❝রেষ্টুরেন্টে, হাতে বিয়ের কার্ড নিয়ে বসে আছে আরিয়া। আর আরিয়ার সামনে তার ভালোবাসার মানুষ রাতুল আর ফারিয়া বসে আছে দু’জন দু’জনার হাত ধরে। ফারিয়া আরিয়ার ফুফাতো বোন, যে একসময় আরিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। কিন্তু কেন জানি রাতুলের সাথে রিলেশন হওয়ার ১ বছরের মাথায় ফারিয়া অনেক বদলে গিয়েছিলো। আরিয়ার সাথে ঠিক মতো কথাও বলতো না। আরিয়াও আর জোরাজুরি করতো না৷ যে কারণে তাদের মধ্যে অনেক বড় দুরত্ব সৃষ্টি হয়।
এভাবে বসে আছো কেন? কার্ড টা খুলে দেখো।(রাতুল)
হুুম, বলেই আরিয়া কার্ড টা খুলতে লাগলো।
কার্ড টা খুলে ভিতরের লেখা গুলা পড়েই আরিয়ার চোখে পানি এসে গেছে। সাথে সাথে দম বন্ধ হয়ে আসছে। আরিয়া যেন আর দুনিয়ায় নাই।
মনের মাঝে থাকা কষ্ট আর চোখের পানি যেন আরিয়াকে পাথর বানিয়ে দিয়েছে। গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আরিয়া চোখে পানি নিয়েই অপলক দৃষ্টিতে রাতুলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো- এসব কী রাতুল?
রাতুল জবাব দিলো, কেন তুমি দেখতে পাও নি?
‘এসব কোন ধরনের মজা রাতুল? তোমার আর ফারিয়ার বিয়ে মানে কী?’ তুমি তো আমাকে ভালোবাসো, ফারিয়াকে কেন বিয়ে করবে?
হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসতাম। কিন্তু এখন আর তোমায় ভালোবাসি না!
এটা কেমন কথা রাতুল? তিন বছরের রিলেশন আমাদের আর আজ বলছো তুমি আমায় ভালোবাসো না? কিন্তু কেন? কি দোষ আমার?
আরিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসিনা কারণ…..
_আজ প্রথম রাতুলের মুখে পুরো নাম শুনে অবাক হলো আারিয়া। কারণ রাতুল সবসময়ই আরিয়াকে আরু বলেই ডাকতো।
রাতুলকে থামিয়ে ফারিয়া বলল, রাতুল তুমি চুপ কর আমি বলছি।
আজব তুই থেকে ডিরেক্ট তুমি তে চলে আসছে!
যেই রাতুল আমাকে ছাড়া কিছু বুঝতো না, কোন মেয়ের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতো না আজ সে কি না আমারি সামনে অন্য কারো হাত ধরে বসে আছে।
আরিয়ার ঘোর কাটে ফারিয়ার কথায়। রাতুল তোকে ভালোবাসতো আর বাসে না। তোর মতো মেয়েকে ভালোবাসতে ওর রুচিতে বাঁধে। রাতুল দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছে তুই ওর যোগ্য না। ওর পাশে শুধু আমাকেই মানায়। আর আমরা দু’জন দু’জনকে খুব ভালোবাসি। আশা করব আমাদের মাঝে আর তুই কাটা হবি না।
আরিয়া বিস্ফোরিত চোখে রাতুল আর ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে,, কী বলছে এসব! আমি রাতুলের যোগ্য না? মানছি ফারিয়া আমার থেকে অনেক বেশি সুন্দরী আর তার জন্যই রাতুল ৩ বছরের রিলেশনশিপ এভাবে শেষ করে দিলো। মানুষ সুন্দরের পূজারী তাই বলে ভালোবাসার কাছে সৌন্দর্যই বড় হয়ে গেলো? যখন আমি মজা করে রাতুল কে বলতাম, রাতুল আমি তোমার যোগ্য না। আমি দেখতে তেমন সুন্দরী না। তুমি তো আমার থেকে আরো ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করো।
তখন তো রাতুল বলতো, সৌন্দর্য দিয়ে কী ভালোবাসা হয় বলো! আমার তুমি থাকলেই চলবে। শুধু আমাকে ভালোবাসবে তাতেই হবে।
হ্যাঁ, আমিও ওকে খুব ভালোবেসেছি। আমার ভালোবাসায় কোন খুঁত রাখিনি। তাও এভাবে বদলে গেলো কেন রাতুল? 🙂 রাতুল আর ফারিয়াকে কথা বলতে দেখতাম। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিই কথা বলতো। আমাকেও মাঝে মাঝে ইগনোর করতো ফারিয়ার সাথে কথা বলার সময়। তাও আমি ওকে বিশ্বাস করতাম, ভালোবাসতাম। কখনোই এসব মাথায় আসেনি, সন্দেহও করিনি। দু’জনকেই খুব বেশি বিশ্বাস করতাম। আর এই বিশ্বাস টাই আমার কাল হয়ে দাঁড়ালো।
আরিয়া তুই আর কখনো রাতুলের সাথে যোগাযোগ করিস না। সামনের মাসের ১২ তারিখ আমাদের বিয়ে তুইও চলে আসিস। যতই হোক তুই তো আমার মামাতো বোন এমনও তো আসতেই হবে।
”হুম তা তো অবশ্যই যাবো। আর হ্যাঁ দু’জন কেই কংগ্রাচুলেশনস।
এটা বলেই ওদেরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে।
_আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতাম রাতুল তা তুমি ভালো করেই জানতে। তুমি আমাকে বার বার অবহেলা করে দূরে সরিয়ে দিতে! তা সত্বেও আমি সব ভুলে বারবার তোমার কাছেই ছুটে আসতাম একটু ভালোবাসা পাবো বলে। কিন্তু তার বিনিময়ে অবহেলা ছাড়া আর কিছুই পায়নি তোমার থেকে।
আর না! আমিও আজ থেকে তোমাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবো। নতুন জীবনে সুখী হও। তোমাদের পথে কাটা হয়ে থাকবো না আমি।
৩ টা বছর খুব ভালোই নাটক করলা। বুঝতেও পারিনি কখনো এত সুন্দর করে ভালোবাসার অভিনয় করে গেছো। এখন যে সৌন্দর্যের মোহে পড়েছো ভবিষ্যতে সেটাই যেন আবার কাল হয়ে না দাঁড়ায় তোমার জীবনে। যাই হোক খুব ভালো থেকো।
আল্লাহ হাফেজ।
মেসেজ টা দেওয়ার সাথে সাথেই ডাটা অফ করে ফোন টাকে ফ্লাইট মোড করে রেখে শাওয়ার নিতে গেলো আরিয়া।
__পানি ছেড়ে দিয়ে নিচে বসে পড়লো। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে আর বিরবির করে বলছে,,
আমি যাদের অনেক বিশ্বাস করতাম, সম্মান করতাম, ভালোবাসতাম তারাই আমাকে এভাবে ঠকালো। সেই মানুষ গুলাই আমার সাথে এভাবে বিশ্বাসঘাতকা করেছে, ধোঁকা দিয়েছে! অবশ্য এখন তো কাছের মানুষ গুলাই খুব যত্ন করে ধোঁকা দিতে পারে। যাদের কে কাছের ভাবা হয়, খুব করে বিশ্বাস করা হয় তারাই বিশ্বাসঘাতকতা করার অপরিসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। দেখা যাবে আমরা যাদেরকে ভালোবেসে বুকের খুব গভীরে ভালোবেসে জায়গা দিই তারাই একসময় বুকে ছুড়ি মেরে সব বিশ্বাস, ভালোবাসা নষ্ট করে চলে যাই।
আরিয়ার আম্মু রুমে এসে ওয়াশরুমের দরজায় কড়া নারে যার ফলে ভাবনা থেকে ফিরে আসে আরিয়া।
আরিয়া এতক্ষণ ধরে শাওয়ার নিচ্ছিস যে ঠান্ডা লেগে যাবে তো মা। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আয়।
আরিয়া কোন রকম নিজেকে স্বাভাবিক করে জবাব দিলো,, হ্যাঁ আম্মু আসছি।
তাড়াতাড়ি আয়। তোর আব্বু আর তোর ভাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে তাড়াতাড়ি খাবি আয়।
❝আচ্ছা আম্মু যাও আসছি।❞
__আরিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে ঘড়িতে ২টা বেজে ১৩ মিনিট। এতক্ষণ ধরে মা, বাবা আর ভাই আমার জন্য না খেয়ে বসে আছে আর আমি কিনা ওদের ভুলে রাতুলকে ভেবে কান্না করে যাচ্ছিলাম। আরিয়া আর কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি নিজের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ডাইনিং টেবিলে বসার সাথে সাথে আরিয়ার ছোট ভাই সাঁদ বলে উঠলো,,
‘ কি রে শাঁকচুন্নি এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো? ‘ ওয়াশরুমে কী খাইতে বসছিলি?
আম্মু দেখলে তো তোমার গুনধর ছেলে আবার শুরু করলো। আমি কী এখন ওর সাথে ঝগড়া করছিলাম? পরে তো আবার বলবে আমিই তোমার ছেলের সাথে ঝগড়া করি। ঝগড়ুটে একটা।(আরিয়া)
আরিয়ার আম্মু কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার আব্বু বললো,,, সাঁদ কী শুরু করছো এগুলা? আমার প্রিন্সেসটাকে এভাবে কেন জ্বালাচ্ছো? চুপচাপ খাও।
সাঁদ আর কিছু না বলে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
দুই ভাই-বোন মা বাবার দৃষ্টির আড়ালে দুষ্টমি করতে করতে খাবার খেয়ে নিল। তারপর আরিয়া আর সাঁদ নিজেদের রুমে চলে গেলো। আরিয়ার আব্বুও ওনার রুমে চলে গেলেন। আর আম্মু ডাইনিং টেবিলের সব কিছু ঘুচাতে শুরু করলেন।
_________________________________
এতক্ষণ মন ভালো থাকলেও রুমে এসে বুক শেল্ফের উপর চোখ পড়তেই আরিয়ার মন খারাপ হয়ে গেলো। ধীরে ধীরে বুক শেল্ফের দিকে এগিয়ে গেলো।
কাঁপা-কাঁপা হাতে বিয়ের কার্ডটা নিল।
খোলার সাথে সাথেই আবারও বুকের ভিতর ধক করে উঠলো।
‘যেই জায়গার আমার নাম টা লেখার কথা ছিলো সেই জায়গায় আজ অন্য কারো নাম বিরাজ করছে। কী এমন ক্ষতি হতো যদি ফারিয়ার জায়গায় আমার নামটা লিখা থাকতো। আল্লাহ খুব বেশি কিছু চাইছিলাম কী তোমার কাছে? একটা মানুষই তো চাইছিলাম তাও কেড়ে নিলা? এসব ভাবতে ভাবতেই আরিয়ার চোখটা ঘোলাটে হয়ে যাই।’
#চলবে
#সূচনা_পর্ব
#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে 💝
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা