ভালোবাসি প্রিয় পর্ব -০৮

#ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব:০৮
#অপরাজিতা_রহমান

আপনাকে তো আমি ভালো মনে করেছিলাম আর আপনি কি না অ*স*ভ্য*তা*মি শুরু করেছেন?বিয়ের দুই দিন পার হবার আগেই আসল চেহারা দেখিয়ে দিচ্ছেন।

কুয়াশা লেট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। তাড়াতাড়ি শাড়ি খুলে বোরকা পড়ে নাও। তোমাকে সেদিন বোরকা কেন দেওয়া হয়েছিল?আলমারিতে তুলে রাখার জন্য?

এই রে, আমার তো বোরকার কথা মনেই ছিল না। তারমানে রাজ বোরকা পরার জন্য শাড়ি খুলতে বলেছিল,আর আমি কি না‌! ছিঃ কুয়াশা ছিঃ আই হেইট ইউর ডার্টি মাইন্ড।

তুমি কি অন্য কিছু মিন করেছিলে কুয়াশা? অবশ্য তুমি যদি চাও শ্বশুরবাড়ি গিয়ে তোমার অন্য কিছু মিন করা টা‌ ও পূরন করে দিতে পারি।

আপনি দেখছেন আমি লজ্জা পাচ্ছি তারপর ও এসব কথা বলছেন। আসলে আপনি একটা অ*স*ভ্য , ঠোঁট কা*টা , লাগামহীন লোক।

শুধু আমি নই। পৃথিবীর সব স্ত্রীদের কাছে তার স্বামী অ*স*ভ্য ঠোঁট কা*টা লাগামহীন হয়ে থাকে।আর জানো তো স্ত্রীর সাথে মজা দুষ্টুমি খুনসুটিতে মেতে থাকাও সুন্নত। হিজাব বাঁধতে পারবে তো, নাকি আমি সাহায্য করবো?

তার কোন প্রয়োজন নেই। আমি পারব। আমি তাড়াতাড়ি করে বোরকা পড়ে হিজাব টা কোন মতো বেধে নিলাম।
বোরকা পরে নিজেকে বুড়ি বেটি লাগছে, অসহ্য গরমে গা গুলিয়ে আসছে। তাহলে মেয়েরা হাত মুজো পা মুজো পড়ে কিভাবে থাকে? রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখি বাবা পাঁচ কেজি মিষ্টি, ইয়া বড় বড় দুইটা মাছ,আরো বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফলমূল‌,পান‌ সুপারি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এসবের কি দরকার ছিল বাবা?

দরকার আছে মা।রাজ প্রথমবারের মতো শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে ,খালি হাতে গেলে হয় নাকি?

রাজ এসে বলল,বাবা গাড়ি পাঠিছে তাড়াতাড়ি চলো।

আম্মা, বাবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।বিদায় বেলা আম্মা আমাকে জ*রি*য়ে ধরে কপালে চু*মু দিয়ে বললেন, সাবধানে যেও মা। নিজের খেয়াল রেখ।

ঠিক আছে আম্মা। আপনি ও নিজের খেয়াল রাখবেন।সময় মতো ঔষধ খাবেন।
বাবা , আম্মার থেকে বিদায় নিয়ে দেখি রাজ আগে থেকেই গাড়িতে বসে আছে। আপনার তো শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার খুব তাড়া দেখছি।

প্রথম বিয়ে প্রথম শ্বশুর বাড়ি তাড়া তো একটু থাকবেই। দ্বিতীয় বিয়ে, দ্বিতীয় শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় এতো তাড়া এতো ইন্টারেস্ট থাকবে না।

লিসেন্ট মি.রাজ আপনার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নাই , শুধুমাত্র বাবার কথায় আপনাকে বিয়ে করেছি। তাই আপনি মনে করবেন আপনার দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা শুনে অন্য মেয়েদের মতো আমি ও কান্নাকাটি করে চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলব। আপনি ২ টা কেন ১০ বিয়ে করুন,তাতে আমার কিছু যাবে আসবে না।

এতো হাইপার হচ্ছো কেন?তুমি যে ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো, আমার তো মনে হয় তুমি আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো। মেয়েদের বুক ফাটে কিন্তু মুখ ফুটে না। একবার মুখ ফুটে বলে দিলেই তো হয় ভালোবাসি প্রিয়।

আপনি জানেন আমার জন্য কত হাই লেভেলের ছেলেরা পা**গল। ভাবলেন কি করে আমি আপনার মতো থার্ড ক্লাস লোকের প্রেম পড়ব ? নিজেকে কখনও আয়নায় দেখেছেন? মুখ ভর্তি দাড়ি।আস্ত জংলি ভুত একটা। একটু ভালো ব্যবহার করেছি আর আপনি ধরে নিলেন আমি আপনার প্রেমে পড়েছি।হাও ফানি!

দেখ কুয়াশা দাড়ি নিয়ে বাজে কথা বলার কোন রাইট নেই তোমার। দাড়ি না রাখলে গুনা হবেনা কিন্তু রাখলে এর অনেক উপকারীতা আছে। দাড়ি রাখা পার্সোনাল বা ব্যাক্তিগত সুন্নত নয়। আল্লাহ এর সম্পর্কে জানিয়েছেন বলেই প্রত্যেক নবীগন এবং সাহাবীরা দাড়ি রাখতেন। নবী (সঃ) কোনো কিছু করতে বলা মানে ওয়াজিব-সুন্নাত। আর ওয়াজিব-সুন্নাত মানেই “অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য”।

হিযবুতে ত‌ওহীদের মুখোস খোলা: Part-4
Trying to open Hizvut Taohid masks: pt-4

হাদীস শরীফে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দশটি বিষয় সকল নবী-রাসূলগণের সুন্নাত। তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং দাড়ি লম্বা করা অন্যতম।’ (সহীহ মুসলিম শরীফ: ১/১২৯) এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে নবীর সুন্নাত হিসেবে দাড়ি রাখার গুরুত্ব অনেক।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর ( রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুশরিকদের বিরোধিতা করো, দাড়ি লম্বা কর, আর গোঁফ ছোট কর।’ (সহীহ বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫, সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ৬২৫)

নবী কারীম (সা.) যা করতেন এবং যা বলতেন তার সবকিছুই মহান আল্লাহর তরফ থেকে নির্ধারিত ছিল। মহান আল্লাহ আদেশ ব্যাতীত তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতেন না আর নিলেও তা পবিত্র আল কোরআনের ভিত্তিতে যেখানে আল্লাহর বাণী দেয়া আছে।

দাড়ি না রাখার অনেক কুফল রয়েছে। কারণ দাড়ি যদি কেউ না রাখে তার দ্বারা ইসলামের অনেক বিধান লঙ্ঘিত হয়। যেমন-
(১) দাড়ি না রেখে রাসূলের অবাধ্যতা করা হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘গোঁফ ছোট করো এবং দাড়ি লম্বা করো।’ (বুখারি, মুসলিম ও অন্যান্য)
(২) দাড়ি না রেখে মহান আল্লাহর অবাধ্যতা করা হয়। কারণ: মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন যে-
‘যে রাসূলের আনুগত্য করলো, সে আল্লাহরই আনুগত্য করলো।’ (সূরা নিসা, আয়াত-৮০)
(৩) মহানবী (সা.) দাড়ি রাখতেন এবং তার উম্মতকেও রাখতে বলতেন আর তাই কেউ যদি দাড়ি না রাখে সে রাসূলের পথ থেকে বিচ্যুতি হয়ে গেল।
(৪) যে দাড়ি রাখে না সে মুমিনদের পথ থেকে বিচ্যুত। মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ১১৫নং আয়াতে বলেন যদি কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে তাহলে তার জায়গা হবে জাহান্নাম।
(৫) দাড়ি মুসলিমদের কাফিরদের থেকে আলাদা হিসেবে চিন্হিত করে। তাই দাড়ি রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের ঝ*গ*ড়া দেখে ড্রাইভার কাকু বললেন,
মামনি , তোমাদের ঝ*গ*ড়া শেষ হলে ব‌ইলো আমি ততক্ষণে একটু ঘুমিয়ে নেই। পাক্কা ৩০ মিনিট ধরে দুইজনে ঝগড়া করে চলেছ, একজন গাড়ির ভেতর থেকে , অন্য জন গাড়ির বাইরে থেকে।তবে সমস্যা নেই মামনি, আমি এতোক্ষণ বাইরে ছিলাম তোমাদের ঝগড়া শুনি নি।

ঠিক আছে চলুন কাকু।
গাড়ি চলতে শুরু করেছে আপন গতিতে। গাড়িতে আর কারো সাথে কারোর কোন কথা হলো না।রাজকে দেখি ব‌ই বের করে পড়া শুরু করে দিয়েছে।আর আমি ফোনে গেমস খেলতে লাগলাম। অবশেষে দুই ঘণ্টা জার্নি করে বাসায় পৌঁছালাম ।২ ঘন্টার জার্নিতে গরম আর অস্বস্তি তে বাসায় এসেই ব*মি করে দিলাম।এর‌ই মধ্যে দেখি বর দেখার জন্য পাড়া প্রতিবেশীরা দলে দলে চলে আসছে। আমার এই অবস্থা দেখে পাশের বাসার এক ভাবি বলে উঠলো, হ্যাঁ রে কুয়াশা বিড়াল কি বাসর রাতেই মে*রে*ছি*স? আমরা তো ভেবেছিলাম তুই মনে হয় তোর বরকে মেনে নিতে পারবি না‌। নাকি এতো সুন্দর বর দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিস নি?

আমি কিছু বলার আগেই শীতল বলে উঠলো, এসব কি ধরনের কথা ভাবি? বুঝতে পারছি আপনি কুয়াশা কে লজ্জা দিতে এসব কথা বলছেন। কিন্তু হাসি ঠাট্টার ছলেও কারো মনে আঘাত দিয়ে কথা বলা উচিত নয়।

তোরা দেখি মজা ও বুঝিস না রে শীতল। নতুন নতুন বিয়ের পরে ভাবিরা এমন একটু আধটু মজা করে থাকে।এই চল তো তোরা । যারা ইয়ার্কি, ঠাট্টা বোঝে না, তাদের এসব বলে কোন লাভ নেই।

বাসায় জামাই আদরের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পিঠা পুলি থেকে শুরু করে নানারকম ফল , নুডুলস, সেমাই টি টেবিলে নাস্তার জন্য দেওয়া হয়েছে।
এর‌ই মধ্যে রাজ বললো,বাবা আমার তাড়া আছে। আমাকে ফিরতে হবে। কুয়াশা কিছু দিন থাক। তারপর না হয় আপনি গিয়ে দিয়ে আসবেন।

আমি তোমার সিদ্ধান্ত মানতে পারলাম না বাবা। দুইজন একসাথে আসছো একসাথে যাবে।

আমার ছুটি শেষ হয়ে গিয়েছে। আগামীকাল থেকে আবার জয়েন করতে হবে।

তুমি পারোও বটে! নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে ও তোমার ছুটি নিতে হয়? আমি আর কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না। তুমি কোথাও যাচ্ছ না ব্যাস।

ঠিক আছে বাবা। আমি দেখছি কি করা যায়!

রাজের ব্যাপার টা আমার কাছে ধোঁয়াশা থেকেই গেল। নিজের প্রতিষ্ঠান মানে কি? তাহলে কি বাবা রাজের সম্পর্কে আমার থেকে কিছু লুকিয়েছে?

আম্মু আমার ফাইল টা কোথায় রেখেছিলে? খুঁজে পাচ্ছি না। একটু তাড়াতাড়ি আসো তো।

তোকে কতবার করে বললাম, এখন চাকরি হয়েছে একটা বিয়ে কর। বয়স তো আর কম হচ্ছে না। আমি একা হাতে আর কত সামলাতে পারি বল তো?

সবেমাত্র জয়েন করলাম। নিজেকে একটু গুছিয়ে নেই, তারপর না হয় বিয়ের কথা ভাবা যাবে।

তোর বাবার একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছিল।পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে মেয়েটা তোর বাবার পুরনো বন্ধুর মেয়ে। আমারা তোর জন্য যেমন‌ মেয়ে খুঁজছিলাম একদম সেইরকম।নম্র ভদ্র নামাজি পর্দাশীল।এই বাড়ির জন্য যোগ্য একটা মিষ্টি মেয়ে।

আম্মুর মুখে পর্দাশীল কথাটা শুনে সেদিনের রাস্তার মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেল।মেয়েটার মাঝে যেন আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম।চোখ ছাড়া আর কিছু দেখা যায় নি। কিন্তু সেই চোখে আমি দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।‌ “প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।”
[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]

চলবে ইনশাআল্লাহ….

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here