ভালোবাসি বলেই তো পর্ব -২৪+২৫

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২৪

সকাল ৫ টা ,

জিব্রান পূর্ণতা আর নাদিরা কে নিয়ে পলাশির মোড়ে দাঁড়িয়ে বাকি সবার জন্য অপেক্ষা করছে ।

পূর্ণতা ফুটপাতের কিনারে একটা উঁচু জায়গায় বসে ঘুমে ঝুমছে । কারনটা হচ্ছে , গত কাল রাতে বাসায় ফিরে ঘুমাতে ঘুমাতে ২:৩০ টা বেজে গিয়েছে । আবার ৪:৩০ টায় উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হতে হয়েছে । ২ ঘন্টার ঘুমে রাতের ঘুম কি আর পোষায় ??

জিব্রান নাদিরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে । এর‌ই মধ্যে ১২ সিটের একটা মাইক্রোবাস এসে থামল ওদের সামনে । জিব্রান বলল ,

– মামা , আপনি কি শাদমান আঙ্কেলের লোক ??

– জি ভাই । আপনারা কি বসবেন ভেতরে ??

– না না , সবাই আসুক ।

মিনিট পাঁচেকের মধ্যে একে একে আয়মান , তাসিন , ফাহিম , নীরা , রুহি , প্রেনা এসে পৌঁছালো । বাকি একমাত্র আবরন ।

ফাহিম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পুরো ৫ টা ২০ মিনিট ।

তাসিন বলল ,

– আমি একটা কল দিই । দেখি কোথায় আছে ?

তাসিন ফোন বের করে কল দিতেই যাচ্ছিল ঠিক তখন আবরন রিকশা দিয়ে এসে পৌঁছালো ।

– সরি , গাইজ । একটু দেড়ি হয়ে গেল ।

পূর্ণতা চোখ অফ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল । আবরনের কন্ঠ শুনে চোখ খুলে তাকাতেই দেখল আবরন রিকশা ওয়ালার ভাড়া মিটাচ্ছে । ওর পরনে মেরুন রং এর কাবলি , চোখে কালো স্টাইলিশ সানগ্লাস , চুলগুলো একেবারে জেল দিয়ে সুন্দর করে সেট করা , কাবলির হাতা ফোল্ড করে কনুই পর্যন্ত ওঠানো , হাতে ব্ল‍্যাক বেল্টের ঘড়ি , পায়ে কালো স্নিকারস্ ।

আবরন নিজের স্যুটকেস গুলো গাড়ির ডিকিতে ঢুকিয়ে সবার ব্যাগ একটা একটা করে ঢুকাতে লাগল । জিব্রান‌ও সবার স্যুটকেস , ব্যাগ এগিয়ে নিয়ে আবরনকে দিচ্ছে । সর্বশেষ পূর্ণতার হাতে থাকা ব্যাগটা জিব্রান চাইতেই পূর্ণতা ওর ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল ,

– এটা অনেক ভারী !

জিব্রান পূর্ণতার হাতে থাকা ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলল ,

– কি এতো এনেছিস ব্যাগে করে ?

নাদিরা বলল ,

– ধুর , মেয়েদের অনেক জিনিস লাগে সেটা তোমরা ছেলেরা বুঝবে না । এখন জলদি জলদি ব্যাগটা ঢোকাও ।

জিব্রান আবরনের দিকে ব্যাগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,

– নে , এটা ভেতরে রাখ ।

আবরন পূর্ণতার ব‍্যাগ ডিকিতে রেখে ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– ভাই , ডিকি লাগিয়ে দিন । কাজ শেষ এখানকার ।

ড্রাইভার ডিকি লাগিয়ে দিতেই এবার এলো বসার পালা । গাড়ির দরজা খুলে মাঝের সিট সামনে টেনে দিতেই প্রথমে ফাহিম আর রুহি বসল , তারপর ওদের সাথেই তাসিন আর নীরা বসল ‌ । ওরা চারজন একদম পেছনের সিটে বসল ।
তারপর শেষের আগের সিটে আয়মান আর প্রেনা উঠে বসল ।

জিব্রান বলল ,

– সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসতে চাচ্ছিস ! তাহলে তো সব গ্যাঞ্জাম গাড়ির পেছনের দিকে হলো । সামনে কে বসবে ?

আবরন বলল ,

– ড্রাইভার ভাই এর পাশের সিটটা নাহয় আজ খালি‌ই থাকুক । তুমি আর নাদিরা ভাবিও তো একসাথে বসবে তাই না ?

জিব্রান বলল ,

– অবশ্য‌ই , সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসছে । আমরা কেন বসবো না ?

পূর্ণতা বলল ,

– এত বড় গাড়ি , প্রতি সিটে তিন জন করে বসলে আরামে যেতে পারতে । আর তোমরা সবাই এক সিটে চারজন করে বসে চাপাচাপি করে যাবে । আমি ভাই ২য় সিটে জানালার ধারে বসবো ।

আবরন বলল ,

– তাহলে আর কি ! ভাইয়া , তুমি নাদিরা ভাবিকে নিয়ে আয়মান আর প্রেনার সাথেই বসো । আমি বরং পূর্ণতার সাথে ২য় সিটে বসি ।

জিব্রান কথা মতো নাদিরাকে নিয়ে ৩য় সিটেই বসল ।

এরপর সিট লাগিয়ে দিতেই পূর্ণতা উঠে বসল আর ওর পাশেই আবরন উঠে বসল ।

তারপর ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে র‌ওনা দিল । গন্তব্য চট্টগ্রাম ।

আবরন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল ,

– ভেবেছিলাম ৫:৩০ টায় র‌ওনা হবো । কিন্তু আবার সেই দেড়ি ই হয়ে গেল । এখন ৬টা বাজতে ১০ মিনিট বাকি ।

জিব্রান বলল ,

– রাস্তায় জ্যামে না পড়লে বিকেলের আগেই পৌঁছে যাবো ।

নাদিরা বলল ,

– না , আরো সময় লাগতে পারে । আমরা তো কেউ ব্রেকফাস্ট করে বের হ‌ই নি । ৮ টার দিকে একটা রেস্টুরেন্টে গাড়ি থামিয়ে ব্রেকফাস্ট করে তারপর আবার র‌ওনা হতে হবে ।

জিব্রান বলল ,

– হ্যা , এই বিষয়টা তো খেয়াল‌ই ছিল না ।

আয়মান বলল ,

– সমস্যা নেই । যেতে থাকি । শহরে থাকা অবস্থায় ব্রেকফাস্ট সাড়তে হবে । লাঞ্চ আওয়ার হতে হতে ততক্ষনে গ্ৰামের রাস্তা গুলো পাড় করে অন্য শহরে পৌঁছে যাবো । সমস্যা নেই ।

আবরন বলল ,

– ঠিক আছে , আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে । আমি একটু ঘুমাই ।

তাসিন বলল ,

– আমরা সবাই চাপাচাপি করে বসলাম !! আর নিজে খালি সিটে যাচ্ছিস বলে ঘুমের কথা ভাবছিস ?

পূর্ণতা বলল ,

– আমি তো আগেই বলেছিলাম । তোমরা তোমাদের নিজ ইচ্ছায় বসেছো । এখন কাপলরা এনজয় করো ।

প্রেনা বলল ,

– মাফ চাই , দয়া চাই । এখন আর তোমরা দুজন আমাদের কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা দিও না প্লিজ ।

আবরন আর পূর্ণতা হেসে উঠল ।

সবাই যে যার যার মতো গল্প করছে ।

আর এদিকে পূর্ণতা আর আবরন ঘুমে ঢলে পড়ছে । ওদের এই অবস্থা দেখে নাদিরা বলল ,

– এই , তোমরা দুজন রাতে কোথায় গিয়েছিলে ??

নাদিরার প্রশ্ন শুনে দুজনেই ঘুমের মধ্যে ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেয়ে তাকিয়ে গিয়ে বলল ,

– কোথায় যাবো আবার ? কোথাও যাই নি । (আবরন)

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকাতেই আবরন সানগ্লাস খুলে ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিল ।

জিব্রান বলল ,

– ঘুম কে বিদায় কর । চল সবাই গানের কলি খেলি ।

পূর্ণতা বলল ,

– সরি , আমি গান পারি না ।

প্রেনা বলল ,

– ঠাডা পরা মিথ্যা , কেউ বিশ্বাস করো না । ও ভালো গান জানে কিন্তু গাইতে চায় না ।

পূর্ণতা পেছনে তাকিয়ে প্রেনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো ।

আবরন বলল ,

– আজকে আর তোমার ছাড় নেই । গানটা তাহলে তোমাকে দিয়েই শুরু হোক ।

পূর্ণতা বলল ,

– আমার এখন খেলার মুড নেই । আমার ঘুম পাচ্ছে ।

আবরন বলল ,

– ঠিক আছে । তোমরা খেলো । আমার‌ও ঘুম পাচ্ছে ।

তাসিন বলল ,

– ড্রাইভার আঙ্কেল । গাড়ি থামান ।

ড্রাইভার গাড়ি একসাইডে থামাতেই সবাই তাসিনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো ।

নীরা বলল ,
– কিছু হয়েছে ? কোনো সমস্যা ?

তাসিন বলল ,

– হু সমস্যা । আমরা চারজন এখন আবরন পূর্ণতার সিটে গিয়ে বসবো আর তোরা দুইজন পেছনের সিটে গিয়ে বসে ঘুমা বা যা ইচ্ছা কর , উই ডোন্ট কেয়ার ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকাতেই দেখল আবরন তাসিন কে বলছে ,

– ওকে তোরা আয় সামনে । আমরা বরং পেছনেই যাই ।

তারপর পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– তুমি কি বলো !

পূর্ণতা বলল ,

– সবার যেমন ইচ্ছা ।

আবার সবাই গাড়ি থেকে নেমে কথামতো নতুন ভাবে বসলো । সবাই আবার বসতেই গাড়ি আবার চলতে শুরু করল ।

আবরন বলল ,

– ওকে , আমরা এখন ঘুমাই , তোমরা সবাই এনজয় করো ।

সবাই কথা মতো গানের কলি খেলতে শুরু করল ।

কিন্তু পূর্ণতা সিটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে । আবরন ওকে ঘুমাতে দেখে আস্তে করে ওর কানে কানে বলল ,

– ম্যাডাম , কাল রাতে আপনাকে গোলা খাওয়াতে গিয়ে ঘুম নষ্ট হয়েছে । আমার ঘুম নষ্ট করে এখন নিজে আরামসে ঘুমাচ্ছেন ! এই আইন কিন্তু চলবে না ।

পূর্ণতা চোখ বন্ধ করেই আস্তে করে বলল ,

– তাহলে এখন কি করতে চাইছেন ?

আবরন বলল ,

– তুমি জানালার দিকে চেপে বসো ।

পূর্ণতা ওর কথা মতো জানালার দিকে চেপে বসতেই আবরন পূর্ণতার কোলে মাথা রেখে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল ।

পূর্ণতা ওর কান্ড দেখে ওর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল ,

– আর ইউ ক্রেইজি ? সবাই দেখলে পরে আমাদের খোঁচা মারবে ।

– মারুক । যার যা ইচ্ছা করুক । আমার মাথা ব্যথা করছে । চুল গুলো টেনে দিবে ?

পূর্ণতার কেমন যেন লাগছে । এই প্রথম আবরন ওর কোলে মাথা রেখে শুয়েছে । পূর্ণতা নিজের হাত গুলো ধীরে ধীরে আবরনের চুলের দিকে বাড়াচ্ছিল তখন‌ই আবরন নিজে পূর্ণতার হাত দুটো ধরে ওর চুলে রেখে বলল ,

– তোমার ভাবতে ভাবতে আমার মাথা ব্যথায় ছিড়ে যাবে । এখন একটু টেনে দাও ।

পূর্ণতা আবরনের সিল্কি চুলগুলো বিলি কেটে কেটে টেনে দিতে লাগল । আবরন চোখ বন্ধ করে আছে । পূর্ণতার ঘুম যেন উড়ে গিয়েছে । আবরনের দিকে তাকিয়েই ওর চুল গুলো আস্তে আস্তে টেনে দিচ্ছে ।

বাকিরা গানের কলি খেলতে খেলতে প্রেনার ভাগে এসে পড়ল ‘ই’ অক্ষর পড়ল । প্রেনার এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না ‘ই’ দিয়ে কি গান আছে । সবাই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ১০ সেকেন্ড গুনতে শুরু করেছে ।

– ১ , ২ , ৩ , ৪ , ৫ , …………

পূর্ণতা আবরনের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেখল প্রেনার “ই” দিয়ে কোনো গান মনে পড়ছে না ।

– ৮, ৯ ..

১০ বলার আগেই পূর্ণতা প্রেনার হয়ে গান গাইতে শুরু করলো ,

You’re the light, you’re the night
You’re the color of my blood
You’re the cure, you’re the pain
You’re the only thing I wanna touch
Never knew that it could mean so much, so much

পূর্ণতা কে গান গাইতে শুনে সবাই পেছনে ঘুরে ওর দিকে তাকালো । আবরন‌ও চোখ খুলে ওর দিকে তাকালো । পূর্ণতা ওর চুল টেনে দিতে দিতেই হালকা হেসে গানটা গাইছিল ।

You’re the fear, I don’t care
‘Cause I’ve never been so high
Follow me through the dark
Let me take you past our satellites
You can see the world you brought to life, to life

So love me like you do, lo-lo-love me like you do

এই টুকু গাইতেই সবাই চিল্লিয়ে উঠল ।

Love me like you do, lo-lo-love me like you do
Touch me like you do, to-to-touch me like you do
What are you waiting for?

এইটুকু গেয়ে থামল পূর্ণতা । সবাই জোরে হাত তালি দিল । আবরন‌ও শুয়ে হাত তালি দিল ।

আবরন‌ও শুয়ে থেকেই হাত তালি দিল ।

নাদিরা বলল ,

– পূর্ণতা , তোমার গানের গলা কিন্তু অসম্ভব সুন্দর । কিন্তু হঠাৎ কি মনে করে গানটা গাইলে শুনি ??

পূর্ণতা নাদিরার প্রশ্ন শুনে নিচে থাকালো । দেখল আবরন‌ একগাল হেসে ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচাচ্ছে । পূর্ণতা বুঝলো আবরন‌ও ওর কাছে এক‌ই প্রশ্নের উত্তর চাইছে ।

পূর্ণতা হালকা হেসে জবাব দিল ,

– এমনি মন চাইলো হঠাৎ গান গাইতে । আমার একমাত্র বান্ধবী খেলায় হেড়ে যাচ্ছিল তাই ওর পক্ষ থেকে আমি ই গানটা গেয়ে দিলাম ।

আয়মান উল্টো ঘুরে পেছনে উঁকি দিয়ে দেখল আবরন পূর্ণতার কোলে সটান হয়ে শুয়ে হাসছে ।

আয়মান শয়তানি হাসি দিয়ে বলল ,

– ও আচ্ছা , এই খবরররর !!

সবাই আয়মানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই আয়মান বলল ,

– শালা , পেছনে বসার কারন তাহলে এইটা???

আবরন শোয়া থেকে উঠে বসে বলল ,

– জি না , মাথা ব্যথা করছিলো ।

ফাহিম দা‍ঁত কেলিয়ে বলল ,

– মাথা ব্যথা কেন করছে , সেটা আমরা ভালো করে জানি ।

রুহি কাদো কাদো ফেস করে বলল ,

– দেখেছো , আবরন ভাইয়া পূর্ণতার কোলে শোয়ার জন্য নিজের মাথা কে ব্যথা বলে দাবি করছে । আর তুমি কখনো আমার কোলে শুয়েছো ?? এট লিষ্ট কেউ সামনে থাকলে কোনো বাহানা‌ও তো দেখাতে পারো নি ।

পূর্ণতা আবরনকে কনুই দিয়ে গুতা মেরে বির বির করে বলল ,

– এই জন্য ই আমি বলেছিলাম যে কেউ দেখলে আমাদের এসব নিয়ে খোঁচা মারবে । আপনি তো তখন শুনলেন না । এখন জবাব দিন ।

আবরন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– লিসেন গাইজ ! জিব্রান ভাইয়া বাদে সবাই তাকাও ।

জিব্রান বলল ,

– কেন কেন ? আমি তাকাবো না কেন ??

আবরন বলল ,

– কারন তুমি পূর্ণতার ভাই । কাজটা তোমার সামনে করা যাবে না ।

নাদিরা জিব্রানের কানে আস্তে করে বলল ,

– আরে আবরনকে তো চেনোই , ও নিশ্চিত দুষ্টুমি করবে । তুমি বরং তাকিয়ো না পেছনে কিছুক্ষণের জন্য ।

জিব্রান সবার উদ্দেশ্য নিয়ে স্বজোরে বলল ,

– ওকে , ফাইন । আমি পেছনে তাকাবো না ।

আবরন বলল ,

– থ্যাংকস ভাইয়া ।

জিব্রান সামনের দিকে তাকিয়ে আছে । আর বাকি সবাই আবরনের দিকে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে আছে ‌।

আবরন পূর্ণতার কানে কানে বলল ,

– বিলিভ মি , আমি এমন কিছু করবো না যাতে তুমি আঘাত পাও । জাষ্ট সবাইকে দেখাতে ছোট খাটো একটা নাটক করবো । তুমি আর আমি শুধু সত্যটা জানবো , কিন্তু সবাই মিথ্যা টা জানবে । কোনো কথা বলবে না । যা করার আমিই করছি ।

পূর্ণতা শুধু মাথা নাড়ল কারন ও জানে আবরন উল্টাপাল্টা কিছু করবে না ।

সবাই বলল ,

– কি এতো কানাকানি করছিস ?

আবরন বলল ,

– কিছুই না । তোমাদের জাষ্ট একটা প্রুফ দেব ।

সবাই বলল ,

– ওকে ।

আবরন পূর্ণতার দিকে ঘুরে বসে পূর্ণতা কেও ওর দিকে ঘুরে বসতে বলে ওর খোপা করা লম্বা চুলগুলো একটানে খুলে দিল ।

চুলগুলো খুলে গাড়ির ঝাকুনিতে পূর্ণতার মুখ চোখ ঢেকে যেতেই আবরন চুলের ভেতর দিয়ে পূর্ণতার গালে হাত রেখে সরাসরি নিজে এগিয়ে গিয়ে ওর ঠোঁটের পাশে গালে কিস করলো । চুল দিয়ে ঢেকে থাকার কারনে সবাই ভাবল আবরন পূর্ণতা কে সত্যি সত্যি কিস করেছে ।

সবাই গাল লাল টমেটোর মতো করে সামনে ঘুরে বসলো । মুখে কিছুই বলল না ।

আর আবরনের কান্ড দেখে পূর্ণতা এখনো চোখ বড় বড় করে অবাক দৃষ্টিতে আবরনের দিকে তাকিয়ে আছে ।

আবরন দেখলো যে সবাই সামনে ফিরে গিয়েছে তাই সুযোগ বুঝে পূর্ণতা কে আস্তে করে বলল ,

– ওদের সবাইকে বুঝালাম “we are in a relationship . ” । কারনটা হচ্ছে , এখন আমরা একে অপরের সাথে দুষ্টুমি করলেও ওরা আমাদের খোঁচা মারবে না , ভাববে ওদের মতো আমরাও কাপল ।

পূর্ণতা শুধু কান দিয়ে শুনছে মুখে কিছুই বলছে না । আবরন ওর নিস্তব্ধতা দেখে বলল ,

– রাগ করলে নাকি ! আমি তো তোমাকে নরমাল কিস করেছি ।

পূর্ণতা কিছুই বলল না । মনে মনে ভাবছে ,

– আমি তো ভেবেছি আজ আপনি সত্যিই অসাধ্য কাজটা করেই ফেলবেন । আরেকটু হলে আমার কলিজা টা ধপাস করে লাফ দিয়ে বেরিয়ে যেত । আল্লাহ বাঁচিয়েছে । কিন্তু উনি কেমন নির্লজ্জ রে বাবা , সবাইকে এটা কি বোঝালো ? সবাই এখন কত কি ভাবছে আমাদের নিয়ে । ভাগ্যিস ভাইয়া দেখেনি , নাহলে আজকে খবর‌ই ছিল ।

এই ভেবে মনে মন শুকুরিয়া আদায় করে আবরনকে বলল ,

– সড়ুন আপনি ।

আবরন বলল ,

– কোথায় সড়বো ?

পূর্ণতা কিছুটা আবরনের নকল করে কঠোর গলায়‌ই বলল ,

– জানালার ধারে গিয়ে বসুন ।

আবরন মনে মনে ভাবছে ,

– আয় হায় । মিস কান্না পরী তো দেখছি আমার সাথে রাগ করেছে । এখন কি করবো ??

আবরন পূর্ণতার কথা মতো জানালার ধারে গিয়ে বসে বাহিরে তাকিয়ে দৃশ্য দেখতে লাগল ।

পূর্ণতা আবরন চেপে বসতেই জুতো খুলে সিটে পা উঠিয়ে আবরনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে বলল ,

– বহুত টেনেছি আপনার মাথার চুল , বহুত আরাম করেছেন । এখন আমাকে ঘুমুতে দিন । ডিস্টার্ব করবেন না । আর একেবারে ব্রেক ফাস্ট টাইমে আমাকে ডেকে তুলবেন ।

আবরন ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে দেখল ও চোখ বন্ধ করে এক হাত গালের নিচে দিয়ে ঘুমুচ্ছে । আবরন মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত রেখে ওর চুলগুলো শোয়া অবস্থায় হাতাতে হাতাতে মনে মনে ভাবছে ,

– আমি জানি যে এখন তুমি ও আমাকে ঠিক সেভাবেই ফিল করো যেভাবে আমি তোমাকে ফিল করি । বিষয়টা এখন সত্যিই ফাহিম – তাসিনের দুষ্টুমি করে গাওয়া গানের সাথে মিলে যাচ্ছে ।

আবরন হেসে তাসিনকে বলল ,

-তাসিন , শোন না ।

তাসিন বলল ,

– আমি আর ভাই পেছনে তাকাবো না । যা বলার বলে ফেল ।

আবরন বলল ,

– একটু ‘বাজে স্বভাব’ গানটা গা না ।

তাসিন বলল ,

– হঠাৎ এই গানটাই কেন ?

জিব্রান বলল ,

– আরে তুই গা ব্যাটা , ওর শুনতে মন চাইছে ।

তাসিন বলল ,

– ওকে , ফাইন । গাইছি ।

কথা হবে , দেখা হবে
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে ,
কাছে আসাআসি আর হবে না ।

চোখে চোখে কথা হবে
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে ,
ভালো বাসাবাসি আর হবে না ।

শত রাত জাগা হবে
থালে ভাত জমা রবে ,
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না ।

হুট করে ফিরে এসে
লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙে যাবে , জানো না ।

আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না ।

আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না ।

………………………………………………….

নয়টার দিকে ওরা সবাই একটা রেস্টুরেন্টে নেমে ব্রেকফাস্ট সেড়ে কিছু স্ন‍্যাকস , চিপস , কোক , চকোলেট কিনে নিয়ে আবার‌ও দশটার দিকে র‌ওনা দিল সবাই ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখল আবরন চুইংগাম চিবাচ্ছে । আবরন পূর্ণতা কে তাকাতে দেখে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো , কি হয়েছে ?
পূর্ণতা মাথা নেড়ে ইশারা করল , কিছু না ।

আবরন চুইংগাম দিয়ে বাবল ফুলিয়ে ঠোঁটে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল ,

– চুইংগাম খাবে ?

– ফ্রুট নাকি ফ্রেশ ?

– দুইটাই আছে ।

– ফ্রুট ।

আবরন কাবলির পকেট থেকে সেন্টার ফ্রুট বের করে পূর্ণতা কে দিল ।

পূর্ণতা চুইংগাম মুখে দিয়ে কিছুক্ষণ চিবিয়ে আবরনকে বলল ,

– চলুন , দেখি ! কে সবচেয়ে বড় বাবল ফুলাতে পারে !

আবরন ভাব নিয়ে বলল ,

– চ্যালেঞ্জ করছো ?

পূর্ণতা বলল ,

– ধরুন তাই !!

– ওকে , চ্যালেঞ্জ একসেপ্টেড !!

পূর্ণতা বলল ,

– ওভার কনফিডেন্স ? ওকে , তাহলে judge করতে ও তো সবাইকে লাগে । কি বলেন ?

আবরন পূর্ণতার দিকে ঘুরে বসে বলল ,

– গাইজ , এদিকে তাকাও সবাই ।

রুহি ফাহিম কে বলল ,

– আল্লাহ ই জানে , আবরন ভাইয়া আমাদের কে আবার কি দেখাবে এখন !

ফাহিম হেসে বলল ,

– চলো , দেখা যাক ।

জিব্রান পেছনে ঘুরে বলল ,

– আমি ও কি দেখতে পারবো নাকি আমার আবার নিষেধ আছে ?

আবরন হেসে বলল ,

– আরে না , তুমি ও দেখো । আমি সবাইকে বলিছি বিষয়টা । আমি আর পূর্ণতা একটা চ‍্যালেঞ্জে নেমেছি । চ্যালেঞ্জ টা হচ্ছে আমাদের দুইজনের মুখেই চুইংগাম আছে । এখন কে একবারে সবচেয়ে বড় বাবল ফুলাতে পারে তা দেখতে হবে তোমাদের ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে ঘুরে বসে বলল ,

– শুধু তা-ই না ! যে জিতবে তার জন্য পুরষ্কার আছে , আর যে হারবে তোর জন্য শাস্তি আছে ।

আবরন বলল ,

– ওকে , যদি আমি জিতি তাহলে আমার পুরষ্কার কি !

পূর্ণতা ভেবে বলল ,

– উমমমমমম , আপনি যা চাইবেন তাই দিব ।

আবরন ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল ,

– ভেবে বলছো তো ?

পূর্ণতা বলল ,

– ভাবনার কি আছে এখানে ?

আবরন বলল ,

– আর যে হারবে তার কি হবে ?

– তাকে যে জিতবে সে যা শাস্তি দিবে তা মাথা পেতে নিতে হবে । ডিল ??

আবরন বলল ,

– ডিল ।

আয়মান বলল ,

– আর ইউ গাইজ সিরিয়াস ? বাবল ফুলাতে গিয়ে এমন না হয় ফোলানোর আগেই টুস করে ফেটে গেল !

সবাই বলল ,

– না , মজা হবে । ওকে তোমরা স্টার্ট করো ।

– রেডি , স্টেডি এন্ড গো ………………

আবরন আর পূর্ণতা দুজন‌ই বাবল ফোলাচ্ছে । প্রথমে দুজনেরই বাবলের সাইজ সমান দেখা গেল ।

প্রেনা বলল ,

– এক‌ই সাইজ । বড় ছোট করার চেষ্টা করো ।

আবরন ধীরে ধীরে বাবল বড় করছে , পূর্ণতা ও ফেটে যাওয়ার ভয়ে ধীরে ধীরে বড় করার চেষ্টা করছে । কিন্তু আবরন অনেক বড় করতেই সবাই চিল্লিয়ে উঠল । পূর্ণতা রাগ হয়ে নিজের বাবল ফাটিয়ে আবরনের বাবল‌ও আঙ্গুল ফুটা করে দিল ।

আবরন পূর্ণতার কান্ড দেখে বলল ,

– এই এই , তুমি আমার বাবল ফাটিয়ে দিয়েছো । চিটিং , চিটিং । এটা হবে না । আমি‌ই জিতেছি । এখন আমি যা বলবো তোমাকে তা ই দিতে হবে ।

পূর্ণতা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল ,

– দিব না । কি করবেন ??

– কি করবো ?? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা !!

আবরন সবাইকে বলল ,

– তোমরা সবাই সামনে তাকাও । কেউ পিছনে তাকাবে না ।

সবাই আবার জলদি জলদি সামনে তাকালো ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখতেই আবরন ……………………#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২৫

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখতেই আবরন পূর্ণতাকে দুই হাত দিয়ে গাল চেপে ধরে ওর দিকে এগিয়ে গেল । পূর্ণতার বুক ভয়ে ধুকপুক ধুকপুক করছে । পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে ফেলল । আবরন ঠোঁটে বাঁকা হাসি দিয়ে পূর্ণতার কানের সামনে গিয়ে বলল ,

– ভরসা করতে শিখো মিস. পূর্ণতা জামান । আমি তেমন না যেমন তুমি মাঝেমাঝে আমার বিহেইভ দেখে মনে করে বসো ।

তারপর পূর্ণতার কানে কিছুটা জোরে কামড় দিয়ে বলল ,

– এটা তোমার শাস্তি । দেখো কেমন লাগে কামড় খেতে !! ঐদিন আমার সুন্দর ফেস তুমি কামড়ে কামড়ে লাল করে দিয়েছিলে !!

পূর্ণতা চোখ খুলে তাকিয়ে আবরনের নাকে স্বজোরে কামড় দিয়ে মুচকি হেসে বলল ,

– টিট ফর ট্যাট !!

আবরন পূর্ণতার কান্ড দেখে নাকের আগা ঘষতে ঘষতে বলল ,

– তুমি আগের চেয়ে সত্যিই অনেক চালাক হয়ে গিয়েছো !!

– আগে ম্যান্দা ছিলাম , তাই চালাক হচ্ছি যেন এই কথাটা আর কারো কাছ থেকে শুনতে না হয় ।

আবরন ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা অন করে নাকের দিকে তাকিয়ে দেখল ,

নাক লাল হয়ে গিয়েছে । আবরন রক্ত চক্ষু করে পূর্ণতার দিকে তাকালো । পূর্ণতা ভ্রু নাচিয়ে বলল ,

– কি সমস্যা ? সুন্দর লাগছে তো !! 😁

আবরন দাঁতে দাঁত চেপে বলল ,

– ওয়েট , বের করছি তোমার সুন্দর দেখানো !!

এই বলে আবরন পূর্ণতার গাল আবারো চেপে ধরে ওর নাকেও এক‌ইভাবে কামড় দিয়ে দিল ।

পূর্ণতা গাড়িতে সবাই আছে বলে কোনোরকম শব্দ করলো না । সব শব্দ ভেতরেই জমা করে রাখল । পূর্ণতা আবরনের হাত থেকে ফোনটা টান দিয়ে নিয়ে ক্যামেরায় তাকিয়ে দেখল আবরন ওর নাকটাও লাল করে দিয়েছে ।🤥

তারপর আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখল , ও ভ্রু নাচাচ্ছে আর বলছে ,

– কি সমস্যা ? সুন্দর লাগছে তো !! 🤣

পূর্ণতা ফোনটা আবরনের কোলে ছুড়ে দিয়ে বলল ,

– ধুর , অসভ্য লোক কোথাকার !

আবরন হেসে কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে র‌ইল ।

পূর্ণতা বাহিরে তাকিয়ে দৃশ্য দেখতে লাগল ।

……………………………………………..

অবশেষে শেষ বিকেলে ওদের মাইক্রোবাস একটা বিশাল বড় গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল । গেইটের ভিতরে ঢুকতেই একটা কৃত্রিম ঝর্না । ঝর্না পাড় হয়ে কিছুক্ষণ চলার পর একটা দোতলা ডুপ্লেক্স ডিজাইনের বাংলোর সামনে গাড়ি গিয়ে থামল ।

একে একে সবাই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই ৫ জন লোক ওদের ভেতরে ঢুকতে বলে গাড়ি থেকে স্যুটকেস , ব্যাগ নামাতে শুরু করলো । সবাই বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই চমকে গেল । বাড়িটা সব দিক থেকে চিকচিক করছে । দামি দামি নিত্য নতুন জিনিস পত্র দিয়ে সাজানো । ঢুকতেই সোফা আর টি টেবিল চোখে পড়ে তার ডান দিকে ডায়নিং স্পেস আর এরপর‌ই কিচেন ।
সোফা বরাবর এক কোনায় ৬৫” ইঞ্চি টিভি লাগানো ।

বাম দিকে একটা সিংগেল ডিভাইন রাখা আর একটা বিশাল বড় বারান্দা । সেখানে এক পাশ জুড়ে বিশাল একুয়ারিয়াম আর অপর পাশটায় বিভিন্ন ছোট ছোট ইনডোর প্লান্টস্ দিয়ে সাজানো । সেখানেও বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য বেতের সোফা আর টেবিল দিয়ে সাজানো । সিড়ির পেছন দিকটায় নিচে একটা বেড রুম আছে , সাথে এডজাস্ট বাথরুম । পাশে একটা স্টোর রুম আছে ।

সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই আরো একটা স্পেস যেখানে আরো একটা ৪৮” ইঞ্চি ওয়াল টিভি ফিট করা , সেখানেও সোফা আর টি টেবিল রাখা । এর পর চারপাশে ঘুরিয়ে ৮ টা বেড রুম আছে গেস্ট রুম সহ । একটা লাইব্রেরি রুম‌ও আছে , সেখানে সব বিখ্যাত ব‌ইয়ের কালেকশন গুলো ই আছে ।

নীরা , রুহি একটা রুম বেছে নিয়েছে থাকার জন্য । পূর্ণতা আর প্রেনা আরেকটা রুম বেছে নিয়েছে থাকার জন্য । নাদিরা সবার চেয়ে বড় তাই ও নিজের জন্য আলাদা রুম পছন্দ করে নিয়েছে । ফাহিম , তাসিন একটা রুমে ঢুকেছে । আয়মান আর আবরন আরেকটা রুমে ঢুকেছে । জিব্রান একা ঘুমাতে অন্য একটা রুম বেছে নিয়েছে । সবার রুম গুলো পরপর পাশাপাশি একসাথে ।

সবাই যার যার রুমে নিজস্ব কাপড় চোপড়ের ব্যাগ নিয়ে ঢুকেছে ।

পূর্ণতার রাতে ঘুম হয় নি আর গাড়িতেও তেমন একটা ঘুমাতে পারে নি , তাই মাথা ব্যথা করছিল বলে একেবারে শাওয়ার নিয়ে একটা light yellow কালার এর ওপর লাল কাজের ড্রেস , সাথে লাল চুরিদার আর ওরনা পড়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো ।

প্রেনা পূর্ণতা কে দেখে বলল ,

– কিরে ! অবেলায় গোসল করলি যে !!

পূর্ণতা চুল মুছতে মুছতে বলল ,

– মাথা ব্যথা করছিল তাই শাওয়ার নিলাম । এখন একটু ফ্রেশ লাগছে ।

– ঠিক আছে , আমি ফ্রেশ হয়ে আসি ।

পূর্ণতা চুল মুছে টাওয়াল বারান্দায় মেলতে গিয়ে দেখল বারান্দা টা গ্ৰিল বিহীন রেলিং টানা খোলামেলা । ওদের রুমটা বাংলোর পেছন সাইডে । পূর্ণতা বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে দেখল পেছন দিকটার পুরোটাই সবুজ ঘাসের মাঠ ।
দুই পাশে বড় বড় গাছ গাছালি ।

পূর্ণতা বারান্দায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি বিলাস করতে লাগল ।

………………………………………………..

আবরন শাওয়ার নিয়ে একটা ব্ল‍্যাক ট্রাউজার আর হোয়াইট টিশার্ট পড়ে বেরিয়ে এলো । টাওয়াল দিয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই দেখল বাম পাশের বারান্দায় পূর্ণতা দাঁড়িয়ে আছে ।

আবরন দেখল পূর্ণতার চুল দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে । পূর্ণতার সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই । ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখায় ব্যস্ত । আবরন পূর্ণতা কে বলল ,

– ওও ম্যাডাম ! আপনি কোন ধ্যানে হারিয়ে গিয়েছেন ?? এতক্ষন যাবৎ আমি এখানে দাঁড়িয়ে , একবার‌ও তো তাকালেন না !!

পূর্ণতা আবরনের গলা শুনে ডানদিকে তাকাতেই খেয়াল করলো পাশের বারান্দায় আবরন দাঁড়িয়ে আছে । পূর্ণতা এতক্ষন খোয়াল‌ই করে নি পাশের রুমের বারান্দা গুলো ও এখান থেকে দেখা যায় । আর বারান্দা গুলো এতোটা কাছাকাছি যে এক বারান্দা থেকে আরেক বারান্দায় অনায়াসে ঝাপ দিয়ে আসা যায় ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– জায়গাটা সত্যিই খুব সুন্দর । আপনার বাবার রুচি অনেক ভালো এসব দেখলেই বোঝা যায় ।

আবরন বলল ,

– হুম । আমি এই প্রথম এলাম । তবে ছবিতে ডেকোরেশনের পর দেখছি । এই বাংলোটা একদম নতুন ।

– ও ।

আবরন বলল ,

– তুমি শাওয়ার নিয়েছো ভালো কথা চুল গুলো ভালো করে মুছো নি কেন ??
চুল দিয়ে তো পানি পড়ছে ।

পূর্ণতা হাতে থাকা টাওয়ালটা দিয়ে চুল গুলো মুড়িয়ে নিল ।

আবরনকে টাওয়াল শুকাতে দিতে দেখে পূর্ণতা বলল ,

– আপনি‌ও শাওয়ার নিয়েছেন নাকি ?

– হুম । আমার মাথা ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছিল ।

পূর্ণতা বলল ,

– আমারো এক‌ই অবস্থা । রাতে ঘুম না হলে মাথা ব্যথা করে ।

আবরন বলল ,

– চলো , নিচে যাই । প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে । পেটের ইঁদুর মরে পঁচে যাচ্ছে ।

পূর্ণতা বলল ,

– আপনি বের হন । আমি আসছি ।

পূর্ণতা ঘরের ভেতরে ঢুকতেই দেখল প্রেনা বের হচ্ছে ওয়াশরুম থেকে ।

পূর্ণতা প্রেনাকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– রেডি হয়ে নিচে আয় খেতে । আমি যাচ্ছি ।

– আচ্ছা ।

পূর্ণতা ওরনাটা গলায় পেঁচিয়ে দরজা খুলে রুম থেকে বের হতেই দেখল আবরন নিজের রুমের দরজার বাহিরে সামনের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে ।

আবরন কথা বলতে বলতে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করলো ওর দিকে এগিয়ে যেতে ।

পূর্ণতা আবরনের সামনে এগিয়ে যেতেই আবরন পূর্ণতার হাত ধরে হাটতে শুরু করলো ওকে নিয়েই আর আরেক হাত দিয়ে ফোনে কথা বলছে ।

আবরন বলছে ,

– আমরা একসাথেই আছি ।

– ……………

– কথা বলবে ?

– ……………

আবরন পূর্ণতার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,

– আম্মু কথা বলবে তোমার সাথে ।

পূর্ণতা ফোনটা হাতে নিয়ে সালাম দিয়ে বলল ,

– কেমন আছেন আন্টি ?

– আলহামদুলিল্লাহ মা । তোমার কি অবস্থা ? অসুবিধা হয় নি তো যেতে ?

– না , ভালোভাবেই এসেছি । কোনো সমস্যা হয়নি ।

– যাক , ভালো । তোমার আম্মুকে গিয়ে আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছি । ভাবলাম , মিলি ও বাসায় একা , আমিও একা । তাই নিয়ে আসলাম ।

– বাহ , ভালোই হয়েছে । তোমরা এখন গল্প ক‍রে দিন কাটাতে পারবে ।

আধিরা আনজুম হেসে বলল ,

– খাওয়া দাওয়া করো ঠিক মতো । ঔষধ গুলো ঠিক মতো খেয়ে নিও ।

– আচ্ছা ।

– মিলির সাথে কথা হয়েছে ?

– হু , এসে বলেছিলাম একটু । কিন্তু আম্মু তখন‌ আমাকে বলে নি যে আম্মু তোমাদের বাসায় ।

– সারপ্রাইজ দিল তোমাকে । আচ্ছা , রাখছি এখন । এনজয় করো তোমরা । সাবধানে থেকো । একা একা কোথাও যেও না কেমন ?

– চিন্তা করো না আন্টি । ওকে , রাখছি তাহলে । আল্লাহ হাফেজ ।

– আল্লাহ হাফেজ ।

পূর্ণতা যতক্ষন ফোনে আধিরা আনজুমের সাথে কথা বলছিল ততক্ষন আবরন ওর দিকে তাকিয়েছিল । আধিরা আনজুমের সাথে বিনয়ের সাথে হেসে কথা বলা আবরনের মনে প্রশান্তি নিয়ে আসে ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিতেই আবরনের ধ্যান ভাংলো । আবরন ফোনটা পকেটে নিয়ে বলল ,

– চলো , নিচে গিয়ে বসি । সবাই আসলে তারপর এক সাথে খেতে বসবো ।

– আজান দিয়েছে মাগরিবের ?

– না , আরেকটু পর দিবে ।

– ওও , আচ্ছা চলুন ।

পূর্ণতা আর আবরন হেঁটে সিড়ির দিকে যাচ্ছিল তখন দরজা খুলে রুহি আর নীরা বের হলো ।

পূর্ণতা আর আবরনকে একসাথে দেখে বলল ,

– ওয়াও , এরাই কি সুন্দর সবসময় একসাথে থাকে । আর রুহি আপু আর আমি দুইটা গাছ বলদের সাথে প্রেম করি যাদের কিনা টেনে হিচড়ে কাছে আনতে হয় ।

পূর্ণতা ওদের দেখে আবরনের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য হাত মোচড়াতে শুরু করলো । আবরন ইচ্ছে করেই ওদের দেখিয়ে পূর্ণতা কে টেনে ওর কাছে এনে বলল ,

– আমরা ইউনিক কাপল , তাই সবার থেকে আমাদের সম্পর্ক টা একটু ভিন্ন !! তোমাদের বুঝতে হবে ছোট বোনেরা ।

রুহি হেসে বলল ,

– কারো নজর যেন না লাগে তোমাদের ওপর !!

পূর্ণতা মনে মনে বলল ,

– অসভ্য লোক কোথাকার !! খালি সবাইকে উপর উপর ভালোবাসা দেখিয়ে যাচ্ছে কখন থেকে , যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকেন তাহলে আমাকে বললেই তো হয় । কি একটা ব্যাপার ?? সবাইকে দেখাচ্ছে আমরা কাপল আর এদিকে উনার আর আমার সম্পর্ক কচুর মতো !! যত্তসব ।

পূর্ণতা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আবরনকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে । নিচে চলুন ।

আবরন বলল ,

– ওকে , চলো ।

………………………………………………..

খাবার দাবার খেয়ে সবাই ড্রয়িং স্পেসে একসাথে বসেছে ।

জিব্রান বলল ,

– আজকের দিনটা তো এভাবেই কেটে গেল । কাল কোথায় বের হবো ??

ফাহিম বলল ,

– যেহেতু , কালকের দিনটায় ঘুরতে বের হবো , সেহেতু সরকারি ছুটিতে বন্ধ এমন জায়গায় গেলে চলবে না । কারন কাল ২৬ শে মার্চ ।

তাসিন বলল ,

– তা ঠিক । কাল‌ তো সে হিসেবে সব‌ই বন্ধ । তাহলে যাবো কোথায় ?

আয়মান বলল ,

– আবরন বল ! তোর তো জানার কথা !

আবরন বলল ,

– পাহাড় দেখতে চাও নাকি সমুদ্র সৈকত ?? যেকোনো একটা বলতে হবে !!

নাদিরা বলল ,

– কোন জায়গায় গেলে বেশি মজা পাবো ?

আবরন বলল ,

– চালন্দা গিরিপথে গেলে মজা পাবে ! কারনটা হচ্ছে , সেখানে গেলে বন , পানি , পাহাড় সব‌ই দেখতে পারবে । আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে জায়গাটা কিছুটা এডভেঞ্চার টাইপ । সেখানে দলবল নিয়ে গেলেই ভালো । তবে একসাথে থাকতে হবে । কারন এবড়োথেবড়ো পথ , হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । আমরা টোটাল ১০ জন আছি । আমি বাবাকে বলে দুজন গাইডের ব্যবস্থা করে টোটাল ১২ জন যেতে পারবো চালন্দা গিরিপথে । এখন সবাই রাজি থাকলে বিষয়টা এগিয়ে নিয়ে যাব ।

সবাই বলল ,

– তাহলে এখানেই যাবো ।

আবরন বলল ,

– আরেকটা সমস্যা আছে ।

সবাই প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,

– কি সমস্যা ??

আবরন বলল ,

– সমস্যা টা মেয়েদের নিয়ে । তোমরা মেয়েরা যেই ড্রেস এনেছো , সেগুলো পড়ে তো ঐ জায়গায় যেতে পারবে না ।
ঐখানে যেতে হলে সবচেয়ে ভালো হবে জিনস্ , টি-শার্ট আর কেডস্ পড়ে গেলে । কারন ওখানকার মেইন প্লেস টা রাইড করতে হলে অন্য ড্রেসে গেলে পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে , কারন জায়গা এমন যে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান দিয়ে আমাদের দুই পায়ে দুই পাহাড়ের গায়ে ভর করে হেঁটে চলতে হবে আর নিচে পানির স্রোত । বুঝতেই তো পারছো এখন যে জায়গাটা যতটা এডভেঞ্চার টাইপ ততোটাই বিপজ্জনক ও ।

জিব্রান বলল ,

– যারা মেয়ে আছো , তোমরা কেউ টিশার্ট , জিনস্ , কেডস্ এনেছো ?

নাদিরা বলল ,

– আমার জিনস্ আর কেডস্ আছে ।

রুহি আর নীরাও এক‌ই কথা বলল ।

প্রেনা বলল ,

– আমার শুধু কেডস্ আছে ।

পূর্ণতা বলল ,

– আমি শুধু স্নিকারস্ এনেছি । কিন্তু জিনস্ , টি শার্ট তো আমি পড়ি না ।

আবরন বলল ,

– ওকে গাইজ । চিন্তার কিছু নেই । আজকে রাতের ভেতর সব ব‍্যবস্থা করছি ।

জিব্রান বলল ,

– ওকে , তাহলে সব তোর উপর ছেড়ে দিলাম ।

আয়মান বলল ,

– বাই দ্য ওয়ে , এখন কি কেউ একটু বাহিরে যাবে ??

আবরন বলল ,

– পেছনে বিশাল বড় জায়গা আছে । সেখানে ঘুরে দেখতে পারিস ।

জিব্রান বলল ,

– নাদিরা তুমি কি বাহিরে যেতে চাইছো ?

নাদিরা বলল ,

– তুমি রাজি হলে যাবো ।

– না , আসলে আমার খুব টায়ার্ড লাগছে । কিন্তু তুমি চাইলে আমি তোমার সাথে ঘুরতে রাজি আছি ।

নাদিরা জিব্রানের কপালে গালে হাত দিয়ে বলল ,

– জ্বর এসেছে নাকি ??

– না , মাথা ভার হয়ে আছে ।

– আচ্ছা , ঠিক আছে । যেতে হবে না কোথাও । তোমার রুমে চলো । আমি মাথা ম্যাসাজ করে দিচ্ছি ।

– সত্যি বলছো ? রাগ করবে না তো ?

– বোকা নাকি তুমি ? এখানে রাগ করার কি আছে ? চলো চলো , উপরে চলো ।

জিব্রান বলল ,

– ওকে , তোরা থাক , এনজয় কর । আলাদা হয়ে কোথাও যাস না । আর বাংলোর সীমানার ভেতরেই থাকিস ।

সবাই জিব্রানের কথা মতো ওকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ল । শুধু দাঁড়িয়ে র‌ইল আবরন আর পূর্ণতা ।

জিব্রান আর নাদিরা উপরে রুমে চলে গিয়েছে ।

পূর্ণতা দাঁড়িয়ে আবরনের দিকে তাকিয়ে থেকে সিড়ির দিকে যেতে নিচ্ছিল আর আবরন ওকে তখন‌ই থামিয়ে দিয়ে বলল ,

– উপরে কোথায় যাচ্ছো ?

– আমি খুব টায়ার্ড । একটু রেষ্ট নিব ।

– উহু , কোনো রেষ্ট এর দরকার নেই । তুমি একটু ওয়েট করো এখানে । আমি আসছি ।

এই বলে সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে যেতে যেতে পূর্ণতা কে আবারো দাঁড়াতে বলল ।

পূর্ণতা আবরনের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে র‌ইল ।

আবরন উপরে গিয়ে নিজের রুমে ঢুকলো । পূর্ণতা সোফায় বসে র‌ইল ।

কিছুক্ষনের মধ্যেই আবরন ওর গিটারের ব্যাগ সাথে নিয়ে নিচে নেমে এলো ।

– চলো !

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– কোথায় ??

আবরন পূর্ণতার হাত আলতো করে ধরে ওকে সাথে নিয়ে যেতে যেতে বলল ,

– চলোই না । গেলেই দেখতে পাবে ।

বাহিরে যেতেই পূর্ণতা খেয়াল করলো বাকিরা সবাই ঝর্ণার আলোর ধারে ।

ঝর্নার দিকটায় হেঁটে যেতেও মিনিমাম ৩-৪ মিনিট সময় লাগবে ।

আবরন পূর্ণতা কে সাথে নিয়ে বাড়ির পেছন দিকটায় গেল ।

পূর্ণতা আবরনকে বলল ,

– সবাই তো ঐদিকে । আমরা এদিকে কোথায় যাচ্ছি ??

আবরন বলল ,

– সসসসসসস্ !! ওরা দেখলে আমাদের এসে জ্বালাতন করবে । তার চেয়ে বরং আমরা একাই যাই ।

– কিন্তু যাচ্ছি টা কোথায় বলবেন তো ??

আবরন কোনো জবাব দিল না। পূর্ণতার হাত ধরে ওকে নিয়ে হেঁটে যেতে লাগল । রাতের অন্ধকারে নরম তুলতুলে ঘাস গুলো মাড়িয়ে ওরা হাঁটছে । দুপাশে দোয়ালে লাইট । ৫ মিনিট হাঁটার পর আবরন পূর্ণতা কে একটা এমন জায়গায় নিয়ে পৌঁছালো যেখানে গাছগাছালি ভেদ করে হালকা আলো সায় দিচ্ছে । কিন্তু সেখানে দাঁড়ালে আকাশটা পরিষ্কার দেখা যায় ।

আবরন দাঁড়িয়ে গিয়ে কাউকে কল করে বলল ,

– আজ রাতের মধ্যে আমার পলো শার্ট , আর জিনস্ গুলো চাই । সাইজ গুলো ম্যাসেজ করে দিচ্ছি ।

তারপর কলটা কেটে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে আবরন সেখানেই ঘাসের উপর বসে পূর্ণতাকে ও বসতে বলল ।

পূর্ণতা আশেপাশে তাকিয়ে জুতো খুলে রেখে আবরনের সামনে মুখোমুখি হয়ে বসলো ।

আবরন গিটারের ব্যাগ থেকে গিটারটা বের করে বলল ,

– এখন আমার একটা খুব পছন্দের আবার খুব অপছন্দের একটা গান‌ই গাইবো ।

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– মানে ? একটা গান মানুষের কি করে একসাথে পছন্দ আর অপছন্দের হতে পারে ??

– গানের কিছু লাইন খুব‌ই অপছন্দের আবার কিছু লাইন পছন্দের ।

– ইন্টারেস্টিং !!

– শুনবে ??

– হুম ।

– ওকে ফাইন ।

আবরন কাশি দিয়ে গলা ঝেড়ে গিটারে সুর তুললো ।

পূর্ণতা সুর শুনেই বুঝলো গানটা খুব ভালো করেই ও জানে । তাই মুচকি হেসে আবরনের দিকে তাকালো ।

আবরন গিটারের দিকে তাকিয়ে সুর দিচ্ছিল । গিটার থেকে চোখ তুলে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করলো ,

Dua Bhi Lage Na Mujhe

Dawa Bhi Lage Na Mujhe

Jab Se Dil Ko Mere Tu Laga Hai

Neend Raaton Ki Meri

Chahat Baaton Ki Meri

Chain Ko Bhi Mere Tune

Yun Thaga Hai

Jab Saanse Bharu Main

Band Aankhein Karun Main

Nazar Tu Yaar Aaya

Dil Ko Karaar Aaya

Tujhpe Hai Pyaar Aaya

Pehli Pehli Baar Aaya Oh Yaara

🎶🎶🎶🎶🎶🎶

Dil Ko Karar Aaya

Tujhpe Hai Pyaar Aaya

Pehli Pehli Baar Aaya Oh Yaara

Har Roj Puche Yeh Hawayein

Hum Toh Bata Ke Haare

Kyun Jikar Tera Karte Hai Humse Taare

Har Roj Puche Yeh Hawayein

Hum Toh Bata Ke Haare

Kyu Jikar Tera Karte Hain Humse Taare

Ab Kisse Hai Tere

Inn Hothon Pe Mere

Izhaar Aaya Yaara

Dil Ko Karar Aaya

Tujhpe Hai Pyaar Aaya

Pehli Pehli Baar Aaya Oh Yaara

Dil Ko Karaar Aaya

Tujhpe Hai Pyaar Aaya

Pehli Pehli Baar Aaya Oh Yaara ♥️♥️♥️♥️♥️

আবরন গান গেয়ে থামতেই দেখল পূর্ণতা এক ধ্যানে ওর‌ই দিকে তাকিয়ে আছে ।

আবরন ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসি এনে পূর্ণতার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল ,

– ম্যাডাম , বাকি সবার মতো আপনিও কি আমার প্রতি বিমোহিত এবং ক্রাশিত ??

পূর্ণতা আবরনের তুড়ির শব্দে ধ্যান ভাংতেই আবরনের কথা গুলো শুনে ভেংচি কেটে বলল ,

– জি না ।

তারপর পূর্ণতা উঠে দাঁড়িয়ে জুতো পড়ে বলল ,

– আমি গেলাম ।

আবরন ও গিটার হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গিটার ব্যাগে ঢুকিয়ে ওর পেছনে দৌড়ে যেতে যেতে বলল ,

– যেও না , দাঁড়াও ।

পূর্ণতা দাঁড়িয়ে পেছনে তাকাতেই দেখল আবরন ওকে বলছে ,

– চলো , আরেকটা জায়গায় নিয়ে যাবো ।

– আবার কোথায় ?

– ছাদে ।

– এই রাতের বেলা ?

– হুম ।

আবরন পূর্ণতার হাত ধরে ওকে নিয়ে ছাদের সিড়ির দিকে গেল । ছাদের সিড়িটা পেছনের দিকে । তাই ওদের সুবিধা হলো । সামনে গিয়ে কারো মুখোমুখি হতে হয় নি ।

আবরন পূর্ণতার হাত ধরেই ওকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে তিনতলায় ছাদে প্রবেশ করলো ।

ছাদটা অসম্ভব সুন্দর । ছাদে রেলিং করার পরেও সামনে বারতি জায়গা রেখে বাগান করা হয়েছে । ছাদের এক কোনায় দোলনা আছে । সেখানে দুইপাশে গাছ আর মরিচা বাতি দিয়ে ডেকোরেশন করা ।

আরেক দিকে চা-নাস্তা খেতে খেতে আড্ডা দেওয়ার জন্য কিছু চেয়ার আর একটা টেবিল রাখা আছে । সেখানটায় ও সুন্দর ঝুলন্ত বাতি দিয়ে সাজানো । সব কালার ফুল লাইট গুলো এখন জ্বলছে বিধায় ছাদ খুব সুন্দর লাগছে । আর সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে ছাদে থাকা ছোট খাটো একটা সুইমিংপুল । বিভিন্ন রং এর আলোতে পুলের পানি চিকচিক করছে ।

আবরন ডেকে বলল ,

– দেখো , আজ আকাশে কত তারা !

পূর্ণতা আকাশের দিকে তাকাতেই দেখল সেখানে হাজারো তারার মেলা ।

দক্ষিণ দিক থেকে মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ নিয়ে হাওয়া বেসে আসছে । আবরন বলল ,

– চলো , রেলিংয়ের উপরটায় বসে গল্প করি ।

– কি গল্প করবো ?

– যে কোনো কিছু । চলো বসি । এসো , মজা হবে ।

পূর্ণতা আবরনকে ‘না’ করলো না । ওর কথা মতো ওর সাথে রেলিংয়ের উপর উঠে বসলো ।

আবরন বলল ,

– এখানে পড়ে যাওয়ার ও কোনো সম্ভাবনা নেই কারন বাড়তি জায়গা রেখে গাছ লাগানোর জন্য ।

পূর্ণতা বলল ,

– হুম , ছাদটা খুব সুন্দর । বিশেষ করে এই বাসাটা । মন চাইছে , সারাজীবন এখানেই থেকে যাই ।

– তাই ?

– হুম ।

আবরন পূর্ণতার মাথায় হাত রেখে বলল ,

– ওকে , দোয়া করে দিলাম যেন একদিন তোমার এই আশা পূর্ণ হয় ।

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– আপনার দোয়া কাজে না‌-ও আসতে পারে ।

আবরন হেসে বলল ,

– সেটা সময়‌ই বলে দেবে ।

পূর্ণতা বলল ,

– চলুন , গুনে দেখি আকাশে কয়টা তারা বেশি চিকচিক করছে ।

– কি বলছো কি ? তারা গুনতে গুনতে তো বুড়ো হয়ে যাবো ।

– আরে না । যেখুলো বেশি উজ্জ্বল , শুধু সেগুলো । যেমন , শুকতারা । ওটা বেশি উজ্জ্বল ‌। তারপর কোনটা বেশি উজ্জ্বল সেপা খুঁজে বের করবো ।

– ওকে , ফাইন ।

আবরন আর পূর্ণতা তারা গননার প্রতিযোগিতায় নামলো । পূর্ণতা তারা গুনতে গুনতে ঘুমে আবরনের কাধে মাথা রেখে ঢলে পড়ল । আবরন বিষয়টা টের পেতেই ঘূমন্ত পূর্ণতার গালে হাত রেখে কিছু একটা ভেবে তারপর সেখানেই চুপচাপ বসে র‌ইল ।

হঠাৎ আবরনের ফোনটা বেজে উঠতেই আবরন পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখল জিব্রান কল করছে । আবরন ফোনটা রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে জিব্রান বলল ……………..

#চলবে ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here