#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৪
ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরেছে হুর। আজকের দিন টা জ’ঘন্য বা’জে ছিলো তার জন্য। লিয়ার সাথেও তেমন কথা বলে নি। না কিছু খেয়েছে। খাওয়া বা কথা বলা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছিলো তার জন্য। এমনিতেই ঠোঁটের ক্ষ’ত তার উপর উল্টোপাল্টা ঘষা ঘষি করায় ঠোঁটের অবস্থা ভ’য়ানক আকার ধারণ করেছে। তখন রা’গে, জি’দে ওভাবে ভার্সিটিতে চলে গেলেও পরে বুঝতে পেরেছে কি ভুল টাই না করেছে সে! ঠোঁটের তীব্র ব্য’থা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেছে হুর। আজকে সারাদিন সে মাস্ক পরে ছিলো। এক মুহূর্তের জন্যও খোলে নি। নাহলে সবাই তার পেছনে পরে যেতো কি হয়েছে জানার জন্য। এমনিতেও মাস্ক পড়ার জন্যও কম জবাবদিহি করতে হয় নি। হুর বিষয় টা এড়িয়ে গিয়েছে ধুলা তে সমস্যা হচ্ছে বলে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওড়নার পিন খুলছিলো হুর। হুট করে ড্রেসিং টেবিলে চোঁখ যেতেই দেখলো একটা ব্ল্যাক রোজ। তার নিচে কিছু একটা চাপা দেয়া আছে। হুর আলতো হাতে রোজ টাকে স্পর্শ করলো। ব্ল্যাক রঙ যেমন তার প্রিয় তেমনি ব্ল্যাক রোজ ও। যদিও এর আগে ব্ল্যাক রোজ সামনে থেকে মাত্র একবার দেখেছিলো তাও ফাইয়াজ দের বাড়িতে। হুরের ছাদে রেড রোজের গাছ আছে তবে ব্ল্যাক নেই। তাই ব্ল্যাক রোজ পেয়ে খুব আনন্দিত হলো হুর। রোজ সরিয়ে দেখলো তার নিচে একটা চিরকুট ছিলো। চিরকুট টা খুলতেই ভেসে উঠলো সরি শব্দ টি। হুর হঠাৎ করে পাওয়ায় বুঝে উঠতে পারলো না এটা তাকে কে বা কেনো দিয়েছে! দুই মিনিট লাগলো তার আন্দাজ করতে।
-“আচ্ছা এটা ফাইয়াজ ভাইয়া দেয় নি তোহ! এখানে সরি লেখা আছে। আর উনি ছাড়া কেউই আমার সাথে misb’ehave করে নি। তার মানে উনিই দিয়েছেন। তাতে কি উনার কি মনে হয় উনি এভাবে রোজ দিয়ে সরি বললেই আমি তাকে ক্ষ’মা করে দিবো। হুঁহ এতো সহজে ক্ষ’মা করছি না আপনাকে মিস্টার ফাইয়াজ। অনেক বা’জে কথা বলেছেন আপনি আমাকে। ”
হুর শাওয়ার নিবে বলে towel নিতে বেলকনিতে গেলো। বেলকনিতে যেতেই আশ্চর্য হয়ে গেলো সে। কারণ তার সম্পূর্ণ বেলকনি অনেক সুন্দর করে বাহারী ফুল গাছ দিয়ে ডেকোরেট করা। ফুলের মিষ্টি ঘ্রানে মো মো করছে সম্পূর্ণ বারান্দা।হুর আশ্চর্য হলেও কোনো অনুভূতি প্রকাশ করলো না এবার। সোজা নিজের towel নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।
হুর ওয়াশরুমে ঢুকতেই হতাশ ভঙ্গিতে রুমে ঢুকলো ফাইয়াজ। এতক্ষন সে দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলো। লুকিয়ে হুর কে দেখছিলো। ভেবেছিলো এভাবে সরি বললে হুরের রা’গ কমবে। কিন্তু হুরের গম্ভীর মুখ দেখে হতাশ হলো সে। মাথার চুল টেনে আপন মনে বললো,
-“বাপরে এতো রা’গ! কই ভাবলাম এভাবে সরি বললে রা’গ কমে যাবে। কিন্তু ম্যাডাম এর মুডের তো কোনো পরিবর্তনই হলো না। ব্যাপার না। আমিও ফাইয়াজ তোমার রা’গ ভা’ঙিয়েই ছাড়বো দেখে নিও। নেক্সট surprise এর জন্য তৈরি হয়ে নাও মিস হুর। এই surprise পাওয়ার পর তোমার রা’গ গলে পানি না হয়ে যাবে কই আমিও দেখবো হুম। ”
অন্যদিকে হুর ওয়াশরুমে ঢুকে বাঁকা হাসলো। ঐ সময় ড্রেসিং টেবিল থেকে ফুল আর চিরকুট নিয়ে বেলকনিতে যাওয়ার সময় হুট করে আয়নার দিকে চোঁখ পড়তেই ফাইয়াজ কে দেখেছে সে। ফাইয়াজ কে দেখেছে বললে ভুল হবে ফাইয়াজ এর হাতটাই শুধু দেখেছিলো। তাতে কি দরজার বাইরে কে আছে হুর তা ঠিকই বুঝতে পেরেছে। তাই তোহ এসব surprise পেয়ে খুশি হওয়ার পরও নিজের অভিব্যক্তি দেখায় নি।
-“আপনাকে কিছু টা ক্ষ’মা করলাম মিস্টার ফাইয়াজ। কিন্তু সেটা তোহ আপনাকে জানতে দেয়া যাবে না। উহু এতো সহজে পার পাবেন না আপনি। আমাকে এতো বা’জে কথা কেউ কখনো বলে নি। অনেক ক’ষ্ট পেয়েছি আমি আপনার ব্যবহারে। যদিও আমি জানি আপনি আমার ভালোর জন্যই বলেছিলেন। তারপরও আমাকে খারাপ মেয়েদের সাথে কিভাবে তুলনা করলেন আপনি! আমিও দেখতে চাই আপনি কি কি করেন! ”
———————————————————————
শাওয়ার নিয়ে হালকা কিছু খেয়ে ঘুমিয়েছিল হুর। ঠোঁটের অবস্থা এখনো যাচ্ছেতাই। হুর চিন্তা করলো তার আম্মু এখনো এই ব্যাপারে জানেন না। জানলে প্রশ্নের ভান্ডার বসাবে। বাড়িতে ঢোকার সময় মাস্ক পড়েছিল বলে উনি বুঝতে পারেন। আর খাবার টাও হুর চুপিচুপি রান্নাঘর থেকে নিয়ে এসেছে। হুরের নিজের উপরই রা’গ উঠছে। কে বলেছিলো অমন পাগ’ল ছাগলের মতো ঠোঁট ঘষতে।নিজেকেই নিজের দুটো থা’প্পড় মার’তে ইচ্ছে করছে হুরের।
হুর ফ্রেস হয়ে নিচে নামলো। সে জানে মিসেস হেনা এখন বাড়িতে নেই। লিয়াদের বাড়িতে আছে। এটা তার নিত্য দিনের অভ্যাস। হুর রান্নাঘরে গিয়ে কফি করে ছাদে উঠলো। ছাদে দাঁড়িয়ে কফি খাওয়ার মজা টাই আলাদা বলে মনে হয় তার।
ছাদে উঠতেই আরেক দফা টাশকি খেলো হুর। তার ছাদ যেনো ছাদ না ফুলের বাগান হয়ে গেছে। হুরের চোঁখ আপনা আপনি বড়ো হয়ে গেলো। বিভিন্ন ফুলের মিশেল ঘ্রানে পা’গল হয়ে যাচ্ছে হুর। এগুলো সব হুরের প্রিয় ফুল যা সে সবসময় নিজের বাগানে রাখতে চাইতো। কিন্তু এগুলোর মধ্যে অনেক গাছ ই আছে যেগুলো দুর্লভ। সহজে পাওয়া যায় না। এই সব ফুলের গাছ সে ফাইয়াজ দের বাড়িতে দেখেছিলো। হুর খেয়াল করতেই দেখলো প্রতিটা টবের গায়ে ছোট ছোট কাগজ চিপকানো যেগুলোতে সরি লেখা। হুর বুঝতে পারলো এগুলো ফাইয়াজ করেছে আর সে নিজেও হুরের আশেপাশেই আছে। তাই হুর নিজেকে স্বাভাবিক করে একটু ভাব নিয়ে হাঁটতে লাগলো যেনো তার কিছু যায় আসে না এসবে। হাঁটতে হাঁটতে হুর একটা অদ্ভুত ক্যাকটাস গাছ দেখলো যাতে একটা ধবধবে সাদা ফুল ফুটে আছে। হুর অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো গাছটার দিকে। কারণ সে শুনেছে ক্যাকটাসে ফুল হয় আজকে নিজের চোঁখে দেখলো। টবের নিচে একটা কাগজ চাপা দেয়া দেখে হুর আলতো করে তা বের করে এনে মেলে ধরলো।
-“এই যে মিস হুর এই গাছটার জন্য হলেও আমাকে ক্ষ’মা করে দাও। তুমি হয়তো জানো না এই গাছটা আমার জন্য কতোটা স্পেশাল। গত সাত টা বছর ধরে আমি এই গাছটা কে যত্ন সহকারে রেখেছি। কিন্তু এই গাছে ফুল হতো না। তবে আমি হতাশ হয়নি কখনো কারণ আমার বিশ্বাস ছিলো যখন আমার জীবনে সত্যিকারের ভালোবাসা, আমার মুখের হাসির কারণ আসবে তখন এই গাছে ফুল হবে। আর দেখো শেষ পর্যন্ত সৃষ্টিকর্তা আমাকে হতাশ করেন নি। আমার বিশ্বাস টা সত্যি হয়েছে। আজকে আমার এই বিশেষ গাছটা তোমায় দিলাম। তার পরিবর্তে তুমি আমার সরি এক্সসেপ্ট করো। আমি তোমাকে হা’র্ট করতে চাই নি। তোমার ভালোটাই চেয়েছিলাম। সবশেষে বলবো আমাকে ক্ষ’মা করো আর না করো এই গাছটাকে যত্ন করে রেখো। কখনো যদি আমি হারিয়ে যাই তবে এই গাছটাকে স্মৃতি হিসেবে রেখে দিও। এই গাছটা তোমাকে আমার কথা মনে করাবে।
ইতি,
ফাইয়াজ”
চিঠি টা পড়ে হুরের রা’গ গলে পানি হয়ে গেছে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না তার কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য ফাইয়াজ এতো কিছু করেছে। হুর এই মুহূর্তে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। হঠাৎ খুটখুট আওয়াজ পেয়ে হুর এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। নিচে চোঁখ যেতেই দেখলো একটা রঙিন বক্স। ওটা থেকেই শব্দ আসছে। হুর আগ্রহ নিয়ে বক্সটার সামনে গিয়ে ভ’য়ে ভ’য়ে বক্সটা খুলতে লাগলো। বক্সটা খুলতেই মুখ হা হয়ে গেলো হুরের। চোঁখ বড়ো বড়ো করে, মুখ হা করে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো বক্সটার দিকে।
#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৫
হুর যেদিকে যেদিকে যাচ্ছে রুশো তার পেছন পেছন লেজের মতো ঘুরছে। রুশোর থামার কোনো লক্ষণ না দেখে হুর হাঁটা থামিয়ে দিলো। হুর থামতেই রুশো ও থেমে গেলো। হুর অবাক না হয়ে পারলো না। রুশোর দিকে ফিরে কোমরে হাত দিয়ে বললো,
-“এই এই সমস্যা কি তোমার হুম! এভাবে আমার পিছন পিছন আসছো কেনো! যাও তোমার মালিকের কাছে যাও। একদম আমার কাছ ঘেসবে না। ”
-“মিঁয়াও,,,, ”
-“কিসের মিঁয়াও,,, কোনো মিঁয়াও টিয়াও বুঝি না। আমার থেকে দূরে দূরে থাকবে। এই তুমি ছেলে না মেয়ে হ্যা! ”
-“মিঁয়াও,,,, ”
হুর রুশোর দিকে বাঁকা চোঁখে তাকিয়ে বললো,
-“কিছু বলতে তো পারবে না। শুধু পারবে মিঁয়াও মিঁয়াও করতে। যাই হোক নাম যেহেতু রুশো ছেলেই হবে হয়তো। মন দিয়ে শোনো রুশো তুমি মোটেও আমার পিছু আসবে না আর। ”
রুশো বেচারা অসহায় চোঁখে তাকিয়ে রইলো হুরের দিকে। হুর কে আবার হাঁটা ধরতে দেখে সে পা টিপে টিপে হুরের পেছনে হাঁটতে লাগলো। রুশো আর হুরের কান্ড ছাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিলো ফাইয়াজ। ফাইয়াজ হতাশ হয়ে হুরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বললো,
-“ম্যাডামের রা’গ কি তবে কমলো না। উফঃ কি করে যে এই মেয়েকে মানাবো! জানি আমি বা’জে কথা বলেছি কিন্তু এখন তো ক্ষ’মা চাইছি তাও মানতে চাচ্ছে না! সমস্যা না আমিও দেখবো কতক্ষন আমার উপর রা’গ করে কথা না বলে থাকো মিস হুর। ”
—————–
রাত আটটা। পড়তে বসেছে হুর। কিন্তু ধ্যান তার পড়াতে নেই। কারণ তার টেবিলের উপর লেজ গুটিয়ে বসে আছে রুশো। শুধু বসে থাকলে চলতো; কিন্তু সে হুরের দিকে গোলগোল চোখে তাকিয়ে আছে। এতো কি দেখছে কি জানি। রুশোর দিকে তাকিয়ে হুর বিকালের কথা চিন্তা করতে লাগলো।
সেই সময় বক্স থেকে খুট খুট শব্দ পেয়ে হুরের মনে কৌতূহল জন্মায়। বক্স টা খুলতেই সে এতো টা আশ্চর্য হয়েছিল যা বলে প্রকাশ করতে পারবে না। সে বক্স এর মুখ খুলতেই দেখলো বক্স এর ভেতর থেকে একটা ছোট বিড়াল মুখ বের করে উঁকি দিচ্ছে। হুর বুঝতে পারলো এই বিড়াল টাই এতক্ষন ছাড়া পাওয়ার জন্য শব্দ করছিলো। বিড়াল টা দেখতে অসম্ভব আদুরে। ধবধবে সাদা তার গায়ের রঙ। গা ভর্তি পশম। ওসেন ব্লু রঙের গোলগোল দুটো চোখ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো তার মনেও হুর কে নিয়ে অনেক কৌতূহল আছে। বিড়াল টা বক্স থেকে লাফিয়ে বের হতেই হুর কিছু টা দূরে সরে গেলো। হুর ক্যাট লাভার হলেও তার মনে কিছু টা ভ’য় আছে ক্যাট নিয়ে। ছোটবেলায় একবার তাকে একটা ক্যাট আঁ’চড় কে’টেছিল তখন থেকে তার মনে ভ’য় ঢুকে গেছে। ক্যাট আঁ’চড় কা’টবে এই ভ’য়ে সে আর কখনো ক্যাট আনে নি বাড়িতে।
খেয়াল করতেই হুর দেখলো বক্স এর নিচেও একটা কাগজ চাপা দেয়া আছে। হুর ধীর পায়ে বক্স এর সামনে বসে কাগজ টা বের করে পড়তে লাগলো।
-” এটা আমার পক্ষ থেকে একটা উপহার তোমার জন্য। আমি জানি তুমি বিড়াল ভালোবাসো আবার ভ’য় ও পাও। বাট ট্রাস্ট মি ও তোমার কোনো ক্ষ’তি করবেনা কখনো। তুমি নিশ্চিন্তে ওকে ছুঁতে পারো। ওর নাম রুশো। ওকে রুশো বলেই ডেকো। ”
হুর রুশো কে পেয়ে এতো বেশি খুশি হয়েছিল যে আনন্দে তার চোঁখে জল চলে এসেছিলো। কিন্তু উল্টো দিকে ঘুরে থাকায় তা ফাইয়াজ এর দৃষ্টিগোচর হয় নি। হুর নিজের চোঁখের জল আড়াল করে স্বাভাবিক ভাবে রুশোর দিকে ফিরলো। যেনো তার কিছু যায় আসে নি এসবে। তারপর রুশোর দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে ফাইয়াজ কে শুনিয়ে আওয়াজ করে বললো,
-“এই বিড়াল আমার থেকে দূরত্ব বজায় থাকবা। যাও তোমার মালিকের কাছে যাও। আমার কাছ ঘেসবা না বলে দিলাম। ”
কিন্তু রুশো মানলে তো! সে আসার পর থেকে হুরের পিছু পিছু ঘুরছে আর এখনো তার টেবিলের উপর বসে আছে যেনো তার মতো ভদ্র নিষ্পাপ আর কেউ নাই। হুর রুশোর দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকা করলো।
-“মিঁয়াও,,,”
-“কি মিঁয়াও,,, ও আচ্ছা বুঝেছি ক্ষুধা লেগেছে। এক কাজ করো যাও তুমি বাইরে যাও। আমার আম্মাজান তোমাকে অনেক খাবার দিবে। আমি আজকে বাইরে যেতে পারবো না ছুনা। যাও যাও। ”
হুর রুশো কে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে এটা বুঝতে পেরে রুশো একই সাথে গলা ফা’টানো আর মোচড়া মোচড়ি শুরু করলো। সে কিছুতেই যাবে না। হুর নিজের রুমের দরজা একটু ফাঁক করে হৃদ কে ডাক দিলো। দুই মিনিট এর মাথায় হৃদ হাজির হলে হুর তার হাতে রুশো কে দিয়ে বললো,
-“যা প্রশ্ন করার আছে কাল করিস। এখন আমার ভালো লাগছে না। পড়া শেষ করে ঘুম দিবো একটা। ওকে কিছু খাইয়ে দিস। অনেক্ষন কিছু খায় না। আর মাকে বলিস আমি বিকালে খেয়েছিলাম। রাতে আর কিছু খাবো না। ”
হুর কথা শেষ করে দরজা লাগিয়ে দিলো। আর হৃদ রুশো কে হাতে নিয়ে বে’ক্কলের মতো কিছুক্ষন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর রুশো কে নিয়ে মায়ের কাছে রান্নাঘরে চলে গেলো।
মিসেস হেনা অনেক যত্ন করে রুশো কে খাওয়ালো। তারও pet অনেক পছন্দ। আর রুশো এতটাই আদুরে যে তাকে আদর না করে কেউ থাকতে পারবে না। হুরের দরজা যেহেতু বন্ধ তাই হৃদ রুশো কে নিজের রুমে নিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিলো। রুশোর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিতেই গুটিশুটি মে’রে ঘুমিয়ে গেলো সে।
———————–
আজকেও ভীষণ অস্বস্তি হওয়াতে ঘুম হালকা হয়ে গেলো হুরের। ঘুম ভাঙতেই বুঝতে পারলো কেউ তার ঠোঁটে খুবই যত্ন সহকারে ঠান্ডা তরল জাতীয় কিছু লাগিয়ে দিচ্ছে। হুর আজকে কোনো নড়াচড়া করলো না। ঘুমের ভান ধরে ম’টকা মে’রে পড়ে রইলো। সে দেখতে চায় এই লোক টা কে। চোখ বন্ধ করে রাখলেও হুর ঠিক বুঝতে পারলো আজকেও লোকটা টেবিল ল্যাম্প অফ করে দিয়েছে। তাই ধীরে ধীরে নিজের চোখ খুলে লোকটাকে দেখার চেষ্টা করতে লাগলো। বাইরের হালকা আলোয় শুধু মানব টার দেহের গঠন বোঝা গেলেও কিছুই দেখতে পারলো না হুর। হুট করে লোকটা হুরের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
-“আমি না চাইলে তুমি কখনোই জানতে পারবে না আমি কে! আমি জানি তুমি জেগে আছো হুর পরি। ”
হুর লোকটার কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো করে ফেললো। আর মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো,
-“লোকটা তো অনেক চালাক! আমি জেগে আছি বুঝে ফেললো কিভাবে! ”
অচেনা লোকটা যেনো হুরের মনের কথা পড়ে ফেললো। হুরের কপালে চুমু খেয়ে পুনরায় ফিশফিসিয়ে বললো,
-“তোমার নিঃশ্বাস এর শব্দ আমাকে জানান দিচ্ছে যে তুমি জেগে আছো। এতো অবাক হচ্ছ কেনো! আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার প্রত্যেকটা অভ্যাস সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। তুমি কখন কি করতে পারো তাও আমার জানা আছে। ”
হুর এবার কাপা কাপা স্বরে বললো,
-“আ,,, আপনি কে! আ,,মাকে কিভাবে চিনেন! কোথা থেকে আমার রুমে আসেন! নিজেকে আড়ালই বা কেনো করছেন!”
লোকটা আগের মতোই ফিসফিসিয়ে বললো,
-“সঠিক সময় আসলে সব উত্তর পাবে পরি। ততদিন যা হচ্ছে হতে দাও। যাই হোক তুমি তো দেখি একেবারে সেনসিটিভ। ফার্স্ট চুমুতেই তোমার অবস্থা খারাপ! কতো স্বপ্ন দেখলাম কাল যে বিয়ের পর তোমাকে সারাক্ষন চুমু খাবো। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে চুমু উপোষে ম’রতে হবে। ”
আফসোসের স্বরে বললো লোকটা। হুরের দুঃ’খে লজ্জায় গাল লাল হয়ে উঠলো। ক্ষো’ভের সাথে কিছুটা উচ্চ স্বরে বললো,
-“আমি আপনাকে বিয়ে করলে তো! অসভ্য লোক একটা। একদম আমার রুমে আসবেন না। একটা একা মেয়ের রুমে আসা কোনো সভ্য লোকের কাজ নয়। ”
-“হলাম নাহয় একটু অসভ্য। তোমার জন্য আমি খারাপ থেকে খারাপ হতে পারি বুঝলে হুর পরি। আর বিয়ের কথা সেটা সঠিক সময় আসলে তুমি করতে বাধ্য হবে।এবার ঘুমাও। আজ আসি। তোমার ঠোঁটে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়েছি। সকাল হতে হতে ব্য’থা আর ফোলা অনেকটা কমে যাবে আশা করছি। ”
লোকটা হুরের কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে আবার উধাও হয়ে গেলো। হুর লাফ দিয়ে উঠে তাড়াহুড়ো করে লাইট অন করলো। কিন্তু আজকেও আগের দিনের মতো নিরাশ হতে হলো তাকে। কেউ নেই রুমে। সব একেবারে স্বাভাবিক।
চলবে?
(