ভালোবাসি বলেই তো পর্ব -৩৫+৩৬

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৫

প্রেনা আর পূর্ণতা ক্লাস শেষ করে করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে । ঠিক তখন ই প্রেনার কলটা বেজে উঠলো ।

প্রেনা ফোন ধরে দেখল আয়মান কল করছে । প্রেনা ফোন রিসিভ করতেই আয়মান বলল ,

– আমরা সবাই বট তলায় আছি । জলদি চলে এসো ।

– ঠিক আছে আসছি ।

প্রেনা কল কেটে পূর্ণতা কে বলল ,

– বট তলায় যেতে বলছে আয়মান ।

– কেন ?

– সবাই নাকি ঐখানে ।

– ওও ।

পূর্ণতা আর প্রেনা টুকটাক কথা বলতে বলতে বটতলার দিকে ক্যাম্পাসের মাঠ পেরিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ।

বটতলার সামনে গিয়ে পৌঁছতেই দেখা গেল সেখানে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান মিলে গল্প করছে ।

তাসিন ওদের দেখে প্রেনাকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– আমাদের ভাবি জি এসে গিয়েছে ।

প্রেনা হেসে আয়মানের সাথে বসে বলল ,

– আবরন ভাইয়া কোথায় ? ভাইয়াকে তো কালকে ধন্যবাদ টা ও দিতে পারলাম না !

পূর্ণতা প্রেনার কথা শুনে মনে মনে বলল ,

– তোর আবরন ভাই আছে শুধু কিভাবে অন্যকে বিয়ে করাবে আর সেই বিয়ে উপভোগ করবে সেই ধান্দায় ! এদিকে যে আমার বিয়ের কথা বার্তা চলছে সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ ই নেই ।

ভাবনার মাঝেই প্রেনার প্রশ্নের জবাবে ফাহিম বলল ,

– আজকে এত দিন পর মেডিক্যাল এ এসেছে সে । নিজের পার্সোনাল রুম গুছিয়ে তারপর গেল প্রোফেসরদের সাথে দেখা করতে ‌।

তাসিন বলল ,

– একটু পর কল দিলে আমাদের কেও যেতে হবে । আজ বোধয় নতুন কিছু পেসেন্ট এসেছে যাদের চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের ধারনা নেই । সেখানেই নিয়ে যাওয়ার কথা ! তাদের কিভাবে ট্রিট করতে হয় সেটা শেখাবে ‌।

প্রেনা বলল ,
– ওও ।

আয়মান বলল ,

– পূর্ণতা , তোমার কি মন খারাপ ? কথা বলছো না যে ?

পূর্ণতা বলল ,

– না , এমনি ।

ফাহিম বলল ,

– তুমি তো আজ প্রথম ক্লাস করলে তাই না ? তো কেমন লাগলো ?

পূর্ণতা এক গাল হেসে বলল ,

– অনেক ভালো ।

তাসিন বলল ,

– অনেক তো ঘুরলে ফিরলে ! এখন পড়াশোনা শুরু করে দাও । নাহলে পড়ে শেষে কুলাতে পারবে না ।

-হু , প্রেনার দেওয়া লাষ্ট ক্লাসের নোটস গুলোর সমস্যার সমাধান করা হয়নি । আর আজ ও নতুন কিছু সলভ করলাম ।

প্রেনা বলল ,

– আবরন ভাইয়া তো যাবেই তোকে সন্ধ্যায় পড়াতে !

পূর্ণতা বলল ,

– কি জানি ! যাবে কি যাবে না কে জানে ?

আয়মান হেসে বলল ,

– তুমি খাতায় লিখে রাখো যে আবরন তোমাকে পড়াতে যাবে আজকে ।

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– গ্যারান্টি দিচ্ছেন ভাইয়া ?

আয়মান বলল ,

– ধরে নাও তাই ।

ফাহিম বলল ,

– নাম নিতে নিতেই আবরন হাজির ।

পূর্ণতা পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখল ,
আবরন এদিকেই হেঁটে হাসছে । ও সোজা হেঁটে আসছে ঠিকই কিন্তু ওর আশেপাশের মেয়েরা ওকে দেখে আর সোজা হেঁটে যেতে পারছে ।

বিষয়টা দেখে তাসিন বলল ,

– এত দিন পর ড্যাশিং বয় ক্যাম্পাস কাপিয়ে হেঁটে আসছে , তাই সব মেয়েরা শিহরিত !

সবাই হেসে উঠল ।

পূর্ণতা সামনে ঘুরে তাকাল । কিছুক্ষণের মধ্যেই আবরন এসে হাজির হলো ।

– কিরে ! যাবি না তোরা ?

তাসিন বলল ,

– যাবো তো । তুই না বললি কল দিবি ? তাই তোর কলের অপেক্ষায় ই তো ছিলাম ।

আবরন বলল ,

– ও । ঠিক আছে চল এখন ।

আয়মান প্রেনাকে বলল ,

– ওকে , আল্লাহ হাফেজ ।

প্রেনা বলল ,

– আল্লাহ হাফেজ ।

পূর্ণতা কোনো কথা বলল না । সবাই এগিয়ে যেতেই আবরন পূর্ণতা কে বলল ,

– আজকে ক্লাস করে কেমন ফিল হচ্ছে ?

পূর্ণতা জবাব দিল ,

– ভালো ।

আবরন এক গাল হেসে বলল ,

– সন্ধ্যায় পড়াতে যাবো তোমাকে ।

পূর্ণতা মাথা নাড়ল ।

আবরন বলল ,

– আর একটা ক্লাস আছে না তোমার ?

– হু ।

– কয়টায় ?

– ১ টা ২০ এ ।

– শেষ কখন ?

– আমি তো জানি না ।

প্রেনা বলল ,

– ভাইয়া , ৫৫ মিনিটের ক্লাস । ধরে নিন ,২ টা ৫ এ ই শেষ ।

আবরন বলল ,

– ঠিক আছে । আমার সাথে যেও বাসায়।

এই বলে আবরন চলে গেল ।

…………………………………………………

২ টা ৩০ মিনিট ,

পূর্ণতা মেইন গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আবরনের অপেক্ষায় । আবরন তখন বলেছে ওর সাথে বাসায় যেতে । কিন্তু ওর আসার কোনো নাম গন্ধ পাচ্ছে না পূর্ণতা ।

প্রেনা অলরেডি অনেকক্ষন অপেক্ষা করে চলে গিয়েছে বাসায় । কারন , ইশিতা আলম কয়েকবার কল করেছে বাসায় যাওয়ার জন্য ।

প্রেনা পূর্ণতা কে বুঝিয়ে বলেছে যে , ভাইয়া না আসা পর্যন্ত কোথাও যাস না । আর একা একা বের হোস না ক্যাম্পাস থেকে ।

পূর্ণতা প্রেনার কথা মতো এখনো ক্যাম্পাসের গেইটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ।

অনেক বার কলে ট্রাই করেও আবরনকে পাচ্ছে না । আবরনকে কলে না পেয়ে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান কে ও ট্রাই করেছে , কিন্তু সবার ফোনই অফ বলছে ।

রেগে মেগে পূর্ণতা মেইন গেইট থেকে একটু দূরে ভেতরের বেঞ্চিটাতে গিয়ে মুখ ভার করে বসে র‌ইল ।

প্রায় ১৫ মিনিট বেঞ্চে বসে থেকে রাগে এখন জ্বলছে ওর শরীর । মনে মনে আবরনকে ১০০ টা গালি দিল । আর মনে মনে বলল ,

– আপনি না এলে আমি আজ যাবোই না ‌। আমি এখানেই বসে থাকবো । আপনি যেমন আমিও তেমন । হুহ ।

প্রায় ৩ টা ১০ বেজে গিয়েছে । পূর্ণতা এখনো সেখানে বসে আছে । আবরন এখনো আসে নি । এখন পূর্ণতার কান্না পাচ্ছে ।

মন খারাপ করে প্রেনা কে কল দিল । এখন প্রেনার কল টাও বিজি দেখাচ্ছে ।

জিব্রানকে কল দিবে কি দিবে না ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ একটা জিপ স্টাইলের ব্ল‍্যাক কার এসে থামল মেইন গেইটের সামনে ।

পূর্ণতা গাড়ির হর্ন শুনে গেইটের দিকে তাকিয়ে দেখল । পূর্ণতা ভেবেছিল আবরন হয়তো এসেছে কিন্তু না , এটা তো অন্য একটা গাড়ি । গাড়ির ভেতরে কি তা ও দেখা যাচ্ছে না ।

পূর্ণতা কিছুক্ষণ গাড়ির দিকে তাকিয়ে র‌ইল । প্রায় ৪-৫ মিনিট পর গাড়ির ডোর খুলে ধীর গতিতে কাউকে নামতে দেখা গেল ।

পূর্ণতা দেখল , গাড়ি থেকে একটা মধ্যম বয়সী ছেলে বাহিরে বেরিয়ে এলো । গায়ের রং ধবধবে সাদা । ছেলেটার হাইট অনেক তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে , মিনিমাম ৫ ফুট ৯-১০ ইঞ্চি তো হবেই ।

ছেলেটার পরোনে নেভি ব্লু স্যুট , চোখে নেভি ব্লু সানগ্লাস । চুলগুলো সাইজ ভাবে ডিজাইন করে কাটিং করা ।

পূর্ণতা ছেলেটাকে কিছুক্ষন উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে তারপর চোখ ঘুরিয়ে নিল ।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ৩ টা ১৮ বাজে । এবার সত্যিই ওর চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল । মনে মনে ভাবল ,

– আবরন , আপনি তো আমার বিষয়ে আগে কখনো এতোটা কেয়ারলেস ছিলেন না ! কিভাবে এতো টা বদলে যাচ্ছেন ? কিভাবে ?

ভাবনার মাঝেই একটা ছেলের কন্ঠ ভেসে আসতে লাগল । পূর্ণতা চোখ মুছে সামনের দিকে তাকাতেই দেখল সেই ছেলেটা ওর থেকে ২ হাত দূরে দাড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে ।
ছেলেটা কথা বলতে বলতে হয়তো সানগ্লাসের ভেতর দিয়ে পূর্ণতার দিকেই বার বার তাকাচ্ছে ।
পূর্ণতা বিষয়টা কিছুটা উপলব্ধি করতে পেরে ব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে হাঁটা ধরতেই পেছন থেকে ডাক পড়ল ।

– এক্সকিউজমি !

পূর্ণতা হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে গেল । ওর বুঝতে বাকি নেই পেছন থেকে সেই অচেনা ছেলেটাই ওকে ডাক দিয়েছে ।

পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে , ও কি করবে ? ছেলেটার ডাকে সাড়া দেবে নাকি সোজা মেইন ক্যাম্পাসে চলে যাবে ?

ছেলেটা আবারো ডাকলো ,

– হ্যালো ! আপনাকেই বলছি ! শুনুন !

পূর্ণতা বাধ্য হয়েই পেছনে ঘুরে তাকিয়ে বলল ,

– আমাকে ডাকছেন ?

ছেলেটা ধীর পায়ে এক দুই কদম পূর্ণতার দিকে এগিয়ে এসে বলল ,

– জি , আপনাকে ডাকছি । আপনি কি পূর্ণতা জামান ?

পূর্ণতা কিছুটা অবাক হলো নিজের নাম একটা অচেনা ছেলের মুখে শুনে । পূর্ণতা ভ্রু কূচকে বলল ,

– জি ! আমি পূর্ণতা জামান ।

ছেলেটা হেসে বলল ,

– আমি তো তোমাকে চিনেছি , তুমি কি চিনেছো ?

পূর্ণতার কেমন যেন আন ইজি ফিল হচ্ছে কারন একটা অচেনা ছেলের মুখে প্রথমত নিজের নাম শুনেছে এবং প্রথমবার ছেলেটা আপনি করে বললেও দ্বিতীয় বারে এসে আবার তুমি করে বলছে ! পূর্ণতা ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে বলল ,

– কে আপনি ? ঠিক চিনতে পারছি না ! আপনি কি এই ভার্সিটিতে পড়েন ?

ছেলেটা হেসে বলল ,

– আমার পরিচয় টা পরে দিচ্ছি । তার আগে তুমি বলো , তোমার ক্লাস আমার জানামতে আরো এক দেড় ঘন্টা আগে শেষ হয়েছে । তো তুমি বাসায় না গিয়ে এখানে কি করছো একা একা ?

পূর্ণতা মিথ্যা হাসি দিয়ে বলল ,

– সরি , একচুয়ালি একজন অচেনা ব্যক্তি হঠাৎ এতো ফ্রি লি আমার সাথে কথা বলছে এবং কেন বলছে তা আমি জানি না , কিন্তু এটা জানি আমি আপনার পরিচয় না জানার আগ পর্যন্ত আপনাকে কোনো জবাব দিতে বাধ্য ন‌ই । সরি ।

এই বলে পূর্ণতা হেঁটে চলেই যাচ্ছিল কিন্তু ছেলেটা আবার বলল ,

– আরে আরে , রাগ করেছো নাকি ! আচ্ছা , আমার পরিচয় দিচ্ছি ।

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে ছেলেটার দিকে তাকালো ।

– আমি সায়ন , তোমার ছোট খালামনির বড় ছেলে !

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে এক গাল হেসে বলল ,

– আর ইউ কিডিং মি ?

– নো , আ’ম রিয়েলি সায়ন । বিলিভ মি ।

– প্রমাণ কি ?

– ওয়েট । দিচ্ছি প্রমাণ ।

পূর্ণতা দেখলো ছেলেটা ওর পকেট থেকে ফোনটা বের করছে । ফোনটা বের করে কিছু একটা করে ওর দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,

– নাও , কথা বলো ।

পূর্ণতা বলল ,

– কার সাথে ?

– কার সাথে আবার ? মামনির সাথে !

– কে মামনি ?

– তোমার আম্মু , মিলি রহমান ।

পূর্ণতা ছেলেটার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে অবাক হয়ে বলল,

– হ্যালো !

ওপাশ থেকে মিলি রহমানের গলা ভেসে আসতেই পূর্ণতা ৪৪০ ভোল্টের শক খেয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো ।

– হ্যা , পূর্ণ ! শায়ন আজ‌ই বাংলাদেশ এসেছে । সিলেট না গিয়ে সরাসরি ঢাকা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যেই র‌ওনা হয়ে এসেছে । তুই ওর সাথেই বাসায় চলে আয় । ঠিক আছে , রাখছি । আল্লাহ হাফেজ ।

মিলি রহমান কল কেটে দিতেই পূর্ণতা পলকহীন চোখে হাবার মতো ছেলেটার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিল ।

সায়ন পূর্ণতার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে হেসে বলল ,

– কি , বিশ্বাস হলো ?

পূর্ণতা কি উত্তর দিবে বুঝলো না ।

সায়ন বলল ,

– ওকে , বাসায় যাবে না ?

পূর্ণতা বলল ,

– যাবো ।

– আমিও তোমাদের বাসায় যাচ্ছি । চলো আমার সাথে ।

– কিন্তু ?

– কিন্তু কি ? আরো কেউ যাবে ?

পূর্ণতার এই মূহুর্তে মাথা ঘুরছে । তাই সায়ন কে জবাব দিল ,

– না , চলুন । বাসায় যাই ।

– ওকে ।

সায়নের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা ভাবছে ,

– আবরন থাকলে তো উনার পাশের সিটে বসতাম । এখন কোথায় বসবো ?

ভাবনার মাঝেই সায়ন এসে গাড়ির ডোর খুলে দিয়ে বলল ,

– উঠো ।

পূর্ণতা দেখল সায়ন ড্রাইভিং সিটের অপর পাশের ডোর টাই খুলে দিয়েছে । ১৯/২০ না ভেবে পূর্ণতা গাড়িতে উঠে বসলো । সায়ন ডোর লাগিয়ে দিয়ে ঘুরে এসে পূর্ণতার পাশে ড্রাইভিং সিটে বসে সিট বেল্ট বাঁধতে শুরু করলো ।

সায়ন কে সিট বেল্ট বাঁধতে দেখে পূর্ণতা ও জলদি জলদি নিজের সিট বেল্ট টা বেঁধে নিল ।

সায়ন গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বলল ,

– অনেক বড় হয়ে গিয়েছো ! ভেবেছি , তোমাকে এসে বোধয় ছোট ই দেখবো ।

পূর্ণতা বলল ,

– বড় হ‌ওয়াটা কি স্বাভাবিক না ? আর আপনি আমাকে কি করে চিনলেন ?

– নিজের একমাত্র মামনির একমাত্র মেয়েকে চিনবো না ? কি করে ভাবতে পারো ?

– আমি কিন্তু আপনাকে চিনি না ।

– সমস্যা কি ? চিনে নিবে !

– আপনি আমাকে কোথায় দেখেছেন ?

– ছবিতে !

– ও ।

– তোমাকে দেখে বাংলাদেশ না এসে পারলাম না !

– মানে ?

– মানে , হচ্ছে আমার একমাত্র মামনির মেয়ে যে মামনির চেয়েও দ্বিগুণ রূপবতী তা তো জানতাম না , তাই সামনাসামনি দেখতে চলে এলাম ।

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– অস্ট্রেলিয়া তে তো আমার চেয়ে হাজার গুণ রূপবতী মেয়ে আছে । তাহলে সমস্যা কোথায় ?

– সমস্যা হচ্ছে , তারা তো পর । আর তুমি তো আপন ।

– আপনি খুব মজা করেন ।

– উহু , আমি সিরিয়াস ।

– আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না ।

– আস্তে আস্তে বিশ্বাস করতেও শিখে নাও ।

– কেন ?

– পরে কাজে লাগবে ।

…………………………………………………

কথা বলতে বলতে অবশেষে সায়ন আর পূর্ণতা আজিমপুর পৌঁছে গেল ।

পূর্ণতা দের বাসার গেইটে গাড়িটা রেখে দুজন‌ই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো ।

গাড়ি থেকে নামতেই পূর্ণতার ফোনে কল এলো । ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করতেই দেখল আবরন কল করছে ।

পূর্ণতা কলটা রিসিভ করে বলল ,

– বলুন ।

– কোথায় তুমি ?

– বাসায় ।

– চলে গিয়েছো ?

– হু ।

– একা ?

– তা জেনে আপনি কি করবেন ? আমি ভালো ভাবেই চলে এসেছি বাসায় । আপনার আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না । আল্লাহ হাফেজ ।

পূর্ণতা রাগ করে কলটা কেটে দিল ।

সায়ন বলল ,

– বয়ফ্রেন্ড তোমার ?

– না ।

– তাহলে ?

– ভার্সিটির ভিপি ।

– ও ।

– হুম । উপরে চলুন ।

– ওকে , চলো ।

…………………………………………………

কলিং বেল বাজাতেই মিলি রহমান জলদি জলদি দরজা খুলে দিল । দরজা খুলতেই বাহিরে সায়ন আর পূর্ণতা কে দেখে খুশি হয়ে গেল ।

শায়ন মিলি রহমান কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– আসসালামুয়ালাইকুম মামনি ।

– ওয়ালাইকুমুসসালাম । কেমন আছিস বাপ ?

– আলহামদুলিল্লাহ । ভেতরে ঢুকতে দেবে না ।

– তা আবার না দেব । আয় আয় ।

পূর্ণতা মনে মনে বলল ,

– উহ , আদিক্ষেতা ! জীবনে দেখলাম না একটা খোঁজ নিয়েছে , আমার আর ভাইয়ার ! এখন এসেছে ঢং দেখাতে !
কথায় কথায় ১০৪ টা মিথ্যা বলে । আর বিদেশি বলেই ফ্লার্টিং করতে করতে এলো প্রথম দিন‌ই । যত্তসব ।

পূর্ণতা সায়নের পাশ কেটে ভেতরে ঢুকে সোজা নিজের রুমে চলে গেল ।

ফ্রেশ হবে বলে দরজা লক করে ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল । ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখল ফোনে টুং টাং করে কয়েকটা ম্যাসেজ আসছে । পূর্ণতা নিজের টাওয়াল টা বারান্দায় মেলে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল আবরনের ম্যাসেজ । পূর্ণতা নটিফিকেশন এ ক্লিক করে দেখল আবরন লিখেছে ,

– I’m sorry . আজকে অনেক গুলো হসপিটালে যেতে হয়েছে । আর ফোন বন্ধ রাখা বাধ্যতামূলক ছিল । সামনে পরীক্ষা ধেয়ে আসছে । ভালো পয়েন্ট না পেলে তো এম.বি.বি.এস এর জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল এ আমার নাম আসবে না । তুমি কি চাও না আমি ডাক্তার হ‌ই ?

– আমি তোমাকে কল দেওয়ার চেষ্টা করেছি , কিন্তু বিলিভ মি , সুযোগ ই পাচ্ছিলাম না ।

– আমি জানি , তুমি অভিমান করেছো । কিন্তু প্লিজ , এখানে আমার কোনো দোষ নেই । আমি সন্ধ্যায় বাসায় আসছি । তোমাকে সব বুঝিয়ে বলবো ।
এখন প্রচুর মাথা ব্যথা করছে । গাড়িতে আছি । বাসায় যাচ্ছি । আল্লাহ হাফেজ ।

পূর্ণতা ম্যাসেজ গুলো পড়ে নিজের অজান্তেই হেসে উঠল । ওর মনটা এখন ফ্রেশ লাগছে । ফোনটা চার্জে লাগিয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে গেল পূর্ণতা ।#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৬

আফতাব উজ্জামান না খেয়ে বসে আছে । তার একটাই বায়না ,

– পূর্ণতা ফ্রেশ হয়ে আসুক , তারপর একসাথে খাবো । এতক্ষন অপেক্ষা করতে পেরেছি আর এইটুকু সময় পারবো না !

মিলি রহমান বললেন ,

– থাকো তুমি মেয়ের জন্য বসে । আমি গেলাম । আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না । মেয়ে এলে দুজনে মিলে খেয়ে নিও ।

– তা নিয়ে চিন্তা করো না । আমরা বাপ-মেয়ে মিলে মিশে খেয়ে নেব ।

এর‌ই মধ্যে পূর্ণতা হাজির হলো ।

– বাবা , তুমি এখনো খাও নি ?

– না রে মা , তোর জন্যই তো অপেক্ষা করছিলাম । আজ কতদিন পর একসাথে খাবো বলে ভেবে রেখেছি ।

– ঠিক আছে , আর কথা বলো না । হাত ধুয়ে বসো ।

আফতাব উজ্জামান চেয়ার ছেড়ে উঠে বেসিনে হাত ধুতে ধুতে বলল ,

– জিব্রান বলল তোর নাকি ২ টা ১০-১৫ তে ক্লাস শেষ । তাহলে তোর এতো দেড়ি হলো কেন ?

পূর্ণতা প্লেটে খাবার সার্ভ করতে করতে বলল ,

– ভাইয়া কি করে জানে আমার ক্লাস কয়টায় শেষ ?

আফতাব উজ্জামান হাত ধুয়ে আবার আগের জায়গায় এসে বসতে বসতে বলল ,

– তা আমি কি করে জানবো ! তুই বল তোর কেন দেড়ি হলো ?

– আসলে আবরন ভাইয়া আমাকে বলেছিল একা না যেতে । উনি ই আমাকে ক্লাস শেষ হলে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে যাবে । কিন্তু !

– কিন্তু কি !

– উনি আজকে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন , তাই আর আসতে পারে নি । আর ব্যস্ততার কারনে ফোনটাও অফ ছিল । তাই আমি বিষয়টা জানতে ও পারছিলাম না আর একা বাসায় চলে আসতেও পারছিলাম না ।

এর‌ই মধ্যে সায়ন এসে একগাল হেসে টেবিলের দিকে এগিয়ে চেয়ারে আফতাব উজ্জামান এর পাশে বসে বলল ,

– আমি না গেলে বোধয় পূর্ণতা আজ সেখানেই বসে থাকতো ।

আফতাব উজ্জামান হাসলেন সায়নের কথা শুনে ।

মিলি রহমান বললেন ,

– সায়ন , আজকে সব তোর পছন্দের রান্না হয়েছে । জলদি খেতে শুরু কর ।

– তুমি একদম চিন্তা করো না মামনি , আমি সব ই খেয়ে নেব ।

পূর্ণতা মনে মনে বলল ,

– ধুর ! বেশি তেল মেরে কথা বলা শুনলেই আমার একদম রাগ লাগে । যত্তসব আজাইরা ঢং ।

ভাবনা বাদ দিয়ে পূর্ণতা খেতে বসে পড়ল ।

সায়ন খেতে খেতে বলল ,

– জানো খালু ! তুমি না বললে আমি আসতাম ই না ।

– তাই নাকি রে ! কত বছর পর এলি বাংলাদেশ ?

– ১৬-১৭ বছর মিনিমাম ।

পূর্ণতা বলল ,

– আমি পৃথিবীতে এসছি কত বছর ?

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– ২০ বছর ।

পূর্ণতা সায়নকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

-হ্যা , ঠিক এই কারনেই আমি আপনাকে চিনি না ।

সায়ন বলল ,

– বয়সের সাথে আমাকে না চেনার কি সম্পর্ক ?

– আপনি যদি ১৬-১৭ বছর আগে দেশের বাহিরে গিয়ে থাকেন তখন আমার বয়স বেশি হলে ৩-৪ বছর হবে । এত ছোট বয়সে যদি আমি আপনাকে দেখেও থাকি তাহলে তো আমার মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক ।

– তুমি চাইলে আমার সাথে ফোনে এটলিস্ট যোগাযোগ করতে পারতে !

পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– এহ , খেয়ে দেয়ে আমার আর কাজ নেই । নিজে তো জীবনে সেধে আমার সাথে যোগাযোগ করতে আসেন নি । আজ হঠাৎ করে দেশে এসে এখন ভাব নিচ্ছেন । হুহ !

পূর্ণতা জলদি জলদি খেয়ে উঠে গেল ।

আফতাব উজ্জামান পূর্ণতা কে উঠতে দেখে বললেন ,

– কিরে ! এত জলদি উঠছিস যে ? আর খাবি না ?

– উহু । পেট ভরে গিয়েছে । আর মাথাটাও ব্যথা করছে । এখন একটা ঘুম দিব । সন্ধ্যায় নাহলে পড়াশোনা করতে পারবো না ।

– ঠিক আছে । যা তাহলে ।

– ওকে ।

পূর্ণতা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে রুমের পর্দা গুলো সব টান করে বিছানায় শুয়ে পড়ল । বিছানায় শুতেই ঘুমে তলিয়ে গেল পূর্ণতা ।

…………………………………………………

আবরন বাসায় এসে একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে গিয়ে ডায়নিং টেবিলে বসে আধিরা আনজুম কে উদ্দেশ্য করে ডাকতে শুরু করলো ,

– আম্মু , আম্মু !! ওও আম্মু !!

আধিরা আনজুম নিজের রুমে বসে ব‌ই পড়ছিলেন । ছেলের ডাক শুনে ব‌ই টা বিছানায় উল্টে রেখে এক প্রকার ছুটে গিয়ে বললেন ,

– এতক্ষনে এসেছিস ? আমি কতক্ষন যাবত খাবার টেবিলে সাজিয়ে বসে ছিলাম ‌ । তোর তো কোনো খবর ই নেই , তাই আবার একটু রুমে গিয়ে ব‌ই পড়তে শুরু করলাম ।

– ওও , আচ্ছা । অল্প করে বাড়ো । ক্ষুধা নেই ।

– কেন ? কি খেয়ে এসেছিস ?

– তোমার হবু বৌ মা এর বকা !

আধিরা আনজুম খাবার প্লেটে বাড়তে বাড়তে হেসে বললেন ,

– তা , বকা কেন দিয়েছে শুনি !

– ওকে বলেছিলাম আমার জন্য ওয়েট করতে ওর ক্লাস শেষ হলে , আমি ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো ।

– তারপর !

– ও তো প্রায় ২ ঘন্টার উপরে আমার জন্য ওয়েট করেছে ।

– তুই কোথায় ছিলি মেয়েটাকে একা ফেলে রেখে ?

– আজকে আমাদের বাহিরের কিছু হসপিটাল এ যাওয়ার কথা ছিল না ! সেখানেই ছিলাম । কিন্তু এতো লেইট হবে নিজেও বুঝতে পারি নি । আর ফোন দিয়ে ওকে এই টুকু বলার সুযোগ টা পর্যন্ত পাই নি যে ” আমার লেইট হবে । তুমি বাসায় চলে যাও । ”

– আহারে ! মেয়েটা তোর জন্য কতক্ষন বসে অপেক্ষা করেছে । রাগ অভিমান করাটা স্বাভাবিক ।

– হু ।

– তা শুধু শুধু তো আর বকে নি !

– হুম । এখন মাথা ব্যথা করছে । খাওয়া শেষে আমার সাথে আমার রুমে চলো । মাথা টা টিপে দিবে ।

– তা তো আমাকেই দিতে হবে । তোর মাথা টা তে এত চিন্তা যে কি আর বলবো ! মাথা ব্যথা , মাথা ব্যথা আর মাথা ব্যথা ।

আবরন হেসে খেতে লাগল ।

খাওয়া শেষে আবরন আধিরা আনজুম কে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে তার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে । আধিরা আনজুম ছেলের চুলগুলোকে টেনে দিচ্ছেন ।

আবরন বলল ,
– আম্মু জানো , পূর্ণতা ও খুব ভালো ভাবে চুল টেনে দিতে জানে ।

আধিরা আনজুম বললেন ,
– তাই নাকি রে ? তা অলরেডি এতো কিছু উপভোগ করে ফেলেছিস ?

– হুম , অনেক কিছু ।

– বিয়ে কবে করছিস ?

আধিরা আনজুমের কথা শুনে আবরন হেসে শোয়া থেকে উঠে বসলো । তারপর বলল ,

– বিয়ে করে নিতে বলছো ?

আধিরা আনজুম ছেলের প্রশ্ন শুনে শুধু হাসলেন । আবরন ও হেসে আবার মায়ের কোলে শুয়ে পড়ল ।

………………………………………………..

পূর্ণতা ঘুম থেকে উঠল মিলি রহমানের দরজা নকের শব্দ শুনে ।

– পূর্ণতা , এই পূর্ণতা !! পূর্ণ !! মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে মা ! উঠ !

পূর্ণতা জেগে মায়ের শব্দের সাড়া দিয়ে বলল ,

– আমি উঠেছি আম্মু ‌।

– আচ্ছা , ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আয় ।

– ওকে ।

পূর্ণতা বিছানা ছেড়ে উঠে রুমটা একটু গুছিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকল ।

কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে মুখটা টাওয়াল দিয়ে মুছে তা বারান্দায় মেলতে মেলতে হঠাৎ গাড়ির হর্নের শব্দ পেয়ে নিচে তাকালো ।

অন্ধকারের মধ্যেও গাড়িটা চিনতে পূর্ণতার একটুও কষ্ট হলো না । ও সাফ সাফ দেখতে পাচ্ছে এটা আবরনের গাড়ি ।

মুচকি হেসে পূর্ণতা বারান্দা লাগিয়ে রুমে চলে গেল । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ফেসটা একবার ভালো করে দেখে নিয়ে ওরনাটা ভালো করে শরীরে পেচিয়ে নিয়ে খুশি মনে দরজা খুলে বের হতেই যাচ্ছিল অমনি কারো সাথে স্বজোরে ধাক্কা খেল ।

– আউউউউ !! ( পূর্ণতা ব্যথা পেয়ে পড়ে গিয়ে শব্দ করে উঠল )

হাতের কনুই তে অনেকটা লেগেছে , কারন পড়ে যাওয়ার সময় দরজার কাঠামোর সাথে কনুই তে বারি লেগেছে । ব্যথায় পূর্ণতার চোখ ছলছল করে উঠল।

সায়ন পূর্ণতার রুমেই আসছিল আর পূর্ণতা তখন‌ই দরজা টা খোলাতে এক সাথে বারি খেয়ে গেল । সায়নের অবস্থানের পরিবর্তন না হলেও পূর্ণতা পড়ে গিয়ে ভালোই ব্যথা পেয়েছে ।

পূর্ণতা কে ব্যথা পেতে দেখে সায়ন ওকে ধরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল আর তখন‌ই কলিং বেল বেজে উঠল ।

মিলি রহমান নিজের রুম থেকে বেরিয়ে সোজা দরজা খুলে দিতেই আবরন মিলি রহমান কে সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল ।

ভেতরে ঢুকতেই আবরন ড্রয়িং রুম ক্রস করে ডায়নিং রুমে পা রাখতেই সেখান থেকে সরাসরি পূর্ণতার রুমের সামনে পূর্ণতা আর অন্য একটা ছেলেকে একসাথে দেখে আবরন কিছুটা চমকে উঠল । কিছুটা দ্রুত পায়ে পূর্ণতার সামনে এগিয়ে যেতেই দেখল ছেলেটা পূর্ণতা কে টেনে তুলছে । আর পূর্ণতা হয়তো কাদছে ।

পূর্ণতা কে কাদতে দেখে আবরন ছেলেটাকে ক্রস করে পূর্ণতার কাছে এগিয়ে গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করল ,

– হোয়াট হ্যাপেনড পূর্ণ ? কি হয়েছে ?

পূর্ণতা আবরনের গলা শুনে ওর দিকে ছলছল চোখে তাকাতেই আবরন আরো ব্যস্ত হয়ে পড়ল ।

– কি হয়েছে পূর্ণ ?

পূর্ণতা বলল ,

– তেমন কিছু না । ব্যথা পেয়েছি ।

সায়ন বলল ,

– একচুয়ালি , আই এম সরি পূর্ণতা ! আমি বুঝতে পারি নি যে তুমি তখন রুম থেকে বের হবে ।

আবরন সায়নের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার পূর্ণতার দিকে তাকালো । তারপর বলল ,

– হাত নীল হয়ে গিয়েছে আর তুমি বলছো তেমন কিছু না ?

ঘরের ভেতর শোরগোল শুনে মিলি রহমান আর আফতাব উজ্জামান সেখানে দৌড়ে এলেন ।

– কি হয়েছে ?

পূর্ণতা বলল ,

– কিছু না আম্মু !

আবরন বলল ,

– আন্টি আমার কথা শূনুন । ফ্রিজ থেকে জলদি আইস প্যাক টা আনুন ।

মিলি রহমান জলদি জলদি ফ্রিজ থেকে আইস প্যাক টা বের করে এনে আবরনের হাতে দিল ।

আবরন আইস প্যাক দিয়ে পূর্ণতার আঘাত প্রাপ্ত স্থানে আলতো করে চাপ দিয়ে ধরে ওকে বলল ,

– চলো , রুমে চলো ।

পূর্ণতা এক দু পা করে পেছনে গিয়ে আবার নিজের রুমে ঢুকে পড়ল ।

আবরন ওর হাতে আইস প্যাক চাপ দিয়ে ধরেই ওর সাথে ওর রুমে ঢুকে ওকে খাটে বসতে বলে নিজে হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসল ।

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– কিভাবে ব্যথা পেলি মা ?

পূর্ণতা কিছু বলার আগেই সায়ন সব খুলে বলল ।

আফতাব উজ্জামান সব শুনে পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– এখানে না তোমার দোষ আছে না সায়নের । এটা জাষ্ট একটা এক্সিডেন্ট !

আবরন পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– ব্যথা কমেছে কিছুটা ?

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে “হু” জানালো ।

আবরন বলল ,

– তুমি আইস প্যাক টা ধরো । আমি মেডিসিন দিচ্ছি , খেয়ে নাও ।

পূর্ণতা বলল ,

– মেডিসিনের ব্যাগ টা আমার ওয়ারড্রবের উপর আছে ।

– আচ্ছা , আমি দেখছি । তুমি ধরো এটা ।

পূর্ণতা আইস প্যাক টা আবরনের হাতের উপর দিয়ে আলতো ভাবে ধরতেই আবরন ও আলতো ভাবে আইস প্যাক টা ছেড়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো মেডিসিনের উদ্দেশ্যে ।

পূর্ণতা মিলি রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– ভাইয়া কখন আসবে আম্মু ?

এর‌ই মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠল ।

আফতাব উজ্জামান হেসে বলল ,

– ভাইয়ের নাম নিতে না নিতেই ভাই হাজির । আমি যাচ্ছি গেইট খুলতে ।

মিলি রহমান বললেন ,

– থাক তোরা । আমি গেলাম । কিছু লাগলে জানাস ।

– ঠিক আছে ।

মিলি রহমান আর আফতাব উজ্জামান দুজন‌ই একসাথে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ।

ওনারা বেরিয়ে যেতেই সায়ন পূর্ণতার পাশে বসে বলল ,

– সরি ।

পূর্ণতা এক দফা হেসে বলল ,

– ইটস ওকে ।

আবরন মেডিসিন নিয়ে পূর্ণতার হাতে দিয়ে সায়ন কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– পূর্ণতার দরজা দিয়ে লেগে আপনি কোথায় যাচ্ছিলেন ? আরেকটু দূর দিয়ে গেলে কিন্তু পূর্ণতা ব্যথা পেত না ।

সায়ন শুকনো হাসি দিয়ে বলল ,

– আমি আসলে পূর্ণতার রুমেই আসছিলাম ।

ওদের দুজনের কথা বার্তা শুনে পূর্ণতার কেমন যেন লাগছে । কারন দুজনেই হাসি মাখা চেহারার পেছনে কিছুটা ঝাঝালো মাখা কথা যে বলছে , তা পূর্ণতা ফিল করতে পারছে ।

আবরন আর কিছু না বলে ডায়নিং রুমে গেল পূর্ণতার জন্য পানি আনতে । সেখানে যেতেই জিব্রানের সাথে দেখা ।

– কিরে ! কখন এসেছিস !

– এই তো ভাইয়া ১০ মিনিট হবে ।

– ও ।

– কি হয়েছে রে ?

– পরে বলছি । তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও ।

– ঠিক আছে । পূর্ণতা কে পড়ানো শেষ হলে আমার রুমে আসিস ।

– ভালো কথা বলেছো তো ! আমি তোমাদের চট্টগ্রাম থেকে শপিং করা প্যাকেট গুলো নিয়ে এসেছি । কিন্তু সব গাড়িতে আছে । মনে করো তো ভাইয়া ।

– ঠিক আছে । পরে কথা হচ্ছে ।

জিব্রান নিজের রুমে চলে গেল । আবরন পানি নিয়ে পূর্ণতার রুমে গিয়ে ওর হাত থেকে আইস প্যাক টা নিয়ে ওকে পানির গ্লাস টা দিয়ে বলল ,

– মেডিসিনটা খেয়ে নাও ।

পূর্ণতা আবরনের কথা মতো মেডিসিনটা খেয়ে নিল ।

সায়ন উঠে দাঁড়িয়ে আবরনকে বলল ,

– আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না !

আবরন হেসে বলল ,

– আমি পূর্ণতার টিউটর ।

পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে আড় চোখে ওর দিকে তাকালো ।

সায়ন বলল ,

– ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড ! আমি কি একটা কথা বলতে পারি !

– হোয়াই নট ! বলুন ।

– আপনি কি একটু টিউটরের চেয়ে ওর প্রতি বেশি কেয়ার নিচ্ছেন না ?

আবরন কিছু বলার আগেই পূর্ণতা সায়ন কে বলল ,

– আপনি এখন যান । পরে আসবেন । আমাকে পড়তে হবে ।

সায়ন পূর্ণতার কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে আবার এক পলক আবরনের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে চলে গেল ।

সায়ন বেরিয়ে যেতেই পূর্ণতা দরজা টা লাগিয়ে আবরনের দিকে ঘুরে তাকিয়ে দেখল আবরন ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ।

পূর্ণতা হাতের গ্লাস টা সাইড টেবিলে রেখে আবরনের হাত থেকে আইস প্যাক টা টান দিতেই আবরন ইচ্ছে করে আইস প্যাক টা শক্ত করে ধরে রাখল ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– কি হলো ! ছাড়ুন !

– কাকে ? তোমাকে ?

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখল আবরন আবেগীয় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।

পূর্ণতার বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে ।

– পড়াবেন না নাকি !

আবরন আইস প্যাক টা আবারো পূর্ণতার হাতে চাপ দিয়ে ধরে ওর আরেকটু কাছে এসে স্বাভাবিক ভাবে বলল ,

– পড়াবো তো অবশ্যই ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– আচ্ছা , আপনি আর কয়জন মেয়েকে বাসায় গিয়ে পড়ান ?

আবরন ভাব নিয়ে বলল ,
– তোমার কি মনে হয় , আমার মতো ড্যাশিং এন্ড হ্যান্ডসাম একটা ছেলে ! সে কি না মেয়েদের বাসায় গিয়ে টিউশনি করাবে ?

পূর্ণতা ও ভাব নিয়ে বলল ,
– করাতে ও পারেন ! শুধু তা ই না , হয়তো ফ্লার্ট ও করেন !

আবরন আইস প্যাক টা টেবিলে রেখে পূর্ণতার দিকে পাঞ্জাবীর হাতা ফোল্ড করতে করতে এগিয়ে আসতে শুরু করলো ।

পূর্ণতা ভয়ে ঢোক গিলে মনে মনে ভাবছে ,

– একটু কি বেশি ই বলে ফেললাম মনে হচ্ছে !!

আবরন পূর্ণতার কাছে আসতেই পূর্ণতা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল ।

আবরন পূর্ণতা কে বলল ,

– কোথায় গেল এখন মুখের বলি ?

– সরি , সরি ।

– কি যেন করি আমি আবার একটু বলো তো !

– কিছুই করেন না । আপনি অনেক ভালো । আপনার মতো ছেলে হয়‌ই না । আপনি সুদর্শন এবং ড্যাশিং একটা ছেলে । আপনি কারো পেছনে ঘোরেন না কিন্তু সবাই আপনার পেছনে ঘোরে !

পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে এক নাগারে আবরনের সকল পজিটিভ দিক ওর সামনে তুলে ধরছে । আর এদিকে আবরন ওর রিয়েকশন দেখে হেসে হেসে ওর কথা শুনে যাচ্ছে ‌।

পূর্ণতা বলতে বলতে হয়রান হয়ে বলল ,

– আমি আর বলতে পারছি না ।

আবরন পূর্ণতার কানের কাছে গিয়ে বলল ,

– আর বলতেও হবে না ।

পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল আবরন ওর একদম কাছে আর সেটা ও নিজ চোখে দেখছে । আবরন পূর্ণতার নাকের কাছে নাক এনে ঘষা দিয়ে বলল ,

– নাকি নাকি !

পূর্ণতাও হেসে আবরনের নাকে ঘষা দিয়ে বলল ,

– নাকু নাকু ।

আবরন হেসে বলল ,

– তুমিও জানো !

পূর্ণতা হেসে আবরনের গালের সাথে গাল ঘষা দিয়ে বলল ,

– গালু গালু তুল তুল !

আবরন বলল ,

– হয়েছে হয়েছে । তোমার তুল তুলে গাল আমার দাড়ির সাথে ঘষা খেয়ে যাবে একদম ।

পূর্ণতা চোখ মুখ কুচকে হাত দিয়ে নিজের গাল ডলে বলল ,

– এই জন্য‌ই তো বলি গালটা জ্বলে যাচ্ছে কেন ?

আবরন হু হা করে হেসে উঠল ।

পূর্ণতা আবরনকে ধাক্কা দিয়ে বলল ,

– সড়ুন তো । চলেন , পড়াবেন আমাকে ।

আবরন হেসে বলল ,

– ইশশ , ফড়িং টা এসে যেন পাথরটা কে ধাক্কা মেরে দিল ।

পূর্ণতা রাগে জ্বলতে জ্বলতে টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ল ।

আবরন ও হাসতে হাসতে অপর চেয়ারটাতে গিয়ে বসল ।

পূর্ণতা গাল ফুলিয়ে নোটস বের করতে শুরু করলো ।

#চলবে ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here