ভালোবাসাময় প্রহর পর্ব -১৯+২০ ও শেষ

#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:১৯

রাজ রির্সোটের বাহিরে নিজ ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে পকেট থেকে ফোন বের করে রক্তিমের নাম্বারে ডায়াল করলো কিছুক্ষণ পর রক্তিম ফোন রিসিভ করলো।রাত রক্তিমকে বললো,

~ভাইয়া,আমি বাসায় চলে যাচ্ছি তন্নির অবস্থা ভালো হলে তোমরা বাসায় চলে এসো।

রক্তিম রাতের অবস্থা বুঝতে পেরে বললো,

~ঠিক আছে সাবধানে যাবি আর বাসায় কিছু বলার প্রয়োজন নেই।

রাত বললো,

~তন্নির খেয়াল রেখো আর তাকে বলো যে আমাকে ক্ষমা করে দিতে আমি আর কখনো তার সামনে আসবো না।

বলেই সে ফোন রেখে দিলো আর ফোন সুইচ অফ করে দিলো রক্তিম আরো কিছু বলবে তার আগেই টুট টুট আওয়াজ পেয়ে কান থেকে মোবাইল নামিয়ে দেখলো রাত ফোন রেখে দিয়েছে।রক্তিম আবার চেষ্টা করতেই সুইচ অফ বলা হলো রক্তিমের এখন নিজ ভাইয়ের জন্য চিন্তা হচ্ছে। তখনই অধরা এসে রক্তিমের কাঁধে হাত রেখে বললো,

~রাত চলে গেছে তাই না?

রক্তিম বললো,

~হুম আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে অধরা।

অধরা বললো,

~আমরা এখনই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই।

রক্তিম বললো,

~কাল সকালে দিবো তন্নি এখন কেমন আছে?

অধরা বললো,

~সুপ আর বকা খেয়ে ঘুমিয়েছে।

রক্তিম বললো,

~ওকে বুঝিয়ে বলো যে এমন বাচ্চামি আর যেন কখনো না করে।

অধরা বললো,

~চলুন এখন খেয়ে নেই আমি আজ তন্নির কাছে ঘুমাবো।

রক্তিম হুম বলে অধরাকে নিয়ে খেতে বসলো খাওয়া শেষে অধরা তন্নির রুমে চলে গেলো।সেখানে গিয়ে দেখলো তন্নি আকাশ পাণে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে?অধরা বললো,

~রাত চলে গেছে তার ব্যাপারে আর ভেবে লাভ নেই।

অধরার কথা শুনে তন্নি চমকে উঠলো বোনের দিকে তাকিয়ে বললো,

~আপু,আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি কেন জানি মাথা ঘুরছে।

অধরা বললো,

~শুয়ে পর কাল সকালে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো আমরা।

তন্নি বোনের পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো তন্নির চোখে ঘুম নেই সে একধ্যানে রাতের কথা চিন্তা করছে।রাতের এভাবে চলে আসাটা বরাবরই রক্তিমের মাকে অবাক করেছে যেই ছেলে ঘুরতে গেলে ১সপ্তাহর আগে বাসায় আসে না সে আজ একদিনেই ফিরে এসেছে তাও এতো রাতে।খাবার বেড়ে ছেলের সামনে রেখে দিলেন তিনি আর চেয়ার টেনে বসে পরলেন।রাত খাবার খেতে শুরু করলো রক্তিমের মা বললেন,

~তোর কী হয়েছে বাবা?

মায়ের মুখে আদুরে ডাক শুনে রাতের অনেক ভালো লাগছে মনটা হালকা লাগছে।রাত হাসার চেষ্টা করে বললো,

~আমার কিছুই হয়নি মা তুমি চিন্তা করো না।

রক্তিমের মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

~মায়ের কাছে কিছু লুকাতে নেই বল কী হয়েছে?

রাত মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

~কিছু হয়নি মা।

রক্তিমের মা আর কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন রক্তিম থেকে সে সব জেনে নিবেন।রাত খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেলো বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তার সব ঘটনা মনে পরতে লাগলো সে চোখ বন্ধ করতেই চোখের কার্ণিশ বেয়ে পানি পরতে লাগলো।রাত বিড়বিড় করে বললো,

~অনেক দূরে চলে যাবো অনেক দূরে।

সকালে বি/ষ/ন্ন মন নিয়ে তিনজন রওনা হলো বাসা উদ্দেশ্যে তন্নি অধরার কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছে।রক্তিম ড্রাইভ করছে তারও মনটা ভালো নেই তন্নির কেন জানি রাতের কথা ভীষণ মনে পরছে তার মন চাইছে রাতের পাশে বসে দুদন্ড কথা বলতে।সেই আগের মতো হাসি তা/মা/শা করতে তা কি এখন আদৌ সম্ভব তার মনটা যে ভীষন পু/ড়/ছে।দুপুরের নাগাদ তারা বাসায় পৌছালো অধরা তন্নিকে বাসায় দিয়ে এসে তার মাকে সব বুঝিয়ে বলে আসলো শুধু রাতের কথাটা বলেনি অধরার মা সব শুনে তন্নিকে বকলো তন্নিও সব চু/প/চা/প শুনে নিলো।দূর থেকে তন্নিকে সুস্থ দেখে রাতও খুশি হলো।অধরা শশুড় বাড়ি চলে আসলো সবার সাথে দেখা করে ফ্রেশ হয়ে আসলো খাবার টেবিলে সেখানে সবাই উপস্থিত আছে।সবাই একসাথে খাবার খেয়ে নিলো আর কথাবার্তা বললো খাওয়া শেষে রাত বললো,

~আমি আমাদের সিলেটের অফিসটা হ্যান্ডেল করতে চাই যদি বাবা আর ভাইয়ার আ/প/ত্তি না থাকে তাহলে।

সিলেট যাওয়ার কথা শুনে রক্তিমের মা-বাবা এতে অবাক হলেও রক্তিম আর অধরা বুঝতে পারলো কেন রাত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।রক্তিম বললো,

~তুই আমাদের ছেড়ে সেখানে গিয়ে থাকতে পারবি?

রাত মুচকি হেসে বললো,

~ভাইয়া,আমার অনেক বন্ধুরা তো দেশ ছেড়ে চলে গেছে ক্যারিয়ারের জন্য আমি তো এক শহর ছেড়ে অন্য শহরে যাচ্ছি।

রক্তিমের মা বললেন,

~তুই কোথাও যাবি না এটাই আমার শে/ষ কথা।

রক্তিমের বাবা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

~রক্তিমের মা,ছেলে যখন নিজের ব্যাপারে ভাবতে চাইছে কাজ করতে চাইছে তুমি তাকে বাঁ/ধা দিও না।

রক্তিমের মা শাড়ির আঁচল মুখে গুজে বললেন,

~আপনি একটা পা/ষা/ণ লোক আমার সাথে কথা বলবেন না।

বলেই সে নিজ রুমে চলে গেলো রক্তিমের বাবা বললেন,

~তোর মায়ের রা/গ আগের মতোই আছে চিন্তা করিস না আমি রাজি করাবো।

রক্তিমের বাবাও উঠে পরলো অধরা রাতের পাশে বসে বললো,

~তুই এমন করিস না তন্নির জন্য কেন তুই আমাদের থেকে দূরে
যাবি?

রাত বললো,

~আমি তন্নির জন্য যাচ্ছিনা নিজের জন্য যাচ্ছি।

বলেই সে চেয়ার ছেড়ে উঠে পরলো নিজ রুমের দিকে হাঁটা ধরলো।অধরা রক্তিমের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সবকিছু গুছিয়ে তারা দুজনও নিজ রুমে আসলো। রক্তিম বিছানায় শুয়ে পরলো অধরা রক্তিমের বুকে মাথা রেখে বললো,

~সবকিছু কীভাবে ঠিক হবে?

রক্তিম অধরার চুলে হাত ডু/বি/য়ে বললো,

~জানিনা কিন্তু এতটুকু বুঝতে পেরেছি রাত তন্নিকে অনেক ভালোবাসে।

অধরা বুক থেকে মাথা উঠিয়ে রক্তিমের কপালে, গালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,

~আমার তো মনে হয় তন্নিও ভালোবাসে সে এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।

রক্তিম অধরাকে শক্ত করে নিজ বাহুডরে আগলে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,

~তাহলে তো ভালোই হয়।

তন্নির মনটা আনচান করছে রক্তিমের মা তাদের বাসায় এসেছিলো রাতের যাওয়ার কথাও বলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। তন্নি তাকে কোনো কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলো অধরার মা রক্তিমের মাকে সামলিয়ে নিয়েছেন।তন্নির মনে হচ্ছে এসব তার জন্য হচ্ছে রাতের সাথে দেখা করা উচিত কিন্তু সে কী বলবে আর কী বুঝাবে?ঠিক ৫দিন পর রাত চলে যাবে রক্তিম সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে রাত মায়ের কাছে গিয়ে তাকে সব বুঝিয়ে বলেছে রক্তিমের মা রাতের থেকে ওয়াদা নিয়েছেন সপ্তাহে ২দিন সে ঢাকা আসবে।রাত তাতে রাজি হয়েছে যদি কোনো সময় কাজে ব্যস্ত হয়ে যায় তাহলে রাত মাকে নিজের সাথে নিয়ে যাবে।রক্তিমের মা রাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন অধরার মনটাও খা/রা/প তন্নি যদি একবার নিজের মনের কথাটা বুঝতে পারতো।

৫দিন কে/টে গেলো চোখের পলকে তন্নি অনেকবার চেষ্টা করেছে রাতের সাথে দেখা করতে কিন্তু রাত এড়িয়ে চলেছে।রাত ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসে পরেছে। ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করলো রাতের মন
খা/রা/প তন্নি তাকে বিদায় জানাতে আসেনি।তখনই রাতের নজর গাড়ির গ্লাসে পরলো সে দেখতে পেলো তার প্রিয়তমা হাতে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে দৌড়ে আসছে তার দিকে।রাত ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললো গাড়ি থামতেই রাত বের হয়ে আসলো তন্নি হাঁপাতে হাঁপাতে তার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো

চলবে

(বিদ্র:কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:২০/অন্তিম পর্ব

তন্নি রাতের দিকে সেই গাঢ় কাজল চোখে তাকিয়ে বললো,

~আমাবস্যার রাত, এভাবে পালিয়ে কেন চলে যাচ্ছো?

রাত তন্নির কথায় একটু হেসে বললো,

~পালিয়ে যাচ্ছিনা তো শুধু নিজেকে সবার থেকে দূরে রাখছি যদি পালিয়েই যেতাম তাহলে তো আর সবাইকে বলে যেতাম না।

তন্নি রাতের দিকে হাতের ফুলগুলো এগিয়ে দিয়ে বললো,

~এগুলো তোমার জন্য আমার তরফ থেকে।

রাত ফুলগুলো হাতে নিয়ে বললো,

~আর কিছু বলবি?

রাতের কন্ঠে আছে আকুল আবেদন যা তন্নির বুঝতে বাকি রইলো না তন্নি মাথা নিচু করে বললো,

~তুমি আমাদের ছেড়ে কোথাও যাবে না প্লিজ।

রাত বললো,

~আমি আসবো সবার সাথে দেখা করতে তোর সাথেও দেখা করবো।

রাতের কথা শুনে ছলছল করে চোখ তুলে তাকালো তন্নি তার কান্নারত চোখ দেখে রাত তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

~আসি আবার দেখা হবে।

বলেই রাত গাড়ির দরজা খুলতে নিবে তখনই তন্নি চিৎকার করে বললো,

~তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।

রাত তন্নির দিকে ঘুরে তাকালো আর বললো,

~কেন আমাকে ছাড়া কেন থাকতে পারবিনা।

তন্নি চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,

~কারণ ভালোবাসি।

তন্নির কথা শুনে রাতের মুখে হাসি ফুটে উঠলো সে তন্নির গালে নিজের হাত রেখে বললো,

~আরেকবার বল।

তন্নি নিজ গাল ছাড়িয়ে বললো,

~ইশ আমার বুঝি লজ্জা করে না আমি বার বার বলতে পারবো না।

বলেই সে উল্টো দিকে হাঁটা ধরলো রাত এসে নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিয়ে ড্রাইভারকে বললো বাসায় চলে যেতে।তারপর সে ছুটলো তন্নির পিছে দৌড়ে তন্নির পাশে গিয়ে হাঁটা শুরু করলো তন্নি তাকে দেখে মুখ টি/পে হেসে বললো,

~তা গেলে না সিলেটে?

রাত বললো,

~ভাবলাম বিয়ে করে একেবারে বউকে নিয়ে যাবো হানিমুনও হয়ে যাবে কী বলিস?

তন্নি বললো,

~আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো?তোমার বউকে জিজ্ঞেস করো।

রাত বললো,

~একদম ঠিক বলেছিস।

বলেই সে তন্নিকে কোলে তুলে নিলো তন্নি অবাক হয়ে বললো,

~এসব কী করছো?

রাত বললো,

~বউ বানাতে যাচ্ছি এখান থেকে সোজা বাসায় তারপর সবাইকে নিয়ে কাজী অফিস।

তন্নি বললো,

~একটুও না আমি এখন বিয়ে করবো না।

রাত বললো,

~তাহলে ছা/ড়/বো/ও না।

তন্নি বললো,

~জো/র করে বিয়ে করবেন?

রাত বললো,

~হাজারবার করবো।

তন্নি অ/স/ভ্য বলে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেললো রাত মুখে হাসি রেখার টেনে হাঁটতে লাগলো তার যে আজ বরই সুখের দিন।অধরা বারান্দায় দাড়িয়ে আছে তার মনটা খুব খা/রা/প তন্নি রাতকে বিদায়ও দিতে আসেনি এতোটা নি/র্দ/য় তার বোনটা কী করে হলো?তখনই সে দেখলো রাত যে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলো সেই গাড়ি বাসার ভিতর ঢুকছে।অধরা খুশি হয়ে গেলো সে মনে করলো রাত যায়নি এসে পরেছে সে খুশিতে রুমে ঢুকে দেখলো রক্তিম কাজ করছে সে রক্তিমের হাত থেকে ফাইল নিয়ে নিলো।এভাবে ফাইলটা সামনে থেকে সরে যাওয়াতে রক্তিম বি/র/ক্তি নিয়ে অধরার দিকে তাকালো আর তাকিয়ে দেখতে পেলো অধরার মুখে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।এতোক্ষন তো মুখটা কা/লো করে রেখেছিলো তো হঠা কী হলো যে এতো খুশি।রক্তিমের ভাবনার মাঝেই অধরা বললো,

~রাত চলে এসেছে।

রক্তিম অবাক হয়ে সোফা ছেড়ে দাড়িয়ে বললো,

~মানে কী বলছো?

অধরা বললো,

~রাতের গাড়ি বাড়ির দরজায় এতো তাড়াতাড়ি তো আর সিলেট পৌছে যাইনি তাই না?

রক্তিম দেরি না করে অধরার হাত ধরে রুমের বাহিরে চলে আসলো সেখানে এসে তো আরো অবাক রাতের সব লাগেজ ড্রাইভার রেখে গেছে কিন্তু কোথাও রাত নেই।রক্তিমের মা খুশিতে রাতের নাম্বারে ফোন দেয় রাত রিসিভ করে জানায় সে একটু পর বাসায় আসবে।রক্তিমের বাবা ছেলের ওপর বিরক্ত হলেও স্ত্রীর জন্য কিছুই বলতে পারলেন।রক্তিমের মা অধরাকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলেন রক্তিম বাবার সাথে বসে সব কিছু মিলাতে ব্যস্ত কেন রাত সিলেট যাইনি?দুপুরের দিকে রাত আর তন্নি একসাথে রাতের বাসায় আসে তাদের দুজনকে একসাথে দেখে অধরার পরিবার আর রক্তিমের পরিবার অবাক হলো রক্তিম আর অধরা এখন সব বুঝতে পারলো অধরা মনে মনে বোনকে নিয়ে অনেক খুশি হলো অবশেষে সে সব বুঝতে পারলো তার বোনটা।অধরার বাবা তন্নিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

~তন্নি মা এসব কী তুমি আর রাত একসাথে?

তন্নি অধরার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো সব সামলানোর জন্য
অধরা বললো,

~বাবা আসলে

অধরার কথার মাঝেই রাত বলে উঠলো,

~আমি বলি আঙ্কেল।

অধরার বাবা আর মা উৎসুক নজরে তার দিকে তাকালো রাত বললো,

~আমি আর তন্নি দুজন দুজনাকে ভালোবাসি আর বিয়ে করতে চাই।

রক্তিমের মা ছেলের কথা শুনে অনেক খুশি হয়ে গেলেন সে তন্নির কাছে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

~ভাইসাহেব,আপনার এই মেয়েটা কেও আমি নিজ বাসার বউ করে নিয়ে যেতে চাই।

রক্তিমের বাবাও মাথা দুলালো অধরার বাবা তন্নিকে বললেন,

~রাত যেটা বলছে তা কি সত্যি?

তন্নি বললো,

~হ্যাঁ বাবা।

অধরার বাবা নিজ স্ত্রীর দিকে তাকালো অধরার মা চোখের ইশারায় সহমত পোষন করলেন অধরার বাবা বললেন,

~তোমাদের যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে আমিও রাজি।

অধরার বাবার কথা শুনে সবাই খুশি হয়ে গেলো অধরা গিয়ে নিজ বোনকে জড়িয়ে ধরলো।রক্তিমও ভাইকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বললো,

~তাড়াতাড়ি বিয়ে সেরে ফেল নাহলে আমার মতো অবস্থা হয়ে যাবে।

বলেই রাতকে ছেড়ে দিয়ে চোখ টি/প মারলো রক্তিমের কথায় রাত ভাবলো কোনো সমস্যা হওয়ার আগেই বিয়ে করে ফেলতে হবে।রাত বললো,

~কালকে বিয়ে হবে প্লিজ আমি তন্নিকে নিয়ে সিলেট যেতে চাই।

রক্তিমের মা বললেন,

~আবার সিলেট?

রাত বললো,

~মা আমি একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি তা কীভাবে ছেড়ে দেই? আর তন্নিকে আমি নিজের সাথেই রাখতে চাই বিয়ে হলে ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারবো।

অধরার বাবা বললেন,

~কাজের প্রতি তোমার দায়িত্ব দেখে খুব ভালো লাগলো তোমার সিদ্ধান্ত যদি তাই হয় তাহলে আমরাও রাজি।

তন্নি বললো,

~প্রজেক্ট শেষ হলে আমরা চলে আসবো তো?

রাত বললো,

~ইনশআল্লাহ ৬মাসে সব শেষ হয়ে যাবে আর মা তো যাবেই তুই চাইলে মায়ের সাথেও আসতে পারিস।

তন্নি রাতের কথা শুনে রাজি হয়ে গেলো আগামী কাল দুপুরে রাত আর তন্নির বিয়ে হবে। অধরা তন্নির সাথে নিজের বাসায় চলে গেলো তন্নির হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিলো বোনের জন্য বিয়ের শাড়ি থেকে শুরু করে সব কিনলো রক্তিমের সাথে।রাতে খাবারের পর অধরা রুমে এসে দেখলো রক্তিম শুয়ে পরেছে অধরা রক্তিমের গায়ে কম্বলটা ঠিক করে দিতে নিবে তখনই রক্তিম অধরার হাত ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।অধরা বললো,

~আমি তো মনে করেছি জনাব ঘুমে ব্যস্ত।

রক্তিম অধরার চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে চু/মো খেয়ে বললো,

~তোমাকে ছাড়া কী আমার ঘুম আসে আমার?

অধরা বললো,

~তা আসবে কেন আমাকে জ্বা/লা/তে তো আপনার ভালোই লাগে।

রক্তিম অধরার ঘাড়ে মুখ গুজে বললো,

~ভালোবাসি❤️❤️।

অধরাও বললো,

~আমিও ভালোবাসি❤️❤️।

দেখতে দেখতে বিয়ের সময় হাজির হলো তন্নিকে বউ সাজিয়ে রাতের পাশে বসিয়ে দেওয়া হলো। রাত তন্নিকে দেখে বুকে হাত দিয়ে দিলো আর তন্নি কাছে এসে বললো,

~পুরো বউ লাগছে আজ তোকে।

তন্নি বললো,

~গাধা আমিই বউ তাই আমাকে বউই লাগবে।

অতপর তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো সকল বি/প/দ অতিক্রম করে আজ তাদের জীবনে “ভালোবাসামায় প্রহর” চলে এসেছে।বিকেলে তারা দুজন রওনা হলো সিলেটের উদ্দেশ্যে তন্নি যাওয়ার বেলা কান্না করছিলো বলে রক্তিমের মা তাকে নিয়ে যেতে দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন।রাত তাকে বুঝিয়ে তন্নিকে গাড়িতে তুলেন রক্তিমকে বলে যে সবার খেয়াল রাখতে আর রওনা দেয় নিজ গন্তব্যে।

রাত আর তন্নি সিলেট চলে গেছে আজ ১মাস রোজ তাদের সাথে কথা হয়।রক্তিম আর অধরা কিছুদিন তাদের কাছে থেকেও এসেছে ইদানিং অধরা শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা।সেই নিয়ে রক্তিম আর তার মায়ের অনেক চিন্তা তাই আজ অধরাকে নিয়ে তারা ডাক্তারের কাছে এসেছে ডাক্তার সকল রির্পোট দেখলেন রক্তিমের মা বললেন,

~কিছু বলুন ম্যাডাম।

ডাক্তার নাসরিন হেসে বললেন,

~আপনার বউমা প্রেগন্যান্ট।

রক্তিম কেবিনের বাহিরে তাই সে কিছুই জানে না অধরা ডাক্তারের কথা শুনে বললো,

~সত্যি?

ডাক্তার বললেন,

~রির্পোট তো তাই বলে।

রক্তিমের মা অধরাকে নিয়ে বাহিরে চলে আসলো রক্তিম তাদের দেখে কাছে এসে বললো,

~কী হয়েছে ডাক্তার কী বলেছে?

রক্তিমের মা বললেন,

~বাসায় চল সবাইকে একসাথে বলবো।

রক্তিম বললো,

~মা আমায় তো বলতেই পারো এখন।

রক্তিমের মা বললেন,

~নাহ বলতে পারিনা চলো বাসায়।

অধরা রক্তিমের অবস্থা দেখে মিটমিট করে হাসছে রক্তিম দুজনকে নিয়ে বাসায় পৌছালো।সবাই একসাথে বসে আছে ভিডিও কলে রাত আর তন্নিও উপস্থিত সবাই রক্তিমের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।রক্তিমের মা সবার উদ্দেশ্যে বললেন,

~আমাদের পরিবারে নতুন সদস্য আসতে চলছে অধরা মা হতে চলেছে।

রক্তিমের মায়ের কথা শুনে সবাই খুশি হয়ে গেলো অধরার মা অধরার কাছে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।রক্তিম অধরার কাছে এসে বললো,

~আমার ছোট্ট রাজকুমারী আসবে তাই না?

অধরা বললো,

~রাজকুমারও তো আসতে পারে?

রাত ভিডিও কল থেকে বললো,

~দুজনও তো আসতে পারে তাই না।

রাতের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো রক্তিম অধরার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,

~আমাদের “ভালোবাসাময় প্রহর” এভাবেই চলে থাকুক সর্বদা।

সমাপ্ত

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here