গাড়িতে তন্নি হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো অধরা গাড়িতে বসে নানান কথা ভাবছে ১ঘন্টা পর গাড়ি থামলো।ড্রাইভার গাড়ির দরজা খুলে দিলো অধরা গাউন ধরে ধীর পায়ে নেমে পরলো একজন মেয়ে তাকে স্বাগতম জানালো।সেই মেয়েটি তাকে ভিতরে নিয়ে গেলো ভিতরে ঢুকতেই অধরার মুখটা হা হয়ে গেলো এতো সুন্দর ভাবে চারপাশ সাজানো যে তা অধরার ধারণার বাহিরে ছিলো।হঠাৎই অধরার ওপর সব লাইট গিয়ে পরলো অধরা চোখ পিট পিট করে দেখলো রক্তিম কালো সু/ট্যে তার সামনে দাড়িয়ে আছে।রক্তিম বললো,

~আমার মনের রানী আপনার স্বাগতম।

বলেই সে হাত বাড়িয়ে দিলো অধরা মুচকি হেসে হাতে হাত রাখলো রক্তিম অধরাকে কাছে টেনে নিলো তখনই চারপাশে মিউজিক বাজতে লাগলো গোলাপ ফুলের পাপড়ি পরতে লাগলো।অধরা হেসে উঠলো এসব দেখে রক্তিম অধরার সেই মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
অধরাকে ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে বক্স বের করে সেটা খুলে অধরার সামনে হাঁটু গে/ড়ে বসে বললো,

~তোমার এই মুখের হাসিটা আমাকে অনেক আরাম দেয় যখনই তোমার এই মুখটা দেখি আমি শিহরন অনুভব করি তোমায় না পেলে আমার জীবন পুরোটা বৃ/থা হয়ে যাবে।তোমাকে আমি সবসময় হ্যাপি রাখবো কোনো দুঃখ তোমায় গ্রা/স করতে পারবেনা এই ওয়াদা আমার।
আই লাভ ইউ অধরা তুমি কী আমার জীবনসঙ্গী হবে?

অধরা রক্তিমের সাথেই হাটু গে/ড়ে বসে বললো,

~ইয়েস আই লাভ ইউ টু রক্তিম।

রক্তিম খুশি হয়ে গেলো সে অধরার হাতে আংটি পরিয়ে দিলো তারপর অধরাকে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষণ পর অধরা রক্তিমের কানের কাছে এসে বললো,

~এভাবেই কী থাকবো? আমি আপনার সাথে রাস্তায় বেড়াতে যেতে চাই।

রক্তিম বললো,

~ঠিক আছে।

অধরা আর রক্তিম রাস্তায় বের হয়ে আসলো জায়গাটা একটু নিরিবিলি তারা দুজন রাস্তার সাইড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দুজনের হাতেই আইসক্রিম। অধরার এখন শীত করছে সে কাঁপছে রক্তিম তা বুঝতে পেরে নিজ কোট খুলে তার গায়ে জড়িয়ে দেয়।রক্তিম সাদা শার্ট পরেছে কোটের ভিতরে শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে নিলে অধরা বললো,

~আমাকে কী সারাজীবন এভাবেই ভালোবাসবেন?

রক্তিম বললো,

~যে পর্যন্ত মৃত্যু না হয় সে পর্যন্ত তুমি আমার।

অধরা বললো,

~এসব বলবেন না।

রক্তিম হেসে বললো,

~আর বলবোনা তুমি কী আমায় এভাবেই ভালোবাসবে সারাজীবন?

অধরা একটু ভাবুক হয়ে বললো,

~এই ব্যাপারে ভাবতে হবে আমার।

রক্তিম বললো,

~তবে রে দাড়াও এখানে।

রক্তিম অধরার পিছনে দৌড়াতে লাগলো অধরা রক্তিমকে আঙ্গুল দেখিয়ে ভো দৌড় রাস্তাটা খালি বিধায় তাদের কোনো প্রবলেম হয়নি।কিন্তু এক সময় অধরা রাস্তা কর্ণার থেকে মাঝ বরাবর চলে আসে তখনই একটা মালবাহী ট্রাক এসে
অধরাকে ধা/ক্কা দিয়ে চলে যায় অধরা ছি/ট/কে পরে যায় রাস্তার ওপাশে সারা রাস্তা র/ক্ত দিয়ে বন্যা হয়ে গেলো চোখের পলকে।রক্তিম অধরার এ অবস্থা দেখে চিৎকার করে বলে উঠলো,

~অধরা………

চলবে

(বিদ্র:কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here