ভালোবাসা রং বদলায় পর্ব -২৫

#ভালোবাসা রং বদলায়
লেখক —- #মাহমুদ
পর্ব ২৫
*
ধ্রুব বেশ মনোযোগ সহকারে ল্যাবটবে কাজ করছে। এক হাত দিয়ে ল্যাবটপ টিপছে আর অন্য হাত দিয়ে কফি খাচ্ছে। মনটা যে আজ তার ফুরফুরে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রূপার এখনই সুযোগ। সৈকতের ভালোমানুষির আড়ালে যে কতটা ভয়ানক রূপ লুকিয়ে আছে তা ধ্রুবকে জানাতে হবে তাকে। এবং এখনই। এতদিন ধরে সে এই দিনটির জন্যেই অপেক্ষা করছিলো। আজ তার অবসান সে ঘটিয়েই ছাড়বে। যদিওবা ধ্রুব হয়তো তার কথা বিশ্বাস করবে না। কারণটাও গভীর কিছুনা। সৈকত হলো তার অন্যতম বন্ধু। তার সাথে ধ্রুবর কতটুকু ভাব তা সে বৌভাতের দিনই বুঝতে পেরেছিলো। ধ্রুব সেদিনও সৈকতকে নিয়ে এটা সেটা বলছিলো। সে নাকি ধ্রুবর সবথেকে কাছের বন্ধু। একেঅপরকে তারা বন্ধু থেকে ভাইয়ের চোখে বেশি দেখে। ধ্রুবর বাবা ও ভাই যখন মারা গিয়েছিলো তখন ধ্রুব ভেঙে পড়েছিলো। সেদিন নাকি তাকে সৈকত’ই সামলেছিলো। কথাটা শুনে সেদিন খুব হাঁসি পাচ্ছিলো রূপার। নিজেই মানুষটাকে কষ্টে ফেলে আবার নিজেই তাকে সামলালো। ব্যাপারটা বেশ হাস্যকর বটে। মানুষ এতটা খারাপ হয় কিভাবে রূপা ভেবে পায় না। ধ্রুব যাকে ভালো ছেলে বলতে অজ্ঞান সে কিনা তাকে ঠকালো। তার জীবনের প্রিয় মানুষ গুলোকে তার থেকে দূরে ঠেলে দিলো? এই লোকটাকে বিশ্বাস করে বড্ড অন্যায় করে ফেলেছে ধ্রুব। এখন তাকে কিভাবে বুঝাবে সে। ধ্রুব তার কথা
তবে চেষ্টা করতে আর ক্ষতি কী?
-“কিছু বলবে?”
কফি খেতে খেতে প্রশ্নটা করলো ধ্রুব। রূপা বেশ অবাক হলো তার একথা শুনে। ধ্রুব কিভাবে বুঝলো যে সে তাকে কিছু বলবে! রূপার সামনে তুড়ি দিতেই ধ্যান ভাঙলো তার। ধ্রুব বললো,
-“কি এত ভাবছো? বলো কি বলবে।”
-“আপনি কিভাবে জানলেন যে আমি আপনাকে কিছু বলবো।”
ধ্রুব হাঁসলো। বললো,
-“তুমি আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিলে যে কেউ দেখলে এটাই বলতো।”
-“আপনি তো ল্যাবটবের দিকে তাকিয়েছিলেন। এছাড়া আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগও সেদিকেই ছিলো। তাহলে…..”
ধ্রুব কফির মগ টেবিলে উপর রেখে দিলো। ল্যাবটব অফ করে অন্যপাশে রেখে দিয়ে রূপার পাশে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো সে। বললো,
-“আমার চোখ তো সবসময় এক অপরূপার দিকেই আটকে থাকে। সে কী করে, না করে! সে কী বলবে, কী না বলবে! তার সবকিছুই আমি বুঝতে পারি, অনুভব করতে পারি।”
-“বাহ! ভালোই তো মষ্করা করতে জানেন।”
-“আমি মষ্করা করছি না। সিরিয়াসলি বলছি।”
-“আচ্ছা আচ্ছা।”
-“হুম। এবার কথা না পেঁচিয়ে সোজাসুজিভাবে বলে ফেলো কী বলবে?”
রূপা ইতস্ততবোধ করতে লাগলো। না জানি ধ্রুব ব্যাপারটাকে কিভাবে নিবে?
-“কী হলো বলো।”
রূপা নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। হালকা কেশে গলাটা পরিষ্কারের কাজে লেগে পড়লো সে। কিছুটা ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে লাগলো,
-“আসলে স-সৈকত…..”
-“সৈকত! ও, তুমি আমার সেদিনের বন্ধুর কথা বলছো? ওকে কী তুমি চিনো?”
রূপার গলাটা যেনো ধরে উঠলো। কাঁপা কাঁপা সুরে বললো,
-“হ্যা।”
-“ওর ব্যাপারে কিছু বলবে?”
রূপা মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যা’ বললো। ধ্রুব বললো,
-“কী বলবে বলো।”
রূপা ভাবলো অগত্যা এভাবে ফেনিয়ে রসিয়ে কথা বলে লাভ নেই। সৈকত যে কতবড় ক্রিমিনাল তা ধ্রুবকে যে ক্রমে হোক জানাতে হবেই তাকে।
-“কী হলো রূপা? বলো না, কী বলবে!”
রূপা দৃঢ় কন্ঠে বলে বসলো,
আপনি কী আমাকে বিশ্বাস করেন?”
-“হু, নিজের থেকেও বেশি।”
-“সত্যি বলছেন তো?”
-“হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
-“প্লিজ বলুন না।”
-“হ্যা সত্যি বলছি। এবার বলো কেন?”
-“আমি এই মুহূর্তে আপনাকে কিছু ইম্পরট্যান্ট কথা বলবো। আশা করি আমাকে ভুল বুঝবেন না।”
-“আরে পাগলী মেয়ে ভুল বুঝবো কেন? তুমি একবার বলেই দেখো না।”
রূপা আর দেরী করলো না। বিনাদ্বিধায় সে একে একে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সৈকতের কৃতকর্মের কথা বলে দিলো ধ্রুবকে। সবটা শুনে ধ্রুব তড়াক মেরে লাফিয়ে উঠলো। বললো,
-“ওয়াট!!”
ধ্রুবর হাব ভাব দেখেই রূপা বুঝতে পারলো যে সে কথাগুলো শুনে খুব রেগে গেছে। নিশ্চয় রূপাকে সে অবিশ্বাস করবে। হয়তো বলবে সৈকত একটা ভালো ছেলে। সে এমন যঘন্য কাজ কখনোই করতে পারেনা। এসব তার বানোয়াট ও মনগড়া কথা। কথাগুলো ভাবতেই এক অদ্ভুত ভয় বিরাজ করলো তার মনের ভেতর জুড়ে। তাহলে কী ধ্রুব সৈকতের জন্য তাকে অবিশ্বাস করবে?
রূপাকে অবাক করে দিয়ে ধ্রুব বলে উঠলো,
-“আমি বিশ্বাসও করতে পারছি না যে সৈকত এমনকিছু করতে পারে। অনেক বেশি বিশ্বাস করেছিলাম তাকে। আর সে কিনা….. বিশ্বাসঘাতক একটা। আমি ওকে ছাড়বো না। ওর সাহস হয় কিভাবে, তোমার দিকে চোখ তোলার? ওর চোখ দুটো আমি তুলে ফেলবো। আর তুমি আমাকে আগে বলোনি কেন? কেন বলোনি বলো? ভেবেছিলে আমি তোমাকে বিশ্বাস করবো না? আমাকে এতদিনে তাহলে এই চিনলে?”
বলেই ধ্রুব রাগ সঞ্চয় করতে দেয়ালের সাথে হাতে আঘাত দিয়ে বসলো। রূপা চুপ। চোখ ভর্তি পানি ও নিচের দিকে দৃষ্টি তার। সত্যি তো, ধ্রুবকে সে এতদিনে চিনতেই পারেনি। সত্যি বলতে সে চেনারই চেষ্টা করেনি। নয়তো ধ্রুবকে নিয়ে এমন উল্টাপাল্টা কথা মাথায় আসতো না তার। সে আসলেই একটা বোকা। বোকা না হলে কী এমন চিন্তাধারা তার মাথায় আসতো? ধ্রুব বললো,
-“আমি আজই এবং এখনই ওই বদমাইশটাকে সায়েস্তা করবো। প্রথমত ও আমার বাবা-ভাইকে খুন করেছে। আর সমস্ত দোষ চাঁপিয়ে দিয়েছে তোমার উপরে, প্রতিশোধ নেবার জন্য। আমার বৌয়ের দিকে চোখ তোলা না? ওই জানোয়ারটাকে আজ আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।”
কথাগুলো বলতে বলতেই ধ্রুব ফোন খুঁজতে লাগলো। অবশেষে পেয়েও গেলো। কললিস্টে যেয়ে সৈকতের ফোন নম্বর খুঁজতে লাগলো। রূপা বললো,
-“কার কাছে ফোন দিচ্ছেন?”
ধ্রুব নাম্বার খুঁজতে খুজতে বললো,
-“সৈকতকে।”

রূপা চকিতে তাকিয়ে বললো,
-“কীহ! ওকে কেন ফোন দিচ্ছেন?”
-“ও আমার বৌয়ের দিকে চোখ তুলেছে, আমার বাবা এবং ছোট ভাইকে খুন করেছে। তাকে কী আমি ছেড়ে দেবো ভেবেছো?”
রূপা বললো,
-“প্লিজ শান্ত হোন। আপনি এখন খুব রেগে আছেন। ওর কাছে এই মুহূর্তে ফোন দিলে ও সবকিছু বুঝে যাবে। প্লিজ আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করুন।”
-“আমি আর কিছুই বুঝতে চাইনা। সৈকতকে না মারা পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না। ওকে আজ আমি মেরেই ফেলবো। বন্ধু পাতিয়ে আমার থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়েছে সে। ওকে আমি কতটা বিশ্বাস করতাম! এতটা বিশ্বাস মনে হয় অন্যকেউ করেনা। তাকে আমি নিজের ভাইয়ের স্থান পর্যন্ত দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমার তো এখন আর ভাই নেই, সৈকতই আজ থেকে ভাই, আমার চলার সঙ্গী। কিন্তু সে কী করলো? আমার জীবনের সবথেকে প্রিয় মানুষগুলোকে আমার থেকে কেড়ে নিলো। ওকে আমি কিভাবে ছেড়ে দেই বলো?”
কথাগুলো বলতে বলতেই ধ্রুবর গলাটা ধরে উঠলো। রূপা ঢের বুঝতে পারলো ধ্রুব কাঁদছে। আজ প্রথমবার মানুষটাকে কাঁদতে দেখলো সে। অজান্তে নিজের চোখটাও ভিজে উঠলো রূপার। অপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। নিরবে চোখের পানি বিলিন করে চলেছে ধ্রুব। রূপা তাকে জড়িয়ে ধরা অস্থাতেই বললো,
-“রাত এখন কম না। যা করার সকালে করবেন। দরকার হলে আমিও আপনার সঙ্গে যাবো। তার আসল জায়গা দেখিয়ে দিতে হবে যে!”
ধ্রুব বললো,
-“একটা রাস্তার লোকের কথা শুনে তোমাকে কতটাই না কষ্ট দিয়েছি। ছিঃ! আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে যে আমি একটা মানুষ।”
-“প্লিজ পুরোনো কথা তুলে বর্তমান সময়টিকে খারাপ করবেন না। এখানে আপনার কোনো দোষ ছিলোনা। দোষ তো ছিলো ওই সৈকতের। ওই’ই তো আপনাকে মিথ্যা বলেছিলো। ওই’ই তো আপনাকে আমাকে মারতে বলেছিলো। বলুন বলেনি? সবকিছুর নাটেরগুরু তো ওই নরপশুটা।”
রূপা থেমে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
-“ওকে তো আমি জেলের ভাত খাওয়াবোই।”
-“হুম, তা তো অবশ্যই। তবে, তার আগে ওর খাতেরদারি করতে হবে না?”
-“হ্যা অবশ্যই।”
ধ্রুব এবার রূপার দিকে অদ্ভুত চাহনিতে তাকালো বললো,
-“সত্যিই আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো তো?”
-“হ্যা।”
-“সত্যি তো?”
-“সত্যি সত্যি সত্যি।”

ভোর হবার আগেই ঘুম থেকে উঠে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করে নিলো রূপা। নামাজ পড়া শেষ হলে কিছুক্ষণ ধরে কুরআন শরিফ পাঠ করলো সে। ভোরের আলো ফুঁটে গেছে। চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনকার মতো জানালা ভেদ করে আজও সূর্যোদয়ের আলো ধ্রুবর মুখে যেয়ে পড়ছে। রূপা দেরী না করে জানালায় পর্দা টেনে দিলো। এরপর আস্তে আস্তে ধ্রুবর পাশে যেয়ে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
-“ভালোবাসি।”

ধ্রুব ঘুমের ঘোরে অস্ফুট সুরে বলে বসলো,
-“আমিও।”
রূপা অবাক হলো। বললো,
-“তাহলে মিঃ আপনি জেগে আছেন?”
-“হু….”
-“আজ এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙলো যে?”
-“আমার ঘুমপরী যেখানে জেগে আছে। সেখানে আমি কিভাবে ঘুমায় বলো?”
-“হুহ্ ঢং….. আজ না হয় জেগে গেছেন। অন্যদিন তো আমাকেই অফিসের জন্য আপনাকে জাগিয়ে তুলতে হয়।”
ধ্রুব হাঁসলো। বললো,
-“ঘুমের বিঁচার পরে। আগে আমার অপরূপাকে মন ভরে আদর করতে চায়।”
বলেই রূপাকে এক হেঁচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো সে। রূপা বললো,
-“ছাড়ুন…..”
-“উঁহু…. আজ ছাড়ছি না।”
-“ছাড়ুন বলছি। আমার অনেক কাজ আছে।”
ধ্রুব রূপার ঠোঁটে আঙুল রেখে বললো,
-“হুসসসস! ডোন্ট টক।”
বলেই গান ধরলো,
-“জারা জারা টাসমি টাসমি টাসমি, জারা জারা কিসমি কিসমি কিসমি, জারা জারা হোল্ড মি হোল্ড মি হোল্ড মি, যারা ওওও ওওওও….”
গানটা শুনতেই রূপা লজ্জায় ধ্রুবর বুকে মুখ গুজলো।

-“এতদিন পর আজ আমাকে মনে পড়লো তোমার?”
-“সরি, বেবি। খুব বেশি ব্যস্ত ছিলাম। এজন্য…..”
-“থাক, থাক। আর নাটক করতে হবে না।”
-“বেবি রাগলে করলে নাকি?”
-“(নিশ্চুপ)
-“লাভ বার্ড, প্লিজ রাগ করোনা।”
-“(নিশ্চুপ)”
-“প্লিজ বেবি…..”
-“ওকে ফাইন।”
-“রাগ কমেছে?”
-“হু…..”
-“থ্যাংকইউ এন্ড লাভ ইউ জানেমান। আজ একটু দেখা করবে?”
-“আজই?”
-“হু…..”
-“আজ তো দেখা করা সম্ভব না।”
-“কেন?”
-“আজকে তো আমার কলেজ বন্ধ।”
-“আজ তোমাকে দেখা করতেই হবে।”
-“কেন?”
-“আমি বলছি তাই।”
-“আমি তো বললামই আজ সম্ভব না। আমরা কাল দেখা করি?”
-“উঁহু…. আজই দেখা করবে তুমি।”
-“আজ কেন? কাল দেখা করলে সমস্যা কোথায়?”
-“আজ মনে করো আমাদের শেষ দেখা। আজকের পর থেকে মনে করো আমিও তোমাকে দেখা করার কথা বলতে পারবো না। আর তুমিও দেখা করতে পারবে না, চাইবে না।”
-“মানে? কিসব আবোলতাবোল বলছো? দেখা করতে পারবো না মানে?”
-“আসলেই বুঝতে পারবে।”
নিলু এবার চড়া গলায় বললো,
-“ঢং না করে সোজাসুজিভাবে বলো।”
-“প্লিজ সময় নষ্ট করো না। তাড়াতাড়ি আসো।”
-“পারবো না।”
-“তার মানে তুমি আসবে না?”
-“নাহ্!”
-“এটাই কী তোমার শেষ কথা?”
-“হ্যাঁ।”
-“ওকে বাই। আর কখনোই আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। ভালো থেকো।”

ভালো থেকো।”
নিলু মাথাটা ঠান্ডা করলো। বললো,
-“তুমি এমন বিহেভ কেন করছো বলোতো?”
-“(নিশ্চুপ)”
-“কিছু তো বলো।”
-“(নিশ্চুপ)”
-“কী হলো কথা বলছো না কেন?”
-“(নিশ্চুপ)”
-“প্লিজ চুপ থেকো না। বলোনা কী হয়েছে তোমার?”
-“(নিশ্চুপ)”
-“আচ্ছা, আমি আসছি। কোথায় আসতে হবে বলো।”
শরৎ কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিলো। ম্যাসেজ করে ঠিকানা জানিয়ে দিলো তাকে। আর শেষের অংশে লিখলো, “আধা ঘন্টার ভিতরে যদি তুমি এই জায়গাটাই না পৌঁছাও তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে।” একথা পড়ে নির্বাক হয়ে গেল নিলু। সত্যিই যদি সে নিজের ক্ষতি করে বসে? দেরী না করে আলমারি থেকে একটা থ্রিপিজ বের করে পরে নিলো নিলু। হালকা-পাতলা সেজে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল সে।

রান্নাবান্না প্রায় শেষের দিকে। চুলোর উপর থেকে তরকারীর কড়াই নামিয়ে একটা পাত্রে ঢেলে নিলো রূপা। এরপর তরকারী, ভাত একে একে সবকিছু ডাইনিং টেবিলের উপরে সাজিয়ে রাখলো সে। ধ্রুব বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। রূপা একবার তাকে ডাকতে গিয়েছিল। সে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে আজ অফিসে যাবে না। তাই পরে আর ধ্রুবকে ডাকা হয়নি। এখন ঘড়িতে আটটা ছুঁইছুঁই। খাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। সচরাচর এই বাড়িতে আর কিছু টাইম টু হলেও খাওয়ারবেলায় সকলকে ঠিক টাইমে খেতে আসতে হয়। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। রূপা ধ্রুবকে ডাকবার জন্য সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠতেই নিলুর সাথে দেখা হয়ে গেল তার। বললো,
-“এত সকালে কোথায় যাচ্ছো নিলু?”
নিলু আমতা আমতা করে বললো,
-“কলেজে ভাবি।”
-“কলেজে! কাল না বললে আজ কলেজ বন্ধ।”
নিলু এবার বিপাকে পড়ে গেল। এখন কী বলবে সে?
-“হ্যাঁ ভাবি। বন্ধ তো! আমরা ফ্রেন্ডসরা মিলে আজ ঘুরতে যাচ্ছি। সবাইকে বলা হয়েছে কলেজের গেটের সামনে দাঁড়াতে। ওখান থেকেই সবাই মিলে একসাথে ঘুরতে যাবো।”
-“ওহ্।”
-“হুম, আচ্ছা ভাবি আমি যাই। দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
-“হ্যা যাও।”
নিলু চলে যাচ্ছিলো। তখনি তার ফোনে কল এলো। শরৎ ফোন দিয়েছে। কলটা রিসিভ করে বললো,
-“হ্যালো, আমি দশ মিনিটের ভিতরে আসছি। তুমি প্লিজ নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করো না। আমি আসছি। এক্ষুণি আসছি। এখন রাখি।”
কথাগুলো বলতে বলতে বাইরে চলে গেল নিলু। পিছনে রেখে গেল হতভম্ব রূপাকে নিলুর কথার ধারেই রূপা বুঝতে পারলো কেসটা অন্যকিছু। নিলু কথাগুলো আস্তে বললেও রূপার শুনতে অসুবিধা হলো না। নিশ্চয় সে কোনো ছেলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। নাহলে নিলু মিথ্যা কথা বলার মতো মেয়ে নয়। তার হাব-ভাব’ই ঢের বুঝিয়ে দিচ্ছিলো যে সে মিথ্যা বলছে। তবে, নিলুর শেষাংশ কথাগুলো খুব ভাবাচ্ছে রূপাকে। “আমি দশ মিনিটের ভিতরে আসছি। তুমি প্লিজ নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করো না। আমি আসছি। এক্ষুণি আসছি।” এরূপ কথাগুলো শুনে রূপা ঢের বুঝতে পারলো অনেক বড় রহস্য লুকিয়ে আছে। রূপার কেন জানি মনে হচ্ছে আজ কোনো একটা অঘটন ঘটতে চলেছে। তার কেবল মনে হচ্ছে নিলুকে একা ছাড়া ঠিক হচ্ছে না। ছেলেটা যে তার কিছু করবে না তার গ্যারান্টি কী? কেন যে তখন এই ব্যাপারটা মাথায় আসলো না? রূপা আর এক মুহূর্ত দেরী না করে ঘরে ঢুকে পার্সটা নিয়ে বাইরে যাচ্ছিলো, তখনি ধ্রুব পিছন থেকে তাকে ডেকে বললো,
-“কোথায় যাচ্ছো?”
রূপা তাড়াহুড়ো হয়ে বললো,
-“এসে বলছি। এখন হাতে সময় নেই।”
-“এই অবস্থায় বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। সো কোথাও যাচ্ছো না তুমি।”
-“প্লিজ আজ আমাকে বাঁধা দিবেন না। অনুরোধ করছি।”
ধ্রুবকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে চলে গেল রূপা। তার যাওয়া প্রাণের দিকে তাকিয়ে রইলো ধ্রুব।

গন্তব্য পৌঁছাতেই গাড়ি থামাতে বললো নিলু। এদিকওদিক চোখ বুলিয়ে রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে রইলো সে। কিছুসময় এভাবে দাঁড়াতে দাঁড়াতে শরৎ এর আগমন ঘটলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“টেন মিনিট লেট!”
নিলু বললো,
-“আমি ঠিক সময়ই এসেছি। তুমিই লেট করে আসছো। তা বলো, কেন দেখা করতে বলেছো?”
-“কেন আমি দেখা করার কথা বলতে পারি না?”
-“হ্যাঁ তা অবশ্যই পারো। কিন্তু ম্যাসেজের শেষের লেখাগুলো মনে আছে তোমার? আমি আধা ঘন্টার ভিতরে না আসলে তোমার মরা মুখ দেখবো, এসব কোন ধরনের কথা?”
-“(নিশ্চুপ)”
-“বলো, চুপ করে আছো কেন? আজ তোমার জবাব দিতেই হবে।”
শরৎ বললো,
-“আমার মাবাবার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলে না?”
-“হ্যাঁ, তো?”
-“উনারা এখন আমার বাসায়। ঢাকাতে। এজন্য তোমাকে ডাকা।”
-“তাই! কবে এসেছেন আংকেলরা?”
-“কাল।”
-“এটাই তো বলতে পারতে। এত ঢং করার কী দরকার ছিলো?”
-“সারপ্রাইজ দেব বলে।”
-“তাই বলে ওসব কেন বললে?”
-“সরি বেবি।”
নিলু মুখ ফুলিয়ে দুই হাত ভাজ করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালো। শরৎ তার দুই কান ধরে নিলুর সামনে দাঁড়ালো। বললো,
-“সরিইইই জানু।”
তবুও নিলুর একই ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো। শরৎ এবার কান ধরে একাধিক বার উঠবস করতে লাগলো। তাকে এভাবে একাধিক বার উঠবস করতে দেখে ফিঁক করে হেঁসে দিলো নিলু। শরৎ বললো,
-“প্লিজ জানু রাগ করোনা। প্লিজজজজ….”
নিলু বললো,
-“আচ্ছা আচ্ছা রাগ করিনি। এবার থামো, আর উঠবস করতে হবে না।”
শরৎ এবার থেমে গেল। বললো,
-“সত্যি তো?”

শেষ পার্ট এর অপেক্ষায়

লেখকের অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here