#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্ব_১১
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা
কে এই লোক! বাই দ্যা রাস্তা, লোকটা আবার পাগল নয়তো। এ নিশ্চয় পাবনা থেকে পালিয়ে আসছে। এখন আমাকেও পাগল বানিয়ে ছাড়বে। আমার নাম্বার টাই বা কই পাইলো।
সব ভাবনা সাইডে রেখে আরিয়া নাম্বার টাই কল দিলো।
তিন থেকে চার বার ডায়াল করার পরও একটা কথায় আসছে আপনার ডায়াল করা নম্বর টিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আরিয়ার রাগটা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। শালা খবিশ, ইতর, বজ্জাত বেটা ফোন টাও অফ করে রাখছে। ধ্যাত ভাল্লাগে না।
মনে মনে কিছুক্ষণ গালি দিয়ে আরিয়া ফ্রেশ হতে চলে গেল।
___________________
আরু কাল তো ফারিয়ার গায়ে হলুদ। আমরা কখন যাব!(ছোঁয়া)
বিকালে!
তুই পারবি ঠিক থাকতে?
হুম অবশ্যই পারবো। পারতে তো হবেই। তাছাড়া বল কোনো বেইমানের জন্য নিজেকে কেন কষ্ট দিবো।
হুম দোস্ত। ভেঙে পড়লে চলবে না চিরদিন কেউ পাশে তাকে না।(অন্তু)
আচ্ছা তাহলে কাল আমরা তিনজন এক ড্রেস পড়বো ওকে!
হুম কিন্তু কী পড়ব।
হুলুদ আর বাসন্তী পাড়ের শাড়ি।
কিন্তু আরু তো শাড়ি সামলাতে হিমশিম খায়!
কিচ্ছু হবে না৷ আমিও তোদের সাথে শাড়িই পড়বো। আর আহু তুই কিন্তু হলুদ আর বাসন্তী মিশ্রণে পাঞ্জাবি পড়ে আসবি।
ঠিক আছে।
এখন চল শপিং করে বাসায় চলে যাই।
দাঁড়া ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলি আসতে।
ওয়েট! তোর ভাইকে কেন ডাকবি? আমরা কী হারিয়ে যাব নাকি?
আরে না ভাইয়াও তো যাবে কাল বিয়েতে।
তুর ভাইকে আবার কে ইনভাইট করলো?
আরু ভুলে গেলি নাকি তোর ফুফা আই মিন ফারিয়ার আব্বু আর আমার আব্বু বেস্টফ্রেন্ড।
ওহ্ হুম মনে ছিলো না।
হু সেই সুবাদেই আমাদের পুরো ফ্যামিলি কে ইনভাইট করেছে।
হইছে এখন তোর ভাইকে ফোন দে।
মার্কেটের সামনে শিশিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অন্তু জিজ্ঞেস করলো, কিরে আহু তোর ভাই তো দেখি আমাগোর থেকে ফার্স্ট। এত তাড়াতাড়ি কেম্নে আইলো?
আহিল বিরবির করে বলল,, সেটা কী আর তুই বুঝবি। ভাইয়া তো অনেক আগে থেকেই তার ভালোবাসার মানুষকে দেখবে বলে দাঁড়িয়ে আছে!
এএএএএএ কী বিরবির করস তুই। ভালা কইরা বল আমরাও শুনি।(অন্তু)
এই যে ক্ষ্যাত মার্কা কথা শুরু।
কী কইলি তুই!
এই গাধা তো সবসময় বিরবির করেই৷(আরিয়া)
হ ঠিক গাধা বলেই সবসময় বিরবির করে আর ঝগড়া করে।(ছোঁয়া)
কী এত বড় কথা। আমি গাধা! আরু বললি তুই আমাকে গাধা। এক্ষনি চা আমার কাছ থেকে ক্ষমা।(আহিল)
আমি তোর কাছ থেকে ক্ষমা কেন চাইবো? আমার তো ওই গাধা গুলোর কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
কেন?
বেচারা গাধা গুলোর না জানি কত কষ্ট হয়েছে যে আমি তোকে গাধা বলছি।
আরু একদম ঠিক কইছস।🤣
আহিল কিছু বলতে যাবে তার আগেই শিশির ওদের কাছে চলে এসলো। এই তোরা ঝগড়া ছাড়া কী এক মুহুর্ত থাকতে পারিস না? এই মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কী শুরু করলি! একটাও ভদ্রতা জানিস না নাকি!
এই যে মিস্টার শিশুর ভাষণ শুরু!(আরিয়া)
কি বললা তুমি? আমি শিশু? এই মেয়ে আমারে তোমার কোন দিক দিয়া শিশু মনে হলো? সময় মতো বিয়া করলে এত দিনে দু-চারটা বাচ্চার বাবা হয়ে যেতাম এতদিনে।
তো করেন নি কেন বিয়ে? আর একটু আগে আমাদের ভদ্রতা শিখাচ্ছিলেন আর এখন আপনি নিজেই ঝগড়া শুরু করলেন!(আরিয়া)
শিশির কিছুটা আহত সুরে উত্তর দিলো, বিয়ে টা তো কবেই করতে চাইছিলাম। কিন্তু সে তো আর আমায় ভালোবাসে না। আমায় বুঝে না। ভালোবাসার প্রতি যে তার একরাশ তীব্র ঘৃণা তৈরী হয়ছে। তবুও চেষ্টা করবো তার মন জয় করে নেওয়ার। আমার ভালোবাসায় তাকে রাঙিয়ে দেওয়ার।
আহিল তার ভাইয়ের অবস্থা বুঝতে পেরে ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল চিন্তা করিস না ভাইয়া সব ঠিক হয়ে যাবে।
ছোঁয়া ,আরিয়া, অন্তু দুই ভাইয়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আহিল পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলল,, সবাই কী রাস্তায়েই টাইম ওয়েষ্ট করবা নাকি?
না চল।
_____________________
আহু তোর ভাইয়ার চয়েস তো ফাটাফাটি।
হু বুঝতে হবে ভাইটা কার।😎
হইছে ভাব কম নে।
এখন আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য তোরা পাঞ্জাবি চয়েস করবি।
হুম ওকে।
শিশির আরিয়া আর ছোঁয়ার পছন্দ মতো পাঞ্জাবি নিল। আর আহিলের জন্য অন্তু শাড়ি চয়েস করল।
শপিং শেষে সবাই বেরিয়ে আসবে তখনি সায়ান আর তার ফ্রেন্ড জেসিয়া আসলো।
হেই গায়েস তোমাদের শপিং করা কমপ্লিট?
হুম ভাইয়া! তুমি এখন আসলা কেন?
আমাদের শপিং কমপ্লিট কিন্তু জেসি ছিল না সেদিন তাই আজ ওরে নিয়ে আসছি।
জেসিয়া সায়ানের হাত ধরে আছে দেখে ছোঁয়া রাগে ফুঁসছে। আরিয়ার কানে কানে বলল, দোস্ত এই মেয়েটা দিন দিন লুচি হয়ে যাচ্ছে।
কেন?
দেখ সায়ানের সাথে কীভাবে চিপকাইয়া দাঁড়াইয়া আছে!
তাতে তোর কী? তুই তো আর ভাইয়াকে ভালোবাসিস না!
ব্যাপার টা আহিল আর সায়ান খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। সায়ান তো ছোঁয়ার অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসছে।
তখনি আহিল বলে উঠলো,, কোথাও যেন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।
এই কোথায় আবার আগুন লাগলো?(অন্তু)
ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আহিল উত্তর দিলো,, কোথায় আবার! কারো হৃদয় পুড়ছে বুঝলি! 🥴
তোর মাথা পুড়ছে, বলেই ছোঁয়া বেরিয়ে আসলো।
বুঝলে ভাইয়া তাহার জেলাস ফিল হচ্ছে। কথায় আছে না মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না।(আহিল)
একদম মেয়েদের নামে বাজে কথা বলবি না। এখন চল না হয় ছোঁয়া একা একাই চলে যাবে।
_______________💛
পরেরদিন,,
সন্ধ্যার পর ফারিয়ার আর রাতুলের হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো। রাতুলের ইচ্ছে দুজনের একসাথেই হলুদের অনুষ্ঠান হবে। ফারিয়াদের বাড়ির সামনের বাগানেই হলুদের স্টেজ সাজানো হয়েছে।
দুজনকেই একসাথে বসানো হয়েছে। প্রথমে ফারিয়ার আর রাতুলের মা বাবা দুজনকে হলুদ ছোঁয়ালো।
এই আরু তোরা স্টেজে যাচ্ছিস না কেন? ফারিয়া বসে আছে তো তুই হলুদ ছোঁয়াবি বলে।
হ্যাঁ আম্মু যাচ্ছি।
ফারিয়া মনে ভাবছে,, ফারু তুই কী ভাবছিস আমি রাতুলকে হারানোর কষ্টে এতটাই বিভোর থাকবো যে তোদের কাছে যাবো না। তুই যে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগছিস সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।
শিশির, আহিল আর সায়ান বসে আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ শিশিরের চোখ গেলো আরিয়ার দিকে এক প্রকার থমকে গেছে সে। আরিয়াকে দেখে শিশির টাশকি খাইছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
হলুদ শাড়ি পড়া, কোমর ছাড়িয়ে যাওয়া চুল গুলা ছেরে দেওয়া। দুই হাত ভর্তি কাচের চুড়ি। হাল্কা মেকআপ। সব চেয়ে আর্কষণীয় জিনিস টি হলো আরিয়ার টানা টানা মায়াবী দুটো চোখ। সব মিলিয়ে হলুদ পরি লাগছে।
অন্তু আর ছোঁয়াও সেইম ভাবেই সেজেছে। তাদের দু’জনকেও খুব সুন্দর লাগছে। শিশির, আহিল, আর সায়ান হলুদ আর বাসন্তী মিশ্রণে পাঞ্জাবি পাজামা পড়েছে।
শিশিরের দৃষ্টি অনুসারে সায়ান আর আহিল তাকিয়ে দুজনেও টাশকি খাইছে৷ সায়ান তো বুকে হাত দিয়ে আহিলের উদ্দেশ্যে বলল,, আহু তোমার শাঁকচুন্নি বান্ধবীকে তো খুব তাড়াতাড়িই বিয়ে করতে হবে।
হুম করো। আমরাও একটা বিয়ে খাইতে পারমু৷
ভাই এমনে তাকাইস না। আমার বেস্টুর নজর লাগবে।
শিশির আহিলের কথায় কিছুটা লজ্জা পেল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কতগুলো ছেলে আরিয়াকে চোখ দিকে গিলে খাচ্ছে। মুহুর্তেই রাগ উঠে গেলো। ব্যাপার টা তার হজম হচ্ছে না। কে বলেছিল এতো সুন্দর করে সাজতে।
আরিয়ারা শিশিরদের কাছে গেলো। শিশিরের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। মুহুর্তেই শিশিরের রাগ গলে পানি হয়ে গেলো।
আহু আমাদের কেমন লাগছে?
সব গুলারেই শাঁকচুন্নির মতো লাগছে।
ধ্যাত তুই জীবনেও মানুষ হইবি না। সায়ান ভাইয়া তুমিই বলো আমাদের কেমন লাগছে?
খুব সুন্দর লাগছে। আরু আমার ইচ্ছে করছে এখনি তোর বান্ধবীকে বিয়ে করে ফেলি।
শালা লুচু কয়ডা লাগে আপনার? ওই জেসিরে যায়া বিয়া করেন। তখন তো জেসির হাত ধরে শপিং এ গেছিলেন। এখন আবার আমারে কেন বিয়ে করবেন লুচু কোথাকার। এই আরু এদিকে আয় বলেই ছোঁয়া চলে গেলো।
আরিয়াকে স্টেজের দিকে আসতে দেখে ফারিয়া আর রাতুল খুব অবাক হলো। ওরা কেউ ভাবতেও পারেনি আরিয়া হলুদের অনুষ্ঠানে আসবে।
আরিয়া দুজনের কাছে গিয়ে বললো,, ফারু এন্ড জিজু দু’জনকেই কংগ্রেস। ছোঁয়া তোরাও আয় ফারু আর জিজুকে হলুদ লাগাবি।
#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্বঃ_১২
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা
আরিয়া দুজনের কাছে গিয়ে বললো,, ফারু এন্ড জিজু দু’জনকেই কংগ্রেস। ছোঁয়া তোরাও আয় ফারু আর জিজুকে হলুদ লাগাবি।
আরিয়া হাতে হলুদ নিয়ে ফারিয়া আর রাতুলের পুরো মুখে মেখে দিল। সবাই আরিয়ার দিকে বিষ্ময় ভরা চোখ নিয়া তাকিয়ে আছে। আরিয়া যে এমন করবে কেউ ভাবতেই পারে নি।
আরিয়া এটা কী করলি? তুই জানিস আমি এসব একদম পছন্দ করি না তাই সবাই এতক্ষণ ধরে অল্প করে হলুদ দিচ্ছিল আর তুই পুরা মুখে একদম লেপ্টে দিলি!
কুল ডাউন ফারু। আজ এত রাগলে শ্বশুর বাড়ির লোক তোর আসল চেহেরা টা দেখে নিবে। সো আজ যা যা করবো চুপচাপ দেখে যা।
ফারিয়া আস্তে করে বলল,, আরিয়া কাজ টা একদম ঠিক করলি না।
ধ্যাত তোর ভালো আর খারাপ তোর খুলে নিয়া বসে থাক। আমার কী!
হঠাৎ আরিয়ার চোখ যায় রাতুলের দিকে! রাতুলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,, আরে জিজু তুমি কী নিজের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছ না? আবার একটু হলুদ দিব নাকি জিজু! বলেই একটা চোখ টিপ দিল।
রাতুল ঢোক গিলে বলল,, আরে না না অনেক দিছ আর দেওয়া লাগবে না।
হেই কও কী তুমি রাতুল! ওওও সরি জিজু আমরাও তো বাকি আছি। আফটার অল ফারিয়া আমাদের ফ্রেন্ড আর তুমি তো জিজু সো আমাদেরও তো একটা দায়িত্ব আছে নাকি! বলেই ছোঁয়া, অন্তু আর আহিল আরো কিছু হলুদ লেপ্টে দিল তাদের মুখে।
ফারুরে তোরে তো সেই সুন্দর লাগছে একদম গাছে থাকা হলুদ শাঁকচুন্নির মতো! বলেই আরিয়া ফিক করে হেসে দিল।
আর এইদিকে তূর্য(শিশির) মুগ্ধ হয়ে আরিয়ার হাসি দেখতেছে। আরুপাখি কবে যে তোমাকে মনের কথা টা বলবো! কবে যে তোমাকে আমার নিজের করে পাবো! আমি নিজেও জানি না তুমি যেদিন জানবা আমিই সেই অচেনা কেউ তখন কী রিয়েক্ট করবা। অনেক টাই তো বদলে গেছো আজ তুমি। সেই আগের আরুপাখিটা যে আর নাই।ভেবেই তূর্য তপ্ত শ্বাস ছাড়লো।
তখনি আহিল এসে তূর্যর কাঁধে হাত করে শান্ত গলায় বলল,, ভাইয়া তুই আরুর কথায় ভাবছিস তাই না। যে ও বদলে গেছে।
হুম!
আমিও সেটাই ভাবছি রে। জানিস ভাইয়া মানুষ বদলায়…. বদলাতে না চাইলেও পরিস্থিতি মানুষকে বদলাতে বাধ্য করে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাদুকর সময়। যার জন্য এক সময় প্রচন্ড ভালোবাসা থাকে তার মায়াও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। তীব্র রকমের ভালোবাসাও ফুরিয়ে শুকনো নদী হয়ে যায়..!!
দীর্ঘ দিন পাড়ি দেওয়ার পর তার কথা আর নিয়ম করে মনে পড়ে না। সময়ের সাথে সব কিছু কেমন জানি বিলিন হয়ে যায়..!! আজ থেকে দশ বছর আগে যার জন্য হৃদয় পুড়ে ছাই হয়ে যেত, প্রতিটি নিঃশ্বাসে যে মানুষটা বেঁচে থাকত, যার জন্য বাঁচা অসম্ভব হয়ে যেত, সময়ের আবর্তনে সেই মানুষটাকে ঘুনাক্ষরেও আর মনে পড়ে না..!! তবে চির তরে ভুলা যায় না কোন বিশেষ দিনে বা দিবসে তাকে মনে পড়ে। তখন আগের পাগলামি গুলোর কথা মনে পড়ে হাসি পায়..!! সময়ের বিবর্তনে আমাদের সব শোক শুকিয়ে দেয়। বাস্তবতার মুখোমুখি হলে জীবন আমাদের পথ চলা ঠিকই শিখিয়ে দেয়..!!
মানুষ বদলায় খুব বদলায়। সময়ের সাথে সাথে বদলায় রুচি। তুই যে দেখছিস সে দেখার চোখও বদলায়, আর অনুভবের হৃদয় অদ্ভুত ভাবে বদলায়..!! মানতে কষ্ট হলেও এটাই বিশ্বাস করতে হবে যে, তুই যে জীবনে বাস করছিস সে জীবন ছাড়াও আরো অনেক জীবন আছে, তুর মনে হতে পারে সে জীবন গুলোতে তুই বাস করতে পারবি না..!! কিন্তু সময় বড় অদ্ভুত জাদুকর সময়ের সাথে সাথে তুই সে জীবন গুলোতে কখন যে পদার্পন করবি তুই নিজেও টের পাবি না..!!
— জীবনে কোন কিছুই অপরিহার্য নয় কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না। এ পৃথিবীতে এমন কেউই নেই যাকে ছাড়া বাঁচা যায় না-!!
কষ্ট পেতে পেতে মানুষ এক সময় পাথর হয়ে যায়৷ অবহেলা পেতে পেতে মানুষ বদলে যায়। ঠিক আমাদের আরুও আজ বদলে গেছে।
কথা গুলা ঠিক। কিন্তু তুই তো দেখি কবি হইয়া গেছিস।
আরে ভাইয়া সত্যি কথায় কইলাম। এখন চলো আরুদের কাছে যাই।
এই আরু রাতুল তোর দিকে সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছে! ব্যাপার টা কী রে?(ছোঁয়া)
আজব আমি কেম্নে কমু। তুই গিয়া জিজ্ঞেস কর।
আরে এম্নে কস কে? বাই দ্যা সোফা ও আবার তোরে ভালোবাসতে শুরু করল নাকি?
পাগল হইছিস তুই? রাতুল আমাকে না ফারিয়াকে ভালোবাসে। আর তাই ফারিয়াকেই বিয়ে টা করছে।
তাহলে এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কী?
হয়তো আমাকে এভাবে থেকে অবাক হয়ে গেছে। ও হয়তো ভাবছিলো আজকে আমি ওর কাছে ভালোবাসা ভিক্ষা চাইবো না হয় ওদের বিয়েতে সিনক্রিয়েট করবো।
তখনি ফারিয়া এসে বলে, তুই তো সত্যিই বদলে গেছিস আরু সরি আরিয়া। সত্যিই ভেবেছিলাম তুই ভেঙে পড়বি, আমাদের বিয়েতেও আসবি না। কিন্তু না তুই তেমন কিছুই করলি না। একটু বাজে সিনক্রিয়েট করলেই পারতি। সবার চোখে খারাপ বানাতে পারতাম। ধ্যাত এমন কিছুই করলি না। আসলেই অনেক বেশিই বদলে গেছিস। আর বলছিলি তো আমাদের জবাব দিবি, তো কেম্নে দিবি? কী করতে পারবি তুই সেটাই দেখব!
তুই কখনোই ভালো হবি না তাই না। আমাকে কষ্ট দিতে পারলেই তুই শান্তি পাস তাই না ফারু?কিছুটা করুন কন্ঠে বলল আরিয়া।
হ্যাঁ অনেক বেশিই শান্তি পাই আমি।
ছোঁয়া আরিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে ফারিয়াকে বলল,, ফারু প্লিজ আজ অন্তত চুপ থাক। ওর বদলে যাওয়াটাই অবাক হওয়ার কী আছে। তোরাই তো ওকে বদলাতে বাধ্য করছিস। প্লিজ যা এখান থেকে।
ফারিয়া আর কিছু না বলেই চলে গেলো।
ফারিয়া চলে যেতেই ছোঁয়া আরিয়ার হাত ধরে নিয়ে গেলো। পিছন পিছন অন্তুও আসলো। এক জায়গায় নিয়ে বসিয়ে ছোঁয়া আরিয়াকে বললো,,
আরু শুন তুই যতই ভালো মানুষ হস না কেন এই সমাজে প্রতিষ্ঠিত না হলে তোকে কেউ দাম দিবে না। কেননা, এই সমাজে ভালো মানসিকতা নয় এই সমাজে সুন্দর এবং প্রতিষ্ঠিত মানুষদের দাম দেওয়া হয়। তোর মধ্যে যদি সৌন্দর্য না থাকে এবং তুই যতটা সবার কাছে এভিলেভেল হয়ে যাবি ঠিক ততটাই মানুষের কাছে তুই স্বস্তা হয়ে যাবি এবং অবহেলা পাবি। কেননা এই সমাজের মানুষ গুলা কিছু ফ্রি-তে পেয়ে গেলে সেই মানুষটা যতই মূল্যবান ও ভালো হোক না কেন তাকে কদর করতে জানে না। একটা সময়ই সবকিছুই বুঝতে শুরু করবি তখনি নিজেকে বদলে নিতে শুরু করবি। আর এই যান্ত্রিক সমাজের যান্ত্রিক মানুষ গুলোর মতই নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলবি। আর ঠিক তখনি তুই তখনি আগের মানুষ গুলোর কাছ থেকে শুনতে পাবি তুই অনেকটা বদলে গেছিস। আর এই বদলে যাওয়ার জন্য তারা তোকেই ব্লেইম করবে। কিন্তু নিজের ভুল গুলা কখনোই স্বীকার করবে না। যেমন টা একটু আগে ফারিয়া করলো। তাই বদলে যাওয়ার পর লোকে কী বললো সেটা শোনার প্রয়োজন নেই। কারণ লোকে অনেক কথাই বলবে কিন্তু দিন শেষে নিজের মতো করে নিজেকেই ভালো থাকতে হবে। কারণ জীবনটা তোর অন্যের নয়। তাই নিজের মতো করে নিজেকেই ভালো থাকতে হয়। হুম একটা সময় বদলে তোকেই যেতেই হবে তাই সময়ের সাথে সাথে নিজেকে বদলে নে-!! নিজের মতো করে ভালো থাকতে শিখ। নিজের মতো করে বাঁচতে শিখ।
হুম আরু ছোঁয়া একদম ঠিক কথা বলছে। কোনো বেইমানের জন্য নিজের লাইফ থামিয়ে রাখলে চলবে না।(অন্তু)
হুম এটা সত্যি যে আমি মাঝে মাঝে এখনও রাতুল কে ভেবে কষ্ট পাই। কিন্তু আজ থেকে ওকে পুরোপুরি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবো। আর নিজের লাইফে মুভ অন করবো। তোরা আমার পাশে থাকলেই হবে।
হুম আমরা সবসময় তোর পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ।
তূর্য দূর থেকে আরিয়ার কথা শুনে মুচকি হাসলো। তারপর মনে মনে বললো,, হুম আমিও তোমার পাশে আছি আরুপাখি। আমি তোমাকে সাহায্য করবো রাতুলকে ভুলতে। কোন একটা সময় তুমি রাতুলকে পুরোপুরি ভুলে যাবা। তখন শুধু আমিই তোমার মনে থাকবো। আর সেই সময়টা খুব তাড়াতাড়ি আসতে চলেছে।
তূর্য আরিয়াদের কাছে গিয়ে বললো,, অনুষ্ঠান প্রায় শেষ তোমরা সবাই রুমে যাও। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে যেও।
জ্বী ভাইয়া গুড নাইট।(আরিয়া)
আবার ভাইয়া? দয়া করিয়া এই অদম কে আর ভাইয়া ডাকিওনা! বুক টা হাডি যায়।
তূর্যের কথা শুনে সবাই হেসে দিল।
হয়ছে এখন রুমে যাও ফ্রেশ হও।
_______________
ফ্রেশ হয়ে খেয়ে শুয়ে আছে আরিয়া। তিনজন একসাথে। আরিয়া মাঝখানে তাই শান্তি তে ঘুমাতেও পারছে না।
এই তোদের কী আমারে কোলবালিশ মনে হয়? এম্নে জড়ায় ধরে আছিস কেন?
অন্তু ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,, চুপ কর দয়া করে ঘুমাইতে দে। কাল সকাল সকাল উঠে সাজতে হবে। প্লিজ ঘুমা।
তুই সাজা ছাড়া আর কী বুঝিস! তোরে বলাই বৃথা। এই ছোঁয়া তুই অন্তত একটু সর প্লিজ। আমার দম বন্ধ হইয়া আসছে।
আরে এত রাতে কী শুরু করলি তুই? একটু শান্তিতে ঘুমাইতে দে। আর আমরা জড়ায় ধরছি বলে বকবক করছিস যখন জামাই জড়িয়ে ধরবে তখন কী করবি শুনি? তখন তো কইবি যে,, ওগো বালিশ একটাই রাখো আমি তোমার বুকে ঘুমাবো। এখন যত্তসব ডং!
ছোঁয়ার এমন লাগামহীন কথা শুনে আরুর অবস্থা এমন,, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!🐸
চুপ কর মেরি মা। নে ঘুমা আমি আর কথা কমু না।
হুম এই তো গুড গার্ল। নে জানু উম্মাহ।
লুচি মেয়ে কোথাকার।
হঠাৎ আরিয়ার মোবাইলের কথা মনে পড়লো। অচেনা লোকটা হয়তো মেসেজ দিয়েছে। দুইটা দুইদিক থেকে যেভাবে জড়িয়ে ধরছে এখন তো উঠে গিয়ে ফোন টাও আনতে পারমু না৷ ধ্যাত কেন যে ফোনটা নিয়ে শুইলাম না। ভেবেই মনে মনে আরিয়া নিজেকে গালি দিতে লাগলো। এক মিনিট আমি ওই লোকটা কে নিয়ে কেন ভাবছি? ওই লোকটার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি না তো আবার। না আরু এটা হতে পারে না। আর কারো মায়ায় নিজেকে জড়াস না। পৃথিবীতে মা-বাবা ছাড়া কেউ আপন না। কেউ কারো না। সবাই স্বার্থপর।
নিজেকে বুঝাতে বুঝাতে হঠাৎ ঘুমিয়ে গেলো আরিয়া।
_______________________
বিয়ে বাড়িতে মানুষ গমগম করছে। বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে শতাধিক পরিচিত, অপরিচিত মানুষের আনাগোনা। সবাই সবার কাজে ব্যস্ত।
আরিয়াকে দেখে হঠাৎই তূর্যের চোখ আটকে যায়। হাল্কা খয়েরী রংয়ের লেহেঙ্গা, হাল্কা মেকআপ, খয়েরী চুড়ি, আর মেচিং করা অর্নামেন্ট পড়েছে। এক কথায় অপূর্ব লাগছে।
ছোঁয়া, আর অন্তুও সেইম ড্রেস আর তিনজন সেইম ভাবেই সেজেছে।
ওয়াও আরু আজ তোদের কে খুব সুন্দর লাগছে।
ধন্যবাদ আহু।
অপরদিকে রাতুল আরিয়ার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ব্যাপার টা তূর্য ঠিকি লক্ষ্য করছে। ইচ্ছে তো করছে রাতুলের নাক ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু বেচারা তো পারছে না। নাক ফাটিয়ে দিলে তো সব বানচাল হয়ে যাবে।
এইরে ভুল করে ফোনটা রুমেই রেখে আসছি। তোরা একটু দাঁড়া আমি ফোন নিয়ে আসছি।
আরু আসবো আমি?
না আমি পারবো তোরা থাক!
আরিয়া ফোন নিয়ে আসতে যাবে তখনি কেউ একজন তার হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে গেলো।
— আরিয়া খেয়াল করলো লোকটার মুখে মাস্ক লাগানো। দরজা, জানালা আটকানো তাই পুরা রুম অন্ধকার হয়ে আছে। ফেইস টাও ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।
#চলবে…….!!!
[