ভালোবাসা রং বদলায় পর্ব -২০

#ভালোবাসা রং বদলায়
লেখক — #মাহমুদ
পর্ব — ২০
.*
বিছানায় গুপটি মেরে আধশোয়া হয়ে শুয়ে রয়েছে রূপা। আজও বমি করে ফ্লোর ভাসিয়ে দিয়েছে সে। না পেরে ধ্রুব তাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। কিছু টেস্ট করতে হয়েছে রূপার। ডক্টর জানিয়েছেন রির্পোটটা কালই হাতে পেয়ে যাবে তারা।

– এখন কেমন লাগছে?

– হুম, ভালো।

– ফল খাবে? এনে দেব?

– না, খেতে ইচ্ছা করছে না।

– কেন? ডক্টর কী বলেছিলেন শোনো নাই? তোমাকে পুষ্টিকর পুষ্টিকর খাবার খেতে বলেছেন। তোমার শরীরটা খুব দূর্বল। ফল না খেলে সুস্থ হবে কিভাবে? নাও… এখন ওঠো।

রূপা উঠে বসল। ধ্রুব আপেল ছুরি দিয়ে পিচ পিচ করে কেঁটে নিল। এরপর রূপার গালে তুলে খাওয়াতে লাগল। রূপা একটার বেশি খেতে পারল না। আরেকটা খেলেই যেন বমি চলে আসত তার। কোনরকম এক টুকরো আপেল চিবিয়ে শুয়ে পড়ল সে। মাথা যেন মারবেলের মত ঘুরছে। ধ্রুব বলল,

– বেশি অসুবিধা হচ্ছে? ডক্টরের কাছে যাবে?

– না। আমি ঠিক আছি।

– সত্যি তো?

– হুম।

– ওকে, এখন একটু রেস্ট নাও। আমি পাশেই আছি। কিছু লাগলে বলো।

– হুম।

রূপা ঘুমিয়ে পড়েছে। পাশে বসে আছে ধ্রুব। সে রূপার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

– তোমার এই নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকালে আজও নিজেকে অপরাধী মনে হয়। নিজের অজান্তে হলেও অনেকটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাকে। জানি আমি তোমার ক্ষমার যোগ্য নয়। তবুও পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি রূপা। তুমি কী আমাকে ক্ষমা করবে না? হয়তো করবে, করবে না। আমি তোমার সাথে কম অন্যায় করিনি। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতদিনে ডির্বোস নিয়ে চলে

বলেই রূপার কপালে চুমু একে দিলো ধ্রুব। রূপাকে এতদিন ধরে তার বাবা ও ভাইয়ের খুনী ভেবে, নানানরকম অত্যাচার চালিয়েছে এই নিষ্পাপ মেয়েটির উপর দিয়ে। আজ ধ্রুবের খুব আফসোস লাগছে। কেন যে সে সেদিন সৈকতের কথা শুনতে গিয়েছিল? আচ্ছা সৈকত কী সত্যিই রূপাকে দেখেছিল? নাকি অন্যকোন মেয়েকে দেখে রূপা ভেবেছে? সবকিছুই যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ধ্রুব’র। সৈকত মিথ্যা বলছে না তো? না না। কী ভাবছে সে? সৈকত তাকে কখনোই মিথ্যা বলতে পারে না। ধ্রুব’র মনে হচ্ছে এখানে কোনো ঘাবলা আছেই। কিন্তু কী সেটাই এখন জানার অপেক্ষা। ধ্রুব’র প্রথম কাজ রূপাকে সুস্থ করার। তারপর সুযোগ বুঝেই আসল খুনীকে বের করে ফেলবে সে।

.
রেস্টুরেন্টের ঠিক ডান সাইডের দিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে নিলু। শরৎ এর সাথে বেশ কিছুদিন হয়েছে দেখা হয় না তার। একে অপরকে দেখবার জন্য কাতর হয়ে উঠেছে দুজনে। একটা সেফটি জায়গায় দেখা করলে মন্দ হয় না। সেকথা মাথায় রেখে এখানে এসেছে সে। কিন্তু এদিকে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তবুও শরৎ এর কোনো চিহ্নরূপ-ই নেই এখানে। বিরক্তি হচ্ছে নিলু। এভাবে এখানে ষাঁড়ের মত দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানেই হয় না। আশেপাশের লোকজনও কু নজরে তাকে দেখছে। ধ্যাত! আর কতসময় ধরে দাঁড়াতে হবে তাকে? নিলু এক বিরক্তি নিয়েই সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে কেউ একজন তার হাত ধরে ফেলল। আতংকিত হয়ে উঠল নিলু। আচমকা কে ধরে বসল তার? নিলু চোখমুখ কঠিন করে ফেলল। পিছনঘুরে ছেলেটাকে কিছু বলতে যাবে তৎখানিক চোখের সামনে এক গোছা গোলাপ ফুল দেখতে পেল। নিমিষেই ঠোঁটের কোণায় হাঁসি ফুঁটে উঠল ওর। শরৎ এসেছে। ওর হাত থেকে মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে ফুলগুলো নিয়ে নিল নিলু। বলল,

– এখন আসার সময় হল তোমার?

– সরি বেবি। বাই দ্যা ওয়ে ফুলগুলো কেমন লেগেছে তোমার?

– খুউউউব ভালো।

– ওহ সিট! তাইলে তো তোমার জন্য আরো ফুল আনা উচিত ছিল।

– আরে না না। আর লাগবে না। আচ্ছা এখানে কী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই গল্প করে যাবা?

– ও সরিইইই। ভিতরে চলো।

– হুম।

রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকতেই গিটারের শব্দ কানে এল নিলুর। অবাক হয়ে বলল,

– গিটারের শব্দ ভেসে আসছে মনে হচ্ছে।

নিলু রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকতেই উপর থেকে হাজারও গোলাপ ফুল এবং লাভ বেলুন পড়তে লাগল উপর থেকে। নিলু যেন বাগরুদ্ধ। শরৎ এর এক হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। রুক্ষ ঠোঁটে যেন চাঁদের কিরণ ফুঁটে উঠেছে। নিলু শরৎ এর দিকে তাকাল। ইশারা করে বলল,

– এসব কী?

নিলুর চুলগুলো কানে গুজে দিল শরৎ। কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিসানি সুরে বলল,

– সারপ্রাইজ’টা কেমন লেগেছে?

নিলু বিস্মরণীয় চোখে তাকাল শরৎ এর দিকে। বলল,

– সারপ্রাইজ! এসবের কী খুব দরকার ছিল?

– হুম দরকার ছিল, বুঝেছ? তুমি আমাকে কম হেল্প করোনি। এটা তো তার কাছে তুচ্ছ।

– দেখো, তুমি কিন্তু এলওয়েজ এইটা বলে বলে আমাকে পর করে দাও। দিজ ইজ নট ফেয়ার।

শরৎ হাসল। নিলু রাগ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে দেখে “সরি” বলে সে তার রাগ ভাঙানোর জন্য কান ধরে উঠবস করতে লাগল। নিলু এমন কান্ডে যেন বাগরুদ্ধ। শরৎ কে থামিয়ে দিয়ে তার এক হাত ধরল। বলল,

– এই কী করছ? উঠো বলছি!

শরৎ দাঁড়াল। মুচকি হেসে বলল,

– আমার লাভ বার্ড-এর রাগ ভাঙলো তাহলে?

নিলুও হেসে দিল এবার। বলল,

– হুম।

.
রেস্টুরেন্টের ঠিক পিছন দিকের টেবিলে চেপে বসল ওরা। সামনেই রাখা ছিল মেনু কার্ড। শরৎ মেনু কার্ড-টা হাতে নিয়ে নড়াচড়া করতে লাগল। নিলুর দিকে তাকিয়ে বলল,

– কী খাবে বলো?

নিলু বলল,

– কিছুনা।

– কিছুনা বললে কী হবে? আজ তোমার যা খেতে মন চাই তাই অর্ডার দাও। কী কী খাবে বলো?

– কোল্ড ড্রিংক হলেই চলবে।

– শুধুই কোল্ড ড্রিংক? এইটা কিন্তু ঠিক না নিলু। তুমি প্রত্যেকবারই রেস্টুরেন্টে এলেই শুধু কোল্ড ড্রিংক অর্ডার করো। এইটা কী তুমি ঠিক করো বলো তো? এখন বলো কী কী খাবে?

– (নিশ্চুপ)

– ওকে ফাইন! তোমার বলতে হবে না। আমিই অল আইটেম অর্ডার করছি।

বলেই শরৎ একটা ওয়েটারকে ডাক দিল। ওয়েটার টেবিলের কাছাকাছি এলেই মেনু কার্ড এগিয়ে দিল সে। সবকয়টা আইটেম অর্ডার দিতেই ওয়েটার অবাক হয়ে গেল। এমনটা আগে কখনও হয়নি। কেউ দুই-তিনটার বেশি অর্ডার দেয় না। আর সেখানে এই ছেলেটি একদিনে সবগুলো আইটেম অর্ডার করেছে। তাও আবার দুজনেরটা আলাদা আলাদা করে। অবাক হয়ে ওয়েটার চলে গেল। কিছুক্ষণ পর সব আইটেম একেএকে আনা হল। আইটেমের জন্য টেবিলের একবিন্দুও জায়গা অবশিষ্ট বাকি নেই। নিলু শরৎ এর এমন এলাহি কান্ড দেখে হতম্ভিত। বলল,

– এই, তুমি পাগল নাকি? এত আইটেম কেউ অর্ডার করে?

– আমি করি। নাও খাওয়া শুরু করো….

– তুমি কী আমাকে রাক্ষস মনে করো? এতকিছু আমার পক্ষে খাওয়া অসম্ভব।

– নিলু প্লিজ এমন পাগলামি করো না। খাওয়া শুরু করো। আগে তুমি পিজ্জা-টা খেয়ে দেখো। একেবারে অসাধারণ খেতে।

বলেই গপগপ করে খেতে লাগল শরৎ। তার খাওয়ার স্টাইল দেখে অবাক হয়ে গেল নিলু। এমনভাবে কেউ খায় নাকি? তাও আবার রেস্টুরেন্টে? নিলু আশেপাশের দিকে তাকাল। সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ তাদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে। আবার কেউ কেউ বলছে, ‘এই দেখো, দেখো, ছেলেটা কেমন ভাবে খাচ্ছে? খাওয়ার স্টাইল দেখে তো মনে হচ্ছে কতকাল খায়নি। আর একটু টেবিলের দিকে তাকাও। সামনে দেখো কতরকমের আইটেম। ওহ মাই গড!! একটা মানুষ এত খেতে পারে? এই, আমার ফোনটা কোথায়? ছবি তুলবো। এটা তো আমি আজ ফেসবুকে আপ দেবোই। তারপর দেখো, লাইক-কমেন্ট-শেয়ার কত্তগুলো হয়?’

বলেই টুক করে একটা ছবিটা তুলে নিল মেয়েটা। নিলু মেয়েটার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকাল। ভয়ে নিমিষেই মেয়েটা সামনের দিকে ফিরল। নিলু দাঁতে দাঁত চেপে শরৎ এর উদ্দেশ্য ফিসফিস করে বলল,

– সবাই আমাদেরকে দেখছে। একটু ধীরেসুস্থে খাও।

– দেখুক তাতে আমার বা তোমার কী? এই তুমি তো এখনো খাওয়াই শুরু করোনি। দেখি হা করো…

বলেই নিলুকে জোরপূর্বক খাইয়ে দিল শরৎ। কোনরকম চিবিয়ে আশেপাশে দিকে চোখ বুলালো সে। এখনো সবাই তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। নিলু লজ্জাবশত চোখ সরিয়ে নিলো। বেঁচে থাকলে আর কখনও শরৎ এর সাথে রেস্টুরেন্টে আসবে না সে। আজকে শরৎ এর পাগলামোর জন্য সবার সামনে তাকে ছোট হতে হয়েছে। নিলু দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। এদিকে শরৎ সবকিছু খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে। এটা দেখে আশেপাশের সবাই একসাথে হেসে দিল। রাগে নিলুর কান দিয়ে যেন ধোয়া বের হচ্ছে। শরৎ বলল,

– এই যাহ! তোমার খাবারও তো আমি খেয়ে ফেলেছি। এবার?

নিলু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

– তুমি কী এখান থেকে যাবা?

– এত তাড়া কীসের? তুমি না বলছিলে কোল্ড ড্রিংক খাবে? অর্ডার দেই?

– এতকিছু খেয়েও কী তোমার মন ভরেনি? আর কত খাবে?

– কোল্ড ড্রিংক তো তুমি খাবে বলছিলে তখন।

– এখন আমার খাওয়ার ইচ্ছা উবে গেছে। চলো…

– আগে বিলটা তো দিয়ে নেই।

একটা ওয়েটারকে ডেকে বিলের কথা শুনতেই বাগরুদ্ধ হয়ে গেল শরৎ। ৫ হাজার টাকা বিল উঠেছে। এত টাকা কোথায় পাবে সে? শরৎ এর মুখের ভঙ্গি, ভাব-সাব দেখে টাকার ব্যাপারে বেশ করে বুঝতে পেরেছে নিলু। সে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে ওয়েটারের হাতে ধরিয়ে সরসর পায়ে সেখান থেকে চলে গেল। অপরদিকে পিছনে ফেলে রেখে গেল হতম্ভিত শরৎ-কে।

.
– এত তাড়াতাড়ি উঠেছ কেন? আরেকটু ঘুমাও। একটু পরেই তো কাজের জন্য দৌড়া-দৌড়ী করবে। শরীরটারও তো একটু আরাম প্রয়োজন, তাই না? নাইলে সুস্থ হবে কিভাবে?

– হুম।

– কী হুম? এখন জেগে না থেকে লক্ষী বাবুদের মত ঘুমিয়ে পড়ো দেখি।

– উঁহু…. ঘুম আসছে না।

– কেন? রাত তো কম হয়নি। উপযুক্ত না ঘুমালে যে শরীর খারাপ করবে।

রূপা সেকথার উত্তর না দিয়ে একটি আবদার করে বসলো।

– একটু ছাদে যাবেন আমার সাথে?

– কেন?

– রুমে একদমই ভালো লাগছে না। সেই কাল রাত থেকেই বিছানায় পড়ে আছি। তাছাড়া আপনি তো আমাকে কাল থেকে বিছানা থেকে এক চুলও নামতে দেননি। সত্যি বলতে আমার ঘরে বসে থাকতে ঘরে বসে থাকতে খুব বোরিং লাগছে, দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্লিজ ছাদে চলুন না। আমি কথা দিচ্ছি বেশিসময় থাকবো না ছাদে।

– আচ্ছা চলো।

পূর্ণিমার চাঁদ আকাশে। অপার্থিব এবং অদ্ভুত সুন্দর। চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে সবকিছু। গাছের পাতায় আলো লেগে ঝিকমিক করে উঠছে। চাঁদের থেকে চোখ সরিয়ে ধ্রুব’র দিকে চোখ রাখল রূপা। চাঁদের হালকা আলোয় মানুষটার মুখটা যেন আরো উজ্জ্বলিত হয়ে উঠেছে। আর রূপার সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে ধ্রব’র মায়াবী দুই জোড়া চোখে। যা তাকে ধ্রুব’র প্রতি আরো বেশিই গ্রাস করতে সক্ষম। একসময় ধ্রুবও চাঁদের থেকে চোখ সরিয়ে তার মায়াবীলতার দিকে চোখ রাখল। দুজনই যেন এইমুহূর্ত চাউনির গভীরতা মাফতে ব্যস্ত। একসময় দুজনের ধ্যান ভাঙল বৃষ্টির বর্ষণে। ধ্রুব দৃঢ় কন্ঠে বলল,

– বৃষ্টির প্রবেগ বেড়ে গেছে। এখান থেকে তাড়াতাড়ি চলো। ঠান্ডা লেগে যাবে।

– উঁহু….. আমি ভিজবো।

– পাগল নাকি? রাত কয়টা বাজে জানো? ১২ টা বাজে। আর তুমি এখন পাগলামী করা শুরু করে দিয়েছ। চলো বলছি…..

– আমি যাবো না বললাম তো। আজ আমি ভিজবো। অনেকদিন বৃষ্টির পানি গায়ে মাখানো হয়নি। আজ ইচ্ছামতো মাখাবো।

বলেই রূপা একটু পিছনে সরে দুহাত দু দিকে মেলিয়ে দিয়ে ভিজতে লাগল। ধ্রুব কিছুক্ষণ সেদিকে স্থীরভাবে তাকিয়ে রইলো। বৃষ্টিবাদলের দিনে এক অদ্ভুত মুগ্ধতা ছেয়ে গিয়েছে তার দুচোখের পাতা রূপাকে দেখতে পেয়ে। মেয়েটাকে দেখলেই কেন জানি সে নিজেকে সামলে রাখতে পারেনা। তার মাঝেই ডুবে যেতে ইচ্ছে করে। এক অদ্ভুত ব্যাপার হল এই স্নিগ্ধ রমনীকে দেখলেই তার হাটবির্ট ক্রমাগত বাড়তে থাকে। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। ধ্রুবকে তার দিকে আসতে দেখে, রূপারও হার্টবিট তেজ গতিতে বাড়তে আরম্ভ করল। ধ্রুব এক পা দুই পা করে সামনের দিকে এগুতেই রূপা পিছন দিকে সরতে থাকল। একসময় আর পিছোতে পারল না। ছাদের রেলিং এর সাথে বেধে গেল সে। ভয়াৎ চোখে ধ্রুবের দিকে তাকাল সে। তৎখানিক ধ্রুব তার অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে। আগে তাদের মধ্যে এক ইঞ্চি দূরত্ব হলেও এখন আর তা নেই। রূপার শরীরের সাথে একদম লেপ্টে গেছে সে। প্রবল বৃষ্টির সাথে কাক ভেজা, সবকিছুই যেন এক আলাদা মিশ্রণের অনুভূতি। ধ্রুব আজ নিজেকে যেন কন্ট্রোল করতে পারছে না। তার রমনীকে এতটা কাছাকাছি পেয়ে সবকিছুই ঘোরের মত লাগছে। রূপারও সেই একই অবস্থা। এই মানুষটা তার এত কাছাকাছি আসলে কেন জানি তার বুকের বা পাশে ঢিপঢিপ করে হাতুরি পেটার শব্দ হতে থাকে। দুইজোড়া চোখ, দুই জোড়া ঠোঁট একে অপরের অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে। নিজের অজান্তেই ঠোঁট জোড়া একে অপরকে ছুয়ে দিতেই এক ভালোবাসা প্লাবিত হলো এই বৃষ্টি ভরা রাতে।

.
সকালবেলা, পার্সেল এসেছে। ধ্রুব দরজাটা খুলে পার্সেলটা হাতে নিল। ঘরে ঢুকে পার্সেলটা খুলেই দেখতে পেল রূপার কালকের রিপোর্টগুলো। ধ্রুব রিপোর্ট গুলো একে একে পড়তেই চোখ দুটো বড় হয়ে গেল। হচকিয়ে রূপাকে ডাক দিল সে। রূপা দ্রুত পায়ে রান্নাবান্না ছেড়ে ঘরে চলে এল। বলল,

– জ্বি বলেন।

রিপোর্ট গুলো দেখিয়ে বলল,

– তোমার রিপোর্ট।

– কী লেখা আছে?

– শুনতে চাও?

– জ্বি।

– আমি…..

খুশির ঠ্যালায় যেন ধ্রুবের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। তবুও সে চুপ থাকল না। একটু জোর গলায় বিশ্বজয়ের হাঁসি দিয়ে বলল,

– আমাদের ছোট্ট একটা বাবু হতে চলেছে রূপা। আমি বাবা হতে চলেছি আর তুমি মা।

বলেই আচমকা রূপাকে জড়িয়ে ধরল ধ্রুব। রূপা যেন কয়েকমুহূর্তের জন্য বাগরুদ্ধ হয়ে গেল। হতম্ভিত হয়ে রূপা তাকিয়ে রইলো মেঝের দিকে।

চলবে,,,,,,,,

লেখকের অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here