ভালোবাসি প্রিয় পর্ব -০৭

#ভালোবাসি_প্রিয়

পর্ব:০৭
#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)

একি! সকাল সকাল কি শুরু করেছেন? আমি কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম আমার একজন বিসিএস ক্যাডারের সাথে বিয়ে হচ্ছে। চারিদিকে লাইটিং, জমকালো আয়োজন,নাচ ,গান, প্রেস মিডিয়ার লোকজন আমার ছবি তুলছে ,লাইভ ভিডিও চলছে,সব মিলিয়ে একটা টানটান উত্তেজনা। কিন্তু যখনই কবুল বলতে যাব তার আগেই আপনি চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে ঘুম টা ভাঙ্গিয়ে দিলেন।

নাক ডেকে তো ঘুমোচ্ছিলে। কতবার ডেকেছি সেই হিসাব আছে তোমার?

একদম মিথ্যা কথা বলবেন না। আমি মোটেও ‌নাক ডাকি না।বরং আপনার নাক ডাকার শব্দে আমি সারারাত ঘুমতে পারি নি। যখন ই একটু চোখ লেগে ‌আসল আমি স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম, তখনই আপনি আমার ঘুমটা ভাঙ্গিয়ে দিলেন।

ঠিক আছে। এবার তোমাকে ফোনে রেকর্ড করে রেখে শোনাব‌ কে নাক ডাকে? এখন তাড়াতাড়ি উঠে নামাজ পড়ে নাও।

প্লিজ এখন আর একটু ঘুমোই। এতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস নেই আমার । আমি দুপুর থেকে নামাজ পড়ব। ফজরের নামাজ না পড়লে কি এমন হবে?

ফজরের নামায পড়ার ১০টি ফজিলতের কথা হাদিসে এসেছে।

১। ফজরের নামাজ মুমিন ও মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্যকারী, কেননা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুনাফিকের জন্য ফজরের নামাজ আদায় কষ্টকর””
(বুখারী ৬৫৭, ৬৪৪, ২৪২০, ৭২২৪ মুসলিম–৬৬১)

২। রাসূল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে, সে ব্যক্তি ঐ দিন আল্লাহর জিম্মায় চলে যায়।
অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ তালা ঐ ব্যক্তির দায়িত্ব নেন।
(সহিহ মুসলিম, তিরমিজি–২১৮৪)

৩। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহর ফেরেশতাগণ আল্লাহর কাছে ঐ ব্যক্তিকে ভালো মানুষ হিসেবে সাক্ষী দিবে।
(বুখারী-মুসলিম)

৪। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,”যে ব্যক্তি ফজর নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে, আল্লাহতালা তার আমলে দাঁড়িয়ে সারারাত নফল নামাজ আদায়ের সওয়াব দিয়ে দেন! (সহিহ মুসলিম-১০৯৬)

৫। রাসূল সাঃ বলেছেন,”যে ব্যক্তি ভোরে হেঁটে হেঁটে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে প্রবেশ করবে, আল্লাহতালা কিয়ামতের দিন তার জন্য পরিপূর্ণ আলো দান করবেন।
(আবু দাউদ -৪৯৪, তিরমীযি)

৬। যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত দান করবেন।
অথাৎ সে আল্লাহর দিদার লাভ করবে, এবং জান্নাতি ঐ ব্যক্তি আল্লাহকে পূর্নিমার রাতের আকাশের চাঁদের মত দেখবে।
(বুখারী-৫৭৩)

৭। যে নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায় করবে, সে কখোনোই জাহান্নামে প্রবেশ করবেনা।
(সহিহ মুসলিম ৬৩৪)

৮। ফজরের নামাজ আদায়কারী, রাসূল (সাঃ) এর বরকতের দোয়া লাভ করবেন।
(সুনানে আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

৯। ফজরের দু রাকাত ফরজ নামাজ, দুনিয়া ও তার মাঝে যা কিছু আছে তারচেয়ে উত্তম।
(সহিহ মুসলিম–১২৪০)

১০। ফজরের নামাজ আদায়ের ফলে ব্যক্তির মন ফুরফুরে, প্রফুল্ল হয়ে যায়।
(সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম)
এবার বুঝতে পারলে ফজরের নামাজ মিস করলে কতগুলো ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবে।

হুম ঠিক আছে যাচ্ছি।
কতোদিন পর যে নামাজ পড়লাম নিজেও জানি না।তবে নামাজ পড়ে অন্য রকম একটা প্রশান্তি অনুভব করলাম। বাসায় এখন কেউ নেই।বাবা আর রাজ নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছে, আম্মা ডায়াবেটিস এর রোগী নামাজ পড়ে হাঁটতে বেরিয়েছে, নাদিয়া আপু ও শ্বশুরবাড়ির চলে গিয়েছে। পুরো বাসা একদম ফাঁকা।একা একা বোরিং ফিল করছিলাম। ভাবলাম ছাদ থেকে একবার ঘুরে আসি। ছাদে আসতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ।ছাদ তো নয় ছোট খাটো একটা বাগান বলা চলে। ছাদের একপাশে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ।অন্য পাশে বড় বড় ড্রামের ভেতর মাটি দিয়ে লাউ গাছ, কুমড়া গাছ, বরবটিসহ আরো বিভিন্ন ধরনের সবজি লাগানো হয়েছে।

একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন?

রাজের কথায় পিছনে ফিরে মনে হল একটা সদ্য ফোঁটা সাদা গোলাপ দেখলাম। সাদা পাঞ্জাবি, সাদা টুপিতে অনেক মোহনীয় লাগছে।

কি হলো কিছু জিজ্ঞেস করেছি?

তেমন কিছু না । একা একা বোরিং লাগছিল তাই ছাদে আসলাম। ছাদে এসে অবাক হয়েছি এতো সুন্দর একটা বাগান দেখে।

শুধু কি বাগানটাই সুন্দর? বাগানের মালিক সুন্দর নয়?

ওমা আপনি কি নিজেকে সুন্দর মনে করেন?

অবশ্যই। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,”নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম সুন্দর আকৃতিতে”।[সুরা ত্বীন আয়াত:০৪]
বাবা ফোন করেছিলেন। আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে। তুমি নাস্তা করে রেডি হয়ে নিও। আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে চলে আসব।

কেন আপনি থাকবেন না?

না। ৩ দিনের ছুটি ছিল ।আজ ছুটি শেষ। আগামীকাল থেকে আবার জয়েন করতে হবে। নিচে চলো। এখন ওয়েদার চেন্জ হচ্ছে , ঠান্ডা লাগতে পারে।

হুম। নিচে এসে দেখি আম্মা কিচেনে রান্না করছে।

আমাকে দেখে আম্মা বললেন,একি মা! তুমি এতো সকাল সকাল উঠেছ কেন?

আমি উঠি নি। আপনার ছেলে নামাজ পড়ার জন্য আমার চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে উঠিয়েছে।অ*স*ভ্য লোক একটা‌। আচ্ছা আম্মা আপনি তো অসুস্থ , তাহলে বাসায় কাজের জন্য একটা মহিলা রাখেন না কেন?

আমার বাড়তি কাজের লোকের প্রয়োজন হয় না মা। সব কাজে রাজ,রাজের বাবা আমাকে সাহায্য করে। বিয়ের প্রথম প্রথম যখন রাজের বাবা যখন বাসার কাজে আমাকে সাহায্য করত ,লোকে দেখে হাসাহাসি করত ,উনাকে ব‌উ পা*গ*ল বলত। আমি অনেক বার বারন করেছি ,সে শুনবে না।সে বলে,ব‌উয়ের কাজে সাহায্য করা সুন্নত।আর সুন্নত আদায় করতে যদি আমাকে ব‌উ পা*গ*ল শুনতে হয়,শুনব আমার কোন সমস্যা নেই।

বাবা আপনাকে অনেক ভালোবাসে বুঝি?

বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন। ভালোবাসা আপনার আপনি হয়ে যায় মা।

আমি কি আপনাকে সাহায্য করব?

না ,না মা। তার কোন প্রয়োজন নেই। তুমি এসব কাজে অভ্যস্থ ন‌ও। তুমি বরং দেখ আমি কিভাবে রান্না করি?

ঠিক আছে।

ডাইনিং টেবিলে আমি ,রাজ ,বাবা খেতে বসেছি,আর আম্মা খাবার পরিবেশন করছে। আমি না খেয়ে শুধু ভাত নাড়াচাড়া করছি।আম্মা ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বললেন,কুয়াশা তুমি ভাত খাচ্ছো না কেন ?আর মাছ ও তো খাও নি। রান্না ভালো হয় নি বুঝি? তুমি কি খাবে বল আমি রান্না করে এনে দিচ্ছি।

না,না আম্মা। রান্না অনেক সুস্বাদু হয়েছে?

তাহলে মাছ খাচ্ছ না কেন?

আসলে আম্মা মা*রা যাওয়ার পর আমার আর ইলিশ মাছ খাওয়া হয় নি। ইলিশ মাছে অনেক কা*টা , আমি কা*টা আলাদা করে খেতে পারি না । আম্মা বেঁ*চে থাকতে আমাকে মাছ থেকে কা*টা আলাদা করে খাইয়ে দিত।এখন তো আর আম্মা বেঁ*চে নেই।তাই আমি সহজ সরল ঝামেলামুক্ত পাঙ্গাশ মাছ খাই।

ও এই ব্যাপার।আম্মা নেই তো কি হয়েছে?এই নতুন আম্মাকে তো বলতে পারতে।নাও এবার হা কর দেখি আমি ‌‌ মাছ থেকে কা*টা আলাদা করে খাইয়ে দিচ্ছি।
এখন আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি কিছু দিন পর যখন আমার ঘর আলো করে নাতি বা নাতনি আসবে, তখন তুমি নাতি বা নাতনি কে খাওয়াবে ,আর আমি তোমাকে।

নাতি, নাতনির কথা শুনে আমার কাশি উঠে গেল। আম্মা মাথায় ফু দিতে লাগলেন।রাজ তো লজ্জায় কোন মতো খেয়ে তাড়াতাড়ি ছুটে পালিয়ে গেল।
খাবার শেষ করে রুমে আসতেই রাজ বলল, আম্মার কথায় কিছু মনে করো না। আম্মা বাচ্চাদের ভীষণ ভালোবাসে। নাদিয়ার মেয়ে শুয়াইবা‌ আম্মার চোখের মণি। একবার আসলে আর যেতে দিতে চায় না। আবার মাঝে মাঝে পাশের বাসা থেকে বাচ্চাদের নিয়ে আসে গল্প করার জন্য।এসব দেখে নাদিয়া একবার আম্মাকে বলেছিল, আম্মা তোমার যেহেতু বাচ্চাদের এতো পছন্দ তাহলে আরো একটা ভাই বা বোন নিচ্ছ না কেন?
এরপর থেকে আম্মা লজ্জায় আর এমন‌ বাচ্চামি করে নি। আচ্ছা তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। আমার আবার ফিরতে হবে তো।

আমি ব্লু কালারের একটা শাড়ি পড়ে হালকা সাজগোজ করে নিলাম। ব্যাগপত্র গুছিয়ে যেই‌ রুমের বাইরে বের হয়েছি , তখনই রাজ আমার হাত ধরে টানতে টানতে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

দরজা বন্ধ করলেন কেন?

শাড়ি খোল।

মানে কি? দিন দুপুরে কি অ*স*ভ্য*তা*মি শুরু করেছেন। আপনাকে তো আমি ভালো মনে ‌করেছিলাম আর আপনি কি না

চলবে ইনশাআল্লাহ….
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here