হেই মিস বোরকাওয়ালি , এইভাবে গেঁয়ো ভূত সেজে কি মাদ্রাসায় পড়তে এসেছ ? কিন্তু এইটা তো মাদ্রাসা নয় বেবি। এইটা একটা নামকরা ভার্সিটি। তুমি জানো না এই ভার্সিটি তে আমরা বোরকা পড়া কোন মেয়ে এলাও করি না।সবাই এইখানে মর্ডান ড্রেস পরে আসে। একেবারে গেঁয়ো ভূত সেজে চলে এসেছ ভার্সিটি তে পড়াশোনা করতে বলেই অট্টোহাসিতে ফেটে পড়লো সবাই। এইখানে সব হাই সোসাইটির ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে বুঝলে এবং সবাই অনেক স্মার্ট। তোমার মতো আনস্মার্ট , গেঁয়ো থার্ড ক্লাস মেয়েরা এই ভার্সিটি তে পড়াশোনা করার যোগ্যতা রাখে না বেবি।সো যে পথ দিয়ে এসেছো সেই পথ দিয়েই বিদায় হও।
আপনারা এই কলেজের টিচার্স নাকি প্রিন্সিপাল?যে আপনাদের কথা অনুযায়ী আমার চলতে হবে।
এর থেকে ও বেশি।এই যে আমাদের ফ্রেন্ড আশিয়ান আবরার বৃত্ত ওর বাবার ভার্সিটি এইটা।আর এই ভার্সিটি তে সবাই বৃত্তের কথা অনুযায়ী চলে। এইখানে বৃত্তের কথাই শেষ কথা। সুতরাং বৃত্তের রুলস অনুযায়ী এই ভার্সিটি তে তুমি পড়াশোনা করতে পারবে না।আর যদিও পড়তে চাও এমন গেঁয়ো ভূতের ড্রেস আপ চেন্জ করে মর্ডান হয়ে আসো বেবি।
এই ভার্সিটি তে আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে এসেছি ।কারো বাবার টাকা বা ক্ষমতার জোরে নয়। আমি তো এই ভার্সিটি তেই পড়ব ইনশাআল্লাহ এবং বোরকা পরিধান করেই আসব। আমি ও দেখব আমাকে এই ভার্সিটি তে পড়াশোনা করা থেকে কে আটকাতে পারে।
এই আশিয়ান আবরার বৃত্ত আটকাবে তোমাকে এই ভার্সিটি তে পড়াশোনা করা থেকে মিস দেড় ফুট। সত্যি তোমার সাহসের প্রশংসা করতে হয়। তুমি হয়তো জানো না এই বৃত্তের নাম শুনলে পুরো ভার্সিটি কেঁপে ওঠে । আমার দেওয়া রুলস ভঙ্গ করার মতো সাহসিকতা আজ পর্যন্ত কারো হয়ে ওঠে নি।আর তুমি কি না দেড় ফুটের একটা মেয়ে হয়ে এই আশিয়ান আবরার বৃত্তের রুলস ভঙ্গ করতে চাইছো?হাও স্ট্রেঞ্জ?
মানুষ কাকে ভ”য় পায় জানেন?কোন হিংস্র জন্তু দেখে। আপনার মধ্যে নিশ্চয় হিংস্র জন্তুর বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার কারনে সবাই আপনাকে ভ”য় পায়। কিন্তু আমি এইটাই বুঝতে পারছি না আপনি ঠিক ছেলে নাকি মেয়ে নাকি তৃতীয় লিঙ্গের। মেয়েদের মতো কানে দুল ,হাতে চুড়ি পরেছেন , চুল বড় রেখেছেন, কিন্তু আপনি তো মেয়ে নন।মেয়ে না হয়েও চলাফেরায় মেয়েদের সাজ অনুসরণ করেছেন। অথচ ঐসব পুরুষের উপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশপ্ত করেছেন যারা পুরুষ হয়েও নারীর বেশভূষা ও চলাফেরায় নারীদের সাজ অনুসরণ করেন।[আবু দাউদ -৪০৯৭.. ইবনে মাজাহ -১৯০৪]
এজন্যই কথায় বলে ছোট মরিচের ঝাল বেশি।দেড় ফুটের একটা মেয়ে কিনা আশিয়ান আবরার বৃত্তের চলাফেরার স্টাইল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে?আই কান্ট বিলিভ দিস।
হ্যাঁ আমি খাটো। তবুও আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ।কারণ কি জানেন? মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সুন্দর অবয়ব ও গঠনের অধিকারী করে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা অন্য কোন সৃষ্টিকে এতো সুন্দর আকৃতি আর গঠনশৈলী দিয়ে তৈরি করেন নি।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন” নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম সুন্দর আকৃতিতে।”[সুরা ত্বীন আয়াত:০৪]
যেইখানে আল্লাহ আমাকে সর্বোত্তম সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, সেইখানে আমাকে অসুন্দর বা দেড় ফুট বলার কোন রাইট নেই আপনার মিস্টার বৃত্ত।
আমার কথা শুনে খোলামেলা পোশাক পরিধান করা একটা মেয়ে যাকে অর্ধনগ্ন বলা চলে সে বলে উঠলো,হেই ব্লাডি গার্ল ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো? যেইখানে আমার জান আশিয়ান আবরার বৃত্তের সামনে টিচার্সরা পর্যন্ত কথা বলার সাহস পায় না সেইখানে তুমি গ্ৰাম থেকে উঠে আসা একটা গাইয়া মেয়ে কিভাবে বৃত্তের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো? আবার হাদিস কোরআনের ব্যাখ্যা করে তাকে জ্ঞান দিচ্ছো। তুমি জানো কাকে জ্ঞান দিচ্ছো?বৃত্ত এই ভার্সিটির টপার বয়। এই বছর গ্ৰাজুয়েশন শেষ করে বিসিএস এ আবেদন করবে।
বখাটে ছেলেরাও যে ভার্সিটি টপার হয় আপনার জান বৃত্তকে না দেখলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না।তার যে সাজসজ্জা, চলাফেরার স্টাইল,কলেজে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করতেই তো সারাদিন চলে যায়। পড়াশোনা করার সময় পায় কখন? নাকি রেজাল্টের ক্ষেত্রেও নিজের বাবার ক্ষমতা প্রয়োগ করেন?
ও মাই গড। তুমি জানো তুমি কার সম্পর্কে কি বলছো?
এক্ষুনি এই ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে যাবে তুমি। আদারওয়াইজ আই উইল কিল ইউ।
ইতিমধ্যে দেখি ভার্সিটি ক্যাম্পাসে ছোট খাটো একটা জটলা পাকিয়ে গিয়েছে।সব ছাত্র ছাত্রীরা অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।মনে হচ্ছে ফ্রিতে সার্কাস দেখার সুযোগ পেয়েছে। আমি চুপ করে আছি দেখে সেই ইংলিশ আপা আবারো বলতে লাগলো,হেই ডার্টি গার্ল বের হও এই ভার্সিটি থেকে।এতোবার বলার পরেও নির্লজ্জ বেহায়ার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছো কেন?
ভালোই ভালোই আউট হবে নাকি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব?
অল্প বিদ্যা ভ”য়ং”ক”র “এতো দিন শুধু শুনে এসেছি আজ স্বচোখে দেখলাম। আপনি অর্ধেক কথা ইংরেজি তে বলছেন আর বাকি টা বাংলাতে বলছেন । কেন ইংলিশ আপা? বাকি কথাটুকুর ইংরেজি জানেন না বুঝি?
ইউ ব্লাডি গার্ল তোমার তো সাহস কম নয় তুমি আমাকে বিন্দু মাহতাব কে অপমান করছো বলেই আমাকে থা”প্প”ড় দেওয়ার আগেই আমি ইংলিশ আপার হাত ধরে পেছন দিকে মুচড়ে দিয়ে বললাম,কালো বোরকা দিয়ে নিজেকে আবৃত করে রেখেছি বলেই আমাকে দূর্বল ভাববেন না ইংলিশ আপা। অন্যায়ের প্রশ্রয় দেওয়া আমার ডিকশনারিতে নেই। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করার শিক্ষা আমার আব্বা আমাকে দেন নি। তিনি বলেছেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত না করতে। আমি যদি কখনো অন্যায় করে থাকি , আমাকে শাস্তি দিবেন। আমি মাথা পেতে গ্ৰহন করবো। কিন্তু আমি অন্যায় কে কখনো প্রশ্রয় দেই নি,আর ভবিষ্যতেও ইনশাআল্লাহ দিবো না।
ইতিমধ্যে আমার মুখ থেকে আব্বা ডাক শুনে হাসির রোল পড়ে গিয়েছে।সবাই বলাবলি করছে ,দেখছো কিভাবে অশিক্ষিত গাইয়াদের মতো ড্যাড কে আব্বা বলে ডাকছে।এই ডিজিটাল যুগে এসে ও কারো মুখে আব্বা ডাক শুনতে হবে এইটা ধারনার বাইরে ছিল। আমি কারো কথায় কান না দিয়ে ক্লাস রুমের দিকে অগ্রসর হতেই বৃত্ত আমার রাস্তা আটকে দাঁড়ালো। আমার রাস্তা আটকানো দেখে বৃত্তের গ্যাং থেকে শ্যাম বর্ণের একটা ছেলে বলে উঠলো,এই বৃত্ত বাচ্চা মেয়েটাকে ছেড়ে দে না ইয়ার।সবার চলাফেরার স্টাইল তো এক রকম নাও হতে পারে।সবাই তো মর্ডান ও না হয় একটু অন্যরকম হোক। তুই শুধু শুধু মেয়েটাকে হ্যারেজ করছিস।
আজ হঠাৎ তোর এই দেড় ফুট মেয়ের জন্য দরদ উথলে উঠছে কেন? সামথিং ইজ রং?
তুই যা ভাবছিস সেইরকম কিছু নয় বৃত্ত।
দেখ অভি, তোর সাথে পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব আমার। আমি চাই না একটা গাইয়া দেড় ফুট মেয়ের জন্য আমাদের সেই সম্পর্ক নষ্ট হোক। তুই দেখছিস না এই দেড় ফুট মেয়ের তেজ কতো? সিনিয়রদের সাথে কিভাবে কথা বলছে?আর তুই আমার বন্ধু হয়ে ঐ গাইয়া দেড় ফুট মেয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলছিস? আর তুই তো খুব ভালো করেই জানিস বৃত্তের রুলস মানে সেইটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।সো মিস দেড় ফুট তুমি তো বোরকা খুলবে না। সমস্যা নেই আমি খুলে দিচ্ছি বলেই বৃত্ত আমার হিজাবে হাত দিতেই আমি ঠাস ঠাস করে বৃত্তের গালে থা”প্প”ড় মে”রে দিলাম।
সূচনা পর্ব
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।।
#ভালোবাসি_প্রিয়_২
#অপরাজিতা_রহমান
(