ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব -০৬

#ভালোবাসি_প্রিয়_২ (০৬)

#লেখিকা_অপরাজিতা_রহমান

-“এরপর ইংলিশ আপা যা বললো দোয়া শুনে হতভম্ব হয়ে গেল। একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের কিভাবে এমন করতে পারলো ইংলিশ আপা?”

-“আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি দোয়া। তোমার জন্য গতকাল আমার জান বৃত্ত আমাকে কথা শুনিয়েছিলো, আমাকে অপমান করেছিলো। ঠিক তখনই আমি ভেবেছিলাম আমার অপমানের যোগ্য জবাব তোমাকে দিবো।তাই তো অনেক খোঁজাখুঁজির পর পঁচা ডিম সংগ্রহ করেছিলাম।আর আজ যখন তুমি ভার্সিটি তে প্রবেশ করলে তখন আমিই উপর থেকে তোমার মাথায় ডিম ছুঁড়ে দিয়েছি। কিন্তু আমি খুব সাবধানে কাজ করেছিলাম যাতে কেউ বুঝতে না পারে কাজটা কে করেছে? কিন্তু জানি না বৃত্ত কিভাবে বুঝতে পারলো এইটা আমার কাজ।”

-“তোর সাথে সেই অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে আমার পরিচয়, অথচ এখনো আমাকে ভালোভাবে চিনতে পারলি না বিন্দু।এই বৃত্তের ডিকশনারিতে অসম্ভব বলে কোন কথা নেই।তোকে আমি বারবার বলেছিলাম ভুলে ও মিস দেড় ফুটের ক্ষতি করার চেষ্টা করবি না। কিন্তু তুই শুনলি না আমার কথা। আমি বারন করার পরেও তুই মিস দেড় ফুটের সাথে চরম অন্যায় করেছিস। মনে হচ্ছে এক্ষুনি তোকে কে”টে টুকরো টুকরো করে দেই।”

-“তুই এইভাবে বলতে পারলি বৃত্ত।তোকে আজ বড্ড বেশি অচেনা লাগছে রে।সামান্য একটা গাইয়া দেড় ফুট মেয়ের জন্য আমাকে মা”র”তে চাইছিস তুই? আমাদের এতো বছরের বন্ধুত্বের প্রতিদান এইভাবে দিলি?সব হয়েছে এই দেড় ফুট মেয়ের জন্য।”

-” স্টপ বিন্দু!ওকে দেড় ফুট শুধু মাত্র আমি বলবো আর কেউ নয়।আর তুই যা করেছিস এর জন্য আমি কখনো তোকে ক্ষমা করতে পারবো না বলেই বৃত্ত ক্যাম্পাসের বাইরে চলে গেল।”

-“আজ শুধু মাত্র তোমার জন্য বৃত্ত আমাকে আবার ও অপমান করলো। থার্ড ক্লাস মেয়ে কোথাকার। তোমার সাথে যেদিন থেকে দেখা হয়েছে সেদিন থেকেই আমার জান বৃত্ত আমাকে ইগনোর করছে ,আমাকে অপমান করছে। তুমি এসেই সবকিছু এলোমেলো করে দিলে। তোমাকে এতো সহজে আমি ছেড়ে দিব না ।”

-“ইংলিশ আপা তার ভাষণ শেষ করে যেতেই সিমরান বললো,তুমি কি কিছু ফিল করলে দোয়া?”

-“হ্যাঁ! শীতকাল ঠান্ডা ঠান্ডা ফিল করছি।”

-“আরে বোকা! ঠান্ডা ঠান্ডা ফিল করার কথা বলি নি।”

-“তো?

-“প্রেম প্রেম ফিল। আমার মনে হয় বৃত্ত ভাইয়া তোমার হাতের থা”প্প”ড় খেয়ে ঠাস ঠাস করে তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছে। তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে।”

-“ওনার মতো মানুষ না কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য,না কাউকে ভালোবাসার যোগ্য।এটাকে ভালোবাসা বলে না সিমরান।ভালো মানুষ সাজা বলে।”

-“তাহলে বৃত্ত ভাইয়া এতো রিয়েক্ট কেন করলো?তবে ইংলিশ আপাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে।দু চার ঘা দিলে আরো খুশি হতাম।”

-“ঐ যে বললাম ভালো মানুষ সাজতে। আচ্ছা বাদ দাও এদের কথা।”

-“দোয়া আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে চলো না দুইজনে ক্যান্টিনে গিয়ে কিছু খেয়ে আসি।”

-“ঠিক আছে চলো।তবে আমি বাইরের কিছু খাই না। তুমি একাই খেয়ো।”

-“তাহলে আমি আর খাবো না।একা একা খেতে ভালো লাগে না। তুমি বরং চলো একেবারে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিব।”

-“ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ। সাবধানে যেও।”

-“সেম টু ইউ।বাই দ্যা ওয়ে তোমার ফোন নাম্বার টাই তো নেওয়া হলো না। বান্ধবী হিসেবে আমি কি তোমার ফোন নাম্বার পেতে পারি?”

-“অবশ্যই এই নাও।”

-“ধন্যবাদ দোয়া। বাসায় পৌছে ফোন দিবো কেমন।”

-“ওকে”

-“দোয়া বাসায় ফিরতেই ছোঁয়া এসে জরিয়ে ধরলো।”

-“কি হলো টিয়া পাখি?”

-” এতোক্ষণে আসার সময় হলো তোমার ?”

-“আরে বাবা আমার ক্লাস শেষ করে তারপর তো আসবো।”

-“তুমি বাসায় না থাকলে বাসা একদম ফাঁকা ফাঁকা লাগে। খুব মিস করি তোমাকে গাল ফুলিয়ে বললো ছোঁয়া।”

-” আমি ও মিস করি তো । আচ্ছা টিয়া পাখি বাসায় আজ কি ভালোমন্দ রান্না হয়েছে?এতো ভালো ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে। আমি বাইরে থেকে ও খাবারের ঘ্রান পেয়েছি।”

-“কি জানি আম্মা কি রান্না করছে? আমাকে আজ কিচেনে যেতেও দেয় নি।হয়তো স্পেশাল কিছু রান্না করছে।”

-“কেন কেউ আসবে নাকি?”

-“আপু তুমি ভুলে গিয়েছো আব্বাকে স্কুল থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল। গতকাল ট্রেনিং শেষ হয়েছে।আজ আব্বা বাসায় ফিরবে।”

-“সরি পাখি! আমার খেয়াল ছিলনা।”

-“দোয়া মা তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নামাজ পড়ে নে। আমি খাবার বাড়ছি । কিচেন থেকে চেঁচিয়ে বললেন শাহিনা বেগম।”

-“ঠিক আছে আম্মা।”

-“দোয়া নামাজ শেষ করে দেখলো শাহিনা বেগম প্লেটে ভাত নিয়ে বসে আছেন। খাবার দেখেই দোয়ার ক্ষুধা যেন দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেল। শাহিনা বেগম কে বললো, আম্মা তাড়াতাড়ি খাইয়ে দেন তো।এতো ভালো খাবার দেখে পেট আর কোন কথাই শুনছে না।”

-“নে হা কর আমার বুড়ি খুকি মেয়ে।”

-“আমি সারাজীবন আপনার বুড়ি খুকি হয়ে থাকতে চাই আম্মা। আপনার হাতের খাবার আমার কাছে অমৃত মনে হয়। প্রত্যেক টা আইটেম সুস্বাদু হয়েছে।বিশেষ করে এই পায়েস টা।”

-“বল তো কিসের পায়েস খেলি?”

-“লাউয়ের”

-“জ্বি না। তুই যে সারাজীবন মুলা দেখে নাক সিঁটকাতি আজ সেই মুলার পায়েস খেয়েই অমৃতের স্বাদ পেলি।”

-“আপনি কি বলছেন আম্মা?মুলার পায়েস ও এতো সুস্বাদু হয়? কিভাবে রান্না করেছেন আম্মা? আমাকে ও একটু শিখিয়ে দিবেন।”

-“আমরা লাউয়ের পায়েস যেভাবে রান্না করি সেম এক‌ই ভাবে মুলার পায়েস রান্না করতে হয়। শুধু লাউয়ের পরিবর্তে মুলা দিতে হয়।তুই ও শিখে রাখ তোর শ্বশুর শ্বাশুড়ি কে রান্না করে খাওয়াবি।”

-“আমার সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না মুলার পায়েস ও এতো মজা লাগে?”

-“খেয়েই তো বুঝতে পারলি।”

-“হুম”


‌।




বৃত্ত বাসায় ফিরে ঝর্না আবরার কে দেখতে না পেয়ে জামেলা কে জিজ্ঞেস করলো, বুয়া মম কোথায়?মম কে দেখছি না যে?”

-“মুই তো ক‌ইবার পারুম না ভাইজান।মুই ফোনের মধ্যে মাইয়াগো নাচোন দেখতিছিলাম।”

-“তোমার তো সারাদিন শুধু ঐ এক কাজ। ফোনের মধ্যে মাইয়াগোর নাচোন দেখা। আজকেই তোমার নাচ দেখা বন্ধ করার ব্যবস্থা করছি। ”

-“কি অরবেন ভাইজান?”ওয়াইফাই লাইন ছিঁ”ড়ে দিবেন?দিলে দেন গা।মুই ফোনে এমবি ঢুকাই তারপর আবার মাইয়াগোর নাচোন দেখবানি হু।”

-“তোমার সাথে কথা বলাই বেকার। যত্তসব ফালতু লোক বলেই বৃত্ত ঝর্না আবরার কে ডাকতে ডাকতে তার রুমে গিয়ে দেখলো ঝর্না আবরার একটা ছবি নিয়ে বসে বসে চোখের পানি ফেলছে।বৃত্ত গিয়ে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,মম তুমি আবারো মামনির কথা ভেবে চোখের পানি ফেলছো?আমরা কম তো খুঁজি নি তাকে বলো? কিন্তু প্রতি বার ফলাফল শূন্য হয়েছে।মামনির কোন সন্ধান মেলে নি। তুমি আর কতো মামনির জন্য কষ্ট পাবে বলো তো?

-“কি করবো বেটা?সে যে আমার ক”লি”জা”র একটা অংশ ছিল। আমি চাইলেও যে ভুলতে পারি নি।তার সাথে দশ বছর একসাথে চলেছি, একসাথে বড় হয়েছি।কতোশত স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে তোমার মামনির সাথে।এতো সহজে কি ভোলা যায়? আমার ছোট একটা ভুলের জন্য আজ বিশ‌ বছর আমি তাকে হারিয়েছি।জানি ও না সে কোথায় আছে? কেমন আছে?”

-“আমি জানি তুমি মামনি কে কতোটা ভালোবাসো। মাঝে মাঝে মামনির প্রতি তোমার ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই।”

-“তুমি কি ফ্রি আছো বেটা?”

-“হ্যাঁ । কেন মম?”

-“তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে ।”

-“কোন বিষয়ে?”

-“তোমার বিয়ের।”

চলবে ইনশাআল্লাহ….

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here