#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১৪
সকাল ৬:৩০ টা ,
আবরন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ভাবছে ,
– এখন তো সবাই ঘুমাচ্ছে । কালকে পূর্ণতা কে বাসায় সন্ধ্যায় ড্রপ করে দিয়ে আসার পর আর একবারও কথা হয় নি আর দেখা হওয়া তো দূরের কথা !! মাত্র ১২ ঘন্টা হয়েছে ওর সাথে কথা বলি নি , একটু দেখি নি ওর মায়া ভরা ফেস টা , আর আজকে তো মনে হয় দেখতেও পারবো না । কি যে করি !!
ওকে কি এখন একটা কল দেব ??
ও নিশ্চয়ই এখন ঘুমুচ্ছে । কি যে করি ??
না একটা কল দিয়েই ফেলি । ভিডিও কল ই দিই । কথা ও হবে আর দেখা ও হয়ে যাবে ।
আবরন নিজের রুমের দরজা খুলে বাহিরে উঁকি মেরে দেখল কেউ আছে কিনা । কেউ না থাকায় আবরন আবার দরজা টা লক করে নিজের রুমের পর্দা গুলো খুলে দিয়ে বিছানায় বসলো পূর্ণতা কে কল দিবে বলে ।
হোয়াটস অ্যাপে ভিডিও কল দিয়ে চুপচাপ পূর্ণতার রিসিভ করার অপেক্ষায় বসে রইল ।
পূর্ণতা সারারাত ঘুমায় নি । সকালে একেবারে ফজরের নামাজ টা পড়ে সবেই শুয়েছিল আর ঘুমে চোখটা লেগে গিয়েছিল ঠিক তখন স্বজোরে ফোন বাজতে লাগল ।
খুবই বিরক্তিকর একটা মুড নিয়ে শুয়ে থেকেই কলটা রিসিভ করতেই দেখল ওপাশে আবরন কে দেখা যাচ্ছে ।
আবরন বলল ,
– গুড মর্নিং !!
পূর্ণতা ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় উত্তর দিল ,
– মর্নিং !! এই আপনি না আসলেই কাউয়্যা । না মানে এত সকালে কেউ কল দেয় !! তা ও আবার ভিডিও কল !!
কাক কে দেখেছেন সাত সকালে কা কা শুরু করে , আপনি ও ঠিক তেমন !!
আবরন মুচকি হেসে বলল ,
– তুমিও তো কাউয়্যার বউ ! তাই সাত সকালে উঠা দরকার তোমার !!
পূর্ণতা শোয়া থেকে উঠে বসে বলল ,
– এখন কি বলবেন জলদি বলুন ! আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে ।
পূর্ণতা শোয়া থেকে উঠে বসার পর ওর মুখে বাহিরের আলো এসে পড়তেই আবরন ভ্রু কুচকে ওকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে বলল ,
– এই , ওয়েট ওয়েট ওয়েট !! তুমি কি কাল রাতে কান্না করেছিলে !!
আবরনের প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা চোখে মুখে হাত দিয়ে আমতা আমতা করে বলল ,
– না , ইয়ে মানে !! কাল রাতে অনেক ঘুমিয়েছি তো তাই আরকি মুখ টা ফোলা ফোলা লাগছে ।
আবরন চোখে মুখে রাগ নিয়ে বলল ,
– পূর্ণ !! আমি সবসময় তোমাকে নিষেধ করি যে আমার সাথে মিথ্যা বলবে না , তবুও কেন মিথ্যা বলো !! তোমার সাথে সবার চেয়ে ভালো বিহেইভ করি তার মানে এই না যে তুমি আমার কথায় পাত্তা দেবে না , বাকি সবার মতো তোমাকেও আমার কথা শুনতে হবে ।
পূর্ণতা রেগে বলল ,
– তো কে বলেছে আমার সাথে এত ভালো বিহেইভ করতে ?? যত্তসব আজাইরা ।
এই বলে পূর্ণতা লাইনটা ডিসকানেক্ট করে দিল , তারপর ফোনটা সাইলেন্ট করে শুয়ে পড়লো ।
আবরন রেগে আরো কয়েকবার কলে ট্রাই করলো কিন্তু পূর্ণতার কোনো রেসপন্স না পেয়ে রাগে ফোনটা খাটের এক কোনায় ছুড়ে ফেলে বলল
– damn it …..
তোমাকে বেশি বেশি সাহস দিয়ে ফেলেছি , তুমি জানো না তোমাকে আমি এই জন্য কি শাস্তি দিতে পারি !! আমার নরম দিকটাই সবসময় দেখেছো , কারন আমি চাই নি তোমাকে আমার কঠোর দিকটা শো অফ করতে । কিন্তু এখন তুমি ই আমাকে বাধ্য করলে মিস পূর্ণতা জামান । জাষ্ট সময়ের অপেক্ষা , তারপর হারে হারে বোঝাবো আমি কি কি করতে পারি !!
এইসব মনে মনে ভেবে তারপর আবার মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখল ৭ টা ১০ বাজে ।
কিছু একটা ভেবে তারপর ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে ফাহিম , তাসিন আর আয়মানকে ভিডিও কনফারেন্সে গ্ৰুপ কল দিল ।
একজন একজন করে সবাই ফোন রিসিভ করলো , সবাই ঘুমু চোখে তাকিয়ে আবরনকে জিজ্ঞেস করলো ,
– কি জরুরি তলবে এই কানা সকালে কল দিয়েছিস রে !! ( আয়মান)
আবরন বলল ,
– আমি সিরিয়াস কিছু কথা বলবো , সব মনোযোগ সহকারে শুনে সেইভাবেই কাজ গুলো করবি , ফাইন ?
সবাই অধির আগ্ৰহ নিয়ে আবরনের দিকে তাকাতেই আবরন ওদেরকে সব ভেঙ্গে বুঝিয়ে দিল । ওরা আবরনের কথা শুনে এক্সাইটেড হয়ে শোয়া থেকে বসে দাঁত কেলিয়ে একসাথে বলে উঠল ,
– কপি দ্যাট !! 😁
………………………………………………..
সকাল ১০ টা ,
আবরন গোসল সেড়ে ডায়নিং রুমে গিয়ে নাস্তা করতে টেবিলে বসতেই জল ওকে দেখে দৌড়ে গিয়ে ওর পাশের চেয়ারটা টেনে বসে টেবিলের অপর পাশে বসা শাদমান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল ,
– গুড মর্নিং ।
শাদমান চৌধুরী পেপার পড়ছিলেন , জলের মর্নিং উইশ শুনে পেপারটা ভাজ করতে করতে বললেন ,
– গুড মর্নিং জল মামনি । আর “শুভ জন্মদিন ” । ভালো কাটুক তোমার আগামি দিন গুলো , অনেক বড় হও , মানুষের মতো মানুষ হও সেই দোয়া করি ।
আবরন শাদমান চৌধুরীর উইশ শুনে মনে মনে ভাবছে ,
– হেহ্ ,, তুমি ওকে যতই দোয়া দেও না কেন , ওর পক্ষে মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠা কখনোই পসিবল না , কারন কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না ।
গরুর পেট থেকে গরু বের হয় , ছাগলের পেট থেকে ছাগল বের হয় কিন্তু মানুষের পেট থেকে মানুষ বের হলেও তার মধ্যে মনুষ্যত্বের শিক্ষা থাকে না , তাকে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে দিতে পারলে সে মানুষ হয়ে ওঠে , নাহলে তারা পশুর চেয়েও অধম ।
ওর ভাবনার মাঝেই জল শাদমান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল ,
– মামা , সেই সবার আগে তুমিই উইশ করলে , কোথায় ভেবেছিলাম আমাকে সবার আগে আবরন উইশ করবে !! ধুর !!
শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– কে আগে উইশ করলো সেটা দেখার বিষয় না মা । কে তোমাকে ভালোবেসে কি দোয়া দেয় সেটাই বড় বিষয় ।
এরপর আবরনের দিকে তাকিয়ে বললেন ,
– আবরন তাকিয়ে দেখছো কি ? জল মাকে উইশ করো ।
আবরন শাদমান চৌধুরীর কথায় জলের দিকে না তাকিয়েই বলল ,
– Happy birthday .. Many many happy returns of the day .. I wish
Allah bless you .
জল আবরনের উইশ শুনে বলল ,
– শুধু এইটুকুই বলবে ? আর কিছু না ?
আবরন ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল ,
– আর কি বলবো ? এইটুকুই মুখস্ত , তাই এই টুকুই বললাম । That’s it ..
জল কিছু একটা ভেবে তারপর আবরনের হাত ধরে বলল ,
– Thank you .
আবরন জোড় পূর্বক মুখে হাসির রেখা টেনে জলের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে বলল ,
– It’s ok .
শাকিলা ইয়াসমিন একটা চেয়ার টেনে বসে বললেন ,
– একি ! ভাবি এখনো নাস্তা দেয় নি ? আমরা খাবো কখন আর যাবো কখন ??
আধিরা আনজুম রান্না ঘর থেকে নাস্তা রেডি করে আনতে আনতে বললেন ,
– এই তো চলে এসেছি নাস্তা নিয়ে !
শাকিলা ইয়াসমিন বললেন ,
– এত দেড়ি করলে হয় ! এক জায়গায় যেতে হবে তো নাকি !
আধিরা আনজুম মুখে মিথ্যা হাসি দিয়ে বললেন ,
– সরি , একটু দেড়ি হয়ে গেল । এখন খেয়ে নাও ।
আবরন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল , কিছু বলল না ।
নাস্তা করতে করতে আবরন শাদমান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল ,
– বাবা , If you give me permission , can I invite some of my friends in this occasion ??
শাদমান চৌধুরী ছেলের কথা শুনে বললেন ,
– কেন নয় ! আমার জল মায়ের জাকজমক পার্টিতে আমি সবাইকে চাই । তুমি তোমার সব ফ্রেন্ড দের ইনভাইট করো , কোনো অসুবিধা নেই ।
জল খুশি হয়ে বলল ,
– তাহলে তো আরো মজা হবে ।
আবরন মনে মনে খুশি হয়ে শাদমান চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– থ্যাংকস বাবা ।
তারপর মনে মনে ভাবলো ,
– আমি তো সবাইকে সাত সকালেই ইনভাইট করে ফেলছি , জাষ্ট তোমার থেকে শুনে নিলাম তুমি রাজি হও কি না !!
……………………………………………..
মিলি রহমান পূর্ণতার রুমে গিয়ে দেখলো ও এখনো ঘুমাচ্ছে । মিলি রহমান ওকে ডাকতে শুরু করলো ,
– পূর্ণ , এই পূর্ণ !! অনেক সকাল হয়ে গিয়েছে । উঠ !! দেখ প্রেনা এসেছে , সাথে আরো কিছু তোর মেডিক্যাল এর সিনিয়র ভাই বোনেরা এসেছে । জলদি উঠ !
পূর্ণতা ঘুমাচ্ছিল !! হঠাৎ মিলি রহমানের ডাক শুনে পূর্ণতার ঘুম ভেঙ্গে গেল ।
– কি হয়েছে আম্মু ?
– প্রেনা এসেছে ।
পূর্ণতা চোখ মুখ ডলতে ডলতে বলল ,
– কেন ? আজকে তো কোনো প্রোগ্ৰাম নেই ।
তখনই প্রেনা ওর রুমে হাজির হয়ে বলল ,
– কে বলেছে প্রোগ্ৰাম নেই ? তুই জানিস না আজ আমাদের মেডিক্যাল এর এক প্রোফেসরের ওয়াইফের বার্থডে ?? আমাদের সবাইকে যেতে বলেছে ??
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– কখন বলল ?
– ওও , তুই জানবি কি করে ? আমাকে তো আয়মান বলছে ! আচ্ছা , এখন আর কি ?? কথা না বাড়িয়ে জলদি গোসল করে আয় !! তারপর খেয়ে নে , আমি রেডি করিয়ে দিচ্ছি ।
পূর্ণতা কিছুই বুঝলো না । তাই প্রেনার কথা মতো ফ্রেশ হয়ে তারপর নাস্তা করে গোসল করে নিল ।
প্রেনা ওকে একটা বেবি পিংক কালারের নেটের উপর কাজ করা শাড়ি পড়িয়ে দিল । পূর্ণতা ভারি শাড়ি পড়ে অভ্যস্ত না , কিন্তু প্রেনার জোড়াজোড়ি তে পড়ে নিল । প্রেনা ও নেটের শাড়ি পড়েছে তবে ওর টা গ্ৰে কালার ।
পূর্ণতা বলল ,
– এত ভারী শাড়ি টা না পড়লেই না !!
– না , ঐখানে সব বড় বড় হাই লেভেলের গেস্ট রা আসবে , সেখানে নরমাল শাড়ি পড়লে আমাদেরকে সবার মাঝে লো ক্লাস লাগবে । তাই পার্টি শাড়ি ই পড়েছি আর তোকেও পড়ালাম । প্লিজ ঘ্যান ঘ্যান করিস না ।
পূর্ণতা বলল ,
– এখন কি করবি ?
– একটু সাজিয়ে দিই হালকা পাতলা !
– ধুর , এই গরমে সাজবো না !
– তুই চুপ কর । যাবি এসি গাড়িতে , সেখানে থাকবি ও এসিতে । গরম লাগবে না ।
প্রেনা পূর্ণতার চুল গুলো হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে শুকিয়ে তারপর স্ট্রেইটনার দিয়ে পেছনের চুলগুলো কার্লি করে দিল । তারপর সামনের চুলগুলো মাঝখানে শিথি করে দুই পাশে বেনি বেনি করে ফ্লাফি করে পেছনে পাঞ্চিং ক্লিপ দিয়ে আটকে দিল । আর কার্লি চুলগুলো পেছনে ছেড়ে দিল । তারপর কপালের উপরের ছোট চুল গুলো রেখে মিডিয়াম সাইজের চুলগুলোও হালকা কার্লি করে গালের দুই পাশে ঝুলিয়ে দিল ।
মুখে বিবি ক্রিম আর ফেস পাউডার লাগিয়ে চোখে আইলাইনার আর কাজল দিয়ে দিল । তারপর ঠোঁটে শাড়ির সাথে মিলিয়ে ডিপ বেবি পিংক কালারে লিকস্টিক লাগিয়ে দিল ।
তারপর শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে কানের দুল , গলার হাড় , আর চুড়ি পড়িয়ে একদম ফুল ফিল রেডি করে দিল প্রেনা ।
পূর্ণতা আয়নায় নিজেকে দেখে বলল ,
– এত্ত গুলো আটা ময়দা দিয়ে আমার ফেসের বারোটা বাজায় দিছিস !! এতো ভারি শাড়ি আর ভারি সাজ আমি জীবনেও দিই নাই ।
প্রেনা হেসে হেসে বলল ,
– আজকে দিলি , আর বিয়ের দিন দিবি । এখন চল বের হই ।
পূর্ণতা ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই চমকে গেল । সেখানে ফাহিম আর ওর সাথে একটা মেয়ে , তাসিন আর ওর সাথেও একটা মেয়ে আর একদম সাইডের সোফায় আয়মানকে বসা দেখে পূর্ণতা প্রেনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো ।
প্রেনা হেসে বলল ,
– সবাই একটু পূর্ণতার সাথে পরিচিত হও ।
ফাহিম বলল ,
– পূর্ণতা তো আমাকে , তাসিনকে আর আয়মানকে চিনেই । চিনে না শুধু আমার আর তাসিনের গার্লফ্রেন্ড কে ।
তাহলে ওদের সাথেই পরিচয় করিয়ে দিই । এটা আমার গার্লফ্রেন্ড রুহি , আর ওটা তাসিনের গার্লফ্রেন্ড নীরা ।
রুহি আর নীরা উঠে এসে পূর্ণতা কে থুতনিতে হাত দিয়ে বলল ,
– মাশাআল্লাহ , একদম বার্বি ডলের মতো লাগছে তোমাকে । ( রুহি )
– তুমি যে এত সুন্দর তোমাকে না দেখলে হয় তো জানতাম ই না । ( নীরা)
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– তোমরাও সুন্দর । আল্লাহ সবাইকেই সুন্দর করে বানিয়েছেন ।
প্রেনা বলল ,
– আয়ে হায় !! আমাদের কারো উপর যেন নজর না লাগে !
সবাই এক সাথে হেসে উঠলো ।
মিলি রহমান বললেন ,
– ১১:৩০ টা তো বেজে গিয়েছে । তোমরা বেরিয়ে পড়ো । রাস্তায় জ্যামে পড়লে তো আরো দেড়ি হবে ।
সবাই উঠে বের হতে লাগল । পূর্ণতা মিলি রহমানকে বলল ,
– আম্মু , ভাইয়া কোথায় ?
– তোর ভাইয়া অফিসে গিয়েছে ।
– ও , আচ্ছা ।
তারপর পূর্ণতা ও বেরিয়ে গেল মিলি রহমানকে বিদায় জানিয়ে ।
নিচে নামতেই দেখলো আট সিটের একটা মাইক্রোবাস । সবাই উঠে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করলো । গন্তব্য উত্তরা ।
অপরদিকে আবরন , শাদমান চৌধুরী , আধিরা আনজুম , শাকিলা ইয়াসমিন , জল ওরা ১১ টায় রওনা হয়ে গিয়েছে বাসা থেকে । ওদের ও একই গন্তব্য ।
পূর্ণতা চুপচাপ বসে আছে , কারন এখানে শুধু ওই একা , আর সবাই কাপল । সবাই খুব হৈ হুল্লোর করছে ।
পূর্ণতা কে চুপ থাকতে দেখে প্রেনা দুষ্টুমি করে বলল ,
– পূর্ণ , আমরা সবাই তো ইন এ রিলেশনশিপ । তোর স্ট্যাটাস টা কবে এমন হবে রে ??
সবাই একই প্রশ্ন করলো ।
পূর্ণতা বললো ,
– আমি একেবারে বিয়ের পর মজা করবো । এর আগে ইচ্ছে নেই ।
রুহি বলল ,
– ওয়াও , ইন্টারেষ্টিং !!
ফাহিম বলল ,
– না , ও ইউনিক ।
আয়মান বলল ,
– আমরা এখন সবাই প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি , আর পূর্ণতা বিয়ের পর খাবে , তাই না পূর্ণ ??
পূর্ণতা বলল ,
– হ্যা ।
সবাই হাসলো ।
এভাবেই হাসতে হাসতে খেলতে খেলতে প্রায় দেড়টার দিকে ওরা সবাই উত্তরা পৌঁছে গেল ।
আবরনরা আরো ৩০ মিনিট আগে পৌঁছে গিয়েছিল ।
একটা বিশাল বড় ডুপ্লেক্স বাংলো বাড়ির সামনে ওদের গাড়ি এসে থামতেই ফাহিম কাউকে কল করে বলল ,
– কোথায় তুই ? আমরা তো বাড়ির গেইটের সামনে । তুই না এলে যদি ঢুকতে না দেয় !
-………
– ওকে , আয় ।
পূর্ণতা বলল ,
– আর কে এসেছে ?
প্রেনা বলল ,
– ভার্সিটির সবাই ই এসেছে ।
পূর্ণতা আশে পাশে তাকিয়ে বলল ,
– আমি তো আর কাউকে দেখছি না । সবাই তো কত বড় বড় ।
আয়মান বলল ,
– আরে , এতো মানুষের ভিড়ে কি করে পাবে ?
এরই মধ্যে আবরন এসে গাড়ির সামনে দাঁড়াতেই সবাই একে একে হৈ চৈ করে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই পূর্ণতা একদম শেষে নেমে দাঁড়ালো ।
আবরনের দিকে তাকাতেই আবরন ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে ওকে না দেখার ভান করে চলে গেল ।
সবাই আবরনের পেছন পেছন যাচ্ছে , পূর্ণতা প্রেনাকে গুতো মেরে বলল ,
– উনি এখানে আছেন জানলে আমি জীবনেও আসতাম না !
প্রেনা বলল ,
– কেন , কি হয়েছে ?
আয়মান বলল ,
– তোমাদের কি মনমালিন্য হয়েছে ! আবরন ও দেখলাম তোমার সাথে কথা বললো না !
– কিছুই হয় নি । আর কথা না বললে আমার কি ?
ওর কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসলো , পূর্ণতা কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে ভেতরে চলে গেল ।
সবাই ভিতরে যেতেই দেখল নিচের রুমটায় হল রুমের মতো স্পেস । সেখানে একপাশের দেয়ালে বিশাল বড় করে লেখা “Happy birthday to our beauty queen Jol “..
এই লেখা পড়েই পূর্ণতা যেন ৪৪০ ভোল্টের শক খেল ,
ওর ফেস রিয়েকশন দেখে বাকিরা ভয়ে চুপসে গেল ………………#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১৫
পূর্ণতা ভিতরে ঢুকে এক সাইডে বসার জায়গা খুঁজে সেখানে বসে পড়ল । কারন , এই ভাড়ি শাড়ি ওর জন্য সহনীয় নয় । তার উপর এত্ত লোকের ভিড় ।
আশে পাশে তাকিয়ে লোকজনের ভিড়ের মাঝেই চোখে পড়ল ওর অপর পাশের দেয়ালে বিশাল বড় বড় করে ডেকোরেশন করে লেখা হয়েছে “Happy Birthday To Our Beauty Queen Jol ”
এই টুকু পড়তেই পূর্ণতা যেন ৪৪০ ভোল্টের শক খেল । তারপর ওর টনক নড়ল যে প্রেনা সহ বাকি সবাই মিলে ওর সাথে বিরাট বড় এক ধরনের ট্রল করেছে । রেগে মেগে পূর্ণতা বসা থেকে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকিয়ে প্রেনা সহ বাকি সকলকে খুঁজতে শুরু করল ।
প্রেনা আর আয়মান একসাথে দাঁড়িয়ে ছিল হলের এক কোনায় । ফাহিম আর রুহি ওদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল আর পার্টি এনজয় করছিল । আর তাসিন আর নীরা পূর্ণতার থেকে ৫-৬ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল আর মাঝে মাঝে পূর্ণতার দিকেও নজর রাখছিল ।
নীরা তাসিনের সাথে কথা বলতে বলতেই দেখল পূর্ণতা রেগে দক্ষিন দিকের দেয়ালে তাকিয়ে আছে , আর এর কিছুক্ষণ পরই আশে পাশে তাকাচ্ছে ।
নীরা তাসিনকে বলল ,
– তাসিন , পূর্ণতা বোধহয় সত্যিটা জেনে গিয়েছে । জলদি চলো এখান থেকে ।
ওরা কিছুটা ছুটেই ভিরের মধ্যে একটু পেছনে যেতেই ফাহিম , রুহি , আয়মান , প্রেনা সবাইকে পেয়ে গেল ।
নীরা আর তাসিনের কথা শুনে বাকিরা ভয়ে চুপসে গেল । আয়মান বলল ,
– আমি আবরনকে কল দিই । আমরা পূর্ণতা কে বোঝাতে পারবো না । ও রাগ করে চলেই যাবে ।
সবাই আয়মানের কথায় সায় দিল ।
আয়মান আবরনকে কল করে বলল ,
– দোস্ত , কোথায় তুই ?
আবরন জলের সাথে ছিল । আয়মানের ফোন দেখে এক সাইডে গিয়ে রিসিভ করে কানে দিতেই আয়মানের প্রশ্ন ভেসে আসলো । আবরন বলল ,
– কেন ? কি হয়েছে ?
– পূর্ণতাকে মিথ্যা বলে তো পার্টিতে নিয়ে এসেছি ঠিকই , কিন্তু এখন তো ও সত্যিটা জেনে গিয়ে আমাদের কে খুঁজছে ! আমরা তো ভয়ে ওর থেকে ঠিক অপর পাশে চলে এসেছি ।
– ও এখন কোথায় ?
– স্টেজের কাছাকাছি আছে ।
– ওকে , আমি দেখছি ।
আবরন ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে যেই স্টেজের দিকে পূর্ণতা কে খুঁজতে পা বাড়ালো অমনি দেখল পূর্ণতা ওর থেকে ৫-৬ ফুট দূরে রাগি রাগি ফেস করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।
আবরন গালে বাঁকা হাসি দিয়ে ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে যেতে লাগল । পূর্ণতা তা দেখে ভাবতে লাগল ,
– উনি না আমার সাথে কথা বলবেন না , ঢং দেখালো তখন সবার সামনে !! এখন আবার এদিকে কেন আসছে ??
কি মতলব ঘুর ঘুর করছে উনার মাথায় কে জানে !! হুহ !!
এই ভেবে ভেংচি কেটে আবরনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো ।
অনেক্ষন হয়ে গেলেও আবরন যখন ওর সামনে আসলো না তখন পূর্ণতা যেদিকে আবরন ছিল সেইদিক টায় লক্ষ্য করতেই দেখল আবরন সেখানে নেই । ওর রাগি রাগি ফেসটা এখন আবরনকে না দেখতে পেয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো ধারন করলো ।
আশেপাশে তাকিয়ে আবরনকে খুঁজতে খুঁজতে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখল আবরন জলের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে তাও আবার হেসে হেসে । পূর্ণতার নিজের অজান্তেই মনে মনে একরাশ রাগ আর অভিমান এসে জমা হলো । তাই চুপচাপ গিয়ে যেখানে বসেছিল আগে , সেখানেই বসে পড়ল ।
বেলা বাড়তেই লোকজনের সংখ্যা প্রচুর বেড়ে গেল । টেবিলে প্রচুর খাবার আর ড্রিংকস সার্ভ করা । যার যেটা ইচ্ছে খাচ্ছে আর পার্টি এনজয় করছে । এই পার্টিতে কোনো লাঞ্চ ডিনার নেই ।
দুপুর থেকে বিকেল হতে যাচ্ছে , আর পূর্ণতার ও খুব ক্ষুধা লেগেছে । মনে মনে ভাবছে ,
– এই জন্যই বড়লোকদের পার্টি আমার ভালো লাগে না । বাসায় থাকলে আম্মু খাইয়ে দিত , আর আমি টিভি দেখতে দেখতে খেয়ে নিতাম সেটাই ভালো ছিল । সবাই আমাকে মিথ্যা বলে এখানে নিয়ে আসলো । ভালোই লাগছে না ।
ওর ভাবনার মাঝেই ওয়েটার এক থালা ভর্তি ড্রিংকস নিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল ,
– Mam , need some drinks ??
পূর্ণতা ওয়েটারের থালার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে ,
– সব সময় টিভি শো তে দেখেছি রাগ বা অভিমান হলে সবাই ড্রিংক করে রাগকে কন্ট্রোল করে । আজ আমিও ট্রাই করবো !! আমি জাষ্ট আর নিতে পারছি না !!
এসব ভেবেই মুচকি হেসে ওয়েটারকে বলল ,
– জুস ছাড়া পিনিক হওয়ার মতো কিছু থাকলে দিয়ে যান !!
ওয়েটার একটা গ্লাস বাড়িয়ে দিল পূর্ণতার দিকে । পূর্ণতা গ্লাসটা হাতে নিয়ে গ্লাসে নাক দিয়ে শুকে দেখতেই ওর মাথা কেমন যেন করে উঠল । তারপর মনে মনে ভাবছে ,
– ইয়াক , এসব ছাইপাঁশ মানুষ কি করে খায় !! 🤢
তারপর ভেবে নাক টিপে ঢকঢক করে খেয়ে নিল । খেয়ে ঢেকুর তুলে ভাবছে ,
– স্মেলটা বাজে হলেও টেস্ট তো সেইই !!
পূর্ণতা উঠে গিয়ে আবারো সেই ওয়েটারকে ডেকে বলল ,
– আমাকে একটু আগে যে ড্রিংকস টা দিয়েছেন সেটা আপনার কাছে যতগুলো আছে সব দিয়ে যান ।
ওয়েটার বলল ,
– ম্যাম , আপনি বরং বারের কাছে গিয়ে একটা বোতল নিয়ে নেন । ঐ যে ঐদিকে বার ।
পূর্ণতা খুশি হয়ে বারের কাছে গিয়ে একটা বোতল নিয়ে আবার জায়গায় গিয়ে বসল ।
তারপর আশেপাশের সবাইকে দেখতে দেখতে অল্প অল্প করে গ্লাসে ঢেলে খেতে লাগল ।
বিকেল ৫:৩০ মিনিটে স্টেজের দিক থেকে সাউন্ড আসতে লাগল ,
– ladies and gentlemen !! Attention please !!
সকলে স্টেজের দিকে লক্ষ্য করল । পূর্ণতাও স্টেজের দিকে লক্ষ্য করতেই একজন স্যুট টাই পড়া মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক কে চোখে পড়ল ।
– আমি শাদমান চৌধুরী ,সকলকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ আজকের পার্টিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য । যার জন্য আজকের এই পার্টি সে হচ্ছে আমার একমাত্র ভাগ্নি “রুদাইফা জল ” । তো সবাই একসাথে বলি ” Happy Birthday To Our Beauty Queen Jol ”
পার্টিতে উপস্থিত সবাই জলকে একসাথে উইশ করলো ।
শাদামান চৌধুরী বললেন ,
– জল মামনি ! তোমাকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ করছি ।
জল আবরনের সাথেই ছিল । খুশি হয়ে এক দৌড়ে স্টেজে গিয়ে দাঁড়ালো ।
তারপর মাইক হাতে নিয়ে বলল ,
– Thank you , Thank you so much all of you … আজকের এইদিনে সবার কাছে আমার শুধু একটাই চাওয়া আমার জীবনের সকল ইচ্ছা গুলো যেন পূর্ণ হয় । Thank you again .
এই বলে শাদমান চৌধুরী কে জল জড়িয়ে ধরল ।
শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– এখন আমি আমার মামনির জন্য রাখা একটা সারপ্রাইজ সবার সামনে তুলে ধরবো , এর পর কেক কাটার পর্ব শুরু করবো । তবে এখন আমি আরেকজনকে এই স্টেজে ডাকতে চাই , সে হচ্ছে আমার একমাত্র ছেলে আবরন চৌধুরী !!
সবাই হাত তালি দিচ্ছে ।
আবরন স্টেজে গেল । স্টেজে গিয়ে দাড়াতেই শাদমান চৌধুরী নিজের দুপাশে দুজনকে অর্থাৎ জল এবং আবরনকে দাঁড় করিয়ে বলতে শুরু করল ,
– আমার ছেলে আবরন একজন মেডিক্যালে পড়ুয়া ছাত্র । ও বর্তমানে মেডিসিন বিষয়ে ইন্টার্নি করছে । আর আমার জল মামনি একই মেডিক্যালের
৩য় বর্ষের গাইনি বিভাগে পড়ুয়া ছাত্রি । আমি আগেই ঠিক করে রেখেছি আমার মামনির জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ আছে কিন্তু সারপ্রাইজ এমনি এমনি দিতে চাই নি । ভাবলাম ওর একটা বিশেষ দিনেই ওকে সারপ্রাইজ টা দিই । তো আজকে আমি সবার সামনে সকলকে সাক্ষী রেখে আমার ছেলে আবরন চৌধুরীর সাথে আমার একমাত্র বোনের একমাত্র মেয়ে রুদাইফা জলের বিবাহের বাগদান ঘোষিত করলাম ।
পার্টিতে উপস্থিত সকলে এই ঘোষনায় খুশিতে আত্মহারা হয়ে হাততালি দিলেও আবরনের মনে যেন হাজার লক্ষ তীর এসে বিধলো ।
প্রেনা – আয়মান , রুহি – ফাহিম , নীরা – তাসিন সবাই অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেল ।
বাকি রইল পূর্ণতা । সে তো রাগে অভিমানে ড্রিংক করতে করতে তাল হারিয়ে ফেলেছিল , কিন্তু শাদমান চৌধুরীর কথা শুনে কেন যেন সেই জমে থাকা অভিমান গুলো পানির স্রোত হয়ে চোখের কোনা থেকে বেরিয়ে আসতে লাগল । পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়েই নিঃশব্দে
চোখের পানি ফেলতে ফেলতে দাঁত বের করে হাসতে লাগল ।
ভীরের মাঝে আবরনও স্তব্ধ হয়ে স্টেজে দাঁড়িয়েই পূর্ণতাকে খুঁজতে লাগল । তখন জল খুশি হয়ে আবরনকে জড়িয়ে ধরল , কিন্তু আবরনের চোখ কান খোলা থাকলেও হুশ নেই । অন্যসময় হলে জলের থেকে ছিটকে দূরে সরে যেত কিন্তু আজ বিষয়টা ভিন্ন ।
আয়মান , প্রেনা , ফাহিম , রুহি , তাসিন , নীরা সবাই দোতলা থেকে দাঁড়িয়ে এতক্ষন সব দেখছিল এবং শুনছিল । প্রেনা উপর থেকেই পূর্ণতা কে খুঁজে বের করে ওর অবস্থা দেখে দৌড়ে নিচে যেতে লাগল । ওর পেছন পেছন বাকিরাও গেল ।
একদল ছেলে মেয়ে উপর থেকে নিচে নামতে খেয়াল করলো আবরন । ওদের লক্ষ্য করতে করতেই দৃষ্টি গিয়ে পৌঁছালো পূর্ণতার দিকে । ওর অবস্থা দেখে মন চাইছিল ছুটে ওর কাছে যেতে কিন্তু ও শরীরে কোনো বল খুঁজে পেল না । চুপচাপ স্থির হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল ।
আধিরা আনজুম ও পার্টিতে উপস্থিত শত শত লোকের ভিড় ঠেলে ছেলের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল । তার মনে একটাই ভয় , তার একমাত্র ছেলে বাবার দেওয়া এই আঘাত সামলে উঠতে পারবে তো ??
প্রেনা পূর্ণতাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে ওকে বলল ,
– কিচ্ছু হবে না পূর্ণ , আমরা সব ঠিক করে দেব ।
কিন্তু পূর্ণতার কানে প্রেনার কোনো কথাই পৌঁছালো না । ও জ্ঞান হারিয়ে প্রেনার কাধেই পড়ে রইল আর শরীরের সমস্ত ভর ছেড়ে দিল । প্রেনা ওর ভর ধরে রাখতে পারছিল না । রুহি আর নীরা মিলে পূর্ণতা কে ধরে নিচের কোনার একটা রুমে নিয়ে গেল । তারপর বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিল ।
প্রেনা কাদছে স্বজোরে । আয়মান , নীরা , রুহি ওকে মিলে শ্বান্তনা দিচ্ছে ,
– এভাবে কেদো না প্রেনা !! পূর্ণ খুব বেশি ড্রিংক করেছে তাই জ্ঞান হারিয়েছে । ঠিক হয়ে যাবে ।
প্রেনা কাদতে কাদতে বলল ,
– তোমরা খেয়াল করো নি । পূর্ণ আঙ্কেলের ঘোষনা শোনার পর কাদছিল । আমি ওকে হাসির সাথে কাদতেও দেখেছি , বিলিভ মি !!
ফাহিম বলল ,
– পূর্ণতার তো আবরনের প্রতি কোনো ফিলিংস ই ছিল না , তাহলে কেন কাদবে ?? কাদবে তো আবরন !!
তাসিন বলল ,
– আসলেই চল তো , গিয়ে দেখি , আবরন কোথায় ?
ফাহিম বলল ,
– চল ।
আয়মান বলল ,
– আমি যাবো না । ওর উচিত ছিল এখানে আসা । আর ওর সাথে এটাই হওয়ার ছিল । পার্টিতে সারা সময় তো আমি ওকে জলের সাথেই দেখলাম । তোরা যা , দেখ গিয়ে সে এখন কেক কেটে জলকে খাওয়াচ্ছে আর এরপর আংটি পড়াবে ।
ফাহিম বলল ,
– সেটা তো আবরন ইচ্ছা করেই পূর্ণতা কে জেলাস করতে করেছে !!
আয়মান বলল ,
– ও যদি জেলাস করাতেই তখন এমন করে থাকে তাহলে যখন আঙ্কেল স্টেজে ঘোষনা দিল তখন ও কেন কোনো প্রতিবাদ করলো না ?
তাসিন বলল ,
– সেটা তো আবরনই ভালো বলতে পারবে !
এই বলে ফাহিম আর তাসিন চুপ চাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেল আবরনকে খুঁজতে ।
………………………………………………..
আধিরা আনজুম স্টেজে গিয়ে আবরনের কাছ থেকে জলকে সরিয়ে আবরনের হাত ধরে স্টেজ থেকে নামিয়ে ওকে টেনে টেনে দোতলায় একটা রুমে নিয়ে গেল । শাদমান চৌধুরী গেষ্টদের সাথে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টা লক্ষ্য করেননি । কিন্তু জল আর শাকিলা ইয়াসমিন বিষয়টা লক্ষ্য করেছে । তারপর শাকিলা ইয়াসমিন জলকে আস্তে করে বলল ,
– এই যে , এই মহিলা যে এখন আবরনের ব্রেইন ওয়াশ করতে নিয়ে যাচ্ছে তা আমি ভালোই বুঝতে পারছি ।
জল বলল ,
– তুমি চিন্তা করো না । মামা আমাদের পক্ষে আছে ।
– তা অবশ্য ঠিক ।
……………………………………………….
আধিরা আনজুম রুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে কান্না করে ছেলেকে প্রশ্ন করল ,
– তোর বাবা তোকে – আমাকে কিছু না জানিয়ে একা এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল আর তুইও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলি ?? এর প্রতিবাদ করলি না ।
আবরন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ,
– এত লোকের সামনে বাবাকে অপমানিত করার শিক্ষা তুমি আমাকে দাও নি আম্মু !! আমার ঐ মূহুর্তে কিছুই করার ছিল না , বিশ্বাস করো ।
আধিরা আনজুম ছেলের উত্তর শুনে রেগে বললেন ,
– তাহলে তুই কি ডিসিশন নিয়েছিস ?? তোর বাবার পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করবি বাবার সম্মান বাঁচাতে ??
আবরন বলল ,
– আমি সেটা করতে পারবো না আম্মু !! কারনটা তুমি ভালো করেই জানো !!
আধিরা আনজুম বললেন ,
– তোর বাবাকে গিয়ে এক্ষুনি সত্যিটা বল !
– সেটা কি করে বলবো ? আর তোমার মনে হয় যে বাবা আমার কথা মেনে নিয়ে তার ডিসিশন বদলে ফেলবে ?
– বলেই দেখ । যদি ডিসিশন না বদলায় তখন অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে !
এরই মধ্যে আবরনের ফোন বেজে উঠলো । ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখল তাসিন কল দিচ্ছে । কলটা রিসিভ করে কানে দিতেই তাসিন বলল ,
– কোথায় তুই ? তোকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না ।
– তোরা কোথায় ?
– আমরা মেইন হলে আছি ।
– পূর্ণতা কোথায় ?
-সেটা জেনে তুই কি করবি ?তোর তো ওর প্রতি কোনো খেয়ালই দেখলাম না ।
– এমনি মাথা গরম , রাগাস না আমাকে !! উল্টো পাল্টা কিছু করতে বাধ্য করিস না । আমি দোতলায় আছি । সিড়ির সামনে দাঁড়া , আসছি ।
– ওকে ।
আবরন ফোনটা পকেটে ভরে আধিরা আনজুমের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– চিন্তা করো না , বাবা যখন এত বড় একটা সারপ্রাইজ দিল , সামনে বাবার জন্য ও অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে । সে যদি চলে ডালে ডালে আমি শাহরিদ আহনাফ আবরন চলবো পাতায় পাতায় । জাষ্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ !
এই বলে রুমের দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে গেল ।
নিচে যেতেই ফাহিম আর তাসিনের সাথে দেখা হওয়ার পর একসাথে বাকিরা যেরুমে আছে সেদিকে যেতে লাগল ।
আয়মান , রুহি , নীরা , প্রেনা সবার মন খারাপ । হঠাৎ রুমে ফাহিম , তাসিন আর আবরনকে একসাথে প্রবেশ করতে দেখে সবাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো ।
আবরন পূর্ণতাকে শোয়া অবস্থায় দেখে সবার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল ,
– কি হয়েছে ওর !
নীরা বলল ,
– ভাইয়া , ড্রিং…….
কথা বলে শেষ করার আগেই প্রেনা বলল ,
– আঙ্কেলের ঘোষনা শুনে অচেতন হয়ে গিয়েছে !!
আবরন যেন ৪৪০ ভোল্টের শক খেল ।
তারপর বলল ,
– ওর তো আমার প্রতি কোনো ফিলিংস কাজ করে না , তো ম্যাডাম এভাবে অচেতন কেন হয়ে গেল ?
সবাই মুচকি হাসল ।
আবরন পূর্ণতার কাছে গিয়ে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গালে হাত রাখতেই দেখল ওর গা অনেক গরম । তারপর কপালে হাত রেখেই বুঝলো ওর জ্বর এসেছে । তারপর রুমে উপস্থিত সকলের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– তোরা খেয়াল করিস নি ওর জ্বর এসেছে !!
সবাই বলল ,
– না ।
– ওকে , আমি গিয়ে কিছু মেডিসিন নিয়ে আসছি ।
আবরন চলে যেতেই প্রেনা আয়মানকে বলল ,
– জলদি জলদি লেবু পানির ব্যবস্থা করো !!
আয়মান গেল লেবু পানি আনতে ।
৫ মিনিটের মধ্যে আয়মান লেবু পানি নিয়ে আসতেই প্রেনা পূর্ণতার গাল চাপ দিয়ে ধরে মুখ ফাকা করে অল্প অল্প করে লেবু পানি মুখে দিতে লাগল । কিছুক্ষণের মধ্যেই পূর্ণতা হঠাৎ চোখ খুলে বসে গিয়ে মুখ ভরে বমি করে দিল ।
প্রেনা বলল ,
– হায়রে আল্লাহ !! আমিও বলদ !! একটা বাটি আগে এনে রাখলে এখন শরীর মাখতো না ।
আয়মান প্রেনাকে বলল ,
– আকাম যে করলা !! এখন আবরন এসে যদি দেখে , তোমার খবর আছে !!
এরই মধ্যে আবরন রুমে প্রবেশ করল মেডিসিনের প্যাকেট হাতে নিয়ে । সবাই ওর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো । আবরন পূর্ণতা কে দেখে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই পূর্ণতা ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে বাকি সবার দিকে তাকালো । আবরন ধমকের সুরে বলল ,
– ও বমি করেছে কেন ?
ফাহিম বলেই দিল যে ,
– পূর্ণতা তখন ড্রিংক করে অচেতন হয়ে পড়েছিল ।
আবরন ফাহিমের মুখে এই কথা শুনেই রাগ সামলাতে না পেরে পূর্ণতার গালে স্বজোরে একটা থাপ্পড় মারল । রুমে উপস্থিত সবাই থাপ্পড়ের শব্দে কেপে উঠল । পূর্ণতার চোখ দিয়ে গড় গড়িয়ে পানি বেরিয়ে এলো । আবরন রেগে বলল ,
– যেটার অভ্যাস নেই সেটা করতে গিয়েছো কেন ? এমনি মাথা আমার জ্যাম হয়ে আছে । তার উপর তুমি আবার এমন হাল করে রেখেছো নিজের !! কেন ড্রিংক করেছো ?? ডাক্তার হবে ভবিষ্যতে আর এইটুকু জ্ঞান নেই তোমার মধ্যে যে এসব খেলে কি কি ক্ষতি হয় ?
পূর্ণতা আবরনের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে প্রেনার দিকে তাকিয়ে বলল ,
– দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? কিছু একটা নিয়ে আয় আমাকে চেঞ্জ করতে হবে তো !!
প্রেনা কাদো কাদো ফেস করে বলল ,
-কি আনবো ? কিছু তো নিয়ে আসি নি সাথে করে !
পূর্ণতার এমন বিহেইভ দেখে আবরন ওকে বলল ,
– একটা থাপ্পড় তোমার জন্য যথেষ্ট নয় তাই না ?? তোমার সাহস কি করে হয় আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে অন্য জনের সাথে অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার ??
পূর্ণতাও এবার রেগে বলল ,
– ওও হ্যালো মিস্টার চৌধুরী !! আপনি কোন অধিকারে আমার গায়ে হাত তুলেছেন ?? আপনার কিছুক্ষণ পর আরেকজনের সাথে বাগদান , আপনি গিয়ে আপনার হবুর উপর অধিকার খাটান । দয়া করে আর আমার কোনো ব্যাপারে নাক গলাবেন না ।
আসলে আমারই ভুল হয়েছে । আপনার সাথে এত ফ্রি-লি কথা বলাটাই আমার ঠিক হয় নি । যেই সুযোগ পেয়েছেন অমনি অধিকার খাটাচ্ছেন !! কি মনে করেন কি নিজেকে ?? নিজের যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াবেন !! আরেকজনের মতামতের দাম নেই না ?
প্রেনা পূর্ণতা কে এসে মুখ চেপে ধরে থামালো । তারপর কিছু টিস্যু দিয়ে ওকে পরিষ্কার করতে করতে বলল ,
– তখন থেকে যা-তা বলছিস ! চুপ করে থাক তো ।
আবরন কিছু না বলে সুর সুর করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল । তারপর দোতলায় গিয়ে আধিরা আনজুমের বেড রুমে গিয়ে আলমারি থেকে একটা সুতি শাড়ি বের করে আনলো । এই বাসায় ওরা থাকে না বলে আলমারিতে তেমন কোনো ভালো শাড়ি নেই । তবে আগের কিছু জিনিস আলমারিতে রাখা ছিল । সেখান থেকেই একটা শাড়ি আবরন নিয়ে আবার সেই রুমে গেল । তারপর প্রেনার হাতে শাড়িটা দিয়ে বলল ,
– এটা জলদি ওকে পড়িয়ে দাও ।
এই বলে আবরন আবার চলে গেল । প্রেনা বাদে বাকি সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেল । প্রেনা পূর্ণতা কে শাড়ি চেঞ্জ করে দিতে দিতে বলল ,
– জানিস , অনেক কিছু আশা করেছিলাম , কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সব আশাগুলোই মিথ্যা !!
পূর্ণতা চুপ চাপ দাঁড়িয়ে কাদছে । মনে মনে ভাবছে ,
– আমার এতো কেন কষ্ট হচ্ছে উনার জন্য ! কেন মনে হচ্ছে উনার বিয়ে অন্য কারো সাথে হয়ে গেলে আমার জীবনটা অগোছালো হয়ে যাবে ?? কেন ?? কেন এতো গুলো কথা উনাকে শোনাতে গেলাম !! মনটা চাইছে নিজের চুলগুলো নিজেই ছিড়ে ফেলি ।
এইসব ভেবে পূর্ণতা এবার জোড়ে জোড়ে কাদতে কাদতে প্রেনা কে বলল ,
– আমার জাস্ট দম বন্ধ হয়ে আসছে প্রেনা । আমাকে বাসায় নিয়ে চল ।
প্রেনা ওকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– কাদিস না প্লিজ । আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে তোর জন্য ।
আবরন গিয়ে শাদমান চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল ,
– বাবা , তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে !!
শাকিলা ইয়াসমিন আবরনকে শাদমান চৌধুরীর সাথে কথা বলতে দেখে নিজের মেয়ে জলকে বলল ,
– দাঁড়িয়ে দেখছিস কি ! যা গিয়ে আবরনের সাথে দাঁড়া ।
জল দৌড়ে গিয়ে আবরনের হাত ধরে দাঁড়াতেই আবরন বলল ,
– হাত টা ছাড়ো । আমার বাবার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে ।
শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– আবরন তুমি জল মাকে এভাবে কেন বলছো ? ও তো এখন আমাদের পরিবারেরই একজন সদস্য । বলো তুমি কি বলবে ?
– ওকে , যেমন তোমার ইচ্ছা । তাহলে জলের সামনেই বলছি । তুমি চাইলে আমি গিয়ে স্টেজে দাঁড়িয়ে মাইক হাতে নিয়েও কথাটা বলতে পারি !
– আহ , বলবে তো কি কথা !
– বাবা , জলকে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না !
– আরে বোকা ছেলে , জল মাকে কি আমরা তোর বৌ করে এখনি নিয়ে যাচ্ছি নাকি ? তোদের আজকে একটু পর শুধু engagement এর এরেঞ্জ করেছি । এরপর তোদের পড়াশোনার চাপ গেলে সুবিধা মতো বিয়ের এরেঞ্জ করবো ।
– সরি বাবা , আমি জলকে আমার হবু স্ত্রী বলো বা যাই বলো , আমি ওর সাথে জীবনে জড়াতে চাই না । কারন আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি ।
জল এই কথা শুনে কাদতে শুরু করলো । শাদমান চৌধুরী তা দেখে রেগে বলল ,
– তুমি জানো আমি যেটা ডিসিশন নেই সেটা করেই ছাড়ি । আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এত এত মানুষের সামনে আমি তোমাদের engagement ঘোষনা করেছি , আর তুমি আমার মান সম্মান শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবছো ??
– এখানেই তোমার ব্যর্থতা বাবা !! তুমি একজন ছেলের বাবা হয়ে নিজের ছেলেকে একবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করো নি যে তোমার ছেলে কি চায় ? আমি আগেও তোমাকে বলেছি জলকে আমার পছন্দ না ।
– হ্যা , আর কেন পছন্দ না সেটাও বলেছিলে !! কারনটা ছিল জলের সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও জল তোমাকে ভার্সিটিতে যেখানে সেখানে জড়িয়ে ধরে । তাই আমি তোমার সমস্যাও সমাধান করে দিলাম এইভাবে যে জল তোমার ফিওন্সে হলে ও তোমাকে জড়িয়ে ধরার অধিকার রাখবে আর জল মামনির তোমার প্রতি ইন্টারেস্ট অর্থাৎ ভালোবাসা টাও আমি সারাজীবনের জন্য পূর্ণ করে দিলাম ।
আবরন মিথ্যা হাসি দিয়ে বলল ,
– দুঃখিত বাবা ! তুমি আমার জন্য অনেক করেছো , এই ঋণ আমি কোনো কিছুর বিনিময়ে শোধ করতে পারবো না , আর তোমার কথাও রাখতে পারবো না । তুমি আমাকে মাফ করে দিও ।
এই বলে সেখান থেকে চলে এসে আধিরা আনজুমের কাছে গিয়ে বলল ,
– আম্মু , বাবা আজ তার মান সম্মানের কাছে আমার ভালোবাসা কিছুই না তা বুঝিয়ে দিল । আসল কাজটা করার জন্য এখন শুধু তোমার পার্মিশন চাই ।
আধিরা আনজুম ছেলের গালে হাত রেখে কান্না করে বললেন ,
– আমি তোকে বলছি , এই কষ্টের তুই একটা সমাধান কর ।
– তাহলে চলো আমার সাথে ।
এই বলে হাত ধরে আধিরা আনজুমকে টেনে নিয়ে গেল পূর্ণতা যেখানে ছিল সেখানে ।
পূর্ণতা আর প্রেনা রুম থেকে সব গুছিয়ে বের হচ্ছিল ঠিক তখন আবরন আর আধিরা আনজুম ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো । পূর্ণতা আবরনের দিকে একবার তাকিয়ে আধিরা আনজুমের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– আসসালামু আলাইকুম আন্টি ।
– ওয়াকুমুসসালাম মা । তুমি কি কোথাও যাচ্ছিলে ?
পূর্ণতা নিজেকে কন্ট্রোল করে আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– আমরা সবাই বাসায় যাচ্ছি ।
– ঠিক আছে । চলো আমরা সবাই একসাথে যাবো !
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে তাকাতেই আবরন ওর আরেক হাত দিয়ে পূর্ণতার হাত ধরে ওকে নিয়ে যেতে যেতে সকলকে বলল ,
– তোরা যাবি নাকি এখানেই থাকবি ?
ফাহিম, তাসিন , আয়মান , রুহি , নীরা , প্রেনা সবাই অবাক হয়ে আবরনের পিছু পিছু গেল ।
আবরন ওদের গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আধিরা আনজুম আর পূর্ণতার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল ,
– আম্মু , তুমি সামনে বসো । আর তোরা সবাই পেছনে উঠে বস । একটু চাপাচাপি করে বসতে হবে ।
একে একে সবাই গাড়িতে উঠে বসে শেষে প্রেনা ওর পাশে টেনে পূর্ণতা কে বসাতেই আবরন গাড়ি স্টার্ট করতেই শাদমান চৌধুরী , শাকিলা ইয়াসমিন আর জল ওদের পথ রুখে দাঁড়ালো ।
আবরন গাড়ির ভেতরে বসেই গ্লাস ওপেন করে বলল ,
– সরি , আমার যা যা বলার আমি তোমাকে বলেছি বাবা । আমার পথ থেকে সরে দাঁড়াও ।
শাকিলা ইয়াসমিন রেগে বললেন ,
– তুই আমাদের এভাবে ধোকা দিতে পারিস না !! আমার মেয়ের বিয়ে আমি তোর সাথেই দিয়ে ছাড়বো ।
আবরন হেসে বলল ,
– সেটা কখনো পসিবল না ফুপি । আগে নিজের মেয়েকে গিয়ে ম্যানারস শেখাও । তারপর দেখো অন্য কারো সাথে বিয়ে দিতে পারো কিনা !!
জল কাদতে কাদতে বলল ,
– আই লাভ ইউ , প্লিজ স্টে উইথ মি !!
– সরি ডিয়ার , আই ক্যান্ট স্টে !!
শাদমান চৌধুরী বলল ,
– তুমি অনেক বড় ভুল করছো আবরন !! আমাকে কষ্ট দিয়ে তোমার উন্নতি হবে না কখনো !! তুমি এভাবে আমার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারো না !!
– সরি বাবা । আমি তোমাকে সময় হলে আমার বিষয়টা নিজেই জানাতাম । কিন্তু তুমি আমাকে কোনো সুযোগই দাও নি । আমি অন্তত দুঃখিত । আর বাকি রইল তোমার কষ্টের কথা ! আমার জানা মতে তোমার আমার জন্য কষ্ট হচ্ছে না , কষ্ট হচ্ছে তোমার বোন আর ভাগ্নির জন্ত । কারন জলের মতো ম্যানালেস একটা মেয়েকে তোমরা কারো গলায় ঝুলাতে পারবে না , তাই আমার কাছে এসেছিলে । হ্যা ওকে তোমরা বরং ওরই মতো ম্যানারলেসের সাথে বিয়ে দিতে পারো । নাউ বায় বায় এভরিওয়ান !!
এই বলে আবরন গ্লাস লাগিয়ে দিয়ে গাড়ি টান দিল ।
গাড়ি গেইট থেকে বেরিয়ে রোডে যেতেই ফাহিম বলল ,
– তুই এসব কি বললি আঙ্কেলকে ?
তাসিন বলল ,
– তুই কি জলকে বিয়ে করবি না ?
আয়মান বলল ,
– একা একা কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস ? সব ভেবে করছিস তো ?
আবরন শুধু এইটুকু বলল ,
– সব উত্তর পাবি । আপাদত সবাই শান্তি করে বসে থাক ।
পূর্ণতা চুপচাপ এতক্ষন সব শুনছিল । ও কারো কথার আগা গোড়া কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না । তাই আধিরা আনজুম কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো ,
– আন্টি , আমি জানি আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন ! সত্যি করে বলুন তো আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি ?
আধিরা আনজুম বললেন ,
– এর উত্তর আমাদের কারোরই জানা নেই মা । আবরনই ভালো বলতে পারবে !
পূর্ণতা গাড়ির ভিতরে থাকা মিররে আবরনের দিকে তাকাতেই আবরন ওর দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে দিল ।
পূর্ণতা তা দেখে থ হয়ে বসে রইল ।
#চলবে♥️