ভালোবাসার-রাত
#রোকসানা
পর্ব (৫)
তীলকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই রিদ ওর ঠোট কামড়ে ধরলো। ব্যথায় তীল ছটফট করতে লাগলো। তাতে রিদের প্রতিক্রিয়া আরো বেকে বসলো। তীলকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে,ওর ঠোট থেকে বের হওয়া রক্ত চুষে নিচ্ছে রিদ! রিদের টেনে নেওয়া একেকটা একটা নিশ্বাস তীলের রিদপিন্ডটা বের করে দিচ্ছে! সবকিছুকে অগ্রাহ্য করে তীলের ইচ্ছে হলো রিদের গরম নিশ্বাসে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে। নিজের ভালোবাসায় মাখা হাতটা রিদের মাথার চুলে ডুবিয়ে দিতেই রিদ তীলকে ছেড়ে দিলো। তীলের উপর থেকে সরে পুনরায় কম্বলটা মুড়ি দিতে দিতে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
“” বেড়িয়ে যা,আমার রুম থেকে। তোকে যেন আর কখনো আমার রুমে আসতে না দেখি। তাহলে রিদের না জানা চেহারাটাও তোর জানা হয়ে যাবে। আর সেটা কত ভয়ংকর হতে পারে তুই কল্পনায়ও ভাবতে পারবিনা!””
তীল ঘটনার আকস্মিকতা ভেংগে নিজেকে গুছিয়ে নিতে কিছুটা সময় নিলো। রিদের দিকে তাকিয়ে নিজের চুল,জামাকাপড় ঠিকঠাক করতে লাগে।
রিদ,কম্বলের নিচ থেকে একটা হাত বের করে তীলকে ধাকা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিয়ে বললো,
“” I said, get lost!””
তীল ফ্লোর থেকে উঠে ফুপাতে ফুপাতে বেড়িয়ে যাচ্ছে।
এতো কিসের রাগ আপনার? কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছেন আপনি? যখনি মনে হচ্ছে আপনি আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিচ্ছেন ঠিক তখনি আপনি ঝড়ের গতিতে আমাকে দুরে ঠেলে দিচ্ছেন। আবার যখনি মনে হচ্ছে আমি হয়তো কখনোই আপনার কাছে পৌছাতে পারবোনা তখনি আপনি নিজে এসে আমাকে কাছে টেনে নিচ্ছেন। এ কোন দোটানায় ফেলে রেখেছেন আমাকে?? আপনি আসলে কি চাচ্ছেন?? আপনার ব্যবহার আমাকে খুব জ্বালাচ্ছে! আপনি কি এই জ্বালা থেকে আমাকে মুক্তি দিবেননা???
তীল নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়তেই ঠোটের ব্যথারা আক্রমন করে বসলো। উফ! এতো কেন ব্যথা করছে?? সামান্য কামড়ে কি আমার মরন হবে?? যদি উনার সামান্য কামড়টাই সহ্য করতে না পারি? তাহলে কিসের ভালোবাসলাম আমি???
তীল চোখ দুটো শক্ত করে বন্ধ করে রাখলো। এই সামান্য কামড়েই তাকে হাল ছাড়লে চলবেনা!
আয়নার সামনে দাড়িয়ে তীল ভয়ে সিউরে উঠলো। তার চিকন ঠোটদুটো আলুর মতো ফুলে ফেপে উঠেছে। ইশ! কি বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে আমায়! আমি এভাবে রিদ ভাইয়ার সামনে যাবো কিভাবে? শেষে যদি বলে উঠে,এতো বড় হয়েছিস অথচ অতি সামান্য কামড়ও সহ্য করতে পারিসনা??? তীলের ইচ্ছে হলো কেচি দিয়ে নিজের ঠোটটা কেটে পালিশ করে নিতে।
ঠোটে হাত বুলাতে বুলাতে তীল কাল রাতের ঘটে যাওয়া ঘটনায় হেসে ফেলে। আমি আপনার রুমের সামনে যাওয়ার সাহস পায়না আর আপনি? আপনি খুব বেশি নিলজ্জ। আপনার কি মনে হয়না আপনার রেখে যাওয়া সেই ছোট্ট তীল এখন আর ছোট্টটি নেই? তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। শুধু শরীরের বাহ্যিক না তার ভেতরের অনুভূতিরাও যে এখন কথা বলে!
তীল রুম থেকে বের হয়েই সর্বপ্রথম মায়ের মুখোমুখি হলো,
“” তীল,তোর ঠোটে কি হয়েছে?””
“”তেলাপোকা কামড়িয়েছে, মা।””
“” সেকি,তেলাপোকা আর কোনো জায়গা পেলোনা,শেষমেষ আমার মেয়ের ঠোটে আক্রমন? তোর বাবাকে আমি এখনি তেলাপোকার ওষুধ আনতে পাঠাচ্ছি। তেলাপোকার চোদ্দগুষ্টিকে যদি আমি না কামড়িয়েছি তো আমার নামও…””
“” তুমি তেলাপোকাকে কামড়াবে?””
“” দরকার হলে তাই করবো। আমার দশটা না পাচটা না একটামাত্র মেয়ে আর সেই মেয়ের ঠোটের এই হাল করেছে? তেলাপোকারাও বুঝোক তোর মা তোর জন্য কি কি করতে পারে!””
তীলের মা ওর ঠোটের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিতেই তীল নিজের হাত দিয়ে ঠোটটা ঢেকে নিয়ে বলে,
“” মা,তেলাপোকা এখানে শুধু কামড়ই দেয়নি,তাদের হজম হওয়া উদ্দিষ্ট খাবারও রেখে গেছে। তাই তোমার এখানে হাত দেওয়া বারন।””
“” কেন?””
“” তোমাকে পরে বুঝিয়ে দিবো। এখন আমার ক্ষুধা পেয়েছে!””
তীল মায়ের দিকে ঘুরে তাকালোনা। তাকে পাশ কাটিয়ে খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সে ভালো করেই জানে এই মুহুর্তে তার মায়ের চেহারায় ভীষন বড় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন ভেসে উঠেছে।
খাবার টেবিলে বসে সবাই খেতে ব্যস্ত হলেও তার রিদ ভাইয়াকে সেখানে পাওয়া গেলোনা। মাথাটা একটু ঘুরাতেই সোফায় ঠ্যাং দুটো ভাজ করে কোলের উপর প্লেট নিয়ে বসে আছে রিদ। চোখদুটো টিভির সামনে তাক করা। এমনভাকে তাকিয়ে আছে যেন তার চোখদুটোর পাপড়িগুলো কেউ সুপার গ্লু দিয়ে ব্রুর সাথে আটকে রেখেছে,পলক ফেলা নিষেধ। কি এমন দেখছেন উনি?? তীল টেবিল থেকে আরেকটু সরে এসে উকি দিয়ে টিভির দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে,
“” তুই কি ধনুক সাজার চেষ্টা করছিস?? শিকারীর ধনুক হবি?””
রিদের এমন কথায় তীল হকচকিয়ে গেলো। সোজা হয়ে মুখ বাকিয়ে চেয়ার টেনে খেতে বসে পড়লো। সবাই এখানে বসে খাচ্ছে উনার একা একা ওখানে খেতে হবে কেন?? এক সাথে খেলে কি উনার জাত যাবে?? সবকিছুতে বেশি বেশি।
তীল ঠোটের যন্ত্রনায় কিছুই খেতে পারছেনা। এদিকে বড় আব্বু তার বাল্যকালের ডক্টর বন্ধুকে ডেকে এনেছেন। তিনি তার চশমাটা খুলে তীলকে দেখছে যখনি মনে হচ্ছে দেখা শেষ,চশমাটা আবার পড়ে কিছু একটা লিখে আবার চশমা খুলে তীলের দিকে তাকাচ্ছে। তীলের মনে হলো উনি তীলকে দেখতে আসেনি বরং চশমা কিভাবে লাগাতে হয় আর খুলতে হয় শেটা শিখাতে এসেছেন।
পুরো বাড়ির সব জিনিসকে তছনছ করে তেলাপোকার ওষুধ লাগানো হচ্ছে। তীলকে বাসা থেকে বের করে মেইন দরজা আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মতে,ওষুধের প্রভাবে তেলাপোকারা ছুটাছুটি করবে আর তাদের দুশমন হিসেবে তীলকে আক্রমন করার চেষ্টা করবে তাই তার ভেতরে যাওয়া নিষেধ। এদিকে একা একা বাইরে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে তীলের কান্না পাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে আর কোনোদিন ঐ বাড়িতে ঢুকতে পারবেনা। কোনো এক অন্যায়ের কারনে তার চুলের মুঠি ধরে তাকে বের করা হয়েছে।
“” মিথ্যে কথাটাও ঠিকভাবে বলতে পারিসনা? কি বলছিস একবার ভাববিনা? মাথায় কি বুদ্ধীর ছিটেফুটাও নেই?””
রিদের কন্ঠ পেয়ে মাথাটা তুলে তাকালো তীল। তার ঠিক সামনেই একটা হলুদ কালারের টি-শার্ট পড়ে দাড়িয়ে আছে। চোখে,মুখে বিরক্তের ছাপ!
“” একটা কামড়ের জন্য তুই আমাকে তেলাপোকা বানিয়ে দিলি?””
“” সলি।””
“” সরি বললেই আমি এখন তেলাপোকা থেকে মানুষ হয়ে যাবো?””
তীল অনুশোচনা চাহনি নিয়ে রিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি তেলাপোকা বলেছি দেখে কি উনি সত্যিই তেলাপকা হয়ে গেলো? তীল একটু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে নিলেই রিদ বলে উঠে,
“” হাত পাত।””
“” কি?””
রিদ তীলের হাতটা টেনে নিয়ে হাতের মধ্যে কয়েকটা আধমোরা তেলাপোকা রাখলো। যেগুলো এখনো থেকে থেকে নড়ে উঠছে। তীল ভয়ে ফেলে দিতে নিলে,রিদ ওর হাত চেপে ধরে বললো,
“” এইগুলো নিয়ে তুই এই রোদের নিচে ২ ঘন্টা দাড়িয়ে থাকবি।””
“” তেলাপোকা আমাল ভয় লাগে লিদ ভাইয়া!””
“” যে জিনিসে তোর ভয় লাগে সেটা তোর মুখ থেকে বের হলো কেন??””
তীলের উত্তরের প্রয়োজন মনে করলোনা রিদ। সে জানে তীল হাত পা কাপুনি নিয়ে চোখ বন্ধ করে হলেও ঐ রোদে ২ ঘন্টা দাড়িয়ে থাকবে।
সিজাত অতি উৎসাহের সাথে তার বাবা মাকে নিয়ে হাজির। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। এতক্ষনে তার মা বাবার আসার কারনও সবাই জেনে ফেলেছে। কিন্তু এই ব্যাপারে তীলের মতামত সব থেকে বেশি প্রয়োজন মনে করলো তীলের বড় আব্বু।
“” আংকেল,আপনি ঠিকই বলেছেন। আমিও চাই তীলের মত নিয়েই শুভকাজ হোক। আমি কি ওর সাথে একটু আলাদাভাবে কথা বলতে পারি?””
সম্মতি পেয়েই সিজাত তীলকে নিয়ে ওর রুমে চলে আসলো।
“” তীল,আমি আমার মনের কথা চিঠিতে সব বলে দিয়েছি। আর রিদ হয়তো তোমাকে চিঠিটাও দিয়ে দিয়েছে। চিঠিটা রিদের হাতে পাঠিয়েছি বলে তুমি রাগ করোনি তো?? আর তোমার ঠোটে কি হয়েছে?””
তীলের ইচ্ছে হলো সিজাত যে হাতে চিঠিটা রিদকে দিয়েছে সেই হাতটা কেটে টুকরো টুকরো করে ওর প্যান্টের ভেতর ভরে দিতে। সিজাতের হাতের দিকে তাকাতেই তীল অবাক হয়ে বললো,
“” আপনার হাতে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজ করা কেন?””
“” কি যে হয়েছে আমি নিজেও জানিনা। রাতে রিদের সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে উঠে দেখি হাতে ব্যান্ডেজ! রিদকে জিজ্ঞেস করায় বললো, রাতে ঘুমের ঘোরে নাকি তেলাপোকা হাত ফুটো করে রক্ত খাচ্ছিলো তাই ও ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। আচ্ছা তীল,তেলাপোকারাও কি মানুষের রক্ত শুষে খায়?””
তীল আর কিছু ভাবতে পারছেনা। মাথাটা কেমন ভনভন করছে। মনে হচ্ছে মৌমাছিরা দল বেধে তার মাথায় মৌচাক বসানোর প্লেন করছে। সিজাতকে রুমে রেখেই ও বেড়িয়ে আসে। সবার ডাক অগ্রাহ্য করে সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে আসে।
শাওয়ার শেষে বের হতে গেলেই তীল বুঝতে পারলো তার দরজা খুলছেনা। বারবার সিটকিনি নাড়িয়ে চাড়িয়েও যখন দরজা খুলতে পারলোনা,ভয়ে তীলের গলা শুকিয়ে এলো। চিৎকার করে আম্মুকে ডাকছে আর দরজা বাড়ি দিচ্ছে। দরজার ওপাশ থেকে একটা কন্ঠ ভেসে উঠলো,
“” গলা ভেংগে চিল্লালেও কেউ শুনতে পারবেনা। বাসায় কেউ নাই।””
চলবে