ভালোবাসিনী….
লেখিকা – রুবি আক্তার
পর্ব – ৭
সেদিন আরো কিছু নাটক হলো। এরপর পিচ্চি দোকান থেকে বের হয়ে গেল। আমি নিজে বসে রইলাম বিমূঢ় এর মতো। আসলেই মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে। সময় বয়ে যায়, পিচ্চি আর আগের মত আমার সাথে কথা বলে না। তবে আমার পাশে বসে থেকে আমাকে পর্যবেক্ষণ করে। এটাও হয়েছে খুব অস্বস্তিদায়ক। কিন্তু কি আর করা আমি যেহেতু ওদের কম্পিউটার শিখাবো বলছি। এখন শেষের দিকে এসে তো আর না করা যায় না।
আজ প্রায় দুই মাস হলো। পিচ্চি আমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছে না। ওর স্বভাবিক আচরণ বলতে যেটা বুঝি তা হলো। আমাকে অকারণে”ভাইয়া” বলে ডাকা। আমার কাছে বসে টুলের পা ঝুলানো। আর মাঝে মাঝে বান্ধবীরা মিলে ছড়া কেটে নিজেদের মধ্যে কথা চালাচালি। কিছুই হচ্ছে না এমন। তার বদলে একটা বিরাট পরিবর্তন এসেছে। তা হলো পিচ্চি অনেক নিরব হয়ে গেছে। আগের মতো প্রাঞ্জল চোখ আর হাসিটা তার মাঝে নেই। প্রায় ওকে মুখ বিকৃত করে ওড়নার কোণা দিয়ে মুখ ঢাকতে দেখি। আর প্রায়ই কাশে। অতিরিক্ত হয়ে যায় মাঝে মাঝে। তখন ও আর বসে থাকতে পারে না। দোকান থেকে বের হয়ে যায় । পিছে পিছে হেনা আর সুমি। ওদের ও মুখ গোমড়া দেখি। আসলেই কি সেদিন ঘটনায় ও এতোটা আঘাত পেয়েছিল যে ও এমন ডিপ্রেশন এ চলে গিয়েছে। আমি মানতে পারলাম না। আমি ওদের এমন অস্বাভাবিক আচরণ আর নিতে পারলাম না।
তো এমনি প্রতিদিনের মতো । এক সময় যখন পিচ্চি কাশতে কাশতে মুখচোখ কুঁচকে ওড়না দিয়ে ডাকল। তখন আমি ওর দিকে একটা পানির বোতল এগিয়ে দিলাম। কিন্তু আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে ও নিলো না। তারপর ও হেনাকে উদ্দেশ্য করে বলল” হেনা আমাকে একটু ধরবি। আমার কেমন মাথা ঘুরছে।”
হেনা তাড়াতাড়ি এসে ওকে ধরলো। সত্যি ও এখন ভীষণ ভাবে কাঁপছে। পেট চেপে ধরে আছে। আর হেনাকে এক হাত দিয়ে ধরে তার মুখ দিয়ে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করতে চাচ্ছে। আমি তো বিমূঢ় হয়ে গেলাম। তারপর আর কিছু না ভেবে তারা একটা রিক্সায় ডেকে হেনার সাহায্যে ওকে টুল থেকে তুললাম। তারপর ওকে ধরে আস্তে আস্তে রিক্সার দিকে নিতে চাইলে। ও আমার হাতটা নিজের ছাড়িয়ে নিয়ে হেনার কানে কানে কি যেন বললো। হেনা তাড়াতাড়ি একবার দোকানের ভিতরে তাকিয়ে সুমীকে কি ডাকলো। আমি বুঝতে পারলাম না কি হচ্ছে। সুমির কানে কানে কি জানি বললো। তারপর দেখি সুমি দোকানের ভিতরে চলে গেলো ।
একটু পর এসে বললো” বুঝলাম না, এমন হওয়ার তো কথা না। ও বলছিল আজ প্রায় দুই সপ্তাহ। তারপর ও এমন হওয়ার কথা না।”
“আমিও বুঝতে পারছি না। থাক ওকে আগে হাসপাতালে তো নেই। আর ওর মোবাইল থেকে আন্টিকে একটা ফোন কর। আসতে তো অনেক সময় লাগবে। ততক্ষণ আমরা থাকবো।”হেনা চিন্তিত হয়ে বললো।
আমি ওদের কথায় আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। তবে আমি বললাম” দেখো, কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারো। আমি সব সাহায্য করবো।”
শিউলি তখনও পেট চেপে ধরে আছে।
কথাটা শুনে অস্ফুট স্বরে বলল” হেনা, আমার কারো সাহায্য চাই না। তোরা না পারলে থাক আমি একাই যাবো।” দেখলাম হেনা পিচ্চি কে পিছন থেকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সাথে প্রায় লেপ্টে আছে।
আমি বললাম” শিউলি, দেখো এখন তোমার সাহায্য লাগবে। জেদ করো না। বড় ভাই হিসেবে আমি তোমার জেদ মেনে নিবো না।”
পিচ্চি এবার পেট থেকে হাত সরিয়ে শক্ত করে হেনাকে ধরে দাঁড়ালো। তারপর যা বললো তার ওর এই মুহূর্তে বলা কতোটা ন্যায্য তা বুঝতে পারলাম না।
”
-“যাকে ভালোবাসি সে আমার বড় ভাই হয় কিভাবে?”
এই পরিস্থিতিতেও ওর এমন মাথা মোটা কথায় আমার খুবই বিরক্ত লাগলো। আমি কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম”দেখো তা পড়ে দেখা যাবে। এখন আসো।” বলেই আর ওর কোনো কথা না শুনে ওর একটা হাত ধরলাম। তারপর নিজের কাঁধে রেখে হাতটা আরেক হাত দিয়ে ওর কাঁধ ধরে একটু সাপোর্ট দিতে চাইলে। ও হঠাৎ করে কেমন যেন নেতিয়ে গেল। আসলে বুঝতে চেষ্টা করলাম ও ঢং করছে না সত্যি ওর শরীর খারাপ হয়ে গেলো আরো।
রিক্সায় উঠাতে আরেক যন্ত্রণা পোহাতে হলো। কারণ ও সত্যি অজ্ঞান হয়ে গেছে। আমি হয়তো ভুল বুঝেছি। এখন কথা হলো হেনা একা মেয়ে। এতোটা রাস্তা একটা অবচেতন মেয়েকে কিংবা নিয়ে যাবে। সুমি আসবে কিন্তু ও পিচ্চির মাকে ফোন করছে। আর কি যেন করছে আমার দোকানে। রাফি হঠাৎ বের হয়ে আমার কাছে এসে বললো” ভাইরে, কারো কি কিছু হইছে? টুলের উপর এত্ত গুলো রক্ত। আর ঐ আপুটা তা পানি আর কাগজ দিয়ে পরিষ্কার করছে।ও ভাই আপনে ঠিক আছেন তো?”
এতোক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম কি হচ্ছে। পরোয়া করলাম না। তাড়াতাড়ি রিক্সায় উঠে হেনা কে বললাম” তোমরা আরেকটা রিক্সায় আসো। আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। আর হ্যাঁ, ওর আম্মু কে ভালো কিছু কাপড়ও আনতে বলো।”
ওকে আর কোলে করে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম। পাশে বসিয়ে হেনাকে বললাম”, ওর কাপড়টা ঠিক করে দিতে।” তারপর ওকে নিয়ে রওয়ানা হলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্য।
হাসপাতালের ডাক্তার ওকে দেখেই সাথে সাথেই ভর্তি করিয়ে নিলো। আর আমাকে কিছু স্যালাইন আর ঔষধ আনতে বলল। আমি তাড়াতাড়ি করে তা আনতে গেলাম। এর মধ্যে আমার মোবাইল বেজে উঠল। আমি দেখি অচেনা নাম্বার। ধরলাম” ভাইয়া, আপনারা কোথায়? আমরা হাসপাতালের সামনে।” বুঝলাম এটা হেনা। আমি বললাম” তোমরা মহিলা ওয়ার্ডে যাও। ওখানে হাত নাম্বার বেড়ে আছে। আমি আসছি।” ঔষধ গুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি গেলাম। গিয়ে দেখি দুইজন নার্স তাকে পর্যবেক্ষণ করছে।
আমি ঔষধ আর স্যালাইন তাদের দেয়ার পর তাকে স্যালাইন এর সাহায্যে ঔষধ দিলো। আর একটা কথা বললো” আপনারা কেউ প্যাড আনুন। অনেক রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।” কথাটা শুনে সিমা আর হেনা নিজেদের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে আসলে আমার সামনে বলায় তারা লজ্জা পেলো। কিন্তু আমি লজ্জা না করেই বললাম” আমি আনছি। তোমরা থাকো। কোনটা ভালো হবে। না, থাক আমি আনছি।” ওদের আর লজ্জায় না ফেলে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসলাম। এই মেয়েটা এতোদিন যা জ্বালাই নি তা একবারে উসুল করছে এখন। এমনি মনে হতে লাগলো।
প্রায় একঘন্টা পর মনে হলো ও একটু সুস্থ বোধ করছে। কারণ গায়ের রং কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছিল। এখন আবার তা ফিরে এসেছে। ডাক্তার এসে বললো ” ওর রক্ত দেয়া লাগবে। অনেক দিন ধরে নাকি এমন রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। এখন শরীরে প্রায় রক্ত নেই বললেই চলে। আপনারা দেখুন দুই ব্যাগ রক্ত জোগাড় করতে পারেন কিনা।” ওর রক্তের গ্রুপ জানি না। তাই ডাক্তার পরীক্ষা করতে বললেন ডাক্তার কে। জানা গেল ওর রক্ত ও পজিটিভ। আমার রক্ত এ পজেটিভ। তাই চিন্তায় পড়লাম এখন রক্ত পাবো কোনদিন।
এর মধ্যে ওর মা এসে গেল। সাথে দুজন লোক। দেখলে বোঝা যায় বেশি ভালো অবস্থা এদের না।
(চলবে)ভালোবাসিনী….
লেখিকা – রুবি আক্তার
পর্ব – ৭
সেদিন আরো কিছু নাটক হলো। এরপর পিচ্চি দোকান থেকে বের হয়ে গেল। আমি নিজে বসে রইলাম বিমূঢ় এর মতো। আসলেই মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে। সময় বয়ে যায়, পিচ্চি আর আগের মত আমার সাথে কথা বলে না। তবে আমার পাশে বসে থেকে আমাকে পর্যবেক্ষণ করে। এটাও হয়েছে খুব অস্বস্তিদায়ক। কিন্তু কি আর করা আমি যেহেতু ওদের কম্পিউটার শিখাবো বলছি। এখন শেষের দিকে এসে তো আর না করা যায় না।
আজ প্রায় দুই মাস হলো। পিচ্চি আমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছে না। ওর স্বভাবিক আচরণ বলতে যেটা বুঝি তা হলো। আমাকে অকারণে”ভাইয়া” বলে ডাকা। আমার কাছে বসে টুলের পা ঝুলানো। আর মাঝে মাঝে বান্ধবীরা মিলে ছড়া কেটে নিজেদের মধ্যে কথা চালাচালি। কিছুই হচ্ছে না এমন। তার বদলে একটা বিরাট পরিবর্তন এসেছে। তা হলো পিচ্চি অনেক নিরব হয়ে গেছে। আগের মতো প্রাঞ্জল চোখ আর হাসিটা তার মাঝে নেই। প্রায় ওকে মুখ বিকৃত করে ওড়নার কোণা দিয়ে মুখ ঢাকতে দেখি। আর প্রায়ই কাশে। অতিরিক্ত হয়ে যায় মাঝে মাঝে। তখন ও আর বসে থাকতে পারে না। দোকান থেকে বের হয়ে যায় । পিছে পিছে হেনা আর সুমি। ওদের ও মুখ গোমড়া দেখি। আসলেই কি সেদিন ঘটনায় ও এতোটা আঘাত পেয়েছিল যে ও এমন ডিপ্রেশন এ চলে গিয়েছে। আমি মানতে পারলাম না। আমি ওদের এমন অস্বাভাবিক আচরণ আর নিতে পারলাম না।
তো এমনি প্রতিদিনের মতো । এক সময় যখন পিচ্চি কাশতে কাশতে মুখচোখ কুঁচকে ওড়না দিয়ে ডাকল। তখন আমি ওর দিকে একটা পানির বোতল এগিয়ে দিলাম। কিন্তু আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে ও নিলো না। তারপর ও হেনাকে উদ্দেশ্য করে বলল” হেনা আমাকে একটু ধরবি। আমার কেমন মাথা ঘুরছে।”
হেনা তাড়াতাড়ি এসে ওকে ধরলো। সত্যি ও এখন ভীষণ ভাবে কাঁপছে। পেট চেপে ধরে আছে। আর হেনাকে এক হাত দিয়ে ধরে তার মুখ দিয়ে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করতে চাচ্ছে। আমি তো বিমূঢ় হয়ে গেলাম। তারপর আর কিছু না ভেবে তারা একটা রিক্সায় ডেকে হেনার সাহায্যে ওকে টুল থেকে তুললাম। তারপর ওকে ধরে আস্তে আস্তে রিক্সার দিকে নিতে চাইলে। ও আমার হাতটা নিজের ছাড়িয়ে নিয়ে হেনার কানে কানে কি যেন বললো। হেনা তাড়াতাড়ি একবার দোকানের ভিতরে তাকিয়ে সুমীকে কি ডাকলো। আমি বুঝতে পারলাম না কি হচ্ছে। সুমির কানে কানে কি জানি বললো। তারপর দেখি সুমি দোকানের ভিতরে চলে গেলো ।
একটু পর এসে বললো” বুঝলাম না, এমন হওয়ার তো কথা না। ও বলছিল আজ প্রায় দুই সপ্তাহ। তারপর ও এমন হওয়ার কথা না।”
“আমিও বুঝতে পারছি না। থাক ওকে আগে হাসপাতালে তো নেই। আর ওর মোবাইল থেকে আন্টিকে একটা ফোন কর। আসতে তো অনেক সময় লাগবে। ততক্ষণ আমরা থাকবো।”হেনা চিন্তিত হয়ে বললো।
আমি ওদের কথায় আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। তবে আমি বললাম” দেখো, কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারো। আমি সব সাহায্য করবো।”
শিউলি তখনও পেট চেপে ধরে আছে।
কথাটা শুনে অস্ফুট স্বরে বলল” হেনা, আমার কারো সাহায্য চাই না। তোরা না পারলে থাক আমি একাই যাবো।” দেখলাম হেনা পিচ্চি কে পিছন থেকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সাথে প্রায় লেপ্টে আছে।
আমি বললাম” শিউলি, দেখো এখন তোমার সাহায্য লাগবে। জেদ করো না। বড় ভাই হিসেবে আমি তোমার জেদ মেনে নিবো না।”
পিচ্চি এবার পেট থেকে হাত সরিয়ে শক্ত করে হেনাকে ধরে দাঁড়ালো। তারপর যা বললো তার ওর এই মুহূর্তে বলা কতোটা ন্যায্য তা বুঝতে পারলাম না।
”
-“যাকে ভালোবাসি সে আমার বড় ভাই হয় কিভাবে?”
এই পরিস্থিতিতেও ওর এমন মাথা মোটা কথায় আমার খুবই বিরক্ত লাগলো। আমি কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম”দেখো তা পড়ে দেখা যাবে। এখন আসো।” বলেই আর ওর কোনো কথা না শুনে ওর একটা হাত ধরলাম। তারপর নিজের কাঁধে রেখে হাতটা আরেক হাত দিয়ে ওর কাঁধ ধরে একটু সাপোর্ট দিতে চাইলে। ও হঠাৎ করে কেমন যেন নেতিয়ে গেল। আসলে বুঝতে চেষ্টা করলাম ও ঢং করছে না সত্যি ওর শরীর খারাপ হয়ে গেলো আরো।
রিক্সায় উঠাতে আরেক যন্ত্রণা পোহাতে হলো। কারণ ও সত্যি অজ্ঞান হয়ে গেছে। আমি হয়তো ভুল বুঝেছি। এখন কথা হলো হেনা একা মেয়ে। এতোটা রাস্তা একটা অবচেতন মেয়েকে কিংবা নিয়ে যাবে। সুমি আসবে কিন্তু ও পিচ্চির মাকে ফোন করছে। আর কি যেন করছে আমার দোকানে। রাফি হঠাৎ বের হয়ে আমার কাছে এসে বললো” ভাইরে, কারো কি কিছু হইছে? টুলের উপর এত্ত গুলো রক্ত। আর ঐ আপুটা তা পানি আর কাগজ দিয়ে পরিষ্কার করছে।ও ভাই আপনে ঠিক আছেন তো?”
এতোক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম কি হচ্ছে। পরোয়া করলাম না। তাড়াতাড়ি রিক্সায় উঠে হেনা কে বললাম” তোমরা আরেকটা রিক্সায় আসো। আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। আর হ্যাঁ, ওর আম্মু কে ভালো কিছু কাপড়ও আনতে বলো।”
ওকে আর কোলে করে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম। পাশে বসিয়ে হেনাকে বললাম”, ওর কাপড়টা ঠিক করে দিতে।” তারপর ওকে নিয়ে রওয়ানা হলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্য।
হাসপাতালের ডাক্তার ওকে দেখেই সাথে সাথেই ভর্তি করিয়ে নিলো। আর আমাকে কিছু স্যালাইন আর ঔষধ আনতে বলল। আমি তাড়াতাড়ি করে তা আনতে গেলাম। এর মধ্যে আমার মোবাইল বেজে উঠল। আমি দেখি অচেনা নাম্বার। ধরলাম” ভাইয়া, আপনারা কোথায়? আমরা হাসপাতালের সামনে।” বুঝলাম এটা হেনা। আমি বললাম” তোমরা মহিলা ওয়ার্ডে যাও। ওখানে হাত নাম্বার বেড়ে আছে। আমি আসছি।” ঔষধ গুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি গেলাম। গিয়ে দেখি দুইজন নার্স তাকে পর্যবেক্ষণ করছে।
আমি ঔষধ আর স্যালাইন তাদের দেয়ার পর তাকে স্যালাইন এর সাহায্যে ঔষধ দিলো। আর একটা কথা বললো” আপনারা কেউ প্যাড আনুন। অনেক রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।” কথাটা শুনে সিমা আর হেনা নিজেদের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে আসলে আমার সামনে বলায় তারা লজ্জা পেলো। কিন্তু আমি লজ্জা না করেই বললাম” আমি আনছি। তোমরা থাকো। কোনটা ভালো হবে। না, থাক আমি আনছি।” ওদের আর লজ্জায় না ফেলে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসলাম। এই মেয়েটা এতোদিন যা জ্বালাই নি তা একবারে উসুল করছে এখন। এমনি মনে হতে লাগলো।
প্রায় একঘন্টা পর মনে হলো ও একটু সুস্থ বোধ করছে। কারণ গায়ের রং কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছিল। এখন আবার তা ফিরে এসেছে। ডাক্তার এসে বললো ” ওর রক্ত দেয়া লাগবে। অনেক দিন ধরে নাকি এমন রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। এখন শরীরে প্রায় রক্ত নেই বললেই চলে। আপনারা দেখুন দুই ব্যাগ রক্ত জোগাড় করতে পারেন কিনা।” ওর রক্তের গ্রুপ জানি না। তাই ডাক্তার পরীক্ষা করতে বললেন ডাক্তার কে। জানা গেল ওর রক্ত ও পজিটিভ। আমার রক্ত এ পজেটিভ। তাই চিন্তায় পড়লাম এখন রক্ত পাবো কোনদিন।
এর মধ্যে ওর মা এসে গেল। সাথে দুজন লোক। দেখলে বোঝা যায় বেশি ভালো অবস্থা এদের না।
(চলবে)