#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ১৮
#তানিশা সুলতানা
মুহুর্তেই মহিলা তিনটি তাদের স্বামীকে নিয়ে আসে তানহাদের বাসায়। তিন তালা বাড়িটার প্রতিটি কোনায় পৌঁছে গেছে কথাটি। সবাই কানাঘুষা করছে। ছি ছি করছে। কেউ অভির দোষ দিচ্ছে না। সবার মুখে একটাই কথা “ছি ছি কি অসব্ভ মেয়ে। বাবা মা কোনো শিক্ষাই দেয় নি।
তানহাদের পুরো রুমটা ভরে গেছে মানুষ জন দিয়ে। এক পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তানহা। এসব কি হচ্ছে ওর ছোট্ট মাথায় এসব ঢুকছে না
” আহাম্মদ ভাই এরকম দুজনকে রুম ভাড়া দিলো কি করে? উনি কি জানে না এগুলো?
একজন বয়ষ্ক পুরুষ বলে ওঠে।
“আরে উনি তো আমার কাকু লাগে। ফুপির ভাসুর। আর অভি তো ওনারই ছেলে।
তানহা মাঝ খান থেকে আরও একটা কথা বলে ফেলে। এতোখন সব কিছু যতটা ঠিক ছিলো এখন গন্ডগোল করে দেয়।
” কিহহহহহহহ ছেলেটা আহাম্মদ ভাইয়ের? ওনাকে তো এখুনি ফোন করতে হবে।
আমরা এসব মানবো না।
তানহা এবার কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। ভেবেছিলো পরিচয় দিলে ঝামেলা মিটে যাবো। কিন্তু এখন তো আরও বেরে গেলো।
তানহা তারাহুরো করে গিয়ে লোকটার হাত ধরে।
“প্লিজ ফোন করবেন না।
আসলে কি হয়েছে ব্যাপারটা। আমরা যে এখানে আছি এটা কেউ জানে না।
লোকটা ভ্রু কুচকায়।
” তার মানে তোমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছো?
একজন মহিলা বলে।
“নাহহহ
তানহা সাথে সাথে বলে ওঠে। যা বলছে তাতেই ধরা খেয়ে যাচ্ছে।
মাথায় হাত দিয়ে শুকনো ঢোক গিলে তানহা।
” তোমরা পালিয়ে আসো নি। আবার বিয়েও করো নি। এক সাথে থাকছো। আবার বলছো বাড়ির কাউকে না জানাতে। তোমাদের মতলব তো সুবিধার না। এর একটা বিহিত করতেই হবে।
কাজি ডেকে বিয়ে পরিয়ে দেই।
একটা মধ্য বয়ষ্ক পুরুষ বলে।
তানহা হাত তালি দিয়ে লাফিয়ে ওঠে খুশিতে। সবাই ভয়ে দু পা পিছিয়ে যায়।
“এটাই ভালো হবে। উফফফ কি বুদ্ধি আপনার।
তানহা লোকটার দুই গালে হাত দিয়ে বলে।
লোকটা এদিক সেদিক তাকায়। সবাই ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে।
” ছেলেটা কি তোমাকে বিয়ে করবে বলে এনে বিয়ে করছে না?
একটা মহিলা বলে।
“যদি হ্যাঁ বলি তাহলে না জানি কি বলবে আবার যদি না বলি তাও না জানি কি বলবে? এখন কি করবো আমি?
মনে মনে বিরবির করতে থাকে তানহা।
” কি মেয়ে কথা বলছো না কেনো?
অন্য মহিলা তারা দিয়ে বলে।
তানহা কিছুটা চমকে ওঠে।
“ভয় পাচ্ছো না কি?
একটা পুরুষ জিজ্ঞেস করে।
” ইয়ে মানে হ্যাঁ
তাল গোল পাকিয়ে হ্যাঁ বলে দেয় তানহা।
“এখনি কাজি ডেকে আনো তোমরা। বিয়ে পরিয়ে দেবো। ছেলেটার কতো বড় সাহস আমাদের পারায় একটা মেয়েকে বিয়ে করবে বলে এনে করছে না? ও কে তো পুলিশে দেওয়া উচিৎ।
তানহার এবার হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এই লোক গুলো তো তাল কে তীল বানিয়ে দিচ্ছে । অভি এসে তো তানহাকেই ঝাড়বে।
” আপনার ভুল
তানহা কিছু বলতে যায় তার আগেই এক জন বলে ওঠে।
“ওই তো ছেলেটা এসেছে।
সবাই গিয়ে অভিকে ঘিরে ধরে। অভি কিছুই বুঝতে পারছে না। হা করে তাকিয়ে আছে। লোকগুলো যা নয় তাই বলছে অভিকে।
তানহা এক পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। অতিরিক্ত টেনশন হলে তানহা এটাই করে।
” তুমি এই মেয়েটাকে বিয়ে করবে বলে এনে
ছি ছি ছি
লজ্জা করে না একটা হাঁটুর বয়সী মেয়ের সাথে এমনটা করতে।
একজন মহিলা নাক মুখ ছিঁটকে বলে।
অভি বড়বড় চোখ করে তাকায় তানহার দিকে।
তানহা অভির চাহনি দেখেই দুই কানে হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টে উঠবস করতে থাকে।
“আপনারা আমার কথা তো শুনেন?
অভি অনুরোধ করে বলে
” কোনো কথা শুনবো না। তোমার বাবাকে সব বলে দিয়েছি আমি। এবার যা করার আমরাই করবো। বেহায়া ছেলে। আমার ছেলে হলে চাপকে সিধে করে দিতাম।
অভি তানহার দিকে দাঁত কটমট করে তাকায়।
তানহা কেঁদে ফেলে।
💔💔
স্মৃতির মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আনিকা বেগম। চোখ দুটো ঘুমে ঢুলঢুল করছে তবুও বসে আছেন। কারণ উনি বুঝতে পারছেন স্মৃতি কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত।
আহাম্মদ চৌধুরী পাশেই পায়চারি করছে।
ওনার মাথায়ও চিন্তা এসে ভর করেছে।
“অভি তো এমন ছেলে না যে তানহাকে বিয়ে করবে বলে নিয়ে বিয়ে করবে না। তাহলে কেসটা কি? মেয়েটা কি সত্যিই তানহা না কি মোহনা। মোহনা হওয়ার চান্স 40% আর তানহা হওয়ার চান্স 60%। যদি তানহা হয় তাহলে তো অভিকে পুরো বাড়িটাই লিখে দেবো।
বেপারটা পাঁচ কান করা যাবে না। আমার বউকেও বলা যাবে না। কাল একবার গিয়ে দেখবো আমি। কনফার্ম হয়ে বলেই ঢোল পিটাবো।
মিসেস তমার মুখে ঝামা ঝসে দেবো।
মুচকি হাসেন আহাম্মদ চৌধুরী।
” মা আমাকে বাড়ি নিয়ে চলে প্লিজ
স্মৃতি চোখ বন্ধ করে শক্ত গলায় বলে।
“কিন্তু
” আমি এখানে থাকতে চাই না।
কাঠকাঠ গলায় বলে দেয় স্মৃতি।
আনিকা বেগম কিছু বলতে যায় আহাম্মদ চৌধুরী থামিয়ে দেয়।
জানালার পাশে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে ছিলে আবির। খুব আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। বাবা মা চলে গেলে টুপ করে স্মৃতিকে ফুলটা দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে একটু হাগ করে চলে যাবে। তিনটা ডে একদিনেই পালন করবে৷ কিন্তু আবিরের আশায় এক বালতি পানি ঢেলে দিলো স্মৃতি।
দাঁতে দাঁত চেপে ফুলটা শক্ত করে ধরে আবির।
“এখান থেকে তো এত সহজে যেতে দেবো না তোমায় আমি। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল কি করে বাঁকাতে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানি আমি। জাস্ট ওয়েট এন্ড সী বেবি
বাঁকা হেসে বলে আবির।
🥀🥀
মাথার চুল খামচে ধরে বসে আছে অভি। কিছুতেই বিয়ে করা যাবে না। আর যাই হোক অভি তো বাবাকে চেনে।
গুনে গুনে শোধ তুলবে তানহার পরিবারের ওপর থেকে। আর তানহার মা সেও কম যায় না। বিয়েটা হলে এই দুজন যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেবে। সেই যুদ্ধ থামাবে এমন সাদ্ধ কারও নেই।
তানহা অভির পাশে বসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। ওদের থেকে খানিকটা দুরেই সব মহিলা আর তাদের স্বামী ছেলে মোট কথা চোদ্দ গুষ্টি তানহা অভিকে নিয়ে আলোচনা করছে।
আর দুজন গেছেন কাজি ডেকে আনতে।
” বলছিলাম কি?
তানহা আমতা আমতা করে বলে।
অভি চোখ পাকিয়ে তাকায় তানহার দিকে।
“এমন করে তাকাবেন না প্লিজ। আমি একজন হার্ডের রুগী।
তানহা ঢোক গিলে বলে।
অভি চোখ মুখ কুচকে নিচের দিকে তাকায়।
তানহা খানিকটা এগিয়ে এসে বসে। অভির পাশ ঘেসে।
“আপনার কাছেও এখন টাকা পয়সা নেই। সেই কবে বেতন পাবেন তখনই তো টাকা হবে। তার থেকে তো এটা ভালোই হলো। আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো কিন্তু টাকা লাগলো না। ইসসস আমার যে কি অনন
বাকিটা শেষ করতে পারে না তানহা। অভি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে।
তানহা একটু হাসার চেষ্টা করে পেছতে যায়। অভি হাত ধরে।
” কে কোথায় আছো? বাঁচাও আমাকে। প্লিজ হেল্প
তানহা চেঁচিয়ে বলে ওঠে।
তানহার থেকেও দ্বীগুন জোরে চিৎকার শোনা যায় অভির বেলকনি থেকে।
“কে কোথায় আছো? এখানে আসো।
আমার হারিয়ে যাওয়া ফুলের টব পেয়ে গেছি।
সবাই কনফিউজড হয়ে গেছে কোন দিকে আগে যাবে।
চলবে
বানান ভুল থাকতে পারে। একটু মানিয়ে নেবেন প্লিজ🥺