#ভালোবাসা রং বদলায়
লেখক — #মাহমুদ
পর্ব ১৯
*
রূপার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালো সৈকত। তার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলল,
– কেমন আছেন ম্যাডাম? চিনতে পারেননি মনে হচ্ছে। চুপিচুপি বিয়ে-সাধি তো করে নিয়েছেন ভালোই। একটু দাওয়াত ও তো করলেন না যে।
রূপা কিছু বলছে না। থরথর করে তার হাত পা কাঁপছে। সৈকত বলল,
– আরে, এমনভাবে কাঁপছেন কেন? আমি বাঘ নাকি ভাল্লুক, যে ভয় পাচ্ছেন।
– (নিশ্চুপ)
– সেদিন তো আপনার আচমকা আমার মাথায় আঘাত করার সময় হাত-পা একটুও কাঁপেনি। তবে, আজ কেন কাঁপছে? ও আচ্ছা, আমাকে দেখে ভয়-টয় পেয়ে গেলেন নাকি?
– আপনি….
আশেপাশের দিকে তাকাল রূপা। এরপর নিজেকে শক্ত করল সে। ধীর গলায় বলল,
– আপনি এখানে কেন এসেছেন?
– তোমাকে দেখতে খুব মন চাইছিল আমার। তাই থাকতে না পেরে তোমার কাছে ছুটে চলে এলাম।
– আপনি কিভাবে জানলেন যে আমি এই বাড়িতেই আছি?
– তোমার প্রতি আমার যে মনের টান-টা আছে না? যাকে এককথায় বলা যায়, ভালোবাসার টান। সেই ভালোবাসার টানেই তোমার কাছে ছুটে চলে এসেছি।
– কথা প্যাঁচাবেন না বলে দিলাম।
– কথা আবার কখন প্যাঁচালাম? তবে, আর যাই বলো আজ কিন্তু তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। ইশশ! সেদিন যদি তুমি পালিয়ে না যেতে তাহলে আজ…. তবে তুমি চাইলে এখনও চান্স আছে। তোমার হাজবেন্ডকে যদি ডির্বোস-টা দিতে পারো, তাহলেই আমাদের পথ একেবারে ক্লিয়ার।
বলেই দাত বের করে হেসে দিল সৈকত। রূপা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
– দেখুন আপনি…..
রূপার কথা শেষ হবার আগেই ধ্রুবের আগমন ঘটল। বলল,
– কি রে সৈকত, কখন এলি?
– এই তো দোস্ত একটু আগেই আসলাম।
– দেখা করলি না কেন? আমি তোর জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।
– ওই একটু ভাবির সাথে পরিচিত হচ্ছিলাম। বউ কিন্তু তুই-ই একটা পেয়েছিস বলতে হবে।
ধ্রুব রূপার দিকে এক ছোয়া তাকিয়ে বলল,
– হুম, তা যা বলেছিস…..
ধ্রুবের কথাটা শুনে সৈকত-রূপা দুজনই চমকে গেল। ধ্রুব তড়িঘড়ি হয়ে বলল,
– চল… চল। মা তোর সাথে দেখা করবে।
বলেই সৈকতের এক হাত ধরে টেনে থরথর পায়ে চলে গেল ধ্রুব। রূপা হা হয়ে তাদের যাত্রাপথের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। কিছুতেই সে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে পারছে না। ধ্রুবের সাথে সৈকতের কী সম্পর্ক? কবে থেকে তারা একেঅপরকে চিনে? পরক্ষণে রূপার কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। ধ্রুব-সৈকতের কথায় বলে দিচ্ছিল তারা একে অপরকে খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে চিনে। এক কথায় বলা যায় তারা একেঅপরের বন্ধু।
.
সৈকত ধ্রুবের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল। ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
– এটা কী হল ধ্রুব?
– কোনটা?
– তুই বুঝতে পারছিস না?
– উঁহু….
– তার মানে তুই রূপাকে সত্যি সত্যি…. ছিঃ ধ্রুব! ছিঃ! আমার এটা ভাবতেও ঘৃণা লাগছে যে তোর ছোট ভাই এবং তোর বাবাকে মেরে ফেলার পরেও তুই জেনেশুনে সেই মেয়েটাকেই….
– তুই ভুল ভাবছিস… আমি….
– কী ভুল ভাবছি আমি, বল? কী ভুল ভাবছি? বরং বল তুই-ই ভুল ভেবে ভুল পথে চলে যাচ্ছিস। তোকে এতবার বুঝানোর পরেও তুই শেষমেশ ওই মেয়েটার প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছিস। এত সহজেই সবকিছু ভুলে গেলি তুই? ওই মেয়েটা আমার নিজের চোখের সামনেই তোর বাবা-ভাইকে এক্সিডেন্ট করিয়েছে। এরপরও তুই…
– কী করবো বল? আমি যে আর পারছি না। সত্যিই আর পারছি না। নিজের সাথে এতদিন ধরে যুদ্ধ করেছি। রূপাকে নিজের মন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছি। কিন্তু কিছুতেই পারছি না। কোনো এক মায়ার টানে বেঁধে গিয়েছি বারেবারে। রূপার সেই ঠোঁটের কোণায় এক চিলটে হাঁসি যেন আমাকে মুগ্ধ করে দেয়। তার চোখের কোণায় এক বিন্দু পানি দেখলে যেন বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। তার মায়াভরা মুখখানি দেখলে মাতাল হয়ে যায়। আচ্ছা, এটাই কি তবে ভালোবাসা?
– দেখ তুই……
– আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। এতদিন ধরে কিন্তু আমি তোর কথা মত রূপাকে অনেক কঠিন কঠিন শাস্তি দিয়েছি। কখনো হাত ফুটন্ত তেলের ভিতরে হাত চুবিয়ে দিয়েছি। মেয়েটা রাতের আধার ভয় পায় জেনেও কখনো তাকে কবরের পাশে একা ফেলে এসেছি। যেখানে আমার বাবা ও ভাইকে কবর দিয়েছিলাম। কখনো বাইক থেকে জেনেশুনে ফেলে দিয়েছি। এই গোটা সাত মাসে ওকে কম শাস্তি দেইনি আমি। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনোভাবে তার প্রতি অত্যাচার চালিয়ে গিয়েছি। রূপার জায়গায় অন্যকেউ হলে পুলিশ কেস করতো। এতদিনে আমি জেলে পচে পচে মরতাম। কিন্তু রূপা… সে এমনটা একবারও করেনি। সে তো পারত মাকে সবকিছু বলে দিতে। কিন্তু বলেনি। বরং সে সবকিছু দাঁতে দাঁত চেঁপে সহ্য করে এসেছে। তার জায়গায় অন্যকেউ হলে সহ্য করতে পারত? কখনোই না।
– ধ্রুব, তুই পাগল হয়ে গেছিস। তোর মাথায় রূপার ভূত চড়ে গিয়েছে। বাবা-ভাইকে যে হারিয়েছিস এটাও খুব সহজেই ভুলে গেছিস তুই। শুধুমাত্র ওই খুনী মেয়েটার জন্য। তুই এটা ঠিক করছিস না ধ্রুব, একদমই ঠিক করছিস না।
– (নিশ্চুপ)
– তোর এই একটা ভুলের জন্য সামনে যে কী হতে চলেছে তুই নিজেও জীবনে কল্পনা করতে পারবি না। এখনও সময় আছে ধ্রুব, তুই ওই মেয়েটাকে ডির্বোস দিয়ে দে। তুই যথেষ্ট আংকেলদের জন্য রূপার থেকে প্রতিশোধ নিয়েছিস। তার জীবন একেবারের জন্য নষ্ট করে দিয়েছিস। এখন তুই ওকে ডির্বোস দিলেই তোর বাবা-ভাই এর আত্মা শান্তি পাবে। এমন মেয়েকে ঘরে রাখা, ময়লা আবর্জনার সমান। বলা তো যায় না, সে আংকেলদের মত আন্টি-নিলুকেও….
– প্লিজ সৈকত, চুপ কর। আমি আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না। আমি জানি রূপাকে। খুব করে জানি। সে আমার মা বোনকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। তাদের প্রতি ভালোবাসা আমি ওর চোখে দেখেছি। ওর চোখই বলে দেয় সে কতটা নিষ্পাপ। সে কখনোই কোনো ভুল করতেই পারেনা। তোকে আগেও বলেছি এবং আজও বলছি, তুই ভুল দেখেছিস। রূপা আমার বাবা-ভাইকে মারেনি। মেরেছে অন্যকেউ। যে মেরেছে তাকে তো আমি খুজে বের করবোই। তার যে এমন হাল করবো সে কখনোই তা কল্পনা করতে পারবে না।
– এক সেকেন্ড! তুই আসলে কি বলতে চাচ্ছিস ধ্রুব? আমি তোকে মিথ্যা বলেছি? আমার কথা তোর বিশ্বাস হয় না? আমি নিজের চোখে ওই মেয়েটাকে ট্রাকে দেখেছি যে ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে তোর বাবা-ভাই মারা যায়। এরপরও তুই আমাকে বিশ্বাস করছিস না কিভাবে? তুই না আমাকে ভাই মানিস। তাহলে আজ….
– তুই ভুল ভাবছিস সৈকত। আমার কথাটা একটু….
– থাক! আমি আর কিছুই শুনতে চাচ্ছি না। তুই অনেক বলেছিস। আর না। আমাকে তো আজ ওই বাবা-ভাইকে এক্সিডেন্ট করিয়েছে। এরপরও তুই…
– কী করবো বল? আমি যে আর পারছি না। সত্যিই আর পারছি না। নিজের সাথে এতদিন ধরে যুদ্ধ করেছি। রূপাকে নিজের মন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছি। কিন্তু কিছুতেই পারছি না। কোনো এক মায়ার টানে বেঁধে গিয়েছি বারেবারে। রূপার সেই ঠোঁটের কোণায় এক চিলটে হাঁসি যেন আমাকে মুগ্ধ করে দেয়। তার চোখের কোণায় এক বিন্দু পানি দেখলে যেন বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। তার মায়াভরা মুখখানি দেখলে মাতাল হয়ে যায়। আচ্ছা, এটাই কি তবে ভালোবাসা?
– দেখ তুই……
– আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। এতদিন ধরে কিন্তু আমি তোর কথা মত রূপাকে অনেক কঠিন কঠিন শাস্তি দিয়েছি। কখনো হাত ফুটন্ত তেলের ভিতরে হাত চুবিয়ে দিয়েছি। মেয়েটা রাতের আধার ভয় পায় জেনেও কখনো তাকে কবরের পাশে একা ফেলে এসেছি। যেখানে আমার বাবা ও ভাইকে কবর দিয়েছিলাম। কখনো বাইক থেকে জেনেশুনে ফেলে দিয়েছি। এই গোটা সাত মাসে ওকে কম শাস্তি দেইনি আমি। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনোভাবে তার প্রতি অত্যাচার চালিয়ে গিয়েছি। রূপার জায়গায় অন্যকেউ হলে পুলিশ কেস করতো। এতদিনে আমি জেলে পচে পচে মরতাম। কিন্তু রূপা… সে এমনটা একবারও করেনি। সে তো পারত মাকে সবকিছু বলে দিতে। কিন্তু বলেনি। বরং সে সবকিছু দাঁতে দাঁত চেঁপে সহ্য করে এসেছে। তার জায়গায় অন্যকেউ হলে সহ্য করতে পারত? কখনোই না।
– ধ্রুব, তুই পাগল হয়ে গেছিস। তোর মাথায় রূপার ভূত চড়ে গিয়েছে। বাবা-ভাইকে যে হারিয়েছিস এটাও খুব সহজেই ভুলে গেছিস তুই। শুধুমাত্র ওই খুনী মেয়েটার জন্য। তুই এটা ঠিক করছিস না ধ্রুব, একদমই ঠিক করছিস না।
– (নিশ্চুপ)
– তোর এই একটা ভুলের জন্য সামনে যে কী হতে চলেছে তুই নিজেও জীবনে কল্পনা করতে পারবি না। এখনও সময় আছে ধ্রুব, তুই ওই মেয়েটাকে ডির্বোস দিয়ে দে। তুই যথেষ্ট আংকেলদের জন্য রূপার থেকে প্রতিশোধ নিয়েছিস। তার জীবন একেবারের জন্য নষ্ট করে দিয়েছিস। এখন তুই ওকে ডির্বোস দিলেই তোর বাবা-ভাই এর আত্মা শান্তি পাবে। এমন মেয়েকে ঘরে রাখা, ময়লা আবর্জনার সমান। বলা তো যায় না, সে আংকেলদের মত আন্টি-নিলুকেও….
– প্লিজ সৈকত, চুপ কর। আমি আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না। আমি জানি রূপাকে। খুব করে জানি। সে আমার মা বোনকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। তাদের প্রতি ভালোবাসা আমি ওর চোখে দেখেছি। ওর চোখই বলে দেয় সে কতটা নিষ্পাপ। সে কখনোই কোনো ভুল করতেই পারেনা। তোকে আগেও বলেছি এবং আজও বলছি, তুই ভুল দেখেছিস। রূপা আমার বাবা-ভাইকে মারেনি। মেরেছে অন্যকেউ। যে মেরেছে তাকে তো আমি খুজে বের করবোই। তার যে এমন হাল করবো সে কখনোই তা কল্পনা করতে পারবে না।
– এক সেকেন্ড! তুই আসলে কি বলতে চাচ্ছিস ধ্রুব? আমি তোকে মিথ্যা বলেছি? আমার কথা তোর বিশ্বাস হয় না? আমি নিজের চোখে ওই মেয়েটাকে ট্রাকে দেখেছি যে ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে তোর বাবা-ভাই মারা যায়। এরপরও তুই আমাকে বিশ্বাস করছিস না কিভাবে? তুই না আমাকে ভাই মানিস। তাহলে আজ….
– তুই ভুল ভাবছিস সৈকত। আমার কথাটা একটু….
– থাক! আমি আর কিছুই শুনতে চাচ্ছি না। তুই অনেক বলেছিস। আর না। আমাকে তো আজ ওই মেয়েটার জন্য আজ আমাকে অবিশ্বাস করেছিস তুই। এইটা আমি কখনোই ভুলবো না।
– তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। আমার কথাটা একবার….
ধ্রুবের কথা শেষ হবার আগেই থরথর পায়ে সেখান থেকে চলে গেল সৈকত। তার যাত্রাপথের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে স্টেজ এর দিকে পা বাড়াল ধ্রুব।
.
সারাদিনের ছুটাছুটির ক্লান্তির শেষে বিশ্রামের জন্য শরীরটা বিছানায় মেলে দিল নিলু। আজ সে এতটাই ব্যস্ত ছিল যে শরৎ এর কাছে সারাদিনে একটি বারও কল দেয়নি। শরৎ অবশ্য দিয়েছিল। কিন্তু আশেপাশে মানুষ থাকার কারণে সে রিসিভ করতে পারেনি। নিলু আর কোনো কিছু না ভেবে কল দিল শরৎ এর নাম্বারে। সঙ্গে সঙ্গে কলটা রিসিভ করল শরৎ। বলল,
– বেবি, আজ সারাদিন কোথায় ছিলে? কতবার ফোন দিয়েছি জানো?
– সরি। তোমাকে বলেছিলাম না…. আমার ভাইয়া-ভাবির বৌভাত। এজন্য ফোন ধরতে পারিনি। আর আশেপাশে মানুষ তো ছিলোই আর সাথে ছিল ফ্রেন্ডস।
– ও। জানো, কতটা মিস করেছি তোমাকে? তোমার জাস্ট একটা ফোন কলের জন্য সারাটাদিন অপেক্ষা করেছি। আমাকে তো টেক্সট দিয়ে জানাতে পারতে।
– সরি গো। আসলে… আমি তখন খুব ব্যস্ত ছিলাম। মেহমানদের আর্পায়ন থেকে শুরু করে সবকিছু আমাকে করতে হয়েছে। ভাগ্যিস সাথে ফ্রেন্ডসরা ছিল। নাহলে নির্ঘাত আমাকে আজ খুজে পাওয়া যেত না। তা, বলো তোমার কি খবর? আংকেল কেমন আছেন এখন? ওষুধ ঠিকমতন খান তো?
– আল্লাহ রহমতে এখন খুব ভালো আছে। হ্যা ওষুধপাতি এখন বাবা ঠিকমতন খায়। তোমার কথা মাবাবাকে বলেছিলাম। খুব করে তারা তোমাকে দেখতে চেয়েছে। বলেছে রাজশাহীতে গেলে এবার যেদিন তাদের সাথে দেখা করতে যাব, সেসময় তোমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে। এবং এটাও বলেছে তোমাকে যেন একবারে বিয়ে করেই রাজশাহীতে নিয়ে যায়।
“বিয়ে” শব্দটা শুনে লজ্জায় কুঁকড়ে গেল নিলু। মুখের দুটো দিকটা গাঢ় গোলাপীতে রূপান্তরিত হল তার। শরৎ তা বুঝতে পেরে বলে বসল,
– লজ্জা পেলে চলবে না, হুহ! বিয়ে তো তোমাকে করতেই হবে সুন্দরি।
– ঢাকায় কবে আসবে?
– কালকের পরের দিন।
– এত দেরী?
– হু…. মিস করছ বুঝি?
– খুউউউব।
– আর তো মাত্র একদিন। তারপর তোমার কাছে ছুটে চলে আসব।
– কমন ডাইলগ!!
– বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার?
– উম… না।
– তাহলে কিন্তু বুঝো।
– কি বুঝবো?
– কিছুনা। এখন বারান্দায় আসো…
– কেন?
– আসবে তো আগে।
– ওকে আসছি।
নিলু শোয়া থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। আজ পূর্ণিমারাত। চাদের জোস্না যেন বারান্দায় বাসা বেধেছে। নিলু রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শরৎ বলল,
– কেমন লেগেছে পূর্ণিমারাতটি?
– খুব ভালো। জানো, আমার চাঁদের আলো, জোস্নারাত এসব দেখতে খুব ভালো লাগে।
– আমারও। আচ্ছা চাঁদের দিকে তাকাও তো।
– কেন?
– আগে তাকাও।
নিলু চাঁদের দিকে তাকাল। বলল,
– হুম, তাকিয়েছি।
শরৎ বলল,
– কাউকে দেখতে পাচ্ছ?
– নাতো।
– ভালোভাবে দেখ…
– আচ্ছা।
– এবার দেখতে পাচ্ছ?
– না।
– ধুররররর।
– কি হল?
– তুমি এত আনরোমান্টিক কেন?
– কেন, আমি আবার আনরোমান্টিকের কি করলাম?
– এই যে, আমি বললাম চাঁদে কিছু দেখতে পাচ্ছ কিনা। তা তুমি বললে না।
– তো, দেখতে না পেলে কি করব? আর তুমি কী দেখবার কথা বলছ?
– কিছুনা।
– বলো বলছিইই….
– আজ জোস্না রাত। ভেবেছিলাম পূর্ণিমারচাঁদে তুমি আমাকে নিয়ে অনুভব করবে। আমার প্রতিচ্ছবি চাঁদেরকণায় দেখতে পাবে। কিন্তু….
– ও সরি…. আমি আসলে…
– আচ্ছা সমস্যা নেই। এখন নিচের দিকে তাকাও।
– নিচে কেন?
– আরে তাকাবে তো…
নিলু নিচের দিকে তাকিয়ে চাঁদের আলোয় দেখতে পেল বাইকের সাথে হেলান দিয়ে শরৎ দাঁড়িয়ে আছে। নিলু অবাক হয়ে বলল,
– তুমি! এখানে?
– হু…. সারপ্রাইজ দেব বলে এসেছি। কেমন লাগল?
– এটা আমার জীবনের সেরা সারপ্রাইজ। কখন এলে? তুমি না… রাজশাহীতে ছিলে?
– না, আমি তো তোমাকে সারপ্রাইজ দেব বলে ওইটা বলেছিলাম। আর তুমি যখন ফোন দিয়েছিলে তখনই আমি ঢাকায় পৌঁছেছিলাম। এরপর তোমাকে দেখতে মন চাইছিল তাই ছুটে চলে আসলাম।
– বাব্বাহ! এত্ত ভালোবাসো আমাকে?
– সন্দেহ আছে নাকি?
– উঁহু.. লাভ ইউ….
– লাভ ইউ টু বেবি।
.
ধ্রুব একধ্যানে রূপার ঘুমান্ত মায়াবী মুখখানির দিকে তাকিয়ে আছে। এই নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকালে তার সকল ক্লান্তি যেন ছু মন্তর হয়ে যায়। রূপার একটা হাত নিজের হাতের সঙ্গে আবদ্ধ করল ধ্রুব। তারপর ভেজালো কন্ঠে বলতে লাগল,
– ভালোবাসা মানে কি আমি কখনো বুঝতাম না। কখনো বুঝারও চেষ্টা করিনি। ভেবেছি ভালোবাসা বলতে পৃথিবীতে কিছুই নেই। এজন্য কখনও কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকায়নি। মা সবসময় আমাকে প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে এটাসেটা বলতেন। কিন্তু আমি কখনও এগুলো কানে নেইনি। এসবের সময় কোথায়? আমার সবসময় লক্ষ্য ছিল বাবার বিজনেসটাকে অনেক উচু স্থানে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু বাবা এটাতে সম্মতি দেননি। তার ইচ্ছা ছিল আমাকে অনেক বড় শিক্ষক বানানোর। কিন্তু বরাবরই আমার শিক্ষক হবার ইচ্ছা একদমই ছিলনা। আমার মাথায় বিজনেস এর ভুত চড়ে গিয়েছিল। এটা দেখে বাবা আমাকে বিজনেসেই ঢুকালেন। এরপর আস্তে আস্তে আমি বিজনেসের দিকে কনসেন্ট্রেট করতে লাগলাম। বিজনেসই যেন আমার সব হয়ে গেল। আগে-পিছে কিছুই দেখতাম না। এদিকে মায়ের একটাই কথা, আমি বিয়ে করবো কবে? বাড়ির বড় ছেলে। বিয়ে না করলে হয় নাকি? কিন্তু কখনওই মায়ের কথা পাত্তা দিতাম না। “বিয়ে” শব্দটা শুনলেই যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত। আমার জীবনে যে মা কতটা মেয়েকে দেখিয়েছে। আর আমি কতটাই না রিজেক্ট করেছি তার কোনো হিসাব নেই। এটা নিয়ে অবশ্য খুব রাগারাগি করতেন। তার একটাই কথা ছিল, ‘ধ্রুব তুই বিয়ে করছিস না কেন? দিন দিন যে বয়স বাড়ছে এটা তোর চোখে বাধছে না? আর তুই বিয়ে না করলে তোর নিচে যারা তারা বিয়ে করবে কিভাবে? শোন, এবার আর না করিস না। আমি একটা মেয়ে দেখেছি তোর জন্য। দেখতে শুনতে মাশাআল্লাহ্! এখন তুই হ্যা বললেই হলো। আমারও তো একটু পুতা-পুতীর মুখ দেখার ইচ্ছা করে।’ আমি মাকে শুধু উত্তরে বলেছিলাম, ‘মা, তুমি তো জানোই আমি বিয়ে-টিয়ে, প্রেম ভালোবাসা এগুলো বিশ্বাস করিনা। আমার কাছে এখন বিজনেস টাই আসল। বিয়ে-টিয়ের ব্যাপারে পরেও ভাবা যাবে। এখন তুমি প্লিজ বিয়ের চ্যাপটার-টা এখানেই ক্লোজ করো।’ মা তঝন শুধু রাগে ফুঁসতেন। কিন্তু সেদিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিলনা। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। এরপর আমাদের জীবনে এল বড় স্তরের তুফান। সেই তুফানেই হারিয়ে গেল আমার আমার বাবা এবং ছোট ভাই। আমাদের হাসিখুশি ফ্যামিলিটা নিমিষেই চুপসে গেল। আগে যেমন টেবিলে একসাথে খেতে বসলে আনন্দের রোল পড়ত, এরপর থেকে আর পড়েনি। মা-বোন যেন হাঁসিটাই ভুলে গেছে। কিন্তু আমি দমে যায়নি। আমার বাবা এবং ভাইকে কে মেরেছে এটা আমার জানতেই হবে। এারপর জানার জন্য লোক ফিট করলাম। কিন্তু তাদের দ্বারা কোনো কাজ হলো না। এবার আমিও অজান্তে হতাশ হয়ে গেলাম। এরপরই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে এসেছিল সৈকত। তার সাথে আমার ছোটবেলার কোনো পরিচয় নেই। একদিন সে আমাদের অফিসে চাকরি করতে এসেছিল। এবং সেখান থেকেই তার সাথে আমার পরিচয়। আর এত কমদিনের পরিচয়ে কেউ এতটা আপন হতে পারে আমার জানা ছিলনা। সে যেন আমার ছোট ভাইয়ের মতন সবমসময় পাশে ছিল। এরপর তার থেকে জানতে পারি আমার বাবা-ভাইকে একটা মেয়ে খুন করিয়েছে। আর সেই হচ্ছে তুমি। বিশ্বাস করো সেদিন তোমার প্রতি আমার জন্মেছিল। কিভাবে তোমাকে শাস্তি দেব, এটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। একবার তো ভেবেই নিয়েছিলাম তোমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেব। কিন্তু সৈকত বারণ দিয়েছিল। এরপর আমি ভাবতে লাগলাম তোমাকে কিভাবে শাস্তি দেয়া যায়? পরে আমার বিয়ের কথা মনে পড়ল। মা সবসময় নিলুকে বলত, বিয়ের পরে নাকি মেয়েদের স্বামীর কথামত চলতে হয়। তারা যা বলবে সেটাই করতে হয়। তাদের উপরে কথা বলতে হয়না। আর আমি এটাই চেয়েছিলাম। তুমি আমার কথামত চলবে, যা বলব তাই করবে। সৈকত অবশ্য বিয়ের করতে বাঁধা দিয়েছিল। কিন্তু আমিও নাছরবান্দা। বিয়ে তো আমি করবোই এমন একটা পরিকল্পনা ছিল। শেষমেশ বিয়েটাও হয়ে গেল। মা-নিলু তখন বাসায় ছিলনা। মামারবাড়ি ছিল। আর এটাই ছিল আমার সুযোগ। এরপরই তো তোমার উপর খুব অত্যাচার করতে লাগলাম।
কথাগুলো বলতেই ধ্রুবের চোখ বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল। তবুও সে দমে গেল না। তাকে যে আজ বলতেই হবে।
– আজ বুঝতে পারছি আমি কতটা অন্যায় করেছি তোমার সাথে। দেরী হলেও এতদিনে বুঝতে পেরেছি তুমি আমার মা-বোনকে নিজের মা-বোন ভেবে ভালোবাসো। যে আমার মা-বোনকে এতটা ভালোবাসতে পারে সে কী কখনও আমার ভাইকে এক্সিডেন্ট করিয়ে মেরে ফেলতে পারে? কখনওই না। আফসোস লাগছে এটা ভেবে সেদিন যদি আমি সময় থাকতে বুঝতাম তাহলে আজ….. আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি রূপা। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। এই কথাগুলো তোমাকে সামনাসামনি বলা উচিত ছিল আমার। কিন্তু আমি এটা পারব না। কিভাবে পারব বলো? কোন মুখ নিয়ে আমি ওই কথাগুলো তোমার সামনে বলব বলো? আমার যে বলার মত মুখ নেই। আই উইশ কথাগুলো যদি তুমি শুনতে পেতে… আচ্ছা রূপা তুমি কী জানো? তুমি আমার লাইফে এসে কত বড় উপকার করেছ? যে ছেলে আগে ভালোবাসা মানেই কী বুঝত না, সে আজ কারো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। হ্যা আমি কারো প্রেমে পড়েছি। কাউকে ভালোবেসে ফেলেছি। সে কে জানো? তুমি…..
বলেই ধ্রুব রূপার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল। আবারও বলল,
– এই হাতটা যখন ধরেছি ছাড়বো না আর কখনো। এতদিন তো আমার থেকে কষ্ট পেয়েছ। এবার থেকে শুধু ভালোবাসা পাবে ভালোবাসা।
বলেই ধ্রুব রূপাকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে পড়ল। অপরদিকে রূপার চোখটা অজান্তেই ভিজে উঠল।
চলবে…….
লেখকের অনুমতি ছাড়া কপি কথা নিষিদ্ধ