#ভালোবাসি_প্রিয়_২ (১০)
#লেখিকা_অপরাজিতা_রহমান
-“দোয়া দুই তলায় আসতেই হঠাৎ করে ফ্লোরে পিচ্ছিল জাতীয় কিছুর উপর পা লেগে পড়ে যেতেই কোন এক বলিষ্ঠ হাতের বাঁধনে আটকা পড়ে গেল। দোয়া হাতের অধিকারী মানুষ টা কে দেখতে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। দোয়া তার সামনে থাকা মানুষ টাকে কখনো এইখানে আশা করে নি। দোয়া অনেক বেশি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ইংলিশ আপা আপনি এইখানে?”
-“ইয়েস আই অ্যাম।”
-“কিন্তু আপনি তো আমাকে শত্রু মনে করেন।আর শত্রুকে কেন পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁ”চা”তে সাহায্য করলেন?”
-“বিন্দু কিছু বলতে যাবে তার আগেই বৃত্ত এসে বললো ,কাম অন বিন্দু।এতো দিন তোকে আমার বন্ধু মনে করে এসেছি, কিন্তু আজ তুই আমার শত্রুর মতো কাজ করলি।”
-” ইউ ট্রাস মি বৃত্ত ,আই ডোন্ট নো হোয়াট আই ডিড ?”
-“হ্যাঁ তুই জানিস না। কিন্তু না জেনেই আজ আমার শত্রুকে সাহায্য করেছিস?
-“তোর কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। একটু ক্লিয়ার করে বল বৃত্ত। তাছাড়া আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি বৃত্ত।আমি ডিসাইড করেছি ঐ গাইয়া মেয়ে উপস্ সরি দোয়ার কাছে ক্ষমা চাইবো। পরক্ষণেই ইংলিশ আপা মনে মনে বললো, তুই কি ভেবেছিস আমি ঐ গাইয়া মেয়েকে ক্ষমা করে দিব।নো ওয়ে বৃত্ত। আমি এইভাবে লোক দেখানো সাহায্য করে তোর মনে আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবো যাতে ওর কোন ক্ষতি করলে আমাকে তুই ভুলেও সন্দেহ করতে না পারিস।তারপর ঐ দেড় ফুট মেয়েকে এমন শিক্ষা যা ও কল্পনা ও করতে পারবে না।
-“ফ্লোরে এই পিচ্ছিল জাতীয় মেডিসিন আর কেউ নয় আমি ফেলে রেখেছি ঐ দেড় ফুট কে শাস্তি দেওয়ার জন্য।আজ যদি মিস দেড় ফুট এই খানে স্লিপ খেয়ে পড়ে যেত নিশ্চিত কোমড় ভেঙ্গে বিছানায় শুয়ে থাকতো। তাহলে আমার ভার্সিটি তে এসে এই দেড় ফুট মেয়েটাকে চোখের সামনে দেখতে হতো না।এই মেয়েটাকে আমি যতবার দেখি ততবারই আমার ওর দেওয়া থা”প্প”ড়ে”র কথা মনে পড়ে যায়।আর তখনই আমার ভেতরের আগুন জ্বলতে থাকে।”
-“ইদানিং তুই হিসাববিজ্ঞানের ম্যাথ হয়ে গিয়েছিস। আমি চাইলেও তোকে বুঝতে পারছি না বৃত্ত। তুই ঠিক কি করতে চাইছিস আমাকে একটু বলবি?এই তো সেদিন ঐ গাইয়া মেয়েটার মাথায় ডিম ছুড়েছিলাম বলে আমাকে যা নয় তাই বলে অপমান করলি । এমনকি আমাকে মে”রে ফেলার ও হুমকি দিলি।আজ আবার নিজেই ওর কোমর ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখার প্লান করলি?”
-“দোয়া এতক্ষণ নিরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে সবটা শুনছিলো । দোয়া ভাবতেও পারে নি বৃত্ত এই রকম কিছু করবে। দোয়া এসে বৃত্তকে বললো, ছিঃ আমি ভাবতেও পারিনি আপনি আমার উপর প্রতিশোধ নিতে এমন কিছু করবেন। আমি ভেবেছিলাম হয়তো আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু না।আসলে শিক্ষিত হলেই মানুষ হওয়া যায় না। মানুষ হতে গেলে তার ভেতর মনুষ্যত্ব বোধ থাকা লাগে। কিন্তু আপনার ভেতরে কোন মনুষ্যত্ব বোধ নেই। ”
-“হা হা হা। তোমার সাথে একটু ভালো ব্যবহার করে ছিলাম বলে তুমি ভেবেছো আমি আমার অপমানের কথা ভুলে গিয়েছি।নো মিস দেড় ফুট। তোমার দেওয়া থা”প্প”ড়ের কথা মনে পড়লে প্রতিনিয়ত আমার ভেতরের হিংস্রতা বৃদ্ধি পায়।সেই থা”প্প”ড়ে”র ভিডিও দেখে আগে যারা আমাকে দেখে ভ”য়ে কাঁপতো তারা এখন আমাকে দেখে হাসাহাসি করে। তখন মনে হয় কি জানো তোমাকে জাস্ট পুঁতে দেই। কিন্তু না ! তোমাকে মে”রে দিলে গল্পটা তো জমবে না। তোমাকে আমি তিলে তিলে মারবো।”
-“একটা প্রবাদ আছে জানেন?যদিও আমি আপনাদের মতো এতো ইংরেজি জানি না তবুও যাকে ইংরেজিতে বলে Barking dog seldom bites।আর বাংলাতে বলে যত গর্জে তত বর্ষে না। আপনার অবস্থা ও হয়েছে সেই রকম।তবে আপনার মধ্যে যথেষ্ট শিক্ষার অভাব রয়েছে।আমার তো আফসোস হয় সেই মায়ের প্রতি যে আপনার মতো সন্তান কে গর্ভে ধারণ করেছিলো?কেমন মা তিনি,যিনি তার সন্তান কে সঠিক ভাবে শিক্ষা দিতে পারে নি?”
-“ইউ ব্লাডি গার্ল তোমার সাহস হয় কি করে আমার মমের সম্পর্কে বলার, বলেই দোয়া কে থাপ্পড় মা”রা”র জন্য হাত উঠাতেই অভি এসে বৃত্তের হাত ধরে ফেলে বলে পাগল হয়ে গেছিস তুই বৃত্ত?
-“হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি অভি।এই দেড় ফুট মেয়ে শুধু আমাকে অপমান করেই ক্ষ্যান্ত হয় নি।এখন আবার আমার মমের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।”
-“কি হচ্ছে এইখানে? রাগান্বিত স্বরে প্রশ্ন করলেন প্রিন্সিপাল স্যার?আর বৃত্ত তুমি নিশ্চয় আমার কোন ঝামেলা শুরু করেছো।দেখ বৃত্ত তুমি হতে পারো মালিকের ছেলে তাই বলে এই ভার্সিটি তে এসে যা খুশি তাই করতে পারবে না। তোমার বাবা সামিউল আবরার আমাকে কল করে জানিয়েছেন , তুমি যদি ভার্সিটি তে এসে আর কোন প্রকার ঝামেলা করো তোমাকে যেন সোজা আমি পুলিশে দিয়ে দেই।আর নেক্সট টাইম আমি তাই করবো।মাইন্ড ইট।আর হ্যাঁ কিছু দিন পরে তোমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা।তাই এখন আর ভার্সিটিতে এসে বখাটে পানা না করে পড়াশোনা তে মনোযোগী হও। নিজেকে সংশোধন করে নাও।এতেও তোমার ও তোমার পরিবারের ভালো হবে।আর দোয়া তুমি ও ক্লাসে যাও। এক্ষুনি তোমাদের ইতিহাস ক্লাস শুরু হবে।”
-“জ্বি স্যার।”
-“দোয়া ক্লাসে প্রবেশ করার পাঁচ মিনিট পরে সিমরান এসে দোয়া কে হাগ করে বললো,গুড মর্নিং দোয়া।”
-“দশ টা বাজে আর এখন তুমি গুড মর্নিং বলছো?
-“দোয়া ! তুমি তো গ্ৰামে থাকো তাই তোমাদের কাছে সকাল মানে ছয় টা থেকে সাত টা। কিন্তু শহরে দশ টাই ও সকাল হয় না। অবশ্য চাকরিজীবীদের কথা আলাদা।যারা বেকার ঘুরে বেড়ায় হয়তো তারা এখনো ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু যে যায় বলুক আমার গ্ৰামের পরিবেশ খুব ভালো করে। আমি তো ভেবেছি পরীক্ষা শেষ করে তোমাদের গ্ৰামে ঘুরতে যাবো।নিবে তো আমাকে তোমাদের গ্ৰাম দেখাতে?”
-“ইনশাআল্লাহ খুব শ্রীঘ্রই নিয়ে যাবো।”
-“ধন্যবাদ দোয়া। লাভ ইউ।”
-” লাভ ইউ অফুরন্ত।”
-“কিছু ক্ষণের মধ্যে ক্লাসে ইতিহাস ম্যাম প্রবেশ করলো।
আজ ম্যাথের টিচার না থাকায় তিন টা ক্লাস হলো । দোয়া ক্লাস শেষ করে ক্লাস রুম থেকে বের হতেই ইংলিশ আপা এসে বললো,জানো দোয়া এই পৃথিবীতে আমার আপন বলতে শুধু পাপা আছে। আমি খুব ছোট থাকতে আমার মম মা”রা যায়। তোমার মতো একটা বোনের খুব আফসোস করি আমি। তুমি কি আমার বোন হবে দোয়া? দোয়া আমি জানি তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না।আর বিশ্বাস করবেই বা কিভাবে?আমি যে তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি।বড় বোন মনে করে কি আমাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় না দোয়া?”
-“দোয়া কিছু বলার আগেই সিমরান দোয়া কে একটু সাইডে নিয়ে গিয়ে বললো, দোয়া এই ইংলিশ আপাকে আমার মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। এসব ওর নাটক। তুমি ওর মিষ্টি কথায় চিড়া ভিজিয়ো না।”
-“দেখ সিমরান , ক্ষমা করা মহৎ গুণ। ক্ষমা মানুষ কে শুদ্ধ করে, পরিশোধিত করে, আলোকিত করে।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,”যে প্রতিশোধের শক্তি থাকার সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেয়, সে আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়।”
-“তার মানে তুমি ইংলিশ আপা কে ক্ষমা করে দিবে?”
-“হ্যাঁ।একটা সুযোগ দেওয়াই যায়।”
-“ঠিক আছে দোয়া তুমি যা ভালো মনে করো।”
-“দোয়া গিয়ে ইংলিশ আপা কে বললো, আপনার প্রতি অভিযোগ নেই আমার। আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম।”
-“ইংলিশ আপা দোয়া কে জরিয়ে ধরে বললো, ধন্যবাদ দোয়া। তুমি আসলেই অনেক বড় মনের মেয়ে। এরপর ইংলিশ আপা মনে মনে বললো, তোমার এই ভালো মানসিকতাই তোমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে দোয়া।”
–
–
–
–
দোয়া বাসার সামনে এসে দেখলো অনেক গুলো অপরিচিত জুতা।মনে হচ্ছে বাসায় কোন আত্মীয় এসেছে। দোয়া কলিং বেল দিতেই ছোঁয়া এসে দরজা খুলে দিলো।”
-“টিয়া পাখি বাসায় কেউ এসেছে নাকি?বাইরে অনেক গুলো অপরিচিত জুতা দেখলাম।”
-“হ্যাঁ আপু তোমাকে দেখতে এসেছে।”
-“মানে কি?”
-“তোমার বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে আপু।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।