ভালোবাসার পরিনতি পর্ব ৩+৪+৫

~~~৩+৪+৫~~~

#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_৩

আমি বুঝতে পেরেছি আমার ভালোবাসার মানুষটি আর আমার নেই সে অন্য জনের হয়ে গেছে।কেনো আমাকে ঠকালো? আমি তো ভালোবাসার কমতি রাখি নি। সব সময় ওকে খুশি করার জন্য যা করতে হয় তাই করেছি তাহলে কেনো এমন করলো?একটা বারও কি আমাদের সন্তানের কথা ভাবলো না?
মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, কোনো কিছুর হিসেব মেলাতে পারছি না। কেঁদে কেঁদে সারারাত পাড় করলাম।
সকালে রান্নাঘরে বসে রুটি বানাচ্ছি তখন কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখি অনেক সুন্দরী একটা মেয়ে।
“রোহান কোথায়?”
“ও ঘুমাচ্ছে কিন্তু আপনি কে? ”
“আমি ওর হবু বৌ”
আমাদের কথা শুনে রোহন এসে বললো,
“নিশিতা তুমি আজকে আমার বাসায় আসবে তা জানিয়ে আসবে তো”?
” ভাবলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দেই তাই না জানিয়ে চলে এসেছি ”
“আচ্ছা ভিতরে এসে ”
“হুম, এই মেয়েটি কে?”
“ও আমাদের বাসার কাজের লোক, বাবা মা কিছু দিন পরে আসবে তাই পরিচিত মেয়েটিকে আগে পাঠিয়ে দিয়েছে ”
“মেয়েটি বেশ সুন্দরী কিন্তু ”
“তোমার থেকে বেশি সুন্দরী না”
“হাহাহাহা”
“ইভা তুই গিয়ে আমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আয়”

নিজের কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, আমি কি ঠিক শুনেছি যে আমার স্বামী আমাকে কাজের লোক বানিয়ে দিলো। এতোটা কিভাবে পরিবর্তন হলো? শুধু মাত্র মেয়েটা সুন্দরী বলে ও সুন্দরের পূজারী হয়ে গেলো? ভালোবাসার পরিনতি কি এমন কষ্টের হয়? আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি হেঁটে রান্না ঘরে যাবো তার শক্তিটুকু পাচ্ছি না।
রোহান এসে বললো,
“তোকে সেই কখন থেকে ডেকেছি কথা কি কানে যায়?”
“না মানে আর কি, বলো কি লাগবে?”
“নিশিতার সামনে আমাকে তুমি করে বলবি না আপনি বলবি, তুই আমার বৌ ছিলি এখন আর না। তুই ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করে বিদায় হ্ ”
“কালকেই চলে যাবো আর তুমি নিশ্চিত থাকো নিশিতা আমাদের সম্পর্কে কিছু জানতে পারবে না”
“হ্যাঁ বিদায় হলে ভালো, এখন যা নাস্তা রেডি কর”
“হুম”

নাস্তা রেডি করে টেবিলে রেখে রোহানের রুমের দরজায় টোকা দিলাম। নিশিতা বিরক্তি নিয়ে বললো,
“প্রাইভেট টাইমে কাউকে ডিসটার্ব করতে হয় না তা জানো না?”
“নাস্তা রেডি করেছি তাই আপনাদের ডেকেছি”
“হ্যাঁ যাও আসছি কিন্তু আর নেক্সট টাইম আমাদের রুমে নক দিবে না, প্রয়োজন হলে আমি তোমাকে ডেকে নিবো”
“আচ্ছা ”

দৌড়ে নিজের রুমে এসো কান্না করতে লাগলাম। মেয়েরা আর যাই হোক নিজের স্বামীর সঙ্গে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না। রোহানের এতো টা নিচে নামতে একটুও রুচিতে বাঁধলো না, ঘরে বৌ বাচ্চা থাকতে অন্য মেয়েকে নিয়ে রুমে সময় কাটায়। রাফিসা ঘুম থেকে উঠে আমাকে কাঁদতে দেখে বললো,
-আম্মু তুমি কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে?
-কিছু হয় নি
-ও আম্মু বলো না কি হয়েছে? তুমি তো বলেছিলে আমরা সুখের দেশে যাবো তাহলে এখন কেনো কাঁদছো?
-সুখের দেশে গেলে আর কাঁদতে পারবো না তাই এখন একটু কেঁদে নিচ্ছি

রোহান আমাকে ডাকছে,
-ইভা এই ইভা, খাবার টেবিলে আয়
-আসছি
-খাবার টেবিলে রেখে দিয়ে চলে গিয়েছিস কেনো?খাবার বেড়ে দিবে কে?
-আপনারা এখানে ছিলেন না তো তাই আর কি
-কথা কম বলে প্লেটে খাবার দে।
-হুম।
রাফিসা এসে বললো,
-আব্বু আমাকে একটু খাইয়ে দেও।

রোহান রাফিসাকে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বললো,

-তোকে কতো দিন বলেছি তোর মেয়ে আমাকে যেনো আব্বু না বলে।
– আহ্ রোহান ও বাচ্চা মানুষ না বুঝে বলে ফেলেছে (নিশিতা)
-বাচ্চা বলে তো অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না

আমি রাফিসাকে কোলে নিয়ে বললাম,

-স্যার ও ভুল করে বলে ফেলেছে, ক্ষমা করবেন
-আম্মু আমি ভুল কিছু বলি নি তো (রাফিসার)

আমি রাফিসার গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম,

-তোর বাবা মরে গিয়েছে, উনি তোর বাবা না আর কোনোদিন কাউকে বাবা বলবি না
-উফফফ্ রোহান তোমার বাসায় তো একটুও শান্তি নেই, ওদের কাজে রাখতে হবে না (নিশিতা)
-আচ্ছা তুমি না চাইলে ওদের রাখবো না
-কিন্তু মেয়েটার রান্না খুব ভালো করে
-এমন ভালো রান্না অনেকে করতে জানে, তুমি চিন্তা করো না নতুন কাজের লোক রাখবো।
-হুম

রোহান, নিশিতা খেয়েদেয়ে বাইরে চলে গেলো। সারাদিন মা,মেয়ে মিলে অনেক কেঁদেছি। চোখের পানি একটা বেইমানের জন্য কেনো পরে? কেনো আমি ওর মতো ভালো থাকতে পারি না? উফফ ওর কথা ভাবতে ভাবতে মাথা ব্যাথা হয়ে গেছে।

রাতে রোহান ড্রিংক করে বাসায় ফিরে এসে আমাকে খুব মারলো তার কারন কেনো রাফিসা ওকে বাবা বলেছে? নিশিতার নাকি একটু সন্দেহ হয়েছে যে আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি না? এতো মার খাওয়ার পরও আমি সকালে উঠে রোহানের জন্য ওর সব পছন্দের রান্না করেছি।

[গল্পটা কেমন হচ্ছে তা গঠন মূলক কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের কমেন্টে লেখার আগ্রহ পাই ]

চলবে,,,,

#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_৪

আজ রোহানের জন্মদিনে ওর বেস্ট গিফট হবে ডিভোর্স। দুটো দিন সময় চাওয়ার কারন ছিলো ওর জন্মদিনে শেষ বারের মতো নিজে ওর পছন্দ মতো সব রান্না করে খাওয়াবো আর কোনোদিন তো সুযোগ পাবো না । বরাবর ও যা চেয়েছে তাই দিয়েছি ওর সুখে আমি সুখ পেয়েছি কিন্তু ও আমাকে নিয়ে কোনোদিন সুখী হতে পারবে না । প্রিয় মানুষটি যে আমার নেই।রোহান দ্বিতীয় সন্তান কেনো চাইছে না তা এখন আমার কাছে স্পষ্ট। আমি যদি এখন ডিভোর্স না দিয়ে দেই তাহলে যেকোনো মূল্যে আমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখতে দিবে না, মা হয়ে সন্তানকে মেরে ফেলতে পারবো না। যাই হোক আমার ভালোবাসার মানুষ তো আমার সন্তানদের বাবা তো তাই রোহানের পছন্দের একটা শাড়ি পরলাম। ও রুমের দরজা লক করে ঘুমায় যাতে আমি বা রাফিসা কেউ ডিসটার্ব করে না পারি কিন্তু আজকে দরজা লক করে নি রাতে ড্রিংক করে এসেছিলো তাই আমি রুমে ঢুকে ডাক দিলাম,
-রোহান এই রোহান উঠো
-সাতসকালে তোর হয়েছে কি? চিল্লাছিস কেনো?
-Many Many Happy Returns Of The day Happy BirthDay To U Rohan
কথাটা শুনে রোহান আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল তারপর বললো,
-এভাবে রংচং লাগিয়ে সেজে দাড়িয়ে আছিস কেনো? তোকে কে বলেছে আমার জন্মদিনে উইস করতে? তোর মুখ দেখলে এমনি দিন খারাপ যায় আজকে না জানি কি হবে?
– আমাদের এতো দিনের ভালোবাসা আর সন্তানদের জন্য কি আমরা একসাথে থাকতে পারি না? তুমি চাইলে সব হবে।
-না না না পারি না তোকে চাই না,আমি ডিভোর্স চাই।

কিছু না বলে রোহানের রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।আমার রুমে এসে নিজেকে আয়নায় ভালো করে দেখতে লাগলাম, যে আমি দেখতে খুব খারাপ তাই স্বামীর মন পাই নি।এর মধ্যে রাফিসা ঘুম থেকে উঠে আমাকে বলে,
“আম্মু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, প্রতিদিন তুমি এমন সুন্দর শাড়ি পরবে।
” হ্যাঁ মা পড়বো, তুমি এখন যাও ব্রাশ করে এসো তারপর একটা জায়গায় নিয়ে যাবো”
“আচ্ছা ”

রাফিসাকে রেডি করে নিজে রেডি হয়ে রোহানের রুমের কাছে গিয়ে বললাম,
“টেবিলে খাবার বেড়ে রেখেছি খেতে এসো ”
“যা আসছি”

রোহান ডাইনিং টেবিলে এসে বললো,
“তুই যতোই আমার মন পাওয়ার জন্য এসব নেকামি করিস কোনো লাভ হবে না, আমি নিশিতাকে বিয়ে করবো। তুই আজকে ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করে বিদায় হ্”

রোহানের সামনে ডিভোর্স পেপার এনে সিগনেচার করে দিলাম৷ সিগনেচার করার সময় ভেবেছিলাম রোহান বলবে সিগনেচার করো না, আমাকে ক্ষমা করে দেও আবার নতুন করে সব শুরু করবো। কিন্তু না আমি বার বার ভুল করি।
“সিগনেচার করে দিয়েছি এবার খুশি তো?”
“হুম ”
“এখন তোমাকে কিছু কথা বলি,মনে আছে আমি ফুল কিনতে গিয়েছিলাম সেদিন আমাকে নষ্টা মেয়ে বলেছো কিন্তু সেটা আমি তোমার জন্য হয়েছি। তোমাকে আজকের দিনে ফুলেরতোড়া দিবো তাই সেদিন ওই ছেলেটাকে বলেছিলাম আজকে যেনো বাসায় ফুলেরতোড়া দিয়ে যায়।
আবার ডেলিভারি ম্যান বাসায় পার্সেল দিয়ে গিয়েছিলো সেটা আমি তোমার জন্য কয়েকটা জিনিস অনলাইনে ওর্ডার দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে বললে আমার প্রেমিক দিয়েছে একটা বার যদি পার্সেলটা খুলে দেখতে তাহলে আমাকে খারাপ কথা বলতে রুচিতে বাজতো। আর দুটো দিন সময় চাওয়ার কারন ছিলো আজ তোমার জন্মদিনে তোমার বেস্ট গিফট দিবো দেখো তোমার বেস্ট গিফট দিয়ে দিয়েছি ”
“ইভা তুমি আমার জন্য এতোকিছু করেছো আর আমি তোমার সাথে কি না খারাপ ব্যবহার করেছি হাহাহাহা তুই কি ভাবলি আমি এখন তোকে মেনে নিবো? তা কখনো ভাবিস না। ”
রোহানের কথা শুনে চোখের পানি পড়তে লাগলো। প্রিয় মানুষের খারাপ রুপ সহ্য করা যায় না।
“আমাকে ভোলানোর জন্য এসব নাটক করার কোনো দরকার নেই, এখন তোরা মা মেয়ে আমার বাসা থেকে চলে যা”
“হুম চলে যাবো, এখন তুমি খেয়ে নেও ”
“তোদের যতো যা কিছু আছে সব নিয়ে যাস ”
“আচ্ছা ”

আমার আর রাফিসার সব কিছু প্যাক করে নিলাম। আড়াল থেকে দেখলাম রোহান তৃপ্তি সহকারে আমার রান্না করা খাবার খাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে মেয়েটা কিছু খায় নি তাই আমাকে বললো,
-আম্মু আমার ক্ষিদে পেয়েছে
-বাইয়ে গিয়ে খেয়ে নিবে এখন চলো।
-আচ্ছা

রোহানের খাওয়া শেষ তখন আমি গিয়ে বললাম,
-আমরা চলে যাচ্ছি, তুমি নিজের খেয়াল রেখো
-হুম যা
রাফিসা রোহানের হাত ধরে বললো,
-আব্বু তোমাকে আমি খুব জ্বালিয়েছি এখন থেকে আর কেউ তোমাকে জ্বালাবে না কিন্তু আব্বু তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার খুব কষ্ট হবে। তুমি আমাদের সাথে থাকো
-তোদের মা, মেয়ের নাটক আর সহ্য হচ্ছে না
-ও বাচ্চা মানুষ ওর কথায় রাগ করো না আমরা চলে যাচ্ছি।

পাঁচ বছরের সংসার শেষ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। ছোটো মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি যাওয়া ছাড়া আর কোনো জায়গা নেই তাই বাবার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। রাফিসাকে পথে খাওয়ানোর জন্য কেক,কলা পানি কিনে নিয়েছি। মেয়েটা বাসে উঠলে ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু আমার যে ঘুম আসে না। পুরোনো স্মৃতি বার বার মনে পড়ে যায়। রোহানের সাথে বিয়ের পর থেকে আমি বাবার বাড়িতে দু তিনদিনের বেশি থাকতে পারতাম না। একবার ও আমাকে বাসস্টপে পৌঁছে দিতে কান্না শুরু করলো আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না তাই ও আমার সাথে বাবা বাড়ি এলো। একটু চোখের আড়াল হলে ইভা ইভা বলে চিল্লাপাল্লা শুরু করতো আর আজ সারাজীবনের জন্য ওকে ছেড়ে চলে এলাম তাও কষ্ট পেলো না ভালোবাসার পরিনতি কি শুধু একতরফা কষ্ট পায়, অন্য জন সুখে থাকে এটা কেমন নিয়তি?
ওর হাজারো স্মৃতি ভাবতে ভাবতে বাবার বাসায় পৌঁছে গেলাম । কলিং বেল বাজাতে মা দরজা খুললো, মাকে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি। মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।
-কি হয়েছে মা তোর? তুই কাঁদছিস কেনো?
বাবা এসে রাফিসাকে কোলে নিয়ে বললো,
-নানু ভাই তোমার আম্মু এতো কাঁদছে কেনো?
-আমরা বাবাকে ছেড়ে চলে এসেছি
মা আমাকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসালো। আমি শুধু কেঁদে যাচ্ছি কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। মা এক গ্লাস পানি খাইয়ে বললো,
-একটু শান্ত হ্ মা তারপর খুলে বল তোর কি হয়েছে?
নিজেকে একটু শান্ত করে রাফিসাকে বললাম,
-তুমি একটু নানুর রুমে গিয়ে শুয়ে থাকো নয়তো ক্লান্ত হয়ে পরবে
রাফিসা বাধ্য মেয়ের মতো চলে গেলো তারপর মা বাবাকে সবকিছু বললাম৷ বাবা মা দুজনেই খুব কষ্ট পেয়েছে আমি তাদের আদরের একমাত্র মেয়ে আমার সব কথা শুনেছে কোনো দিন আমার অমতে কিছু করে নি এবং আমিও তাদের সব কথা শুনে -মেনে চলেছি আর আমি আজ সুখী হতে পারি নি। আমার দু ভাই আছে তারাও বিয়ে করে সুখী আছে। আমার বাবা মায়ের সাথে থাকে। একজন শশুড় বাড়িতে গিয়েছে আর অন্য জন আমার ফুপির বাসায় গিয়েছে আমি এসেছি শুনে ওরা কালকে চলে আসবে কিন্তু আমি ভাবতেছি কি করে দুটো সন্তান নিয়ে থাকবো? কি করে খরচ চালাবো? সারাদিন রাত বাবা মা আমাকে অনেক বুঝিয়েছে তারা আমার পাশে আছে। পরের দিন ভাইয়া ভাবিরা বাসায় আসলো।

[গল্পটির মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের দেশে এখনও হাজার হাজার নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তারপরও তারা সন্তানদের কথা ভেবে সহ্য করার ক্ষমতা রাখে এবং সমাজেরহীন দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য স্বামীর সংসার করে যায় কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না।

যাদের গল্পটা ভালো লাগবে না তারা ইগনোর করুন। ভুলত্রুটি হলে দুঃখিত]]

#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_৫

“তোদের সংসারে এতো ঝামেলা হয়েছে যে শেষ পর্যন্ত ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছিস আর আমাদের জানানোর প্রয়োজন বোধ মনে করিস নি” (বড় ভাই)
“হ্যাঁ আমরা সবাই বুঝিয়ে বললে হয়তো রোহান তোর সাথে থাকতো ” (ছোট ভাই)
“কম চেষ্টা তো করি নি ওর সাথে থাকার জন্য আর তোমরা যেনো ওর সাথে এসব নিয়ে কথা না বলো তা আমাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে তাই তোমাদের অপমান করতে চাই নি” (ইভা)
“একমাত্র আদরের বোন তোকে কোনো দিন একটা থাপ্পড় পর্যন্ত দেই নি আর ও তোর সাথে এতো নিষ্ঠ ব্যবহার করেছে আর তুই আমাদের অপমানের কথা চিন্তা করে কিছু না জানিয়ে ভুল করেছিস ” (বড় ভাই)
“আমি মনে করি ইভা তোমাদের না জানিয়ে কোনো ভুল করে নি কারন কোনো মেয়ে চায় না তার বাবার বাড়ির লোকজনকে শশুড় বাড়ির কেউ অপমান করুক ” (বড় ভাবি)
“তোমাদের কিছু বলতে গেলে আমার উপর, রাফিসার উপর নির্যাতন বেশি হতো। তোমার ভাবতে পারবে না রোহানের খারাপ রুপ কতোটা ভয়ানক ” (ইভা)
“রোহানের বাবা মায়ের সাথে কথা বললো, ওনার ছেলের এতো সাহস হয় কিভাবে যে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলে এমন কি দুধের বাচ্চার গায়ে হাত তুলতেও ছাড়ে নি(বাবা)
” না বাবা ওর বাবা মা এসব কিছু জানে না আর ওনারা খুব ভালো। তাদের ছেলে খারাপ হয়ে থাকলে তাদের তো কোনো দোষ নেই (ইভা)
“ওদের তো ডিভোর্স হয়ে গেছে এখন আমাদের কোনো অধিকার নেই রোহান ভাইয়ের সাথে এসব বিষয়ে কথা বলার আর যে নিজে থেকে সংসার করতে চায় না তাকে হাজার বার বুঝিয়ে কোনো লাভ হয় না। এখন থেকে ইভা শুধু ওর সন্তানদের কথা ভেবে নিজেকে শক্ত করবে (ছোট ভাবি)”

আমি ওদের কথা শুনে কান্না করে দিলাম, আল্লাহ বোধহয় আমাকে পুরোপুরি একা করে দেয় নি আমার পরিবার আমার পাশে আছে। মা আমাকে বুকে জড়িয়ে বললো,

“মা তুই কোনো চিন্তা করিস না আল্লাহ যা করে ভালো জন্যই করে, আমরা সবাই তোর সাথে আছি ”
“সকাল থেকে এসে শুধু কথা শুনে যাচ্ছি, খাওয়া দাওয়া যে করতে হবে তা কি কারো মনে আছে? সবাই খেতে এসো ” (বড় ভাবি)
“আমি কিছু খাবো না এখন একটু ঘুমাবে ” (ইভা)
“শোনো বাপু আমাদের বাসায় থাকতে হলে আমাদের কথা শুনে চলতে হবে, এখন খেতে চলো (ছোট ভাবি)
” তুই বিকেলে রেডি হয়ে থাকিস ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো “(ছোট ভাই)
” না ভাইয়া দু দিন পরে যাবো মন মেজাজ একদম ভালো লাগছে না “(ইভা)
” এবার তোর কথা শুনলাম এর পরে আর না “(ছোট ভাই)

আমার খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই তাও মা জোর করে খাইয়ে দিলো।

রাফিসার খেলার সাথী তিন্নি, তিয়াসকে পেয়ে খুব খুশি। ও ভাবে ওর বাবা কিছু দিন পরে আমাদের নিতে আসবে কিন্তু ওর ভাবনা যে সত্যি হওয়ার না।
তিন্নি বড় ভাইয়ের মেয়ে, চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ে আর তিয়াস ছোট ভাইয়ের ছেলে, দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে।

আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি রোহানের সাথে প্রথম দেখা। ওর বাবা- মা, কাকা- কাকি, মামা-মামি, বন্ধুরা, কাজিনরা আর ও আমাকে দেখতে এসে এনগেজমেন্ট হলো। বাবা-মাকে বলেছিলাম তাদের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করবো তাই দেখতে এসে এনগেজমেন্টে কোনো আপত্তি করি নি। সেদিন আমি লাল রংয়ের শাড়ি পরে ছিলাম আর ও কালো রংয়ের শার্ট। সুন্দর মানুষদের কালো রংয়ে বেশি সুন্দর লাগে।
দুজনে আলাদা ভাবে কথা বলতে গেলাম তখন ও বললো,
-আপনি পরিবারের চাপে পড়ে বিয়ে করবে না, যদি নিজের ইচ্ছে থেকে বিয়ে করতে চান তাহলে আমার সাথে বিয়ে হবে নয়তো না।
-না আমি কারো চাপে পড়ে বিয়ে করতে যাচ্ছি না। নিজের ইচ্ছে
-তাহলে আমারও বিয়ে করতে সমস্যা নেই।
-আপনার পছন্দের কেউ আছে নাকি?
-আরে না না আপনাকে পছন্দ করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি
-আমাকে আপনি আগে থেকে চিনেন কিভাবে?
-আপনি কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তখন আপনাকে দেখে ভালো লাগে তারপর আপনি যে রিকশায় ছিলেন ওটা ফলো করে আপনার বাড়ির ঠিকানা পেয়ে যায়।
-হাহাহাহ্ হতেও তো পারতো আমি বাসায় না এসে অন্য কোথাও গেলাম সেখানেও কি আপনি আমাকে ফলো করে যেতেন??
-যাওয়ার দরকার হতে অবশ্যই যেতাম।
-ওহ্ আচ্ছা (একটু মুচকি হেসে)
-ওভাবে হাসবেন না বুকে লাগে, এতো সুন্দর হাসি
-হাহাহাহ্
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ওর একটা বন্ধু বললো,
-আর কতো কথা বলবি, বাসার রাতের জন্য কিছু কথা তুলে রেখে এখন চল। সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।
-হুম চল।

কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো। কতো সুন্দর ছিলো পাঁচ বছরের স্মৃতিগুলো, ভালোবাসাও কোনো কমতি ছিলো না। একে অপরের ছায়া হয়ে থাকতাম সব সময়। বাসর রাতে ও আমাকে একটা ব্রেসলেট দিয়ে বলেছিলো সারাজীবন যেনো হাতে রাখি। আমার হাতে এখনও আছে শুধু মানুষটি নেই ।
রাফিসা আমার কাছে এসে বললো,
-আম্মু দেখো আমাকে এতোগুলো চকলেট, চিপ দিয়েছে
-কে দিয়েছে?
-তাকে চিনি না তো
-তোমাকে বলেছি না যে অপরিচিত কেউ কিছু দিলে নিবে না
-উনি তো নানাদের বাসায় এসেছে তারপর আমাকে দেখে এসব দিয়েছে
-এমন কে এসেছে, চলো তো গিয়ে দেখি।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here